পটুয়াখালী-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদারের কুয়াকাটায় দখল করা জমির সুরক্ষা দায়িত্ব নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে কুয়াকাটা পৌর বিএনপির সভাপতি আজিজ মুসল্লির বিরুদ্ধে। সম্প্রতি রুহুল আমিনের দখল থেকে উদ্ধার হওয়া জমি পুনরায় দখল নেওয়ায় কুয়াকাটা বিএনপির অধিকাংশ নেতা-কর্মীর সমালোচনার মুখে পড়েন আজিজ মুসল্লি। তাই তার নিজের দোষ ঢাকতে বৃহস্পতিবার বিকেলে সংবাদ সম্মেলন করে অভিযোগ ভিত্তিহীন মিথ্যা ও অপপ্রচার বলে দাবি করেছেন। এদিকে আজিজ মুসল্লি রুহুল আমিন হাওলাদারের পক্ষে অবস্থান নেওয়ার প্রতিবাদ জানিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন আবুল কালাম নামের ওই জমির অপর এক মালিক।
স্থানীয় ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গত বুধবার দুপুরে (১২ মার্চ) কুয়াকাটা পৌর বিএনপির সভাপতি আজিজ মুসল্লির নেতৃত্বে তার সহযোগী ও তার ভাতিজা জয় বাংলা ক্লাবের সেক্রেটারি মিজান মুসল্লি, জাহাঙ্গীর শেখ, শাহজাহান মুসল্লি, জাহাঙ্গীর খাঁ এবং রুহুল আমিন হাওলাদারের হোটেল গ্র্যান্ড কুয়াকাটার কয়েকজন কর্মচারী কুয়াকাটা-বরিশাল মহাসড়কের কুয়াকাটা পেট্রল পাম্পসংলগ্ন জমির সীমানা পিলার ও সাইনবোর্ড উপড়ে ভ্যানযোগে নিয়ে যান।
এ সময়ে জমির মূল মালিক আবদুল রসিদ মোল্লা ও তার ছেলে মঞ্জু মোল্লাসহ এলাকাবাসী প্রতিবাদ জানানোর পাশাপাশি ভিডিও ধারণ করেন। ওই ভিডিওতে আজিজ মুসল্লিকে বলতে শোনা যায়, রুহুল আমিনের সঙ্গে প্রতিবাদকারীদের বসিয়ে মীমাংসা দেওয়ার। এ জন্য তার সঙ্গে ঢাকায় যাওয়ার পরামর্শ দেন। ভিডিওটি ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
স্থানীয় বিএনপির একাধিক নেতা বলেন, গত ১৭ বছরে রুহুল আমিন হাওলাদার ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে কুয়াকাটাসহ সাগরপাড় এলাকায় কয়েক শ একর জমি দখল করেছেন। ৫ আগস্টে দেশের পটপরিবর্তনের পর তার দখল করা বেশ কিছু জমি প্রকৃত মালিকরা বুঝে নেন। জমিগুলো পুনঃদখল এবং অন্যান্য সম্পদের সুরক্ষা দিতে পৌর বিএনপির সভাপতি আজিজ মুসল্লিকে দায়িত্ব দেন রুহুল আমিন হাওলাদার।
রুহুল আমিনের অবৈধ সম্পদের সুরক্ষার দায়িত্ব পাওয়ার পর গত ৯ মার্চ লতা চাপিলা এলাকার আবদুল রসিদ মোল্লা গংয়ের জমি পুনরায় দখল নেন আজিজ মুসল্লি। এ ঘটনায় স্থানীয় বিএনপির অধিকাংশ নেতা-কর্মী ও স্থানীয়রা প্রতিবাদ জানিয়েছেন। তাদের পক্ষে গত বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলন করেছেন ওই জমির অপর এক মালিক কাজী মো. আবুল কালাম।
তিনি জানান ২০০৬, ২০০৭ এবং ২০০৮ সালে লতাচাপলী মৌজায় এসএ ৯৬৪ নম্বর খতিয়ানের জমির মালিক আবদুর রসিদ মোল্লার কাছ থেকে ২ একর ৩১ শতক জমি কিনে ভোগদখলে ছিলাম। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসর পরে ২০১০ ভুয়া কাগজপত্র বানিয়ে এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার জমি জবরদখল করে রাখেন।
তিনি বলেন, ‘গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পরে আমাদের জমি পুনরুদ্ধার করি। গত শনিবার (৮ মার্চ) জমির সীমানা নির্ধারণ করিয়া পিলার এবং সাইনবোর্ড স্থাপন করা হয়। পরের দিন রবিবার পৌর বিএনপির সভাপতি আবদুল আজিজ মুসল্লি ও তার সহযোগীরা জমির পিলার ও সাইনবোর্ড উঠিয়ে নেয়। ওই সময়ে স্থানীয়রা দখলদারত্বের ভিডিও ধারণ করেন। ওই ফুটেজ সংরক্ষিত আছে।’
এ ঘটনার প্রচার হওয়ার পরে পৌর বিএনপির সভাপতি আজিজ মুসল্লি ক্ষিপ্ত হয়ে আমাদেরসহ রসিদ মোল্লার পরিবারের সদস্যদের প্রতি বিভ্রান্তিমূলক তথ্য প্রচার করেছেন।
গত শুক্রবার বিকেলে এ বিষয়ে পৌর বিএনপির সভাপতি আজিজ মুসল্লি খবরের কাগজকে বলেন, ‘বিএনপির কুয়াকাটা পৌর শাখার সভাপতি হিসেবে সুনামের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছি। সুদীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে কোনো অপরাজনীতি করিনি। গত ৫ আগস্ট স্বৈরাচার হাসিনা সরকারের পতনের পর বিএনপির কিছু লোক রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের জমিতে সাইনবোর্ড ও পিলার স্থাপন করে বিএনপির সুনাম নষ্ট করছেন।’
একইভাবে রুহুল আমিন হাওলাদারের ওই জমিতে একটি পক্ষ সাইনবোর্ড ও পিলার স্থাপন করায় তাদের সঙ্গে রাগারাগি করেছি এবং কয়েকটি পিলার ও সাইনবোর্ড অপসারণ করেছি। তাদের এও বলেছি, ‘রুহুল আমিন হাওলাদারের সঙ্গে কোনো ঝামেলা থাকলে ঢাকায় চল, আমি নিজে থেকে সব কিছু ঠিকঠাক করে দেব। সহজ বিষয়টি একেক জন একেকভাবে রং লাগাচ্ছে। এখানে রুহুল আমিন হাওলাদারকে সুরক্ষা দেওয়ার কিছু নেই।’