অর্থ উপার্জনের আবেদন উপেক্ষা করে কেউ চলতে পারবে না। জীবনের জন্য অর্থের খুব প্রয়োজন। মানুষ, সমাজ ও রাষ্ট্রকে পৃথিবীতে বুক টান দিয়ে দাঁড়াতে হলে অর্থে স্বাবলম্বী হতে হবে। অর্থ উপার্জনের জন্য হালাল পন্থা অবলম্বন করতে হবে। হারাম পন্থায় অর্থ উপার্জন নিষেধ। ব্যবসায় এমন কিছু পদ্ধতি রয়েছে, যা ইসলাম সমর্থন করে না। এখানে চারটি পদ্ধতির কথা বলা হলো—
মুহাকালা, মুজাবানা ও মুখাবারা: ব্যবসায় কূটকৌশল অবলম্বন করা জায়েজ নেই। কূটকৌশলগুলোর মধ্যে মুহাকালা, মুজাবানা ও মুখাবারা অন্যতম। জাবের (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) মুহাকালা (খেতের শস্য নির্ধারিত পরিমাণ খাদ্যের বিনিময়ে বিক্রি করা), মুজাবানা (গাছের খেজুর কয়েক ওসাক (এক ওসাক ৬০ সা, ১ সা প্রায় ৩ কেজির সমান) খুরমার বিনিময়ে বিক্রি করা, মুখাবারা (এক তৃতীয়াংশ, এক চতুর্থাংশ বা এমন নির্দিষ্ট কোনো অংশ) এবং খেজুর লাল বা মেটে লাল অথবা খাদ্যোপযোগী হওয়ার আগে বেচাকেনা করতে নিষেধ করেছেন।’ (মুসলিম, ৩৭৬৭)
তালাককিয়ে জালব: ‘তালাককিয়ে জালব’ আরবি পরিভাষা। ফকিহরা এর ব্যাখ্যায় বলেন, ‘শহরের বাইরে থেকে যেসব ব্যবসায়ী কাফেলা পণ্য নিয়ে শহরে আসে, শহরে পৌঁছার আগে তাদের থেকে পণ্য কেনা বা শহরতলি থেকে সব পণ্য কিনে নিয়ে ওই পণ্য শহরে এনে বেশি দামে বিক্রি করা। রাসুলুল্লাহ (সা.) এভাবে পণ্য কিনতে নিষেধ করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘বাজারে পৌঁছার আগে পণ্য যেন ক্রয় করা না হয়।’ (মুসলিম, ১৫১৮)
বাজারে যদি বিক্রীত পণ্যের দাম অনেক বেশি হয়, তা হলে বিক্রেতা ক্রেতা থেকে তার পণ্য ফেরত নিতে পারবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘এভাবে ক্রয়ের পর ব্যবসায়ী দল শহরে এলে চুক্তি রহিত করার অধিকার থাকবে।’ (মুসলিম, ১৫১৯)
তাশরিয়া: ‘তাশরিয়া’ অর্থ জমা করা। গরু বা ছাগল বেশি দামে বিক্রির জন্য দুধ দোহন না করে ওলানে জমা করে রাখা হলো তাশরিয়া। এই পদ্ধতিতে ধোঁকা আছে।
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা উট, ছাগল ইত্যাদিকে এভাবে দুধ আটকে রেখে বিক্রি করো না। কেউ যদি এভাবে বিক্রি করে, তাহলে দুধ দোহনের পর ক্রেতার ওই পশু নেওয়া বা না নেওয়ার ইচ্ছা থাকবে। তবে না নিলে পশু ফেরত দেওয়ার সময় এর সঙ্গে সাড়ে তিন সের খেজুর দিতে হবে।’ (মুসলিম, ১৫১৫)
সামসারা: ‘সামসারা’ হলো দালালি করা। আমাদের দেশে গরু-ছাগলের হাটে দালালচক্রের আনাগোনা বেশি পরিলক্ষিত হয়। ধোঁকা দেওয়ার জন্য দালালি করা গুনাহ।
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘এক মুসলমান যেন অপর মুসলমানের ওপর গিয়ে পণ্যের দাম না বলে এবং বিয়ের আলোচনা চলা অবস্থায় প্রস্তাব না দেয়; তবে যদি অনুমতি দেয়। (মুসলিম, ১৪১২)
লেখক: আলেম ও মাদরাসা শিক্ষক