মহাগ্রন্থ কোরআন জ্ঞানের ভাণ্ডার। আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞানের উৎসগ্রন্থ কোরআন। এ রকম অনন্য বৈশিষ্ট্য আর কোনো ধর্মগ্রন্থে পাওয়া যায় না। এতে রয়েছে ভ্রূণতত্ত্ববিদ্যা, শরীরতত্ত্ববিদ্যা, জীববিদ্যা, প্রাণিবিজ্ঞান, উদ্ভিদবিজ্ঞান, সমুদ্রবিজ্ঞান, ভূতত্ত্ববিজ্ঞান, পদার্থবিজ্ঞান, জ্যোতির্বিজ্ঞান, সমাজবিজ্ঞান, ভাষাবিজ্ঞান, সমরবিজ্ঞান, মহাকাশবিজ্ঞান ও জীবনের বিভিন্ন শাখা-প্রশাখাগত বিজ্ঞান। মোট কথা, পৃথিবীর এমন কোনো বিষয় নেই, যার বর্ণনা পবিত্র কোরআনে নেই। আল্লাহ বলেন, ‘বিজ্ঞানময় কোরআনের শপথ।’ (সুরা ইয়াসিন, আয়াত: ২)। কোরআন বিজ্ঞানের অনন্য উৎস হওয়ায় আল্লাহ বিজ্ঞানময় কোরআনের শপথ করেই এর গুরুত্ব বুঝিয়েছেন। পবিত্র কোরআনে বিজ্ঞানের যেসব অনন্য উৎস নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে, এখানে কয়েকটি দৃষ্টান্ত উল্লেখ করা হলো—
ভ্রূণতত্ত্ববিদ্যা: কোরআনে ভ্রূণতত্ত্ব সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, ‘(হে মুহাম্মাদ) পড়ুন আপনার প্রভুর নামে, যিনি আপনাকে সৃষ্টি করেছেন। যিনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন জমাট রক্ত থেকে।’ (সুরা আলাক, আয়াত: ১-২)। আয়াতে আরবি শব্দ ‘আলাক’ অর্থ জমাট রক্ত বা দৃঢ়ভাবে আটকে থাকে এমন আঠালো জিনিস। যা আধুনিক বিজ্ঞান গবেষণার সঙ্গে সম্পূর্ণ মিলে যায়। বিজ্ঞানের সম্প্রতি গবেষণা অনুযায়ী, গড়ে ‘তিন মিলিয়ন স্পার্ম’-এর মধ্যে মাত্র একটিই ওভামকে ফার্টিলাইজ করতে যথেষ্ট। অর্থাৎ ফার্টিলাইজেশনের জন্য মাত্র ০.০০০০৩% স্পার্মই যথেষ্ট। এভাবেই ভ্রূণতত্ত্ব সম্পর্কে অনেক অজানা জ্ঞান কোরআনে পাওয়া যায়।
সকল প্রাণীর সৃষ্টিরহস্য: এ বিষয়ে আধুনিক বিজ্ঞানীরা বলছেন, পানি থেকেই সকল প্রাণিজগতের উদ্ভব। অথচ অনেক আগেই এ কথা বলেছে কোরআন। আল্লাহ বলেন, ‘আমি প্রাণবন্ত সবকিছুই সৃষ্টি করেছি পানি থেকে। তবুও কি তারা বিশ্বাস স্থাপন করবে না?’ (সুরা আম্বিয়া, আয়াত: ৩০)
বিশ্বজগৎ সৃষ্টিরহস্য: আধুনিক বিজ্ঞানের গবেষণা অনুযায়ী ‘কোটি কোটি বছর আগে বিশ্বজগৎ একটি অখণ্ড জড়বস্তুরূপে বিদ্যমান ছিল। পরে তার কেন্দ্রে একটি মহাবিস্ফোরণ ঘটে, যাকে বিগব্যাংক বলা হয়। সেই মহাবিস্ফোরণের ফলে আমাদের সৌরজগৎ, ছায়াপথ ও তারকারাজিসহ ইত্যাদি সৃষ্টি হয়েছে।’ পবিত্র কোরআন বহু আগেই আমাদেরকে এ তথ্য দিয়েছে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘অবিশ্বাসীরা কি দেখে না যে, আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী ওতপ্রোতভাবে মিশে ছিল। অতঃপর আমিই এদের উভয়কে পৃথক করে দিয়েছি...।’ (সুরা আম্বিয়া, আয়াত: ৩০)
উদ্ভিদের প্রাণ আছে: উদ্ভিদের প্রাণ আছে, কথাটি বিজ্ঞানী শ্রী জগদীশ চন্দ্র বসু মাত্র কয়েক যুগ আগে আবিষ্কার করেছেন। অথচ প্রায় পনেরো শত বছর আগে এ কথা কোরআন বলেছে। আল্লাহ বলেন, ‘নক্ষত্ররাজি ও উদ্ভিদরাজি আল্লাহকে সেজদা করে।’ (সুরা রহমান, আয়াত: ৬)
আঙুলের ছাপের রহস্য: স্যার হেমচন্দ্র বসু ও আজিজুল হক ১৮৯২ সালে ইংল্যান্ডে প্রথম আবিষ্কার করেন, ‘পৃথিবীতে এমন ব্যক্তি পাওয়া যাবে না; যার আঙুলের ছাপ অন্য ব্যক্তির সঙ্গে হুবহু মেলে।’ কোরআন এই তথ্য নিশ্চিত করেছে দেড় হাজার বছর আগে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘মানুষ কি ধরে নিয়েছে, (সে মরে গেলে) আমি তার অস্থিমজ্জাগুলো আর কখনো একত্রিত করতে পারব না? নিশ্চয়ই (আমি তা পারব) আমি তো বরং তার আঙুলের গিরাগুলোকেও পুনর্বিন্যস্ত করে দিতে পারব।’ (সুরা কিয়ামা, আয়াত: ৩-৪) দিন দিন যত বেশি বিজ্ঞান নিয়ে গবেষণা করা হবে, কোরআনের বিজ্ঞানময়তার সত্যতা তত বেশি স্পষ্ট হবে। অর্থাৎ কোরআন যে বিজ্ঞানের উৎস তা দ্রুত বাস্তব উপলব্ধিতে আসবে। এমনকি নতুন প্রজন্মকে যদি যথাযথ উৎসাহ ও প্রযুক্তির সঠিক জ্ঞানে আলোকিত করা যায়, তা হলে আবার তৈরি হবে ইবনে সিনা, আল রাজি, হাসান ইবনে হাইসান, মুসা আল খাওয়ারিজমি, ইবনে রুশদ, জাবির ইবনে হাইয়ানের মতো বিশ্ববরেণ্য অসংখ্য মুসলিম বিজ্ঞানী।
লেখক: শিক্ষক, ইসলামিক স্টাডিজ, যশোর ইংলিশ স্কুল অ্যান্ড কলেজ, যশোর সেনানিবাস