ধর্ষণ মামলায় কারাদণ্ডের বিধান বাতিল করে শুধুমাত্র মৃত্যুদণ্ডের (ফাঁসি) বিধান এবং ৯০ দিনের মধ্যে মামলা নিষ্পত্তি বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর মহিলা বিভাগ।
শনিবার (১৫ মার্চ) জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে ধর্ষণ নামক ব্যাধি থেকে মুক্তি পেতে ৫ দাবিতে এবং শিশু আছিয়াকে পাশবিক নির্যাতনের মাধ্যমে হত্যার প্রতিবাদে আয়োজিত এক মানববন্ধন থেকে এই দাবি জানানো হয়।
মানববন্ধনে ‘বেঁচে থাকা ও নিরাপত্তার অধিকার দাও’, ‘ধর্ষকদের প্রকাশ্য জনসম্মুখে ফাঁসি চাই, দিতে হবে’, ‘ধর্ষণ মামলা ৯০ দিনের মধ্যে নিষ্পত্তি কর, করতে হবে’, ‘ধর্ষণ মামলায় জামিন বিধান বাতিল কর, করত হবে’, ‘ধর্ষণ মামলায় এক বিধান, এক শাস্তি; ধর্ষককে ফাঁসি দিবি, দিতে হবে’- এই দাবিতে উপস্থিত সহস্রাধিক নারী সরকারের কাছে এ দাবি জানান।
মানববন্ধনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর মহিলা বিভাগের সেক্রেটারি অধ্যাপক নুরন্নিসা সিদ্দিকা বলেন, আছিয়া হত্যার মামলার রায় এক সপ্তাহের মধ্যে দিতে হবে এবং আসামিদের মৃত্যুদণ্ড দিতে হবে। সব ধর্ষককে ফাঁসি দিতে হবে। ধর্মহীনতার চর্চা এবং নৈতিকতাহীন শিক্ষা মূল্যবোধের অবক্ষয়ের জন্য দায়ী, ইসলামী শিক্ষা ব্যবস্থা চালু এবং ধর্মীয় মূল্যবোধে জনগণকে উজ্জীবিত করতে হবে। আইনের যথাযথ প্রয়োগ করতে হবে। বিচারের দীর্ঘসূত্রতা পরিহার করতে হবে। বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। ধর্ষণ মামলায় কারাদণ্ডের বিধান বাতিল করে শুধুমাত্র মৃত্যুদণ্ডের (ফাঁসি) বিধান করতে হবে। ধর্ষকরা যুগে যুগে আইনের ফাঁক দিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার কারণেই সমাজ থেকে ধর্ষণ নামক ব্যাধি দূর করা যায়নি।
তিনি আরও বলেন, ধর্ষককে তার নিজ এলাকায় জনসম্মুখে ফাঁসি দিতে হবে। এতে পরবর্তীতে কেউ ধর্ষণের অপরাধ করার সাহস পাবে না।
অন্তর্বর্তী সরকারকে ৯০ দিনের মধ্যে ধর্ষণ মামলা নিষ্পত্তি করার এবং জামিন বিধান বাতিল করার যে ঘোষণা দিয়েছে, তা বাস্তবায়নের দাবি জানিয়ে নুরন্নিসা সিদ্দিকা বলেন, শিশু আছিয়াকে শুধু ধর্ষণ করা হয়নি হত্যাও করা হয়েছে। এই ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের সরকারের ঘোষণা ও আমাদের ৫ দাবির আলোকে বিচার করতে হবে। নতুবা নারী সমাজ কঠোর আন্দোলনে রাজপথে নেমে আসবে।
শিশু আছিয়ার ধর্ষণ ও হত্যাকে দ্রুত বিচার আইনে বিচারের দাবি জানান জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য অ্যাডভোকেট সাবিকুন্নাহার মুন্নী।
তিনি বলেন, বিগত স্বৈরাচার সরকারের ছত্রছায়ায় ধর্ষণের ঘটনা সমাজে বিস্তার করেছে। ছাত্রলীগ নেতা ধর্ষণের সেঞ্চুরি করে মিষ্টি বিতরণ করেছে কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকার তার বিচার করেনি। এতেই স্পষ্ট আওয়ামী লীগ ধর্ষণের বিস্তার ঘটিয়েছে।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি সমর্থনের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, রাষ্ট্র সংস্কারের আগে মানুষের নৈতিকতার সংস্কার জরুরি। রাজনৈতিক দলগুলোর সংস্কার জরুরি। রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় অপরাধীরা বেরিয়ে যাওয়ার সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে না আসলে রাষ্ট্র সংস্কারের সুফল পাওয়া যাবে না। সরকার এই ৫ দাবি বাস্তবায়ন না করলেই নারী সমাজকে কঠোর আন্দোলনে যেতে হবে।
জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য নাজমুন্নাহার নীল বলেন, সমাজে মূল্যবোধ আর নৈতিকতার অভাব। তাই আমরা আর নিরব থাকতে পারি না। শিক্ষাব্যবস্থায় নৈতিকতার কোনো উপাদান নেই। শিক্ষাব্যবস্থায় ধস নামার কারণেই সমাজের আজ করুন পরিণতি। আইন ও শালিস কেন্দ্রের তথ্যানুযায়ী বিগত ১০ বছরে সাড়ে তিন হাজার শিশু ধর্ষণের মামলা হলেও একটি মামলারও বিচার হয়নি। তিনি সব ধর্ষণ মামলা দ্রুত বিচার আইনে নিষ্পত্তি করে ধর্ষকদের ফাঁসি দেওয়ার দাবি জানান।
মানববন্ধনে আরও উপস্থিত ছিলেন- বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর মহিলা বিভাগের সহকারী সেক্রেটারি সাঈদা রুম্মান ও মার্জিয়া বেগম, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য যথাক্রমে- রোজিনা আখতার, আয়েশা সিদ্দিকা পারভীন, সালমা সুলতানা, ইরানি আখতার, মাহবুবা জাহান, খোন্দকার আয়েশা সিদ্দিকা, সুফিয়া জামালসহ মহানগরী উত্তর ও দক্ষিণের দায়িত্বশীল মহিলা নেত্রীরা।
শফিকুল ইসলাম/অমিয়/