ঢাকা ২৪ ভাদ্র ১৪৩১, রোববার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪

জোহরের নামাজ কয় রাকাত, শুরু ও শেষ সময় কখন?

প্রকাশ: ২৫ জুলাই ২০২৪, ১০:৩০ এএম
আপডেট: ২৫ জুলাই ২০২৪, ১০:৩১ এএম
জোহরের নামাজ কয় রাকাত, শুরু ও শেষ সময় কখন?
ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত নামাজরত ব্যক্তির ছবি।

আল্লাহতায়ালা মানুষের ওপর পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করেছেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘ইসলামের বুনিয়াদ পাঁচটি বিষয়ের ওপর প্রতিষ্ঠিত। যথা—

  • আল্লাহকে এক বলে বিশ্বাস করা।
  • নামাজ কায়েম করা।
  • জাকাত আদায় করা।
  • রমজানের রোজা পালন করা।
  • হজ করা।

পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘সব নামাজের প্রতি যত্নবান হও; বিশেষ করে মধ্যবর্তী নামাজের ব্যাপারে। আর আল্লাহর সামনে একান্ত আদবের সঙ্গে দাঁড়াও। তোমরা যদি (শত্রুর) ভয় করো, তবে দাঁড়িয়ে বা আরোহী অবস্থায় (নামাজ পড়ে নাও)। এরপর তোমরা যখন নিরাপদ অবস্থা লাভ করো, তখন আল্লাহর জিকির সেভাবে করো, যেভাবে তিনি তোমাদের শিক্ষা দিয়েছেন, যা সম্পর্কে তোমরা অনবগত ছিলে।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ২৩৮-২৩৯)

পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের মধ্যে জোহরের নামাজ অন্যতম। আল্লাহর রাসুল মিরাজ থেকে ফিরে এসে প্রথম জোহরের নামাজ আদায় করেছেন। জোহরের নামাজ মোট ১০ রাকাত। প্রথমে চার রাকাত সুন্নত। তারপর চার রাকাত ফরজ। তারপরে দুই রাকাত সুন্নত। এ ছাড়া আরও সুন্নত নামাজও পড়া যায়।  

জোহরের ওয়াক্তের শুরু ও শেষ
দ্বিপ্রহর থেকে সূর্য যখন একটু পশ্চিম দিকে হেলে যায় তখন জোহরের ওয়াক্ত শুরু হয়। প্রতিটি জিনিসের আসল ছায়া ছাড়া তার ছায়া দ্বিগুণ হওয়া পর্যন্ত জোহরের সময় থাকে। জুমা আর জোহরের নামাজের ওয়াক্তও এক। (বাহরুর রায়েক, ১/৪২৩)

শীতকালে জোহরের নামাজ তাড়াতাড়ি পড়া ভালো। গরমের দিন একটু দেরি করে পড়া ভালো। তবে জুমার নামাজ সব মৌসুমে শুরুর সময়ে পড়া উত্তম। (বাহরুর রায়েক, ১/৪২৯)

আবু বারজা আসলামি (রা.)-কে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর নামাজের সময় সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) জোহরের নামাজ সূর্য ঢলে পড়লে আদায় করতেন।’ (বুখারি, ৫৪৭)

লেখক: আলেম ও মাদরাসা শিক্ষক

বন্যার্তদের পাশে নানা আয়োজনে পিসব

প্রকাশ: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০১:৫২ পিএম
আপডেট: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০১:৫৬ পিএম
বন্যার্তদের পাশে নানা আয়োজনে পিসব
মেডিক্যাল টিমের সঙ্গে পিপলস ইমপ্রুভমেন্ট সোসাইটি অব বাংলাদেশের (পিসব) স্বেচ্ছাসেবিরা। ছবি: সংগৃহীত

স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যার কবলে দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের অনেক জেলার অধিকাংশ অঞ্চল। বন্যার শুরুতে গভীর রাতে হঠাৎ পানি বেড়ে যাওয়ায় স্থানীয় মানুষেরা ঘর ছাড়েনি বা ছাড়ার সুযোগ পায়নি। দুই সপ্তাহ ধরে ঘরবন্দি হয়ে খাবার-পানিবিহীন এক অনিশ্চিত সময় পার করেন লাখো মানুষ। মানুষের যখন এমন বিপদ, তখন তো আর ঘরে বসে থাকা যায় না। শুরু থেকেই বিরামহীনভাবে বানভাসি মানুষের জন্য কাজ করছে মাওলানা মুহাম্মাদ ইমরান হাবিবীর পিপলস ইমপ্রুভমেন্ট সোসাইটি অব বাংলাদেশ (পিসব)।

পিসবের নেতৃত্বে শুরুতে দক্ষ সাঁতারুদের চারটি টিম আটকেপড়াদের উদ্ধার করেছে। ফেনী ও নোয়াখালী জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে কয়েকটি টিমে ভাগ হয়ে প্রাথমিক চিকিৎসাসেবা, শিশুখাদ্য, রান্না করা খিচুড়ি, শুকনো খাবার, পানি ও মোমবাতিসহ বিভিন্ন প্রয়োজনীয় ত্রাণসামগ্রী বন্যাদুর্গত মানুষের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন সংগঠনটির স্বেচ্ছাসেবীরা।

জানা যায়, ১৫ হাজার বন্যার্ত মানুষকে খাদ্য সহায়তার আওতায় শুকনো খাবার, রান্না করা খাবার, শিশুখাদ্য, প্রাথমিক চিকিৎসাসেবা দিয়েছে তারা। এ পর্যন্ত দেড় লাখ টাকার ওষুধ সংগ্রহ করেছে সংগঠনটি। প্রায় চার লাখ টাকার চিকিৎসাসেবা ও ওষুধ বিতরণ করবেন বলে জানা গেছে।

বন্যাপরবর্তী সময়ে ক্ষতিগ্রস্ত ও অসহায় মানুষের সহায়তায় বহুমুখী সেবামূলক কার্যক্রম হাতে নিয়েছে পিসব। প্রতিটি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে স্বাবলম্বী করতে ৩ হাজার থেকে ২৫ হাজার টাকা, শিশুখাদ্য ও স্যানিটাইজের জন্য পরিবারপ্রতি ১৫০০ টাকা, পুনর্বাসন প্রকল্পে পরিবারপ্রতি ৬০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা, জরুরি গৃহ-আসবাব প্রকল্পে ১৫০০ টাকা, টিউবওয়েলের জন্য ২৫ হাজার টাকা ও টয়লেট নির্মাণে পরিবারপ্রতি ১২ হাজার টাকা এবং ক্ষতিগ্রস্ত মাদরাসাছাত্রদের মাঝে শিক্ষা উপকরণ, ট্রাঙ্ক ও বিছানাপত্রের জন্য জনপ্রতি ২৫০০ টাকা দেওয়ার পরিকল্পনা করেছেন। এর মধ্যে বহু মানুষকে সহায়তা দিয়েছেন।

সংস্থাটির সাধারণ সম্পাদক মাওলানা মুহাম্মাদ ইমরান হাবিবী বলেন, ‘পিসব প্রতিষ্ঠার পর থেকে সেবামূলক কাজ করে আসছে। বন্যার শুরু থেকে নানামুখী সেবা নিয়ে আমরা মানুষের কাছে হাজির হয়েছি। বন্যাপরবর্তী অসহায়দের পুনর্বাসন এবং স্বাবলম্বী করার প্রজেক্ট হাতে নিয়েছি। মাদরাসাছাত্রদের আসবাব, শিক্ষা উপকরণ, মাদরাসা সংস্কার এবং অসহায়দের জন্য টিউবওয়েল স্থাপন ও টয়লেট নির্মাণ করব।’

উল্লেখ্য, মুসলিম সন্তানদের মৌলিক ধর্মীয় শিক্ষা ও নানামুখী সেবামূলক কাজের জন্য ২০১১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় পিপলস ইমপ্রুভমেন্ট সোসাইটি অব বাংলাদেশ (পিসব)। প্রতিষ্ঠা করেন মাওলানা মুহাম্মাদ ইমরান হুসাইন হাবিবী। এ পর্যন্ত সংস্থাটি মুসলিম শিশুদের মৌলিক ধর্মীয় শিক্ষার জন্য দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে মক্তব প্রতিষ্ঠা, অসহায়দের স্বাবলম্বী ও ঘর নির্মাণ করে দেওয়া, দেশে বিভিন্ন সময় বন্যা ও দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা, মসজিদ নির্মাণ ও আলেমদের সহায়তা দিয়ে আসছে। করোনাকালে প্রায় ১ লাখ পরিবারকে খাদ্য সহায়তা ও নগদ অর্থ দিয়েছেন তারা।

 

লেখক: আলেম ও সাংবাদিক

দুশ্চিন্তা মুক্তির আমল

প্রকাশ: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৭:০০ পিএম
দুশ্চিন্তা মুক্তির আমল
ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত দুশ্চিন্তাগ্রস্ত যুবকের ছবি

দুশ্চিন্তা বা ডিপ্রেশন—মানবজীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। রোগবিহীন দেহ ও দুশ্চিন্তামুক্ত জীবন কল্পনা করা অসম্ভব। নবি-রাসুলরাও বিপদে ও দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। তারা ধৈর্য ধরেছেন এবং আল্লাহর বলে দেওয়া পথে সমাধান খুঁজে পেয়েছেন। এমন কিছু আমল রয়েছে, যা মানলে দুশ্চিন্তা দূর হবে। 

আল্লাহই একমাত্র উদ্ধারকারী: আল্লাহর নির্দেশে মানুষের জীবনে বিপদাপদ আসে। পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহর অনুমতি ছাড়া (মানবজীবনে) কোনো বিপদাপদ আসে না।’ (সুরা তাগাবুন, আয়াত: ২৬)। বিপদ থেকে উদ্ধারকারীও একমাত্র তিনি। আল্লাহ বলেন, ‘হে রাসুল, আল্লাহ যদি আপনার ওপর কোনো বিপদ দেন, তা হলে তিনি ছাড়া তা দূর করার ক্ষমতা অন্য কারও নেই। (সুরা ইউনুস, আয়াত: ১০৭)। এ জন্য যেকোনো পরিস্থিতিতে আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা রাখা এবং তাঁকেই একমাত্র উদ্ধারকারী হিসেবে বিশ্বাস করা ঈমানি দায়িত্ব।  

ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি লালন করা: জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি লালন করা দুশ্চিন্তা ও ডিপ্রেশন থেকে মুক্তির অন্যতম উপায়। জীবনে বয়ে চলা কোনো ঘটনা আপাতদৃষ্টিতে অকল্যাণকর মনে হলেও এ বিশ্বাস রাখা যে, এতেই আমার কল্যাণ রয়েছে। আল্লাহ বলেন, ‘এবং হতে পারে কোনো বিষয় তোমরা অপছন্দ করছ অথচ তা তোমাদের জন্য কল্যাণকর। আর হতে পারে কোনো বিষয় তোমরা পছন্দ করছ অথচ তা তোমাদের জন্য অকল্যাণকর। আল্লাহই (তোমাদের ভালো-মন্দ সম্পর্কে বেশি) অবগত আছেন এবং তোমরা অবগত নও।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ২১৬)

আল্লাহর প্রতি সুধারণা পোষণ করা: দুশ্চিন্তা বা ডিপ্রেশনে ভেঙে পড়া যাবে না; বরং আল্লাহর প্রতি সুধারণা রাখতে হবে। আল্লাহকেই একমাত্র অভিভাবক হিসেবে মানতে হবে। হাদিসে কুদসিতে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আমি বান্দার সঙ্গে ঠিক তেমন আচরণ করি, যেমন বান্দা আমার প্রতি ধারণা রাখে।’ (বুখারি, হাদিস: ৬৯০১)। আরেক আয়াতে আছে, ‘আর যে ব্যক্তি শুধু আল্লাহর ওপর ভরসা করে, আল্লাহ তার জন্য যথেষ্ট হয়ে যান।’ (সুরা তালাক, আয়াত: ৩)

জিকির করা: অস্থির ও হতাশাগ্রস্ত হৃদয়কে স্থির এবং শান্ত করার কার্যকরী পদ্ধতি হলো জিকির করা। জিকির মুমিন হৃদয়কে প্রশান্ত করে। পরিতৃপ্ত করে। আল্লাহ বলেন,  ‘আল্লাহর প্রতি অনুরাগী তারা, যারা ঈমান আনে এবং আল্লাহর জিকিরের মাধ্যমে তাদের অন্তর প্রশান্তি লাভ করে। জেনে রেখ, আল্লাহর জিকিরের মাধ্যমেই অন্তরের সত্যিকারের প্রশান্তি লাভ করা যায়।’ (সুরা রাদ, আয়াত: ২৮) 

তওবা করা এবং নিজেকে সৎকাজে ব্যস্ত রাখা: বেশি বেশি তওবা ও ক্ষমা প্রার্থনা করা এবং নিজেকে ভালো কাজে ব্যস্ত রাখা একজন মুসলমানের একান্ত কর্তব্য। এতে দুশ্চিন্তা দূর হয়। কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘তবে যারা তওবা করবে, ঈমান আনবে এবং সৎ কাজ করবে। আল্লাহতায়ালা এদের পাপগুলো পুণ্য দিয়ে পরিবর্তন করে দেবেন; আল্লাহ বড়ই ক্ষমাশীল, বড়ই দয়ালু।’ (সুরা ফুরকান, আয়াত: ৭০)

পরামর্শ করা: যে সমস্যার কারণে দুশ্চিন্তা ও ডিপ্রেশন হচ্ছে, তা নির্ণয় করে উক্ত বিষয়ে পারদর্শী দ্বীনদার অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের সঙ্গে পরামর্শ করা। মহান আল্লাহ বলেন, ‘এবং কাজ-কর্মে তুমি তাদের সঙ্গে পরামর্শ করো। এরপর যখন (কোনো ব্যাপারে) সংকল্পবদ্ধ হও, তখন আল্লাহরই প্রতি ভরসা করো; নিশ্চয় আল্লাহ ভরসাকারীদের পছন্দ করেন।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৫৯)

দোয়া পড়া: দুশ্চিন্তা ও পেরেশানি থেকে মুক্তির জন্য কোরআনে বর্ণিত বিভিন্ন দোয়া ও দোয়া ইউনুস বেশি বেশি পাঠ করা উচিত। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আমি এমন একটি দোয়া সম্পর্কে অবগত আছি, কোনো বিপদগ্রস্ত লোক তা পাঠ করলে আল্লাহতায়ালা তার সেই বিপদ দূর করে দেন; সেটি হচ্ছে আমার ভাই ইউনুসের দোয়া। দোয়াটি হলো—বাংলা উচ্চারণ: ‘লা ইলাহা ইল্লা আনতা সুবহানাকা ইন্নি কুনতু মিনাজ জলিমিন।’ বাংলা অর্থ: হে আল্লাহ, তুমি ছাড়া কোনো সত্য উপাস্য নেই; আমি তোমার পবিত্রতা বর্ণনা করছি। নিঃসন্দেহে আমি জালিমদের অন্তর্ভুক্ত। (তিরমিজি, হাদিস: ৩৫০৫)

লেখক: আলেম, খতিব ও শিক্ষক

গুনাহ মাফের উপায়

প্রকাশ: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৯:০০ এএম
আপডেট: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:০৬ এএম
গুনাহ মাফের উপায়
ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত তাওবারত মুসল্লির ছবি

স্বভাবগতভাবে মানুষ গুনাহপ্রবণ। শয়তানের ধোঁকা, নফসের প্ররোচনা ও পরিবেশের কারণে নানা ধরনের গুনাহে মানুষ জড়িয়ে পড়ে। গুনাহ থেকে মুক্তি লাভের কিছু আমল রয়েছে। এখানে কয়েকটি আমলের বর্ণনা তুলে ধরা হলো–

তওবা করা: পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘এবং তিনিই নিজ বান্দাদের তওবা কবুল করেন ও গুনাহগুলো ক্ষমা করে দেন। আর তোমরা যা কিছু করো, তা তিনি জানেন।’ (সুরা শুরা, আয়াত: ২৫)  

ক্ষমা প্রার্থনা করা: আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আমি তাদেরকে বলেছি, নিজ প্রতিপালকের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো। নিশ্চয়ই তিনি অতিশয় ক্ষমাশীল।’ (সুরা নুহ, আয়াত: ১০)

বিপদাপদ: নানা সময় মানুষের জীবনে  নেমে আসা বিপদাপদে গুনাহ মাফ হয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘মুসলিম ব্যক্তির ওপর যে সকল যাতনা, রোগ-ব্যাধি, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা, দুশ্চিন্তা ও কষ্ট আপতিত হয়, এমনকি যে কাঁটা তার দেহে বিদ্ধ হয়, এসবের দ্বারা আল্লাহ তার গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেন।’ (বুখারি, হাদিস: ৫৬৪১) 

পশুপাখির ওপর দয়া করা: রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘এক ব্যভিচারিণীকে ক্ষমা করে দেওয়া হয়। সে একটি কুকুরের কাছ দিয়ে যাচ্ছিল। তখন সে দেখতে পেল কুকুরটি একটি কূপের পাশে বসে হাঁপাচ্ছে। বর্ণনাকারী বলেন, পানির পিপাসা তাকে মুমূর্ষু করে দিয়েছিল। তখন সেই নারী তার মোজা খুলে ওড়নার সঙ্গে বাঁধল। অতঃপর সে কূপ থেকে পানি তুলল (এবং কুকুরটিকে পানি পান করাল) এ কারণে তাকে ক্ষমা করে দেওয়া হলো।’ (বুখারি, হাদিস : ৩৩২১) 

দান করা: মুয়াজ ইবনে জাবাল (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) তাকে বললেন, তোমাকে কি কল্যাণগুলোর কথা বলব না? আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল, অবশ্যই বলুন। তিনি বললেন, রোজা মানুষের জন্য ঢালস্বরূপ। আর সদকা গুনাহ এমনভাবে মুছে দেয়, যেমন পানি আগুনকে নিভিয়ে দেয়।’ (তারগিব-তারহিব, হাদিস: ৯৮৩)

জিকির করা: রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ‘সুবহানাল্লাহি ওয়া-বিহামদিহি’ দৈনিক একশ বার পাঠ করবে, তার গুনাহসমূহ মাফ করে দেওয়া হবে, যদিও তা সাগরের ফেনা পরিমাণ হয়।’ (বুখারি, হাদিস: ৬৪৫০)

মানুষের সঙ্গে সদাচরণ: আবু জার (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাকে বললেন, ‘তুমি যেখানে থাকবে আল্লাহকে ভয় করবে, কোনো কারণে মন্দ কাজ হয়ে গেলে পরক্ষণে ভালো কাজ করবে, ভালো কাজ মন্দ কাজ মিটিয়ে দেয়। আর মানুষের সঙ্গে সদাচরণ করবে।’ (তিরমিজি, হাদিস: ২০২৭)

রোজা রাখা: রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ঈমান ও বিশ্বাসের সঙ্গে এবং সওয়াবের আশা রেখে রমজানের রোজা রাখে, তার আগের পাপ ক্ষমা হয়ে যায়।’ (মুসলিম, হাদিস: ১৮১৭)

তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া: রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তাহাজ্জুদের প্রতি যত্নবান হও। কেননা তা তোমাদের আগের ভালো পূর্বপুরুষদের অভ্যাস এবং রবের নৈকট্য লাভের বিশেষ মাধ্যম। আর তা পাপমোচনকারী এবং গুনাহ থেকে বাধা প্রদানকারী।’ (তিরমিজি, হাদিস: ৩৫৪৯)

দোয়া করানো: সাহাবিরা অন্যের কাছে দোয়া চাইতেন, দোয়া করাতেন। আবু হুরায়রা (রা.) ছোট ছোট বাচ্চাদের বলতেন, ‘এই বাচ্চারা, তোমরা দোয়া করো, আল্লাহ যেন আবু হুরায়রাকে মাফ করে দেন। তারা যখন দোয়া করতেন, আবু হুরায়রা আমিন, আমিন, বলতেন।’ (জামেউল উলুম, ১/৩৯৭)

লেখক : মুহাদ্দিস, জামিয়া কাশেফুল উলুম মাদরাসা, মধুপুর

কর্মক্ষমতা বাড়াতে নবিজির (সা.) ৩ অভ্যাস

প্রকাশ: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৭:০০ পিএম
কর্মক্ষমতা বাড়াতে নবিজির (সা.) ৩ অভ্যাস
ইন্টারনেট তেকে সংগৃহীত মসজিদের নববির সবুজ গম্বুজের ছবি

খুব ভোরে ঘুম থেকে ওঠা
সখর গামেদি (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘হে আল্লাহ, আমার উম্মতের জন্য দিনের শুরুর অংশ বরকতময় করুন।’ (তিরমিজি, হাদিস: ১২১২)। এই দোয়া রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁর উম্মতের জন্য করেছেন। আমরা জানি তাঁর দোয়া আল্লাহর কাছে কবুল হয়। সুতরাং ভোরের সময়টা পুরোপুরি আল্লাহর রহমত ও বরকতে পরিপূর্ণ। রাসুলুল্লাহ (সা.) নিজেই শেষ রাতে ঘুম থেকে উঠে পড়তেন, যেহেতু তিনি নিয়মিত ফজর নামাজ আদায় করতেন।
একজন মুসলিম হিসেবে আমাদের উচিত, মুহাম্মাদ (সা.)-এর অভ্যাসগুলো রপ্ত করে নিজেদের প্রাত্যহিক জীবনেও প্রয়োগ করা। এটা সত্য যে, শুরুর দিকে আমাদের কষ্ট হবে, খানিকটা ক্লান্তি অনুভব করতে পারি। তবে যখন আমরা নিয়মিত এই অভ্যাসটা গড়ে তুলব, তখন এর বহুমুখী সুফলও আমরা ভোগ করতে পারব। এতে সময়ের বরকত পাওয়া যাবে। এগিয়ে যাওয়ার সচেতনতা বৃদ্ধি পাবে ও মানসিক বিভ্রান্তি হ্রাস পাবে। এ জন্য ধীরে ধীরে পদক্ষেপ নিতে হবে। দ্রুত ঘুমাতে হবে এবং সকাল সকাল ঘুম থেকে ওঠার অভ্যাস করতে হবে।

পরিমিত খাবার গ্রহণ করা 
জটিল রোগ-ব্যাধি থেকে বাঁচতে এবং সুন্দরভাবে জীবনযাপন করতে ইসলাম মুমিনদের পরিমিত খাবার গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছে। পরিমিত খাবার শুধু শারীরিক সুস্থতা নিশ্চিত করে না; বরং হৃদয়কে বিগলিত করে, ইবাদত-বন্দেগিতে উৎসাহিত করে। আর অপরিমিত খাবার শারীরিক অসুস্থতার পাশাপাশি হৃদয়কে শক্ত করে তোলে। ফলে ইবাদত-বন্দেগিতে অমনোযোগী হয়। মিকদাম বিন মাদিকারিব (রা.) বলেন, আমি আল্লাহর রাসুল (সা.)-কে বলতে শুনেছি, ‘একজন মানুষ নিজের পেটের চেয়ে অধিকতর নিকৃষ্ট কিছুই পূর্ণ করে না। তার পিঠ সোজা রাখতে সক্ষম এমন অল্প পরিমাণ খাবারই একজনের জন্য যথেষ্ট। যদি তা করতেই হয়, তা হলে এক-তৃতীয়াংশ খাবার, এক-তৃতীয়াংশ পানি ও এক-তৃতীয়াংশ শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য রাখতে হবে।’ (তিরমিজি, হাদিস: ২৩৮০)

নিয়মিত ব্যায়াম করা
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘দুর্বল মুমিন অপেক্ষা সবল মুমিন শ্রেষ্ঠ এবং আল্লাহর কাছে বেশি প্রিয়।’ (মুসলিম, হাদিস: ২৬৬৪) বিশেষজ্ঞরা ব্যাখ্যা করে বলেছেন, এই হাদিসে ‘শক্তি’ বলতে বোঝানো হয়েছে ঈমানের জোরকে। তবে শারীরিক শক্তিকে অগ্রাহ্য করা হয়নি। আমরা কীভাবে শারীরিক সক্ষমতা বজায় রাখতে পারি? নিশ্চিতভাবে নিয়মিত ব্যায়াম করার মধ্য দিয়ে। আমাদের প্রিয়নবি (সা.) নিয়মিত ব্যায়াম করতেন। তিনি খুবই সুস্বাস্থ্যের অধিকারী এবং শক্তিশালী ছিলেন। তিনি সব সময় তার ঘোড়া/উটের পিঠে চড়তেন। মাঝে মধ্যেই সেগুলোর পিঠে বোঝা না চাপিয়ে তার সঙ্গীদের সঙ্গে দৌড় প্রতিযোগিতা করতেন। নিয়মিত ব্যায়ামের মাধ্যমে শরীরে শক্তি বাড়ে। কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।

লেখক : অনুবাদক ও সাংবাদিক

মোহরে নবুয়াতের ক্যালিগ্রাফি  শিল্পী সাজু তাওহীদের প্রাণ

প্রকাশ: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৩:০০ পিএম
আপডেট: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৭:১৪ পিএম
মোহরে নবুয়াতের ক্যালিগ্রাফি  শিল্পী সাজু তাওহীদের প্রাণ
নিজস্ব আর্টরুমে বসে ক্যালিগ্রাফি করছেন শিল্পী সাজু তাওহীদ

আরবি ক্যালিগ্রাফি, ওয়াল ম্যুরাল, দৃশ্যপট ও ফিউশন আর্ট করেন সাজু তাওহীদ। তার শিল্পকর্ম গেছে দেশের বাইরেও। মোহরে নবুয়াত এঁকে মানুষকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। এটি বিক্রির টাকায় করেছেন উমরাও। বিক্রিও হয়েছে অনেক। গড়ে তুলেছেন ইন্টেরিয়র ক্যালিগ্রাফি ও ফিউশন আর্ট প্রতিষ্ঠান ক্যালিমাজিদ।  

যেভাবে শুরু করলেন
তখন ২০২০ সালের শেষ সময়। শিল্পী সাজু তাওহীদ বায়িং হাউজে কাজ করতেন। নিজে কিছু করার তাড়না পেয়ে বসল তাকে। চিন্তা করে পেলেন-লেখালেখি, ইসলামি সংগীত কিংবা আর্ট করা যেতে পারে। নানা কারণে আর্ট জুতসই মনে হলো তার। শুরু করলেন একদিন। অবশ্য এর আগে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় বিভিন্ন অনুষ্ঠানে আলপনা করেছেন। শিল্পী মাহবুব মোর্শেদ সে সময় আর্টের ওপর কর্মশালা করাতেন। বন্ধুর থেকে টাকা ধার নিয়ে পাঁচ দিনের একটা কর্মশালায় ভর্তি হলেন। ক্যানভাস তৈরির ধারণা পেলেন। জানলেন, কাজটা বিস্তর পরিসরে শিখতে হবে। আরবি অক্ষর লেখার কাজ শুরু করলেন। দেশি-বিদেশি উস্তাদের থেকে প্রশিক্ষণ নিলেন। সাজু বললেন, ‘আরবি অক্ষর শিখতে প্রচুর চেষ্টা ও শ্রম দিয়েছি। এখনো প্র্যাকটিস করছি।’ 

সম্মানটা পেয়েছিলেন গোড়াতেই
নিজের আঁকা ক্যালিগ্রাফি ফেসবুকে বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করতেন সাজু। ২০২১ এর শুরুতে আঁকলেন ‘ওয়া রাব্বিকা ফাকাব্বির’ (এবং তোমার প্রতিপালকের শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করো)-এর আরবি ক্যালিগ্রাফি। ফেসবুকে দিলেন। এটি ছিল তার প্রথম কাজ। এই কাজটিই একজনের মনে ধরল। তিনি খুশি হয়ে নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে হাজার টাকা বাড়তি দিয়েছিলেন। ‘তখন পকেটের অবস্থা খুবই খারাপ। এটি বিক্রি করতে পেরে দারুণ উদ্দীপনা পেয়েছি। সাহস বেড়ে গেল।’ বললেন সাজু। দেশ-বিদেশে বিভিন্ন প্রদর্শনীতে অংশ নিতেন সাজু। ক্যালিগ্রাফি প্রদর্শন করতেন। মানুষ আগ্রহভরে দেখত সেসব। দুবাইতে আন্তর্জাতিক একটা প্রদর্শনীতে তার প্রতিফলন দেখেছে দেশবাসী। জাতীয় শিল্পকলায় প্রদর্শনীতে তার ক্যালিগ্রাফিটা ছিল সবচেয়ে বড় এবং যেখানে মানুষের দেখার আগ্রহ ছিল বেশ। 

ক্যালিগ্রাফি গেছে দেশের বাইরে
ওয়াল ম্যুরাল, দৃশ্যপট ও ফিউশন আর্ট আঁকেন সাজু। ২০২১ সালে আমেরিকায় প্রদর্শনীর খবর পেলেন। কী আঁকবেন ভাবনায় পড়ে গেলেন। ঠিক করলেন, মোহরে নবুয়াত আঁকবেন। শুরুতে পেইন্টিং করলেন; যেন পুরোনো দিনের চামড়ার ওপর আঁকা। অনেকদিন লেগেছিল আঁকতে। আমেরিকায় পাঠিয়ে ছিলেন। সময়ের সঙ্গে এটাতে আরও ফিউশন করতে লাগলেন। এর মধ্যে ইন্দো-ইরানের একটি প্রদর্শনীতে ছবি পাঠালেন। ইন্দো-ইরান-২-তেও ছবি পাঠালেন। কাজটি লন্ডনপ্রবাসী একজন নিলেন। ‘বাইরের অনেক দেশেই আমার কাজ গিয়েছে। আমেরিকা, লন্ডন, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, ফিনল্যান্ড, সৌদি আরব, দুবাই, কাতার উল্লেখযোগ্য।’ জানালেন সাজু। 

ক্যালিগ্রাফির টাকায় উমরা
সাজুর মন পড়ে থাকল মোহরে নবুয়াত ক্যালিগ্রাফিতে। এটাকে নানাভাবে ফিউশন করতে থাকলেন। বেশ সাড়া পড়ল। সেসময় উমরায় যাওয়ার ইচ্ছা করলেন। পকেটের অবস্থা তেমন ভালো নয়। ভাবনায় পড়ে গেলেন। মোহরে নবুয়াত শিল্পকর্মটি বিক্রির টাকায় উমরা করার মনস্থির করলেন। ফেসবুকে ঘোষণা দিলেন, ‘উমরার টাকার বিনিময়ে এই কাজ দেব।’ সিলেটের একজন নিতে চাইলেন। দিন-তারিখ ঠিক হলো। কিন্তু আর এলেন না। সাজুর মন খারাপ হয়েছিল। খুব বেদনা পেয়ে বসেছিল তাকে। পরে ধানমন্ডি মসজিদ-উত-তাকওয়ার খতিব মুফতি সাইফুল ইসলামের মাধ্যমে কাজটি বিক্রি হয়েছিল। উমরায় গেলেন সাজু। কাবার প্রধান ক্যালিগ্রাফার মুখতার আহমাদের সঙ্গে দেখা হলো তার। তিনি দিকনির্দেশনা দিলেন। সাজু বললেন, ‘মোহরে নবুয়াত আমার প্রিয় ও সেরা কাজ। এটা আমাকে খ্যাতি এনে দিয়েছে। এটার অরিজিনাল ভার্সন অনেক মানুষের কাছে গেছে। প্রিন্ট ভার্সন বিক্রি হয়েছে কয়েক হাজার। আমি এ কাজের মায়ায় ও প্রেমে পড়ে গেছি। এটি চোখে পড়লেই হৃদয় ও জবান দুরুদ পড়বে।’ 
 
স্বপ্ন
বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক মানের ক্যালিগ্রাফি ইনস্টিটিউট করতে চান সাজু। সরকারি স্থাপনা, মসজিদ ও মাদরাসার সৌন্দর্য বর্ধনে ক্যালিগ্রাফি করতে চান। শখের পর্যায়ে না রেখে মানুষের দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় ব্যবহার্যে ক্যালিগ্রাফি আঁকতে চান।  

লেখক: আলেম ও সাংবাদিক