বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নেতারা গণতান্ত্রিক সমাজ বিনির্মাণে বিশ্বাসী নয় বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ (বীর বিক্রম)।
তিনি বলেন, ‘তারা হয়তো ভাবে, দুই-একটা মিছিল করলে দেশ ঠিক হয়ে যাবে, এগুলো এদের গুরুরা হয়তো শেখায়।’
সোমবার (১১ নভেম্বর) দুপুরে ঢাকা রিপোর্টাস ইউনিটিতে (ডিআরইউ) ‘৭ নভেম্বরের আকাঙ্ক্ষা ও আজকের রাজনীতির প্রেক্ষাপট’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন।
আলোচনা সভার আয়োজন করে জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দল।
‘শুধু নির্বাচনের জন্য দুই হাজার মানুষ জীবন দেয়নি’, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে সমন্বয়ক সারজিস আলমের এমন বক্তব্যের সমালোচনা করে মেজর হাফিজ বলেন, ‘‘ভোট কি এতো সোজা? ভোট তো গণতন্ত্রের প্রতীক। ভোটের জন্যই তো ৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ করেছি। ২৪ লড়াই তো হয়েছে বাকস্বাধীনতা, ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য। নির্বাচন হচ্ছে গণতন্ত্রের প্রধান উপাদান। আর এরা বলেন, ‘নির্বাচনের জন্য দেশ স্বাধীন হয়নি’। তাহলে কী, কিসের জন্য যুদ্ধ, এতো আত্মত্যাগ? ভোট কি এতোই হেলাফেলার বস্তু? অর্থাৎ এরা (বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন) গণতান্ত্রিক সমাজ বিনির্মাণে বিশ্বাসী নয়।’
অন্তবর্তী সরকারের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘এই সরকারের প্রধান কাজ একটি সুষ্ঠু নির্বাচন করে নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করা। আমরা দেখতে পাচ্ছি ‘যে লঙ্কায় যায় সেই রাবণ হয়’। তারা দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতায় থাকতে চায়। ইতোমধ্যেই সরকারের উপদেষ্টা পদে আওয়ামী ঘরাণার বিভিন্ন লোক ঢুকে গেছে। ছাত্ররা আমাদের সন্তান সমতুল্য, তাদের কর্মকাণ্ড দেখলে মনে হয়, দেশটা তারাই স্বাধীন করেছে, আর কেউ জীবন দেয়নি। বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোর হাজার নেতা-কর্মী জীবন দিলো তাদের হিসাব নিকাশ কে করবে?’
বিএনপির এই সিনিয়র নেতা বলেন, অল্প সময়ের মধ্যে নির্বাচন কমিশন সংস্কার করে নির্বাচন দেন, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি দেশ সংস্কার করবে।
মেজর হাফিজ বলেন, ‘ইউনূস সরকারকে সমর্থন করি, ভবিষ্যতেও করব। কিন্তু আপনারা আজীবন ক্ষমতায় থাকার চেষ্টা করবেন না। ১০ বা ২০ বছর ক্ষমতায় থাকার চেষ্টা করবেন না। যারা আওয়ামী লীগের কুশীলব ছিল, ১৬ বছর ধরে হালুয়া-রুটি খেয়েছে, সুবিধা নিয়েছে, এরা এখনো বহালতবিয়তে আছে, এদেরকে সরাতে হবে। এটি শুধু অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নয়, রাজনৈতিক দলগুলোর দায়িত্বও বটে।’
তিনি আরও বলেন, ‘১৬ বছর আওয়ামী লীগের ছিল ভয়াবহ দুঃশাসন। এই দলের নেতাদের কাজ ছিল শেখ মুজিব ও তার পরিবারের গুণগান গাওয়া, অর্থ লুটপাট করে বিদেশে পাচার করা।’
নতুন তিনজন উপদেষ্টা নিয়োগে প্রশ্ন তুলে সরকারের উদ্দেশে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, ‘আপনারা কার পরামর্শে তাদের উপদেষ্টা নিয়োগ দিয়েছেন? আওয়ামী লীগের লালিত-পালিতদের উপদেষ্টা পরিষদে নিয়োগ দিয়ে আপনারা স্বাধীনতার মূল চেতনায় আঘাত করছেন।’ চলচ্চিত্র নির্মাতা মোস্তফা সারওয়ার ফারুকী এবং বশির আহম্মেদকে আওয়ামী আমলের সুবিধাভোগী বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
শফিকুল ইসলাম/অমিয়/