স্ত্রীর কাছে স্বামীর অনেক মর্যাদা রয়েছে। স্বামীকে আল্লাহও বহু সম্মান দিয়েছেন। আল্লাহর পরে স্বামীর আনুগত্য করতে বলেছেন। পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘পুরুষ নারীর কর্তা, আল্লাহ তাদের এককে অপরের ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন।’ (সুরা নিসা, আয়াত: ৩৪)
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘…আমি যদি কাউকে কারোর জন্য সিজদা করার আদেশ দিতাম, তা হলে স্ত্রীদের বলতাম তাদের স্বামীদের সিজদা করতে। কেননা আল্লাহতায়ালা স্ত্রীদের কাছে স্বামীদের বিশেষ হক দিয়েছেন।’ (মুসতাদরাকে হাকেম, হাদিস: ২৮১৭)
স্ত্রীর প্রতি স্বামীর যেমন দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে, তেমনি স্বামীর প্রতি স্ত্রীরও দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে। একজন আদর্শবান স্ত্রী অবশ্যই এগুলো পালন করবেন। স্বামীর প্রতি আনুগত্য স্ত্রীকে জান্নাতে নিয়ে যাবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘কোনো নারী যদি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করে, রমজানের রোজা রাখে, নিজের সতীত্ব রক্ষা করে এবং স্বামীর আনুগত্য করে, তা হলে তাকে (কিয়ামতের দিন) বলা হবে, যে দরজা দিয়ে ইচ্ছা; সেই দরজা দিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করো।’ (মুসনাদে আহমদ, হাদিস: ১৬৬)
স্বামীর প্রতি পূর্ণ আনুগত্য ও শ্রদ্ধা রাখতে হবে। সদ্ব্যবহার করতে হবে। হাসিমুখে কথা বলতে হবে। স্বামী খুশি হয় এমন কাজ করতে হবে। স্বামীর জন্য নিজেকে পরিপাটি করে রাখা স্ত্রীর নৈতিক দায়িত্ব। স্বামী খুশি হলে আল্লাহ খুশি হন। যার প্রতি আল্লাহর সন্তুষ্টি আছে, তার জীবনে আর কীসের প্রয়োজন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যদি কোনো স্ত্রীলোক এমতাবস্থায় মারা যায় যে, তার স্বামী তার ওপর সন্তুষ্ট ছিল, তবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।’ (তিরমিজি, হাদিস: ১১৬১)
আরও পড়ুন: তাশাহুদের বাংলা উচ্চারণ ও অর্থ
স্বামীর প্রতিটি বৈধ কথাই পালন করা স্ত্রীর জন্য আবশ্যক। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘স্বামী যখন তার প্রযোজনে স্ত্রীকে ডাকে, সে যেন অবশ্যই তার কাছে আগমন করে, যদিও সে চুলার ওপর ব্যস্ত থাকে (যদি রান্নাবান্নায় ব্যস্ত থাকে)।’ (তিরমিজি, হাদিস: ১১৬০)।
আরেক হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যখন কোনো পুরুষ তার স্ত্রীকে শয্যায় ডাকে (পারস্পরিক মিলনের উদ্দেশ্যে)। এরপর স্ত্রী যদি স্বামীর আহ্বানে সাড়া না দেয়, তার স্বামী যদি তার প্রতি নারাজ অবস্থায় রাত অতিবাহিত করে, এমতাবস্থায় জান্নাতের বাসিন্দারা সকাল হওয়া পর্যন্ত স্ত্রীকে অভিশাপ দিতে থাকে।’ (বুখারি, হাদিস: ৩২৩৭)
স্বামীকে কষ্ট দেওয়া পাপ। এতে জান্নাতি নারীরা স্ত্রীর ওপর অভিসম্পাত করেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে নারী তার স্বামীকে জীবনযাপনের ক্ষেত্রে দুনিয়াতে কষ্ট দেয়, তার সম্পর্কে জান্নাতের হুর (নারী) অভিসম্পাত দিয়ে বলে, হে হতভাগা, তাকে কষ্ট দিও না, আল্লাহ তোমাকে নিশ্চিহ্ন করুন।’ (তিরমিজি, হাদিস: ১১৭৪)। সুতরাং স্বামীর সকল প্রকার বৈধ চাওয়াই স্ত্রীকে পূরণ করতে হবে। স্বামীর সঙ্গে অকারণে ঝগড়া-বিবাদ করা যাবে না। ঝগড়া হলে যত দ্রুত সম্ভব সমাধান করা প্রয়োজন।
স্বামীর সকল আমানত আন্তরিকতার সঙ্গে রক্ষা করতে হবে। ধন-সম্পদ, টাকা-পয়সা, সন্তানাদি সুষ্ঠুভাবে সংরক্ষণ করতে হবে। পাশাপাশি নিজেকেও সকল প্রকার অশ্লীলতা থেকে হেফাজত করতে হবে। আল্লাহ বলেন, ‘সাধ্বী স্ত্রীরা হয় অনুগত এবং আল্লাহ যা হেফাজতযোগ্য করে দিয়েছেন, লোকচক্ষুর অন্তরালে তার হেফাজত করে।’ (সুরা নিসা, আয়াত: ৩৪)
স্বামী বাড়ি থাকলে ফরজ ইবাদত ছাড়া অন্য যেকোনো ইবাদতের ক্ষেত্রে অবশ্যই স্বামীর অনুমতি নিতে হবে। স্বামীর অনুমতি ছাড়া নফল ইবাদত বা রোজা রাখা যাবে না। স্বামীর অনুমতি ছাড়া অন্য কাউকে ঘরে প্রবেশ করানো যাবে না। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘স্বামী বাড়িতে উপস্থিত থাকা অবস্থায় তার অনুমতি ছাড়া কোনো নারীর নফল রোজা পালন করা বৈধ নয় এবং তার অনুমতি ছাড়া কাউকে তার ঘরে প্রবেশের অনুমতি দেওয়াও জায়েজ নয়।’ (বুখারি, হাদিস: ৫১৯৫)
স্বামী অসন্তুষ্ট থাকলে স্ত্রীর নামাজ, রোজা কাজে আসবে না। স্বামীর প্রতি বৈধ কারণ ছাড়া অকৃতজ্ঞ থাকা যাবে না। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আমাকে জাহান্নাম দেখানো হয়। আমি দেখি এর অধিবাসীদের অধিকাংশ নারী। কারণ তারা কুফরি করে। জিজ্ঞেস করা হলো, তারা কি আল্লাহর সঙ্গে কুফরি করে? তিনি বললেন, না; বরং তারা স্বামীর অবাধ্য হয় এবং অকৃতজ্ঞ হয়।’ (বুখারি, হাদিস: ২৯)
লেখক: সিনিয়র স্টাফ নার্স, সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল