ঢাকা ৫ মাঘ ১৪৩১, রোববার, ১৯ জানুয়ারি ২০২৫

সিরিয়া নিয়ে নবিজির (সা.) ৬ ভবিষ্যদ্বাণী

প্রকাশ: ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:৩০ এএম
আপডেট: ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:১৬ পিএম
সিরিয়া নিয়ে নবিজির (সা.) ৬ ভবিষ্যদ্বাণী
ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত সিরিয়ার দামেস্কে অবস্থিত উমাইয়া মসজিদ

রাসুলুল্লাহ (সা.) শামের জন্য বরকতের দোয়া করেছেন। শামকে ‘আমাদের শাম’ বলে উল্লেখ করেছেন। ইবনে উমর (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) একবার দোয়া করলেন, ‘হে আল্লাহ, আমাদের শামে বরকত দাও, আমাদের ইয়ামেনে বরকত দাও। তখন উপস্থিত সাহাবিরা বলল, আমাদের নিজেদের জন্যও বরকতের দোয়া করুন। বর্ণনাকারী বলেন, তখন রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, সেখানে তো রয়েছে ভূমিকম্প ও ফেতনা-ফ্যাসাদ। শয়তানের শিং সেখান থেকেই বের হবে।’ (বুখারি, হাদিস: ৯৯০) 


জায়েদ বিন সাবেত (রা.) বলেন, ‘একবার রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, শাম কতই না কল্যাণময়! শাম কতই না কল্যাণময়! আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসুল, শাম কেন এত কল্যাণকর? রাসুলুল্লাহ বললেন, রহমানের ফেরেশতারা তার ওপরে ডানা বিছিয়ে রাখেন।’ (তিরিমিজি, হাদিস: ৩৯৫৪)
সিরিয়া, ইরাক, ফিলিস্তিন, জর্ডান প্রভৃতি অঞ্চলকে সে সময় ‘মুলকে শাম’ বলা হতো। বিশ্বজুড়ে এখন আলোচনার বিষয় সিরিয়া। সিরিয়ার নাম শুনলেই এই প্রজন্মের কল্পনায় ভাসে যুদ্ধবিধ্বস্ত এক নগরীর ছবি। যেখানে তীব্র খাদ্য সংকট, ভঙ্গুর অর্থনীতি, বিপর্যস্ত জনজীবন, শরণার্থী মানুষের মিছিল ও বিশ্ব মোড়লদের যুদ্ধ যুদ্ধ ধ্বংসাত্মক খেলা। বিশ্ব রাজনীতির ইতিহাসেও সিরিয়া সব সময়ই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল। সাড়ে চৌদ্দ শত বছর আগে রাসুলুল্লাহ (সা.) সিরিয়া নিয়ে অনেক ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন। এখানে ছয়টি ভবিষ্যদ্বাণী উল্লেখ করা হলো—

কোরআনের ঘাঁটি হবে সিরিয়া 
প্রসিদ্ধ সাহাবি আমর ইবনে আস (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আমি একদিন স্বপ্নে দেখলাম, কোরআনকে আমার বালিশের নিচ থেকে তুলে নেওয়া হয়েছে। অতঃপর আমি এর দিকে চেয়ে আছি, হঠাৎ দেখি সেটি একটি  উজ্জ্বল আলোর বস্তুতে পরিণত হলো। আর তাকে রাখা হলো শামদেশে। (এতটুকু বর্ণনার পর রাসুলুল্লাহ (সা.) উপস্থিত সাহাবিদের উদ্দেশ করে) বলেন, যখন পৃথিবীময় ফেতনা বিস্তার লাভ করবে, তখন ইমান থাকবে শামদেশে। অর্থাৎ শামবাসীদের কাছেই থাকবে ইমানের আলো, তারাই ইসলাম ও কোরআনকে সব ধরনের ভ্রান্তি থেকে রক্ষা করবে।’ (আল-মুসতারেক, হাদিস: ৮৫৫৪)

খাঁটি মুমিনদের বাসস্থান
আলি (রা.) সম্পর্কে হজরত শুরাইহ ইবনে উবাইদ (রহ.) বর্ণনা করেন, ‘এক সময় আলি (রা.) ইরাকে থাকতেন। সেই সময় তাকে কেউ একজন বলল, আপনি শামবাসীদের জন্য বদদোয়া করুন। তখন তিনি বলেন, না, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, শাম হলো খাঁটি মুমিনদের বাসস্থান। তারা আল্লাহর খাস বা বিশেষ বান্দা। তারা এক সময়ে একসঙ্গে ৪০ জন থাকেন। যখনই তাদের একজন মৃত্যুবরণ করেন, আল্লাহ তদস্থলে আরেকজনকে বসিয়ে দেন। তাদের উছিলায় বৃষ্টি হয়, শত্রুর ওপর বিজয়ও লাভ করে। তাদের উছিলায় এক সময় শামবাসীদের থেকে আজাব উঠিয়ে নেওয়া হবে।’ (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস: ৮৬৯)

নিরাপদ আশ্রয়
দুনিয়াজুড়ে যখন ফেতনা ও বিপদাপদ বেড়ে যাবে, তখন শামই হবে একমাত্র নিরাপদ আশ্রয়স্থল। সালেম ইবনে আব্দুল্লাহ তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘অচিরেই তোমাদের দিকে হাজরামাউতের দিক থেকে একটি আগুন ধেয়ে আসবে। উপস্থিত সাহাবিরা জিজ্ঞাসা করল, তখন আমাদের করণীয় কী হে আল্লাহর রাসুল। রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, তখন তোমরা শামদেশের দিকে গমন করবে এবং সেখানেই আঁকড়ে থাকবে।’ (তিরমিজি, হাদিস: ২২১৭)

মুসলিমদের ঘাঁটি
আবু দারদা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যুদ্ধের দিন মুসলিমদের শিবির স্থাপন করা হবে গুতা নামক শহরে। যা সিরিয়ার সর্বোত্তম শহর দামেস্কের পাশে অবস্থিত।’ (আবু দাউদ, হাদিস: ৪২৯৮)

কিয়ামতের আগে ইসা (আ.)-এর অবতরণের স্থান
ইসা (আ.)-কে আল্লাহতায়ালা দুনিয়া থেকে উঠিয়ে নিয়েছিলেন। তিনি আকাশে আছেন। কিয়ামতের আগে তিনি দুনিয়াতে নেমে আসবেন। তাঁর অবতরণের স্থান হবে সিরিয়া। নাওয়াস ইবনে সিময়ান (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহতায়ালা ইসা (আ.)-কে দুনিয়াতে পাঠাবেন। তিনি দুজন সাদা কাপড় পরা ফেরেশতার কাঁধের ওপর ভর করে দামেস্কের শুভ্র-সফেদ উজ্জ্বল মিনারে অবতরণ করবেন।’ (মুসলিম, হাদিস: ৭৫৬০)

শাম হবে হাশরের ময়দান
হাশরের ময়দান হবে বর্তমান শাম অঞ্চলটি। মুসনাদে আহমাদে হজরত বাহজা থেকে একটি রেওয়াত বর্ণনা করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) সিরিয়ার দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, সেটিই হবে তোমাদের জড়ো হওয়ার ময়দান। হাকিম বিন মুয়াবিয়া (রহ.) তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘সেখানেই তোমাদের হাশর হবে (তোমরা একত্র হবে)। সেখানেই তোমাদের হাশর হবে। সেখানেই তোমাদের হাশর হবে। তখন লোকেরা আরোহী, পদাতিক ও অধঃমুখী এই তিনটি দলে বিভক্ত হয়ে যাবে। ইবনে বুকাইর (রহ.) বলেন, সেখানেই তোমাদের হাশর হবে বলার সময় তিনি শাম দেশের দিকে ইঙ্গিত করেছেন।’ (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস: ২০০৩১)

লেখক: আলেম ও মাদরাসা শিক্ষক

উপদেশ গ্রহণের উপকারিতা

প্রকাশ: ১৯ জানুয়ারি ২০২৫, ০৬:০০ পিএম
আপডেট: ১৯ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০৫ পিএম
উপদেশ গ্রহণের উপকারিতা
শিল্পীর তুলিতে আঁকা একজন আলোচক ও শ্রোতাদের ছবি। সংগৃহীত

ইসলামে উপদেশ গ্রহণের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। আল্লাহতায়ালা রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর মাধ্যমে মানুষকে শুনিয়েছেন কোরআনের বাণী। দিয়েছেন উপদেশ। পরিশুদ্ধ জীবন গঠনে উপদেশ গ্রহণের বিকল্প নেই। এখানে উপদেশ গ্রহণের গুরুত্ব ও উপকারিতা তুলে ধরা হলো—

বুদ্ধিমানরা উপদেশ গ্রহণ করে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘যে ব্যক্তি জানে যে, তোমার প্রতিপালকের কাছ থেকে তোমার প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে তা সত্য, সে কি ওই ব্যক্তির সমান যে অন্ধ? বুদ্ধিমান লোকেরাই উপদেশ গ্রহণ করে থাকে।’ (সুরা রাদ, আয়াত : ১৯)

উপদেশগ্রহণকারীর প্রতি থাকে আল্লাহর দয়া ও অনুগ্রহ। পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহর ইচ্ছে ছাড়া কেউ উপদেশ গ্রহণ করবে না। তিনিই ভয়ের যোগ্য, তিনিই ক্ষমা করার অধিকারী।’ (সুরা  মুদ্দাসিসর, আয়াত: ৫৬)

আল্লাহর নিদর্শন গ্রহণ ও নির্দেশনা মেনে চলা মুমিনদের গুণ। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তুমি তো এর আগে কোনো কিতাব পাঠ করনি, আর তুমি নিজ হাতে কোনো কিতাব লেখনি, এমন হলে মিথ্যাবাদীরা সন্দেহ পোষণ করত। বরং যাদের জ্ঞান দেওয়া হয়েছে, তাদের অন্তরে তা (কোরআন) এক সুস্পষ্ট নিদর্শন। অন্যায়কারীরা ছাড়া আমার নিদর্শনাবলি কেউ অস্বীকার করে না।’ (সুরা আনকাবুত, আয়াত: ৪৮-৪৯)

যারা সব সময় আল্লাহকে স্মরণ করে তারা আল্লাহর প্রিয় বান্দা। আল্লাহ তাদের পছন্দ করেন। তাদের রক্ষা করেন জাহান্নামের আজাব থেকে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘যারা দাঁড়িয়ে, বসে ও শুয়ে আল্লাহর স্মরণ করে এবং আকাশমণ্ডল ও পৃথিবীর সৃষ্টি সম্পর্কে চিন্তা করে আর বলে, হে আমাদের প্রতিপালক, আপনি এটা নিরর্থক সৃষ্টি করেননি। আপনি পবিত্র, আপনি আমাদেরকে জাহান্নামের শাস্তি থেকে রক্ষা করুন।’ (সুরা  আলে ইমরান, আয়াত: ১৯১)

উপদেশ মুমিনদের জীবন বদলে দেয়। মুমিনদের আল্লাহমুখী করে। পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘আপনি তাদের উপদেশ দিতে থাকুন, কেননা উপদেশ মুমিনদের উপকারে আসবে।’ (সুরা জারিয়াত, আয়াত: ৫৫)

আবু রুকাইয়া তামিম বিন আউস দারি (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘দ্বীন হচ্ছে সদুপদেশ বা কল্যাণ কামনা। আমরা জিজ্ঞাসা করলাম, কার জন্য? তিনি বললেন, আল্লাহর জন্য, তাঁর কিতাবের জন্য, তাঁর রাসুলের জন্য, মুসলমানের নেতার জন্য এবং সর্বসাধারণ মুসলিমের জন্য।’ (মুসলিম, হাদিস: ২০৫)

মুসলিম হিসেবে পৃথিবীর সব মুসলমানের কল্যাণ কামনা করতে হবে। কারও জন্য অকল্যাণ চাওয়া যাবে না। কারও অকল্যাণ হয়; এমন কাজ করা যাবে না। জারির ইবনে আবদুল্লাহ আল-বাজালি (রা.) বলেন, ‘আমি আল্লাহর রাসুল (সা.)-এর কাছে বাইয়াত গ্রহণ করেছি—নামাজ কায়েম করার, জাকাত প্রদান করার এবং সব মুসলিমের মঙ্গল কামনা করার।’ (বুখারি, হাদিস: ৫৭)

লেখক: আলেম ও মাদরাসা শিক্ষক 

ইসলামে অশুভ লক্ষণ

প্রকাশ: ১৯ জানুয়ারি ২০২৫, ০৯:০০ এএম
আপডেট: ১৯ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০৫ পিএম
ইসলামে অশুভ লক্ষণ
প্রতীকী ছবি

ইসলামপূর্ব অন্ধকার যুগে মানুষের জীবন ছিল কুসংস্কারাচ্ছন্ন। তারা খোদা প্রদত্ত ধর্ম থেকে নিজেদের গুটিয়ে নানা কুসংস্কারে জড়িয়ে পড়েছিল। ইসলাম আগমন করেই এসব কুসংস্কারের মূলে কুঠারাঘাত করেছে। এগুলোর ভ্রান্তি ও কুফল মানুষের কাছে সুস্পষ্ট করে দিয়েছে। সত্যের প্রতি আহ্বান করেছে। বিশুদ্ধ চেতনা ও সংস্কৃতির গোড়াপত্তন করেছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে ঘোষণা করেছেন, কুপ্রথা কখনো আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত বিষয় পরিবর্তন করতে পারে না। প্রকৃতপক্ষে সবকিছুর নিয়ন্ত্রক একমাত্র আল্লাহ। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘সংক্রামক রোগ, কুলক্ষণ বলতে কিছু নেই। প্যাঁচা এবং সফর মাসেও কোনো কুলক্ষণ কিংবা অশুভ লক্ষণ নেই।’ (বুখারি, হাদিস: ৫৭৫৭) 

অশুভ লক্ষণ গ্রহণ করা শিরক
ইসলামে অশুভ লক্ষণ গ্রহণের বৈধতা নেই। রাসুলুল্লাহ (সা.) অশুভ লক্ষণ গ্রহণ করা শিরক বলে আখ্যায়িত করেছেন। আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘অশুভ লক্ষণ গ্রহণ করা শিরক। তিনি এ কথাটি তিনবার বলেছেন। আমাদের প্রত্যেকের মনে কুলক্ষণের ধারণা জন্ম হয় (ফলে আমরা দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়ে যাই)। আল্লাহর ওপর পরিপূর্ণ ভরসা রাখলে তিনি তা আমাদের অন্তর থেকে দূরীভূত করে দেবেন।’ (জামে তিরমিজি, হাদিস: ১৬১৪)

অশুভ লক্ষণকে শিরক বলার কারণ হলো, এটা মুশরিকদের কুপ্রথার অন্তর্ভুক্ত। আর যদি কেউ এমনটা ঘটবে বলে নিশ্চিত ধারণা করে, তবে তা কুফর হিসেবে গণ্য হবে। কুবাইসা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘পাখি উড়ানো, ঢিল ছোড়া এবং কোনো কিছুকে অলক্ষুণে ধারণা করা শিরকের পর্যায়ভুক্ত।’ (আবু দাউদ, হাদিস: ৩৯০৭)

হাদিসে ‘পাখি উড়ানো’ দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, জাহেলি যুগে খাঁচায় একটা পাখি থাকত। এর সামনে লিখিত কতগুলো কাগজের টুকরো রাখা হতো। অতঃপর পাখিটি ছেড়ে দেওয়ার পর সে কাগজের যে টুকরোটি উঠাত, তার লেখা অনুযায়ী মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন হয় বলে তাদের বদ্ধমূল বিশ্বাস ছিল। যা সুস্পষ্ট শিরক।

শুভ লক্ষণ গ্রহণ করা বৈধ
শুভ লক্ষণ গ্রহণের বৈধতা দিয়েছে ইসলাম। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর হাদিস থেকেও এটা প্রমাণিত। উরওয়া ইবনে আমের (রা.) বলেন, ‘একবার রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর এক মজলিসে কুলক্ষণ সম্পর্কে আলোচনা ওঠার পর তিনি বললেন, কোনো বস্তু থেকে শুভ লক্ষণ গ্রহণ করাটাই উত্তম। তোমাদের কেউ যদি কোনো অবাঞ্ছিত, অনাকাঙ্ক্ষিত ও অপছন্দনীয় বিষয় দেখে, সে যেন এটা বলে, ‘হে আল্লাহ, ভালো কাজ আপনার দ্বারাই সংঘটিত হয়। মন্দও আপনিই দূরীভূত করেন। আল্লাহর সাহায্য ছাড়া পাপমুক্ত হওয়া এবং ইবাদতে লিপ্ত হওয়ার শক্তি-সামর্থ্য কারও নেই।’ (আবু দাউদ, হাদিস: ৩৯১৯) 

লেখক: মুহাদ্দিস, জামিয়া আরাবিয়া দারুস সুন্নাহ, রাজাবাড়ী

মুচকি হাসিও সদকা

প্রকাশ: ১৮ জানুয়ারি ২০২৫, ০৬:০০ পিএম
আপডেট: ১৯ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০৫ পিএম
মুচকি হাসিও সদকা
দুজন ব্যক্তির হাস্যোজ্জ্বল ছবি। এআই

মনকে প্রফুল্ল ও সতেজ রাখতে মুচকি হাসির বিকল্প নেই। হাসি পরিশুদ্ধ করে মানুষের হৃদয়। দেহে রক্ত প্রবাহ বাড়িয়ে শরীর চাঙা রাখে। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, হাসি মানুষকে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকিমুক্ত জীবনযাপন উপহার দেয়। মানুষকে আকৃষ্ট করার সহজ, সুন্দর ও পরিশ্রমহীন কাজ হচ্ছে, কারও দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসা। 

আপনি যখন কারও দিকে তাকিয়ে হাস্যোজ্জ্বল চেহারা নিয়ে একটু মুচকি হাসবেন, তখন আপনার প্রতি তার হৃদয়ে ভালোবাসা বৃদ্ধি পাবে। সম্পর্কের দেয়াল মজবুত হবে। মানুষের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক বৃদ্ধিতে হাসি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। 

হাসিই মানুষের সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক সহজ করে দেয়। কঠোর হৃদয়ের লোকেরও মন নরম হয়। আল্লাহ বলেন, ‘বহু মুখমণ্ডল সেদিন উজ্জ্বল হবে, সহাস্য ও প্রফুল্ল।’ (সুরা আবাসা, আয়াত: ৩৮-৩৯) 

মুহাম্মাদ (সা.) হেসেছেন—মুচকি হাসি। কেউ অকারণে তাঁকে মুখ গোমড়া হতে দেখেননি। জারির ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আমার ইসলাম গ্রহণের পর থেকে রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাকে (তাঁর কাছে আসতে) বাধা দেননি। আর আমাকে দেখা মাত্রই তিনি হাসতেন।’ (তিরমিজি, ১৭১) 

মুচকি হাসি দিলে সদকার সওয়াব পাওয়া যায়। রাসুলুল্লাহ (সা.) মুচকি হাসি সদকা আখ্যা দিয়ে বলেছেন, ‘তোমার হাস্যোজ্জ্বল মুখ নিয়ে তোমার ভাইয়ের সামনে উপস্থিত হওয়া তোমার জন্য সদকাস্বরূপ।’ (তিরমিজি, ১৯৫৬)

উচ্চৈঃস্বরে হাসা উচিত নয়। উচ্চৈঃস্বরে হাসলে ভেতরাত্মা মরে যায়। আখেরাতের ব্যাপারে উদাসীনতা সৃষ্টি হয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) কম হাসতেন, বেশি কাঁদতেন। মানুষকে কম হাসতে ও বেশি করে কাঁদতে উপদেশ দিয়েছেন তিনি। 

আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আমি যা জানি তোমরা যদি তা জানতে, তবে তোমরা খুব কমই হাসতে এবং খুব বেশি কাঁদতে।’ (বুখারি, ৬৪৮৫)

সদা হাস্যোজ্জ্বল থাকা, কোনো মুমিনের সঙ্গে দেখা হলে তার সঙ্গে হাস্যোজ্জ্বল মুখে সাক্ষাৎ করা মুমিনের বৈশিষ্ট্য। আবদুল্লাহ ইবনুল হারিস ইবনু জাজয়ি (রা.) বলেন, ‘আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর চেয়ে অধিক মুচকি হাস্যকারী ব্যক্তি কাউকে দেখিনি।’ (তিরমিজি, ১৬৮)

সদকায় অনেক সওয়াব রয়েছে। এতে বিপদাপদ দূর হয়। আবু জার (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাকে বলেছেন, ‘ভালো কোনো কিছু দান করা হীন মনে করে না, এমনকি হোক সেটা ভাইয়ের সঙ্গে হাসিমুখে সাক্ষাৎ দেওয়া।’ (মুসলিম, ৬৫৮৪)

লেখক: কবি ও গল্পকার

জ্ঞান-বিজ্ঞানে মুসলিমদের অবদান

প্রকাশ: ১৮ জানুয়ারি ২০২৫, ০৯:০০ এএম
আপডেট: ১৯ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০৫ পিএম
জ্ঞান-বিজ্ঞানে মুসলিমদের অবদান
প্রতীকী ছবি। এআই

ইসলামের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় শিক্ষা। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর ওপর নাজিল হওয়া প্রথম শব্দ ছিল ইকরা বা পড়ো। পড়ার মাধমে মানুষ জানতে পারে। হতে পারে বিদ্বান। জ্ঞান লাভ করতে পারে আল্লাহর অভিনব সৃষ্টির রহস্য সম্পর্কে। পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘পড়ো তোমার প্রতিপালকের নামে যিনি সৃষ্টি করেছেন, সৃষ্টি করেছেন মানুষকে জমাট-বাঁধা রক্তপিণ্ড থেকে। পড়ো, আর তোমার রব বড়ই অনুগ্রহশীল। যিনি শিক্ষা দিয়েছেন কলম দিয়ে, শিক্ষা দিয়েছেন মানুষকে যা সে জানত না।’ (সুরা আলাক, ১-৫)

মুহাম্মাদ (সা.)-এর নবুয়তপ্রাপ্তির পর ধীরে ধীরে পৃথিবীব্যাপী ইসলামের আলো ছড়িয়ে পড়ে। চার খলিফার হাত ধরে অনেক দেশে ইসলামের পতাকা উড়ে। পাশাপাশি জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চায়ও মুসলিমরা ব্যাপকভাবে এগিয়ে যেতে সক্ষম হয়। মুসলমানদের থেকে তৈরি হয় পৃথিবীবিখ্যাত ধর্মবেত্তা, সেনাপতি, ইতিহাসবেত্তা, বিজ্ঞানী, চিকিৎসক, মনীষী, জ্যোতিষীশাস্ত্রবিদ, রসায়নবিদ, পদার্থবিদসহ নানা শাখার জ্ঞানী-বিজ্ঞানী। 

ইসলামের ইতিহাসে প্রথম পদার্থবিজ্ঞানী ছিলেন আলি (রা.)। তিনি ছিলেন হাফেজ ও মুফাসসির। আলি (রা.) থেকেই আরব সভ্যতায় বিজ্ঞান গবেষণার সূচনা হয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) আলি (রা.) সম্পর্কে বলেন, ‘আমি জ্ঞানের নগরী, আর আলি সেই নগরীর দরজা।’ ইদরিস (আ.) প্রথম চিকিৎসাবিজ্ঞানী এবং মুহাম্মদ (সা.) শ্রেষ্ঠ চিকিৎসা বিজ্ঞানী। পবিত্র কোরআনের ৯৭টি সুরার ৩৫৫টি আয়াত চিকিৎসা সংশ্লিষ্ট। এ ছাড়া বুখারিতে ‘তিব্বুন নববি’ শীর্ষক অধ্যায়ে ৮০টি পরিচ্ছেদ রয়েছে। চিকিৎসাবিজ্ঞানে ইবনে সিনা, আল-রাজি, আল-হিন্দি, আত-তাবারি, ইবনে রুশদদের নাম উল্লেখযোগ্য। ইবনে সিনা চিকিৎসাশাস্ত্র, দর্শন, অঙ্কশাস্ত্র, জ্যোতির্বিদ্যা, জ্যামিতি, বীজগণিত প্রভৃতি বিষয়ে ব্যাপক অবদান রাখেন। তার গ্রন্থ ও প্রবন্ধ সংখ্যা ২৪৬। 

ওষুধশাস্ত্র: চিকিৎসার পাশাপাশি ওষুধ শাস্ত্রেও মুসলিমরা ব্যাপক অবদান রাখেন। ইবনে সিনার কানুন ফিততিব্ব, আল-রাজির কিতাবুল মানসুরি, আল বেরুনির কিতাব আস সায়দালা চিকিৎসাশাস্ত্রের আকরগ্রন্থ। 

হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা: মুহাম্মাদ (সা.) যুদ্ধকালে যে হাসপাতাল নির্মাণ করেছিলেন, তার ওপর ভিত্তি করে মুসলিম শাসকগোষ্ঠী চিকিৎসা, পরীক্ষা-নিরীক্ষা, গবেষণা ও ব্যবহারিক জ্ঞানচর্চার জন্য স্থায়ী হাসপাতাল গড়ে তোলেন। 

অস্ত্রোপচার: মুসলিম বিজ্ঞানী আল-রাজি সর্বপ্রথম অস্ত্রোপচারবিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। 

গণিতশাস্ত্র: মুসলিম গণিত শাস্ত্রবিদদের মধ্যে রয়েছে আল-খারেজমি, আল-কারখি, ওমর খৈয়াম প্রমুখ। আল-খারেজমি সংখ্যাবাচক চিহ্ন সম্পর্কে ধারণ দেন এবং দূরত্ব ও নির্ণয় বিষয়ে অবদান রেখেছেন ইবনুল হাইসাম। এ ছাড়া মুসলিম বিজ্ঞানী আল-ফারাবি সমুদ্র ও সূর্যের উচ্চতাবিষয়ক যন্ত্র আবিষ্কার করেন।

পদার্থবিজ্ঞান: পদার্থবিজ্ঞানে নানামুখী অবদান রেখেছেন আল-বেরুনি, আল-খারেজমি, ইবনুল হাইসাম প্রমুখ।

রসায়ন: বিজ্ঞানের প্রাণ বলা হয় রসায়নশাস্ত্র। রসায়নশাস্ত্রের জনক জাবের ইবনে হাইয়ান। এ ছাড়া বিভিন্ন মুসলিম মনীষী ও বিজ্ঞানী ব্যাপক অবদান রাখেন এ শাস্ত্রে। এদের মধ্যে খালিদ বিন ইয়াজিদ, জাকারিয়া আল-রাজি, আল জিলকাদ প্রমুখের নাম সবার আগে আসে। 

ধাতুশাস্ত্র: মুসলিম বিজ্ঞানী ও মনীষী আবুল কাশেম আল ইরাকি প্রথম ধাতুর পরিবর্তন সম্পর্কে ধারণা দেন।

জ্যোতির্বিদ্যা: জ্যোতির্বিদ্যা হলো মহাকাশ সম্পর্কিত বিজ্ঞান। গ্রহ, নক্ষত্র, চন্দ্র ও সূর্য সম্পর্কিত আলোচনা। এ বিষয়ে মুসলিম মনীষীদের অবদান অপরিসীম। এ বিষয়ে যারা অবদান রেখেছেন, তাদের মধ্যে আল-মনসুর, আল-মামুন, আবু-মাশার, আল-খারেজমি, আবুল-হাসান অন্যতম। 

মানচিত্রের ধারণা: বিশ্বে প্রথম মানচিত্রের ধারণা দেন মুসলিম মনীষী আল ইদরিস। পরে এর ওপরে ভিত্তি করেই বিশ্বে মানচিত্রের প্রতিকৃতি হিসেবে স্বীকৃত হয়। বর্ষপঞ্জি ও নক্ষত্র বিষয়ে প্রথমে ধারণা দেন ওমর খৈয়াম। পরে আল-বাত্তানি প্রথম চার্ট তৈরি করেন। প্রথম জ্যামিতিক গণনার সাহায্যে যেকোনো দুটি স্থানের মধ্যে দূরত্ব নির্ণয় করেন বিজ্ঞান ও গণিত শাস্ত্রের অন্যতম মুখ ইবনুল হাইসাম।

লেখক: প্রাবন্ধিক

ফজরের পর ঘুমালে যে ক্ষতি হয়

প্রকাশ: ১৭ জানুয়ারি ২০২৫, ০৬:০০ পিএম
আপডেট: ১৯ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০৫ পিএম
ফজরের পর ঘুমালে যে ক্ষতি হয়
ঘুমন্ত বালকের ছবি। ইন্টারনেট

ঘুম আল্লাহর বিশেষ নেয়ামত। মানুষের শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার জন্য ঘুম অপরিহার্য। জীবনের ভারসাম্য রক্ষায় নির্ধারিত সময়ে ঘুমানো অত্যন্ত জরুরি। একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের জন্য দৈনিক ৭-৮ ঘণ্টা ঘুম আবশ্যক। ইসলাম মানুষের জীবনকে ভারসাম্যপূর্ণ রাখতে কাজ, ইবাদত এবং বিশ্রামের মধ্যে সমন্বয় করার নির্দেশ দিয়েছে। আল্লাহ বলেন, ‘তোমাদের ঘুমকে করেছি বিশ্রাম এবং রাতকে করেছি আবরণ।’ (সুরা নাবা, আয়াত: ৯-১০) 

ইসলামে ফজরের নামাজের পর ঘুমানো নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। কারণ এ সময়টিকে কাজ ও বরকতের সময় হিসেবে ধরা হয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘হে আল্লাহ, আমার উম্মতের জন্য সকালে বরকত দান করুন।’ (তিরমিজি, হাদিস: ১২১২)। এই হাদিস থেকে বোঝা যায়, ফজরের নামাজের পর কাজ বা ইবাদতে মনোযোগী হলে জীবনে বরকত বৃদ্ধি পায়। অন্যদিকে অতিরিক্ত ঘুম বা অলসতা এই বরকতের সুযোগ নষ্ট করে। আধুনিক জীবনযাপনের প্রবণতা হিসেবে অনেকেই রাত জেগে বিনোদন বা অপ্রয়োজনীয় কাজে সময় ব্যয় করে, যা ফজরের নামাজ আদায়ে ব্যাঘাত ঘটায় এবং বরকত কমে যায়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘রাতের প্রথম ভাগে ঘুমাও এবং শেষ ভাগে ইবাদতের জন্য জেগে ওঠো। কারণ, রাতের শেষভাগে ইবাদত বেশি ফজিলতপূর্ণ।’ (বুখারি, হাদিস: ১১২০) 

যথাসম্ভব রাতের প্রথম ভাগে ঘুমানোর অভ্যাস করা উচিত। আবু উমামা (রা.) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, ‘যে ব্যক্তি পবিত্র অবস্থায় বিছানায় আসে এবং আল্লাহর জিকির করে শোয়; এমনকি তার তন্দ্রা এসে পড়ে এবং রাতের যেকোনো সময় (ডানে-বামে) ফিরতে আল্লাহর কাছে দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণ কামনা করে, আল্লাহতায়ালা নিশ্চয় তাকে তা দান করেন।’ (তিরমিজি, হাদিস: ৩৫২৬)

ফজরের নামাজের পর রাসুলুল্লাহ (সা.) বিশেষ কিছু আমলের তাগিদ করেছেন। এই সময় দোয়া-দরুদ, তাসবিহ, তাহলিল, জিকির ও আল্লাহর স্মরণে কাটানোর জন্য উৎসাহিত করা হয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ফজরের নামাজ জামাতে আদায় করে, সূর্যোদয় পর্যন্ত নামাজের জায়গায় বসে আল্লাহর জিকিরে মশগুল থাকে, এরপর দুই রাকাত (ইশরাক) নামাজ আদায় করে, তার জন্য একটি হজ ও ওমরার পূর্ণ সওয়াব রয়েছে।’ (তিরিমিজি, হাদিস: ৫৮৬)

রাতে ঘুমানোর আগে আল্লাহর নাম স্মরণ করা এবং ইসতেগফার করা সুন্নত। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি রাতে আল্লাহর নাম স্মরণ না করে ঘুমায় এবং ফজরের সময় জেগে না উঠে, তার কানে শয়তান গিঁট বেঁধে দেয়।’ (বুখারি, হাদিস: ১১৪২)
ইসলামের নির্দেশনা অনুযায়ী সময়ের সঠিক ব্যবহার ও বরকত লাভের জন্য ফজরের পর ঘুমানোর বদলে কাজে মনোযোগী হওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

লেখক: শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়