রাসুলুল্লাহ (সা.) উত্তম আদর্শের বাতিঘর। তিনি পৃথিবীর সমস্ত মানুষের জন্য অনুকরণীয়-অনুসরণীয়। যারা তাঁকে ঈমান নিয়ে দেখেছে এবং ঈমান অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছে তারা সৌভাগ্যবান হয়েছে। তাঁকে যেসব মুসলিম দেখেননি, তারা চান অন্তত স্বপ্নেও যেন একবার তাঁর দেখা পাওয়া যায়। আবু হুরাইরা (রা.) বলেন, ‘আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, যে ব্যক্তি আমাকে স্বপ্নে দেখল, সে যেন আমাকে জাগ্রত অবস্থায় দেখল, কেননা শয়তান আমার আকৃতি ধারণ করতে পারে না।’
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে আমাকে স্বপ্নে দেখল, সে সত্যই আমাকেই দেখল।’ তিনি আরও বলেছেন, ‘যে আমাকে স্বপ্নে দেখবে, সে কখনো জাহান্নামে যাবে না।’
শায়খ আবু সাদ বলেন, আল্লাহতায়ালা মুহাম্মদ (সা.)-কে জগৎবাসীর জন্য রহমতস্বরূপ পাঠিয়েছেন। সুতরাং সুসংবাদ তাদের জন্য, যারা তাঁকে জীবদ্দশায় দেখেছেন এবং তাঁর অনুসরণ করেছেন। সুসংবাদ তাদের জন্য, যারা তাঁকে স্বপ্নে দেখেছেন।
ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে স্বপ্নে দেখলে, মহান আল্লাহ তার ঋণ পরিশোধ করবেন। রুগ্ণ ব্যক্তি তাঁকে স্বপ্নে দেখলে, মহান আল্লাহ তাকে আরোগ্য দান করবেন। যুদ্ধরত অবস্থায় তাঁকে স্বপ্নে দেখলে, মহান আল্লাহ তাকে যুদ্ধে জয়ী করবেন। হজ করেনি; এমন ব্যক্তি তাঁকে স্বপ্নে দেখলে, স্বপ্নদ্রষ্টা বায়তুল্লাহ শরিফের হজ করতে পারবে।
দুর্ভিক্ষপূর্ণ বা অনাবাদী এলাকায় রাসুলুল্লাহ (সা.)কে স্বপ্নে দেখা গেলে, তা আবাদী ও সতেজ হবে। যেখানে জুলুম ছড়িয়ে পড়েছে, সেখানে যদি তাঁকে স্বাভাবিক অবস্থায় স্বপ্নে দেখা যায়, তা হলে জুলুম-অত্যাচার ইনসাফে পরিণত হবে। যদি ভয়-ভীতিপূর্ণ এলাকায় দেখা যায়, তা হলে তা শান্তি ও নিরাপত্তায় পরিণত হবে। তাঁকে দুর্বল, ক্ষীণকায় এবং রং বিবর্ণ, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ হানিকর অবস্থায় কোথাও স্বপ্নে দেখা যাওয়া, ওই এলাকায় বিদআতের প্রভাব এবং দীন ও সুন্নাতের দুর্বলতার আলামত। তদ্রূপ, জীর্ণ-শীর্ণ এবং মলিন পোশাক পরিহিত অবস্থায় কোথাও স্বপ্নে দেখারও অনুরূপ ব্যাখ্যা।
রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে প্রথমে রুগ্ণ এরপর রোগমুক্ত দেখলে, ওই এলাকার লোকেরা ফিতনার পর সংশোধিত হয়ে যাবে। তাঁকে আরোহী অবস্থায় স্বপ্নে দেখলে, স্বপ্নদ্রষ্টা আরোহী অবস্থায় তাঁর কবর মুবারক জিয়ারত করবে। তাঁকে হাঁটা অবস্থায় স্বপ্নে দেখলে, সে হাঁটা অবস্থায় তাঁর রওজা মুবারক জিয়ারত করবে। তাঁকে দাঁড়ানো অবস্থায় স্বপ্নে দেখলে, তার এবং ওই সময়কার রাষ্ট্রপ্রধানের কাজকর্ম সঠিক হবে।
রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে অনাবাদী জায়গায় আজান দিতে দেখলে, ওই জায়গা আবাদী ও বসবাসের উপযোগী হবে। তাঁকে আহার করাতে বা স্বয়ং তাঁকে আহার করাতে দেখলে, বুঝতে হবে তাঁর পক্ষ হতে তাকে তার সম্পদের জাকাত আদায়ের নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে।
রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে ইন্তেকাল করতে দেখলে, তার বংশের কেউ ইন্তেকাল করবে। কোনো স্থানে তাঁর জানাজা দেখলে, সেখানে কোনো মহাবিপদ দেখা দেবে। কবর দেওয়া পর্যন্ত তাঁর জানাজার অনুসরণ করতে দেখলে, সে বেদআতের দিকে আকৃষ্ট হবে। তাঁর কবর জিয়ারত করতে দেখলে, সে বিপুল সম্পদ পাবে। যদি কেউ স্বপ্নে নিজেকে নবির সন্তান হিসেবে দেখে, অথচ সে নবির বংশের লোক নয়, তা হলে এটা তার খাঁটি ঈমানের লক্ষণ। স্বপ্নে নিজেকে তাঁকে পিতা হিসেবে দেখলে, তার ঈমান, বিশ্বাস এবং দীনে দুর্বলতা দেখা দেবে। কোনো ব্যক্তিবিশেষের রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে স্বপ্নে দেখার ফলাফল শুধু তার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে না; বরং মুসলিম জামাত বা দলকেও তা অন্তর্ভুক্ত করে নেয়।
(স্বপ্নের ব্যাখ্যাবিদ মুহাম্মাদ ইবনে সিরিনের বিখ্যাত বই তাফসিরুল আহলাম বা স্বপ্নের ব্যাখ্যা থেকে সংক্ষেপিত)
লেখক: আলেম ও সাংবাদিক