জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কাছে রবিবার (২৩ মার্চ) ‘স্প্রেডশিট’ ও সংস্কারের বিষয়ে লিখিত বক্তব্য পেশ করেছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)।
সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, সহকারী সাধারণ সম্পাদক মিহির ঘোষ, সম্পাদক ডা. সাজেদুল হক রুবেল ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আসলাম খান এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
রাষ্ট্রকাঠামো সংস্কারের লক্ষ্যে প্রস্তাবনায় যা বলা হয়েছে, তার অনেক বিষয়ে একমত হলেও কিছু মৌলিক বিষয়ে দ্বিমত ও আপত্তি আছে সিপিবির। লিখিত বক্তব্যে সেই কথা উল্লেখ করে বলা হয়েছে, যেসব বিষয়ে আপত্তি রয়েছে তা নিয়ে সিপিবির ‘বিকল্প বা নতুন প্রস্তাব’ রয়েছে। মুখোমুখি আলোচনায় সেসব প্রস্তাবনা তুলে ধরার কথা বলেন সিপিবি নেতারা।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়েছে, জনগণের শক্তির ওপর নির্ভর করে সংস্কারের পথে এগুতে হবে। জনগণকে সংস্কার প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত করে ও জনগণের মতামতকে ভিত্তি করেই আমাদের এ কাজ (সংস্কার) সম্পন্ন করতে হবে। সিপিবি নেতারা জানান, তারা সমাজ, অর্থনীতি ও রাষ্ট্রব্যবস্থার মৌলিক সংস্কার করে সমাজতন্ত্রের জন্য অগ্রসর হচ্ছেন। তাদের লক্ষ্য বিপ্লবী গণতান্ত্রিক পরিবর্তন। তবে এ গণতান্ত্রিক পরিবর্তনের জন্য সিপিবির বিকল্প প্রস্তাবনা রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। লিখিত বক্তব্যে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রব্যবস্থা ও রাজনীতি, অর্থনীতি, উন্নয়ন, দারিদ্র্যবিমোচনসহ সব ক্ষেত্রে সিপিবির বিকল্প প্রস্তাবনা রয়েছে।
এই প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, সব ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের সব ক্ষমতার মালিক জনগণ ও রাষ্ট্র পরিচালনায় জনগণের সার্বভৌমত্ব ও যথাযথ কার্যকর ভূমিকা নিশ্চিত করতে হবে। এই লক্ষ্যে রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা ও রাষ্ট্রযন্ত্রের প্রশাসনিক কাঠামো গণতন্ত্র, উপযুক্ত বিকেন্দ্রীকরণ, জবাবদিহি, স্বচ্ছতা এবং জনগণের কার্যকর নিয়ন্ত্রণ ও অংশগ্রহণের বিষয়গুলো এই নীতিমালার ভিত্তিতে মৌলিকভাবে ঢেলে সাজাতে হবে।
সিপিবির প্রস্তাবনায় অবাধ ও খোলাবাজার অর্থনীতিব্যবস্থার আমূল পরিবর্তনের কথা বলা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, দক্ষ ও দুর্নীতিমুক্ত রাষ্ট্রীয় খাতকে প্রাধান্য দিয়ে তার পাশাপাশি, সমবায়ী খাত, ব্যক্তি খাত ও মিশ্র খাতসহ প্রতিটি খাতের যথাযথ ও সুপরিকল্পিত ভূমিকা নিশ্চিত করে স্বাধীন জাতীয় অর্থনৈতিক বিকাশের পথ সুগম করতে হবে। সম্পদের সুষম বণ্টন নিশ্চিত করতে হবে।
নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের জন্য নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কারের কথা বলেন সিপিবি নেতারা। তারা বলেন, ‘এই কাজ করার জন্য যতদ্রুত সম্ভব গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরিত হলে তারাই জনগণের মতামতের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় সংস্কারকাজ এগিয়ে নেবে। এ ছাড়া জনগণের ওপরই এসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ভার ছেড়ে দিতে হবে।’
ঐকমত্য কমিশনের স্প্রেডশিট নিয়ে দ্বিমত রয়েছে সিপিবির। লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ‘আপনাদের পাঠানো স্প্রেডশিটে অধিকাংশ প্রশ্নই অস্বচ্ছ, অসম্পূর্ণ, একপেশে। অনেক প্রশ্ন ব্যাখ্যার দাবি রাখে। আলাপ-আলোচনা বাদে এসব প্রশ্নের বিষয়ে টিক চিহ্ন দিয়ে মতামত দেওয়া যথাযথ হবে না।’
বাসদ (মার্কসবাদী)
রবিবার সকালে ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাবনা সম্পর্কে মতামত পেশ করেছে বাসদ (মার্কসবাদী)। কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার এ সময় উপস্থিত ছিলেন। বাসদ (মার্কসবাদী)-এর সমন্বয়ক মাসুদ রানার নেতৃত্বে প্রতিনিধি দলে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় নির্বাহী ফোরামের সদস্য জয়দীপ ভট্টাচার্য, সীমা দত্ত, তসলিমা আক্তার ও রাশেদ শাহরিয়ার।
স্প্রেডশিটের বিষয়ে বাসদ (মার্কসবাদী) দলের পক্ষে আপত্তি জানিয়ে বলা হয়েছে, ‘স্প্রেডশিটে যেভাবে টিক চিহ্নের মাধ্যমে মতামত চাওয়া হয়েছে, সেভাবে মতামত দিয়ে ঐকমত্যে পৌঁছানোর পদ্ধতিটি যথাযথ নয়। বিষয়গুলো জটিল এবং বেশির ভাগ বিষয়ই ব্যাখ্যার দাবি রাখে। খুব অল্প কয়েকটি পয়েন্টে এরূপ এক কথায় উত্তর দেওয়া যায়।’
সংবিধান সংস্কার কমিশন ও নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কারের লক্ষ্যে স্প্রেডশিটে উল্লিখিত কমিশনের প্রস্তাবনাগুলো নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আরও আলাপ-আলোচনার প্রয়োজন রয়েছে বলে জানান বাসদ (মার্কসবাদী) নেতারা।
মাসুদ রানা বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের আগেই ১১১টি প্রস্তাবনা বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এই প্রস্তাবনাগুলোর মধ্যে রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন বিধির সংস্কারের বিষয়ে বেশির ভাগ দলের ঐকমত্য আছে। তবে এখানে কিছু প্রস্তাবনা রয়েছে, যা জনস্বার্থবিরোধী।’