স্বভাবতই মানুষ মানসিকভাবে দুর্বলচিত্তের মনের; অল্পতেই হতাশ হয়ে পড়ে। হতাশা মুমিনের বৈশিষ্ট্য নয়। মুমিনদের উদ্দেশে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘হতাশ হয়ো না, অবশ্যই আল্লাহতায়ালা তোমাদের সঙ্গে আছেন।’ (সুরা তওবা, আয়াত: ৪০)। জীবনে হতাশা পেয়ে বসলে আল্লাহর মুখাপেক্ষী হতে হবে। তাঁর কাছে সাহায্য চাইতে হবে। হতাশা থেকে বেঁচে থাকার কয়েকটি আমল এখানে তুলে ধরা হলো—
ধৈর্য ধারণ করা: হতাশা শয়তানের চক্রান্ত ও ফাঁদ। হতাশা আসে শয়তানের পক্ষ থেকে। হতাশা মুমিনকে আল্লাহর রহমতের কথা ভুলিয়ে রাখতে চায়। হতাশা থেকে বাঁচার জন্য মুমিনদের ধৈর্য ধরতে বলা হয়েছে। আল্লাহতায়ালা মাঝে মধ্যে বিপদ-আপদ দিয়ে মানুষকে পরীক্ষা করেন। যারা আল্লাহর ওপর অগাধ বিশ্বাস রেখে ধৈর্য ধারণ করেন, তিনি তাদের সফলতা দান করেন। আল্লাহতায়ালা এরশাদ করেন, ‘তোমাদের ভয় ও ক্ষুধা এবং ধন-সম্পদ, জীবন ও ফল-ফসলের ক্ষয়ক্ষতি (এসবের) কোনো কিছুর দ্বারা নিশ্চয়ই পরীক্ষা করব, ধৈর্যশীলদের সুসংবাদ প্রদান করো।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৫৫)
অল্পে তুষ্ট থাকা: অল্পে তুষ্ট থাকা আমাদের হতাশা থেকে মুক্তি দিতে পারে। আমরা আল্লাহতায়ালার লাখো নেয়ামতে ডুবে আছি। আমাদের উচিত, নেয়ামতগুলো স্মরণ করে শুকরিয়া আদায় করা। প্রাচুর্যতাই সচ্ছলতা নয়; আবার সম্পদের স্বল্পতাই দরিদ্রতা নয়। যতটুকু আছে তা নিয়ে সন্তুষ্ট থাকাই মুমিনের গুণ। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তাহাজ্জুদের নামাজ আর মানুষ থেকে অমুখাপেক্ষিতার মধ্যে আছে মুমিনের সম্মান।’ (আত-তারগিব ওয়াত-তারহিব, হাদিস: ৯২৯)
নামাজ আদায় করা: নামাজ আদায় হতাশা দূর করে। কখনো হতাশা চেপে বসলে বিচলিত না হয়ে অজু করে নামাজের মাধ্যমে আল্লাহর সাহায্য চাওয়ার জন্য পবিত্র কোরআনে নির্দেশনা রয়েছে। আল্লাহ বলেন, ‘হে ঈমানদাররা, তোমরা ধৈর্য ও নামাজের মাধ্যমে সাহায্য চাও।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৫৩)
তাকদিরে বিশ্বাস রাখা: ঈমানের অন্যতম ভিত্তি তাকদিরে বিশ্বাস রাখা। ভালো-মন্দ যাই হোক না কেন; তাকদিরের ওপর ছেড়ে দেওয়া হলে হতাশ হওয়ার অবকাশ থাকবে না। সমস্যার সমাধান একমাত্র আল্লাহই করতে পারেন, অন্তরে এই বিশ্বাস লালন করুন; হতাশা আপনার আশপাশেও আসবে না। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আল্লাহ যদি তোমাকে কষ্ট দিতে চান তাহলে তিনি ছাড়া তা দূর করার কেউ নেই, আর আল্লাহ যদি তোমার কল্যাণ করতে চান, তাহলে তাঁর অনুগ্রহ ফিরিয়ে দেওয়ার কেউ নেই।’ (সুরা ইউনুস, আয়াত: ১০৭)
আল্লাহকে ডাকা বা সাহায্য চাওয়া: আল্লাহর বান্দা হিসেবে আমাদের উচিত সবসময় আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করা। পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘আমি তো নিশ্চয়ই নিকটবর্তী। আমি আহ্বানকারীর ডাকে সাড়া দিই, যখন সে ডাকে। সুতরাং তারা যেন আমার ডাকে সাড়া দেয় এবং আমার প্রতি ঈমান আনে।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৮৬)
দোয়া পড়া: হতাশা ও দুশ্চিন্তা অনেক সময় আর্থিক সংকটের কারণে হয়। এজন্য বেশি বেশি ইসতেগফার করলে আল্লাহতায়ালা আর্থিক সংকটসহ অন্যান্য বিপদ দূর করে দেবেন। হতাশা থেকে বাঁচার জন্য দুশ্চিন্তামুক্ত থাকা জরুরি। দুশ্চিন্তামুক্ত থাকতে এই দোয়াটি পড়তে পারি–
বাংলা উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল হামমি ওয়াল হুজনি, ওয়া আউজুবিকা মিনাল আজজি ওয়াল কাসালি, ওয়া আউজুবিকা মিনাল জুবনি ওয়াল বুখলি, ওয়া আউজুবিকা মিন গলাবাতিদ দাইনি ওয়া কহরির রিজাল।
বাংলা অর্থ: হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে দুশ্চিন্তা ও অস্থিরতা থেকে আশ্রয় চাই। আমি আশ্রয় চাই অক্ষমতা ও অলসতা থেকে, আপনার কাছে আশ্রয় চাই ভীরুতা ও কার্পণ্য হতে, আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাই ঋণের বোঝা ও মানুষের রোষানল থেকে।
লেখক : শিক্ষার্থী, আনন্দমোহন সরকারি কলেজ, ময়মনসিংহ