নামাজ শেষে রাসুলুল্লাহ (সা.) বেশ কিছু আমল করতেন। আমলগুলো করলে ব্যক্তির জীবন সুন্দর হবে। আমলের ঝুলি সওয়াবে ভরে উঠবে। মুমিনদের উচিত, নামাজ শেষে এই আমলগুলো করা।
ইসতিগফার ও দোয়া পড়া
সাওবান (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) নামাজ শেষে তিনবার ইসতিগফার পড়তেন, এরপর বলতেন—
বাংলা উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা আনতাস সালামু ওয়া মিনকাস সালামু তাবারকতা জালজালালি ওয়াল ইকরাম।
বাংলা অর্থ: হে আল্লাহ, আপনি সব ধরনের দোষ-ত্রুটি থেকে পবিত্র এবং আপনার থেকেই পবিত্রতা ও নিরাপত্তা লাভ করা যায়। হে দান ও মহত্ত্বের মালিক! আপনি সুমহান! (মুসলিম, হাদিস: ৫৯১, ১২২১)
অন্য এক বর্ণনায় এসেছে, ওয়ালিদ (রহ.) বলেন, আমি জিজ্ঞাসা করলাম, ইসতেগফার কীভাবে পড়ব? তিনি বললেন, আসতাগফিরুল্লাহ, আসতাগফিরুল্লাহ, আসতাগফিরুল্লাহ বলবে। (ইবনে মাজাহ, হাদিস: ৯২৮)
৩৩ বার সুবহানাল্লাহ, ৩৩ বার আলহামদুলিল্লাহ এবং ৩৪ বার আল্লাহু আকবার পড়া
আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, ‘দরিদ্র মুহাজিররা রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে এসে বললেন, হে আল্লাহর রাসুল, ধনীরা জান্নাতের মর্যাদা ও চিরস্থায়ী নেয়ামত লাভে আমাদের তুলনায় অগ্রগণ্য হয়ে যাচ্ছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) জানতে চাইলেন, কীভাবে? তারা বলল, নামাজ-রোজা আমরাও করি, তারাও করেন। কিন্তু তারা ধনী হওয়ার কারণে দান-সদকা করেন, ক্রীতদাস মুক্ত করেন—যা আমরা করতে পারি না। রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, আমি কি তোমাদের এমন আমল শিখিয়ে দেব, যার মাধ্যমে তোমরা অগ্রগামীদের কাছে পৌঁছবে এবং পরবর্তীদের তুলনায় অগ্রগামী হবে? আর এ আমল করা ছাড়া কেউ অগ্রগামী হতে পারবে না। তারা বলল, অবশ্যই বলুন হে রাসুলুল্লাহ। তিনি বললেন, তোমরা প্রতি নামাজের পর ৩৩ বার সুবহানাল্লাহ, ৩৩ বার আলহামদুলিল্লাহ এবং ৩৩ বার আল্লাহু আকবার পড়বে।’ অন্য এক বর্ণনায়, ৩৪ বার আল্লাহু আকবার এসেছে। (মুসলিম, ১/২১৯)
একবার এ দোয়াটি পড়া
মুগিরা ইবনে শুবা (রা.) মুয়াবিয়া (রা.)-কে একটি পত্রে লিখে পাঠান যে, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর পড়তেন—
বাংলা উচ্চারণ: লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকা লাহু, লাহুল মুলকু, ওয়া লাহুল হামদু, ওয়া হুওয়া আলা কুল্লি শাইয়িন কাদির। আল্লাহুম্মা লা মানিয়া লিমা আতাইতা ওয়া লা মুতিয়া লিমা মানায়তা ওয়া লা ইনফায়ু জাল জাদ্দি মিনকাল জাদ্দু।
বাংলা অর্থ: এক আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ বা উপাসক নেই, সার্বভোমত্ব একমাত্র তাঁরই, সমস্ত প্রশংসা একমাত্র তাঁরই জন্য, তিনি সব কিছুর ওপরই ক্ষমতাশীল। হে আল্লাহ, আপনি যা প্রদান করতে চান তা রোধ করার কেউ নেই। আপনি ছাড়া কোনো সম্পদশালীর সম্পদ কোনো উপকারে আসে না।’ (বুখারি, হাদিস: ৮০৪)
এক বর্ণনায় এসেছে, ‘এই দোয়াটি পাঠ করলে গুনাহসমূহ সমুদ্রের ফেনারাশির মতো অসংখ্য হলেও ক্ষমা করে দেওয়া হয়।’ (মুসলিম, হাদিস: ১২৪০)
আরও পড়ুন: সিজদার বৈজ্ঞানিক ও স্বাস্থ্যগত উপকারিতা
আয়াতুল কুরসি পাঠ করা
আবু উমামা (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি প্রতেক ফরজ নামাজের পর আয়াতুল কুরসি পড়বে, তার জন্য জান্নাতে প্রবেশের পথে মৃত্যু ছাড়া আর কোনো বাধা থাকবে না। অর্থাৎ মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আয়াতুল কুরসি—
বাংলা উচ্চারণ: আল্লাহু লা ইলাহা ইল্লা হুওয়াল হাইয়ুল কাইয়ুম। লা তা খুজুহু সিনাতু ওয়ালা নাউম। লাহু মা ফিস সামা ওয়াতি ওয়ামা ফিল আরদ। মান জাল্লাজি ইয়াশ ফাউ ইনদাহু ইল্লা বি ইজনিহি, ইয়া লামু মা বাইনা আইদিহিম ওয়ামা খালফাহুম, ওয়ালা ইউ হিতুনা বিশাই ইম মিন ইল মিহি ইল্লা বিমা শা আ, ওয়াসিয়া কুরসি ইউহুস সামা ওয়াতি ওয়াল আরদ, ওয়ালা ইয়া উদুহু হিফজুহুমা ওয়াহুয়াল আলি ইয়ুল আজিম।
বাংলা অর্থ: আল্লাহ ছাড়া অন্য কোনো উপাস্য নেই, তিনি জীবিত, সব কিছুর ধারক। তাঁকে তন্দ্রাও স্পর্শ করতে পারে না এবং নিদ্রাও নয়। আসমান ও জমিনে যা কিছু রয়েছে, সবই তাঁর। কে আছো এমন যে সুপারিশ করবে তাঁর কাছে তাঁর অনুমতি ছাড়া? দৃষ্টির সামনে কিংবা পেছনে যা কিছু রয়েছে, সে সবই তিনি জানেন। তাঁর জ্ঞানসীমা থেকে তারা কোনো কিছুকেই পরিবেষ্টিত করতে পারে না, কিন্তু যতটুকু তিনি ইচ্ছা করেন। তাঁর কুরসি (সিংহাসন) সমস্ত আসমান ও জমিনকে পরিবেষ্টিত করে আছে। আর সেগুলোকে ধারণ করা তাঁর পক্ষে কঠিন নয়। তিনিই সর্বোচ্চ এবং সর্বাপেক্ষা মহান।’ (নাসায়ি, হাদিস: ৯৪৪৮; তাবারানি (কাবির), হাদিস: ৭৪০৮, ৭৮৩২)
লেখক: আলেম, গবেষক ও সাংবাদিক