ঢাকা ২৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, রোববার, ০৮ ডিসেম্বর ২০২৪

রুকুতে পিঠ ও মাথা সোজা রাখতে হয়

প্রকাশ: ১০ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:৩০ পিএম
আপডেট: ১০ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:৩৭ পিএম
রুকুতে পিঠ ও মাথা সোজা রাখতে হয়
রুকু আদায়রত ব্যক্তির ছবি। ইন্টারনেট

রুকুতে পিঠ ও মাথা সোজা রাখতে হবে। শরীরের পার্শ্বদেশের সঙ্গে হাত না মিলিয়ে ডান হাঁটুর ওপর ডান হাত এবং বাম হাঁটুর ওপর বাম হাত রেখে উভয় হাতের আঙুলগুলো ছড়িয়ে রাখতে হবে। আয়েশা (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) যখন রুকু করতেন তখন ঘাড় থেকে মাথা নিচু করতেন না, উঁচুও করতেন না; বরং একই সমতলে রাখতেন।’ (মুসলিম, হাদিস: ৯৯৭)

আবু হুমাইদ সাইদি (রা.) বলেন, ‘আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে দেখেছি, তিনি যখন নামাজ শুরু করতেন তখন তাকবির বলে দুই হাত কাঁধ পর্যন্ত উঠাতেন। আর যখন রুকু করতেন তখন দুই হাত দিয়ে হাঁটু শক্তভাবে ধরতেন এবং পিঠ সমান করে রাখতেন।’ (বুখারি, হাদিস: ৮২৮)

অন্য এক বর্ণনায় এসেছে, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) রুকুতে হাতের তালু দিয়ে মজবুতভাবে হাঁটু ধরতেন, হাতের আঙুলগুলো পরস্পর বিচ্ছিন্ন রাখতেন এবং মাথা পিঠের সঙ্গে সমান্তরাল রাখতেন।’ (আবু দাউদ, হাদিস: ৭৩১)। আরেক হাদিসে এসেছে, ‘রুকুতে দুই হাতকে রাসুলুল্লাহ (সা.) পার্শ্বদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন রাখতেন।’ (আবু দাউদ, হাদিস: ৭৩৪)

আরও পড়ুন: তাকবির বলে ধীরস্থিরভাবে রুকুতে যেতে হবে

ওয়াবিসা ইবনে মাবাদ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে নামাজ আদায় করতে দেখেছি। তিনি যখন রুকু করতেন, তখন তার পিঠ এমনভাবে সোজা করতেন, যেন তার ওপর পানি ঢাললেও তা স্থির থাকবে।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস: ৮৭২)

রুকুতে মাথা, পিঠ, কোমর বরাবর না করে বা পিঠ বিছিয়ে না রেখে উঁচু করে রাখা কিংবা মাথা নিচু করে রাখা মাকরুহ। রুকুতে হাঁটু বাঁকা করে রাখা, সামনের দিকে বাড়িয়ে রাখা নাজায়েজ। কিরাত পাঠের পর তাকবির বলে রুকুতে যেতে হবে। রুকুতে কমপক্ষে তিনবার রুকুর তাসবিহ (সুবহানা রাব্বিয়াল আজিম) পড়তে হয়। (আবু দাউদ, হাদিস, ৮৮৯)

লেখক: আলেম, গবেষক ও সাংবাদিক

বৈষম্যহীন সমাজ গঠনে করণীয়

প্রকাশ: ০৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৬:৩০ পিএম
বৈষম্যহীন সমাজ গঠনে করণীয়
ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত সমাজের ছবি

পরিবার, সমাজ ও দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠা ও স্থিতিশীলতার প্রধান বাধা বৈষম্য। বৈষম্যের কারণে পরিবার, সমাজ ও দেশ বুক টান দিয়ে দাঁড়াতে পারে না। ইতিহাসের বিভিন্ন সময়ে বৈষম্যের নানা রূপ দেখা যায়। ইসলামে বৈষম্য হারাম। ইসলাম তার সূচনা থেকে বৈষম্যের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়ে আসছে। আঘাত করেছে বৈষম্যের মূলে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘প্রত্যেক হকদার বা মর্যাদার অধিকারীকে তার প্রাপ্য অনুযায়ী হক বা মর্যাদা দাও।’ (বুখারি, হাদিস: ১৯৬৮)

একই ভাবে বেইনসাফ, স্বজনপ্রীতি, পক্ষপাত, বর্ণবাদ, দ্বেষ-বিদ্বেষ, বিবাদ-বিসম্বাদ, অকল্যাণ কামনা ইসলামের দৃষ্টিতে বৈষম্য। অন্যদিকে বৈষম্যহীনতার প্রকাশ ঘটে ইনসাফ, ভ্রাতৃত্ব, সম্প্রীতি, শৃঙ্খলা ইত্যাদি উপাদানগুলো প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে।

বৈষম্যহীন সমাজ বিনির্মাণে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর আদর্শ জীবন, সমাজ ও রাষ্ট্রে প্রতিষ্ঠা করতে হবে। তাঁর পবিত্র আলোয় জীবন সাজাতে হবে। বৈষম্যহীন সমাজ বিনির্মাণে ন্যায়বিচার, অধিকার আদায়ে সমতা, সাম্য ও মানবাধিকার নিশ্চিত করার গুরুত্ব অপরিসীম। ইসলামের শাশ্বত আদর্শ মোতাবেক মহানবি (সা.) আদর্শ সমাজ গঠনের প্রচেষ্টা চালিয়েছিলেন। তিনি বৈষম্যহীন সমাজ বিনির্মাণে শতভাগ সাফল্য পেয়েছেন। ঐতিহাসিক রেমন্ড লার্জ বলেন, ‘প্রকৃতপক্ষে সামাজিক ও আন্তর্জাতিক বিপ্লবের সূচনাকারী হিসেবে ইসলাম ধর্মের প্রবর্তক মুহাম্মাদ (সা.)-এর নাম ইতিহাসে প্রথম উল্লেখ করা হয়েছে।’ 

বৈষম্যঘেরা পৃথিবীর মুক্তির জন্য নবির আদর্শের বিকল্প নেই। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর আদর্শ বৈষম্য, শোষণ ও নিপীড়ন দূর করতে প্রধান নিয়ামক। পবিত্র কোরআনে তাঁকে বিশ্বজগতের জন্য রহমত বলা হয়েছে। (সুরা আম্বিয়া, আয়াত: ১০৭)

ইসলামের পূর্ববর্তী আরবসহ সারা বিশ্ব-সমাজে বৈষম্য ছিল চরমে। কিন্তু মহানবির আদর্শের মাধ্যমে সমাজে শান্তি ও সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হয়। তাঁর মাধ্যমে সমাজে ন্যায়বিচার, অধিকার ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা হয়। বৈষম্যহীন সমাজ গড়ে ওঠে। ঐতিহাসিক রেমন্ড লার্জ বলেন, প্রকৃতপক্ষে সামাজিক ও আন্তর্জাতিক বিপ্লবের সূচনাকারী হিসেবে ইসলাম ধর্মের প্রবর্তক মুহাম্মদ (সা.)-এর নাম ইতিহাসে প্রথম উল্লেখ করা হয়েছে।
বৈষম্যহীন সমাজ বিনির্মাণে মানবতার মুক্তির দূত মহানবি (সা.)-এর আদর্শ অনুসরণ অপরিহার্য। তাঁর ভারসাম্যপূর্ণ নীতির মাধ্যমেই শান্তিপূর্ণ বৈষম্যহীন সমাজ বিনির্মাণ সম্ভব।

 

লেখক : শিক্ষার্থী, জামিয়া শারইয়্যাহ মালিবাগ, ঢাকা


, , , 

মহাবিশ্ব নিয়ে কোরআনের বিস্ময়কর তথ্য

প্রকাশ: ০৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:৩০ এএম
আপডেট: ০৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:৩৪ এএম
মহাবিশ্ব নিয়ে কোরআনের বিস্ময়কর তথ্য
ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত মহাকাশের বিভিন্ন গ্রহ ও নক্ষত্রের ছবি

বিজ্ঞান মানুষকে দিয়েছে অভাবনীয় গতি, সভ্যতার অগ্রযাত্রা করেছে দ্রুততর ও বহুমাত্রিক। বিজ্ঞানের নতুন নতুন আবিষ্কারের জাদুকরী স্পর্শে মানবজীবনের সর্বত্রই এসেছে বৈপ্লবিক পরিবর্তন। বিজ্ঞানের কল্যাণে বিশ্ব আজ আমাদের ঘরের কোণায়, হাতের মুঠোয়। কোরআন শ্রেষ্ঠতম মহাবিজ্ঞান। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘শপথ বিজ্ঞানময় কোরআনের।’ (সুরা ইয়াসিন, আয়াত: ২)

তখন ৬১০ খ্রিষ্টাব্দ। সবকিছুই ছিল নাজুক অবস্থায়। তথ্যপ্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতার কারণে মানুষ তখন কুসংস্কার ও প্রাচীন রূপকথায় বিশ্বাসী ছিল। সে সময় অবতীর্ণ হয় মহাগ্রন্থ আল কোরআন। যাতে রয়েছে ছয় হাজারেরও বেশি নিদর্শন বা আয়াত। যেগুলোর মধ্যে এক হাজারেরও বেশি আয়াতে বিজ্ঞানের কথা বলা হয়েছে। কেউ তো কোরআন বিশ্বাস করেন কোরআনের একটা আয়াত পড়েই। কেউ হয়তো কোরআনের দশটা নিদর্শন দেখে বিশ্বাস করেন। কারও হয়তো লাগে একশটা। আবার কেউ হয়তো হাজারটা নিদর্শন দেখেও কোরআন বিশ্বাস করেন না।

কোরআনের অনেক বৈজ্ঞানিক তথ্য আছে, যেগুলো বর্তমানে প্রতিষ্ঠিত সত্য। বিশ্বজগৎ সৃষ্টি সম্পর্কে আধুনিক বিজ্ঞান যে তথ্য দেয় তা হলো, ‘কোটি কোটি বছর আগে প্রথমে এই বিশ্বজগতের সব উপাদান ছিল একটি বিন্দুতে। তারপর সেখানে একটি বিস্ফোরণ হয়। এর থেকেই তৈরি হয় ছায়াপথ। যেটা আবারও খণ্ড-বিখণ্ড হয়ে তৈরি হয় বিভিন্ন সৌরজগৎ। সেখানে তৈরি হয় বিভিন্ন গ্রহ, সূর্য আর আমরা যে গ্রহে বাস করি—পৃথিবী। অথচ আল কোরআন বহু আগেই আমাদেরকে এ তথ্য প্রদান করেছে। আল্লাহ বলেন, ‘অবিশ্বাসীরা কি দেখে না যে, আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী ওতপ্রোতভাবে মিশে ছিল। অতঃপর আমিই এদের উভয়কে পৃথক করে দিয়েছি। আর আমি প্রাণবন্ত সবকিছুই সৃষ্টি করেছি পানি থেকে। তবুও কি তারা বিশ্বাস স্থাপন করবে না।’ (সুরা আম্বিয়া, আয়াত: ৩০)। পবিত্র কোরআনের এই আয়াতে বিগ ব্যাংয়ের থিওরির কথা বলা হয়েছে খুব সংক্ষেপে। 

পবিত্র কোরআনে আরও বলা হয়েছে, ‘অতঃপর তিনি আকাশের দিকে মনোনিবেশ করেন, যাহা ছিল ধূম্রবিশেষ। অনন্তর তিনি আকাশ ও পৃথিবীকে বললেন, তোমরা উভয়ে এসো ইচ্ছায় অথবা অনিচ্ছায়। তারা বলল, আমরা এলাম অনুগত হয়ে।’ (সুরা হামিম সাজদা, আয়াত: ১১) এই আয়াতের আরবি ‘দুখান’ শব্দের অর্থ হলো ধোঁয়া বা বায়বীয়। বিশ শতকের অন্যতম বিখ্যাত পদার্থবিজ্ঞানী স্টিফেন উইলিয়াম হকিং বলেছেন, ‘বিশ্বজগৎ তৈরির আগে মহাবিশ্বের বিভিন্ন উপাদান ছিল বায়বীয় অবস্থায়। আর মহাশূন্যের যে বিভিন্ন পদার্থের উপাদান— যা আবিষ্কার করা গেছে, সেটাই গত শতাব্দীর সবচেয়ে বড় আবিষ্কার।’ আর এগুলোর ওপর ভিত্তি করে নিশ্চিতভাবে প্রমাণিত হয় যে, বিগ ব্যাং থিওরির সত্যতা আর বিশ্বজগৎ সৃষ্টি হওয়ার রহস্য।
আগেকার দিনে মানুষ মনে করত, আমরা যে পৃথিবীতে বাস করি সেটা সমতল। আর নিচে পড়ে যাওয়ার ভয়ে মানুষ খুব বেশি দূরে যেতে ভয় পেত। এরপর ১৫৫৭ খ্রিষ্টাব্দে স্যার ফ্রান্সিস ড্রেক জাহাজে করে পুরো পৃথিবী ঘুরে আসেন। আর প্রমাণ করলেন পৃথিবী আসলে বর্তুল আকার। আল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহতায়ালা রাতের ভেতর দিবসকে অন্তর্ভুক্ত করেন এবং রাতকে দিবসের ভেতর অন্তর্ভুক্ত করেন।’ (সুরা লুকমান, আয়াত: ২৯)

মূলত অন্তর্ভুক্ত করা একটি ধীরগতির চলমান প্রক্রিয়া। রাত ধীরে ধীরে চলমান প্রক্রিয়ায় দিনে পরিণত হয়, আর দিন ধীরে ধীরে চলমান প্রক্রিয়ায় রাতে পরিণত হয়। এটা শুধুমাত্র তখনই সম্ভব হবে, যখন পৃথিবী বর্তুল আকার হয়। অর্থাৎ সমতল হলে এটি সম্ভব হবে না। কারণ পৃথিবী সমতল হলে দিন-রাত হঠাৎ করে বদলে যেত। পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘এবং এটার পর তিনি (আল্লাহ) পৃথিবীকে করেছেন ডিম্বাকৃতির।’ (সুরা নাজিয়াত, আয়াত: ৩০)। এখানে আয়াতের আরবি শব্দ ‘দাহাহা’-এর অর্থ হলো ডিম্বাকৃতি। আর এই শব্দটা দিয়ে কোনো সাধারণ ডিমকে বোঝানো হয় না। শব্দটা দ্বারা বোঝানো হয় উট পাখির ডিমকে। আর এখন বিজ্ঞান বলে আমাদের পৃথিবী পুরোপুরি ফুটবলের মতো গোল নয়; বরং এটা বর্তুল আকার। এটার ওপরে আর নিচে চাপা, আর দুই পাশে কিছুটা ফোলানো। যা সম্পূর্ণ উটপাখির ডিমের মতো। একটা সময় ইউরোপিয়নরা মনে করত যে, পৃথিবী বিশ্বজগতের কেন্দ্রে একেবারে স্থির হয়ে বসে আছে। আর সূর্যসহ অন্য সব গ্রহ-নক্ষত্র পৃথিবীর চারপাশে প্রদক্ষিণ করছে। এই মতবাদকে বলা হতো ‘থিওরি অব জিওসেনট্রিজম’। এই মতবাদে বিশ্বাসী ছিলেন জ্যোতির্বিজ্ঞানী ক্লডিয়াস টলেমি। অবশ্য এই মতবাদ টিকে ছিল  ষোড়শ শতাব্দী পর্যন্ত। পরবর্তী সময়ে ১৬০৯ খ্রিষ্টাব্দে জ্যোতির্বিজ্ঞানী ইয়োহানেস কেপলার তিনি তার বই আস্ত্রোনমিয়া নোভাতে লিখেছেন, ‘এই সৌরজগতের পৃথিবী আর অন্যান্য গ্রহ শুধু সূর্যের চারপাশে প্রদক্ষিণ করে না; বরং তারা নিজ অক্ষের চারপাশে প্রদক্ষিণ করে।’ মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর আল্লাহতায়ালাই সৃষ্টি করেছেন রাত এবং দিবস। আর সূর্য এবং চন্দ্র। প্রত্যেকেই নিজের কক্ষপথে বিচরণ করছে তাদের নিজস্ব গতিতে।’ (সুরা আম্বিয়া, আয়াত: ৩৩)

মহাগ্রন্থ আল কোরআন অপরিবর্তনীয়। সময় এবং গবেষণার ভিন্নতার কারণে যুগে যুগে বিজ্ঞানের অনেক থিওরির পরিবর্তন হয়েছে। যে কারণে বিজ্ঞানের অনেক তত্ত্ব, আবিষ্কারের প্রথম দিকে আল কোরআনের তত্ত্বের সঙ্গে পরস্পর বিরোধী হলেও পরবর্তীতে আরও বেশি গবেষণা করার কারণে তা কোরআনের তত্ত্বের সঙ্গে হুবহু মিলে গেছে। আবার কোরআনের অনেক বিষয় আছে, যেগুলো আধুনিক বিজ্ঞান এখনো আবিষ্কার করতে পারেনি। তাই কোরআনকে বিজ্ঞান দিয়ে নয়; বরং বিজ্ঞানকে কোরআন দিয়ে উপলব্ধি করা যুক্তিযুক্ত। 
 

লেখক: শিক্ষক, যশোর ইংলিশ স্কুল অ্যান্ড কলেজ (জেইএসসি), যশোর সেনানিবাস

 

শিক্ষকের সম্মান ও মর্যাদা

প্রকাশ: ০৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৬:৩০ পিএম
আপডেট: ০৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:৩৪ এএম
শিক্ষকের সম্মান ও মর্যাদা
ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর ক্লাসের ছবি

শিক্ষকের মর্যাদা সুনিশ্চিত করেছে ইসলাম। কোরআন-হাদিসে শিক্ষকের মর্যাদা সম্পর্কে সুস্পষ্ট নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আমি শিক্ষক হিসেবে প্রেরিত হয়েছি।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস: ২২৫)। এর মাধ্যমে তিনি শিক্ষার গুরুত্ব ও শিক্ষকের মর্যাদার কথা তুলে ধরেছেন। ইমাম আবু হানিফা (রহ.) তার শিক্ষক হাম্মাদ (রহ.)-এর বাড়ির দিকে পা বিছিয়েও বসতেন না। ইমাম আবু ইউসুফ (রহ.) তার শিক্ষক আবু হানিফা (রহ.)-কে খুব সম্মান করতেন। নিজ সন্তান মারা যাওয়ার পরও তার দরসে উপস্থিত ছিলেন। (তাজকিরাতুস সামে ওয়াল মুতাকাল্লিম, পৃষ্ঠা: ৮৬)

শিক্ষক সমাজের বিবেক। শিক্ষক বাঁচলে শিক্ষা বাঁচবে; শিক্ষা বাঁচলে দেশ বাঁচবে। শিক্ষক দেশ গড়ার প্রধান নিয়ামক শক্তি। তার রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক মর্যাদা নিশ্চিত করা আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য। তার বৈধ অধিকার ও মর্যাদা সুরক্ষা করা এবং জীবনের মান উন্নত করার ব্যাপারে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে সচেষ্ট হওয়া সময়ের দাবি। একজন প্রাজ্ঞ, দূরদৃষ্টিসম্পন্ন শিক্ষক সমাজ বদলে বিশেষ ভূমিকা রাখেন। আদর্শ শিক্ষক আদর্শ সমাজ প্রতিষ্ঠার পথ তৈরি করেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘দুই ব্যক্তি ছাড়া অন্য কারও পদ-গৌরব লোভনীয় নয়; তারা হলো—এক. ধনাঢ্য ব্যক্তি, যাকে আল্লাহ ধনসম্পদ দান করেছেন এবং তা সৎপথে ব্যয় করার ক্ষমতা দিয়েছেন। দুই. ওই ব্যক্তি, যাকে আল্লাহ জ্ঞান দান করেছেন এবং সে অনুযায়ী সে কাজ করে ও অপরকে শেখায়।’ (বুখারি, হাদিস: ৭১)

সম্মানের ঐতিহ্য ও রীতি প্রাচীন: সমাজে শিক্ষককে সম্মানের দৃষ্টিতে দেখার ঐতিহ্য ও রীতি বেশ প্রাচীন। শিক্ষা অনুযায়ী মানবচরিত্র ও কর্মের সমন্বয় সাধন করা রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর তাগিদ। জায়েদ ইবনে সাবেত (রা.) একবার তার বাহনে ওঠার জন্য সিঁড়িতে পা রাখলেন। তখন আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) সিঁড়িটি শক্ত করে ধরলেন। এ সময় জায়েদ ইবনে সাবেত (রা.) বললেন, ‘হে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর চাচাতো ভাই, আপনি হাত সরান।’ উত্তরে ইবনে আব্বাস (রা.) বললেন, ‘না, শিক্ষক ও বড়দের সঙ্গে এমন সম্মানসূচক আচরণ করতে হয়।’ (আল ফকিহ ওয়াল মুতাফাক্কিহ, পৃষ্ঠা: ২১৯৭)

বিনয় ও সম্মান শিক্ষকের প্রাপ্য মর্যাদা: একজন শিক্ষক জ্ঞান প্রচারের মাধ্যমে সমাজের নৈতিক, আধ্যাত্মিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখেন। মুসলিম সমাজে শিক্ষককে শুধু জ্ঞানের ধারক হিসেবে নয়; বরং পথপ্রদর্শক হিসেবে সম্মান করা হয়। কারণ, তিনি মানুষকে সঠিক পথে চালিত করতে সাহায্য করেন। ইমাম আহমদ (রহ.) ইসলামি জ্ঞান, তাকওয়া ও আল্লাহভীতির দিক দিয়ে তার শিক্ষকের তুলনায় অগ্রগামী ছিলেন। তবু তিনি কখনো তার শিক্ষকের সামনে বসতেন না। বলতেন, শিক্ষকের সামনাসামনি বসার অনুমতি দেওয়া হয়নি। (তাজকিরাতুস সামে ওয়াল মুতাকাল্লিম, পৃষ্ঠা: ৭৮)
ইমাম শাফি (রহ.) ইমাম মালেক (রহ.)-এর অন্যতম শিষ্য ছিলেন। তিনি বলেন, ‘আমি ইমাম মালেক (রহ.)-এর সামনে খুব বিনয় ও সতর্কতার সঙ্গে কিতাবের পৃষ্ঠা উল্টাতাম। খেয়াল রাখতাম, যেন তিনি শব্দ পেয়ে কোনোভাবে বিরক্ত না হন।’ (তাজকিরাতুস সামে ওয়াল মুতাকাল্লিম, পৃষ্ঠা: ৮৮)

শিক্ষকের সম্মানে বেতন-ভাতার ব্যবস্থা: উমর (রা.) ও উসমান (রা.) তাদের শাসনামলে শিক্ষাব্যবস্থাকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছিলেন। তারা শিক্ষক ও ধর্মপ্রচারকদের জন্য বিশেষ ভাতার ব্যবস্থা করেছিলেন। আব্দুর রহমান ইবনুল জাওজি (রহ.) তার বিখ্যাত ‘সিরাতুল উমরাইন’ বইয়ে উল্লেখ করেন, উমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) ও উসমান ইবনে আফফান (রা.)-এর যুগে মুয়াজ্জিন, ইমাম ও শিক্ষকদের সরকারি ভাতা দেওয়া হতো। (কিতাবুল আমওয়াল, পৃষ্ঠা: ১৬৫)
উমর ইবনে আব্দুল আজিজ (রহ.)-ও তার যুগে ইয়াজিদ ইবনে আবি মালেক ও হারেস ইবনে ইউমজিদ আশআরি (রহ.)-কে ওই অঞ্চলে দ্বীন শেখানোর কাজে নিযুক্ত করেছিলেন। বিনিময়ে তাদের জন্য সম্মানজনক পারিশ্রমিক নির্ধারণ করা হয়েছিল। (কিতাবুল আমওয়াল, পৃষ্ঠা: ২৬২)

আর্থিক মূল্য শিক্ষকতার মূল্যায়ন নয়: রাসুলুল্লাহ (সা.) দারুল আরকাম প্রতিষ্ঠা, গোত্রে গোত্রে শিক্ষিত সাহাবিদের পাঠানো, আসহাবে সুফফার নিয়মিত প্রশিক্ষণ ও যুদ্ধবন্দিদের মুক্তিপণ হিসেবে শিক্ষার মাধ্যমে শিক্ষা বিস্তারের প্রাথমিক উদ্যোগ নেন। তাই আর্থিক মূল্যমানে শিক্ষকতা পেশার পরিমাপ করা যায় না। কেননা, আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘নিশ্চয় জ্ঞানীরা আল্লাহকে সবচেয়ে বেশি ভয় করে।’ (সুরা ফাতির, আয়াত: ২৮)
আল্লাহতায়ালা আরও বলেন, ‘যারা জানে আর যারা জানে না, তারা সমান হতে পারে?’ (সুরা জুমার, আয়াত: ৯)
আল্লাহতায়ালা শিক্ষকদের বিশেষ সম্মানে ভূষিত করেছেন। ফলে মুসলিম সমাজে শিক্ষকমাত্রই বিশেষ মর্যাদা ও সম্মানের ব্যক্তি। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা জ্ঞান অর্জন করো এবং জ্ঞান অর্জনের জন্য আদব-শিষ্টাচার শেখ। আর যার কাছ থেকে তোমরা জ্ঞান অর্জন করো, তাকে সম্মান করো।’ (আল মুজামুল আওসাত লিত তাবারানি, হাদিস: ৬১৮৪)

 

লেখক: সহকারী মুফতি, মারকাজুশ শাইখ আরশাদ আল মাদানি, মানিকনগর

 

অতিথি পাখি আল্লাহর অনুপম সৃষ্টি

প্রকাশ: ০৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:৩০ এএম
আপডেট: ০৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:৩৪ এএম
অতিথি পাখি আল্লাহর অনুপম সৃষ্টি
ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত অতিথি পাখির ছবি

পাখি আল্লাহর অনুপম সৃষ্টি। পাখিদের কথা কোরআনের একাধিক আয়াতে উল্লেখ রয়েছে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তারা কি দেখে না, আকাশের শূন্যগর্ভে নিয়ন্ত্রণাধীন বিহঙ্গের প্রতি? আল্লাহই তাদের স্থির রাখেন। অবশ্যই এতে নিদর্শন রয়েছে মুমিনদের জন্য।’ (সুরা নাহল, আয়াত: ৭৯)। আল্লাহতায়ালা আরও বলেন, ‘তুমি কি দেখ না, তিনি হলেন আল্লাহ, আসমান ও জমিনে যারা আছে সকলেই যাঁর প্রশংসাগীতি উচ্চারণ করে আর (উড়ন্ত) পাখিরাও তাদের ডানা বিস্তার করে? তাদের প্রত্যেকেই তাদের ইবাদত ও প্রশংসাগীতির পদ্ধতি জানে। তারা যা করে, আল্লাহ সে সম্পর্কে খুবই অবগত।’ (সুরা নুর, আয়াত: ৪১)

শীতকালে অতিথি পাখির পদচারণা, উড়ে বেড়ানো আর ডানা ঝাপটানোতে মুখরিত হয় রূপসী বাংলা। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে বিশেষ করে শীতপ্রধান দেশ—সুদূর সাইবেরিয়া, মঙ্গোলিয়া, তিব্বতের হিমশীতলসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে ওরা আসে। পৃথিবীর ১০ হাজার প্রজাতির পাখির মধ্যে ১৮৫৫ প্রজাতি বা প্রায় ১৯ শতাংশ পাখি পরিযায়ী। সোনাজঙ্গ, কুনচুনি, বাতারণ, শাবাজ, জললিপি, বালিহাঁস, রাজশকুন, তিলেময়না, রামঘুঘু, ডুবুরি পাখি, কাদাখোঁচা, রাজসরালি, পাতিকুট, কালভমাথা, গাঙচিল, চকাচকি ইত্যাদি নানা নামের নানা রঙের পরিযায়ী পাখি আসে। সংখ্যায় যা প্রায় ১৫০ প্রজাতিরও বেশি। পাখিদের মধ্যে হামিং বার্ড সবচেয়ে ছোট, মাত্র দুই ইঞ্চি। আর সবচেয়ে বড় হলো উটপাখি— যা প্রায় নয় ফুট হয়ে থাকে। 

অতিথি পাখিকে পরিযায়ী বলা হয়, ইংরেজিতে মাইগ্রেটরি বার্ড। ওরা আমাদের দেশে আসে মূলত একটু উষ্ণতা ও খাবারের জন্য। এরা আমাদের ক্ষতি করে না। ফসলের ক্ষতিকর পোকা, কীটপতঙ্গ খায়। পরিযায়ী পাখির বিষ্টা উৎকৃষ্ট সার। মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি করে। এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যাতায়াতের মাধ্যমে পরাগায়নে ভূমিকা রাখে। এরা আমাদের দেশ ও প্রকৃতির সৌন্দর্য বাড়ায়। আমাদের বিমুগ্ধ করে। অথচ আমরা কত নিষ্ঠুর! এদের সঙ্গে আমরা প্রতারণা করে, ফাঁদ পেতে হত্যা করি। আপ্যায়নের নামে খাবারে বিষ মেখে দিই।

দেশের মিরপুর চিড়িয়াখানার লেক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় লেক, বরিশালের দুর্গাসাগর, নীলফামারীর নীলসাগর, সিরাজগঞ্জের হুরা এবং সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওর ছাড়াও নিঝুম দ্বীপ, ঢালচর, চরকুকরী-মুকরী কিংবা দুবলার চরে অতিথি পাখি বেশি দেখা যায়। এরা আমাদের ক্ষতি করে না। 

পবিত্র কোরআনে হুদহুদ নামে একটি পাখির কথা উল্লেখ আছে। সে সুলায়মান নবিকে বিভিন্ন খবর দিত। আল্লাহতায়ালা তাঁকে পাখিদের ভাষা শিক্ষা দিয়েছিলেন। আল্লাহ বলেন, ‘সুলায়মান হয়েছিল দাউদের উত্তরাধিকারী এবং বলেছিল হে মানুষ, আমাকে পাখিকুলের ভাষা শিক্ষা দেওয়া হয়েছে। এটা অবশ্যই সুস্পষ্ট অনুগ্রহ।’ (সুরা নাহল, আয়াত: ১৬)

মহানবি (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি অহেতুক কোনো চড়ুইপাখি মেরে ফেলল, কিয়ামতের দিন পাখিটি আল্লাহর কাছে এই বলে নালিশ করবে যে, হে আল্লাহ অমুক ব্যক্তি আমাকে অহেতুক হত্যা করেছে।’ (নাসায়ি)। পাখির মধ্যে আছে মানুষের জন্য শিক্ষা। পাখির শূন্যে উড়ে বেড়ানো, ঘর তৈরি, খাবার সংগ্রহ ও প্রজননে আছে মানুষের চিন্তার উপাদান।  

অতিথি পাখিদের জন্য অভয়ারণ্য করতে হবে। তাদের যত্ন নিতে হবে। কোনোভাবেই তাদের হত্যা করা যাবে না। তাড়িয়ে দেওয়ার আয়োজন করা যাবে না। দেশের কিছু মানুষের পাখির সঙ্গে বৈরিতাপূর্ণ আচরণের জন্য এখন আগের মতো এরা আসে না। মনে রাখতে হবে, অকারণে প্রাণহত্যা জায়েজ নেই। ঘৃণ্য অপরাধ। অবুঝ প্রাণী যারা বিনা কারণে হত্যা করে, পরকালে তাদের মুক্তি নেই। প্রচলিত আইনেও এসব পাখি ধরা ও বিক্রি করা নিষেধ।  রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি যথাযথ কারণ ছাড়াই কোনো পাখি হত্যা করবে, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তার হিসাব নেবেন।’ (নাসায়ি, হাদিস: ৪৪৪৫)

আমাদের দেশে পরিযায়ী পাখি আসা আল্লাহর কুদরতেরই নিদর্শন। তাই পরিযায়ী পাখিদের ভালোবাসতে হবে। তাদের যত্ন নিতে হবে। তাদের প্রতি দয়া করতে হবে। এদের প্রতি দয়া ও যত্নে আছে সওয়াব। যারা পাখিদের প্রতি দয়া করবে না, আল্লাহও তাদের প্রতি দয়া করবেন না। পাখি শিকারিদের আল্লাহর নবি (সা.) অভিশাপ দিয়েছেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যেকোনো প্রাণীর ওপর দয়া করার মধ্যেও রয়েছে প্রভূত সওয়াব।’ (বুখারি, হাদিস: ৬০০৯)

একবার কয়েকজন সাহাবি একটি পাখির দুটি বাচ্চা ধরে ফেললেন। আর পাখিটি ছটফট করতে লাগল। নবি (সা.) পাখিটির ছটফটানি দেখে বললেন, কে একে তার বাচ্চার বিষয়ে কষ্ট দিয়েছে? তার বাচ্চা তাকে ফিরিয়ে দাও। আবার তিনি দেখতে পেলেন, পিঁপড়ের টিবিকে আগুনে জ্বালানো হয়েছে, তখন তিনি বলেন, আগুনের রব ছাড়া আর কারও জন্য বৈধ নয় আগুন দ্বারা আজাব দেওয়া। (আবু দাউদ, হাদিস: ২৬৭৫)

 

লেখক : অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার, সেলস অপারেশনস ফেয়ার, ডিস্ট্রিবিউশন লিমিটেড, বনানী

 

আয়াতুল কুরসির পাঁচ ফজিলত

প্রকাশ: ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৬:০০ পিএম
আপডেট: ০৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:৩৪ এএম
আয়াতুল কুরসির পাঁচ ফজিলত
আরবি ক্যালিগ্রাফিতে আয়াতুল কুরসি। ছবি: ইন্টারনেট

পবিত্র কোরআনের বৃহৎ সুরা বাকারার ২৫৫ নম্বর আয়াত আয়াতুল কুরসি। এতে আল্লাহর তাওহিদ, শ্রেষ্ঠত্ব এবং ক্ষমতার বর্ণনা রয়েছে। আয়াতুল কুরসি তেলাওয়াতে অনেক ফজিলত ও উপকারিতা রয়েছে। এখানে পাঁচটি ফজিলতের কথা উল্লেখ করা হলো—

সর্বাপেক্ষা মর্যাদাপূর্ণ আয়াত 
উবাই ইবনে কাব (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘হে আবুল মুনজির, তুমি জানো কি, তোমার কাছে আল্লাহর যে কিতাব রয়েছে এর কোন আয়াতটি সর্বাপেক্ষা মর্যাদাবান? উবাই (রা.) বলেন, আমি বললাম, আল্লাহ এবং তাঁর রাসুল (সা.) অধিক জ্ঞাত। রাসুলুল্লাহ (সা.) আবার বললেন, হে আবুল মুনজির, তুমি জানো কি, তোমার কাছে আল্লাহর যে কিতাব রয়েছে এর কোন আয়াতটি সর্বাপেক্ষা মর্যাদাবান? উবাই (রা.) বলেন, আল্লাহু লা ইলাহা ইল্লা হুয়াল হাইয়ুল কাইয়ুম। (আয়াতুল কুরসি) উবাই (রা.) বলেন, তখন রাসুলুল্লাহ (সা.) আমার বুকে হাত মেরে বললেন, আবুল মুনজির, তোমার জন্য ইলম মোবারক হোক।’ (মুসলিম, হাদিস: ১৭৫৮) 

জান্নাতে প্রবেশের নিশ্চয়তা
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর আয়াতুল কুরসি পড়বে, তার জান্নাতে প্রবেশ করতে শুধু মৃত্যুই বাধা হয়ে থাকবে।’ (নাসায়ি, হাদিস: ১০০)

আল্লাহর হেফাজতে থাকা
হাসান ইবনে আলি (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ফরজ নামাজের পর আয়াতুল কুরসি পড়ে, সে পরবর্তী নামাজ পর্যন্ত আল্লাহর হেফাজতে থাকে।’ (তাবারানি, কাবির, হাদিস: ২৬৬৭) 

আরও পড়ুন: মসজিদে যেসব কাজ নিষেধ

সকাল-সন্ধ্যার হেফাজত
উবাই ইবনে কাব (রা.) বলেন, ‘তাঁর একটি খেজুর শুকানোর জায়গা ছিল। তাতে খেজুর হ্রাস পেত। এক রাতে তিনি পাহারায় রইলেন। হঠাৎ তিনি কিশোরের মতো এক প্রাণী দেখতে পেলেন। সে তাকে সালাম দিল। তিনি সালামের জবাব দিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কোন জাতির? জিন না মানব? সে বলল, জিন। তিনি বললেন, তোমার হাত দাও তো দেখি। সে হাত বাড়িয়ে দিল। দেখা গেল তার হাত ও পশম কুকুরের হাত ও পশমের মতো। সে বলল, এটা জিনের গঠন। সে আরও বলল, জিনরা জানে, তাদের মধ্যে আমার চেয়ে শক্তিশালী আর কোনো পুরুষ নেই। তিনি বললেন, কী উদ্দেশ্যে এসেছ? সে বলল, আমি জানতে পেরেছি, আপনি সদকা করতে পছন্দ করেন। তাই আপনার খাদ্যবস্তু (খেজুর) থেকে নিতে এসেছি। তিনি বললেন, তোমাদের (অনিষ্ট) থেকে আত্মরক্ষার উপায় কী? সে বলল, সুরা বাকারার এই আয়াতটি আল্লাহু ‘লা ইলাহা ইল্লা হুয়াল হাইয়ুল কাইয়ুম’ যে তা সন্ধ্যায় পাঠ করবে সে সকাল পর্যন্ত আমাদের (অনিষ্ট) থেকে নিরাপদ আশ্রয়ে থাকবে। আর যে সকালে পড়বে সন্ধ্যা পর্যন্ত আমাদের (অনিষ্ট) থেকে নিরাপদ আশ্রয়ে থাকবে। সকালে তিনি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে এসে বিষয়টি জানালেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, খবিস সত্য বলেছে।’ (ইবনে হিব্বান, হাদিস: ৭৮৪; মুসতাদরাকে হাকেম, হাদিস: ২০৬৪)

রাতের সার্বিক নিরাপত্তা 
আবু হুরায়রা (রা.) কর্তৃক বর্ণিত একটি দীর্ঘ হাদিসের একাংশে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘যখন তুমি বিছানায় যাবে তখন আয়াতুল কুরসি ‘আল্লাহু লা ইলাহা ইল্লা হুয়াল হাইয়ুল কাইয়ুম’ থেকে আয়াত শেষ পর্যন্ত পাঠ করবে। তাহলে সকাল পর্যন্ত আল্লাহর পক্ষ থেকে তোমার কাছে হেফাজতকারী থাকবে এবং শয়তান তোমার কাছে আসতে সক্ষম হবে না।’ (বুখারি, হাদিস: ২৩১১)

লেখক: আলেম ও মাদরাসা শিক্ষক