নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করার উদ্যোগকে অবশ্যই বিএনপি স্বাগত জানাবে উল্লেখ করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, রাজনৈতিক দল গঠন করতে গিয়ে কেউ যদি রাষ্ট্রীয় কিংবা প্রশাসনিক সহায়তা নেন, সেটি জনগণকে হতাশ করবে। কিংবা অন্য রাজনৈতিক দলের প্রতি তাদের আচরণ কিংবা বক্তব্য যদি ঝগড়াসুলভ অথবা প্রতিহিংসামূলক হয় সেটিও জনগণের কাছে হবে অনাকাঙ্খিত।
শনিবার (২৫ জানুয়ারি) বিকেলে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের ৮৯তম জন্মবার্ষিকী এবং জাতীয় শিক্ষক দিবস উপলক্ষে এক শিক্ষক সমাবেশে ভাচ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, দেশের ছাত্র-তরুণরা রাষ্ট্র রাজনীতি ও রাজনৈতিক ব্যবস্থার প্রতি আগ্রহী হয়ে পড়েছে। এটি অবশ্যই একটি ইতিবাচক দিক। এসব তরুণরাই গত দেড় দশকে একটি নির্বাচনেও ভোট দিতে পারেনি। আজকের তরুণরাই আগামীর বাংলাদেশ। অতীত থেকে বেরিয়ে এসে তারণরা নতুন পথ রচনা করবে। তবে কোনো প্রশ্নবিদ্ধ পথে নয়, পথটি হওয়া উচিত স্বচ্ছ এবং স্বাভাবিক।
নির্বাচন নিয়ে বির্তক সৃষ্টি ‘পলাতক ফ্যাসিস্টদের অবস্থানকে শক্তিশালী করবে’ বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, নির্বাচনই হচ্ছে জনগণের রাজনৈতিক ক্ষমতায় নিশ্চিত করার অন্যতম প্রধান কার্যকর হাতিয়ার। নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে বির্তক সৃষ্টি করার অর্থ নিজেদের অজান্তে পরাজিত পলাতক ফ্যাসিস্টদের অবস্থানকে শক্তিশালী করা।
দলের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, আপনাদের কোনো কার্যক্রম নিয়ে কেউ যাতে বিভ্রান্তি ছাড়ানো কিংবা বির্তক সৃষ্টি হওয়ার লিপ্ত হওয়ার সুযোগ না পায়, সে বিষয়ে অবশ্যই আপনাদেরকে সজাগ থাকতে হবে। জনগণই বিএনপির সকল রাজনৈতিক ক্ষমতার উৎস্য। জনগণ সঙ্গে থাকলে কোন ষড়যন্ত্রই আমাদেরকে পরাজিত করতে পারবে না, ইনশাল্লাহ।
শিক্ষক-বুদ্ধিজীবী-সাংবাদিকসহ সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, পূঁথিগত বিধির ওপরে গণতন্ত্রের বিকাশ নির্ভর করে না। গণতন্ত্র বিকশিত এবং শক্তিশালী হয় প্রতিদিনের কার্যক্রম, আচরণে এবং চর্চায়। আমাদের মধ্যে অবশ্যই ভিন্নমত, ভিন্ন পথ থাকবে এটাই গণতন্ত্রের সৌন্দর্য। তবে আমাদের উদ্দেশ্য এক এবং অভিন্ন। আমাদের সবার উদ্দেশ্য একটি উদার, গণতান্ত্রিক, বৈষম্যহীন, মানবিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা। মাফিয়ামুক্ত বাংলাদেশে বৈষম্যহীন মানবিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার সুযোগ এবং সম্ভাবনা হুমকির সম্মুখিন না হয় সে ব্যাপারে সবাই সর্তক থাকতে হবে। সীমাবদ্ধতা থাকা স্বত্বেও এই সরকারকে ব্যর্থ হতে দেওয়া যাবে না।
তারেক রহমান বলেন, ‘সংস্কার এবং নির্বাচন বিএনপি দুইটারই পক্ষে, দুইটিই অত্যন্ত জরুরি। সংস্কার নাকি নির্বাচন- কেউ কেউ এমন উদ্দেশপ্রণোদিত প্রশ্ন নিয়ে কুটতর্ক করার অপচেষ্টা করেছে। দেশের বিরাজমান পরিস্থিতিতে কোটি কোটি পরিবারের কাছে এই মূহুর্তে নির্বাচন এবং সংস্কারের চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে সংসার পরিচালনা করা। একদিকে দ্রব্যমূল্যের ঊধর্বগতি অপরদিকে জনগণের চাপিয়ে দেওয়া ভ্যাটের বোঝা। ফলে দেশের কৃষক, শ্রমিক, দিনমজুর, স্বল্প আয়ের মানুষ এমনকি নিম্ন-মধ্যবিত্ত অনেক পরিবারে চলছে নীরব হাহাকার।
দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি নিয়ে তারেক রহমান বলেন, উর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণে বাজারের সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করাসহ জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। জনগণের ওপর ভ্যাটের বোঝা কেন চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে? এই সরকার এখনও কেনো বাজার সিন্ডিকেট নষ্ট করতে পারেনি।
এ সময় সরকারের কেউ কেউ অন্যদিকে মনোযোগী হওয়ায় দ্রব্যমূল্য সরকারের অধীনে আসছে না বলে এমনটা হচ্ছে কিনা এমন প্রশ্ন তোলেন তারেক রহমান।
শিক্ষক-কর্মচারি ঐক্যজোটের সভাপতি অধ্যক্ষ সেলিম ভুঁইয়ার সভাপতিত্বে ও ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব জাকির হোসেনের সঞ্চালনায় শিক্ষক সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, সিনিয়ির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীসহ বিভিন্ন জেলার শিক্ষকরা।
এই অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী আনম এহসানুল হক মিলনসহ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
শফিকুল/মেহেদী/