অন্তর্বর্তী সরকারকে ভারতের কাছে তিস্তা নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা চাইতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ভারতের উদ্দেশে তিনি বলেন, ভারতকে বাংলাদেশের মানুষের সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে হলে দাদাগিরি করা চলবে না। বাংলাদেশের মানুষের সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে হলে প্রথমে তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা দিতে হবে। সীমান্তহত্যা বন্ধ করতে হবে। তাহলে বন্ধুত্ব হতে পারে।
সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) রংপুর ও লালমনিরহাট জেলার তিস্তা রেলওয়ে সেতু সংলগ্ন চর পয়েন্টে তিস্তা রক্ষা ও মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবিতে সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।
‘জাগো বাহে, তিস্তা বাঁচাই’ স্লোগানে এদিন একই সঙ্গে লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, নীলফামারী, রংপুর ও গাইবান্ধা জেলার ১১ পয়েন্টে সমাবেশ, পদযাত্রা, সাংস্কৃতিক পরিবেশনা করেছে ‘তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলন কমিটি।’ টানা ৪৮ ঘণ্টার এ কর্মসূচি উদ্বোধন করেন মির্জা ফখরুল।
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ‘তিস্তা নদী রক্ষা কমিটি’র প্রধান সমন্বয়কারী বিএনপির রংপুর বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল হাবিব দুলু।
মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) সমাপনী দিনে সন্ধ্যায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে ৫ জেলার ১১ পয়েন্টে বক্তব্য রাখবেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকার নিজেদের নিরপেক্ষ সরকার বলে। তাই ভারতের কাছে তিস্তার ন্যায্য পানি চাইতে হবে। আমরা ভারতকে বন্ধু হিসেবে দেখতে চাই। তবে ন্যায্য পানির ন্যায্য হিস্যা বুঝিয়ে দিতে হবে। সীমান্তে আমাদের নাগরিককে গুলি করে হত্যা বন্ধ করতে হবে।’
উপস্থিত মানুষদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘লড়াই না করে কিছু পাওয়া যায় না। লড়াই করে আমাদের অধিকারগুলো আদায় করব, ন্যায্য পাওনা বুঝে নেব। এখন নতুন লড়াই শুরু হয়েছে। সেটা হলো- বাঁচা মরার লড়াই, স্বাধীনতার লড়াই। জাগো বাহে তিস্তা বাঁচাই।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ১৫ বছরে বাংলাদেশকে বেচে দিছে, কিন্তু তিস্তার একফোঁটা পানি আনতে পারে নাই। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের ৫৪টি নদী আছে, প্রতিটি নদীতেই তারা বাঁধ বসিয়ে রেখেছে। একদিকে ভারত আমাদের পানি দেয় না, অন্যদিকে বাংলাদেশের শত্রু হাসিনাকে তারা বসিয়ে রেখেছে। ওখান থেকে বসে তিনি আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের হুকুম দিচ্ছেন।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আজকের যে আন্দোলন শুরু হচ্ছে এটা কি আমরা শেষ পর্যন্ত নিয়ে যাব? মওলানা ভাসানী যেমন তিস্তা রক্ষার আন্দোলন শুরু করেছিলেন, বহুদিন পর আজ আসাদুল হাবিব দুলু ভাই সেই আন্দোলন আবার শুরু করেছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘দ্রুত সংস্কার করে নির্বাচন দিন। জনগণ অনেক বছর ভোট দিতে পারেনি। তাই জনগণ চায় ভোট দিয়ে নিজের প্রতিনিধিকে সংসদে পাঠিয়ে তাদের দিয়ে তাদের দাবিগুলো বাস্তবায়ন করাতে। ভোট হলে দেশে যে অস্থিতিশীলতা চলছে, তা বন্ধ হবে। জনগণ প্রতিনিধি পাবে তাদের কথা বলার।’
জাতীয় পার্টির (জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার বলেন, “বাংলায় কথা আছে ঠেলার নাম বাবাজি। আজকের এই কর্মসূচি যখন ৬০ দিন আগে ঘোষণা করা হয়েছিল এরপর গত কয়েক দিন আগে ভারত পানি ছাড়া শুরু করেছে। ভারত যদি তিস্তার ন্যায্য হিস্যা না দেয় তাহলে আমরা এককভাবে ‘তিস্তা মহাপরিকল্পনা’ বাস্তবায়ন করব। স্বাধীন জাতি হিসেবে আমাদের অধিকার আছে যেকোনো সিদ্ধান্ত নেবার। আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে তিস্তার এই মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করব।”
বিপ্লবী ওয়াকার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, ‘শুকনো মৌসুমে ভারত উজানের পানি আটকে রাখে, আর বর্ষার মৌসুমে ছেড়ে দেয়। যার ফলে আমাদের এখানে বন্যায় সব ভেসে যায়। এটা কি কোনো বন্ধুর পরিচয়? কোনোভাবেই না। অন্তর্বর্তী সরকারকে বলব এখন সময় এসেছে ভারতের চোখে চোখ রেখে কথা বলার। তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা পেতে প্রয়োজনে আন্তর্জাতিক আদালতে বাংলাদেশের সরকারকে যেতে হবে। মওলানা ভাসানীর মতো প্রয়োজন হলে আবারও আমরা লং মার্চের আয়োজন করব। এবাই তিস্তার লড়াই আমাদের জিততেই হবে, যদি এই জনপদের লোকদের বাঁচাতে চাই।’
সভাপতির বক্তব্যে বিএনপির রংপুর বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল হাবিব দুলু বলেন, ‘রংপুর ছিল রঙ্গে রসে ভরপুর। তাকে আজ বিরানভূমিতে পরিণত করা হয়েছে। ছিন্নমূল মানুষ বাড়িঘর হারিয়ে দেশান্তরী হয়ে কোথায় চলে গেছে আমরা বলতে পারি না।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের দাবি তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা বুঝে পাওয়া, তিস্তা নিয়ে একটি পরিকল্পনা হয়েছে, সেই পরিকল্পনার মাধ্যমে তিস্তাকে শাসন করা, ড্রেজিং করা, এখানে শিল্পকারখানা তৈরি করা এবং কর্মসংস্থান তৈরি করা। অবিলম্বে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে হবে। আগামীকাল আমরা তিস্তার পানিতে নামব, কেননা আমরা দেখিয়ে দিতে চাই তিস্তার পানি এখন হাঁটুর নিচে।’
কর্মসূচি বাস্তবায়নে তিস্তার বুকে মঞ্চ তৈরি, খাবারের ব্যবস্থা ও তাঁবু টানিয়ে রাত্রিযাপনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। কর্মসূচিতে শিক্ষার্থী, কৃষক, মৎস্যজীবী, পরিবেশকর্মী, শিক্ষক, চিকিৎসক থেকে শুরু করে বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের হাজার হাজার মানুষ অংশ নেন। তারা সবাই শুকিয়ে যাওয়া তিস্তাকে রক্ষায় একত্রিত হয়েছেন।
শফিকুল/সালমান/