সত্য অনুসন্ধানের বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়া গবেষণা। যার সাধারণ অর্থ সত্য ও জ্ঞানের অনুসন্ধান। ড. খুরশিদ বলেন, বিজ্ঞানসম্মতভাবে নতুন জ্ঞান অন্বেষণ হলো গবেষণা। ড. ইয়াহইয়া ওয়াহাব বলেন, পাথর খণ্ডে গর্ত খনন করার মতো পরিশ্রম করে নতুন তথ্য পাওয়াটাই হলো গবেষণা।
ইসলামে গবেষণার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। বিজ্ঞানময় কোরআন ও হাদিসে বিভিন্ন ধরনের গবেষণার ব্যাপারে বিশেষভাবে উৎসাহ দেওয়া হয়েছে। গবেষণার প্রতি উৎসাহিত করে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘নিশ্চয়ই আসমানগুলো ও জমিনের সৃষ্টিতে এবং রাত ও দিনের আবর্তনে জ্ঞানবানদের জন্য বহু নিদর্শন আছে। যারা আল্লাহকে দণ্ডায়মান, উপবিষ্ট এবং শায়িত অবস্থায় স্মরণ করে থাকে এবং আসমান ও জমিনের সৃষ্টির ব্যাপারে চিন্তা করে (ও বলে), হে আমাদের প্রতিপালক, তুমি এসব অনর্থক সৃষ্টি করোনি, তোমার পবিত্রতা বর্ণনা করছি, সুতরাং আমাদের অগ্নির শাস্তি থেকে রক্ষা করো।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৯০-১৯১)
আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে এরশাদ করেন, ‘এটি একটি কল্যাণময় কিতাব তোমার কাছে অবতীর্ণ করেছি—যাতে তারা এর আয়াতগুলোর প্রতি চিন্তা-ভাবনা করে, আর জ্ঞান-বুদ্ধিসম্পন্ন লোকেরা উপদেশ গ্রহণ করে থাকে।’ (সুরা সোয়াদ, আয়াত: ২৯)
মানবজাতির বোঝার সুবিধার্থে আল্লাতায়ালা কোরআনকে সহজ করে দিয়েছেন। যারা চিন্তাভাবনা করে আর যারা করে না, তাদের ব্যাপারে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আপনি বলে দিন, অন্ধ ও চক্ষুষ্মান কি সমান হতে পারে? তোমরা কি চিন্তা করো না?’ (সুরা জুমার, আয়াত: ৯)। জ্ঞানী ও গবেষকদের মর্যাদা সম্পর্কে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে যারা জ্ঞানপ্রাপ্ত–আল্লাহ তাদের মর্যাদা উঁচু করে দেবেন। আল্লাহ খবর রাখেন যা কিছু তোমরা করো।’ (সুরা মুজাদালা, আয়াত: ১১)। আরেক আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘আর তিনি (আল্লাহ) রাত-দিন ও চাঁদ-সূর্যকে তোমাদের কল্যাণে নিয়োজিত করেছেন। আর নক্ষত্ররাজিও অধীন হয়েছে তাঁরই বিধানে। অবশ্যই এতে বিবেকবান লোকদের জন্য রয়েছে নিদর্শনাবলি।’ (সুরা নাহল, আয়াত: ১২)
যারা জ্ঞান ও গবেষণার কাজে ব্যস্ত থাকেন, আল্লাহ তাদের যুদ্ধ বা রোজা রাখার মতো সওয়াব দান করবেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘শিক্ষা নিয়ে গবেষণা করা জিহাদতুল্য।’ (আত-তারগিব ওয়াত-তারহিব)। রাসুলুল্লাহ (সা.) আরও বলেছেন, ‘জ্ঞান-গবেষণা রোজার সমান।’
ইসলামে গবেষণার গুরুত্ব অনেক বেশি। জ্ঞান গবেষণা মুসলিমদের জীবনের অপরিহার্য একটি অংশ। গবেষণার মাধ্যমে আমরা আল্লাহর সৃষ্টির রহস্য উদঘাটন করতে পারি। জীবনের বিভিন্ন সমস্যা সমাধান করতে পারি। তাই মুসলিমদের উচিত গবেষণার প্রতি গুরুত্বারোপ করা এবং জীবনযাত্রার অপরিহার্য অংশ হিসেবে মেনে নেওয়া।
মানুষের উচিত প্রতিদিনই নতুন নতুন পথের সন্ধান করা। একই পথ নিয়ে পড়ে না থাকা। দুটি পথ থাকলে তৃতীয় পথ কী করে তৈরি করা যায়; তা নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করা। এই চিন্তাকে জাগানোর জন্যই বারবার আহ্বান করেছে কোরআন।
লেখক: সহকারী শিক্ষক, নাদির হোসেন উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়, পাংশা