নিরপেক্ষ নির্বাচনের প্রশ্নে বিএনপি কোনো আপস করবে না বলে ঘোষণা দিয়েছেন দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি বলেন, আমাদের স্পষ্ট বার্তা নিরপেক্ষভাবে ভোট হতে হবে। এটার সঙ্গে কোনো কম্প্রমাইজ (আপস) নাই। যদি এটি নিশ্চিত করা যায়, তা হলে ধীরে ধীরে আমরা দেশের ও মানুষের সমস্যা কমিয়ে আনতে সক্ষম হবে। কাজেই এর সঙ্গে কোনো আপস নেই।
শনিবার (৯ নভেম্বর) বিকেলে রাজধানীর কাকরাইলে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে কৃষক দলের উদ্যোগে ইউনিয়ন পর্যায়ে ‘কৃষক সমাবেশ’ কর্মসূচির উদ্বোধনকালে তিনি এ কথা বলেন। অনুষ্ঠানে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ভারতে বসে দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছেন শেখ হাসিনা।
দুই পর্বের এই অনুষ্ঠানের প্রথম পর্বে সকালে প্রশিক্ষণ কর্মশালার উদ্বোধন করেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। এতে সারা দেশ থেকে আসা কৃষক দলের প্রায় ৩ হাজার প্রতিনিধি অংশ নেন। আজ কর্মশালা থেকে আগামী তিন মাস সারা দেশের প্রতিটি ইউনিয়নে কৃষক সমাবেশের ঘোষণা দেওয়া হবে।
তারেক রহমান বলেন, ‘জনগণকে বোঝাতে হবে আপনার বুদ্ধি-বিবেক দিয়ে যাকে ইচ্ছা তাকে ভোট দিন, কিন্তু ডামি নির্বাচন, নিশিরাতে ভোট হতে পারবে না। এর সঙ্গে কোনো আপস হবে না।’
ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র থেমে নেই। প্রত্যন্ত অঞ্চলের প্রত্যেকটি মানুষের কাছে এই বার্তা পৌঁছে দিতে হবে। গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে না পারলে ষড়যন্ত্র রুখে দেওয়া যাবে না। জবাবদিহি নিশ্চিত করতে না পারলে ভালো কিছু সম্ভব না। ভোট যাতে হয়, সেই অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। মানুষ যাকে খুঁশি তাকে ভোট দেবে। আমরা যতক্ষণ পর্যন্ত দেশে গণতান্ত্রিকব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হব না, ততক্ষণ পর্যন্ত ভালো কিছু করতে পারব না।’
বিএনপি ক্ষমতায় গেলে শহিদ জিয়াউর রহমানের খাল খনন কর্মসূচি শুরু করা হবে জানিয়ে তারেক রহমান আরও বলেন, ‘আমাদের দেশে অনেক জায়গা আছে যেখানে দেশের কৃষক প্রয়োজনীয় পানি পায় না। ফসল উৎপাদনে বাধাগ্রস্ত হয়। খাল খননের মাধ্যমে শহিদ জিয়া পানির ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন। যেখানে একটি ফসল হতো সেখানে পানির কারণে দুটি হয়েছিল, দুটি ফসলের জায়গায় তিনটি ফসল হয়েছিল। বিএনপি ক্ষমতায় গেলে কৃষকদের সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করবে।’
বিএনপির শীর্ষ নেতা বলেন, ‘বাংলাদেশের নারীদের বড় একটা অংশ কৃষির সঙ্গে জড়িত। তাই কৃষির প্রতি নজর দিতে হবে। খালেদা জিয়ার সময় ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত কৃষিঋণ মওকুফ করে দেওয়া হয়েছিল। ফসলের মৌসুমে বিদ্যুৎ বিল সরকার বহন করত। যার মধ্য দিয়ে কৃষকদের কিছু সমস্যার সমাধান হয়েছে। কৃষকের বীজের সমস্যার সমাধান করা যায়নি। বিভিন্ন সময় ফসল নষ্ট হয় সে জন্য আমরা কৃষি বিমার কথা চিন্তা করেছি।’
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের মতে, ২০ কোটি মানুষের জন্য খাদ্য উৎপাদন করতে হলে কৃষির ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। এত মানুষের জন্য খাদ্য আমদানি সম্ভব না। তাই যেগুলো মৌলিক খাদ্য সেগুলো দেশেই উৎপাদন করতে হবে। তাই কীভাবে কৃষি জমি বাড়ানো যায় সেটা আমাদের চিন্তা করতে হবে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘ভারতে বসে দেশের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছেন শেখ হাসিনা। তাই আমাদের সতর্কতার সঙ্গে চলতে হবে। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মাধ্যমে দেশকে নতুনভাবে গড়ে তোলার সুযোগ এসেছে। তবে পতিত স্বৈরাচাররা এখনো নতুন করে ষড়যন্ত্রের জাল বুনছেন। তাদের সব ষড়যন্ত্র রুখে দাঁড়াতে হবে।’
কৃষক দলের কেন্দ্রীয় সভাপতি হাসান জাফির তুহিনের সভাপতিত্বে ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসেনের সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য দেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শাসুজ্জামান দুদু, কৃষক দলের শহিদুল ইসলাম বাবুল প্রমুখ।
শফিকুল ইসলাম/এমএ/