ঢাকা ২০ আশ্বিন ১৪৩১, শনিবার, ০৫ অক্টোবর ২০২৪

কর্মক্ষমতা বাড়াতে নবিজির (সা.) ৩ অভ্যাস

প্রকাশ: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৭:০০ পিএম
কর্মক্ষমতা বাড়াতে নবিজির (সা.) ৩ অভ্যাস
ইন্টারনেট তেকে সংগৃহীত মসজিদের নববির সবুজ গম্বুজের ছবি

খুব ভোরে ঘুম থেকে ওঠা
সখর গামেদি (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘হে আল্লাহ, আমার উম্মতের জন্য দিনের শুরুর অংশ বরকতময় করুন।’ (তিরমিজি, হাদিস: ১২১২)। এই দোয়া রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁর উম্মতের জন্য করেছেন। আমরা জানি তাঁর দোয়া আল্লাহর কাছে কবুল হয়। সুতরাং ভোরের সময়টা পুরোপুরি আল্লাহর রহমত ও বরকতে পরিপূর্ণ। রাসুলুল্লাহ (সা.) নিজেই শেষ রাতে ঘুম থেকে উঠে পড়তেন, যেহেতু তিনি নিয়মিত ফজর নামাজ আদায় করতেন।
একজন মুসলিম হিসেবে আমাদের উচিত, মুহাম্মাদ (সা.)-এর অভ্যাসগুলো রপ্ত করে নিজেদের প্রাত্যহিক জীবনেও প্রয়োগ করা। এটা সত্য যে, শুরুর দিকে আমাদের কষ্ট হবে, খানিকটা ক্লান্তি অনুভব করতে পারি। তবে যখন আমরা নিয়মিত এই অভ্যাসটা গড়ে তুলব, তখন এর বহুমুখী সুফলও আমরা ভোগ করতে পারব। এতে সময়ের বরকত পাওয়া যাবে। এগিয়ে যাওয়ার সচেতনতা বৃদ্ধি পাবে ও মানসিক বিভ্রান্তি হ্রাস পাবে। এ জন্য ধীরে ধীরে পদক্ষেপ নিতে হবে। দ্রুত ঘুমাতে হবে এবং সকাল সকাল ঘুম থেকে ওঠার অভ্যাস করতে হবে।

পরিমিত খাবার গ্রহণ করা 
জটিল রোগ-ব্যাধি থেকে বাঁচতে এবং সুন্দরভাবে জীবনযাপন করতে ইসলাম মুমিনদের পরিমিত খাবার গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছে। পরিমিত খাবার শুধু শারীরিক সুস্থতা নিশ্চিত করে না; বরং হৃদয়কে বিগলিত করে, ইবাদত-বন্দেগিতে উৎসাহিত করে। আর অপরিমিত খাবার শারীরিক অসুস্থতার পাশাপাশি হৃদয়কে শক্ত করে তোলে। ফলে ইবাদত-বন্দেগিতে অমনোযোগী হয়। মিকদাম বিন মাদিকারিব (রা.) বলেন, আমি আল্লাহর রাসুল (সা.)-কে বলতে শুনেছি, ‘একজন মানুষ নিজের পেটের চেয়ে অধিকতর নিকৃষ্ট কিছুই পূর্ণ করে না। তার পিঠ সোজা রাখতে সক্ষম এমন অল্প পরিমাণ খাবারই একজনের জন্য যথেষ্ট। যদি তা করতেই হয়, তা হলে এক-তৃতীয়াংশ খাবার, এক-তৃতীয়াংশ পানি ও এক-তৃতীয়াংশ শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য রাখতে হবে।’ (তিরমিজি, হাদিস: ২৩৮০)

নিয়মিত ব্যায়াম করা
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘দুর্বল মুমিন অপেক্ষা সবল মুমিন শ্রেষ্ঠ এবং আল্লাহর কাছে বেশি প্রিয়।’ (মুসলিম, হাদিস: ২৬৬৪) বিশেষজ্ঞরা ব্যাখ্যা করে বলেছেন, এই হাদিসে ‘শক্তি’ বলতে বোঝানো হয়েছে ঈমানের জোরকে। তবে শারীরিক শক্তিকে অগ্রাহ্য করা হয়নি। আমরা কীভাবে শারীরিক সক্ষমতা বজায় রাখতে পারি? নিশ্চিতভাবে নিয়মিত ব্যায়াম করার মধ্য দিয়ে। আমাদের প্রিয়নবি (সা.) নিয়মিত ব্যায়াম করতেন। তিনি খুবই সুস্বাস্থ্যের অধিকারী এবং শক্তিশালী ছিলেন। তিনি সব সময় তার ঘোড়া/উটের পিঠে চড়তেন। মাঝে মধ্যেই সেগুলোর পিঠে বোঝা না চাপিয়ে তার সঙ্গীদের সঙ্গে দৌড় প্রতিযোগিতা করতেন। নিয়মিত ব্যায়ামের মাধ্যমে শরীরে শক্তি বাড়ে। কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।

লেখক : অনুবাদক ও সাংবাদিক

হাফেজে কোরআনের মর্যাদা

প্রকাশ: ০৫ অক্টোবর ২০২৪, ০৯:০০ এএম
আপডেট: ০৫ অক্টোবর ২০২৪, ০৯:১২ এএম
হাফেজে কোরআনের মর্যাদা
কাঠের রেহালে রাখা পবিত্র কোরআনের ছবি। ইন্টারনেট

কোরআন আমাদের বিশ্বাসের মহাসৌধ, যার আলোকবর্তিকায় আমরা আমাদের ঈমানকে সজীব করি। যার রৌশনিতে আমাদের হেদায়া (ঈমানের পথ) প্রোজ্জ্বল হয়। যার তেলাওয়াত সুর-মূর্ছনায় হৃদয়ের অন্তরীক্ষে ঈমান ডানা মেলে। যার স্পর্শে আমাদের হৃদয়সিন্ধুতে আল্লাহপ্রেমের কল্লোল আছড়ে পড়ে, ঈমানের প্রবৃদ্ধি ঘটে এবং আমলে বসন্তের সজীবতা জাগে। পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘মুমিন তো তারাই, আল্লাহর স্মরণে যাদের হৃদয়ে কম্পন সৃষ্টি হয়, কোরআনের তেলাওয়াতে ঈমানের স্তর বাড়ে। আর ঈমানদাররা তো তাদের রবের ওপরই নির্ভর করে।’ (সুরা আনফাল, আয়াত: ২)

কোরআনের ফজিলত সম্পর্কে কোরআনের বয়ানই যথেষ্ট। তারপরও আমরা হাদিসপাতার আলোচনায় কোরআনের যে মর্যাদা দেখতে পাই, তা কোরআনের বড়ত্ব, মাহাত্ম্য ও গভীরত্বকে প্রমাণ করে। কোরআন হলো বান্দা ও আল্লাহর মাঝে সেতুবন্ধের অন্যতম মাধ্যম। বান্দা যখন তেলাওয়াত করে, তখন সে যেন আল্লাহর সঙ্গে সরাসরি কথা বলে। কোরআনের মর্যাদা যদি সীমাহীন হয়; তাহলে যে মানুষ তার বুকে ৩০ পারা কোরআন খোদাই করে সংরক্ষণ করছে তার কী মর্যাদা হতে পারে? কোরআন পরশ পাথর–যাকে সে সঙ্গ দেয়, তা-ই খাঁটি সোনায় পরিণত হয়ে যায়। সংস্পর্শের এমন বরকত হলে, যে বুক তা সংরক্ষণ করে, সেই বুকওয়ালার মর্যাদা কতটুকু? 

কিয়ামতের ময়দানে যখন কোরআন বহনকারী লোকগুলো আল্লাহর সামনে উপস্থিত হবে, তখন একজন ফেরেশতা তাদের সম্মানে আল্লাহকে লক্ষ করে বলবে, ‘হে আল্লাহ, কোরআনে হাফেজকে অলংকার পরিয়ে দিন! তখন আল্লাহ তাকে একটি মর্যাদাপূর্ণ তাজ বা মাথার মুকুট পরিয়ে দেবেন। অতঃপর বলবে, হে আল্লাহ, আরও অতিরিক্ত কিছু পরিয়ে দিন! তখন তাকে মর্যাদার পোশাক পরানো হবে। অতঃপর চাওয়া হবে, হে আল্লাহ, আপনি তার ওপর সন্তুষ্ট হয়ে যান! আল্লাহ তার ওপর সন্তুষ্ট হয়ে যাবেন। অতঃপর হাফেজকে বলা হবে, তুমি একটি করে আয়াত পড়ো আর ওপরের দিকে উঠতে থাকো। এভাবে প্রতিটি আয়াতের বিনিময়ে তার একটি করে মর্যাদার স্তর বাড়তে থাকবে।’ (তিরমিজি, হাদিস: ২৯১৫)

যার বুকের ভেতর কোরআন আছে, সে যদি কোরআন অনুযায়ী আমল করে তাহলে কিয়ামতের দিন কোরআন তার পক্ষে সুপারিশ করবে। উমামা বাহিলি (রা.) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, ‘তোমরা কোরআন পড়ো, কেননা কোরআন কিয়ামতের দিন তার তেলাওয়াতকারীর জন্য সুপারিশ করবে। সুরা বাকারা ও আলে ইমরান দুটি ডানা প্রসারিত বিশাল পাখির আকার ধারণ করে; তাদের সাহায্য করবে। উমাম বাহিলি (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) আরও জানিয়েছেন, তোমরা নিয়মতান্ত্রিক সুরা বাকারা পাঠ করবে, কেননা তা পাঠ করার মধ্যে বরকত নিহিত আছে এবং তার নিয়মিত তেলাওয়াত না করা আফসোসের কারণ হবে। কারণ বাতিলপন্থিরা তাদের সঙ্গে পারবে না।’ (মুসলিম, হাদিস: ১৯১০) 

কোরআনের বাহকের ব্যাপারে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর বিশেষ নির্দেশনা রয়েছে। আবু মুসা আশয়ারি (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাদের নির্দেশনা দিয়েছেন যে, আমরা যেন অবশ্যই বৃদ্ধ মানুষকে সম্মান করি, কোরআনের বাহককে সম্মান করি; সঙ্গে ন্যায়পরায়ণ শাসককেও সম্মান করি। আর তাদের সম্মান করা আল্লাহকে সম্মান করার অন্তর্ভুক্ত।’ (আবু দাউদ, হাদিস: ৪৮৪৩)

এক হাদিসে হাফেজদের মর্যাদা বোঝাতে গিয়ে সম্মানিত ফেরেশতাদের সঙ্গে তুলনা করেছে। কোরআন যতটা মহান, কোরআনের বাহকও ততটা মহান হয়ে ওঠে। কোরআন যতটা আলোকময়; কোরআন তার বাহককেও ততটা আলোকময় করে গড়ে তোলে। সেই কোরআন আমাদের সবার বুকের বুকশেলফে শোভা ছড়াক, আর হেদায়াতের রওনক ছড়াক আমাদের ঈমান-বিশ্বাসের শুভ্র শামিয়ানায়। 

লেখক: আলেম ও খতিব

সুখবর শিক্ষা ও সেবার আলো ছড়াচ্ছে পিসব

প্রকাশ: ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ০৭:০০ পিএম
আপডেট: ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ০৮:৪০ পিএম
শিক্ষা ও সেবার আলো ছড়াচ্ছে পিসব
পিসবের বিভিন্ন প্রকল্প ও প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা ইমরানের কোলাজ ছবি। খবরের কাগজ

অসহায় মানুষের শিক্ষা, সেবা ও পুনর্বাসনের জন্য মাওলানা ইমরান হুসাইন হাবিবী গড়ে তুলেছেন পিপলস ইমপ্রুভমেন্ট সোসাইটি অব বাংলাদেশ (পিসব)। সারা দেশে ৫০টি মক্তব রয়েছে। কয়েক হাজার মানুষকে স্বাবলম্বী করেছেন। তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের কোরআন শেখাচ্ছেন ও কর্মসংস্থান করছেন। নানামুখী সেবামূলক কাজে ব্যস্ত পিসব।

একজন মাওলানা ইমরান: মাওলানা ইমরান হুসাইন হাবিবীর জন্ম ঢাকার মিরপুরে। বাবা আব্দুল কুদ্দুছ মুন্সি তাবলিগের স্থানীয় আমির ছিলেন। ইমরান কোরআনের হেফজ শুরু করেছেন মিরপুরে। দাওরায়ে হাদিস (মাস্টার্স) করেছেন ঢাকার ফরিদাবাদ মাদরাসা থেকে। মাদরাসাতুদ দাওয়াহ মিরপুর থেকে উচ্চতর ইসলামি দাওয়াহ ও তুলনামূলক ধর্মতত্ত্ব পড়েছেন। শিক্ষা, সেবা, স্বাবলম্বী ও পুনর্বাসনের জন্য প্রতিষ্ঠা করেছেন পিপলস ইমপ্রুভমেন্ট সোসাইটি অব বাংলাদেশ (পিসব)। পিসবের সাধারণ সম্পাদক ও প্রকল্প পরিচালক তিনি। 

বুক তার সেবার হৃদয়: তখন ২০০৬ সাল, ইমরান মিরপুর শাহ আলী বাগে হেফজ পড়ছেন। দেখলেন, অনেক ছাত্রের বিছানা-বালিশ, ট্রাঙ্ক বা কিতাবাদি নেই। ভাইদের থেকে টাকা এনে তাদের এসব কিনে দিলেন এবং পূরণ করলেন অন্যান্য প্রয়োজনও। ২০১১ সালে সংগঠক মাওলানা রজিবুল হকের সঙ্গে মেডিকেল ক্যাম্পে প্রথমে জামালপুরের মেলান্দহে যান। পরের বছর এলাকার তরুণদের নিয়ে শীতবস্ত্র সংগ্রহ করে ছুটে যান রংপুর ও মুন্সীগঞ্জে। ২০১৩ সালে হেফাজতের আন্দোলনে হতাহতদের জন্য কাজ করেন। ২০১৫ সালে কয়েকজন মিলে হাফেজ্জী হুজুর সেবা সংস্থা করেন। কাজ করেছেন মীর ফাউন্ডেশনে। বাসমাহ ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠায় বিশেষ ভূমিকা রেখেছেন তিনি। 

পিসবের পথচলা: ২০১৭ সালে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য সানাবিল ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে ছয়টি মসজিদ, দুটি মাদরাসা, গভীর নলকূপ স্থাপন ও সাঁকো নির্মাণ করেন। এক মাস বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা দেন। তখন তাদের জন্য স্কুল করতে সরকারি নিবন্ধনের প্রয়োজন পড়ে। ২০১৯ সালে পিপলস ইমপ্রুভমেন্ট সোসাইটি অব বাংলাদেশ নামে নিবন্ধন নিয়ে কাজ শুরু করেন। কার্যনির্বাহী সদস্যরা তখন বেশ ভূমিকা রেখেছিল।

আলোকিত মক্তব: ২০১৬ সাল থেকে কুড়িগ্রামে ইমাম ও মাদরাসার শিক্ষকদের বিশুদ্ধভাবে কোরআন শেখানোর প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন ইমরান। শিশুদের ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা দেওয়ার জন্য প্রতিষ্ঠা করেছেন আলোকিত মক্তব। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ৫০টির বেশি মক্তব রয়েছে পিসবের। শিক্ষার্থী রয়েছে ৪ হাজারের বেশি। শিক্ষক আছেন ৫০ জন। রয়েছে নিজস্ব সিলেবাস, স্বতন্ত্র বই ও কারিকুলাম। শুক্রবার ছাড়া প্রতিদিন দুই ঘণ্টা পড়ানো হয়। পড়তে টাকা লাগে না। প্রতি বছর ২ হাজার ছাত্র কোরআন শিখছে। ৫০টি মক্তবে সন্ধ্যার পর বয়স্কদের কোরআন শেখানো হয়। ইমরান বললেন, ‘এখানে এক বছর পড়লে সবাই কোরআন পড়তে সক্ষম হয়। নুরানি, প্রাইমারি এবং হেফজ বিভাগে গল্প আকারে ইসলামের মৌলিক বিষয়গুলো পড়ানো হবে। এসব কাজের অনুপ্রেরণা আমি আব্দুল হাই পাহাড়পুরী (রহ.) থেকে পেয়েছি। হুজুরের স্বপ্ন বাস্তবায়নের চেষ্টা করছি।’

স্বাবলম্বী প্রজেক্ট: বরিশালের মাওলানা ইয়াকুব প্রতিবন্ধী, থাকেন মিরপুরে। ২০০৭ সালের সিডরে তার ঘর ভেঙে যায়। মানুষের ঘরের চার-পাঁচ হাত বারান্দায় শুয়ে-বসে কাটে ছয়জনের দিন-রাত। ছেলেরা কখনো থাকেন মসজিদে। ইয়াকুব ঢাকায় কোরআন পড়ান। মসজিদে থাকেন। ইয়াকুবের বরিশালের ভিটায় মাটি ভরাট করে দিলেন ইমরানরা। চার রুমের পাকা ঘরসহ টিউবওয়েল ও বাথরুম করে দিলেন। মাওলানা ইয়াকুব বললেন, ‘জীবনে কল্পনাও করিনি এমন ঘর হবে আমার। আমার স্ত্রী-সন্তানরা এত ভালো ঘরে ঘুমাবে।’ 
পিসবের রয়েছে ‘স্বাবলম্বী প্রজেক্ট’। এ পর্যন্ত ৩ হাজার পাঁচশর বেশি মানুষকে স্বাবলম্বী করা হয়েছে। এর মধ্যে ৩৫টি পরিবারকে চার রুমের পাকা ঘর, ১০টি দোকান, ৬৫টি রিকশা ও ভ্যান, ১৫ জেলায় ১৫০টির বেশি গভীর নলকূপ, ৭০টি টয়লেট দেওয়া হয়েছে। সারা দেশে ৩৪টি মাদরাসা-মসজিদ করেছেন। সেলাই মেশিন, নৌকা, গরু-ছাগল, কৃষিপণ্য ও মাছ ধরার জালও দেন।

জীবন ওদের ভালো হোক: ২০১৮ সালে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের কোরআন শেখানো শুরু করে পিসব। মিরপুর ১২-এ ‘পিসব কুটিরশিল্প’ আছে তাদের জন্য। সেখানে বর্তমানে ২৫ জন তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ কাজ করেন। এখান থেকেই কাজ শিখেছেন তারা। আসর থেকে মাগরিব পর্যন্ত তাদের কোরআন শেখানো হয়। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন দুর্যোগ-দুর্বিপাকে মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছে পিসব। করোনাকালে নানামুখী সেবা, রানা প্লাজায় হতাহতদের সহায়তা, সিলেট ও ফেনীর বন্যায় সহায়তা দিয়েছেন। ২০২০ সালে ১৫ হাজার, ২০২১ সালে ২০ হাজার মোটা কম্বল বিতরণ করেছেন। ২০২২ সালে ২৫টি জেলায় ৬ হাজার মাদরাসাছাত্রকে বিছানাপত্র এবং ২০২৩ সালে ৬ হাজার কম্বল দিয়েছে। 

স্বপ্ন: অবহেলিত শিশুদের জন্য নিরাপদ আবাসন এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে কাজ করছে পিসব। ইমরান বললেন, ‘কিয়ামত পর্যন্ত পিসবের সেবামূলক কাজ জারি থাকুক। শিক্ষা নিয়ে সুদূরপ্রসারী কাজ করতে চাই। দেশের অবহেলিত অঞ্চলে স্কুল ও কারিগরি প্রশিক্ষণের সমন্বিত মাদরাসা করতে চাই।’

লেখক : আলেম ও সাংবাদিক

 

কন্যাসন্তান জান্নাত লাভের মাধ্যম

প্রকাশ: ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ০৩:০০ পিএম
আপডেট: ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ০৮:৪০ পিএম
কন্যাসন্তান জান্নাত লাভের মাধ্যম
মায়ের হাত ধরে হেঁটে চলা কন্যাসন্তানের ছবি । ফ্রিপিক

সন্তান–মানুষের জন্য আল্লাহতায়ালার দেওয়া এক বিশেষ নেয়ামত। হোক সেটা ছেলে বা মেয়ে। আল্লাহ যাকে চান মেয়ে দেন, যাকে চান ছেলে দেন। কাউকে দেন দুটোই, কাউকে রাখেন নিঃসন্তানও। পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘আসমান ও জমিনের রাজত্ব শুধু আল্লাহরই। তিনি যা চান, তাই সৃষ্টি করেন। তিনি যাকে চান কন্যাসন্তান দান করেন এবং যাকে চান পুত্রসন্তান দান করেন। অথবা তাদেরকে দেন পুত্র ও কন্যা উভয়ই। আর যাকে ইচ্ছে বন্ধ্যা করেন। তিনি সর্ববিষয়ে সর্বাধিক অবহিত ও ক্ষমতাবান।’ (সুরা শুরা, আয়াত: ৪৯-৫০)

যে নারী পুণ্যময়ী: অনেককে দেখা যায়, প্রথম কন্যাসন্তান হওয়ার সুসংবাদ পেয়ে আনন্দ প্রকাশের স্থলে দুঃখ ও আফসোস করেন। অনেকে তো আবার পুত্রসন্তান না হওয়ায় স্ত্রীর সঙ্গে কথাবার্তাই বন্ধ করে দেন। ননদ-শাশুড়ি শোনায় নানা কটুকথা। অলক্ষুণে, অপয়া বলতেও দ্বিধা করে না তারা। অথচ ইসলামের দৃষ্টিতে প্রথম কন্যাসন্তান প্রসবকারিণী নারী হলেন পুণ্যময়ী। পরম সৌভাগ্যবতী। বিখ্যাত মুফাসসির আল্লামা ওয়াসেলা ইবনে আসকা (রহ.) বলেন, ‘মহান আল্লাহ সন্তানের প্রকার বর্ণনা প্রসঙ্গে সর্বপ্রথম কন্যাসন্তানের কথা বলেছেন। এরপর বলেছেন পুত্রসন্তানের কথা। তাঁর শব্দচয়নের এ ধারাই প্রমাণ করে যে নারীর গর্ভ থেকে প্রথম কন্যাসন্তান ভূমিষ্ঠ হয়, সে নারী পুণ্যময়ী।’ (তাফসিরে মাআরেফুল কোরআন, খণ্ড: ৭, পৃষ্ঠা: ৭১২)

কন্যাসন্তান মানুষের জন্য সুসংবাদ: অনেকে মেয়ে হলে অসন্তুষ্ট হয়। পুত্রসন্তান হলে যারপরনাই খুশি হয় এবং ব্যাপক আনন্দ-উৎসব করে। কোরআনে কন্যাসন্তান হওয়ার সংবাদকে ‘সুসংবাদ’ বলে ঘোষণা করা হয়েছে এবং মুখ কালো হওয়া লোকদের আচরণকে জঘন্য আচরণ বলে বর্ণনা করা হয়েছে। আল্লাহ বলেন, ‘আর যখন তাদের কাউকে কন্যাসন্তানের সুসংবাদ দেওয়া হয়, তখন তার চেহারা কালো হয়ে যায়। আর সে থাকে দুঃখ ভারাক্রান্ত। তাকে যে সুসংবাদ দেওয়া হয়েছে, সে দুঃখে সে জাতি থেকে আত্মগোপন করে। অপমান সত্ত্বেও কি একে রেখে দেবে, না মাটিতে পুঁতে ফেলবে? জেনে রেখ, তারা যা ফায়সালা করে, তা কতই না জঘন্য!’ (সুরা নাহল, আয়াত: ৫৮-৫৯)

কন্যা ও পুত্রসন্তানের মাঝে সমতা বিধান: কন্যা ও পুত্রসন্তানকে একচোখে দেখতে হবে। লালন-পালন, ভরণ-পোষণ ও ভালোবাসা—কোনো ক্ষেত্রেই তাদের মাঝে বৈষম্য করা যাবে না। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘হে আমার উম্মত, তোমরা তোমাদের ছেলে-মেয়েদের মাঝে সুবিচার করো। তোমরা তোমাদের ছেলে-মেয়েদের মাঝে সুবিচার করো।’ (কানজুল উম্মাল, খণ্ড: ১৬, পৃষ্ঠা: ৪৪৫)

অধিক কন্যাসন্তান জান্নাত লাভের মাধ্যম: আমাদের সমাজে তিন-চারটি কন্যাসন্তানের অধিকারী পুত্রহীন বাবা-মাকে সমাজে মেরুদণ্ডহীন বলে ধারণা করা হয়—যা কন্যাসন্তানদের প্রতি এক ধরনের বৈষম্যমূলক আচরণ ও নেতিবাচক ধারণার উন্মেষ ঘটায়। অথচ এই কন্যাসন্তানরাই আগামীর মমতাময়ী মা, ভবিষ্যতের প্রেরণাদানকারী সহধর্মিণী। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘হে আমার উম্মতেরা, তোমরা মেয়েদের নিকৃষ্ট মনে করো না। দেখো, স্বয়ং আমিও চার কন্যাসন্তানের  পিতা।’ (রিয়াজুস সালেহিন, ৩/৮৪)

কন্যাসন্তান প্রতিপালনের ফজিলত: রাসুলুল্লাহ (সা.) কন্যাসন্তান প্রতিপালনে যত্নশীল হওয়ার ব্যাপারে এত বিপুলসংখ্যক হাদিস বর্ণনা করেছেন এবং এত মহৎ সব ফজিলতের ঘোষণা দিয়েছেন, যার কিয়দংশও পুত্রসন্তানের ব্যাপারে দেওয়া হয়নি। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তিকে কন্যাসন্তান লালন-পালনের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে এবং সে ধৈর্যের সঙ্গে তা সম্পাদন করেছে, সেই কন্যাসন্তান তার জন্য জাহান্নাম থেকে বাধা হবে।’ (জামে তিরমিজি, হাদিস: ১৯১৩)। রাসুলুল্লাহ (সা.) আরও বলেছেন, ‘যে ব্যক্তির তিনটি কন্যাসন্তান বা তিনজন বোন আছে, অথবা দুজন কন্যাসন্তান বা দুজন বোন আছে। আর সে তাদের সঙ্গে সদ্ব্যবহার করেছে এবং তাদের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করেছে। তা হলে তার জন্য রয়েছে জান্নাত।’ (তিরমিজি, হাদিস, ১৯১৬)

যত্নসহকারে কন্যাসন্তান লালন-পালনের সবচেয়ে বড় যে ফজিলতটি হাদিসে বর্ণিত হয়েছে তা হলো, ‘যে ব্যক্তি দুজন কন্যাসন্তানকে ভালোভাবে দেখাশোনা করবে, লালন-পালন করবে এবং সঠিক সময়ে উপযুক্ত পাত্রের কাছে বিয়ে দেবে, জান্নাতে সে প্রিয় নবিজির সঙ্গী হবে। নবিজি (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি দুজন কন্যাসন্তানকে লালন-পালন ও দেখাশোনা করল (বিয়ের সময় হলে উপযুক্ত ভালো পাত্রের কাছে বিবাহ দিল) সে এবং আমি জান্নাতে এরূপ একসঙ্গে প্রবেশ করব—যেরূপ এ দুটি আঙুল। তিনি নিজের পাশাপাশি দুই আঙুল মিলিয়ে দেখালেন।’ (তিরমিজি, ১৯১৪) 

 

লেখক : আলেম ও শিক্ষক 

 

অধঃপতনের ৫ কারণ

প্রকাশ: ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ০৯:০০ এএম
আপডেট: ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ০৮:৩৯ পিএম
অধঃপতনের ৫ কারণ
অধঃপতনের ৫ কারণ নিয়ে বানানো ডিজাইন। খবরের কাগজ

পৃথিবীর সব গোষ্ঠী, জাতি ও দেশ উন্নতি চায়। কিন্তু অনেকে উন্নতির কাঙ্ক্ষিত জায়গায় পৌঁছতে পারে না; অধঃপতনের শিকার হয়। এটা হয় মূলত অপরাধকর্মের কারণে। অপরাধ যখন ব্যক্তিপর্যায়ে থাকে তখন অধঃপতন ব্যক্তির মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে। ব্যাপক হারে যখন কোনো দেশ বা জাতি অপরাধে লিপ্ত হয়, তখন সে অপরাধের দায় সবাইকেই বহন করতে হয়। ইবনে মাজাহ-এর এক হাদিসের ভাষ্য হলো, কোনো দেশে পাঁচ ধরনের অপরাধ চলমান থাকলে, তারা কখনই উন্নতির শিখরে পৌঁছাতে পারবে না। তাদের অধঃপতন সুনিশ্চিত।

অশ্লীলতা : আল্লাহ বলেন, ‘হে মানুষ, ভূমণ্ডলে বিদ্যমান বস্তুগুলো থেকে হালাল উত্তম জিনিসগুলো খাও এবং শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করে চলো না, বস্তুত সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু। সে তোমাদেরকে শুধু অসৎ এবং অশ্লীল কাজের নির্দেশ দেয়, আর তোমাদেরকে নির্দেশ দেয় আল্লাহর সম্বন্ধে এমন কথা বলার যা তোমরা জান না।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৬৮-১৬৯)। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যখনই কোনো জাতির মধ্যে প্রকাশ্যে অশ্লীলতা ছড়িয়ে পড়ে, (যেমন সুদ, ঘুষ, ব্যভিচার ইত্যাদি) তখন তাদের মধ্যে মহামারি আকারে প্লেগ ও এমন সব ব্যাধির জন্ম হয়, যা আগেকার লোকেদের মধ্যে কখনো দেখা যায়নি।’

ওজনে কম দেওয়া : ইসলামে বেচাকেনায় ওজন করার সময় সঠিকভাবে দাঁড়িপাল্লা ব্যবহারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ওজনে কারচুপি করার অপরাধে পূর্বে এক জাতি ধ্বংসও হয়েছে। (সুরা বনি ইসরাইল, আয়াত: ৩৫)। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যখন কোনো জাতি ওজন ও পরিমাপে কারচুপি করে, তখন তাদের ওপর নেমে আসে দুর্ভিক্ষ ও কঠিন বিপদ-মসিবত। আর তাদের ওপর শুরু হয় জালেম শাসকগোষ্ঠীর নিপীড়ন।’

জাকাত না দেওয়া : জাকাত হলো ধনীর সম্পদে গরিবের অধিকার। জাকাত না দিয়ে সম্পদ কুক্ষিগত করে রাখা গরিব-দুঃখীর সম্পদ আত্মসাৎ করারই নামান্তর। (সুরা জারিয়াত, আয়াত: ১৯)। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘কোনো জাতি যখন সম্পদের জাকাত আদায় করা থেকে বিরত থাকে, তখন আসমান তাদের ওপর বৃষ্টি বর্ষণ বন্ধ করে দেয়। যদি ভূ-পৃষ্ঠে চতুষ্পদ জন্তু-জানোয়ার (গরু, ছাগল, ভেড়া, কুকুর, ঘোড়া ইত্যাদি) না থাকত তা হলে আর কখনো জমিনে বৃষ্টিপাত হতো না।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস: ৪০১৯)

অঙ্গীকার ভঙ্গ করা : অঙ্গীকার পূর্ণ করা গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। অঙ্গীকার পূরণ না করলে গুনাহ হয়। আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘এখানে অঙ্গীকার বলতে, আল্লাহতায়ালা বান্দার কাছ থেকে ঈমান ও ইবাদত সম্পর্কিত যেসব অঙ্গীকার নিয়েছেন অথবা তাঁর নাজিলকৃত বিধি-বিধান হালাল ও হারাম সম্পর্কিত যেসব অঙ্গীকার নিয়েছেন, আয়াতে সেগুলোই  উদ্দেশ্য। (তাফসিরে মাআরেফুল কোরআন)। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে জাতি আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (সা.)-এর সঙ্গে কৃত অঙ্গীকার ভঙ্গ করে, আল্লাহ তাদের ওপর বিজাতীয় দুশমনকে ক্ষমতাসীন করে দেন। সে তাদের ধন-সম্পদসহ সবকিছু কেড়ে নেয়।’

শরিয়াবহির্ভূত বিচারব্যবস্থা : দুনিয়ার সবকিছু আল্লাহর। তাঁর বিধান মেনে জগতের সব কিছু পরিচালনা করা ঈমানি দায়িত্ব। আল্লাহ বলেন, ‘হুকুম বা কর্তৃত্বের মালিকানা আল্লাহ ছাড়া কারও কাছে নেই। তিনিই সত্যকথা বর্ণনা করেন, আর তিনিই সর্বোত্তম ফায়সালাকারী।’ (সুরা আনয়াম, আয়াত: ৫৭)। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘শাসকবর্গ যখন আল্লাহর কিতাব মোতাবেক ফায়সালা করে না এবং বিচার বিভাগে আল্লাহর নাজিলকৃত বিধানকে অগ্রাহ্য করে, তখন তিনি তাদের পরস্পরের মধ্যে (যুদ্ধ) দাঙ্গা-হাঙ্গামা বাঁধিয়ে দেন।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস: ৪০১৯)

 

লেখক : আলেম ও শিক্ষক 

স্বপ্নে মৃত ব্যক্তির বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দেখা

প্রকাশ: ০৩ অক্টোবর ২০২৪, ০৭:০০ পিএম
আপডেট: ০৩ অক্টোবর ২০২৪, ০৭:০৫ পিএম
স্বপ্নে মৃত ব্যক্তির বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দেখা
কবরস্থানের সামনে এক যুবক। এআই

মৃত ব্যক্তিকে মাথার অভিযোগ করতে দেখলে বুঝতে হবে, সে পিতামাতার হকের ব্যাপারে বা তার প্রশাসকের হকের ব্যাপারে যে ত্রুটি-বিচ্যুতি করেছে, সে সম্পর্কে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। মৃত ব্যক্তিকে ঘাড়ের অভিযোগ করতে দেখলে বুঝতে হবে, তাকে স্ত্রীর মোহর আদায় না করা অথবা অহেতুক সম্পদ নষ্ট করা সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। মৃতকে হাতের অভিযোগ করতে দেখলে, বুঝতে হবে, তাকে ভাইবোন বা অংশীদারের হক অথবা মিথ্যা কসম খাওয়া সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। 

মৃতকে এক পার্শ্বের অভিযোগ করতে দেখার ব্যাখ্যা হলো, তাকে স্ত্রীর হক সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। মৃতকে পেটের অভিযোগ করতে দেখলে বুঝতে হবে, তাকে পিতা, নিকট আত্মীয়-স্বজন অথবা সম্পদের হক সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। মৃতকে পায়ের অভিযোগ করতে দেখা, তাকে আল্লাহর সন্তুষ্টি ছাড়া অন্যত্র সম্পদ খরচ করা সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করার আলামত। মৃতকে রান বা ঊরু সম্পর্কে অভিযোগ করতে দেখলে বুঝতে হবে, তাকে পরিবারের সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদ করা সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। মৃতকে পায়ের গোছা সম্পর্কে অভিযোগ করতে দেখা, তাকে অন্যায় পথে জীবন ধ্বংস করা সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করার ইঙ্গিত।

যদি দেখে মৃত ব্যক্তি তাকে কোথাও থেকে ডাকছে, কিন্তু তাকে দেখছে না, কিন্তু তার ডাকে সাড়া দিয়ে এমনভাবে বের হয়েছে যে, নিজেকে ফিরিয়ে রাখতে পারছে না; এর ব্যাখ্যা হলো, মৃত ব্যক্তি যে রোগে বা কারণে মারা গেছে, সেও ওই রোগে বা কারণে মারা যাবে। যেমন দেয়াল ধসে, পানিতে ডুবে বা আকস্মিক দুর্ঘটনা ইত্যাদিতে পতিত হয়ে।

মৃত ব্যক্তির পেছনে পেছনে চলে এক অপরিচিত ঘরে প্রবেশ করতে এবং সেখান থেকে আর বের না হওয়ার ব্যাখ্যা হলো, সে মারা যাবে। যদি দেখে মৃত ব্যক্তি তাকে বলছে, তুমি অমুক সময় মারা যাবে, তা হলে তার কথা সত্য। কেননা সে সত্যের ঘরে পৌঁছেছে। যদি দেখে মৃত ব্যক্তির পেছনে পেছনে চলেছে, কিন্তু তার সঙ্গে কোনো ঘরে প্রবেশ করেনি বা প্রবেশ করলেও সঙ্গে সঙ্গে বের হয়ে চলে এসেছে, তা হলে সে মৃত্যুর কাছাকাছি পৌঁছেও বেঁচে যাবে। মৃত ব্যক্তির সঙ্গে সফর করতে দেখলে স্বপ্নদ্রষ্টা তার কাজ সম্পর্কে দ্বিধাগ্রস্ত এবং সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগবে।

মৃত ব্যক্তি স্বপ্নদ্রষ্টাকে দুনিয়ার কোনো প্রিয় বস্তু দান করেছে দেখলে, যেখান থেকে তার কোনো আশা ছিল না সেখান থেকে কল্যাণ ও বরকত পাবে। যদি দেখে মৃত ব্যক্তি তাকে নতুন বা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন জামা দিয়েছে, তা হলে মৃত ব্যক্তি তার জীবদ্দশায় যেমন জীবিকা লাভ করেছিল, সেও তেমন জীবিকা পাবে। মৃত ব্যক্তি স্বপ্নদ্রষ্টাকে চাদর দিতে দেখলে স্বপ্নদ্রষ্টা মৃত ব্যক্তির মতো পদমর্যাদা ও সম্মান পাবে। পুরাতন ছেঁড়া-ফাটা কাপড় দিতে দেখলে সে দরিদ্র হবে। ময়লা কাপড় দিতে দেখলে গুনাহে লিপ্ত হবে। খাদ্য দিতে দেখলে এমন স্থান থেকে সম্মানের জীবিকা পাবে, যেখান থেকে পাওয়ার কল্পনাও ছিল না। মৃতের পক্ষ থেকে মধু দিতে দেখলে যেখান থেকে কোনো আশা ছিল না, সেখান থেকে গনিমতলব্ধ সম্পদ পাবে। মৃতের পক্ষ থেকে বাঙ্গি দিতে দেখলে যার কল্পনা সে কখনো করোন, সেই দুশ্চিন্তায় পতিত হবে।

মৃত ব্যক্তিকে ওয়াজ-নসিহত করতে বা কোনো এম শেখাতে দেখলে সেই পরিমাণ ধর্মীয় কল্যাণ পাবে, যেই পরিমাণ যে তাকে নসিহত করেছে বা ইলম শিখিয়েছে। যদি কেউ মৃত ব্যক্তিকে কাপড় দিতে দেখে, কিন্তু সে তা খোলেনি বা পরিধানও করেনি, তা হলে তার সম্পদের ক্ষতি হবে অথবা সে অসুস্থ হবে, কিন্তু অবশেষে সুস্থ হয়ে উঠবে। মৃতকে পরিধান করানোর জন্য কাপড় দিতে দেখলে সে মারা যাবে এবং কাপড়ের মালিকানা জীবিতের হাত থেকে চলে যাবে।

জীবিতের পক্ষ থেকে মৃতকে কোনো কিছু দেওয়া উত্তম নয়; তবে দুটি ক্ষেত্রে এর ব্যতিক্রম রয়েছে। এক. বাঙ্গি দিতে দেখলে, ধারণাতীত ভাবে তার চিন্তা দূর হবে। দুই. মৃত চাচা বা ফুফুকে কোনো কিছু দিতে দেখলে তার ঋণ পরিশোধ হবে।

(স্বপ্নের ব্যাখ্যাবিদ মুহাম্মাদ ইবনে সিরিনের বিখ্যাত বই তাফসিরুল আহলাম বা স্বপ্নের ব্যাখ্যা থেকে সংক্ষেপিত)  

লেখক: আলেম, গবেষক ও সাংবাদিক