
দেশব্যাপী সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা লাগিয়ে বাংলাদেশকে একটি ব্যর্থরাষ্ট্র প্রমাণ করার ষড়যন্ত্র করছে। এজন্য ভারত ও শেখ হাসিনাকে দায়ী করে এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়ে বিক্ষোভ করে জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল।
রবিবার (১ ডিসেম্বর) সাড়ে ৪টায় জাতীয় প্রেসক্লাব সামনে এক বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করা হয়।
জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সম্পাদক ফয়জুল হাকিমের সভাপতিত্বে ও ঢাকা অঞ্চল সংগঠক কাইয়ুম হোসেনের পরিচালনায় বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন ফেডারেশনের ঢাকা অঞ্চল সভাপতি দেলোয়ার হোসেন, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক সৌরভ রায় ও জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল সংগঠক রফিক আহমেদ।
সমাবেশে ফয়জুল হাকিম বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানে ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকার উচ্ছেদের ঘটনা ভারতের উগ্র হিন্দুত্ববাদী নরেন্দ্র মোদি সরকার, ভারতের শাসক শ্রেণির অপরাপর দল কংগ্রেস মেনে নেয়নি। এমনকি ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি নামে পরিচিত দলগুলোও মেনে নেয়নি।
তিনি বলেন, পতিত ফ্যাসিস্ট গণহত্যাকারী শেখ হাসিনা ভারতে আশ্রয় পেয়েছে। বিশ্বের কোনো দেশই এই বর্বর খুনিকে আশ্রয় না দিলেও ভারত সরকার তাকে আশ্রয় দিয়েছে এবং বাংলাদেশের জুলাই গণঅভ্যুত্থানে সৃষ্ট জনগণের ঐক্য ও জাতীয় প্রতিরোধের চেতনাকে ধ্বংস করতে মদদ জুগিয়ে যাচ্ছে। ভারত এখন পরিণত হয়েছে শেখ হাসিনা ও তার দোসরদের আশ্রয়স্থলে।
তিনি বলেন, সাম্রাজ্যবাদী ভারতের তৎপরতা দেখে মনে হয় ৫ আগস্টের পূর্বে বাংলাদেশে কোনো ধর্মীয় সংখ্যালঘু ছিল না। প্রকৃত অর্থে জুলাই অভ্যুত্থানে ভারত শেখ হাসিনা সরকারের পতন মেনে নেয়নি। বাংলাদেশকে সাম্রাজ্যবাদী ভারত তার একটি আশ্রিত রাষ্ট্র হিসেবে দেখতে চায়। ভারত সরকার বর্তমানে বাংলাদেশবিরোধী প্রচারণা আন্তর্জাতিকভাবে নিয়ে গিয়ে বিশ্বের সামনে বাংলাদেশকে একটি ব্যর্থ রাষ্ট্র হিসেবে চিহ্নিত করার চক্রান্তে লিপ্ত রয়েছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে এই চক্রান্ত মোকাবেলা করতে কার্যকর ভূমিকা নেওয়ার দাবি জানাই।
দেলোয়ার হোসেন বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানের পরে ভারতের মোদি সরকার, ভারতের গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম সমন্বিতভাবে বাংলাদেশবিরোধী অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। তারা অব্যাহতভাবে বলে চলছে বাংলাদেশে ৫ আগস্টের পরে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর ব্যাপক হামলা নির্যাতন ঘটে চলেছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে বিকৃত, মিথ্যা ও গুজব ছড়িয়ে বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সংঘাত সৃষ্টির লক্ষ্যে এই অপপ্রচার ও উস্কানি দিয়ে যাচ্ছে। এই উস্কানির অংশ হিসেবে গত ২৬ নভেম্বর চট্টগ্রামে আদালত প্রাঙ্গণে 'জয় শ্রী রাম' শ্লোগান তুলে উগ্র হিন্দুবাদী দুর্বৃত্তদের হাতে নৃসংসভাবে খুন হন আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলীফ। চট্টগ্রামের জনগণ ও গণতান্ত্রিক সংগঠন সাম্প্রদায়িক সংঘাত সৃষ্টির এই ফাঁদে পা দেননি।
সাইফুল ইসলাম আলিফের হত্যাকারীদের চিহ্নিত করে গ্রেপ্তার ও দ্রুত বিচারের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, গণগ্রেপ্তার করে নিরপরাধীদের হয়রানি করা যাবে না।
সৌরভ রায় বলেন, এক শ্রেণির মতলববাজ হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতা সাধারণ হিন্দুদের বিভ্রান্ত করে চলছে। তিনি বলেন, 'জয় শ্রীরাম' বাংলাদেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের শ্লোগান না। এই শ্লোগান ভারতের উগ্র হিন্দুত্ববাদী সংগঠন বিজেপির শ্লোগান। এই শ্লোগান ভারত থেকে আমদানি করে সাম্প্রদায়িক সংঘাত সৃষ্টির ষড়যন্ত্র চলছে। এ ষড়যন্ত্র রুখে দাঁড়াতে হবে।
রফিক আহমেদ হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, আপনারা বাংলাদেশের সমগ্র জনগণের অংশ। সাম্রাজ্যবাদী ভারত ও পতিত ফ্যাসিস্ট হাসিনার চক্রান্তের সঙ্গে নিজেদের যুক্ত করবেন না। পাকিস্তান আমলে পূর্ব বাংলার জনগণের ন্যায়সঙ্গত আন্দোলনকে বিভ্রান্ত করতে পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠী বাঙালিদের সঙ্গে উর্দুভাষী বিহারীদের সংঘাত লাগিয়ে ফায়দা লুটতো। এখন সাম্রাজ্যবাদী ভারত একইভাবে চক্রান্ত চালাচ্ছে। জনগণের ঐক্য বিনষ্ট করার সকল চক্রান্ত আমাদের চূর্ণ করতে হবে।
মাহফুজ/এমএ/