নারীদের গর্ভের সময়টা খুব গুরুত্বপূর্ণ। নারীর সুস্বাস্থ্যের ওপর নির্ভর করে সন্তানের সুস্বাস্থ্য এবং বেড়ে ওঠা। এই সময় নারীর জন্য রয়েছে বেশ কিছু করণীয়-বর্জনীয়। এখানে কয়েকটি উল্লেখ করা হলো—
কৃতজ্ঞতা আদায়: সন্তান আল্লাহর দেওয়া বড় নেয়ামত। এই নেয়ামতের মাধ্যমে নারীজীবন পূর্ণতা পায়। সন্তান গর্ভে আসার সৌভাগ্যে আল্লাহর কৃতজ্ঞতা আদায় করা উচিত। দুই রাকাত নামাজ আদায় করা প্রয়োজন। আবু বকর (রা.) বলেন, ‘যখন রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে কোনো খুশির খবর আসত অথবা তাকে কোনো সুসংবাদ দেওয়া হতো, তখনই তিনি আল্লাহর উদ্দেশ্যে কৃতজ্ঞতার সিজদা আদায় করতেন।’ (আবু দাউদ, ২৭৬৫)
ধৈর্য ধারণ করা: গর্ভকালে ধৈর্য ধারণ করতে হবে। প্রচুর সাহস বুকে রাখতে হবে। কোনো সমস্যার কারণে মোটেও ধৈর্যহারা হওয়া উচিত নয়। এ সময় ঈমানের শক্তিতে কষ্টকে শক্তিতে পরিণত করার চেষ্টা চালাতে হবে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘হে মুমিনরা, তোমরা ধৈর্য ও নামাজের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা করো। নিশ্চয়ই আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সঙ্গে আছেন।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৫৩)
অধিক চিন্তা পরিহার করা: নবাগত সন্তান নিয়ে ইতিবাচক চিন্তা মাথায় রাখা ভালো। বাজে চিন্তা পরিহার করতে হবে। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, মায়ের চিন্তার প্রভাব সন্তানের ওপর প্রতিফলিত হয়। তাই ভালো চিন্তার জন্য কোরআন-হাদিস, রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সিরাত ও ইসলামি মনীষীদের জীবনী পাঠ করতে হবে।
গুনাহমুক্ত থাকা: গুনাহমুক্ত জীবন গঠন করা মুমিন নারী-পুরুষের প্রধান করণীয়। অন্তঃসত্ত্বাদের গুনাহমুক্ত থাকাটা বেশি প্রয়োজন। গর্ভকালীন নারীর চাল-চলন ও আমলের প্রভাব সন্তানের ওপর পড়ে। মা যদি উচ্ছৃঙ্খল জীবনযাপন ও অশ্লীল কাজকর্ম করে বেড়ায়, তাহলে সন্তান তার মতো হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। মা দ্বীনের পথে চললে সন্তান উত্তম চরিত্রের আদর্শ মানুষ হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহতায়ালা মাতৃগর্ভের জন্য একজন ফেরেশতা নির্ধারণ করেছেন। তিনি (পর্যায়ক্রমে) বলতে থাকেন, হে রব, এখন বীর্য-আকৃতিতে আছে। হে রব, এখন জমাট রক্তে পরিণত হয়েছে। হে রব, এখন গোশতপিণ্ডে পরিণত হয়েছে। এরপর আল্লাহতায়ালা যখন সৃষ্টি পূর্ণ করতে চান, তখন জিজ্ঞাসা করেন, পুরুষ, না স্ত্রী? সৌভাগ্যবান না দুর্ভাগা? রিজিক ও বয়স কত? রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তার মাতৃগর্ভে থাকতেই তা লিখে দেওয়া হয়।’ (বুখারি, ৩১২)
সতর্কতা অবলম্বন করা: গর্ভাবস্থায় সতর্ক থাকা প্রয়োজন। এ সময় যথেষ্ট বিশ্রাম ও আরাম করা দরকার। চলাফেরায় তাড়াহুড়ো এবং ভারী কাজ বিপদের কারণ হতে পারে। কোরআনে নারীদের মাতৃত্বকালের কিছু নিদর্শন পাওয়া যায়– ‘নিচের দিক থেকে তাকে ডাক দেওয়া হলো, তুমি দুঃখ করো না, তোমার প্রতিপালক তোমার পাদদেশ দিয়ে এক নির্ঝরিণী প্রবাহিত করে দিয়েছেন। খেজুর গাছের কাণ্ড ধরে তুমি তোমার দিকে নাড়া দাও, তা তোমার ওপর তাজা-পরিপক্ব খেজুর পতিত করবে।’ (সুরা মরিয়ম, আয়াত ২৪-২৫)
দোয়া করা: গর্ভকালে আল্লাহর কাছে বেশি বেশি দোয়া করতে হবে। নেক, সুস্থ ও সুন্দর সন্তান কামনা করে দোয়া করা একান্ত কর্তব্য। পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘নাকি তিনিই (শ্রেষ্ঠ) যিনি আর্তের আহ্বানে সাড়া দেন, যখন সে তাঁকে ডাকে এবং দুঃখ-কষ্ট দূর করেন আর তোমাদের পৃথিবীর উত্তরাধিকারী করেন? আল্লাহর সঙ্গে অন্য কোনো উপাসক আছে কি? অতি সামান্য উপদেশই তোমরা গ্রহণ কর।’ (সুরা নামল, আয়াত: ৬২)
কোরআনের বর্ণিত দোয়াগুলো পড়া যেতে পারে। যেমন–বাংলা উচ্চারণ: রাব্বি হাবলি মিন লাদুনকা জুররিয়াতান তাইয়িবাতান ইন্নাকা সামিউদ্দুয়া। বাংলা অর্থ: হে আমার পালনকর্তা, আপনার পক্ষ থেকে আমাকে পুত-পবিত্র সন্তান দান করুন। নিশ্চয় আপনি প্রার্থনা শ্রবণকারী। (সুরা আলে ইমরান, আয়াত: ৩৮)
লেখক: আলেম ও গবেষক