ঢাকা ৫ মাঘ ১৪৩১, রোববার, ১৯ জানুয়ারি ২০২৫

শিক্ষকের সম্মান ও মর্যাদা

প্রকাশ: ০৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৬:৩০ পিএম
আপডেট: ০৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:৩৪ এএম
শিক্ষকের সম্মান ও মর্যাদা
ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর ক্লাসের ছবি

শিক্ষকের মর্যাদা সুনিশ্চিত করেছে ইসলাম। কোরআন-হাদিসে শিক্ষকের মর্যাদা সম্পর্কে সুস্পষ্ট নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আমি শিক্ষক হিসেবে প্রেরিত হয়েছি।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস: ২২৫)। এর মাধ্যমে তিনি শিক্ষার গুরুত্ব ও শিক্ষকের মর্যাদার কথা তুলে ধরেছেন। ইমাম আবু হানিফা (রহ.) তার শিক্ষক হাম্মাদ (রহ.)-এর বাড়ির দিকে পা বিছিয়েও বসতেন না। ইমাম আবু ইউসুফ (রহ.) তার শিক্ষক আবু হানিফা (রহ.)-কে খুব সম্মান করতেন। নিজ সন্তান মারা যাওয়ার পরও তার দরসে উপস্থিত ছিলেন। (তাজকিরাতুস সামে ওয়াল মুতাকাল্লিম, পৃষ্ঠা: ৮৬)

শিক্ষক সমাজের বিবেক। শিক্ষক বাঁচলে শিক্ষা বাঁচবে; শিক্ষা বাঁচলে দেশ বাঁচবে। শিক্ষক দেশ গড়ার প্রধান নিয়ামক শক্তি। তার রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক মর্যাদা নিশ্চিত করা আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য। তার বৈধ অধিকার ও মর্যাদা সুরক্ষা করা এবং জীবনের মান উন্নত করার ব্যাপারে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে সচেষ্ট হওয়া সময়ের দাবি। একজন প্রাজ্ঞ, দূরদৃষ্টিসম্পন্ন শিক্ষক সমাজ বদলে বিশেষ ভূমিকা রাখেন। আদর্শ শিক্ষক আদর্শ সমাজ প্রতিষ্ঠার পথ তৈরি করেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘দুই ব্যক্তি ছাড়া অন্য কারও পদ-গৌরব লোভনীয় নয়; তারা হলো—এক. ধনাঢ্য ব্যক্তি, যাকে আল্লাহ ধনসম্পদ দান করেছেন এবং তা সৎপথে ব্যয় করার ক্ষমতা দিয়েছেন। দুই. ওই ব্যক্তি, যাকে আল্লাহ জ্ঞান দান করেছেন এবং সে অনুযায়ী সে কাজ করে ও অপরকে শেখায়।’ (বুখারি, হাদিস: ৭১)

সম্মানের ঐতিহ্য ও রীতি প্রাচীন: সমাজে শিক্ষককে সম্মানের দৃষ্টিতে দেখার ঐতিহ্য ও রীতি বেশ প্রাচীন। শিক্ষা অনুযায়ী মানবচরিত্র ও কর্মের সমন্বয় সাধন করা রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর তাগিদ। জায়েদ ইবনে সাবেত (রা.) একবার তার বাহনে ওঠার জন্য সিঁড়িতে পা রাখলেন। তখন আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) সিঁড়িটি শক্ত করে ধরলেন। এ সময় জায়েদ ইবনে সাবেত (রা.) বললেন, ‘হে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর চাচাতো ভাই, আপনি হাত সরান।’ উত্তরে ইবনে আব্বাস (রা.) বললেন, ‘না, শিক্ষক ও বড়দের সঙ্গে এমন সম্মানসূচক আচরণ করতে হয়।’ (আল ফকিহ ওয়াল মুতাফাক্কিহ, পৃষ্ঠা: ২১৯৭)

বিনয় ও সম্মান শিক্ষকের প্রাপ্য মর্যাদা: একজন শিক্ষক জ্ঞান প্রচারের মাধ্যমে সমাজের নৈতিক, আধ্যাত্মিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখেন। মুসলিম সমাজে শিক্ষককে শুধু জ্ঞানের ধারক হিসেবে নয়; বরং পথপ্রদর্শক হিসেবে সম্মান করা হয়। কারণ, তিনি মানুষকে সঠিক পথে চালিত করতে সাহায্য করেন। ইমাম আহমদ (রহ.) ইসলামি জ্ঞান, তাকওয়া ও আল্লাহভীতির দিক দিয়ে তার শিক্ষকের তুলনায় অগ্রগামী ছিলেন। তবু তিনি কখনো তার শিক্ষকের সামনে বসতেন না। বলতেন, শিক্ষকের সামনাসামনি বসার অনুমতি দেওয়া হয়নি। (তাজকিরাতুস সামে ওয়াল মুতাকাল্লিম, পৃষ্ঠা: ৭৮)
ইমাম শাফি (রহ.) ইমাম মালেক (রহ.)-এর অন্যতম শিষ্য ছিলেন। তিনি বলেন, ‘আমি ইমাম মালেক (রহ.)-এর সামনে খুব বিনয় ও সতর্কতার সঙ্গে কিতাবের পৃষ্ঠা উল্টাতাম। খেয়াল রাখতাম, যেন তিনি শব্দ পেয়ে কোনোভাবে বিরক্ত না হন।’ (তাজকিরাতুস সামে ওয়াল মুতাকাল্লিম, পৃষ্ঠা: ৮৮)

শিক্ষকের সম্মানে বেতন-ভাতার ব্যবস্থা: উমর (রা.) ও উসমান (রা.) তাদের শাসনামলে শিক্ষাব্যবস্থাকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছিলেন। তারা শিক্ষক ও ধর্মপ্রচারকদের জন্য বিশেষ ভাতার ব্যবস্থা করেছিলেন। আব্দুর রহমান ইবনুল জাওজি (রহ.) তার বিখ্যাত ‘সিরাতুল উমরাইন’ বইয়ে উল্লেখ করেন, উমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) ও উসমান ইবনে আফফান (রা.)-এর যুগে মুয়াজ্জিন, ইমাম ও শিক্ষকদের সরকারি ভাতা দেওয়া হতো। (কিতাবুল আমওয়াল, পৃষ্ঠা: ১৬৫)
উমর ইবনে আব্দুল আজিজ (রহ.)-ও তার যুগে ইয়াজিদ ইবনে আবি মালেক ও হারেস ইবনে ইউমজিদ আশআরি (রহ.)-কে ওই অঞ্চলে দ্বীন শেখানোর কাজে নিযুক্ত করেছিলেন। বিনিময়ে তাদের জন্য সম্মানজনক পারিশ্রমিক নির্ধারণ করা হয়েছিল। (কিতাবুল আমওয়াল, পৃষ্ঠা: ২৬২)

আর্থিক মূল্য শিক্ষকতার মূল্যায়ন নয়: রাসুলুল্লাহ (সা.) দারুল আরকাম প্রতিষ্ঠা, গোত্রে গোত্রে শিক্ষিত সাহাবিদের পাঠানো, আসহাবে সুফফার নিয়মিত প্রশিক্ষণ ও যুদ্ধবন্দিদের মুক্তিপণ হিসেবে শিক্ষার মাধ্যমে শিক্ষা বিস্তারের প্রাথমিক উদ্যোগ নেন। তাই আর্থিক মূল্যমানে শিক্ষকতা পেশার পরিমাপ করা যায় না। কেননা, আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘নিশ্চয় জ্ঞানীরা আল্লাহকে সবচেয়ে বেশি ভয় করে।’ (সুরা ফাতির, আয়াত: ২৮)
আল্লাহতায়ালা আরও বলেন, ‘যারা জানে আর যারা জানে না, তারা সমান হতে পারে?’ (সুরা জুমার, আয়াত: ৯)
আল্লাহতায়ালা শিক্ষকদের বিশেষ সম্মানে ভূষিত করেছেন। ফলে মুসলিম সমাজে শিক্ষকমাত্রই বিশেষ মর্যাদা ও সম্মানের ব্যক্তি। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা জ্ঞান অর্জন করো এবং জ্ঞান অর্জনের জন্য আদব-শিষ্টাচার শেখ। আর যার কাছ থেকে তোমরা জ্ঞান অর্জন করো, তাকে সম্মান করো।’ (আল মুজামুল আওসাত লিত তাবারানি, হাদিস: ৬১৮৪)

 

লেখক: সহকারী মুফতি, মারকাজুশ শাইখ আরশাদ আল মাদানি, মানিকনগর

 

মুচকি হাসিও সদকা

প্রকাশ: ১৮ জানুয়ারি ২০২৫, ০৬:০০ পিএম
মুচকি হাসিও সদকা
দুজন ব্যক্তির হাস্যোজ্জ্বল ছবি। এআই

মনকে প্রফুল্ল ও সতেজ রাখতে মুচকি হাসির বিকল্প নেই। হাসি পরিশুদ্ধ করে মানুষের হৃদয়। দেহে রক্ত প্রবাহ বাড়িয়ে শরীর চাঙা রাখে। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, হাসি মানুষকে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকিমুক্ত জীবনযাপন উপহার দেয়। মানুষকে আকৃষ্ট করার সহজ, সুন্দর ও পরিশ্রমহীন কাজ হচ্ছে, কারও দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসা। 

আপনি যখন কারও দিকে তাকিয়ে হাস্যোজ্জ্বল চেহারা নিয়ে একটু মুচকি হাসবেন, তখন আপনার প্রতি তার হৃদয়ে ভালোবাসা বৃদ্ধি পাবে। সম্পর্কের দেয়াল মজবুত হবে। মানুষের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক বৃদ্ধিতে হাসি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। 

হাসিই মানুষের সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক সহজ করে দেয়। কঠোর হৃদয়ের লোকেরও মন নরম হয়। আল্লাহ বলেন, ‘বহু মুখমণ্ডল সেদিন উজ্জ্বল হবে, সহাস্য ও প্রফুল্ল।’ (সুরা আবাসা, আয়াত: ৩৮-৩৯) 

মুহাম্মাদ (সা.) হেসেছেন—মুচকি হাসি। কেউ অকারণে তাঁকে মুখ গোমড়া হতে দেখেননি। জারির ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আমার ইসলাম গ্রহণের পর থেকে রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাকে (তাঁর কাছে আসতে) বাধা দেননি। আর আমাকে দেখা মাত্রই তিনি হাসতেন।’ (তিরমিজি, ১৭১) 

মুচকি হাসি দিলে সদকার সওয়াব পাওয়া যায়। রাসুলুল্লাহ (সা.) মুচকি হাসি সদকা আখ্যা দিয়ে বলেছেন, ‘তোমার হাস্যোজ্জ্বল মুখ নিয়ে তোমার ভাইয়ের সামনে উপস্থিত হওয়া তোমার জন্য সদকাস্বরূপ।’ (তিরমিজি, ১৯৫৬)

উচ্চৈঃস্বরে হাসা উচিত নয়। উচ্চৈঃস্বরে হাসলে ভেতরাত্মা মরে যায়। আখেরাতের ব্যাপারে উদাসীনতা সৃষ্টি হয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) কম হাসতেন, বেশি কাঁদতেন। মানুষকে কম হাসতে ও বেশি করে কাঁদতে উপদেশ দিয়েছেন তিনি। 

আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আমি যা জানি তোমরা যদি তা জানতে, তবে তোমরা খুব কমই হাসতে এবং খুব বেশি কাঁদতে।’ (বুখারি, ৬৪৮৫)

সদা হাস্যোজ্জ্বল থাকা, কোনো মুমিনের সঙ্গে দেখা হলে তার সঙ্গে হাস্যোজ্জ্বল মুখে সাক্ষাৎ করা মুমিনের বৈশিষ্ট্য। আবদুল্লাহ ইবনুল হারিস ইবনু জাজয়ি (রা.) বলেন, ‘আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর চেয়ে অধিক মুচকি হাস্যকারী ব্যক্তি কাউকে দেখিনি।’ (তিরমিজি, ১৬৮)

সদকায় অনেক সওয়াব রয়েছে। এতে বিপদাপদ দূর হয়। আবু জার (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাকে বলেছেন, ‘ভালো কোনো কিছু দান করা হীন মনে করে না, এমনকি হোক সেটা ভাইয়ের সঙ্গে হাসিমুখে সাক্ষাৎ দেওয়া।’ (মুসলিম, ৬৫৮৪)

লেখক: কবি ও গল্পকার

জ্ঞান-বিজ্ঞানে মুসলিমদের অবদান

প্রকাশ: ১৮ জানুয়ারি ২০২৫, ০৯:০০ এএম
জ্ঞান-বিজ্ঞানে মুসলিমদের অবদান
প্রতীকী ছবি। এআই

ইসলামের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় শিক্ষা। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর ওপর নাজিল হওয়া প্রথম শব্দ ছিল ইকরা বা পড়ো। পড়ার মাধমে মানুষ জানতে পারে। হতে পারে বিদ্বান। জ্ঞান লাভ করতে পারে আল্লাহর অভিনব সৃষ্টির রহস্য সম্পর্কে। পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘পড়ো তোমার প্রতিপালকের নামে যিনি সৃষ্টি করেছেন, সৃষ্টি করেছেন মানুষকে জমাট-বাঁধা রক্তপিণ্ড থেকে। পড়ো, আর তোমার রব বড়ই অনুগ্রহশীল। যিনি শিক্ষা দিয়েছেন কলম দিয়ে, শিক্ষা দিয়েছেন মানুষকে যা সে জানত না।’ (সুরা আলাক, ১-৫)

মুহাম্মাদ (সা.)-এর নবুয়তপ্রাপ্তির পর ধীরে ধীরে পৃথিবীব্যাপী ইসলামের আলো ছড়িয়ে পড়ে। চার খলিফার হাত ধরে অনেক দেশে ইসলামের পতাকা উড়ে। পাশাপাশি জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চায়ও মুসলিমরা ব্যাপকভাবে এগিয়ে যেতে সক্ষম হয়। মুসলমানদের থেকে তৈরি হয় পৃথিবীবিখ্যাত ধর্মবেত্তা, সেনাপতি, ইতিহাসবেত্তা, বিজ্ঞানী, চিকিৎসক, মনীষী, জ্যোতিষীশাস্ত্রবিদ, রসায়নবিদ, পদার্থবিদসহ নানা শাখার জ্ঞানী-বিজ্ঞানী। 

ইসলামের ইতিহাসে প্রথম পদার্থবিজ্ঞানী ছিলেন আলি (রা.)। তিনি ছিলেন হাফেজ ও মুফাসসির। আলি (রা.) থেকেই আরব সভ্যতায় বিজ্ঞান গবেষণার সূচনা হয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) আলি (রা.) সম্পর্কে বলেন, ‘আমি জ্ঞানের নগরী, আর আলি সেই নগরীর দরজা।’ ইদরিস (আ.) প্রথম চিকিৎসাবিজ্ঞানী এবং মুহাম্মদ (সা.) শ্রেষ্ঠ চিকিৎসা বিজ্ঞানী। পবিত্র কোরআনের ৯৭টি সুরার ৩৫৫টি আয়াত চিকিৎসা সংশ্লিষ্ট। এ ছাড়া বুখারিতে ‘তিব্বুন নববি’ শীর্ষক অধ্যায়ে ৮০টি পরিচ্ছেদ রয়েছে। চিকিৎসাবিজ্ঞানে ইবনে সিনা, আল-রাজি, আল-হিন্দি, আত-তাবারি, ইবনে রুশদদের নাম উল্লেখযোগ্য। ইবনে সিনা চিকিৎসাশাস্ত্র, দর্শন, অঙ্কশাস্ত্র, জ্যোতির্বিদ্যা, জ্যামিতি, বীজগণিত প্রভৃতি বিষয়ে ব্যাপক অবদান রাখেন। তার গ্রন্থ ও প্রবন্ধ সংখ্যা ২৪৬। 

ওষুধশাস্ত্র: চিকিৎসার পাশাপাশি ওষুধ শাস্ত্রেও মুসলিমরা ব্যাপক অবদান রাখেন। ইবনে সিনার কানুন ফিততিব্ব, আল-রাজির কিতাবুল মানসুরি, আল বেরুনির কিতাব আস সায়দালা চিকিৎসাশাস্ত্রের আকরগ্রন্থ। 

হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা: মুহাম্মাদ (সা.) যুদ্ধকালে যে হাসপাতাল নির্মাণ করেছিলেন, তার ওপর ভিত্তি করে মুসলিম শাসকগোষ্ঠী চিকিৎসা, পরীক্ষা-নিরীক্ষা, গবেষণা ও ব্যবহারিক জ্ঞানচর্চার জন্য স্থায়ী হাসপাতাল গড়ে তোলেন। 

অস্ত্রোপচার: মুসলিম বিজ্ঞানী আল-রাজি সর্বপ্রথম অস্ত্রোপচারবিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। 

গণিতশাস্ত্র: মুসলিম গণিত শাস্ত্রবিদদের মধ্যে রয়েছে আল-খারেজমি, আল-কারখি, ওমর খৈয়াম প্রমুখ। আল-খারেজমি সংখ্যাবাচক চিহ্ন সম্পর্কে ধারণ দেন এবং দূরত্ব ও নির্ণয় বিষয়ে অবদান রেখেছেন ইবনুল হাইসাম। এ ছাড়া মুসলিম বিজ্ঞানী আল-ফারাবি সমুদ্র ও সূর্যের উচ্চতাবিষয়ক যন্ত্র আবিষ্কার করেন।

পদার্থবিজ্ঞান: পদার্থবিজ্ঞানে নানামুখী অবদান রেখেছেন আল-বেরুনি, আল-খারেজমি, ইবনুল হাইসাম প্রমুখ।

রসায়ন: বিজ্ঞানের প্রাণ বলা হয় রসায়নশাস্ত্র। রসায়নশাস্ত্রের জনক জাবের ইবনে হাইয়ান। এ ছাড়া বিভিন্ন মুসলিম মনীষী ও বিজ্ঞানী ব্যাপক অবদান রাখেন এ শাস্ত্রে। এদের মধ্যে খালিদ বিন ইয়াজিদ, জাকারিয়া আল-রাজি, আল জিলকাদ প্রমুখের নাম সবার আগে আসে। 

ধাতুশাস্ত্র: মুসলিম বিজ্ঞানী ও মনীষী আবুল কাশেম আল ইরাকি প্রথম ধাতুর পরিবর্তন সম্পর্কে ধারণা দেন।

জ্যোতির্বিদ্যা: জ্যোতির্বিদ্যা হলো মহাকাশ সম্পর্কিত বিজ্ঞান। গ্রহ, নক্ষত্র, চন্দ্র ও সূর্য সম্পর্কিত আলোচনা। এ বিষয়ে মুসলিম মনীষীদের অবদান অপরিসীম। এ বিষয়ে যারা অবদান রেখেছেন, তাদের মধ্যে আল-মনসুর, আল-মামুন, আবু-মাশার, আল-খারেজমি, আবুল-হাসান অন্যতম। 

মানচিত্রের ধারণা: বিশ্বে প্রথম মানচিত্রের ধারণা দেন মুসলিম মনীষী আল ইদরিস। পরে এর ওপরে ভিত্তি করেই বিশ্বে মানচিত্রের প্রতিকৃতি হিসেবে স্বীকৃত হয়। বর্ষপঞ্জি ও নক্ষত্র বিষয়ে প্রথমে ধারণা দেন ওমর খৈয়াম। পরে আল-বাত্তানি প্রথম চার্ট তৈরি করেন। প্রথম জ্যামিতিক গণনার সাহায্যে যেকোনো দুটি স্থানের মধ্যে দূরত্ব নির্ণয় করেন বিজ্ঞান ও গণিত শাস্ত্রের অন্যতম মুখ ইবনুল হাইসাম।

লেখক: প্রাবন্ধিক

ফজরের পর ঘুমালে যে ক্ষতি হয়

প্রকাশ: ১৭ জানুয়ারি ২০২৫, ০৬:০০ পিএম
আপডেট: ১৬ জানুয়ারি ২০২৫, ০২:০৬ পিএম
ফজরের পর ঘুমালে যে ক্ষতি হয়
ঘুমন্ত বালকের ছবি। ইন্টারনেট

ঘুম আল্লাহর বিশেষ নেয়ামত। মানুষের শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার জন্য ঘুম অপরিহার্য। জীবনের ভারসাম্য রক্ষায় নির্ধারিত সময়ে ঘুমানো অত্যন্ত জরুরি। একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের জন্য দৈনিক ৭-৮ ঘণ্টা ঘুম আবশ্যক। ইসলাম মানুষের জীবনকে ভারসাম্যপূর্ণ রাখতে কাজ, ইবাদত এবং বিশ্রামের মধ্যে সমন্বয় করার নির্দেশ দিয়েছে। আল্লাহ বলেন, ‘তোমাদের ঘুমকে করেছি বিশ্রাম এবং রাতকে করেছি আবরণ।’ (সুরা নাবা, আয়াত: ৯-১০) 

ইসলামে ফজরের নামাজের পর ঘুমানো নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। কারণ এ সময়টিকে কাজ ও বরকতের সময় হিসেবে ধরা হয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘হে আল্লাহ, আমার উম্মতের জন্য সকালে বরকত দান করুন।’ (তিরমিজি, হাদিস: ১২১২)। এই হাদিস থেকে বোঝা যায়, ফজরের নামাজের পর কাজ বা ইবাদতে মনোযোগী হলে জীবনে বরকত বৃদ্ধি পায়। অন্যদিকে অতিরিক্ত ঘুম বা অলসতা এই বরকতের সুযোগ নষ্ট করে। আধুনিক জীবনযাপনের প্রবণতা হিসেবে অনেকেই রাত জেগে বিনোদন বা অপ্রয়োজনীয় কাজে সময় ব্যয় করে, যা ফজরের নামাজ আদায়ে ব্যাঘাত ঘটায় এবং বরকত কমে যায়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘রাতের প্রথম ভাগে ঘুমাও এবং শেষ ভাগে ইবাদতের জন্য জেগে ওঠো। কারণ, রাতের শেষভাগে ইবাদত বেশি ফজিলতপূর্ণ।’ (বুখারি, হাদিস: ১১২০) 

যথাসম্ভব রাতের প্রথম ভাগে ঘুমানোর অভ্যাস করা উচিত। আবু উমামা (রা.) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, ‘যে ব্যক্তি পবিত্র অবস্থায় বিছানায় আসে এবং আল্লাহর জিকির করে শোয়; এমনকি তার তন্দ্রা এসে পড়ে এবং রাতের যেকোনো সময় (ডানে-বামে) ফিরতে আল্লাহর কাছে দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণ কামনা করে, আল্লাহতায়ালা নিশ্চয় তাকে তা দান করেন।’ (তিরমিজি, হাদিস: ৩৫২৬)

ফজরের নামাজের পর রাসুলুল্লাহ (সা.) বিশেষ কিছু আমলের তাগিদ করেছেন। এই সময় দোয়া-দরুদ, তাসবিহ, তাহলিল, জিকির ও আল্লাহর স্মরণে কাটানোর জন্য উৎসাহিত করা হয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ফজরের নামাজ জামাতে আদায় করে, সূর্যোদয় পর্যন্ত নামাজের জায়গায় বসে আল্লাহর জিকিরে মশগুল থাকে, এরপর দুই রাকাত (ইশরাক) নামাজ আদায় করে, তার জন্য একটি হজ ও ওমরার পূর্ণ সওয়াব রয়েছে।’ (তিরিমিজি, হাদিস: ৫৮৬)

রাতে ঘুমানোর আগে আল্লাহর নাম স্মরণ করা এবং ইসতেগফার করা সুন্নত। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি রাতে আল্লাহর নাম স্মরণ না করে ঘুমায় এবং ফজরের সময় জেগে না উঠে, তার কানে শয়তান গিঁট বেঁধে দেয়।’ (বুখারি, হাদিস: ১১৪২)
ইসলামের নির্দেশনা অনুযায়ী সময়ের সঠিক ব্যবহার ও বরকত লাভের জন্য ফজরের পর ঘুমানোর বদলে কাজে মনোযোগী হওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

লেখক: শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

জীবনের নিরাপত্তায় ইসলামি অর্থনীতি

প্রকাশ: ১৭ জানুয়ারি ২০২৫, ০৯:০০ এএম
আপডেট: ১৬ জানুয়ারি ২০২৫, ০১:২৫ পিএম
জীবনের নিরাপত্তায় ইসলামি অর্থনীতি
ইসলামি বিভিন্ন আইকন দিয়ে বানানো ভেক্টর। ছবি : সংগৃহীত

মানুষের জীবনযাত্রায় বড় রকমের প্রয়োজন হয় অর্থনীতির। অর্থ হয়ে ওঠে বেঁচে থাকার অন্যতম পথ্য। এ অর্থই মানুষ, সমাজ ও রাষ্ট্রকে বুকটান দিয়ে দাঁড়াতে সাহস জোগায়। ইসলাম মানুষকে শিক্ষা দেয় হালাল অর্থে স্বাবলম্বী হতে। সঠিক পথে আয়-রোজগার করতে। ইসলাম সব বিষয়ে মানুষকে যে সুন্দর, শোভন জীবন উপহার দিয়েছে, কোনো ধর্ম বা মতবাদ এমন সুন্দর জীবন উপহার দিতে পারেনি। পারবেও না। 

বর্তমান পৃথিবীর সমাজতন্ত্র ও পুঁজিবাদ অর্থনৈতিক অভিশাপ। সমাজতন্ত্র স্বাধীন মানুষকে পরাধীন, যান্ত্রিক ও ইতর বস্তুতে পরিণত করে। পুঁজিবাদী অর্থনীতি মানুষকে বল্গাহীন স্বাধীন, নিপীড়ক, স্বার্থপর ও স্বেচ্ছাচারী করে তোলে। ইসলামি অর্থনীতি এই দুই মেরুর অর্থনীতি ব্যবস্থার মাঝে সমন্বয় সাধন করে সমৃদ্ধিশালী সর্বজনীন কল্যাণকামী ও সভ্য সমাজ বিনির্মাণে ভূমিকা পালন করে। অর্থনৈতিক সফলতা ও মুক্তি একমাত্র আল্লাহ প্রেরিত অভ্রান্ত সত্যের উৎস কোরআন ও সুন্নাহভিত্তিক ইসলামি অর্থনীতির মাঝেই নিহিত আছে। যেসব দেশ এখনো সমাজতন্ত্রের দাবিদার, তারা বহুবার পরিবর্তন, সংযোজন, সংশোধন করেও ফলবান হতে পারেনি। আর পুঁজিবাদের ইতিহাস তো শোষণ, নিপীড়ন, বঞ্চনা, অন্যায় যুদ্ধ ও সংঘাতের রক্তাক্ত ইতিহাস। পুঁজিবাদের দর্শন চরম ভোগবাদী ও ইন্দ্রিয়পরায়ণতার দর্শন। ইসলামি অর্থনীতির দর্শন হলো জনহিতকর, সুষম ও সর্বযুগোপযোগী দর্শন—যা আবহমানকাল থেকে মানবকল্যাণে অবদান রেখে আসছে।

পুঁজিবাদ: বর্তমান বিশ্বে রাজনীতি ও অর্থনীতির মূল নিয়ন্ত্রক পুঁজিবাদগোষ্ঠী। বিশ্বের অর্থনৈতিক সমস্যার সমাধানের কথা বলে পুঁজিবাদীরা যে পরিকল্পনা বা কর্মসূচি মানব বিশ্বের সামনে উপস্থাপন করেছে, এতে মানুষ সাময়িক উপকার দেখলেও এসবের গভীরে যে ‘অ্যালোপ্যাথিক’ ওষুধের মতো দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতির কারণগুলো লুকিয়ে আছে, তা আমরা অনেকেই সাধারণ চোখে দেখতে পাচ্ছি না। পুঁজিবাদী অর্থনীতির প্রধান ক্ষতিকর দিক হলো, অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বিত্তশালীদের সঙ্গে বিত্তহীনদের আকাশ-পাতাল ব্যবধান। 
পুঁজিবাদের চারটি প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো—

  • ব্যক্তির সম্পত্তিতে অন্য কারও প্রাপ্য বা অধিকার নেই। 
  • অর্থোপার্জনে যেকোনো পথ অবলম্বন করা যাবে। 
  • মালিক ইচ্ছামতো সম্পদ খরচ করতে পারবে। 
  • ইচ্ছামতো সম্পদ সঞ্চয় করা যাবে। 

 

মোটকথা, ব্যক্তি স্বার্থটাই পুঁজিবাদী অর্থনীতির প্রধান বৈশিষ্ট্য। পুঁজিবাদের থিউরিতে ব্যবসা আর সুদে কোনো পার্থক্য নেই। সবাইকে স্মরণ রাখতে হবে, পুঁজিবাদ আর সুদভিত্তিক অর্থনীতির পোশাক কিংবা সাজসজ্জা দেখতে চমকপ্রদ হলেও তা মানুষের জন্য দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতিকর। 

আরও পড়ুন: যে তিন কাজে দেরি করতে নিষেধ করেছেন নবিজি (সা.)

সমাজতন্ত্র: কমিউনিজমের জনক বলে খ্যাত কার্ল মার্ক্স মূলত বস্তুবাদ আর ভাববাদের মাঝে দ্বান্দ্বিক ছিলেন। কার্ল মার্ক্স পুঁজিবাদবিরোধী চিন্তাচেতনা ও বস্তুবাদের ভিত্তিতে এক নব্য অর্থনৈতিক মতবাদ কমিউনিজমের জন্ম দিয়েছেন। কমিউনিজমের ইশতেহার হলো— অর্থোপার্জনের সব পথ ও পন্থা সমাজের সম্মিলিত মালিকানায় থাকবে। কোনো কিছু ব্যক্তিগত ইচ্ছায় ব্যবহার কিংবা ব্যবহারের অধিকার কারও থাকবে না। ব্যক্তিগত জীবনের ইচ্ছা, কর্ম—সবই হবে রাষ্ট্রের জন্য। প্রত্যেকের জীবনযাপনের প্রয়োজনীয় উপকরণাদি দেবে সরকার। ব্যক্তি সরকারের নির্দেশে যেকোনো কাজ করতে বাধ্য। এই ইশতেহার প্রকাশের পরপরই কার্ল মার্ক্স চিন্তা ‘কমিউনিস্ট’ হিসেবে বিশ্বব্যাপী পরিচিত লাভ করে। 
কার্ল মার্ক্সের চিন্তাচেতনার সঙ্গে বিশ্বের মার্ক্সবাদীদের বক্তব্য ভিন্ন হোক কিংবা অভিন্ন, আজ আমরা বলতে বাধ্য যে, মার্ক্সবাদ ব্যর্থ হয়েছে মানুষের মৌলিক সমস্যার সমাধান দিতে। কার্ল মার্ক্স এত নিবেদিত হয়েও ব্যর্থ হলেন এ জন্য যে, সসীম জ্ঞানের গবেষণা ত্রুটিমুক্ত নয়। অসীম জ্ঞান ছাড়া সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। কার্ল মার্ক্স মানুষের অন্ন, বাসস্থান, বস্তুর সমস্যার সমাধানের কথা বলেছেন, কিন্তু তিনি বুঝতে পারেননি ভাত খেয়ে ওষুধ সেবনের পর কাপড় গায়ে দিয়ে যে মানুষের মন একটু আতর কিংবা সুগন্ধি ব্যবহার করতে চায়। এই মন চাওয়াটাকে তিনি আবেগ কিংবা অপ্রয়োজনীয় বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। 

ইসলাম: ইসলামি অর্থনীতির মূল ভিত্তি কোরআন-হাদিস মোতাবেক সর্বক্ষেত্রে ইনসাফসম্মত বণ্টন। ইসলামি অর্থনীতিতে আবেগ কিংবা স্বার্থপরতা কাজ করেনি। ইসলাম মানুষের বাস্তবিক অবস্থার ওপর ভিত্তি করে প্রতিটি নীতি ও কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। ব্যক্তিকে পরিপূর্ণ স্বাভাবিক ও ব্যক্তিগত অধিকার দিয়ে সম্পদ ব্যবহারের ভারসাম্য রক্ষার নিয়মনীতি দিয়েছে। আধুনিক যুগে ইসলামি অর্থব্যবস্থা কায়েম করা হলে বিশ্বে ফিরে আসবে শান্তি, সমৃদ্ধি ও প্রগতি। 

ইসলাম যে অর্থনীতিতে সব মতবাদকে ছাড়িয়ে ছাপিয়ে, এর উদাহরণ মিলবে ইসলামের নবি মুহাম্মাদ (সা.)-এর জীবনকালে। রাসুলুল্লাহ (সা.) যখন মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করেন, তখন মদিনাবাসী ছিল কৃষক। অর্থনীতিতে দরিদ্র। শিক্ষায় জ্ঞানহীন। একটা সময় তারা মুহাম্মাদ (সা.)-এর সাহচর্য পেয়ে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মানুষ হয়ে উঠে। পৃথিবীর ইতিহাসে তারা হয় অত্যুজ্জ্বল নক্ষত্র। গরিব-কৃষক-মজদুর সমাজ অর্থনীতিতে হয় স্বাবলম্বী। মদিনাকে গড়ে তোলে অর্থনীতিতে স্বাবলম্বী ও পৃথিবীবাসীর জন্য মাইলফলক রূপে। 

অর্থনীতিতে সফল সমৃদ্ধি পেতে সেসময় ইসলামের নবি মুহাম্মাদ (সা.) দেন ১০ দফা। এই ১০ দফা অনুযায়ী বিশ্বের অর্থনীতি সাজাতে পারলে, বিশ্ব পাবে অর্থনীতিতে সুসজ্জিত নতুন এক মাত্রা। মানুষ পাবে শাসন-শোষণ থেকে মুক্তি। দারিদ্র্য থেকে মুক্তি। ১০ দফা হলো—

  • হালাল উপায়ে উপার্জন ও হারাম পথ বর্জন।
  • সুদ বর্জন।
  • ব্যবসায়িক অসাধুতা উচ্ছেদ।
  • জাকাত ব্যবস্থার প্রবর্তন।
  • বায়তুল মাল প্রতিষ্ঠা।
  • মানবিক শ্রমনীতির প্রবর্তন।
  • ওশরের প্রবর্তন ও ভূমিস্বত্ব ব্যবস্থার ইসলামিকরণ।
  • উত্তরাধিকার ব্যবস্থার যৌক্তিক রূপদান।
  • রাষ্ট্রের ন্যায়সংগত হস্তক্ষেপ বিধান।
  • নিরাপত্তাব্যবস্থার প্রবর্তন।

 

লেখক: আলেম ও সাংবাদিক

ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন পড়ার ফজিলত

প্রকাশ: ১৬ জানুয়ারি ২০২৫, ০৬:০০ পিএম
আপডেট: ১৬ জানুয়ারি ২০২৫, ১০:৫২ এএম
ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন পড়ার ফজিলত
আরবিতে ‘ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন’ লেখা ছবি। ইন্টারনেট

পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘আমি অবশ্যই তোমাদের পরীক্ষা করব কিছু ভয়-ভীতি দ্বারা, কখনো ক্ষুধা দ্বারা, কখনো জীবন-সম্পদ ও ফল-ফসলের ক্ষতি দ্বারা। সুসংবাদ শোনাও তাদের, যারা এসব অবস্থায় সবরের পরিচয় দেয়।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৫৫) 

বিপদ আসলে মানুষ কী করবে, সেই শিক্ষাও আল্লাহতায়ালা কোরআন মাজিদে দিয়েছেন। আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই যারা বিপদকালে বলে থাকে, ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন (আমরা আল্লাহরই আর আমরা তাঁরই দিকে প্রত্যাবর্তনকারী)।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৫৬)

আমাদের জীবনে বিপদ আসবেই, আর সেই বিপদ এলে ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন পড়তে হবে। এটা কোরআনের কথা। 

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে মুসলিম কোনো বিপদে আক্রান্ত হয়ে আল্লাহর নির্দেশিত দোয়া ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন পড়ে, এরপর বলবে ‘আল্লাহুম্মা আজুরনি ফি মুছিবাতি ওয়াখলুফলি খয়রম মিনহুমা’ আল্লাহ অবশ্যই ওই বিপদের তুলনায় তাকে উত্তম প্রতিদান দেবেন।’ (মুসলিম, হাদিস: ৯১৮)

আরও পড়ুন: গোসলের আগে মৃতব্যক্তির শরীর চাদর দিয়ে ঢাকতে হবে?

এই হাদিসের যিনি রাবি বা বর্ণনাকারী, তার বিষয়টি বেশ আশ্চর্যের। উম্মে সালামা (রা.) এই হাদিসটি বর্ণনা করেছেন। তার স্বামী ছিলেন আবু সালামা (রা.)। তিনি ইন্তেকাল করলে আল্লাহুর রাসুল (সা.) উম্মে সালামাকে হাদিসটা শোনান এবং এই দোয়ার আমল করতে। উম্মে সালামার ধারণা ছিল, তার স্বামীর চেয়ে উত্তম কোনো স্বামী হতেই পারে না। সুতরাং এ দোয়া পড়ে লাভ কী? তবু রাসুলের কথা, তিনি আমল করলেন। দোয়াটি পড়লেন। ফলে আল্লাহ উম্মে সালামাকে প্রতিদান দিয়েছেন, মহা এক প্রতিদান। যা তার কল্পনাতেও ছিল না। তিনি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর স্ত্রী হওয়ার গৌরব অর্জন করেন। বিপদ এলে ধৈর্য ধরতে হবে। চিন্তিত হব না। উল্লিখিত দোয়া পড়তে হবে। 


লেখক: শিক্ষক, মাদরাসাতুল হেরা, ঢাকা