ঢাকা ১ আশ্বিন ১৪৩১, সোমবার, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪

রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর অবমাননাকারী অভিশপ্ত

প্রকাশ: ০৩ আগস্ট ২০২৪, ০৩:০০ পিএম
রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর অবমাননাকারী অভিশপ্ত
ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত মুহাম্মাদ (সা.) লেখা আরবি ক্যালিগ্রাফির ছবি

মুহাম্মাদ (সা.) সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব। সব নবি-রাসুলের চেয়েও তাঁর মর্যাদা বেশি। আল্লাহতায়ালা তাঁকে সুমহান চরিত্রের অধিকারী করে দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন। তাঁর আগমন ছিল পুরো পৃথিবীবাসীর জন্য রহমত। তাঁর জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপেই আমাদের জন্য রয়েছে উত্তম আদর্শ ও শিক্ষা। পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই তোমাদের জন্য আল্লাহর রাসুলের মাঝে রয়েছে উত্তম আদর্শ।’ (সুরা আহজাব, আয়াত: ২১) 

এমন একজন মহান মানুষেরও সমালোচনা করে কিছু মানুষ নামের মানুষ। তাঁর পবিত্র চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তোলে। তাঁর শানে অন্যায় কটূক্তি করে। ইসলামে নবির অবমাননাকারীদের মুরতাদ বলা হয়। এরা মুসলমান থাকে না। দুনিয়া ও আখেরাতে এদের জন্য রয়েছে কঠোর শাস্তির বিধান। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলকে কষ্ট দেয়, আল্লাহ তাদেরকে দুনিয়া ও আখেরাতে অভিশপ্ত করেন এবং তিনি তাদের জন্য লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি প্রস্তুত করে রেখেছেন।’ (সুরা আহজাব, ৫৭)

আল্লাহর রাসুল (সা.)-এর বিরোধিতা করা, তাঁর নামে কুৎসা রটানো হারাম। যারা এ নিকৃষ্ট কাজে লিপ্ত হয়, তাদের জন্য জান্নাত হারাম হয়ে যায়। তাদের ঠিকানা হয় জাহান্নাম। আল্লাহ বলেন, ‘যে ব্যক্তি হেদায়াত স্পষ্ট হওয়ার পর রাসুল (সা.)-এর বিরোধিতা করে এবং মুমিনদের পথ ছাড়া অন্য পথের অনুসরণ করে, সে যেদিকে ফেরে আমি তাকে সেদিকে ঘুরিয়ে দেব এবং তাকে জাহান্নামে প্রবেশ করাব। আর জাহান্নাম কতই না নিকৃষ্ট জায়গা!’ (সুরা নিসা, ১১৫)। আল্লাহ আরও বলেন, ‘তারা কি জানে না, যে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের বিরোধিতা করে, তার জন্য অবশ্যই জাহান্নাম, তাতে সে চিরকাল থাকবে। এটা মহালাঞ্ছনা।’ (সুরা তাওবা, ৬৩)

রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর যুগেও কিছু মানুষ তাঁর সুমহান শানে বেয়াদবি করেছিল। তাঁর নামে নিন্দা করেছিল। এর মধ্যে কাব ইবনে আশরাফ অন্যতম। সে নবিজির নামে কুৎসা রটিয়ে কবিতা আবৃত্তি করে কাফেরদের উসকে দিত। একপর্যায়ে রাসুলুল্লাহ (সা.) খুব মনোকষ্ট পান। তার কাজে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েন। সাহাবিদেরকে কাবের ব্যাপারটি বললেন। সাহাবিদের কয়েকজন তাকে হত্যা করে। তখন নবিজি (সা.) বলেন, ‘ভবিষ্যতে যে এমন করবে, তাকেও পরিণামে এমন হত্যার শিকার হতে হবে।’ (আস-সারিমুল মাসলুল, ৭২-৭৩)। এ ছাড়াও রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর যুগে তাঁর অনুমতি ও নির্দেশেই আবু রাফে ও এক নারীকে হত্যা করা হয়। খোলাফায়ে রাশেদিন ও অন্যান্য সাহাবায়ে কেরামও নবির অবমাননাকারীদের ব্যাপারে খুব কঠোর ছিলেন।

রাসুলুল্লাহ (সা)-এর শানে যারা বেয়াদবি, কটূক্তি বা ঠাট্টা-উপহাস করবে, তাঁর সুমহান সত্তার বিরুদ্ধে অবস্থান নেবে, ইসলামি রাষ্ট্রে তার শাস্তি হলো মৃত্যুদণ্ড। আর আখেরাতের সীমাহীন কষ্ট ও দুর্ভোগের অন্তহীন আজাব তো রয়েছেই। পৃথিবীতে শাতিমে রাসুলের এই দণ্ড কার্যকর করার দায়িত্ব সরকার ও প্রশাসনের। সাধারণ জনগণ কখনোই রাষ্ট্রীয় শৃঙ্খলার স্বার্থে আইন নিজেদের হাতে তুলে নেবে না। 

লেখক: মুদাররিস, দারুল উলুম শ্রীপুর, গাজীপুর

রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর অনন্য বৈশিষ্ট্য

প্রকাশ: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১১:৪৭ এএম
আপডেট: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১১:৪৮ এএম
রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর অনন্য বৈশিষ্ট্য
মসজিদ নববি, মদিনা, সৌদি আরব। ছবি: ইন্টারনেট

রাসুলুল্লাহ (সা.) সব নবি-রাসুল থেকে সর্বোচ্চ মর্যাদায় অধিষ্ঠিত। তাঁর মতো মর্যাদাসম্পন্ন মানুষ জগতে আগমন করেননি, ভবিষ্যতেও করবেন না। তার আগে কোনো নবির দ্বীন পূর্ণাঙ্গ ছিল না, একমাত্র তাঁর দ্বীন পূর্ণাঙ্গ। তিনি জগতের শেষ নবি। তার পরে কোনো নবির আগমন হবে না। এটা মহান অধিশ্বর আল্লাহর শাশ্বত বিধান। তার ওপর অর্পিত রিসালাত বা আল্লাহর বার্তা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম রিসালাত। তার রিসালাতের বৈশিষ্ট্য অন্যান্য নবি-রাসুলের রিসালাত থেকে অনন্য। তার রিসালাতের সংক্ষিপ্ত কিছু বৈশিষ্ট্যের কথা উল্লেখ করা হলো—


আদম (আ.) সৃষ্টির আগেই তিনি নবি
পৃথিবীর প্রথম মানুষ আদম (আ.)-এর সৃষ্টির আগেই মহানবি (সা.) নবি ছিলেন। যখন আদম (আ.) পানি ও মাটির সংমিশ্রণে ছিলেন, তখন তিনি নবি ছিলেন। সৃষ্টির প্রথম ভোরেই আল্লাহ তার আত্মা পরম যত্ন সৃষ্টি করেন। আদম (আ.) মানুষের অস্তিত্বে আসার পরই মোহাম্মদ (সা.)-এর নামের ঝলক দেখতে পান। ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আমি তখনো নবি ছিলাম, যখন আদম আত্মা ও শরীরের মধ্যে অবস্থান করছিলেন।’ (তিরমিজি, হাদিস : ৩৬০৯)


পূর্ববর্তী ধর্মগ্রন্থে সত্যায়ন ও সুসংবাদ
মুহাম্মাদ (সা.) নবি হবেন, মানুষকে হেদায়াতের দ্যুতিময় পথ দেখাবেন। তার আবির্ভাবে তার আনীত ধর্ম পালন করাই হবে একমাত্র সফলতা; আল্লাহতায়ালা এ ঘোষণা পূর্ববর্তী ধর্মগ্রন্থ ইঞ্জিলে দিয়েছেন। বলে দিয়েছেন তাওরাত কিতাবেও। একজন নবির আগমন অপর একজন নবির মাধ্যমে তাঁর ওপর অবতীর্ণ কিতাবের ইশতেহার প্রমাণ করে মুহাম্মদ (সা.)-এর রিসালাতের শ্রেষ্ঠত্ব ও স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘যারা অনুসরণ করে রাসুলের, যে উম্মি নবি; যার গুণাবলি তারা নিজেদের কাছে তাওরাত ও ইঞ্জিলে লিখিত পায়।’ (সুরা আরাফ, আয়াত : ১৫৭)

কোরআনের আরেক আয়াতে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘স্মরণ করো, যখন মরিয়ম-তনয় ঈসা (আ.) বলেছিলেন, হে বনি ইসরাইল, নিশ্চয়ই আমি তোমাদের কাছে আল্লাহর রাসুল। আমার পূর্ববর্তী তাওরাতের সত্যায়নকারী এবং একজন রাসুলের সুসংবাদদাতা, যিনি আমার পরে আগমন করবেন যার নাম আহমদ।’ (সুরা সফ, আয়াত : ০৬)

রহমতের নবি
আল্লাহতায়ালা ইসলামের নবি মোহাম্মদ (সা.)-কে সমগ্র জগতের জন্য রহমত হিসেবে প্রেরণ করেন। বিশ্বমানবতার পরিপূর্ণ কল্যাণের জন্যই তাঁকে পাঠানো হয়েছে। পৃথিবীতে  তিনি সর্বশ্রেষ্ঠ মহান পুরুষ। যিনি পুরো দুনিয়ার মানুষের জন্য রহমত হিসেবে প্রেরিত হয়েছেন। মানুষের মুক্তির জন্য আগমন করেছেন। শান্তি-সম্প্রীতি ও সুখের বাতাস বইয়ে দিয়েছেন পৃথিবীর ঘরে ঘরে। তার আগে কেউ ব্যাপক বিপুল রহমত নিয়ে পৃথিবীতে আগমন করেননি। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘হে নবি, আমি তোমাকে সারা বিশ্বের জন্য রহমত হিসেবে প্রেরণ করেছি।’ (সুরা আম্বিয়া, আয়াত : ১০৭)

আবু হুরায়রা থেকে বর্ণিত আছে, ‘একবার কিছুসংখ্যক সাহাবি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে কাফেরদের বিরুদ্ধে বদ দোয়া করার জন্য আবেদন করল! তাদের আবদার রাসুলুল্লাহ (সা.) অস্বীকার করে বলেন, ‘আমি অভিসম্পাতকারী হিসেবে প্রেরিত হইনি, আমি রহমতস্বরূপ প্রেরিত হয়েছি।’ (মুসলিম, হাদিস : ৪৮৩২)

বিশ্ববাসীর নবি
আল্লাহতায়ালা পৃথিবীতে আগত নবিদের শুধু নির্দিষ্ট গোত্র জাতিকে কেন্দ্র করে পাঠিয়েছিলেন। মুহাম্মাদ (সা.) কোনো বিশেষ জাতি ও গোষ্ঠীর জন্য প্রেরিত হননি, কোনো বিশেষ দেশ ও অঞ্চলের জন্য প্রেরিত হননি, তিনি প্রেরিত হয়েছেন সমগ্র বিশ্ববাসীর জন্য। তিনি আরব ও অনারবের নবি। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আমি আপনাকে সমগ্র মানবজাতির জন্য সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে প্রেরণ করেছি।’ (সুরা সাবা, আয়াত : ২৮)

অন্য আয়াতে বলা হয়েছে, ‘আমি আপনাকে পাঠিয়েছি মানুষের প্রতি আমার পয়গামের বাহক হিসেবে।’ (সুরা নিসা, আয়াত : ৭৯)। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আমাকে লাল ও কালো জাতির কাছে পাঠানো হয়েছে।’ (বুখারি, হাদিস : ৩৩২)

এই হাদিসের ব্যাখ্যায় প্রখ্যাত হাদিসবিশারদ মুজাহিদ (রহ.) বলেন, ‘জিন ও মানুষের কাছে’। আল্লামা ইবনে আসির (রহ.) বলেন, ‘আরব ও আজমের দিকে পাঠানো হয়েছে’। (শরহে তাহাবি, ১৫/১৭)

স্বয়ংসম্পূর্ণ ও পূর্ণাঙ্গ দ্বীন
পৃথিবীতে কোনো নবির দ্বীন পূর্ণাঙ্গ ছিল না। একজন নবি এক অঞ্চলের পথপ্রদর্শক হিসেবে আগমন করতেন। অন্য অঞ্চলের জন্য আগমন করতেন আরেকজন। দুজনের দ্বীন ও শরিয়ত বা বিধিবিধান ছিল ভিন্ন রকম। কারও শরিয়ত পূর্ণাঙ্গ ছিল না। মুহাম্মাদ (সা.)-এর দ্বীন একমাত্র পরিপূর্ণ পূর্ণাঙ্গ দ্বীন। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পূর্ণাঙ্গ করে দিলাম। তোমাদের প্রতি আমার অবদান সম্পূর্ণ করে দিলাম এবং ইসলামকে তোমাদের ধর্ম হিসেবে পছন্দ করলাম।’ (সুরা মায়েদা, আয়াত : ০৩)

হাউজে কাওসারের অধিপতি
কিয়ামতের দিন হাউজে কাওসারের পানি পান করে মুমিনরা পরিতৃপ্ত হবে। জান্নাতে পৌঁছানো পর্যন্ত তাদের আর কোনো তৃষ্ণা আসবে না। হাউজে কাওসারের পানি পানকারী আল্লাহর পছন্দের বান্দা হবে। আল্লাহতায়ালা মুহাম্মাদ (সা.)-কে হাশরের দিন হাউজে কাওসার দান করবেন, যা অন্য কোনো নবিকে দান করবেন না। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আমি আপনাকে হাউজে কাওসার দান করেছি।’ (সুরা কাওসার, আয়াত : ০১)

এ ছাড়া বিভিন্ন হাদিসে হাউজে কাওসারের বর্ণনা এসেছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আমি হাউজের পাশে তোমাদের আগে থাকব।’ (মুসলিম, হাদিস : ৬১০৬)

পাঁচটি বিশেষ অধিকার
রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে এমন পাঁচটি বিশেষ জিনিস দান করা হয়েছে, যা অন্য কোনো নবিকে দান করা হয়নি। পাঁচটি বিষয়ের অধিকার একমাত্র তাঁকেই দান করা হয়েছে। জাবের (রা.) রাসুলুল্লাহ (সা.) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, ‘আমাকে পাঁচটি জিনিস দান করা হয়েছে, যা আমার আগের অন্য কোনো নবিকে দান করা হয়নি—

  • আমাকে এমন প্রভাব দিয়ে সাহায্য করা হয়েছে যে, এক মাস দূরত্বেও তা প্রতিফলিত হয়।
  • সমস্ত জমিন আমার জন্য পবিত্র ও নামাজ আদায়ের উপযোগী করা হয়েছে। কাজেই আমার উম্মতের যে কেউ ওয়াক্ত হলেই (পবিত্র জায়গায়) নামাজ আদায় করতে পারবে।
  • আমার জন্য গনিমতের সম্পদ হালাল করে দেওয়া হয়েছে, যা আমার আগে আর কারও জন্য হালাল করা হয়নি।
  • আমাকে (ব্যাপক) শাফায়াতের অধিকার দেওয়া হয়েছে।
  • সব নবি প্রেরিত হতেন শুধু তাদের সম্প্রদায়ের জন্য, আর আমাকে প্রেরণ করা হয়েছে সমগ্র মানবজাতির জন্য।’ ( বুখারি, হাদিস : ৩৩৫)

সর্বশেষ নবি
মুহাম্মাদ (সা.)-এর আগমনের আগে প্রত্যেক নবির পর নবি আগমন করেছেন। মুহাম্মাদ (সা.) হলেন শেষ নবি। তারপর আর কোনো নবি পৃথিবীতে আগমন করবেন না। তার মাধ্যমে রিসালাতের দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘মুহাম্মদ তোমাদের কোনো ব্যক্তির পিতা নন; বরং তিনি আল্লাহর রাসুল ও শেষ নবি।’  (সুরা আহজাব, আয়াত : ৪০)। মুহাম্মদ (সা.) তাঁর রিসালাত ও অন্য নবির রিসালাতের পার্থক্য বিধান তৈরি করতে গিয়ে এভাবে উপমা দেন যে, ‘এক ব্যক্তি অনেক সুন্দর করে একটি ঘর নির্মাণ করল। তবে একটি স্বর্ণের পরিমাণ জায়গা খালি রাখল। মানুষ তা দেখে আশ্চর্যবোধ করল এবং বলল, কেন এ ইটটি বসানো হলো না? তিনি বলেন, আমি হলাম সেই ইট এবং আমি হলাম সর্বশেষ নবি।’ ( বুখারির সূত্রে মিশকাতুল মাসাবিহ)

লেখক: আলেম ও সাংবাদিক

রোগমুক্তির দোয়া

প্রকাশ: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৭:০০ পিএম
আপডেট: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৯:১১ পিএম
রোগমুক্তির দোয়া
প্রার্থনারত ব্যক্তির ছবি। ফ্রিপিক

সুস্থতা যেমন আল্লাহর নেয়ামত, তেমনি অসুস্থতাও। তবে অসুস্থতার নেয়ামত মানুষকে কখনো পীড়িত করে। আল্লাহ অসুস্থতা দিয়ে পরীক্ষা নেন কখনো। অসুস্থ হলে অধৈর্য হওয়া যাবে না। আল্লাহ সম্পর্কে অযাচিত মন্তব্য করা যাবে না। এমন কোনো কথা বলা যাবে না, যা ঈমানের ক্ষতিসাধন করে। অসুস্থতায় আরোগ্য লাভের জন্য আল্লাহর কাছে বেশি বেশি দোয়া করতে হবে। দোয়ার মাধ্যমে আরোগ্য লাভ হয়। দোয়ার মাধ্যমে মানুষের জীবনের পরিবর্তন হয়। আল্লাহ খুশি হন। এখানে আরোগ্য লাভের কয়েকটি দোয়া তুলে ধরা হলো—

এক.
বাংলা উচ্চারণ: ওয়া ইজা মারিজতু, ফা হুয়া ইয়াশফি নি।
বাংলা অর্থ: যখন আমি রোগাক্রান্ত হই, তখন তিনিই (মহান আল্লাহই আমাকে) আরোগ্য দান করেন। (সুরা শুয়ারা, আয়াত: ৮০)

দুই. 
বাংলা উচ্চারণ: ওয়া নুনাজ্জিলু মিনাল কোরআনি মা হুয়া শিফাউও, ওয়া রাহমাতুল্লিল মুমিনিন।
বাংলা অর্থ: আমি (আল্লাহ) কোরআনে এমন কিছু নাজিল করি যা রোগের সুচিকিৎসা এবং মুমিনের জন্য রহমত। (সুরা বনি ইসরাইল, আয়াত: ৮২)

তিন. 
বাংলা উচ্চারণ: ওয়া ইয়াশফি সুদুরা কাওমি মুমিনিন।
বাংলা অর্থ: আল্লাহ, তুমি মুমিনদের অন্তরকে রোগমুক্ত করে দাও। (সুরা তওবা, আয়াত: ১৪)

চার.
বাংলা উচ্চারণ: ওয়া শিফা উল্লিমা ফিস সুদুর, ওয়া হুদাও ওয়া রহমাতুললিল মুমিনিন।
বাংলা অর্থ: (কোরআন হচ্ছে) মুমিনদের জন্য অন্তরের রোগগুলোর প্রতিষেধক। (সুরা ইউনুস, আয়াত: ৫৭)

পাঁচ.
সুরা ফাতিহাকে সুরাতুশ শিফা বলা হয়। সুরা ফাতিহা পাঠ করে রোগীর শরীরে ফুঁ দিলে বা পানিতে ফুঁ দিয়ে রোগীকে খাওয়ালে আল্লাহ সুস্থতা দান করবেন। আবদুল মালেক ইবনে উমায়ের (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘সুরা ফাতেহা সব রোগের মহোষুধ।’ (দারেমি, হাদিস: ৩৪১৩)

লেখক: আলেম ও মাদরাসা শিক্ষক

ইবাদতের সুবর্ণ সময় রাত

প্রকাশ: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:৩৩ এএম
আপডেট: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:৩৪ এএম
ইবাদতের সুবর্ণ সময় রাত
রাতে প্রার্থনা করছেন এক ব্যক্তি। ছবি: সংগৃহীত

রাত মুমিনের জন্য অপার সম্ভাবনাময় সময়। মুমিন শুধু ঘুমিয়ে রাত কাটায় না; বরং সে একটা সময় বেছে নেয় আল্লাহর ইবাদতের জন্য। আল্লাহকে কাছে পাওয়ার জন্য। যারা রাতের শেষ ভাগে ঘুম থেকে উঠে আল্লাহর ইবাদত করে, কোরআনে তাদের প্রশংসা করা হয়েছে। পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘তাদের পার্শ্বদেশ বিছানা থেকে আলাদা হয়। তারা ভয় ও আশা নিয়ে তাদের রবকে ডাকে। আর আমি তাদেরকে যে রিজিক দান করেছি, তা থেকে তারা ব্যয় করে।’ (সুরা সাজদা, আয়াত: ১৬) 

শেষ রাতে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া বান্দার অতিরিক্ত দায়িত্ব। তাহাজ্জুদ পড়লে আল্লাহ বান্দার প্রতি খুশি হন। তাকে প্রশংসিত স্থানে প্রতিষ্ঠিত করেন। আল্লাহ বলেন, ‘আর রাতের কিছু অংশে তাহাজ্জুদ আদায় করো তোমার অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে। আশা করা যায়, তোমার রব তোমাকে প্রশংসিত অবস্থানে প্রতিষ্ঠিত করবেন।’ (সুরা বনি ইসরাইল, আয়াত: ৭৯)

রাতে ইবাদতের জন্য দণ্ডায়মান হওয়া বেশ কষ্টকর। রাতের নামাজে লোকদেখানোর ব্যাপার থাকে না। ফলে রাতের ইবাদত হয় একনিষ্ঠভাবে। রাত জেগে ইবাদত করা জান্নাতবাসীদের গুণ। আল্লাহ বলেন, ‘এ সকল জান্নাতবাসী ছিল এমন সব লোক, যারা রাতে সামান্যই ঘুমাত এবং ভোর রাতে ক্ষমতার দোয়া করত।’ (সুরা জারিয়াত, আয়াত: ১৭-১৮)

রাতের ইবাদতে আল্লাহর সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক স্থাপন করা যায়। আল্লাহর কাছে নিজের প্রয়োজনগুলো মনভরে বলা যায়। রাতের এক-তৃতীয়াংশের পরবর্তী প্রহর দোয়া কবুলের অন্যতম সময়। এ সময় আল্লাহতায়ালা বান্দাকে ডাকেন, প্রয়োজন জানতে চান। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যখন রাতের প্রথম এক-তৃতীয়াংশ অতিক্রম হয়ে যায়, তখন তিনি (আল্লাহ) দুনিয়ার আকাশে নেমে এসে বলতে থাকেন, ক্ষমা প্রার্থনাকারী আছে কি? (যে ক্ষমা প্রার্থনা করবে, আর আমি তাকে ক্ষমা করব)। কোনো তওবাকারী আছে কি? (যে তওবা করবে আর আমি তার তওবা কবুল করব)। কোনো প্রার্থনাকারী আছে কি? (যে প্রার্থনা করবে আর আমি তার প্রার্থনা কবুল করব)। কোনো আহ্বানকারী আছে কি? (আমি তার আহ্বানে সাড়া দেব)। এভাবে ফজরের সময় পর্যন্ত তিনি বলতে থাকেন।’ (মুসলিম, হাদিস: ৭৫৮)

দিনের তুলনায় রাতের ইবাদতে বেশি একাগ্রতা সৃষ্টি হয়। ওই সময়ের ইবাদত ও প্রার্থনায় সৌভাগ্য ও কল্যাণের দরজা খুলে যায়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের রাতের নামাজ (তাহাজ্জুদ) প্রতিষ্ঠা করা উচিত। কেননা এ হলো তোমাদের পূর্ববর্তী নেককারদের অবলম্বিত রীতি। রাতের নামাজ আল্লাহর নৈকট্য লাভ ও গুনাহ থেকে বাঁচার উপায়; মন্দ কাজের কাফফারা এবং শারীরিক রোগের প্রতিরোধক।’ (তিরমিজি, হাদিস: ৩৫৪৯)

রাসুলুল্লাহ (সা.) আরও বলেছেন, ‘আল্লাহতায়ালা ওই ব্যক্তির ওপর রহম করুন, যে রাত জেগে নামাজ আদায় করে; অতঃপর সে স্বীয় স্ত্রীকে ঘুম হতে জাগ্রত করে। আর যদি সে ঘুম হতে উঠতে না চায়, তখন সে তার চোখে পানি ছিটিয়ে দেয় (নিদ্রাভঙ্গের জন্য)। আল্লাহতায়ালা ওই নারীর ওপর রহম করুন, যে রাতে উঠে নামাজ আদায় করে এবং নিজের স্বামীকে জাগ্রত করে। যদি সে ঘুম থেকে উঠতে অস্বীকার করে, তখন সে তার চোখে পানি ছিটিয়ে দেয়।’ (আবু দাউদ, হাদিস: ১৩০৮)

লেখক: শিক্ষার্থী, ফতোয়া বিভাগ , মারকাজুশ শাইখ আরশাদ আল-মাদানী, মুগদা

মসজিদ-উত-তাকওয়ার তিন দিনব্যাপী সিরাত উ‍ৎসব

প্রকাশ: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০২:০৫ পিএম
আপডেট: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০২:০৭ পিএম
মসজিদ-উত-তাকওয়ার তিন দিনব্যাপী সিরাত উ‍ৎসব
মসজিদ-উত-তাকওয়া সোসাইটি, ধানমন্ডি। ছবি: সংগৃহীত

পবিত্র সিরাতুন্নবি (সা.) উপলক্ষে ধানমন্ডির মসজিদ-উত-তাকওয়া সোসাইটিতে শুরু হলো তিন দিনব্যাপী সিরাত উৎসব।

মসজিদ-উত-তাকওয়া আয়োজিত সিরাত উৎসবটি চলবে শনিবার থেকে সোমবার (১৪, ১৫ ও ১৬ সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত।

আয়োজকরা জানান, শনিবার শুরু হয়ে সোমবার রাত ১০টা পর্যন্ত চলবে এই উৎসব। তিন দিনের এই উৎসবে প্রতিদিন মাগরিব থেকে এশা পর্যন্ত সিরাতভিত্তিক উপদেশ আয়োজনে ‘সুন্নাহ অনুসরণের অপরিহার্যতা’ বিষয়ে অধ্যাপক ড. গিয়াস উদ্দিন তালুকদার, ‘রাহমাতুল্লিল আলামিন’ বিষয়ে হাফেজ মুফিত সাইফুল ইসলাম, ‘উসওয়াতুন হাসানাহ’ বিষয়ে মাওলানা গাজী সানাউল্লাহ রাহমানী ও ‘কোরআনের ভাষায় সিরাতের বর্ণনা’ নিয়ে এস এম নাহিদ হাসান কথা বলবেন।

এ ছাড়া প্রতিদিন জোহর নামাজের পর ইসলামিক ক্যালিগ্রাফি, ফুড অব প্রফেট (সা.) ও সিরাত গ্রন্থ প্রদর্শনী থাকবে। রবিবার মাগরিবের পর থেকে এশা পর্যন্ত নাত সন্ধ্যা ও সোমবার ১১টা ৩০ মিনিট থেকে ১২টা ৪৫ মিনিট পর্যন্ত ছোটদের জন্য রয়েছে ‘এসো নবিজির গল্প শুনি’ অনুষ্ঠান। আয়োজনে নারীদের বসার আলাদা ব্যবস্থা রয়েছে।

মসজিদ-উত-তাকওয়া সোসাইটির খতিব হাফেজ মুফতি সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘এবারও মসজিদ-উত-তাকওয়া সোসাইটির উদ্যোগে তিন দিনব্যাপী সিরাত উৎসব শুরু হলো। আমরা একটা উৎসব ও ইবাদতমুখর পরিবেশে সময়টা উদযাপন করব। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব মুহাম্মদ (সা.)—যিনি আমাদের জীবনের চেয়েও বেশি প্রিয়। তাঁর সম্পর্কে আমাদের খুব একটা জানা নেই। তাঁর সম্পর্কে আমরা অনেকে জানি না। খুব ভালো করে তাঁকে চিনি না। তাঁর সম্পর্কে আমাদের পড়াশোনা নেই। সিরাতের ব্যাপারে, আমাদের প্রিয় নবিজির ব্যাপারে যেন আমাদের এবং পরবর্তী প্রজন্মের ভেতর আরও বেশি আগ্রহ তৈরি করতে পারি—তাঁকে জানা, বোঝা এবং সুন্নতের ওপর আমলের ব্যাপারে—এজন্যই মূলত আমাদের সিরাত উৎসব।’

তিনি আরও বলেন, ‘এই পুরো আয়োজনের ক্ষেত্রে আমাদের মুসল্লি ভাইবোনদের যে স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ থাকে, এটা অভূতপূর্ব। আমি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি, আমাদের বর্তমান কমিটির প্রতি—তারা ভালোবেসে এগিয়ে এসেছেন। পাশাপাশি মুসল্লি ভাইবোনদের প্রতি এবং যারা আয়োজনের পেছনে থেকে পৃষ্ঠপোষকতা করছেন, আয়োজন সফল করতে শ্রম দিচ্ছেন, সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।’

লেখক: আলেম ও সাংবাদিক

সমস্যা সমাধানের দুই উপায়

প্রকাশ: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৯:০০ এএম
আপডেট: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৯:৪৮ এএম
সমস্যা সমাধানের দুই উপায়
ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত মোনাজাতরত মুসল্লির ছবি

জীবনের বাঁকে বাঁকে আমরা বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হই। নানা বিপদ-আপদ ও দুশ্চিন্তা আমাদের গ্রাস করে। আমরা তখন হতাশ হয়ে পড়ি। করণীয় ঠিক করতে পারি না। এটা আমাদের যেমন হয়, মানুষ হিসেবে দুনিয়ার জীবনে নবি-রাসুলদেরও হতো। কিন্তু তারা আমাদের মতো হতাশ হতেন না। আল্লাহর আশ্রয় গ্রহণ করতেন। আল্লাহর সাহায্য কামনা করতেন। এই আশ্রয় গ্রহণ এবং সাহায্য কামনার দুটি পদ্ধতি পবিত্র কোরআন আমাদের জানাচ্ছে। আল্লাহ বলেন, ‘হে ঈমানদাররা, তোমরা ধৈর্য ও নামাজের মাধ্যমে  সাহায্য কামনা করো।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৫৩) 

ধৈর্য ধারণ করা: বিপদ আসলে ধৈর্য ধরতেই হয়। কেউ স্বেচ্ছায় ধৈর্য ধরে, কেউ বাধ্য হয়ে। ধৈর্য ধরা ছাড়া মানুষের উপায় থাকে না। হাদিস থেকে আমরা জানতে পারি, একজন সাধারণ মানুষের ধৈর্য আর মুমিনের ধৈর্য এক নয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘মুমিনের ব্যাপারটি আশ্চর্যজনক! তার প্রতিটি বিষয়ই কল্যাণকর। এ মর্যাদা মুমিন ছাড়া আর কারও জন্য নয়। যদি সে সুখ-শান্তিতে থাকে, তাহলে কৃতজ্ঞতা আদায় করে; ফলে সেটা তার জন্য কল্যাণকর হয়। আর যদি সে বিপদাক্রান্ত হয়, তখন সে ধৈর্য ধারণ করে। ফলে সেটাও তার জন্য কল্যাণকর হয়।’ (মুসলিম, হাদিস: ২৯৯৯)। এই হাদিস থেকে আমরা বুঝতে পারি, মুমিনের জীবনে বিপদ এলেও লাভ। মুমিন ধৈর্য ধরে আখেরাতের সম্বল অর্জন করে নেয়। 

নামাজ আদায় করা: সমস্যা সমাধানে সাহায্য চাওয়ার দ্বিতীয় মাধ্যম নামাজ। এটা সব নবি-রাসুলের আমল ছিল। তাঁরা সমস্যায় পড়লে নামাজে দাঁড়িয়ে যেতেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘নবিরা বিচলিত হলেই, সমস্যায় পড়লেই নামাজে দাঁড়িয়ে যেতেন।’ (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস: ১৮৯৩৭)। রাসুলুল্লাহ (সা.) নিজেও এমন করতেন। হুজাইফা (রা.) বলেন, ‘কোনো বিষয় নবিজিকে চিন্তিত করলেই তিনি নামাজে দাঁড়িয়ে যেতেন।’ (আবু দাউদ, হাদিস: ১৩১৯) 
বিপদে পড়লে নামাজের মাধ্যমে সাহায্য চাওয়ার কথা কোরআনে আছে। সমস্যায় পড়লে কী করতে হবে এ ব্যাপারে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর নির্দেশনা হলো, ‘কেউ কোনো সমস্যায় পতিত হলে সে যেন খুব ভালোভাবে অজু করে, পূর্ণ মনোযোগের সঙ্গে অন্যান্য নামাজের মতো দুই রাকাত নামাজ পড়ে।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ৪৭৮) 
 

লেখক: শিক্ষক , মাদরাসাতুল হেরা, মিরপুর, ঢাকা