ঢাকা ১৯ আশ্বিন ১৪৩১, শুক্রবার, ০৪ অক্টোবর ২০২৪

রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে সঠিকভাবে জানা ছাড়া পরিপূর্ণরূপে ইসলাম অনুসরণ সম্ভব নয়

প্রকাশ: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৮:২০ এএম
আপডেট: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৮:৩০ এএম
রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে সঠিকভাবে জানা ছাড়া পরিপূর্ণরূপে ইসলাম অনুসরণ সম্ভব নয়
বহু গ্রন্থ প্রণেতা সাব্যসাচী লেখক মুহাম্মদ যাইনুল আবিদীন

মুহাম্মদ যাইনুল আবিদীন—সুপ্রসিদ্ধ আলেম, গবেষক, লেখক ও কথাসাহিত্যিক। আশিটির বেশি মৌলিক ও অনূদিত বইয়ের কারিগর তিনি। যুক্ত রয়েছেন মাদরাসার পরিচালক ও মসজিদের খতিব হিসেবেও। রবিউল আউয়াল মাস উপলক্ষে সিরাতে রাসুল (সা.) পাঠ করার প্রয়োজনীয়তা, কোন কোন গ্রন্থ পাঠ করার মাধ্যমে সঠিকভাবে রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে জানা যাবে এবং পাঠের ক্ষেত্রে কি কি সতর্কতা বা নিয়ম অনুসরণ করা উচিত ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে কথা হয়েছে তার সঙ্গে। আলোচনার চুম্বকাংশ তুলে ধরা হলো। 

প্রশ্ন: মুসলমানের জন্য রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর জীবনী পাঠ করা জরুরি কেন?
মুহাম্মদ যাইনুল আবিদীন: ইসলামকে পৃথিবীর অন্যান্য ধর্মের সঙ্গে তুলনা করে বুঝতে চাইলে, একটি প্রতিষ্ঠিত ও সুরক্ষিত সৌন্দর্য সামনে চলে আসবে, তা হলো—ইসলাম বলতে আমরা যে জীবনদর্শনকে বলি বা বুঝি, তার একটা বাস্তব আদর্শ রয়েছে এবং সেটি হলেন আমাদের প্রিয়নবি মুহাম্মাদ (সা.)। কোনো দর্শন যতক্ষণ পর্যন্ত বাস্তবে চিত্রিত না হয়, ততক্ষণ পর্যন্ত সর্বসাধারণের জন্য সেটা অনুসরণযোগ্য হয়ে ওঠে না। 
কোনো জীবনদর্শন বা চিন্তা মানুষের জীবনে সফলতা বয়ে আনার জন্য সেখানে যেমন সহজ বিষয় থাকবে, কঠিন বিষয় থাকবে এবং দৃশ্যত এমন কিছু বিষয় সামনে আসবে—মনে হবে যেন এ কাজগুলো করা ঠিক সম্ভব নয়। একাধারে ত্রিশ দিন রোজা রাখা—নির্দিষ্ট ঘড়ির কাঁটায় কাঁটায় নিয়ম মেনে ইফতার করাকে যে কেউ অসম্ভব মনে করতে পারেন। কিন্তু ইসলামের পক্ষ থেকে যিনি এ দাওয়াতটা দিচ্ছেন, তিনি রমজানসহ সারা বছর এভাবে রোজা রেখে, ইফতার করে যখন দেখিয়েছেন—তখন আর কারও এ প্রশ্নের মুখে পড়তে হয় না, ভাবতে হয় না বা শয়তান তাকে প্ররোচিত করতে পারে না যে, এটা অসম্ভব। 
এটা সম্ভব, তার কারণ যিনি এ দাওয়াতটা দিয়েছেন, তিনি আমাদের কাছে যা চেয়েছেন, এর চেয়ে বেশি কিছু করে দেখিয়েছেন। ইসলাম ধর্মের শ্রেষ্ঠত্ব এটি।
মুসলমানদের জাকাত দিতে বলেছেন রাসুলুল্লাহ (সা.)। আর দান করার ক্ষেত্রে তিনি নিজেকে এমন এক উচ্চতায় প্রতিষ্ঠিত করেছেন—তাঁর ওপর জীবনে কখনো জাকাত ফরজ হওয়ার সুযোগই হয়নি। রাসুলুল্লাহ (সা.) সবটা বিলিয়ে দিয়ে অন্যদের বলেছেন, তোমরা ৪০ ভাগের এক ভাগ দাও। ফলে সবার কাছে সহজ মনে হয়েছে। 
মুহাম্মাদ (সা.)-এর জীবনী জানা, তাঁর জীবনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত চোখের সামনে রাখা প্রত্যেক মুমিনের জন্য জরুরি। কারণ এটাকে বাদ দিয়ে ইসলামকে যথাযথভাবে বোঝা এবং সেটাকে জীবনে প্রয়োগ করা, চর্চা করা, অনুসরণ করা কোনো ব্যক্তির পক্ষে যথাযথভাবে সম্ভব নয়। মুহাম্মাদ (সা.)-কে পাঠ করা ছাড়া এবং তাঁকে সঠিকভাবে জানা ছাড়া পরিপূর্ণরূপে ইসলাম অনুসরণ করা সম্ভব নয়। 

প্রশ্ন: রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর জীবনী পাঠ করার ক্ষেত্রে কোন কোন বইগুলো পড়া যেতে পারে? 
মুহাম্মদ যাইনুল আবিদীন: কোনো শিক্ষিত মুসলিম পরিবার এমন হওয়া উচিত নয়, যে ঘরে পবিত্র কোরআন, কোরআনের সরল অনুবাদ এবং সহজ কোনো ব্যাখ্যাগ্রন্থ থাকবে না এবং যেখানে প্রিয়তম নবি মুহাম্মাদ (সা.)-এর কোনো জীবনীগ্রন্থ থাকবে না। মুহাম্মাদ (সা.)-কে জানার মাধ্যম দুটি—এক. শুনে জানা। দুই. পড়ে জানা। দুই জানার মধ্যে বিস্তর ব্যবধান রয়েছে। পড়ে জানার মাধ্যমটি তুলনামূলক নিরাপদ ও উত্তম। 
প্রত্যেক মানুষের অবশ্যই রাসুলুল্লাহ (সা.) সম্পর্কে লিখিত গ্রন্থাবলি পাঠ করা কর্তব্য। মুসলমান হিসেবে আমাদের জন্য এটা অনেক বড় আনন্দের বিষয়, মুহাম্মাদ (সা.) যেহেতু ইসলামের সচিত্র রূপ, তাই ইসলামের সূচনাকাল থেকে মুহাম্মাদ (সা.)-এর জীবনচিত্রকে সনদসহকারে সংরক্ষণ করা হয়েছে। তাঁকে জানার ক্ষেত্রে সমাজে একটা অসম্পূর্ণ ধারণা প্রচলিত রয়েছে। মনে করা হয়—জীবনীমূলক গ্রন্থ থেকেই তাঁকে জানতে হবে। অথচ তাঁকে জানার প্রথম এবং সবচেয়ে শক্তিমান মাধ্যম হলো পবিত্র কোরআন। দ্বিতীয় মাধ্যম হাদিস। তৃতীয় মাধ্যম হলো তাঁকে নিয়ে লিখিত জীবনীগ্রন্থ। 
এই জায়গাতেও আমাদের জন্য একটা সম্মানের অবস্থা হলো, বাংলা ভাষাটা চর্চার দিক থেকে যতটা পুরোনো, রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সিরাত চর্চা বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে ততটাই পুরোনো। পুঁথি সাহিত্য যখন থেকে শুরু, তখন থেকে রাসুলুল্লাহ (সা.) পুঁথি সাহিত্যে আলোচিত। এটা আমাদের জন্য গৌরবের বিষয়—আমরা আমাদের বিশ্বাসটাকে চর্চায় নিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছি। 
বাংলা ভাষায় মুসলমানদের মধ্যে প্রথম শেখ আব্দুর রহিম (রহ.) রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে নিয়ে লিখেছেন। এর আগে অন্য ধর্মের তিনজন লিখেছেন তাঁকে নিয়ে। সম্ভবত ১৮৮৬ বা ৮৭ সালে শেখ আব্দুর রহিমের বই প্রকাশিত হয়েছে। 
সিরাত বিষয়ে খুব আলোচিত গ্রন্থ কবি গোলাম মোস্তফার ‘বিশ্বনবী’। তিনি ছিলেন মাদরাসাপড়ুয়া মানুষ। মৌলবি কবি গোলাম মোস্তফা। আরও একটি সিরাতগ্রন্থ খুব বেশি আলোচিত হয়েছে, সেটা হলো মওলানা আকরম খাঁর মোস্তফাচরিত। তবে আকরম খাঁ তার বইয়ে বিজ্ঞানকে মাপকাঠি নির্ধারণ করেছেন। ফলে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর মুজেঝার মতো গুরুত্বপূর্ণ অনেক বিষয় ছেড়ে দিয়েছেন। যা একজন ধর্মপরায়ণ পাঠক আশা করে না। সে জায়গায় কবি গোলাম মোস্তফা এমন একটা গ্রন্থ রচনা করলেন—বিশেষ করে সাহিত্য ও ভক্তিপূর্ণ উপস্থাপনায়, সেটা কালোত্তীর্ণ। পরবর্তী সময়ে ঢাকার বড় কাটারা মাদরাসার শায়খুল হাদিস মাওলানা তফাজ্জুল হোসাইনের ‘হযরত মুহাম্মাদ (সা.) সমকালীন পরিবেশ ও জীবন’; মাওলানা মুহিউদ্দীন খানের ‘স্বপ্নযোগে রাসুলুল্লাহ (সা.)’ ও ‘রওজা শরীফের ইতিহাস’—এগুলো অনন্য কাজ হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছে। 
এ ছাড়া আরবি ও উর্দু ভাষা থেকে বাংলায় অনূদিত সিরাতগ্রন্থের মধ্যে সামগ্রিক বিবেচনায় যে কাজগুলো অনন্য সেগুলো হলো—ইবনে হিশাম (রহ.) রচিত ‘সিরাতে ইবনে হিশাম’; ইবনে কাসির (রহ.) রচিত ‘আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া’; হাফেজ জাহাবি (রহ.) রচিত সিয়ারের প্রথম তিন খণ্ড; ইবনে কাসির (রহ.) রচিত ‘আলফুসুল ফি ইখতিসারি সিরাতে রাসুল’; সাইয়েদ আবুল হাসান আলি নদভি (রহ.) রচিত ‘আস-সিরাতুন নববিইয়া’ ও ‘রহমতে আলম’; মাওলানা ইদ্রিস কান্ধলভি (রহ.) রচিত ‘সিরাতুল মোস্তফা’; সাইয়েদ সুলায়মান নদভি (রহ.) রচিত ‘খুতুবাতে মাদরাজ’; মাওলানা খালেদ সাইফুল্লাহ রাহমানি (রহ.) রচিত ‘পয়গাম্বরে ইনসানিইয়াত’ এবং জালালুদ্দিন সুয়ুতি (রহ.) রচিত ‘খাসায়েসে কুবরা’ উল্লেখযোগ্য। 

প্রশ্ন: সিরাত পাঠের ক্ষেত্রে কোনো ধরনের সতর্কতা বা নিয়ম মানা আবশ্যকীয় কি না?
মুহাম্মদ যাইনুল আবিদীন: রাসুলুল্লাহ (সা.) সম্পর্কে জানার ক্ষেত্রে প্রথমে সতর্কতার সঙ্গে বুঝতে হয়, কাদের লেখা পড়ব? কারণ, তাঁর জীবনী পড়া মানে ইসলাম পড়া। তিনিই ইসলাম। এ জায়গায় এসে আমাদের মানতেই হয়— যেহেতু বিষয়টি ইসলাম, এ চর্চার জায়গায় মূলধারাটা হলো আলেমসমাজ। তারাই শেকড় থেকে ইসলাম পড়েন, শেকড় থেকে জানেন, বোঝেন, সত্যিকার বুঝটা বিচার করার ক্ষমতা রাখেন এবং সত্যিকারের বুঝটার প্রচার করেন। এ জন্য আলেমদের লেখা সিরাতগ্রন্থগেুলো বেছে বেছে পাঠ করতে হবে। যার লেখা পড়ছি, তার সম্পর্কেও জানতে হবে—তিনি কতটা নির্ভরযোগ্য। 
আর অনুবাদগ্রন্থ পড়ার ক্ষেত্রে আরও সতর্কতা জরুরি। কারণ অনুবাদে সামান্য ভুল করার কারণে ইতিহাস পাল্টে যায়! অনেক সময় বড় রকমের বিতর্কের জন্ম হয়। সর্বোপরি কথা হলো, ইসলাম সম্পর্কে যিনি বিশেষজ্ঞ অর্থাৎ যিনি কোরআনকে উৎস থেকে বোঝেন, হাদিসকে উৎস থেকে বোঝেন এবং ফিকাহ বোঝেন—এমন তিনটি গুণ বা শক্তি যার মধ্যে রয়েছে; এমন ব্যক্তি যদি নবিজীবনী লেখেন, তার বই যে কেউ চোখ বন্ধ করে পড়লে, তার হাত ধরে মুহাম্মাদ (সা.) পর্যন্ত পৌঁছানো সম্ভব। অন্যথা বিপথগামী হওয়ার আশঙ্কা প্রকট।

 

কন্যাসন্তান জান্নাত লাভের মাধ্যম

প্রকাশ: ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ০৩:০০ পিএম
কন্যাসন্তান জান্নাত লাভের মাধ্যম
মায়ের হাত ধরে হেঁটে চলা কন্যাসন্তানের ছবি । ফ্রিপিক

সন্তান–মানুষের জন্য আল্লাহতায়ালার দেওয়া এক বিশেষ নেয়ামত। হোক সেটা ছেলে বা মেয়ে। আল্লাহ যাকে চান মেয়ে দেন, যাকে চান ছেলে দেন। কাউকে দেন দুটোই, কাউকে রাখেন নিঃসন্তানও। পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘আসমান ও জমিনের রাজত্ব শুধু আল্লাহরই। তিনি যা চান, তাই সৃষ্টি করেন। তিনি যাকে চান কন্যাসন্তান দান করেন এবং যাকে চান পুত্রসন্তান দান করেন। অথবা তাদেরকে দেন পুত্র ও কন্যা উভয়ই। আর যাকে ইচ্ছে বন্ধ্যা করেন। তিনি সর্ববিষয়ে সর্বাধিক অবহিত ও ক্ষমতাবান।’ (সুরা শুরা, আয়াত: ৪৯-৫০)

যে নারী পুণ্যময়ী: অনেককে দেখা যায়, প্রথম কন্যাসন্তান হওয়ার সুসংবাদ পেয়ে আনন্দ প্রকাশের স্থলে দুঃখ ও আফসোস করেন। অনেকে তো আবার পুত্রসন্তান না হওয়ায় স্ত্রীর সঙ্গে কথাবার্তাই বন্ধ করে দেন। ননদ-শাশুড়ি শোনায় নানা কটুকথা। অলক্ষুণে, অপয়া বলতেও দ্বিধা করে না তারা। অথচ ইসলামের দৃষ্টিতে প্রথম কন্যাসন্তান প্রসবকারিণী নারী হলেন পুণ্যময়ী। পরম সৌভাগ্যবতী। বিখ্যাত মুফাসসির আল্লামা ওয়াসেলা ইবনে আসকা (রহ.) বলেন, ‘মহান আল্লাহ সন্তানের প্রকার বর্ণনা প্রসঙ্গে সর্বপ্রথম কন্যাসন্তানের কথা বলেছেন। এরপর বলেছেন পুত্রসন্তানের কথা। তাঁর শব্দচয়নের এ ধারাই প্রমাণ করে যে নারীর গর্ভ থেকে প্রথম কন্যাসন্তান ভূমিষ্ঠ হয়, সে নারী পুণ্যময়ী।’ (তাফসিরে মাআরেফুল কোরআন, খণ্ড: ৭, পৃষ্ঠা: ৭১২)

কন্যাসন্তান মানুষের জন্য সুসংবাদ: অনেকে মেয়ে হলে অসন্তুষ্ট হয়। পুত্রসন্তান হলে যারপরনাই খুশি হয় এবং ব্যাপক আনন্দ-উৎসব করে। কোরআনে কন্যাসন্তান হওয়ার সংবাদকে ‘সুসংবাদ’ বলে ঘোষণা করা হয়েছে এবং মুখ কালো হওয়া লোকদের আচরণকে জঘন্য আচরণ বলে বর্ণনা করা হয়েছে। আল্লাহ বলেন, ‘আর যখন তাদের কাউকে কন্যাসন্তানের সুসংবাদ দেওয়া হয়, তখন তার চেহারা কালো হয়ে যায়। আর সে থাকে দুঃখ ভারাক্রান্ত। তাকে যে সুসংবাদ দেওয়া হয়েছে, সে দুঃখে সে জাতি থেকে আত্মগোপন করে। অপমান সত্ত্বেও কি একে রেখে দেবে, না মাটিতে পুঁতে ফেলবে? জেনে রেখ, তারা যা ফায়সালা করে, তা কতই না জঘন্য!’ (সুরা নাহল, আয়াত: ৫৮-৫৯)

কন্যা ও পুত্রসন্তানের মাঝে সমতা বিধান: কন্যা ও পুত্রসন্তানকে একচোখে দেখতে হবে। লালন-পালন, ভরণ-পোষণ ও ভালোবাসা—কোনো ক্ষেত্রেই তাদের মাঝে বৈষম্য করা যাবে না। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘হে আমার উম্মত, তোমরা তোমাদের ছেলে-মেয়েদের মাঝে সুবিচার করো। তোমরা তোমাদের ছেলে-মেয়েদের মাঝে সুবিচার করো।’ (কানজুল উম্মাল, খণ্ড: ১৬, পৃষ্ঠা: ৪৪৫)

অধিক কন্যাসন্তান জান্নাত লাভের মাধ্যম: আমাদের সমাজে তিন-চারটি কন্যাসন্তানের অধিকারী পুত্রহীন বাবা-মাকে সমাজে মেরুদণ্ডহীন বলে ধারণা করা হয়—যা কন্যাসন্তানদের প্রতি এক ধরনের বৈষম্যমূলক আচরণ ও নেতিবাচক ধারণার উন্মেষ ঘটায়। অথচ এই কন্যাসন্তানরাই আগামীর মমতাময়ী মা, ভবিষ্যতের প্রেরণাদানকারী সহধর্মিণী। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘হে আমার উম্মতেরা, তোমরা মেয়েদের নিকৃষ্ট মনে করো না। দেখো, স্বয়ং আমিও চার কন্যাসন্তানের  পিতা।’ (রিয়াজুস সালেহিন, ৩/৮৪)

কন্যাসন্তান প্রতিপালনের ফজিলত: রাসুলুল্লাহ (সা.) কন্যাসন্তান প্রতিপালনে যত্নশীল হওয়ার ব্যাপারে এত বিপুলসংখ্যক হাদিস বর্ণনা করেছেন এবং এত মহৎ সব ফজিলতের ঘোষণা দিয়েছেন, যার কিয়দংশও পুত্রসন্তানের ব্যাপারে দেওয়া হয়নি। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তিকে কন্যাসন্তান লালন-পালনের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে এবং সে ধৈর্যের সঙ্গে তা সম্পাদন করেছে, সেই কন্যাসন্তান তার জন্য জাহান্নাম থেকে বাধা হবে।’ (জামে তিরমিজি, হাদিস: ১৯১৩)। রাসুলুল্লাহ (সা.) আরও বলেছেন, ‘যে ব্যক্তির তিনটি কন্যাসন্তান বা তিনজন বোন আছে, অথবা দুজন কন্যাসন্তান বা দুজন বোন আছে। আর সে তাদের সঙ্গে সদ্ব্যবহার করেছে এবং তাদের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করেছে। তা হলে তার জন্য রয়েছে জান্নাত।’ (তিরমিজি, হাদিস, ১৯১৬)

যত্নসহকারে কন্যাসন্তান লালন-পালনের সবচেয়ে বড় যে ফজিলতটি হাদিসে বর্ণিত হয়েছে তা হলো, ‘যে ব্যক্তি দুজন কন্যাসন্তানকে ভালোভাবে দেখাশোনা করবে, লালন-পালন করবে এবং সঠিক সময়ে উপযুক্ত পাত্রের কাছে বিয়ে দেবে, জান্নাতে সে প্রিয় নবিজির সঙ্গী হবে। নবিজি (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি দুজন কন্যাসন্তানকে লালন-পালন ও দেখাশোনা করল (বিয়ের সময় হলে উপযুক্ত ভালো পাত্রের কাছে বিবাহ দিল) সে এবং আমি জান্নাতে এরূপ একসঙ্গে প্রবেশ করব—যেরূপ এ দুটি আঙুল। তিনি নিজের পাশাপাশি দুই আঙুল মিলিয়ে দেখালেন।’ (তিরমিজি, ১৯১৪) 

 

লেখক : আলেম ও শিক্ষক 

 

অধঃপতনের ৫ কারণ

প্রকাশ: ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ০৯:০০ এএম
অধঃপতনের ৫ কারণ
অধঃপতনের ৫ কারণ নিয়ে বানানো ডিজাইন। খবরের কাগজ

পৃথিবীর সব গোষ্ঠী, জাতি ও দেশ উন্নতি চায়। কিন্তু অনেকে উন্নতির কাঙ্ক্ষিত জায়গায় পৌঁছতে পারে না; অধঃপতনের শিকার হয়। এটা হয় মূলত অপরাধকর্মের কারণে। অপরাধ যখন ব্যক্তিপর্যায়ে থাকে তখন অধঃপতন ব্যক্তির মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে। ব্যাপক হারে যখন কোনো দেশ বা জাতি অপরাধে লিপ্ত হয়, তখন সে অপরাধের দায় সবাইকেই বহন করতে হয়। ইবনে মাজাহ-এর এক হাদিসের ভাষ্য হলো, কোনো দেশে পাঁচ ধরনের অপরাধ চলমান থাকলে, তারা কখনই উন্নতির শিখরে পৌঁছাতে পারবে না। তাদের অধঃপতন সুনিশ্চিত।

অশ্লীলতা : আল্লাহ বলেন, ‘হে মানুষ, ভূমণ্ডলে বিদ্যমান বস্তুগুলো থেকে হালাল উত্তম জিনিসগুলো খাও এবং শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করে চলো না, বস্তুত সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু। সে তোমাদেরকে শুধু অসৎ এবং অশ্লীল কাজের নির্দেশ দেয়, আর তোমাদেরকে নির্দেশ দেয় আল্লাহর সম্বন্ধে এমন কথা বলার যা তোমরা জান না।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৬৮-১৬৯)। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যখনই কোনো জাতির মধ্যে প্রকাশ্যে অশ্লীলতা ছড়িয়ে পড়ে, (যেমন সুদ, ঘুষ, ব্যভিচার ইত্যাদি) তখন তাদের মধ্যে মহামারি আকারে প্লেগ ও এমন সব ব্যাধির জন্ম হয়, যা আগেকার লোকেদের মধ্যে কখনো দেখা যায়নি।’

ওজনে কম দেওয়া : ইসলামে বেচাকেনায় ওজন করার সময় সঠিকভাবে দাঁড়িপাল্লা ব্যবহারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ওজনে কারচুপি করার অপরাধে পূর্বে এক জাতি ধ্বংসও হয়েছে। (সুরা বনি ইসরাইল, আয়াত: ৩৫)। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যখন কোনো জাতি ওজন ও পরিমাপে কারচুপি করে, তখন তাদের ওপর নেমে আসে দুর্ভিক্ষ ও কঠিন বিপদ-মসিবত। আর তাদের ওপর শুরু হয় জালেম শাসকগোষ্ঠীর নিপীড়ন।’

জাকাত না দেওয়া : জাকাত হলো ধনীর সম্পদে গরিবের অধিকার। জাকাত না দিয়ে সম্পদ কুক্ষিগত করে রাখা গরিব-দুঃখীর সম্পদ আত্মসাৎ করারই নামান্তর। (সুরা জারিয়াত, আয়াত: ১৯)। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘কোনো জাতি যখন সম্পদের জাকাত আদায় করা থেকে বিরত থাকে, তখন আসমান তাদের ওপর বৃষ্টি বর্ষণ বন্ধ করে দেয়। যদি ভূ-পৃষ্ঠে চতুষ্পদ জন্তু-জানোয়ার (গরু, ছাগল, ভেড়া, কুকুর, ঘোড়া ইত্যাদি) না থাকত তা হলে আর কখনো জমিনে বৃষ্টিপাত হতো না।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস: ৪০১৯)

অঙ্গীকার ভঙ্গ করা : অঙ্গীকার পূর্ণ করা গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। অঙ্গীকার পূরণ না করলে গুনাহ হয়। আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘এখানে অঙ্গীকার বলতে, আল্লাহতায়ালা বান্দার কাছ থেকে ঈমান ও ইবাদত সম্পর্কিত যেসব অঙ্গীকার নিয়েছেন অথবা তাঁর নাজিলকৃত বিধি-বিধান হালাল ও হারাম সম্পর্কিত যেসব অঙ্গীকার নিয়েছেন, আয়াতে সেগুলোই  উদ্দেশ্য। (তাফসিরে মাআরেফুল কোরআন)। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে জাতি আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (সা.)-এর সঙ্গে কৃত অঙ্গীকার ভঙ্গ করে, আল্লাহ তাদের ওপর বিজাতীয় দুশমনকে ক্ষমতাসীন করে দেন। সে তাদের ধন-সম্পদসহ সবকিছু কেড়ে নেয়।’

শরিয়াবহির্ভূত বিচারব্যবস্থা : দুনিয়ার সবকিছু আল্লাহর। তাঁর বিধান মেনে জগতের সব কিছু পরিচালনা করা ঈমানি দায়িত্ব। আল্লাহ বলেন, ‘হুকুম বা কর্তৃত্বের মালিকানা আল্লাহ ছাড়া কারও কাছে নেই। তিনিই সত্যকথা বর্ণনা করেন, আর তিনিই সর্বোত্তম ফায়সালাকারী।’ (সুরা আনয়াম, আয়াত: ৫৭)। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘শাসকবর্গ যখন আল্লাহর কিতাব মোতাবেক ফায়সালা করে না এবং বিচার বিভাগে আল্লাহর নাজিলকৃত বিধানকে অগ্রাহ্য করে, তখন তিনি তাদের পরস্পরের মধ্যে (যুদ্ধ) দাঙ্গা-হাঙ্গামা বাঁধিয়ে দেন।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস: ৪০১৯)

 

লেখক : আলেম ও শিক্ষক 

স্বপ্নে মৃত ব্যক্তির বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দেখা

প্রকাশ: ০৩ অক্টোবর ২০২৪, ০৭:০০ পিএম
আপডেট: ০৩ অক্টোবর ২০২৪, ০৭:০৫ পিএম
স্বপ্নে মৃত ব্যক্তির বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দেখা
কবরস্থানের সামনে এক যুবক। এআই

মৃত ব্যক্তিকে মাথার অভিযোগ করতে দেখলে বুঝতে হবে, সে পিতামাতার হকের ব্যাপারে বা তার প্রশাসকের হকের ব্যাপারে যে ত্রুটি-বিচ্যুতি করেছে, সে সম্পর্কে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। মৃত ব্যক্তিকে ঘাড়ের অভিযোগ করতে দেখলে বুঝতে হবে, তাকে স্ত্রীর মোহর আদায় না করা অথবা অহেতুক সম্পদ নষ্ট করা সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। মৃতকে হাতের অভিযোগ করতে দেখলে, বুঝতে হবে, তাকে ভাইবোন বা অংশীদারের হক অথবা মিথ্যা কসম খাওয়া সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। 

মৃতকে এক পার্শ্বের অভিযোগ করতে দেখার ব্যাখ্যা হলো, তাকে স্ত্রীর হক সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। মৃতকে পেটের অভিযোগ করতে দেখলে বুঝতে হবে, তাকে পিতা, নিকট আত্মীয়-স্বজন অথবা সম্পদের হক সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। মৃতকে পায়ের অভিযোগ করতে দেখা, তাকে আল্লাহর সন্তুষ্টি ছাড়া অন্যত্র সম্পদ খরচ করা সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করার আলামত। মৃতকে রান বা ঊরু সম্পর্কে অভিযোগ করতে দেখলে বুঝতে হবে, তাকে পরিবারের সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদ করা সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। মৃতকে পায়ের গোছা সম্পর্কে অভিযোগ করতে দেখা, তাকে অন্যায় পথে জীবন ধ্বংস করা সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করার ইঙ্গিত।

যদি দেখে মৃত ব্যক্তি তাকে কোথাও থেকে ডাকছে, কিন্তু তাকে দেখছে না, কিন্তু তার ডাকে সাড়া দিয়ে এমনভাবে বের হয়েছে যে, নিজেকে ফিরিয়ে রাখতে পারছে না; এর ব্যাখ্যা হলো, মৃত ব্যক্তি যে রোগে বা কারণে মারা গেছে, সেও ওই রোগে বা কারণে মারা যাবে। যেমন দেয়াল ধসে, পানিতে ডুবে বা আকস্মিক দুর্ঘটনা ইত্যাদিতে পতিত হয়ে।

মৃত ব্যক্তির পেছনে পেছনে চলে এক অপরিচিত ঘরে প্রবেশ করতে এবং সেখান থেকে আর বের না হওয়ার ব্যাখ্যা হলো, সে মারা যাবে। যদি দেখে মৃত ব্যক্তি তাকে বলছে, তুমি অমুক সময় মারা যাবে, তা হলে তার কথা সত্য। কেননা সে সত্যের ঘরে পৌঁছেছে। যদি দেখে মৃত ব্যক্তির পেছনে পেছনে চলেছে, কিন্তু তার সঙ্গে কোনো ঘরে প্রবেশ করেনি বা প্রবেশ করলেও সঙ্গে সঙ্গে বের হয়ে চলে এসেছে, তা হলে সে মৃত্যুর কাছাকাছি পৌঁছেও বেঁচে যাবে। মৃত ব্যক্তির সঙ্গে সফর করতে দেখলে স্বপ্নদ্রষ্টা তার কাজ সম্পর্কে দ্বিধাগ্রস্ত এবং সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগবে।

মৃত ব্যক্তি স্বপ্নদ্রষ্টাকে দুনিয়ার কোনো প্রিয় বস্তু দান করেছে দেখলে, যেখান থেকে তার কোনো আশা ছিল না সেখান থেকে কল্যাণ ও বরকত পাবে। যদি দেখে মৃত ব্যক্তি তাকে নতুন বা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন জামা দিয়েছে, তা হলে মৃত ব্যক্তি তার জীবদ্দশায় যেমন জীবিকা লাভ করেছিল, সেও তেমন জীবিকা পাবে। মৃত ব্যক্তি স্বপ্নদ্রষ্টাকে চাদর দিতে দেখলে স্বপ্নদ্রষ্টা মৃত ব্যক্তির মতো পদমর্যাদা ও সম্মান পাবে। পুরাতন ছেঁড়া-ফাটা কাপড় দিতে দেখলে সে দরিদ্র হবে। ময়লা কাপড় দিতে দেখলে গুনাহে লিপ্ত হবে। খাদ্য দিতে দেখলে এমন স্থান থেকে সম্মানের জীবিকা পাবে, যেখান থেকে পাওয়ার কল্পনাও ছিল না। মৃতের পক্ষ থেকে মধু দিতে দেখলে যেখান থেকে কোনো আশা ছিল না, সেখান থেকে গনিমতলব্ধ সম্পদ পাবে। মৃতের পক্ষ থেকে বাঙ্গি দিতে দেখলে যার কল্পনা সে কখনো করোন, সেই দুশ্চিন্তায় পতিত হবে।

মৃত ব্যক্তিকে ওয়াজ-নসিহত করতে বা কোনো এম শেখাতে দেখলে সেই পরিমাণ ধর্মীয় কল্যাণ পাবে, যেই পরিমাণ যে তাকে নসিহত করেছে বা ইলম শিখিয়েছে। যদি কেউ মৃত ব্যক্তিকে কাপড় দিতে দেখে, কিন্তু সে তা খোলেনি বা পরিধানও করেনি, তা হলে তার সম্পদের ক্ষতি হবে অথবা সে অসুস্থ হবে, কিন্তু অবশেষে সুস্থ হয়ে উঠবে। মৃতকে পরিধান করানোর জন্য কাপড় দিতে দেখলে সে মারা যাবে এবং কাপড়ের মালিকানা জীবিতের হাত থেকে চলে যাবে।

জীবিতের পক্ষ থেকে মৃতকে কোনো কিছু দেওয়া উত্তম নয়; তবে দুটি ক্ষেত্রে এর ব্যতিক্রম রয়েছে। এক. বাঙ্গি দিতে দেখলে, ধারণাতীত ভাবে তার চিন্তা দূর হবে। দুই. মৃত চাচা বা ফুফুকে কোনো কিছু দিতে দেখলে তার ঋণ পরিশোধ হবে।

(স্বপ্নের ব্যাখ্যাবিদ মুহাম্মাদ ইবনে সিরিনের বিখ্যাত বই তাফসিরুল আহলাম বা স্বপ্নের ব্যাখ্যা থেকে সংক্ষেপিত)  

লেখক: আলেম, গবেষক ও সাংবাদিক

নামাজ ছাড়া আর কখন আজান দিতে হয়?

প্রকাশ: ০৩ অক্টোবর ২০২৪, ১০:৩৪ এএম
আপডেট: ০৩ অক্টোবর ২০২৪, ১০:৪০ এএম
নামাজ ছাড়া আর কখন আজান দিতে হয়?
নবজাতকের কানে আজান দিতে হয়। ছবি: ইন্টারনেট

কোরআনে প্রতিটি ইবাদতের সঠিক নিয়ম-কানুন বর্ণিত হয়েছে। আজান একটি ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। এ আজান দেওয়ার কথা কোরআনে বলা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘যখন তোমরা নামাজের জন্যে আহ্বান করো, তখন তারা (কাফের-মুশরিকরা) একে উপহাস ও খেলা বলে মনে করে।’ (সুরা মায়েদা, আয়াত:  ৫৮)

হাদিসে মুয়াজ্জিনদের মর্যাদা ও সম্মানের কথা উল্লেখ রয়েছে। কেয়ামতের দিন মুয়াজ্জিনরা সবচেয়ে বেশি সম্মানের অধিকারী হবেন। অসীম সওয়াব প্রাপ্ত হবেন। এ মর্মে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘কেয়ামতের দিন মুয়াজ্জিনরাই হবে মানুষদের মধ্য থেকে সবচেয়ে লম্বা ঘাড়ের অধিকারী। অর্থাৎ বহু সওয়াব প্রাপ্ত হবে।’ (মুসলিম, হাদিস: ৮৭৮)

মূলত নামাজের জন্য আহ্বান জানানোর জন্যই আজানের বিধান চালু করা হয়েছে। তবে হাদিসে নামাজ ছাড়া আরও দুটি সময়ে আজান দেওয়ার বিধানের কথা পাওয়া যায়। সেগুলো হলো—

ক. নবজাতকের ডান কানে আজান এবং বাম কানে ইকামত দেওয়া: আবু রাফে (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘যখন হাসান ইবনে আলি (রা.)-এর জন্ম হয় তখন আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে তার কানে আজান দিতে দেখেছি।’ (তিরমিজি, হাদিস: ১৫১৪)

খ. কারও ওপর যদি জিনের বদ-আছর পড়ে তখন আজান দেওয়া: আবু হোরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যদি তোমাদের ওপর জিনের প্রভাব পড়ে বা বদ-আছর পড়ে, তা সহলে তোমরা আজান দাও। কারণ শয়তান আজান শুনলে দৌড়ে পালিয়ে যায়।’ (তাবরানি, হাদিস: ৪৩৬)

লেখক: আলেম ও সাংবাদিক

দেশে ফিরলেন মিজানুর রহমান আজহারী

প্রকাশ: ০২ অক্টোবর ২০২৪, ০৭:১২ পিএম
আপডেট: ০২ অক্টোবর ২০২৪, ০৭:১৩ পিএম
দেশে ফিরলেন মিজানুর রহমান আজহারী
দেশে ফিরেছেন জনপ্রিয় ইসলামি আলোচক মাওলানা মিজানুর রহমান আজহারী। ছবি : সংগৃহীত

দীর্ঘ চার বছর পর দেশে ফিরেছেন মালয়েশিয়ায় অবস্থানরত জনপ্রিয় ইসলামি আলোচক মাওলানা মিজানুর রহমান আজহারী।

বুধবার (২ অক্টোবর) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে নিজের ভেরিফায়েড পেজে এক পোস্ট দিয়ে এ তথ্য জানান তিনি।

ফেসবুক পোস্টে তিনি লিখেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ, সালামাতে প্রিয় মাতৃভূমিতে এসে পৌঁছালাম। পরম করুণাময় এই প্রত্যাবর্তনকে বরকতময় করুন। দুআর নিবেদন।’

পারিপার্শ্বিক কারণ ও গবেষণার জন্য ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে মালয়েশিয়া চলে যান মিজানুর রহমান আজহারী। এক ফেসবুক পোস্টে এ ঘোষণা দেন তিনি।

এদিকে গত ৬ আগস্ট নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক ভিডিওবার্তায় শিগগিরই দেশে ফিরবেন বলে জানান মিজানুর রহমান আজহারী। 

ভিডিওবার্তায় তিনি বলেন, ‘অনেকে আমাকে মেসেজ করে ও ব্যক্তিগতভাবে ফোন করে জানতে চেয়েছেন আমি কবে দেশে ফিরব। আমি তাদের বলতে চাই, আমি দ্রুতই দেশে ফিরব। আপনাদের সঙ্গে দেখা করার অপেক্ষাতে রয়েছি আমি নিজেও। শিগগির সাম্য, মানবিকতার মুক্ত-স্বাধীন, বাংলাদেশে আমি আপনাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে চাই।’

সালমান/