শায়খ আবু সাদ (রহ.) বলেন, নামাজ স্বপ্নে দেখার ব্যাপারে মূলনীতি হলো, এটা দুনিয়া-আখেরাতের বিবেচনায় উত্তম। নামাজ স্বপ্নে দেখা বেলায়েতের পদমর্যাদা লাভ, ঋণ পরিশোধ, আমানত আদায় বা আল্লাহতায়ালার ফরজসমূহ থেকে কোনো ফরজ আদায় করার আলামত। তিন ধরনের হতে পারে নামাজ আদায়ের স্বপ্ন। যথা— ফরজ, সুন্নত ও নফল।
ফরজ, সুন্নত ও নফল
ফরজ নামাজ আদায় করতে দেখলে তার ফলাফল সেটাই হবে, যা আগে বর্ণনা করা হয়েছে এবং স্বপ্নদ্রষ্টার হজ করার সৌভাগ্য হবে। সে অশ্লীল কাজ থেকে বিরত থাকবে। আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয় নামাজ মন্দ এবং অশ্লীল কাজ থেকে বিরত রাখে।’ (সুরা আনকাবুত, আয়াত: ৪৫)
সুন্নত নামাজ আদায় করতে দেখা স্বপ্নদ্রষ্টার পবিত্রতা, বিপদে ধৈর্যধারণ এবং সুনাম ছড়িয়ে পড়ার আলামত। আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয় তোমাদের জন্য রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ।’ (সুরা আহজাব, আয়াত: ২১)
সুন্নত নামাজ আল্লাহতায়ালার বান্দা ও সৃষ্টিকুলের প্রতি দয়া ও মমতা এবং অধীনস্থ ও পরিবার-পরিজনের প্রতি সদ্ভাব ও সম্মান প্রদর্শন এবং উপরস্থ লোকদের পক্ষ থেকেও তার প্রতি সদ্ব্যবহারের কথা জানান দিয়ে যায়। সুন্নত নামাজ স্বপ্নে দেখা পরিবার-পরিজন এবং অধীনস্থদের ব্যয়ভার বহন এবং বন্ধু-বান্ধবের প্রয়োজনে আপ্রাণ চেষ্টারও আলামত। এসবের কারণে সে হবে সম্মানের অধিকারী। নফল নামাজ স্বপ্নে দেখলে দুশ্চিন্তা দূর হবে। আত্মমর্যাদা বৃদ্ধি পাবে।
জোহর: মেঘমুক্ত আকাশ থাকাবস্থায় জোহরের ফরজ পড়তে দেখলে স্বপ্নদ্রষ্টা যেকোনো কাজে মধ্যম পন্থা অবলম্বন করবে। দিনের উজ্জ্বলতা হিসেবে এটা তার সম্মান বাড়িয়ে দেবে। দিন মেঘাচ্ছন্ন থাকলে দুশ্চিন্তা দেখা দেবে।
আসর: আসরের ফরজ পড়তে দেখলে বুঝতে হবে যে কাজে স্বপ্নদ্রষ্টা নিয়োজিত আছে, সেই কাজের খুব সামান্যই বাকি আছে। আসরের সময় জোহরের নামাজ পড়তে দেখলে স্বপ্নদ্রষ্টা তার ঋণ পরিশোধ করবে। যদি দেখে দুটি নামাজের একটি ছুটে গেছে, তা হলে সে অর্ধেক ঋণ বা মোহর আদায় করবে। পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘যা তোমরা নির্ধারিত করেছ, তার অর্ধেক আদায় করতে হবে।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ২৩৭)
মাগরিব: মাগরিবের ফরজ পড়তে দেখলে পরিবারের যে দায়-দায়িত্ব তার ওপর অর্পিত আছে, তা সঠিকভাবে আদায় করবে।
এশা: এশার ফরজ পড়তে দেখলে স্বপ্নদ্রষ্টা পরিবার-পরিজনের সঙ্গে এমন আচরণ করবে, যাতে তাদের মন আনন্দিত হবে এবং অন্তর তৃপ্ত হবে।
ফজর: ফজরের ফরজ নামাজ পড়তে দেখলে স্বপ্নদ্রষ্টা এমন কোনো কাজ শুরু করবে, যার মাধ্যমে স্বপ্নদ্রষ্টা এবং তার পরিবারের জীবিকার বন্দোবস্ত হবে। জোহর, আসর বা এশার নামাজ দুই রাকাত পড়তে দেখলে স্বপ্নদ্রষ্টা সফর করবে। একই স্বপ্নই কোনো নারী দেখলে ওই দিন হতেই তার হায়েজ শুরু হবে।
(স্বপ্নের ব্যাখ্যাবিদ মুহাম্মাদ ইবনে সিরিনের বিখ্যাত বই তাফসিরুল আহলাম বা স্বপ্নের ব্যাখ্যা থেকে সংক্ষেপিত)
লেখক: আলেম, গবেষক ও সাংবাদিক