রাত মুমিনের জন্য অপার সম্ভাবনাময় সময়। মুমিন শুধু ঘুমিয়ে রাত কাটায় না; বরং সে একটা সময় বেছে নেয় আল্লাহর ইবাদতের জন্য। আল্লাহকে কাছে পাওয়ার জন্য। যারা রাতের শেষ ভাগে ঘুম থেকে উঠে আল্লাহর ইবাদত করে, কোরআনে তাদের প্রশংসা করা হয়েছে। পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘তাদের পার্শ্বদেশ বিছানা থেকে আলাদা হয়। তারা ভয় ও আশা নিয়ে তাদের রবকে ডাকে। আর আমি তাদেরকে যে রিজিক দান করেছি, তা থেকে তারা ব্যয় করে।’ (সুরা সাজদা, আয়াত: ১৬)
শেষ রাতে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া বান্দার অতিরিক্ত দায়িত্ব। তাহাজ্জুদ পড়লে আল্লাহ বান্দার প্রতি খুশি হন। তাকে প্রশংসিত স্থানে প্রতিষ্ঠিত করেন। আল্লাহ বলেন, ‘আর রাতের কিছু অংশে তাহাজ্জুদ আদায় করো তোমার অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে। আশা করা যায়, তোমার রব তোমাকে প্রশংসিত অবস্থানে প্রতিষ্ঠিত করবেন।’ (সুরা বনি ইসরাইল, আয়াত: ৭৯)
রাতে ইবাদতের জন্য দণ্ডায়মান হওয়া বেশ কষ্টকর। রাতের নামাজে লোকদেখানোর ব্যাপার থাকে না। ফলে রাতের ইবাদত হয় একনিষ্ঠভাবে। রাত জেগে ইবাদত করা জান্নাতবাসীদের গুণ। আল্লাহ বলেন, ‘এ সকল জান্নাতবাসী ছিল এমন সব লোক, যারা রাতে সামান্যই ঘুমাত এবং ভোর রাতে ক্ষমতার দোয়া করত।’ (সুরা জারিয়াত, আয়াত: ১৭-১৮)
রাতের ইবাদতে আল্লাহর সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক স্থাপন করা যায়। আল্লাহর কাছে নিজের প্রয়োজনগুলো মনভরে বলা যায়। রাতের এক-তৃতীয়াংশের পরবর্তী প্রহর দোয়া কবুলের অন্যতম সময়। এ সময় আল্লাহতায়ালা বান্দাকে ডাকেন, প্রয়োজন জানতে চান। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যখন রাতের প্রথম এক-তৃতীয়াংশ অতিক্রম হয়ে যায়, তখন তিনি (আল্লাহ) দুনিয়ার আকাশে নেমে এসে বলতে থাকেন, ক্ষমা প্রার্থনাকারী আছে কি? (যে ক্ষমা প্রার্থনা করবে, আর আমি তাকে ক্ষমা করব)। কোনো তওবাকারী আছে কি? (যে তওবা করবে আর আমি তার তওবা কবুল করব)। কোনো প্রার্থনাকারী আছে কি? (যে প্রার্থনা করবে আর আমি তার প্রার্থনা কবুল করব)। কোনো আহ্বানকারী আছে কি? (আমি তার আহ্বানে সাড়া দেব)। এভাবে ফজরের সময় পর্যন্ত তিনি বলতে থাকেন।’ (মুসলিম, হাদিস: ৭৫৮)
দিনের তুলনায় রাতের ইবাদতে বেশি একাগ্রতা সৃষ্টি হয়। ওই সময়ের ইবাদত ও প্রার্থনায় সৌভাগ্য ও কল্যাণের দরজা খুলে যায়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের রাতের নামাজ (তাহাজ্জুদ) প্রতিষ্ঠা করা উচিত। কেননা এ হলো তোমাদের পূর্ববর্তী নেককারদের অবলম্বিত রীতি। রাতের নামাজ আল্লাহর নৈকট্য লাভ ও গুনাহ থেকে বাঁচার উপায়; মন্দ কাজের কাফফারা এবং শারীরিক রোগের প্রতিরোধক।’ (তিরমিজি, হাদিস: ৩৫৪৯)
রাসুলুল্লাহ (সা.) আরও বলেছেন, ‘আল্লাহতায়ালা ওই ব্যক্তির ওপর রহম করুন, যে রাত জেগে নামাজ আদায় করে; অতঃপর সে স্বীয় স্ত্রীকে ঘুম হতে জাগ্রত করে। আর যদি সে ঘুম হতে উঠতে না চায়, তখন সে তার চোখে পানি ছিটিয়ে দেয় (নিদ্রাভঙ্গের জন্য)। আল্লাহতায়ালা ওই নারীর ওপর রহম করুন, যে রাতে উঠে নামাজ আদায় করে এবং নিজের স্বামীকে জাগ্রত করে। যদি সে ঘুম থেকে উঠতে অস্বীকার করে, তখন সে তার চোখে পানি ছিটিয়ে দেয়।’ (আবু দাউদ, হাদিস: ১৩০৮)
লেখক: শিক্ষার্থী, ফতোয়া বিভাগ , মারকাজুশ শাইখ আরশাদ আল-মাদানী, মুগদা