আরবি মাস বারোটি। আল্লাহতায়ালার কাছেও বারো মাসে এক বছর। মুসলিম জীবনে বারো মাসের গুরুত্ব অপরিসীম। পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, আসমান-জমিন সৃষ্টির দিন থেকেই আল্লাহর কিতাবে (লৌহ মাহফুজে) মাসগুলোর সংখ্যা হলো বারো। তার মধ্যে চারটি নিষিদ্ধ মাস। এটা হলো সুপ্রতিষ্ঠিত দ্বীন। কাজেই ওই সময়ের মধ্যে নিজেদের ওপর অত্যাচার করো না। মুশরিকদের বিরুদ্ধে সর্বাত্মকভাবে যুদ্ধ করো, যেমন তারা তোমাদের বিরুদ্ধে সর্বাত্মকভাবে যুদ্ধ করে। জেনে রেখ, আল্লাহ অবশ্যই মুত্তাকিদের সঙ্গে আছেন।’ (সুরা তওবা, আয়াত: ৩৬)
আরবি ১২ মাসের দ্বিতীয় মাস সফর। সফর আরবি শব্দ। এর অর্থ খালি, শূন্য। মুহাররম মাসে যুদ্ধ বন্ধ থাকায় আরবরা এ মাসে দলে দলে যুদ্ধে যেত। ফলে তাদের ঘর খালি হয়ে যেত। আর আরবিতে ‘সফরুল মাকান’ বলতে মানুষশূন্য জায়গা বা স্থানকে বোঝায়। এ জন্য এ মাসের নামকরণ করা হয় ‘সফর’। ‘সাফর’ ক্রিয়া মূল থেকে উৎপন্ন হলে অর্থ হবে হলুদ, হলদেটে, তামাটে। আরব দেশে তৎকালে সফর মাসে খরা হতো এবং খাদ্যাভাব, আকাল ও মঙ্গা দেখা দিত। মাঠঘাট শুকিয়ে বিবর্ণ তামাটে হয়ে যেত। তাই তারা অবস্থার সঙ্গে মিল রেখে এ মাসের নামকরণ করেছে ‘আস সাফারুল মুসাফফার’ অর্থাৎ ‘বিবর্ণ সফর মাস’। (লিসানুল আরব, ৩/৪৫৫)
জাহেলি যুগে এ মাসকে অশুভ মনে করা হতো। তাই এ মাসে সফর করত না তারা। রাসুলুল্লাহ (সা.) এমন ধারণার মূল উৎপাটন করে ঘোষণা করেছেন, ‘কোনো অশুভ-অযাত্রা নেই, কোনো ভূত-প্রেত বা অতৃপ্ত আত্মা নেই এবং সফর মাসের অশুভত্বের কোনো অস্তিত্ব নেই।’ (বুখারি, ২১৫৮; মুসলিম, ১৭৪২)
একাদশ হিজরির ২৯ সফর। রাসুলুল্লাহ (সা.) জান্নাতুল বাকিতে কোনো এক জানাজায় গেলেন। সেখান থেকে ফেরার পথে তাঁর মাথাব্যথা শুরু হয়। এই অসুস্থতাই ছিল রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর মৃত্যুযাত্রার সূচনা। এই অসুস্থতা নিয়ে তিনি ১১ দিন পর্যন্ত নামাজের ইমামতি করেছিলেন। (আর রাহিকুল মাখতুম, পৃষ্ঠা: ৫২৯)
এ প্রসঙ্গে দ্বিতীয় হিজরি শতকের প্রখ্যাত তাবিয়ি ঐতিহাসিক ইবনে ইসহাক (রহ.) লিখেছেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) যে অসুস্থতায় ইন্তেকাল করেন, সে অসুস্থতার শুরু হয়েছিল সফর মাসের শেষে কয়েক রাত থাকতে, অথবা রবিউল আউয়াল মাসের শুরু থেকে।’ (আস-সিরাহ আন-নববিইয়াহ, ৪/২৮৯)
কোন বার থেকে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর অসুস্থতার শুরু হয়েছিল, সে বিষয়ে মতভেদ রয়েছে। কেউ বলেছেন শনিবার; কেউ বলেছেন বুধবার এবং কেউ বলেছেন, সোমবার তার অসুস্থতার শুরু হয়। কয়দিনের অসুস্থতার পর তিনি ইন্তেকাল করেন, তা নিয়েও মতভেদ রয়েছে। কেউ বলেছেন ১০ দিন; কেউ বলেছেন ১২ দিন; কেউ বলেছেন ১৩ দিন।
আবার কেউ বলেছেন, ১৪ দিন অসুস্থ থাকার পর রাসুলুল্লাহ (সা.) ইন্তেকাল করেন। (আল-মাওয়াহিব আল-লাদুন্নিয়া, ৩/৩৭৩; শারহুল মাওয়াহিব, ১২/৮৩) এ মাসে রাসুলুল্লাহ (সা.) থেকে বিশেষ কোনো আমলের সহিহ বর্ণনা পাওয়া যায় না।
লেখক: আলেম, গবেষক ও সাংবাদিক