
মুক্তিযুদ্ধের সবার সঠিক সত্য ইতিহাস তুলে ধরলেই সবাই সঠিক ইতিহাস জানতে পারবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি বলেন, সবার ইতিহাস যদি আমরা নিতে আসতে পারি তাহলেই সত্য ও সঠিক ইতিহাস সবাই জানতে পারবে।
শনিবার (১৮ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় রাজধানীর শাহবাগে শহিদ আবু সাইদ কনভেনশন সেন্টারে 'শহিদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান: যার গল্প আমাদের আদর্শ' শীর্ষক আলোচনা সভায় আগন্তুকের প্রশ্নের সম্পূরক উত্তরে ভাচ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এই মন্তব্য করেন।
বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বীর উত্তমের ৮৯তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে দুই পর্বের এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশন (জেডআরএফ)।
তারেক রহমান বলেন, গণতন্ত্র মানে মতপ্রকাশ বা অধিকার প্রয়োগ। ভোটের মাধ্যমে মানুষ সেটা প্রকাশ করে থাকে। বাংলাদেশে বিভিন্ন দলের আদর্শের মধ্যে পার্থক্য থাকবে এটাই স্বাভাবিক। তবে যেকোনো মূল্যে কথা বলার অধিকার থাকতে হবে, ভোটদানের ক্ষমতা থাকতে হবে না এ বিষয়ে দলমত নির্বিশেষে ঐকমত্য থাকতে হবে। সেইসঙ্গে মানুষের ভোটদানের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। তাহলেই আমরা আগামী ১৫/২০ বছর গণতন্ত্র ধ্বংসের রাহু থেকে মুক্ত থাকবো। স্বৈরাচারমুক্ত পরিবেশ আমরা ধীরে ধীরে গড়ে তুলতে পারবো।
বাবার স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে আমরা তিনভাবে দেখতে পাই।
প্রথমত- একজন সৈনিকের দায়িত্ব সঠিক পালন করেছেন। আমি তিনি দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষা করেছে। যখন সময়ে সেই সময়ে মানুষকে রক্ষার জন্য স্বাধীনতার ডাক দিয়েছেন। মুক্তিযুদ্ধের সময়ে মুক্তিযুদ্ধের উজ্জীবিত ও সাধারণ মানুষদের যুদ্ধে যাওয়ার জন্য উজ্জীবিত করেছেন। আগামী দিনে যারা সশস্ব বাহিনীতে আসবেন তারা জিয়াউর রহমানের আর্দশ তাদেরকে উজ্জীবিত করবেন।
দ্বিতীয়ত- দেশের প্রয়োজনে শহিদ জিয়াউর রহমানকে রাজনীতিবিদ হিসেব আবির্ভুত হয়ে ছিলেন। রাজনীতিবিদ হিসেবে তিনি শুধু ঢাকা ভেতরের বসে থাকেনি। মানুষের কাছে ছুটে গিয়েছেন। তাদের সমস্যার কথা শুনে ১৯ দফা দিয়েছেন। জাতিকে বিভক্তি না করে আমরা বাংলাদেশী হিসেবে পরিচয় দিয়েছিলেন।
তৃতীয়ত- দায়িত্ব গ্রহণের পর দেশ ও দেশের মানুষ সঠিকভাবে পরিচালনা করেছিলেন। তার আমলে প্রবাসী ও গামের্ন্টস শিল্পে অবদান বৈদেশিক মুদ্রার সমস্যা অবসান করেছিলেন। ওনার (জিয়াউর রহমান) জীবন থেকে দেশকে উজ্জল ভবিষ্যতের দিকে নিয়ে যেতে সক্ষম হবে।
এ সময় শহিদ জিয়াউর রহমান ও খালেদা জিয়ার স্মৃতিচারণ করে ডা. জুবাইদা রহমান বলেন, তাদের উৎসাহ ও অনুপ্রেরণা আমার মতো অনেক শিশু কিশোরের জন্য চলের পথের পাথেয়। এসময় তিনি জিয়াউর রহমানকে নিয়ে একটি কবিতা আবৃত্তি করেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, 'জিয়াউর রহমানই স্বাধীনতার প্রথম ঘোষক। শহিদ জিয়াউর রহমানই মুক্তিযুদ্ধের প্রথম বিদ্রোহী। তিনি পরিবারের দিকে এবং নিজের জীবনের দিকে তাকাননি। সুতরাং কে কোথায় কি লিখলো তা নিয়ে উদ্বেগের কিছু নেই। আইন করে আমাদেরকে বাধ্য করা যাবে না যে স্বাধীনতার ঘোষক অন্য কেউ।'
তিনি আরও বলেন, জিয়াউর রহমান ১নং কমান্ডার। পরবর্তীতে তিনি ১১নং সেক্টরেও যুদ্ধ করেছেন। যিনি জেড ফোর্সের অধিনায়ক। তিনি মানুষের মনে আশার সঞ্চার করেছিলেন একাত্তরের মার্চে। এরপর তিনি তার সেনা জীবনের পেশায় ফিরে যান। কিন্তু আবারও যখন ৭৫ সালের ৭ নভেম্বর জাতীয় দুর্যোগ এলো তখন আবার জিয়ার কণ্ঠ শোনা যায়। তিনি কঠিন দায়িত্ব নিয়ে আবির্ভূত হয়েছিলেন। দায়িত্ব গ্রহণের পর দেশের অর্থনীতি, রাষ্ট্রনীতি, পররাষ্ট্রনীতি ও গণমাধ্যমসহ প্রায় সকল খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনেন কয়েকদিনের মধ্যেই। জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করে গ্রাম সরকার গঠন করেন। এভাবে একে একে খাদ্য, বস্ত্র, চিকিৎসা ও বাসস্থান নিশ্চিতের লক্ষ্যে ১৯ দফায় সংযুক্ত করলেন। গ্রামে-গঞ্জে মাইলের পর মাইল ঘুরে সাধারণ মানুষকে উদ্বুদ্ধ করছেন। আগামীতেও আমরা জিয়াউর রহমানের আদর্শকে ধারণ করে এগিয়ে যাবো ইনশাআল্লাহ।
অনুষ্ঠানের প্রথম পর্বে ঢাকার শাহবাগে শহিদ আবু সাইদ কনভেনশন সেন্টারে (ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলের বিপরীতে) দুপুর আড়াইটা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত আলোকচিত্র প্রদর্শনী এবং শিশু কিশোরদের নিয়ে জিয়াউর রহমান প্রসঙ্গে গল্প বলা অনুষ্ঠান হয়। মঞ্চে জিয়াউর রহমানের বিভিন্ন স্মৃতিচারণমূলক বিষয়ে শিশু কিশোরদের গান শোনান বরেণ্য কণ্ঠশিল্পী কনকচাঁপা ও বেবি নাজনীন। পাশাপাশি ছোট্ট শিশুরাও জিয়াউর রহমানের বিষয়ে বক্তব্য তুলে ধরেন। মিলনায়তনের বাইরে জিয়াউর রহমানের জীবনঘনিষ্ঠ অসংখ্য ছবি পরিদর্শন করা হয়।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন জেডআরএফের নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ডা. ফরহাদ হালিম ডোনার, জিয়াউর রহমানের জন্মবার্ষিকী উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক ডা. শাহ মুহাম্মদ আমান উল্লাহ, সদস্য সচিব ড. সোহাগ আওয়াল এবং সদস্য ডা. মোস্তফা আজিজ সুমন, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মীর নাছির, নূরুল ইসলাম মনি, বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আফরোজা খান রীতা, জেডআরএফের অধ্যাপক ড. মোর্শেদ হাসান খান, ডা. পারভেজ রেজা কাকন, অধ্যাপক লুৎফর রহমান, ড. আবুল হাসনাত মো. শামীম, অধ্যাপক আবদুল করিম, আমিরুল ইসলাম কাগজী, আতিকুর রহমান রুমনসহ রাজনীতিক ও পেশাজীবী সংগঠনের ব্যাক্তিরা।
শফিকুল ইসলাম/মেহেদী/