ঢাকা ৫ মাঘ ১৪৩১, রোববার, ১৯ জানুয়ারি ২০২৫

বড়দিনের ইতিহাস ও তাৎপর্য

প্রকাশ: ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:২৯ পিএম
বড়দিনের ইতিহাস ও তাৎপর্য
বিচিত্র কুমার

বড়দিন, যা ক্রিসমাস নামেও পরিচিত, খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীদের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় উৎসব। এটি যিশুখ্রিষ্টের জন্মোৎসব হিসেবে পালিত হয়। প্রতি বছর ২৫ ডিসেম্বর দিনটি ঘিরে সারা পৃথিবীতে আনন্দ, উদ্দীপনা ও প্রার্থনার ঢেউ বয়ে যায়। কিন্তু এই উৎসবের তাৎপর্য শুধু ধর্মীয় পরিসরেই সীমাবদ্ধ নয়। এটি মানবিকতা, ভালোবাসা এবং ঐক্যের এক অনন্য প্রতীক।

বড়দিনের সূচনা হয় খ্রিষ্টধর্মের প্রাচীন যুগে। যদিও বাইবেলে যিশুর জন্ম তারিখ নির্দিষ্টভাবে উল্লেখ নেই, চতুর্থ শতাব্দীতে রোমান সম্রাট কনস্টান্টাইনের শাসনামলে ২৫ ডিসেম্বর দিনটি যিশুর জন্মদিন হিসেবে উদযাপন শুরু হয়। এ দিনটি রোমানদের ‘সোল ইনভিকটাস’ নামক শীতকালীন উৎসবের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল। খ্রিষ্টধর্মের প্রচার ও প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে এই তারিখকে যিশুর জন্মদিন হিসেবে গ্রহণ করা হয়। প্রাচীন রোম থেকে শুরু হওয়া এই উৎসবটি মধ্যযুগে বিভিন্ন সংস্কৃতির মিশ্রণে নতুন রূপ নেয়। ক্রিসমাস ট্রি, উপহার বিনিময় ও ক্যারোল গানের মতো উপাদান বড়দিন উদযাপনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে ওঠে।

বড়দিনের তাৎপর্য শুধু যিশুর জন্ম উদযাপনের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এটি মানবতার প্রতি ঈশ্বরের গভীর ভালোবাসার এক জীবন্ত প্রতিচ্ছবি। যিশুর জন্ম সেই সময় হয়েছিল যখন সমাজ ছিল অন্যায়, দুঃখ ও বিভেদের আঘাতে জর্জরিত। তার আগমন মানবজাতিকে শান্তি ও মুক্তির এক নতুন বার্তা দিয়েছিল। যিশু তার জীবন দিয়ে শিখিয়েছেন ত্যাগ, ক্ষমা এবং দয়ার মর্ম। আজকের বাস্তব জীবনে বড়দিনের এই শিক্ষাগুলো আরও বেশি প্রাসঙ্গিক।

বড়দিন মানুষের মনে ক্ষমার শিক্ষা দেয়। জীবনের প্রতিকূল পরিস্থিতিতে যিশুর উদারতার উদাহরণ আমাদের বিভেদ ভুলে এক হওয়ার পথ দেখায়। এই উৎসবের আরেকটি তাৎপর্য হলো সেবার বার্তা। যিশু ছিলেন দরিদ্র, অসহায় এবং নিপীড়িত মানুষের বন্ধু। তিনি শিখিয়েছেন, প্রকৃত ধর্ম মানুষকে ভালোবাসার মাধ্যমে প্রকাশ পায়। বড়দিনের সময়ে গরিব-দুঃখীদের সাহায্য করার যে রীতি প্রচলিত, তা আমাদের এই শিক্ষাই দেয় যে, মানবতার সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করাই সর্বোচ্চ ধর্ম।

বড়দিন শুধু ধর্মীয় আচার নয়, এটি সামাজিক ও পারিবারিক বন্ধনকে মজবুত করার একটি উপলক্ষ। বড়দিনে পরিবার একত্রিত হয়, একসঙ্গে প্রার্থনা ও আনন্দ করে। বর্তমান সময়ে, যখন পারিবারিক বন্ধন শিথিল হয়ে যাচ্ছে, বড়দিন আমাদের শেখায় কীভাবে ঐক্যবদ্ধ থাকা যায়। একইভাবে, এটি সমাজে ঐক্যের এক শক্তিশালী বার্তা দেয়।

এই উৎসবের মাধ্যমে মানুষ পরিবেশের প্রতি যত্নশীল হওয়ার শিক্ষাও পায়। ক্রিসমাস ট্রি সাজানোর সময় পরিবেশবান্ধব উপাদান ব্যবহার এবং অপ্রয়োজনীয় ভোগবাদের পরিবর্তে সাশ্রয়ী উদযাপন বর্তমান পৃথিবীর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

বড়দিন আমাদের জীবনে আশার এক নতুন আলো জ্বালায়। যিশুর জন্ম ছিল এক নতুন সূচনার প্রতীক। জীবনের অন্ধকার সময়ে বড়দিন আমাদের মনে করিয়ে দেয়, প্রতিটি কঠিন পরিস্থিতির পেছনে একটি নতুন সূচনা অপেক্ষা করে।

আজকের বাস্তবতায় বড়দিনের শিক্ষাগুলো সমাজের প্রতিটি স্তরে গুরুত্বপূর্ণ। এটি আমাদের সৎভাবে জীবনযাপন, ন্যায়পরায়ণতা এবং অন্যের জন্য ত্যাগ স্বীকার করার প্রেরণা দেয়। যিশুর শিক্ষা যদি আমরা বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করতে পারি, তবে সমাজে শান্তি, ভালোবাসা এবং মানবতার প্রসার ঘটবে।

বড়দিন কেবল একটি উৎসব নয়, এটি এক শিক্ষা। এটি আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, জীবনের প্রকৃত অর্থ শান্তি, ক্ষমা ও ভালোবাসায় নিহিত। যিশুর জীবন আমাদের পথ দেখায় এবং তার শিক্ষা আমাদের জীবনে সত্য ও ন্যায়ের আলো ছড়ায়। বড়দিনের মূল তাৎপর্য মানবতার এই চিরন্তন বার্তায় নিহিত।

বিচিত্র কুমার
খিহালী পশ্চিমপাড়া, আলতাফনগর, দুপচাঁচিয়া, বগুড়া
[email protected]

বড় গামলা রহস্য এবং ভোক্তা ঠকানো তত্ত্ব!

প্রকাশ: ১৩ জানুয়ারি ২০২৫, ০৫:১৩ পিএম
বড় গামলা রহস্য এবং ভোক্তা ঠকানো তত্ত্ব!
রিয়াজুল হক

আপনারা যারা গরুর মাংস কেনেন, অনেক ক্ষেত্রেই দেখবেন ডিজিটাল ওজন মাপার মেশিনটা দোকানের ভেতরে থাকে এবং সেটার উপর অনেক বড় গামলা বসানো থাকে। গামলার গলা এতো উঁচু থাকে যে, গামলার ভেতরের কোনায় আগে থেকে কিছু আছে কিনা, সেটা দোকানের বাইরে থেকে বোঝাও যায় না।

এখানে একটা প্রশ্ন থাকে, এক কেজি বা দুই কেজি বা পাঁচ কেজি মাংস কেনার জন্য এত বড় গামলার কী আদৌ প্রয়োজন আছে? না, নেই। সাধারণত ক্রেতারা তো একসঙ্গে এক কেজি বা দুই কেজি মাংসই কিনে থাকেন।

অথচ ডিজিটাল ওজন মাপার মেশিনের উপর যে গামলা রাখা হয়, সেটা ২০ কেজির উপরে মাংস কিনলে হয়তো প্রয়োজন হতে পারে। কিন্তু ২০ কেজি মাংস দোকান থেকে কয়জন কেনে? যদি ২০ কেজি, ৩০ কেজি বা বেশি মাংসের দরকার হয়, সেক্ষেত্রে তো তিনি গরু কিনে জবাই দেবেন। আবার মাংস পরিমাপ করার জন্য যে ডিজিটাল মেশিন ব্যবহার রাখা হয়, সেই মেশিনের ধারণক্ষমতা একবারে ২০ কেজি আছে কিনা, সেটাও কিন্তু প্রশ্নসাপেক্ষ ব্যাপার। এখানে নিচু গামলা ব্যবহার করা যেতো।

এখন মূল প্রশ্ন হচ্ছে, এত বড় গামলা ব্যবহার করা হচ্ছে, এর কারণ কী হতে পারে? অনেক জায়গায় দেখা গেছে, গামলার ভেতরে আগে থেকেই খাবার অনুপযোগী চর্বি/ হাড্ডি/ লেজ রাখা হয়। আর আপনার সামনে যে মাংস কাটা হচ্ছে, সেটা সেই আগে থেকে রেখে দেওয়া খাবারের চর্বি /হাড্ডির সঙ্গে মিশিয়ে মাপ দেওয়া হচ্ছে। এই খাবার উপযোগী এবং অনুপোযোগী মাংস মিশিয়ে বিক্রি করার আরেকটি তরিকা আছে। সেটা নিচে দুই নম্বর পরামর্শে উল্লেখ করা হয়েছে।

এবার একটু হিসাব করুন, এক কেজি মাংসের দাম ৭০০ টাকা। আপনাকে যদি এখন ২৫০ গ্রাম খাবার অনুপযোগী চর্বি/ফেলানো হাড্ডি দেওয়া হয়, তাহলে তার দাম দাঁড়ায় কত? আর আপনার সামনে যে মাংস কাটা হচ্ছে, সেগুলোর মধ্যে তো চর্বি, হাড্ডি থাকছেই।

যারা বাজারে মাংস কিনতে যান, তাদের প্রতি আমার দুইটি পরামর্শ।

এক) মাংস কেনার সময় যেভাবেই হোক ডিজিটাল মেশিনের উপর রাখা গামলাটি ভালো করে দেখুন, ভেতরে আগে থেকেই চর্বি/হাড্ডি রাখা আছে কিনা? 

আর যদি সম্ভব হয়, ডিজিটাল মেশিন দোকানের ভেতর থেকে বাইরে এনে দোকানের সামনে এনে রাখতে বলুন।

দুই) মাংস বিক্রেতা যে খাটিয়ায় মাংস কাটে, সেই খাটিয়ার কোনায় আগে থেকে যদি অপ্রয়োজনীয় চর্বি/হাড্ডি/লেজ ইত্যাদি থাকে, সেগুলো সরিয়ে ফেলতে বলুন। কারণ মাংস গামলায় রেখে মাপার সময় আপনার অজান্তেই এগুলো অর্থাৎ অখাদ্য চর্বি, হাড্ডি মিশিয়ে দেবে। টেরও পাবেন না।

আর যারা ভোক্তা অধিকারে আছেন, তারা যদি ক্রেতা সেজে এসব দোকান তদারকি করেন এবং অসাধু ব্যবসায়ীদের জরিমানার আওতায় নিয়ে আসেন, তাহলে অনেকাংশেই এই ধরণের প্রতারণা কমে যাবে।

সবাই সাবধান হোন। কারণ, সতর্ক না হলে অসাধু ব্যবসায়ীরা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠবে।

লেখক: যুগ্ম পরিচালক, বাংলাদেশ ব্যাংক

মানবকল্যাণে আজীবন কাজ করে যেতে চাই

প্রকাশ: ০৭ জানুয়ারি ২০২৫, ০৭:২৫ পিএম
আপডেট: ০৯ জানুয়ারি ২০২৫, ০২:৩২ পিএম
মানবকল্যাণে আজীবন কাজ করে যেতে চাই
জ্যাকসন বড়ুয়া। ছবি: সংগৃহীত

২০০২ সালে কোয়ান্টাম কসমো স্কুলে শিশুশ্রেণিতে ভর্তি হয়েছিলাম। বলা যায় স্কুল যখন শুরু হয়, সেই প্রথম দিকের ছাত্র আমি। তখন স্কুলের নাম ছিল শিশুকানন। আমার খালুর হাত ধরে আমি ও আমার এক বন্ধু সেখানে ভর্তি পরীক্ষা দিতে গিয়েছিলাম। আমার খালু বাহারাম ত্রিপুরা এই শিশুকাননে চাকরি করতেন। সৌভাগ্যবশত আমি ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলাম। কিন্তু আমার বন্ধুর হলো না।

শুরু হলো আমার কোয়ান্টাম কসমো স্কুলের জীবন। প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ার পর পড়ালেখায় ভালো হওয়ায় আমাকে তৃতীয় শ্রেণিতে না পড়িয়ে চতুর্থ শ্রেণিতে উত্তীর্ণ করে দেওয়া হয়। আমি লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছিলাম। তারপর সপ্তম শ্রেণিতে আমাকে গাজীপুরের টঙ্গীতে পাঠিয়ে দেওয়া হলো। এখানে বলে রাখি, কোয়ান্টাম শিশুকাননে তখনো বড় ক্লাসে পড়ানোর মতো অবকাঠামো গড়ে ওঠেনি। তাই আমাদের ফাউন্ডেশনের পরিচালনায় বড় ক্লাসে ওঠার পর বিভিন্ন স্কুলে পড়ানো হতো। দশম শ্রেণিতে রাজশাহীতে লোকনাথ হাই স্কুলে ভর্তি হই। সেখান থেকে এসএসসি পাশ করে বান্দরবানে ক্যান্টনমেন্ট কলেজে আমাকে ভর্তি করানো হয়। সেখান থেকে প্রথম বর্ষের পর আমি লামা উপজেলায় মাতামুহুরী কলেজে চলে আসি। সেখানে এইচএসসি পরীক্ষা দেই এবং পরবর্তীকালে সেখান থেকেই বিএ ডিগ্রি সম্পন্ন করি।

এরপর সরকারি প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষা দিলাম। টিকেও গেলাম। শিক্ষকতায় যোগদান করলাম। ২০২০ সালে বাবা মারা যাওয়ার পর স্বাভাবিকভাবে পুরো পরিবারের দায়িত্ব আমার ওপর আসে। কারণ আমি বাড়ির বড় ছেলে। আমার ছোট দুই ভাইয়ের এখন আমিই অভিভাবক।

আমার ছোট দুই ভাই জ্যাকি ও জেমি। তারা দুজনেই কোয়ান্টাম কসমো স্কুল ও কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক সম্পন্ন করেছে। জ্যাকি এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা ও গবেষণা বিভাগে অধ্যয়ন করছে। আর জেমি রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছে। বর্তমানে দুই ভাইয়ের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার খরচ আমিই বহন করার চেষ্টা করি।

কোয়ান্টামের সেই ছোটবেলার অনেক স্মৃতি আমার এখনো মনে পড়ে। তখন আমরা যারা বড় ছাত্র ছিলাম, তারা খাবার রান্নার কাজে ব্যবহৃত শুকনো বাঁশ জঙ্গলে গিয়ে একসঙ্গে বেঁধে আনতাম। সবাই একসঙ্গে যে আনন্দ করতাম, তা এখনো স্মৃতির পাতায় ভেসে ওঠে। ছুটির দিনে পাহাড়ের ঝিরিতে গিয়ে মাছ ধরতাম আর ঝিরির পাশের ঢেঁকিশাক তুলে আনতাম। রাতে রান্না করে সবাই মজা করে খেতাম।

কোয়ান্টামে সবাই যা খেয়েছে আমরাও তা-ই খেয়েছি। শিক্ষকরা আর আমরা আলাদা খেতাম না। খাবারের মেন্যু আলু ভর্তা, ডাল হলে সবাই আলু ভর্তা, ডাল খেয়েছি। পাতলা খিচুড়ি হলে সবাই তা-ই খেয়েছি।

আমার মা-বাবাও আমাকে ভালো শিক্ষাটাই দিয়েছেন। আমার মা মারা গেছেন ২০১৮ সালের ১৩ জুন, সে-সময় তিনি ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ছিলেন। বাসায় কেউ যদি অসহায় অবস্থায় আসত, তার কাছে পাঁচ কেজি চাল থাকলে তিন কেজি চাল তিনি দিয়ে দিতেন। আমিও তার মতো মানবকল্যাণে আজীবন কাজ করে যেতে চাই।

কোয়ান্টাম কসমো স্কুলের সঙ্গে আমার এখনো যোগাযোগ হয়। স্কুলে নতুন শিশু ভর্তির জন্যে আমার এলাকা আলীকদমে অভিভাবকদের সহযোগিতা করি। অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের যেন এই স্কুলে ভর্তি করায় এ ব্যাপারে আমি তাদের উৎসাহ দেই। যাদের ফরম কেনার টাকা নেই, তাদের আমিই ফরম কিনে দেই। যতটুকু পারি নিঃস্বার্থভাবে মন থেকে কাজ করি। মূলত কোয়ান্টাম থেকে আমি যে শিক্ষা অর্জন করেছি সেটাই আমার ভেতরে এখনো আছে। আমি যদি বাইরে পড়ালেখা করতাম তাহলে হয়তো আমার মানসিকতা এরকম থাকত না। বাইরের পরিবেশের সঙ্গে মিশে আমি অন্যরকম হয়ে যেতে পারতাম।

আমি ২৪৩তম কোয়ান্টাম মেথড কোর্সের গ্রাজুয়েট। গুরুজী দাদুর কাছ থেকে আমি মানুষকে ভালবাসার শিক্ষা পেয়েছি। আমিও মনে করি মানুষ হিসেবে জন্মেছি, তাই আমার কাজ হচ্ছে মানুষের পাশে দাঁড়ানো। এটাই নৈতিকতা। এটাই হলো মানবপ্রেম।

লেখক: শিক্ষক, রাংলাই দাংলি পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, আলীকদম, বান্দরবান।

গানের মাঝেই কত কথা লুকিয়ে আছে!

প্রকাশ: ০৩ জানুয়ারি ২০২৫, ০৪:৩০ পিএম
আপডেট: ০৩ জানুয়ারি ২০২৫, ০৪:৩১ পিএম
গানের মাঝেই কত কথা লুকিয়ে আছে!
রিয়াজুল হক

তখন হয়তো আমি চতুর্থ কিংবা পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র। সেই সময় খুবই জনপ্রিয় একটি গান শুনেছিলাম। গানের ভেতরের কথাগুলো ছিল-

গিয়াছিলাম ভবের বাজারে,
ছয় চোরাতে করল চুরি গুরু ধরল আমারে; চোরায় চুরি কইরা খালাস পাইল,
আমায় নিল জেলখানায়।
জনম দুঃখী কপাল পোড়া গুরু আমি একজনা। 

গানের এই কথাগুলো শোনার পর সেই সময় মনে হয়েছিল, কী দরকার ছিল তোমার ভবের বাজারে যাওয়ার? জায়গাটা তো মনে হয় ভালো না। সেখানে ৬ জন চোর চুরি করল, কিন্তু নিরীহ লোকটাকে চোর সাব্যস্ত করল। আবার যারা চুরি করেছে তাদের কোনো খোঁজ-খবর নাই, কিন্তু নিরীহ মানুষটিকে জেলখানায় নিয়ে গেছে। আহারে বেচারা! অপরাধ না করেই শাস্তি পাচ্ছে।

পরে যখন বুঝতে শিখলাম তখন ভাবতাম, কী অসাধারণ গানের কথাগুলো?

ভবের বাজার তো আমাদের দুনিয়া। এখানে আসব কি আসব না, সেটা আমাদের নিজেদের ওপর নির্ভর করে না। এখানে যে ভালোভাবে বাঁচব, সেটাও হয়ে ওঠে না। কারণ, ষড়রিপুর কারণে আমরা অনেক ধরনের অন্যায়, পাপ করে থাকি।

সেই ষড়রিপু হচ্ছে-

১. কাম - কামনা, বাসনা, আসঙ্গ লিপ্সা। 
২. ক্রোধ - রাগ, রোষ, উত্তেজনার বশীভূত হওয়া।
৩. লোভ - লালসা। 
৪. মোহ - মায়া, বিভ্রম।
৫. মদ - অহংকার, গর্ব, আত্মগৌরব।
৬. মাৎসর্য - পরশ্রীকাতরতা, অন্যের ভালো দেখতে না পারা।

অথচ শেষ বিচারের সময় যে ষড়রিপুর কারণে পৃথিবীতে আমরা বিভিন্ন অন্যায়, পাপ, ভুল করে থাকি, সেই ষড়রিপুর কিন্তু কোনো বিচার হবে না। বিচার হবে আমাদের। শাস্তি পেতে হবে আমাদের। সেজন্য মনে হয়, আহারে গান! কত কিছুই বলে দেয়। গানের মাঝেই কত কথা লুকিয়ে আছে!

লেখক: যুগ্ম পরিচালক, বাংলাদেশ ব্যাংক

দূরপাল্লার বাসে সিট বেল্ট প্রয়োজন

প্রকাশ: ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৩:৪৩ পিএম
দূরপাল্লার বাসে সিট বেল্ট প্রয়োজন
রিয়াজুল হক

দূরপাল্লার দ্রুতগতির বাসগুলো যখন দুর্ঘটনায় পতিত হয়, তৎক্ষণাৎ অনেক মানুষ মারা যেতে দেখি, অনেকেই পঙ্গুত্ববরণ করে। এই মৃত্যু এবং পঙ্গুত্ব বা হতাহত কমানোর জন্য সিট বেল্ট সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে। প্রশ্ন আসতে পারে, কীভাবে? বিষয়টি একটু পরিষ্কার করেই বলা যাক।

১। সাধারণত বাস দুর্ঘটনায় ঘুমন্ত যাত্রীদের মধ্যে হতাহতের পরিমাণ বেশি হয়ে থাকে। কারণ যেকোনো দুর্ঘটনায় সবার আগে যাত্রীর মুখ, মাথা সামনের সিটের সঙ্গে আঘাত লাগে। আঘাতটা যখন মাথায় লাগে, যাত্রীদের ক্ষতির পরিমাণ স্বাভাবিকভাবেই বেশি হয়ে যায়। কিন্তু সিট বেল্ট বাঁধা থাকলে, যাত্রীদের সামনের সিটের সঙ্গে গুরুতর আঘাত লাগা থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব।

২। গাড়ি যখন অতি দ্রুত বেগে চলে এবং এমন পরিস্থিতিতে যদি দুর্ঘটনা হয়, সেই ক্ষেত্রে যাত্রীর নিজের নিয়ন্ত্রণে কিছুই থাকে না। বাসের কাঁচের গ্লাসের ওপর পড়ে রক্তাক্ত হতে পারে, নিজের সিট থেকে ছিটকে গিয়ে ভারী বস্তুতে আঘাত পেতে পারে। বাসের পুরোটাই তো হার্ডমেটাল, সুতরাং ফোমের সঙ্গে ধাক্কা খাওয়ার তো সুযোগ নেই। ফলে আঘাতের কারণে কেউ কেউ গুরুতর আহত হয়, আবার মারাও যায়।

৩। আরও একটি বিষয় হচ্ছে, গাড়ি দুর্ঘটনায় পতিত হয়ে যে কত রাউন্ড রোল করবে (আমরা অনেকেই পল্টি খাওয়া বলে থাকি), গাড়ির ভেতরে থাকা যাত্রীরাও সেই কয়বার রোল করবে (পল্টি খাবে)। স্বাভাবিকভাবেই তখন যাত্রীরা নিজের অবস্থানে আর থাকতে পারে না। একজন আরেকজনের ওপর গিয়ে পড়ে থাকে। অথচ সিট বেল্ট থাকলে এই সমস্যাগুলো হতো না। সবাই যে যার অবস্থানেই থাকত। একজনের সঙ্গে অন্যজনের আঘাত লাগত না। যেকোনো পরিস্থিতিতে যখন একজন যাত্রী নিজের অবস্থানেই থাকবে, তখন বিপদের আশঙ্কা অনেক কমে যায়।

৪। বাসচালকের সিট বেল্ট বাঁধা থাকলে, রাস্তার মোড় ঘোরাসহ বিভিন্ন পরিস্থিতিতে বাস নিয়ন্ত্রণে রাখা সহজ হয়।

সুতরাং দ্রুতগতির দূরপাল্লার প্রতিটি বাসেই সিট বেল্ট থাকা দরকার। এটা দুর্ঘটনায় হতাহতের পরিমাণ কমিয়ে আনবে। ভালো থাকুক, সুস্থ থাকুক দূরপাল্লার দ্রুতগতির বাসযাত্রীরা।

লেখক: যুগ্ম পরিচালক, বাংলাদেশ ব্যাংক

আফ্রিকার মোজাম্বিক প্রবাসীদের রক্ষায় এগিয়ে আসুন

প্রকাশ: ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:৪১ পিএম
আপডেট: ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৩:২০ পিএম
আফ্রিকার মোজাম্বিক প্রবাসীদের রক্ষায় এগিয়ে আসুন
আফ্রিকার মোজাম্বিকে বাংলাদেশিদের দোকানপাটে লুটপাট-অগ্নিসংযোগ। ছবি : সংগৃহীত

আফ্রিকার দেশ মোজাম্বিকে আমাদের দেশের রেমিট্যান্স যোদ্ধা প্রবাসীরা চরম সংকটে পড়েছে। সে দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতায় বাংলাদেশিদের টার্গেট করে হামলা, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ ও নির্যাতন করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে ৫ শতাধিক দোকান এবং ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা ও লুটপাটের ঘটনা ঘটছে বলে খবর পাওয়া গেছে। এতে কোটি কোটি টাকার সম্পদ হানির পাশাপাশি প্রবাসীরা সর্বস্ব হারিয়ে পথে বসার অবস্থা হয়েছে। অসহায় প্রবাসীদের জান-মাল রক্ষায় এখনই সরকার এবং মানবাধিকার সংস্থা সংগঠনগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে। অন্যথায় বাংলাদেশের বিপুল সম্ভাবনায় বৈদেশিক কর্মসংস্থানের এই দেশটি থেকে প্রবাসীরা আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে। এতে করে প্রভাব পড়বে আমাদের অর্থনীতিতে।

পত্রপত্রিকার খবরে জানা যায়, আফ্রিকার মোজাম্বিকে সরকারবিরোধী চলমান আন্দোলনের অরাজক পরিস্থিতি এবং সহিংসতায় সে দেশে অবস্থানরত বাংলাদেশি প্রবাসীরা চরম সংকটে দিন পার করছে বলে খবর পাওয়া গেছে। সেখানে কয়েকদিন ধরে প্রবাসী বাংলাদেশিদের দোকানপাট ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা এবং লুটপাট চালানো হচ্ছে। এমনকি মারধরও করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন মোজাম্বিকে অবস্থানরত বাংলাদেশিরা। সরকারবিরোধী চলমান আন্দোলনে নিরীহ প্রবাসী বাংলাদেশিদের টার্গেট করে প্রতিনিয়ত হামলা চালানো হচ্ছে। লুটপাট এবং অগ্নিসংযোগের ঘটনাও ঘটছে অহরহ। ফলে দেশে অবস্থানরত আত্মীয়স্বজন ও পরিবারের সদস্যরা চরম উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার মধ্যে দিন পার করছে। আফ্রিকার মোজাম্বিকে অধিকাংশ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বাঁশখালী এবং দক্ষিণ চট্টগ্রামের প্রবাসীদের বলে জানিয়েছেন বেশ কয়েকজন প্রবাসী। বর্তমানে প্রবাসীরা সেখানে খুব অসহায় অবস্থায় রয়েছে।

বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম এবং প্রবাসী বাংলাদেশি সূত্র আরও জানায়, আফ্রিকার মোজাম্বিকে সরকারবিরোধী চলমান আন্দোলন ও সহিংসতায় সেখানকার প্রবাসী বাংলাদেশিরা চরম আতঙ্ক ও বিপদের মধ্যে রয়েছে। প্রতিনিয়ত হামলা, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ হচ্ছে প্রবাসী বাংলাদেশিদের প্রতিষ্ঠানে। তিন থেকে চার মাস ধরে এমন ভয়াবহ অবস্থা চললেও বর্তমানে মোজাম্বিক প্রবাসীদের অবস্থা অত্যন্ত ভয়াবহ।

মোজাম্বিকের রাজধানী মাপুতু এবং নামপুলা, সিমুই, বেরাই, মকুবা ও আলতামুলুক শহর সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ও বিপজ্জনক অবস্থায় রয়েছে। মোজাম্বিকের বেরাই শহরে অবস্থানরত বাঁশখালীর প্রবাসী বিএনপি নেতা ওমর কাজী জানান, গত কয়েকদিনে বাংলাদেশি পাঁচ শতাধিক দোকান ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান লুট হয়েছে। তা ছাড়া অগ্নিসংযোগ ও হামলার শিকার হয়েছে বহু প্রতিষ্ঠান।

প্রবাসী বাঙালি কমিউনিটির সদস্য নাছির উদ্দীন জানান, মোজাম্বিকে বাংলাদেশিদের তিলে তিলে গড়ে তোলা দোকান ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের মালামাল লুট করে যাচ্ছে সে দেশের বাসিন্দারা।

সূত্র জানায়, আফ্রিকার মোজাম্বিকে প্রায় ৬০ শতাংশেরও বেশি ব্যবসায়ী বাঁশখালীর বাসিন্দা। সম্প্রতি সে দেশে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকার পরাজিত হলেও বিপুল ভোটে বিজয়ী প্রধান বিরোধীদলকে এখনো ক্ষমতা হস্তান্তর করা হয়নি। এ নিয়ে প্রিলিমু দলের বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডানিয়েল সাককুর বিরুদ্ধে বেনাসিউ দলের সমর্থকরা তীব্র আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। সরকারকে ক্ষমতা থেকে হটাতে চলমান আন্দোলনে বিভিন্ন দল উপগ্রুপ বর্তমানে লোমহর্ষক লুটপাট চালাচ্ছে।

মোজাম্বিক প্রবাসী বাঙালি কমিউনিটির সভাপতি আলহাজ আনিসুর রহমান জানান, আফ্রিকার দেশ মোজাম্বিকে বাংলাদেশি দূতাবাস না থাকায় বাংলাদেশিরা কোনো আইনি সহায়তা পায় না। বাংলাদেশের সঙ্গে মোজাম্বিকের কোনো ধরনের কূটনৈতিক সম্পর্ক না থাকলেও সেখানে হাজার হাজার বাংলাদেশি যুগ যুগ ধরে ব্যবসা-বাণিজ্য চালিয়ে আসছেন।

বাংলাদেশিদের চলমান এই সংকট থেকে উত্তরণে অন্তর্বর্তী সরকারকে উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রবাসীরা।

বাঁশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ জামশেদুল আলম জানান, আফ্রিকার মোজাম্বিকে বাংলাদেশি বিশেষ করে বাঁশখালীর প্রবাসীরা খুব অসহায় অবস্থায় রয়েছে বলে শুনেছি। প্রবাসীদের পরিবারের সদস্যদের উদ্বেগের বিষয়টিও জেনেছি। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা ও অবহিত করা হবে।

লেখক: পরিচালক, দারুল কারীম মাদরাসা, বাঁশখালী ও সভাপতি, বাঁশখালী প্রেসক্লাব