
‘বৃষ্টি শুরু হলে ঢাকায় থেকেও আমাদের বুক দুরুদুরু কাঁপে কখন কী হয়। বৃষ্টি শুরু হলে তিস্তাপাড়ের মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়ে। তিস্তার কবল থেকে রক্ষায় এখানকার মানুষ তিস্তা প্রকল্প চায়। কিন্তু কেন সে প্রকল্প বাস্তবায়ন হলো না, কার কারণে হচ্ছেনা? ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের কারণে তিস্তা প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়নি। মানুষের দুঃখ কমেনি’- এসব কথা বলেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান।
কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজ মাঠে শুক্রবার (২৪ জানুয়ারি) সকালে জেলা জামায়াত আয়োজিত কর্মী সম্মেলনে যোগ দিয়ে প্রধান অথিতির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
এ সময় আমির আরও বলেন, আওয়ামীগ সরকার কখনো বাংলাদেশের ছিল না। তাই শেষ সময়ে তারা তাদের দেশ (ভারত) বেছে নিয়েছে।
সভায় প্রধান অতিথি বলেন, ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি থেকে আজ পর্যন্ত যেসব অন্যায় হয়েছে, দখল হয়েছে, সেসব কারা করেছে। তারা সবকিছুতে জামায়াতকে টেনে আনত। পরে দেখা গেছে সব যুবলীগ, ছাত্রলীগ করেছে। দেশের সকল জনগণ আওয়ামী বিরোধী দলসহ সকলকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। যাতে আর কখনো এমন দুঃশাসন পরিস্থিতি তৈরি না হয়। এছাড়াও সকল অপকর্মকারীদের তালিকা করে জনগণের সামনে তুলে ধরতে বলেন তিনি। বলেন, ‘এতে যদি আমার নাম থাকে তাও তুলে ধরুন।’
জামায়াতে ইসলামীর সমাবেশে আসা কর্মী-সমর্থকদের একাংশ। ছবি: খবরের কাগজ
পতিত আওয়ামী লীগ সরকারকে ইঙ্গিত করে জামায়াতে আমির বলেন, তারা বিডিআর বিদ্রোহের নামে আমাদের চৌকস অফিসারদের হত্যার মধ্য দিয়ে সরকার গঠন করেছিল। তারপর একের পর এক গুমখুন করেছে তারা। দেশের ২৬ হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছে। তারা পরে গেছে, আগে টাকা পাঠিয়েছে।
২০০১ সালে কুড়িগ্রামের রৌমারীর বড়াইবাড়ী সীমান্তে বিডিআর-বিএসএফের মধ্যে হওয়া যুদ্ধের প্রতিশোধ নিতে বিডিআর বিদ্রোহের নামে হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
ইসলামী, ন্যায়ভিত্তিক রাস্ট্র গঠনের লক্ষে সবার ভালোবাসা চান আমিরে জামায়াত। বলেন, আপনারা যদি আমাদের ভালোবাসেন, আগামীতে সরকারের দায়িত্ব দেন, তাহলে সরকার প্রধানের জেলায় মুখ দেখে দেখে উন্নয়ন করা হবেনা। সমতার উন্নয়ন করা হবে। পিছিয়ে পড়া জেলাগুলোতে আগে উন্নয়ন করা হবে। এমনকি ওইসব জেলার চেয়ে বেশি উন্নয়ন করা হবে।
তিনি বলেন, রংপুর অঞ্চল সবসময় অবহেলিত ছিল। অথচ সব সংগ্রামে রংপুর কুড়িগ্রামের অবদান অনেক।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দালন নিয়ে বলেন, আমাদের যে শ্লোগান শোনা যায়, ‘আবু সাঈদ-মুগ্ধ, শেষ হয়নি যুদ্ধ।’ সত্যিকারে এখনো যুদ্ধ শেষ হয়নি। ন্যায়ের রাষ্ট্র না গড়া পর্যন্ত আমাদের যুদ্ধ চলবে।
তিনি বলেন, ছাত্ররা আকাঙ্ক্ষা নিয়ে আন্দোলন করেছিল সেটি রক্ষায় আমাদের ঐক্যর প্রয়োজন। সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।
জামায়াতের জেলা আমির মাওলানা আব্দুল মতিন ফারুকীর সভাপতিত্বে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল হালিম, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য অধ্যক্ষ মাওলানা মমতাজ উদ্দিন, অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান বেলালসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন সভায়।
দলীয় নেতারা জানান, প্রায় ২১ বছর পর জেলা জামায়াত এভাবে সভা করার সুযোগ পেয়েছে। সকাল থেকে জেলার উপজেলাগুলো থেকে মিছিল নিয়ে সরকারি কলেজ মাঠে আসতে শুরু করে দলের নেতা-কর্মীরা। কর্মী সম্মেলন শেষে জেলার নাগেশ্বরীর রামখানায় ফেলানীর বাড়িতে যান আমিরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমান।
গোলাম মওলা সিরাজ/মাহফুজ