ঢাকা ১২ মাঘ ১৪৩১, রোববার, ২৬ জানুয়ারি ২০২৫
English
রোববার, ২৬ জানুয়ারি ২০২৫, ১২ মাঘ ১৪৩১

মসজিদ কর্তৃপক্ষ জমিতে প্রিএমশনের দাবি করতে পারবে?

প্রকাশ: ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:০০ এএম
আপডেট: ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:০২ পিএম
মসজিদ কর্তৃপক্ষ জমিতে প্রিএমশনের দাবি করতে পারবে?
শেখ জায়েদ গ্র্যান্ড মসজিদ, সংযুক্ত আরব আমিরাত। ছবি: ইন্টারনেট

প্রশ্ন: আমাদের মসজিদের উত্তর পাশে একটা বড় জমি আছে। মসজিদ কর্তৃপক্ষের পরিকল্পনা ছিল, জমিটা কিনে মসজিদের স্থায়ী আয়ের লক্ষ্যে সেখানে মার্কেট বানিয়ে ভাড়া দেবে। কিন্তু কিছুদিন আগে জমিটা বিক্রি হয়ে যায়। মসজিদ কর্তৃপক্ষ এটা জানার পর জমিটা যিনি কিনেছেন তার কাছে আবেদন করেন, তিনি যেন জমিটা মসজিদ কর্তৃপক্ষের কাছে বিক্রি করে দেন। কিন্তু তিনি জমি বিক্রি করবেন না বলে জানিয়ে দেন। এখন মসজিদ কর্তৃপক্ষ বলছেন, ওই লোক স্বেচ্ছায় জমিটা বিক্রি না করলে তারা আদালতে প্রিএমশনের (অগ্রাধিকার ক্রয়) দাবি করবেন। কারণ জমিটা মসজিদের পাশেই অবস্থিত। জানার বিষয় হলো, শরিয়তের দৃষ্টিতে মসজিদ কর্তৃপক্ষ উক্ত জমিতে প্রিএমশনের দাবি করতে পারবে কী? 

উত্তর: শরিয়তের দৃষ্টিতে প্রিএমশন বা অগ্রাধিকার ক্রয় দাবির অধিকারী হলেন ব্যক্তি মালিকানাধীন জমির মালিকরা। কোনো ওয়াকফিয়া প্রতিষ্ঠান প্রিএমশনের অধিকার রাখেন না। তাই প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে বিক্রীত জমিটি মসজিদ সংলগ্ন হলেও মসজিদ কর্তৃপক্ষ মসজিদের পক্ষে তাতে প্রিএমশন দাবি করতে পারবেন না। (আদ্দুররুল মুখতার, ৬/২২৩; শরহুল মাজাল্লা, আতাতি, ৩/৫৮৪)

জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) যেসব সম্পত্তি ভাগবাঁটোয়ারা হয়নি, তাতে শুফআর (অগ্রাধিকার ক্রয়) ফায়সালা দিয়েছেন। যখন সীমানা নির্ধারিত হয়ে যায় এবং রাস্তাও পৃথক হয়ে যায়, তখন শুফআর অধিকার থাকে না।’ (বুখারি, হাদিস: ২১১৪) 

আমর ইবনু শারিদ (রহ.) বলেন, আমি সাদ ইবনু আবু ওয়াক্কাস (রা.)-এর কাছে দাঁড়িয়ে ছিলাম, তখন মিসওয়ার ইবনু মাখরামা (রা.) এসে তার হাত আমার কাঁধে রাখেন। এমতাবস্থায় রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর আজাদ করা গোলাম আবু রাফি (রা.) এসে বললেন, হে সাদ, আপনার বাড়িতে আমার যে দুটি ঘর আছে, তা আপনি আমার থেকে খরিদ করে নিন। সাদ (রা.) বললেন, আল্লাহর কসম, আমি সে দুটি ঘর খরিদ করবে না। তখন মিসওয়ার (রা.) বললেন, আল্লাহর কসম, আপনি এ দুটি অবশ্যই খরিদ করবেন। সাদ (রা.) বললেন, আল্লাহর কসম, আমি তোমাকে কিস্তিতে ৪ হাজারের (দিরহাম) অধিক দেব না। আবু রাফি (রা.) বললেন, এই ঘর দুটির বিনিময়ে আমাকে ৫০০ দিনার দেওয়ার প্রস্তাব এসেছে। আমি যদি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে এ কথা বলতে না শুনতাম যে, প্রতিবেশী অধিক হকদার তার নৈকট্যের কারণে, তাহলে আমি এ দুটি ঘর আপনাকে ৪ হাজারের (দিরহাম) বিনিময়ে কিছুতেই দিতাম না। আমাকে এ দুটি ঘরের বিনিময়ে ৫০০ দিনার দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। তারপর তিনি তা তাকে (সাদকে) দিয়ে দিলেন।’ (বুখারি, হাদিস: ২১১৫) 

লেখক: আলেম, মুফতি ও সাংবাদিক

রাষ্ট্রীয় আমন্ত্রণে ইরান যাচ্ছেন বাংলাদেশি কারি মাহবুবুর রহমান

প্রকাশ: ২৫ জানুয়ারি ২০২৫, ০১:০৫ পিএম
আপডেট: ২৫ জানুয়ারি ২০২৫, ০১:০৫ পিএম
রাষ্ট্রীয় আমন্ত্রণে ইরান যাচ্ছেন বাংলাদেশি কারি মাহবুবুর রহমান
কারি মাহবুবুর রহমান। ছবি : সংগৃহীত

ইরান সরকারের আমন্ত্রণে রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠান ‘বারনামাজে মেহফিলে কোরআনি’তে অতিথি হয়ে যাচ্ছেন বাংলাদেশের কারি মাহবুবুর রহমান। অনুষ্ঠানে পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত করবেন তিনি।  অনুষ্ঠানটি ইরানের জাতীয় টেলিভিশনে রমজান মাসব্যাপী প্রচার করা হবে। 

সোমবার (২৭ জানুয়ারি) ইরানের উদ্দেশে রওনা হবেন। 

জানা যায়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে বিখ্যাত কারিরা অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে কোরআন তেলাওয়াত করেন। পুরো রমজান মাস তাদের সুললিত কণ্ঠের তেলাওয়াত দেশটির জাতীয় টেলিভিশনে প্রচার করা হয়। এবার বাংলাদেশ থেকে ইরান সরকারের আমন্ত্রণ পেয়েছেন কারি মাহবুবুর রহমান। 

কারি মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘আল্লাহর শুকরিয়া, তিনি আমাকে কোরআনের খেদমত করার তাওফিক দিয়েছেন। আমৃত্যু কোরআনের খেদমতের সঙ্গে থাকতে চাই। বিশ্ব দরবারে ইতিবাচক বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি তুলে ধরতে চাই। সবার কাছে আমার জন্য দোয়া চাই।’

কারি মাহবুবুর রহমান দারুল ইরফান গার্লস মাদরাসা অ্যান্ড ইসলামিক কিন্টারগার্ডেনের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর আজান ও কিরাতের প্রশিক্ষক। এর মধ্যে ভারতের কয়েকটি প্রদেশে আন্তর্জাতিক কিরাত কনফারেন্সে অংশগ্রহণ করেছেন। অনলাইনে দেশ-বিদেশের বহু মানুষকে কোরআন শিক্ষা দিচ্ছেন।

আরআর/এমআর

ভালোবাসায় বাঁচুক প্রতিবেশী

প্রকাশ: ২৫ জানুয়ারি ২০২৫, ০৬:০০ পিএম
ভালোবাসায় বাঁচুক প্রতিবেশী
প্রতিবেশীর প্রতি দয়া দেখানো সওয়াব। ছবি: ইন্টারনেট

ভালো প্রতিবেশী উত্তম জীবনের নিয়ামক। প্রতিবেশী খারাপ হলে জীবন ও বেঁচে থাকা দুর্বিষহ যন্ত্রণার হয়ে ওঠে। তাই প্রতিবেশীকে হতে হবে উত্তম চরিত্রের অধিকারী ও কল্যাণকামী। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তোমরা আল্লাহর ইবাদত করো। কোনো কিছুকে তাঁর সঙ্গে শরিক করো না এবং পিতামাতা, আত্মীয়-স্বজন, এতিম, অভাবগ্রস্ত, নিকট-প্রতিবেশী, দূর-প্রতিবেশী, সঙ্গী-সাথি, মুসাফির ও তোমাদের দাস-দাসীর সঙ্গে ভালো ব্যবহার করো। নিশ্চয় আল্লাহ দাম্ভিক-অহংকারীকে পছন্দ করেন না।’ (সুরা নিসা, আয়াত: ৩৬)

প্রতিবেশীর গুরুত্ব
আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘জিবরাইল (আ.) আমাকে প্রতিবেশী সম্পর্কে এত অধিক নসিহত করতে থাকেন যে, আমি মনে মনে ভাবলাম, তিনি হয়তো প্রতিবেশীকে ওয়ারিশ বা উত্তরাধিকারী বানাবেন।’ (বুখারি, ৬০১৪)

মুমিন হওয়ার পূর্বশর্ত
আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহর কসম! ওই ব্যক্তি মুমিন নয়, আল্লাহর কসম! ওই ব্যক্তি মুমিন নয়। আল্লাহর কসম! ওই ব্যক্তি মুমিন নয়। সাহাবিরা জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসুল, কোন ব্যক্তি মুমিন নয়? তিনি বললেন, যার প্রতিবেশী তার অনিষ্ট থেকে নিরাপদ নয়।’ (বুখারি, ৬০১৬)

প্রতিবেশীর প্রতি দয়া দেখানো
আবু শুরাইহ আল-খুজায়ি (রা.) থেকে বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ ও আখেরাতের প্রতি ইমান রাখে, সে যেন প্রতিবেশীর সঙ্গে সদাচরণ করে।’ (মুসলিম, ১৮৫)

প্রতিবেশীকে খাবার দেওয়া
প্রতিবেশী অভুক্ত থাকলে তাকে খাবার দিতে হবে। ইবনে আব্বাস (রা.) ইবনুজ জুবাইর (রা.)-কে বলেন, ‘আমি নবি (সা.)-কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি তার প্রতিবেশীকে অভুক্ত রেখে তৃপ্তিসহকারে খায়, সে মুমিন নয়।’ (আদাবুল মুফরাদ, ১১১)

নিরাপত্তা নিশ্চিত করা
আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘সে প্রকৃত মুসলিম, যার জিহ্বা ও হাত থেকে সব মুসলিম নিরাপদ থাকে এবং সে প্রকৃত মুহাজির, আল্লাহতায়ালা যা নিষেধ করেছেন, তা যে ত্যাগ করে।’ (বুখারি, ১০)

জান্নাত লাভের কারণ
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তির অনিষ্ট থেকে তার প্রতিবেশী নিরাপদ না থাকে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না।’ (মুসলিম, ৭৬)

হাদিয়া দেওয়া
রাসুলুল্লাহ (সা.) প্রতিবেশীকে হাদিয়া দিতে সংকোচ করতে নিষেধ করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘হে মুসলিম নারীগণ, তোমাদের কেউ যেন প্রতিবেশীকে হাদিয়া দিতে সংকোচবোধ না করে। যদিও তা বকরির খুরের মতো নগণ্য বস্তুও হয়।’ (বুখারি, ৬০১৭)

লেখক: শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

অমুসলিমকে বিয়ে করার বিধান

প্রকাশ: ২৫ জানুয়ারি ২০২৫, ০৯:০০ এএম
আপডেট: ২৫ জানুয়ারি ২০২৫, ০৯:৩৬ এএম
অমুসলিমকে বিয়ে করার বিধান
বর-কনের কার্টুন ছবি। ইন্টারনেট

বিয়ে ধর্মীয় ও সামাজিক পবিত্র বন্ধন। বিয়েতে আল্লাহ ও রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর নির্দেশের অনুসরণ করা প্রত্যেক মুসলমানের ইমানি দায়িত্ব। এ ব্যাপারে ধর্মীয় নির্দেশনা উপেক্ষা করার সুযোগ নেই। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘বিয়ে আমার সুন্নত (আদর্শ)। আর যে আমার সুন্নতের অনুসরণ করে না, সে আমার দলভুক্ত (মুসলমান) নয়।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস: ১৯৪৬)

কাদের বিয়ে করা যাবে আর কাদের যাবে না—এ নিয়ে ইসলামের নির্দেশনা রয়েছে। পাঁচ প্রকার সম্পর্কের কারণে অনেক নারীকে বিয়ে করা যায় না। যেমন- বংশীয় সম্পর্ক, শ্বশুরালয়ের সঙ্গে সম্পর্কিত, দুধ সম্পর্কীয়, রক্তের কারণে দুজন একই সম্পর্কে যুক্ত হওয়া ও ধর্মের ভিন্নতার কারণে। 

ইসলামে ধর্মের ভিন্নতার কারণে বিয়ে শুদ্ধ হয় না। স্বামী-স্ত্রী উভয়ে একই ধর্মের হওয়া জরুরি। সে হিসেবে যেকোনো বিধর্মী নারীকে বিয়ে করা ইসলামে নিষেধ। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘ইমান না আনা পর্যন্ত তোমরা মুশরিক (বহু স্রষ্টায় বিশ্বাসী) নারীকে বিয়ে করো না, যদিও মুশরিক নারী তোমাদের মুগ্ধ করে...। ইমান না আনা পর্যন্ত তোমরা মুশরিক পুরুষের সঙ্গে (তোমাদের নারীদের) বিয়ে দিয়ো না, যদিও মুশরিক পুরুষ তোমাদের মুগ্ধ করে...।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ২২১)। আরেক আয়াতে আছে, ‘তোমরা কাফের নারীদের সঙ্গে দাম্পত্য সম্পর্ক বজায় রেখো না...।’ (সুরা মুমতাহিনা, আয়াত: ১০)

মুসলিম নারীর জন্য অন্য ধর্মাবলম্বী পুরুষকে স্বামী হিসেবে গ্রহণের সুযোগ নেই। আল্লাহ বলেন, ‘হে মুমিনরা, যখন তোমাদের কাছে মুমিন নারীরা হিজরত করে আসে, তখন তোমরা তাদের পরীক্ষা করে নাও, তাদের ইমান সম্পর্কে আল্লাহই ভালো জানেন। অতঃপর যদি তাদের মুমিন বলে জানতে পারো, তাহলে তাদের কাফেরদের কাছে ফিরিয়ে দিও না। মুমিন নারীরা কাফেরদের জন্য হালাল নয়। আর কাফেররাও তাদের জন্য হালাল নয়...।’ (সুরা মুমতাহিনা, আয়াত: ১০)। তবে কিছু শর্তসাপেক্ষে আহলে কিতাবদের বিয়ের সুযোগ দিয়েছে ইসলাম। কোরআনে আছে, ‘মুমিন সতীসাধ্বী নারী ও আহলে কিতাবের সতীসাধ্বী নারী তোমাদের জন্য বৈধ করা হলো...।’ (সুরা মায়েদা, আয়াত: ৫)

আহলে কিতাবি বলতে সেসব ইহুদি-খ্রিষ্টানদের বোঝায়, যারা প্রকৃতপক্ষে আসমানি কিতাবে বিশ্বাসী। কখনো প্রয়োজন পড়লে তাদের বিয়ে করা যাবে। তবে দুটি শর্ত বাস্তবায়ন করতে হবে। এক. প্রচলিত ইহুদি-খ্রিষ্টানদের মতো নামসর্বস্ব হলে হবে না। পরিপূর্ণভাবে সব আসমানি কিতাবের ওপর বিশ্বাসী হতে হবে। দুই. প্রকৃতই ইহুদি-খ্রিষ্টান হতে হবে। ইসলাম থেকে মুরতাদ হয়ে ইহুদি-খ্রিষ্টান হলে হবে না। এ দুই শর্ত কোনো আহলে কিতাবি নারীর মধ্যে পাওয়া গেলে তাদের একান্ত প্রয়োজনসাপেক্ষে বিয়ের অবকাশ রয়েছে। তবে বর্তমানে এমন আহলে কিতাব নেই। কোনো প্রয়োজন ছাড়া বিয়ে করলে তা মাকরুহ ও অনেক দ্বীনি ক্ষতির কারণ হবে। উমর (রা.) তার সময়ে আহলে কিতাব নারীদের সঙ্গে বিয়ে নিষিদ্ধ করেছিলেন। 

কেন এমন বিধান? কেন মুসলিম নারীকে অন্যত্র বিয়ে দেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়নি?
 
এর জবাবে উপমহাদেশের আলেম মুফতি সাইদ আহমদ পালনপুরি (রহ.) বলেন, ‘এ বিধানের ভিত্তি দুটি মূলনীতির ওপর। এক. নারীরা পুরুষের অধীনে হয়ে থাকে। ফলে কোনো মুসলিম নারী কোনো কাফের বা আহলে কিতাবি পুরুষের সঙ্গে বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ হলে তার ধর্ম ঠিক থাকবে না। দুই. আহলে কিতাবিদের কুফরি মুশরিক ও অগ্নিপূজকদের কুফরি থেকে বেশি সূক্ষ্ম।’ এ প্রসঙ্গে উপমহাদেশের সর্বশ্রেষ্ঠ মুসলিম দার্শনিক শাহ ওয়ালি উল্লাহ মুহাদ্দেসে দেহলভি (রহ.) লিখেছেন, ‘বিয়ের মাধ্যমে জ্ঞাতসারে অথবা অজ্ঞাতসারে কুফর (ইসলামবিরোধী বিশ্বাস ও রীতিনীতি) অন্তরে প্রবেশ করে (তাই আহলে কিতাব ছাড়া অন্যদের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হওয়া বৈধ নয়)। কিন্তু আহলে কিতাব বা ইহুদি ও খ্রিষ্টানরা আসমানি শরিয়তে (ধর্মীয় বিধান) বিশ্বাসী। তারা শরিয়তের মৌলিক বিষয় (একত্ববাদ, নবুওয়াত ও আখেরাত) স্বীকার করে। ফলে তাদের সংস্পর্শে ধর্মীয় মূল্যবোধ বিনষ্ট হওয়ার বিষয়টি অন্য ধর্মের তুলনায় কম ক্ষতিকর। কিন্তু অগ্নিপূজারি, মূর্তিপূজারি ও মুশরিকদের বিষয়টি এর ব্যতিক্রম (মৌলিক, শাখাগত ও সংস্কৃতিগত সব বিষয়ে তাদের সঙ্গে বিরোধ থাকায় তাদের সঙ্গে বিবাহবন্ধন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কেননা এটি জীবনাচারে আমূল প্রভাব বিস্তার করতে পারে)।’ (হুজ্জাতুল্লাহিল বালেগা, ২/১৩৩, তাফসিরে হেদায়েতুল কোরআন, ১/২৬৬)

কুয়েতের ওয়াকফ মন্ত্রণালয় থেকে প্রকাশিত ইসলামি আইন বিশ্বকোষে আছে, ‘মুসলমানের জন্য এমন নারীকে বিয়ে করা হারাম, যার কোনো কিতাব নেই (যেকোনো আসমানি গ্রন্থে বিশ্বাসী নয়)।’ (আল মাওসুআতুল ফিকহিইয়া আল কুয়েতিইয়া, ৩৫/২৬)

প্রচলিত হিন্দু, বৌদ্ধ, বাহায়ি, শিখ ও কনফুসীয় ধর্মের অনুসারীরাদের কারও সঙ্গে কোনো মুসলিমের বিয়ে বৈধ নয়। কেউ ইসলাম ধর্ম ত্যাগ করে মুরতাদ হয়ে গেলে, তার বিয়ে বাতিল হয়ে যায়। মুসলমানদের জন্য কোনো মুরতাদের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হওয়া বৈধ নয়। চার মাজহাবের ওপর লিখিত গ্রন্থ আল ফিকহ আলাল মাজাহিবিল আরবাআয় রয়েছে, ‘মুরতাদের পাঁচটি বিষয় সর্বসম্মতিক্রমে বাতিল। তার প্রধান ও প্রথম বিধান হলো, মুরতাদের বিয়ে নিঃশর্তভাবে বাতিল।’ 

কোনো মুসলিম নারীর বিধর্মী স্বামী থাকলে তাকে মুসলমান বানিয়ে নতুনভাবে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হতে হবে। সম্ভব না হলে বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে হবে। ইসলাম অনুমোদিত নয়, এমন বিয়ের মাধ্যমে সন্তান জন্ম নিলে, সন্তান যদি অপ্রাপ্তবয়স্ক হয়, তাহলেই সে মুসলিম হিসেবে গণ্য হবে। (সুরা বাকারা, আয়াত: ২৫৬; ফাতাওয়া উসমানি, ২/২৫৭; হেদায়া, ২/৩৪৬; ফতোয়া মাহমুদিয়া, ১৭/৮২)
 

লেখক: মুহাদ্দিস, জামিয়া কাসেম নানুতবী, ঢাকা

 

দেশের সীমানা পাহারা দেওয়া ইবাদত

প্রকাশ: ২৪ জানুয়ারি ২০২৫, ০৬:০০ পিএম
আপডেট: ২৪ জানুয়ারি ২০২৫, ০৬:১৯ পিএম
দেশের সীমানা পাহারা দেওয়া ইবাদত
বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড সদস্যদের ছবি। ইন্টারনেট

বিশ্বের প্রতিটি দেশে সীমান্তরক্ষায় অতন্দ্র প্রহরী নিযুক্ত আছে। তারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সীমান্ত রক্ষা করেন। মানুষের জীবন-সম্পদ রক্ষা ও নিরাপত্তার বিধান নিশ্চিত করেন। ইসলাম সীমান্ত রক্ষাকে ইবাদত হিসেবে ঘোষণা করেছে। পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনরা, ধৈর্য ধারণ করো, মোকাবিলার সময় অবিচলতা প্রদর্শন করো এবং সীমান্ত রক্ষায় স্থিত থাকো। আর আল্লাহকে ভয় করে চলো, যাতে তোমরা সফল হতে পারো।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত: ২০০) 

ইসলামি রাষ্ট্রের সীমান্তের সংরক্ষণে নির্ধারিত বাহিনীর সুসজ্জিত হয়ে থাকা অপরিহার্য। যেন সীমান্তের প্রতি শত্রুরা রক্তচক্ষু তুলে তাকাতে সাহস না পায়। সীমান্ত পাহারা শুধু দায়িত্ব পালন নয়; বরং এর সুরক্ষা নিশ্চিত করা সওয়াবের কাজ। সাহল ইবনে সাদ সাইদি (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহর পথে একদিন সীমান্ত পাহারা দেওয়া দুনিয়া ও এর ওপর যা কিছু আছে, এর চেয়ে উত্তম। জান্নাতে তোমাদের কারও চিবুক পরিমাণ জায়গা দুনিয়া এবং ভূপৃষ্ঠের সবকিছুর চেয়ে উত্তম। আল্লাহর পথে বান্দার একটি সকাল বা বিকেল ব্যয় করা দুনিয়া এবং ভূপৃষ্ঠের সব কিছুর চেয়ে উত্তম।’ (বুখারি, হাদিস: ২৬৯৩)

সীমান্ত পাহারা দেওয়া সদকায়ে জারিয়ার অন্তর্ভুক্ত। সদকায়ে জারিয়ার সওয়াব ততক্ষণ চলতে থাকে, যতক্ষণ তার সদকা করা বস্তুর মাধ্যমে মানুষ উপকৃত হতে থাকে। যখন উপকারিতা বন্ধ হয়ে যায়, তখন এর সওয়াবও বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু আল্লাহর পথে সীমান্ত পাহারা দেওয়ার সওয়াব কিয়ামত পর্যন্ত বন্ধ হবে না। সালমান (রা.) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, ‘আল্লাহর রাস্তায় একটি দিবস ও একটি রাতের সীমান্ত পাহারা দেওয়া এক মাস রোজা পালন এবং ইবাদতে রাত জাগার চেয়েও উত্তম। আর যদি এ অবস্থায় তার মৃত্যু ঘটে, তাতে তার এ আমলের সওয়াব জারি থাকবে। তার (শহিদসুলভ) রিজিক অব্যাহত রাখা হবে এবং সে ব্যক্তি ফিতনাবাজদের থেকে নিরাপদে থাকবে।’ (মুসলিম, হাদিস: ৪৭৮৫)

যারা নিজের জীবন ঝুঁকিতে ফেলে উম্মাহর নিরাপত্তা ও শান্তি বজায় রাখে, তাদের আমল এবং সওয়াব আল্লাহর কাছে বিশেষ মর্যাদাপূর্ণ। আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আমি কি তোমাদের কদরের রাতের থেকেও শ্রেষ্ঠ রাতের কথা জানাব না? সে ওই পাহারাদারের রাত, যে ভয়সংকুল স্থানে পাহারা দেয়, তার আশঙ্কা হয় যে, সে হয়তো তার পরিবারে জীবিত ফিরতে পারবে না।’ (মুসতাদরাক হাকেম, হাদিস: ২৪২৪) 

ইসলামসম্মত যেকোনো ন্যায্য অধিকার রক্ষার্থে সংগ্রাম করার এবং সে সংগ্রামে নিহত হওয়ার ক্ষেত্রে একজন মানুষ শহিদের মর্যাদা পাবেন। নিজের জীবন ও পরিবার পরিজনের হেফাজতের দায়িত্বে থেকে নিহত হওয়া ব্যক্তিও শহিদ হিসেবে গণ্য। সাইদ ইবনে জায়েদ (রা.) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, ‘যে ব্যক্তি তার সম্পদ রক্ষার্থে নিহত হয় সে শহিদ। যে ব্যক্তি তার দীন রক্ষার্থে নিহত হয় সে শহিদ। যে ব্যক্তি তার জীবন রক্ষার্থে নিহত হয় সে শহিদ। যে ব্যক্তি তার স্বজন রক্ষার্থে নিহত হয় সে শহিদ।’ (তিরমিজি, হাদিস: ১৪২১)

লেখক: খতিব, বায়তুল আমান জামে মসজিদ, রায়পুর

সমাজ সংস্কারে মহানবির (সা.) পদক্ষেপ

প্রকাশ: ২৪ জানুয়ারি ২০২৫, ০১:০০ পিএম
সমাজ সংস্কারে মহানবির (সা.) পদক্ষেপ
সবুজ গম্বুজের ছবি। ইন্টারনেট

আরবের সেই যুগে সমাজ ছিল অন্ধকারে নিমজ্জিত। কুসংস্কার, অজ্ঞতা, অন্যায়, নিপীড়ন ছিল সাধারণ চিত্র। গোত্র কলহ, যুদ্ধ-বিগ্রহ, মারামারি, হানাহানি এবং সামাজিক বিশৃঙ্খলার নৈরাজ্যপূর্ণ অবস্থার মধ্যে নিপতিত ছিল গোটা সমাজ। সামাজিক সাম্য-শৃঙ্খলা, ভদ্রতা, সৌজন্যবোধ, নারীর মর্যাদা ইত্যাদির কোনো বালাই ছিল না। জঘন্য দাসত্ব প্রথা, সুদ, ঘুষ, জুয়া, মদ, লুণ্ঠন, ব্যভিচার, পাপাচার, অন্যায়-অত্যাচারের চরম তাণ্ডবতায় সমাজ-কাঠামো ধসে পড়েছিল। এমন এক সময়ে আল্লাহতায়ালা রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে মানবজাতির জন্য রহমত হিসেবে পাঠান। পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘আমি তোমাকে বিশ্ববাসীর জন্য রহমত হিসেবে পাঠিয়েছি।’ (সুরা আম্বিয়া, আয়াত: ১০৭)। তিনি এসে সমাজের কুসংস্কার ভেঙে দেন। মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করেন। সভ্য সমাজ গঠন করেন। 

রাসুলুল্লাহ (সা.) কোরআনের নির্দেশনার ভিত্তিতে সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রে পরিবর্তন আনেন। আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ ইনসাফ, দয়া, আত্মীয়-স্বজনকে (তাদের হক) প্রদানের হুকুম দেন। অশ্লীলতা, মন্দ কাজ ও জুলুম করতে নিষেধ করেন। তিনি তোমাদের উপদেশ দেন, যাতে তোমরা উপদেশ গ্রহণ করো।’ (সুরা নাহল, ৯০) 
রাসুলুল্লাহ (সা.) এই নীতির ওপর ভিত্তি করে সমাজের দুর্বলদের অধিকার রক্ষা করেন। শোষিতদের পক্ষে দাঁড়ান। সব মানুষের প্রতি সদয় আচরণের শিক্ষা দেন। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর হাদিসগুলোতে সমাজ সংস্কারের স্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। এক হাদিসে তিনি বলেন, ‘তোমরা সকলেই দায়িত্বশীল, তোমাদের প্রত্যেককেই অধীনস্থদের সম্পর্কে (দায়িত্ব) জিজ্ঞেস করা হবে। ইমাম একজন দায়িত্বশীল ব্যক্তি, তাকে তার অধীনস্থদের সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে।

আরও পড়ুন: সুরা আর-রহমানের বাংলা উচ্চারণ ও অর্থ

পুরুষ তার পরিবারের অভিভাবক, তাকে তার অধীনস্থদের সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে। নারী তার স্বামী-গৃহের কর্ত্রী, তাকে তার অধীনস্থদের সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে। সেবক তার মনিবের ধনসম্পদের রক্ষক, তাকেও তার মনিবের ধন-সম্পদ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে।’ (বুখারি, হাদিস: ৮৯৩) 

ব্যক্তিগত চরিত্র ও আদর্শ
রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর ব্যক্তিগত চরিত্রও ছিল সমাজ সংস্কারের প্রতীক। তাঁর সততা, ন্যায়পরায়ণতা, অপরিসীম দয়া ও সহমর্মিতা মানুষকে আকৃষ্ট করত। আল্লাহ তাঁর চরিত্রের প্রশংসা করে বলেন, ‘নিশ্চয়ই আপনি মহান চরিত্রের অধিকারী।’ (সুরা কলম, আয়াত: ৪)। তাঁর চরিত্র এমন ছিল যে, শত্রুরাও তাঁর ন্যায়পরায়ণতায় মুগ্ধ হতো। তিনি মানুষের মধ্যে ভালোবাসা, পারস্পরিক সহমর্মিতা, ভ্রাতৃত্ব স্থাপনের জন্য  আজীবন কাজ করেছেন।

সমাজ সংস্কারে নবিজির (সা.) অবদান

  • তাওহিদের শিক্ষা, এক আল্লাহর ইবাদতের মাধ্যমে মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করা। 
  • ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা, ধনী-গরিব, শক্তিশালী-দুর্বল সবার জন্য সমান অধিকার নিশ্চিত করা। 
  • নারীর মর্যাদা বৃদ্ধি, নারীদের অধিকার সংরক্ষণ ও তাদের প্রতি সদয় আচরণের আদেশ। 
  • দাসপ্রথার বিলোপ, দাসদের মুক্তির জন্য কাজ করা, তাদের মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা।
  • ভ্রাতৃত্বের প্রচার, উম্মাহর মধ্যে ভালোবাসা ও পারস্পরিক সহযোগিতার শিক্ষা। 

রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর জীবন ও আদর্শ শুধু তাঁর যুগের মানুষের জন্য সীমাবদ্ধ ছিল না; বরং কিয়ামত পর্যন্ত সমগ্র মানবজাতির জন্য তিনি সর্বোত্তম আদর্শ। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তোমাদের জন্য রাসুলুল্লাহর মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ।’ (সুরা আহজাব, ২১)। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর শিক্ষা অনুসরণ করলে একটি পরিপূর্ণ আদর্শ সমাজ গঠন করা সম্ভব। 

লেখক: আলেম ও সাংবাদিক