ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা ওমর (রা.) হিজরি সন চালু করেন। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর হিজরতের ঐতিহাসিক ঘটনাকে স্মারক বানিয়ে এটি চালু করা হয়। হিজরি সনের মাস বারোটি। আল্লাহর কাছেও বারো মাসে এক বছর। পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই আসমানসমূহ ও পৃথিবী সৃষ্টির দিন থেকেই আল্লাহর বিধানে আল্লাহর কাছে গণনার মাস বারোটি, এর মধ্যে চারটি সম্মানিত। (সুরা তাওবা, আয়াত : ৩৬)
আরবি বারো মাসের নাম
মুহাররম, সফর, রবিউল আউয়াল, রবিউস সানি, জুমাদাল উলা, জুমাদাল উখরা, রজব, শাবান, রমজান, শাওয়াল, জিলকদ, জিলহজ।
আরবি মাসের নামকরণ যেভাবে
মুহাররম: জাহেলি যুগে এই মাসে যুদ্ধবিগ্রহ ও রক্তপাত হারাম ছিল। তাই এই মাসকে মুহাররমুল হারাম বলা হয়।
সফর: সফর অর্থ শূন্য হওয়া। জাহেলি যুগে সফর মাসে লোকেরা যুদ্ধের জন্য বের হতো। তখন ঘরগুরো শূন্য হয়ে যেত। ফলে এ মাসের নাম সফর রাখা হয় সফর।
রবিউল আউয়াল: তখন সময়টি ছিল ফসলে রবি তথা বসন্তকাল। লোকে তাই এ নাম দিল।
রবিউস সানি: এই সময়টার নাম দিতে চাইলেন লোকজন। তখন বসন্তের শেষ সময়। লোকেরা বলল, এটির নাম হবে রবিউস সানি বা রবিউল আখের তথা শেষ বসন্ত।
জুমাদাল উলা: জুমুদ থেকে জুমাদা শব্দটি এসেছে, অর্থ জমে যাওয়া। এই মাসের নাম রাখার সময় ঠান্ডার মৌসুম শুরু হয়। ঠান্ডায় অনেক জিনিস জমে যেত। তাই এই নাম রাখা হয়।
জুমাদাল উখরা: এই সময়ে প্রচণ্ড শীত পড়ত। শীতের তীব্রতায় পানি পর্যন্ত জমে যেত। লোকেরা তখন এই সময়ের নাম দিলে জুমাদাল উখরা।
রজব: রজব অর্থ সম্মান করা। আরবের লোকেরা এ মাসকে বেশ সম্মান করত। এটিকে আল্লাহর মাস বলত। তাই এ মাসের নাম দেওয়া হয় রজব।
শাবান: আরবি শাব শব্দ থেকে শাবান এসেছে। অর্থ বের হওয়া, প্রকাশ হওয়া, বিদীর্ণ হওয়া। যেহেতু এ মাসে বিপুল কল্যাণ প্রকাশিত হয়, মানুষের রিজিক উৎপাদন ও বণ্টিত হয় এবং তাকদিরের ফয়সালাগুলোও বণ্টন করে দেওয়া হয়। তাই এ মাসের নাম শাবান রাখা হয়েছে।
রমজান: রমজান অর্থ জ্বালানো-পোড়ানো। এ মাসে মুমিনের গুনাহ জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে ছারখার করে দেওয়া হয় বলে এর নাম রমজান রাখা হয়েছে।
শাওয়াল: শাওয়াল এসেছে ‘শাওল’ মূল ধাতু থেকে। অর্থ বাইরে গমন করা। এই সময়ে আরবের লোকেরা ভ্রমণে বের হতো বলে একে শাওয়াল বলা হলো।
জিলকদ: জিল অর্থ ওয়ালা আর ‘কাদাহ’ অর্থ বসা। আরবরা এ মাসে যুদ্ধবিগ্রহ বন্ধ করে বাড়িতে বসে থাকত, তাই এর নাম রাখা হয় জিলকদ। এ মাস সম্মানিত মাসের অন্তর্ভুক্ত।
জিলহজ: হাজ্জাহ থেকে জিলহজ শব্দটি নেওয়া হয়েছে। অর্থ একবার হজ করা। অথবা ‘হিজ’ শব্দ থেকে নেওয়া হয়েছে, মানে অর্থবছর। এ মাস আসে বছরের শেষে, বছরের সমাপ্তিও ঘটে এ মাসের মধ্য দিয়ে, তাই এর নাম জিলহজ রাখা হয়েছে।
লেখক: আলেম ও সাংবাদিক