ঢাকা ২৩ আশ্বিন ১৪৩১, মঙ্গলবার, ০৮ অক্টোবর ২০২৪

রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর অনন্য বৈশিষ্ট্য

প্রকাশ: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১১:৪৭ এএম
আপডেট: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১১:৪৮ এএম
রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর অনন্য বৈশিষ্ট্য
মসজিদ নববি, মদিনা, সৌদি আরব। ছবি: ইন্টারনেট

রাসুলুল্লাহ (সা.) সব নবি-রাসুল থেকে সর্বোচ্চ মর্যাদায় অধিষ্ঠিত। তাঁর মতো মর্যাদাসম্পন্ন মানুষ জগতে আগমন করেননি, ভবিষ্যতেও করবেন না। তার আগে কোনো নবির দ্বীন পূর্ণাঙ্গ ছিল না, একমাত্র তাঁর দ্বীন পূর্ণাঙ্গ। তিনি জগতের শেষ নবি। তার পরে কোনো নবির আগমন হবে না। এটা মহান অধিশ্বর আল্লাহর শাশ্বত বিধান। তার ওপর অর্পিত রিসালাত বা আল্লাহর বার্তা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম রিসালাত। তার রিসালাতের বৈশিষ্ট্য অন্যান্য নবি-রাসুলের রিসালাত থেকে অনন্য। তার রিসালাতের সংক্ষিপ্ত কিছু বৈশিষ্ট্যের কথা উল্লেখ করা হলো—


আদম (আ.) সৃষ্টির আগেই তিনি নবি
পৃথিবীর প্রথম মানুষ আদম (আ.)-এর সৃষ্টির আগেই মহানবি (সা.) নবি ছিলেন। যখন আদম (আ.) পানি ও মাটির সংমিশ্রণে ছিলেন, তখন তিনি নবি ছিলেন। সৃষ্টির প্রথম ভোরেই আল্লাহ তার আত্মা পরম যত্ন সৃষ্টি করেন। আদম (আ.) মানুষের অস্তিত্বে আসার পরই মোহাম্মদ (সা.)-এর নামের ঝলক দেখতে পান। ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আমি তখনো নবি ছিলাম, যখন আদম আত্মা ও শরীরের মধ্যে অবস্থান করছিলেন।’ (তিরমিজি, হাদিস : ৩৬০৯)


পূর্ববর্তী ধর্মগ্রন্থে সত্যায়ন ও সুসংবাদ
মুহাম্মাদ (সা.) নবি হবেন, মানুষকে হেদায়াতের দ্যুতিময় পথ দেখাবেন। তার আবির্ভাবে তার আনীত ধর্ম পালন করাই হবে একমাত্র সফলতা; আল্লাহতায়ালা এ ঘোষণা পূর্ববর্তী ধর্মগ্রন্থ ইঞ্জিলে দিয়েছেন। বলে দিয়েছেন তাওরাত কিতাবেও। একজন নবির আগমন অপর একজন নবির মাধ্যমে তাঁর ওপর অবতীর্ণ কিতাবের ইশতেহার প্রমাণ করে মুহাম্মদ (সা.)-এর রিসালাতের শ্রেষ্ঠত্ব ও স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘যারা অনুসরণ করে রাসুলের, যে উম্মি নবি; যার গুণাবলি তারা নিজেদের কাছে তাওরাত ও ইঞ্জিলে লিখিত পায়।’ (সুরা আরাফ, আয়াত : ১৫৭)

কোরআনের আরেক আয়াতে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘স্মরণ করো, যখন মরিয়ম-তনয় ঈসা (আ.) বলেছিলেন, হে বনি ইসরাইল, নিশ্চয়ই আমি তোমাদের কাছে আল্লাহর রাসুল। আমার পূর্ববর্তী তাওরাতের সত্যায়নকারী এবং একজন রাসুলের সুসংবাদদাতা, যিনি আমার পরে আগমন করবেন যার নাম আহমদ।’ (সুরা সফ, আয়াত : ০৬)

রহমতের নবি
আল্লাহতায়ালা ইসলামের নবি মোহাম্মদ (সা.)-কে সমগ্র জগতের জন্য রহমত হিসেবে প্রেরণ করেন। বিশ্বমানবতার পরিপূর্ণ কল্যাণের জন্যই তাঁকে পাঠানো হয়েছে। পৃথিবীতে  তিনি সর্বশ্রেষ্ঠ মহান পুরুষ। যিনি পুরো দুনিয়ার মানুষের জন্য রহমত হিসেবে প্রেরিত হয়েছেন। মানুষের মুক্তির জন্য আগমন করেছেন। শান্তি-সম্প্রীতি ও সুখের বাতাস বইয়ে দিয়েছেন পৃথিবীর ঘরে ঘরে। তার আগে কেউ ব্যাপক বিপুল রহমত নিয়ে পৃথিবীতে আগমন করেননি। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘হে নবি, আমি তোমাকে সারা বিশ্বের জন্য রহমত হিসেবে প্রেরণ করেছি।’ (সুরা আম্বিয়া, আয়াত : ১০৭)

আবু হুরায়রা থেকে বর্ণিত আছে, ‘একবার কিছুসংখ্যক সাহাবি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে কাফেরদের বিরুদ্ধে বদ দোয়া করার জন্য আবেদন করল! তাদের আবদার রাসুলুল্লাহ (সা.) অস্বীকার করে বলেন, ‘আমি অভিসম্পাতকারী হিসেবে প্রেরিত হইনি, আমি রহমতস্বরূপ প্রেরিত হয়েছি।’ (মুসলিম, হাদিস : ৪৮৩২)

বিশ্ববাসীর নবি
আল্লাহতায়ালা পৃথিবীতে আগত নবিদের শুধু নির্দিষ্ট গোত্র জাতিকে কেন্দ্র করে পাঠিয়েছিলেন। মুহাম্মাদ (সা.) কোনো বিশেষ জাতি ও গোষ্ঠীর জন্য প্রেরিত হননি, কোনো বিশেষ দেশ ও অঞ্চলের জন্য প্রেরিত হননি, তিনি প্রেরিত হয়েছেন সমগ্র বিশ্ববাসীর জন্য। তিনি আরব ও অনারবের নবি। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আমি আপনাকে সমগ্র মানবজাতির জন্য সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে প্রেরণ করেছি।’ (সুরা সাবা, আয়াত : ২৮)

অন্য আয়াতে বলা হয়েছে, ‘আমি আপনাকে পাঠিয়েছি মানুষের প্রতি আমার পয়গামের বাহক হিসেবে।’ (সুরা নিসা, আয়াত : ৭৯)। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আমাকে লাল ও কালো জাতির কাছে পাঠানো হয়েছে।’ (বুখারি, হাদিস : ৩৩২)

এই হাদিসের ব্যাখ্যায় প্রখ্যাত হাদিসবিশারদ মুজাহিদ (রহ.) বলেন, ‘জিন ও মানুষের কাছে’। আল্লামা ইবনে আসির (রহ.) বলেন, ‘আরব ও আজমের দিকে পাঠানো হয়েছে’। (শরহে তাহাবি, ১৫/১৭)

স্বয়ংসম্পূর্ণ ও পূর্ণাঙ্গ দ্বীন
পৃথিবীতে কোনো নবির দ্বীন পূর্ণাঙ্গ ছিল না। একজন নবি এক অঞ্চলের পথপ্রদর্শক হিসেবে আগমন করতেন। অন্য অঞ্চলের জন্য আগমন করতেন আরেকজন। দুজনের দ্বীন ও শরিয়ত বা বিধিবিধান ছিল ভিন্ন রকম। কারও শরিয়ত পূর্ণাঙ্গ ছিল না। মুহাম্মাদ (সা.)-এর দ্বীন একমাত্র পরিপূর্ণ পূর্ণাঙ্গ দ্বীন। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পূর্ণাঙ্গ করে দিলাম। তোমাদের প্রতি আমার অবদান সম্পূর্ণ করে দিলাম এবং ইসলামকে তোমাদের ধর্ম হিসেবে পছন্দ করলাম।’ (সুরা মায়েদা, আয়াত : ০৩)

হাউজে কাওসারের অধিপতি
কিয়ামতের দিন হাউজে কাওসারের পানি পান করে মুমিনরা পরিতৃপ্ত হবে। জান্নাতে পৌঁছানো পর্যন্ত তাদের আর কোনো তৃষ্ণা আসবে না। হাউজে কাওসারের পানি পানকারী আল্লাহর পছন্দের বান্দা হবে। আল্লাহতায়ালা মুহাম্মাদ (সা.)-কে হাশরের দিন হাউজে কাওসার দান করবেন, যা অন্য কোনো নবিকে দান করবেন না। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আমি আপনাকে হাউজে কাওসার দান করেছি।’ (সুরা কাওসার, আয়াত : ০১)

এ ছাড়া বিভিন্ন হাদিসে হাউজে কাওসারের বর্ণনা এসেছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আমি হাউজের পাশে তোমাদের আগে থাকব।’ (মুসলিম, হাদিস : ৬১০৬)

পাঁচটি বিশেষ অধিকার
রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে এমন পাঁচটি বিশেষ জিনিস দান করা হয়েছে, যা অন্য কোনো নবিকে দান করা হয়নি। পাঁচটি বিষয়ের অধিকার একমাত্র তাঁকেই দান করা হয়েছে। জাবের (রা.) রাসুলুল্লাহ (সা.) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, ‘আমাকে পাঁচটি জিনিস দান করা হয়েছে, যা আমার আগের অন্য কোনো নবিকে দান করা হয়নি—

  • আমাকে এমন প্রভাব দিয়ে সাহায্য করা হয়েছে যে, এক মাস দূরত্বেও তা প্রতিফলিত হয়।
  • সমস্ত জমিন আমার জন্য পবিত্র ও নামাজ আদায়ের উপযোগী করা হয়েছে। কাজেই আমার উম্মতের যে কেউ ওয়াক্ত হলেই (পবিত্র জায়গায়) নামাজ আদায় করতে পারবে।
  • আমার জন্য গনিমতের সম্পদ হালাল করে দেওয়া হয়েছে, যা আমার আগে আর কারও জন্য হালাল করা হয়নি।
  • আমাকে (ব্যাপক) শাফায়াতের অধিকার দেওয়া হয়েছে।
  • সব নবি প্রেরিত হতেন শুধু তাদের সম্প্রদায়ের জন্য, আর আমাকে প্রেরণ করা হয়েছে সমগ্র মানবজাতির জন্য।’ ( বুখারি, হাদিস : ৩৩৫)

সর্বশেষ নবি
মুহাম্মাদ (সা.)-এর আগমনের আগে প্রত্যেক নবির পর নবি আগমন করেছেন। মুহাম্মাদ (সা.) হলেন শেষ নবি। তারপর আর কোনো নবি পৃথিবীতে আগমন করবেন না। তার মাধ্যমে রিসালাতের দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘মুহাম্মদ তোমাদের কোনো ব্যক্তির পিতা নন; বরং তিনি আল্লাহর রাসুল ও শেষ নবি।’  (সুরা আহজাব, আয়াত : ৪০)। মুহাম্মদ (সা.) তাঁর রিসালাত ও অন্য নবির রিসালাতের পার্থক্য বিধান তৈরি করতে গিয়ে এভাবে উপমা দেন যে, ‘এক ব্যক্তি অনেক সুন্দর করে একটি ঘর নির্মাণ করল। তবে একটি স্বর্ণের পরিমাণ জায়গা খালি রাখল। মানুষ তা দেখে আশ্চর্যবোধ করল এবং বলল, কেন এ ইটটি বসানো হলো না? তিনি বলেন, আমি হলাম সেই ইট এবং আমি হলাম সর্বশেষ নবি।’ ( বুখারির সূত্রে মিশকাতুল মাসাবিহ)

লেখক: আলেম ও সাংবাদিক

কীভাবে তায়াম্মুম করতে হয়?

প্রকাশ: ০৮ অক্টোবর ২০২৪, ১০:৪০ এএম
আপডেট: ০৮ অক্টোবর ২০২৪, ০১:৪৯ পিএম
কীভাবে তায়াম্মুম করতে হয়?
পানি ব্যবহারে সক্ষম না হলে মাটি বা এ জাতীয় বস্তু দিয়ে তায়াম্মুম করতে হয়। ছবি: ইন্টারনেট

তায়াম্মুম হলো পানির বিকল্প হিসেবে মাটি ব্যবহার করে পবিত্রতা অর্জন করা। তায়াম্মুমের অনুমোদন দিয়ে পবিত্র কোরআনে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আর যদি তোমরা অসুস্থ হয়ে থাকো কিংবা সফরে থাকো অথবা তোমাদের মধ্য থেকে কেউ যদি প্রস্রাব-পায়খানা থেকে এসে থাকে, কিংবা নারীগমন করে থাকো, কিন্তু পরে পানি পাওয়ার সম্ভাবনা না থাকে, তবে পবিত্র মাটি দিয়ে তায়াম্মুম করে নাও। মুখ ও হাত মাসেহ করে নাও। নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাশীল।’ (সুরা নিসা, আয়াত: ৪৩)

কোন কোন পরিস্থিতিতে তায়াম্মুম করা যাবে, এখানে এর বিরবণ তুলে ধরা হলো—

  • পানির অবস্থান যদি এক মাইল বা এর চেয়ে বেশি দূরত্বে হয়। (দারাকুতনি, হাদিস: ৭৩১, ৭৩৪)
  • পানি ব্যবহারের কারণে যদি নতুন রোগ সৃষ্টি বা বৃদ্ধির সমূহ আশঙ্কা থাকে অথবা প্রাণ বা অঙ্গহানির আশঙ্কা থাকে। (দারাকুতনি, হাদিস: ৭৩১)
  • পানি যদি এত কম থাকে যে তা ব্যবহার করলে নিজে অথবা অন্যরা পিপাসাকাতর হয়ে পড়বে। (বাইহাকি, সুনানে কুবরা, হাদিস: ১১৪৯)
  • কূপ বা পুকুর আছে, কিন্তু পানি এত নিচে যে সেখান থেকে তা উঠানোর কোনো ব্যবস্থা নেই। (বুখারি, ২/৬১)
  • পানি কাছেই আছে, কিন্তু শত্রু অথবা ভয়ংকর কোনো পশু-প্রাণীর আক্রমণের আশঙ্কায় পানির কাছে যাওয়া সম্ভব নয়। (বুখারি, ২/৭২)
  • অজু করতে গেলে ঈদ বা জানাজার নামাজ ছুটে যাওয়ার আশঙ্কা থাকলে। কারণ এসব নামাজের কাজা বা বিকল্প নেই। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হাদিস : ১১৫৮৬; মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক, ৩/৩০০)

আরও পড়ুন : কখন তায়াম্মুম করতে হয়?

তায়াম্মুমের ধারাবাহিক সুন্নতসম্মত পদ্ধতি রয়েছে। এখানে সেগুলো তুলে ধরা হলো—

  • নিয়ত করা। (মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক, ১/২৩২)
  • মাটি বা মাটিজাতীয় বস্তু নেওয়া। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হাদিস : ১৭১৬)
  • বিসমিল্লাহ পড়া। (জামউল জাওয়ামে, ১/১৫৭৮৭)
  • মাটির ওপর হাত রাখার সময় আঙুলগুলো খোলা রাখা এবং মাটির মধ্যে হাত দিয়ে আগে-পিছে নড়াচড়া করা। (দারাকুতনি, হাদিস: ৬৯৭)
  • মাটির ওপর হাত মারার পর উভয় হাত ঝেড়ে ফেলা। (মুসলিম, হাদিস : ৫৫৩; ইবনে মাজাহ, হাদিস: ৫৬৩)
  • সমস্ত মুখমণ্ডল মাসেহ করা। (দারাকুতনি, হাদিস: ৭১২)
  • মুখমণ্ডল ও হাত মাসেহ করার মাঝে অন্য কাজ না করা। (আবু দাউদ,  হাদিস : ২৭২)
  • দুই হাত কনুই পর্যন্ত মাসেহ করা। (দারাকুতনি, হাদিস: ৬৯৭)
  • হাতের পুরো তালু অথবা বেশির ভাগ দ্বারা মাসেহ করা। যদি কেউ দুই আঙুল দ্বারা মাসেহ করে তা হলে তায়াম্মুম সঠিক হবে না। (দারাকুতনি, হাদিস: ৭১২)
  • মাসেহ করার সময় চামড়ার ওপর কোনো প্রতিবন্ধক বন্ধক না থাকা। (বায়হাকি, হাদিস: ৩৬৭) 

লেখক: আলেম ও সাংবাদিক

স্বপ্নে মৃতের খাটিয়া দেখলে কী হয়?

প্রকাশ: ০৭ অক্টোবর ২০২৪, ০৬:৩০ পিএম
আপডেট: ০৭ অক্টোবর ২০২৪, ০৬:৩৭ পিএম
স্বপ্নে মৃতের খাটিয়া দেখলে কী হয়?
মৃত ব্যক্তিকে বহন করে নিয়ে যাওয়ার ছবি। পিন্টারেস্ট

স্বপ্নদ্রষ্টাকে খাটে বহন করতে দেখলে তার সুখ্যাতি ছড়িয়ে পড়বে এবং সম্পদ বৃদ্ধি পাবে। নিজেকে খাটিয়ার ওপরে দেখলে স্বপ্নদ্রষ্টা আল্লাহতায়ালার সন্তুষ্টির জন্য ভ্রাতৃত্ব বন্ধনে আবদ্ধ হবে। কেননা মহান আল্লাহ বলেন, ‘তারা পরস্পর ভাই ভাইয়ের মতো সামনাসামনি খাটের ওপরে বসবে।’ (সুরা হিজর, আয়াত: ৪৭) 

কারও মতে, জানাজা দেখা বন্ধুবাৎসল্য ও সমমনা ব্যক্তি বোঝায়। যার হাতে নিকৃষ্ট লোকেরাও তওবা করবে। যদি দেখে তাকে খাটিয়ার ওপর রাখা হয়েছে, কিন্তু উঠানোর মতো কোনো লোক পাওয়া যাচ্ছে না। তা হলে সে প্রভাবশালী লোকের অনুসরণ করবে এবং তার সম্পদের দ্বারা উপকৃত হবে। যদি দেখ স্বপ্নদ্রষ্টাকে উঠিয়ে খাটিয়ায় রেখে লোকেরা তাকে তাদের কাঁধে বহন করছে, তবে সে নেতৃত্ব এবং উচ্চমর্যাদা লাভ করবে। মানুষ তার অধীনস্থ হবে। যে পরিমাণ লোক তার জানাজার পেছনে পেছনে চলছিল, সেই পরিমাণ লোক তার নেতৃত্বে অনুগত হবে। যদি দেখে লোকেরা তার জানাজার পেছনে পেছনে কাঁদছে, অথবা তার সুনাম গাইছে, অথবা তার জন্য দোয়া করছে তা হলে তার পরিণতি খুব ভালো ও প্রশংসনীয় হবে। লোকদের তার জন্য না কেঁদে বদনাম করতে দেখলে স্বপ্নদ্রষ্টার পরিণতি শুভ হবে না। 

জানাজার পেছনে পেছনে চলতে দেখলে স্বপ্নদ্রষ্টা কোনো বদদীন শাসকের অনুসরণ করবে। বাজারে কোনো জানাজা দেখা এটা ওই বাজারের লোকদের মুনাফিকির প্রতীক। কোনো পরিচিত কবরস্থানের দিকে জানাজা বহন করতে দেখলে এটা ওই হকের প্রতি ইঙ্গিত করে, যা হকওয়ালাদের কাছে পৌঁছবে। কোনো জানাজা হাওয়ায় উড়তে দেখলে বিদেশে কোনো সম্ভ্রান্ত বা শীর্ষ পর্যায়ের লোক মারা গেছে বোঝাবে। অথবা কোনো নেতা বা আত্মপরিচয় গোপনকারী কোনো শীর্ষ আলেমের মৃত্যু হবে। নিজেকে খাটিয়ায় আর খাটিয়াটি মাটিতে চলতে দেখলে স্বপ্নদ্রষ্টা কোনো জাহাজে ভ্রমণ করবে।

অনেক জানাজা কোনো একস্থানে রাখা দেখলে, উক্ত স্থানের লোকেরা অধিক মাত্রায় অশ্লীল কাজে লিপ্ত হবে। যদি কোনো নারী দেখে সে মারা গেছে এবং তার জানাজা খাটে বহন করা হচ্ছে, তা হলে সে যদি অবিবাহিতা হয়, বিয়ে করবে। আর যদি বিবাহিতা হয়, তা হলে সে বদদীনি কাজ করবে। কোনো মৃত লাশ বহন করতে দেখলে, সে হারাম সম্পদ প্রাপ্ত হবে।

মৃত লাশ মাটিতে টানতে দেখলে সে হারাম সম্পদ উপার্জন করবে। কোনো মৃতকে কবরস্থানে স্থানান্তরিত করতে দেখলে সে সত্য ও ন্যায়ের ওপর আমল করবে। বাজারে স্থানান্তরিত করতে দেখলে তার লক্ষ্য পূরণ হবে। ব্যবসায় সফল হবে।

(স্বপ্নের ব্যাখ্যাবিদ মুহাম্মাদ ইবনে সিরিনের বিখ্যাত বই তাফসিরুল আহলাম বা স্বপ্নের ব্যাখ্যা থেকে সংক্ষেপিত)  

লেখক: আলেম ও সাংবাদিক

কখন তায়াম্মুম করতে হয়?

প্রকাশ: ০৭ অক্টোবর ২০২৪, ১০:৩৪ এএম
আপডেট: ০৭ অক্টোবর ২০২৪, ১০:৫৫ এএম
কখন তায়াম্মুম করতে হয়?
দুই হাতের তালু মাটি বা এ জাতীয় বস্তুর ওপর মেরে তায়াম্মুম করতে হয়। ছবি: ইন্টারনেট

আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে এরশাদ করেছেন,  ‘হে ইমানদারগণ! তোমরা যখন নামাজ আদায়ের ইচ্ছা করবে, তখন তোমরা তোমাদের মুখমণ্ডল ও দুই হাত কনুই পর্যন্ত ধৌত করো। তোমাদের মাথা মাসেহ করো এবং পদযুগল গোড়ালি পর্যন্ত ধৌত করো। আর যদি তোমরা অপবিত্র থাকো, তা হলে ভালোভাবে পবিত্র হও।’ (সুরা মায়েদা, আয়াত: ৬)
 
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘পবিত্রতা ছাড়া কোনো নামাজ কবুল হয় না। খিয়ানতের সম্পদ দিয়ে সদকা কবুল হয় না।’ (বুখারি, হাদিস: ৪২৩) 

রাসুলুল্লাহ (সা.) আরও বলেছেন, ‘যে ব্যক্তির হাদাস হয় (অপবিত্র থাকে) তার নামাজ হয় না, যতক্ষণ পর্যন্ত না সে অজু করে।’ (বুখারি, হাদিস: ১৩৫) 

শরিয়ত নির্দেশিত পন্থায় পানি বা মাটি দিয়ে পবিত্র অর্জন করাকে তাহারাত বলা হয়। তাহারাত বা পবিত্রতা অর্জনের পদ্ধতি মোট তিনটি—

১. অজু করা।

২. গোসল করা।

৩. তায়াম্মুম করা। 

অজু ও গোসলের মাধ্যমে পবিত্রতা অর্জন করার জন্য পানি প্রয়োজন আর তায়াম্মুম করার জন্য প্রয়োজন মাটি। সাধারণত সমুদ্র, নদী-নালা, ঝরনা, কুয়া, টিউবওয়েল ও বৃষ্টির পানি পবিত্র এবং এর মাধ্যমে পবিত্রতা অর্জন করা বৈধ। নাপাক জিনিস মিশ্রিত হওয়ার কারণে যদি পানির রঙ, গন্ধ বা স্বাদ পরিবর্তিত হয়ে যায়, তা হলে সেটা নাপাক পানি বলে বিবেচিত হয় এবং সে পানি দিয়ে পবিত্রতা অর্জন করা শুদ্ধ হয় না। (নায়লুল আওতার, ১/৩৫)

এ ছাড়া গোসল বা অজুতে যে পানি ব্যবহার করা হয় তাকে পরিভাষায় ব্যবহৃত পানি বলা হয়। এ পানি পবিত্র কিন্তু এর দ্বারা দ্বিতীয়বার পবিত্রতা অর্জন করা যাবে না। (বুখারি, হাদিস: ৩২)

আরও পড়ুন : নামাজের আগে যেসব কাজ করতে হয়?

পবিত্রতা অর্জন বা নাপাক দূর করার জন্য কিংবা অজু-গোসল করার জন্য পানির ব্যবস্থা না থাকলে অথবা পানির সংকট দেখা দিলে কিংবা পানির ব্যবহারে অসুস্থ হওয়ার শঙ্কা বা অসুখ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকলে তায়াম্মুম করে নিতে হবে। আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে এরশাদ করেছেন, ‘আর তোমরা অসুস্থ হলে বা সফরে থাকলে অথবা তোমাদের কেউ শৌচাগার থেকে বের হলে কিংবা স্ত্রীর সঙ্গে মিলিত হওয়ার পর (পবিত্রতা অর্জন করার জন্য) পানি না পেলে পবিত্র ভূমি থেকে তায়াম্মুম করবে। চেহারা ও হাতে তা (মাটি) মাসেহ করবে।’ (সুরা মায়েদা, আয়াত: ৬) 

জাবের (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে এসে বলল, আমার ওপর গোসল ফরজ হয়েছিল কিন্তু পানি না থাকায় আমি মাটিতে গড়াগড়ি করেছি। রাসুলুল্লাহ (সা.) এভাবে হাত দিয়ে মাটিতে চাপড় দাও বলে নিজেই দুই হাত দিয়ে মাটিতে চাপড় দিলেন এবং চেহারা মাসেহ করলেন। পুনরায় দুই হাত দিয়ে মাটিতে চাপড় দিলেন এবং দুই হাত কনুইসহ মাসেহ করলেন।’ (বাইহাকি, ১/২০৭)

অন্য এক বর্ণনায় এসেছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) নিজের দুই হাতের তালু মাটির ওপর মারলেন এবং উভয় হাতে ফুঁ দিলেন। তারপর দুই হাত দিয়ে মুখমণ্ডল মাসেহ করলেন। এরপর দুই হাতের কব্জি পর্যন্ত মাসেহ করলেন।’ (বুখারি, হাদিস: ৩৩৮)

তায়াম্মুমের দুই ফরজ

এক. সমস্ত মুখমণ্ডল মাসেহ করা। (দারাকুতনি, হাদিস : ৭১২)
দুই. দুই হাত কনুই পর্যন্ত মাসেহ করা। (দারাকুতনি, হাদিস: ৬৯৭)

লেখক: আলেম, গবেষক ও সাংবাদিক

স্বপ্নে জাহান্নাম দেখলে কী হয়?

প্রকাশ: ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ০৭:০০ পিএম
আপডেট: ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ০৯:১১ পিএম
স্বপ্নে জাহান্নাম দেখলে কী হয়?
ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত জাহান্নামের প্রতীকী ছবি।

আবু বাকরাহ বলেন, কেউ যদি স্বপ্নে তাকে আগুনে জ্বালানো হচ্ছে দেখে, সে জাহান্নামে যাবে। ফেরেশতা স্বপ্নদ্রষ্টার কপালের চুল ধরে জাহান্নামে নিক্ষেপ করেছে দেখলে ওই স্বপ্ন তার জন্য অপমান ও লাঞ্ছনার কারণ হবে। কাছ থেকে জাহান্নামের আগুন দেখলে, স্বপ্নদ্রষ্টা পরিশ্রম ও কষ্টে ভুগবে। তা থেকে সে মুক্তি পাবে না। কেননা মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘অপরাধীরা আগুন দেখে বুঝে নেবে যে, তাদের তাতে পতিত হতে হবে এবং তারা তা থেকে রাস্তা পরিবর্তন করতে পারবে না।’ (সুরা কাহাফ, আয়াত: ৫৩) 

স্বপ্নদ্রষ্টা অত্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত হবে, কেননা মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই জাহান্নামের শাস্তি অত্যন্ত নিশ্চিত বিনাশকারী।’ (সুরা ফুরকান, আয়াত: ৬৫) 

ওই স্বপ্ন স্বপ্নদ্রষ্টার জন্য সতর্ককারী; সে যেন ওইসব পাপ থেকে তওবা করে, যা সে করে যাচ্ছে।

জাহান্নামে প্রবেশ করতে দেখার ব্যাখ্যা হলো, সে অশ্লীল বা কবিরা গুনাহে লিপ্ত হবে। ফলে স্বপ্নদ্রষ্টা শাস্তির যোগ্য হবে। কারও মতে, সে বিচারক নিযুক্ত হবে। যদি দেখে, তাকে জাহান্নামে প্রবেশ করানো হয়েছে, তাহলে যে ব্যক্তি তাকে প্রবেশ করিয়েছে, সে তাকে পথভ্রষ্ট করবে এবং অশ্লীল কাজে প্ররোচনা জোগাবে। যদি দেখে, জাহান্নাম থেকে বিনা কষ্টে ক্ষতির সম্মুখীন হওয়া ছাড়াই বের হয়েছে, তাহলে সে জাগতিক দুশ্চিন্তায় পড়বে।

জাহান্নামের উত্তপ্ত পানি পান করতে বা জাককুম গাছ থেকে খেতে দেখলে, স্বপ্নদ্রষ্টা এমন ধরনের ইলম শিক্ষায় লিপ্ত হবে, যা তার জন্য হবে ধ্বংস ও বিপদের কারণ। কারও মতে, তার কাজগুলো কঠিন হবে এবং ওই স্বপ্ন তার হত্যাযজ্ঞ চালানোর লক্ষণ। যদি দেখে, জাহান্নামে স্বপ্নদ্রষ্টা চেহারা কালো হয়ে গেছে, তাহলে এর ব্যাখ্যা হলো, সে এমন লোকের সঙ্গে ওঠাবসা করবে যারা আল্লাহতায়ালার শত্রু এবং যারা তার খারাপ কাজের প্রতি সন্তুষ্ট। ফলে মানুষের সামনে সে অপমানিত ও লাঞ্ছিত হবে এবং তার চেহারা কালো হবে আর তার শেষ পরিণাম শুভ হবে না। 

যদি দেখে স্বপ্নদ্রষ্টা সবসময় জাহান্নামে বন্দি রয়েছে এবং বুঝতে পারছে না কখন সেখানে প্রবেশ করেছে, তবে সে দুনিয়াতে সবসময় দুস্থ, চিন্তিত ও বঞ্চিত থাকবে। নামাজ, রোজা ও সব ইবাদত ছেড়ে দেবে।

কয়লা বা অগ্নিস্ফুলিঙ্গের ওপর দিয়ে অতিক্রম করতে দেখলে, স্বপ্নদ্রষ্টা ইচ্ছাকৃতভাবে মজলিস-মাহফিলে মানুষের ঘাড় মেড়ে চলবে। স্বপ্নে জাহান্নামের আগুন দেখা, স্বপ্নদ্রষ্টা তাড়াতাড়ি ফেতনা-ফাসাদে পতিত হওয়ার প্রতীক। কেননা মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘তোমরা তোমাদের ফেতনার স্বাদ গ্রহণ করো, এটা সেটাই যার সম্পর্কে তোমরা তাড়াহুড়া করছিলে।’ (সুরা জারিয়াত, আয়াত: ১৪)

লেখক: আলেম, গবেষক ও সাংবাদিক 

নামাজের আগে যেসব কাজ করতে হয়

প্রকাশ: ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ১০:৪১ এএম
আপডেট: ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ১০:৪৫ এএম
নামাজের আগে যেসব কাজ করতে হয়
সিজদারত ব্যক্তির ছবি। পিন্টারেস্ট

ঈমানের পরে ইসলামের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ আমল নামাজ। এর মাধ্যমে বান্দার সঙ্গে তার রবের বিশেষ সম্পর্ক সুদৃঢ় হয়। নামাজের আগে কিছু কাজ করতে হবে। মানতে হবে কিছু নিয়ম। এখানে সেসব কাজ ও নিয়ম নিয়ে আলোচনা করা হলো—

১. আজান দেওয়া 
আজান আরবি শব্দ। এর অর্থ ডাকা বা আহ্বান জানানো। বিশেষ কিছু শব্দের মাধ্যমে নামাজের জন্য আহ্বান জানানোকে পরিভাষায় আজান বলা হয়। নামাজের জন্য আজান দেওয়া ইসলামি বিধানমতে সুন্নতে মুয়াক্কাদা।

২. পবিত্রতা অর্জন
শরীর, পরিধেয় পোশাক, নামাজের জায়গা বা যার ওপর নামাজ আদায় করা হবে, তা পবিত্র হতে হবে। আনাস (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) যখন শৌচাগারে ঢুকতেন তখন আমি ও আমার মতো এক যুবক পানির লোটা ও একটি ছোট বর্শা নিয়ে যেতাম। অতঃপর তিনি পানি দিয়ে ইসতেনজা করতেন।’ (বুখারি, হাদিস: ১৫২)

৩. অজু করা
পবিত্রতা অর্জন করার পর সুন্নতসম্মত পদ্ধতিতে অজু করে নিতে হবে।
আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে এরশাদ করেছেন, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা যখন নামাজ আদায়ের ইচ্ছা করবে, তখন তোমরা তোমাদের মুখমণ্ডল ও দুই হাত কনুই পর্যন্ত ধৌত করো। তোমাদের মাথা মাসেহ করো এবং পদযুগল গোড়ালি পর্যন্ত ধৌত করো। আর যদি তোমরা অপবিত্র থাকো, তা হলে ভালোভাবে পবিত্র হও।’ (সুরা মায়েদা, আয়াত: ৬)

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘পবিত্রতা ছাড়া কোনো নামাজ কবুল হয় না। খিয়ানতের সম্পদ দিয়ে সদকা কবুল হয় না।’ (বুখারি, হাদিস: ৪২৩)

৪. নামাজের ওয়াক্ত বা সময় হওয়া
প্রত্যেক নামাজের নির্ধারিত ওয়াক্ত বা সময় হলে নামাজ আদায় করতে হবে। আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে এরশাদ করেছেন, ‘নিশ্চয়ই নামাজ নির্ধারিত সময়ে আদায় করার জন্য মুমিনদের ওপর ফরজ করা হয়েছে।’ (সুরা নিসা, আয়াত: ১০৩)

৫. সতর ঢাকা
নামাজের জন্য পুরুষের নাভি থেকে হাঁটু পর্যন্ত এবং নারীর মুখমণ্ডল, হাতের কব্জি ও পায়ের গোড়ালি ছাড়া পূর্ণ শরীর ঢাকাকে সতর বলা হয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘উরু (পুরুষের) সতরের অন্তর্ভুক্ত।’ (বুখারি, ১/৫৩)। তিনি আরও বলেছেন, ‘কাপড় যদি বড় হয় তা হলে গোটা শরীর আবৃত করো। আর কাপড় যদি ছোট হয়, তা হলে লুঙ্গির মতো পরিধান করো।’ (বুখারি, ১/৫২)

৬. মাথা ঢেকে রাখা
রাসুলুল্লাহ (সা.) টুপি মাথায় দিয়ে নামাজ আদায় করেছেন—সে মর্মে সহিহ কোনো বর্ণনা না পাওয়া গেলেও তিনি যে নামাজে পাগড়ি পড়েছেন, সেটা নিশ্চিত। জাবের ইবনে আমর ইবনে হুরায়েস (রা.) তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, ‘আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে পাগড়ি ও মোজার ওপর মাসেহ করতে দেখেছি।’ (বুখারি, হাদিস: ২০৫)। সুতরাং পাগড়ি পরে নামাজ আদায় করা সুন্নত। আর খালি মাথায় নামাজ পড়ার তুলনায় নামাজে মাথা ঢেকে রাখা উত্তম।
 
৭. টাখনুর ওপর কাপড় তোলা
পুরুষের জন্য সর্বদা টাখনুর ওপর কাপড় পরা আবশ্যক। তদুপরি নামাজের সময় টাখনুর ওপর কাপড় তোলার বিষয়ে বিশেষ নির্দেশনা রয়েছে। ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, ‘আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন, যে ব্যক্তি নামাজের মধ্যে টাখনুর নিচে কাপড় পরে, সে নামাজের মধ্যে আছে নাকি হারামের মধ্যে আছে—তাতে আল্লাহর কিছু আসে-যায় না।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৬৩৭)

৮. কিবলামুখী হওয়া
আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে এরশাদ করেছেন, ‘এবং তোমরা যেখানেই থাকো, সেদিকে (মসজিদুল হারাম) মুখ ফিরাও।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৪৪) 

৯. বিনয়ের সঙ্গে নামাজে দাঁড়ানো
সক্ষম ব্যক্তিকে অবশ্যই দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করতে হবে। দাঁড়ানোর সক্ষমতা না থাকলে বসে আর বসার সক্ষমতা না থাকলে শুয়েও নামাজ পড়ার অনুমতি রয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করো। যদি তাতে অপারগতা থাকে তা হলে বসে এবং তাতেও যদি অপারগতা থাকে তা হলে শুয়ে নামাজ আদায় করো।’ (বুখারি, ১/১৫০)

১০. জামাতে নামাজ আদায় করা
পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজ জামাতের সঙ্গে আদায় করা ওয়াজিব। আল্লাহতায়ালা পবিত্র কেরআনে এরশাদ করেছেন, ‘তোমরা নামাজ প্রতিষ্ঠা করো এবং জাকাত দাও। আর রুকুকারীদের সঙ্গে রুকু করো।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ৪৩)
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘জামাতের সঙ্গে নামাজ পড়া একাকী নামাজ পড়ার চেয়ে ২৭ গুণ বেশি মর্যাদার।’ (বুখারি, হাদিস : ৬৪৫)

১১. ইমাম নির্বাচন করা
জামাতে নামাজ আদায় করার জন্য ইমাম নির্বাচন করতে হবে এবং ইমামের পেছনে নামাজ আদায় করতে হবে। ইমাম নির্বাচন নিয়েও রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর দিকনির্দেশনা রয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘প্রত্যেক দলের মধ্য থেকে (নামাজের জন্য) ইমাম তিনি হবেন, যিনি কোরআনের জ্ঞানে সবার চেয়ে অগ্রগণ্য। এ বিষয়ে যদি সবাই সমান হন, তা হলে যিনি সুন্নাহর জ্ঞানে অগ্রগণ্য তিনি ইমাম হবেন। এ বিষয়ে যদি সবাই সমান হন, তা হলে যিনি আগে হিজরতকারী তিনি ইমান হবেন। এ বিষয়ে যদি সবাই সমান হন, তা হলে যিনি আগে ইসলাম গ্রহণকারী তিনি ইমাম হবেন। কেউ যেন কারও কর্তৃত্বের স্থানে তার ইমাম না হয় এবং কেউ যেন কারও গৃহে তার সম্মানের স্থানে অনুমতি ছাড়া না বসে।’ (মুসলিম, হাদিস: ৬৭৩)

১২. সুতরা রেখে নামাজে দাঁড়ানো 
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ যখন নামাজ পড়বে, তখন সে যেন তার নামাজের জন্য সুতরা ঠিক করে নেয়। যদিও সেটি একটি তীর দ্বারাও হয়।’ (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ১৫৩৪০)। কমপক্ষে আধা হাত উঁচু বা লম্বা কোনো লাঠি বা এ জাতীয় কিছুকে নামাজের সামনে রাখাকে সুতরা বলা হয়। 

১৩. কাতার সোজা করে দাঁড়ানো এবং সামনের কাতার আগে পূরণ করা
জামাতে নামাজ পড়ার জন্য কাতার সোজা করে দাঁড়ানো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা নামাজের কাতারগুলো সোজা করে দাঁড়াও। কারণ কাতার সোজা করা নামাজ পূর্ণতার অংশ।’ (বুখারি, হাদিস: ৭২৩)

১৪. ইকামত দেওয়া
একাকী বা জামাতে আদায়কৃত নামাজের জন্য ইকামত দেওয়া সুন্নত। এমনকি দ্বিতীয় জামাতের নামাজের জন্যও ইকামত দেওয়া উচিত। ইকামত আরবি শব্দ। এর অর্থ হচ্ছে কোনো কিছু সোজা করা বা প্রতিষ্ঠা করা। (লিসানুল আরব, ১১/৩৫২) 
শরিয়ত অনুমোদিত শব্দমালা বা বাক্যমালা দ্বারা নামাজের সূচনা হওয়ার ঘোষণা দেওয়াকে ইকামত বলা হয়। ইকামতকে দ্বিতীয় আজানও বলা হয়। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজসহ জুমা ও দুই ঈদের নামাজের জন্য ইকামত দেওয়া ফরজে কিফায়া।

লেখক: আলেম ও সাংবাদিক