ঢাকা ২৭ মাঘ ১৪৩১, সোমবার, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
English
সোমবার, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৭ মাঘ ১৪৩১

জীবে দয়া করে যে, দয়া পায় সে

প্রকাশ: ২৬ জানুয়ারি ২০২৫, ০৯:০০ এএম
আপডেট: ২৬ জানুয়ারি ২০২৫, ০১:৫৫ পিএম
জীবে দয়া করে যে, দয়া পায় সে
বিড়ালের যত্ন নিচ্ছেন একজন। ছবি: ইন্টারনেট

জীবের প্রতি সদয় হওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। পৃথিবীর সব প্রাণীর প্রতি সদয় আচরণের নির্দেশ দিয়েছে ইসলাম। প্রিয় নবি মুহাম্মাদ (সা.)-এর জীবন থেকে আমরা অসংখ্য উদাহরণ পাই, যেখানে তিনি পশুপাখি, এমনকি গাছপালার প্রতিও সদয় আচরণের নির্দেশ দিয়েছেন। 

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহর সৃষ্টির প্রতি অনুগ্রহ ও অনুকম্পা প্রদর্শনকারীদের প্রতি আল্লাহ রহমানুর রহিম অনুগ্রহ ও দয়া বর্ষণ করেন। সুতরাং তোমরা জমিনের অধিবাসীদের প্রতি দয়া করো, তা হলে আকাশের মালিক তোমাদের প্রতি রহমত বর্ষণ করবেন।’ (বুখারি, হাদিস: ৫৯৮১)

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘নিঃসন্দেহে আল্লাহ প্রত্যেক জিনিসের সঙ্গে সদাচারের আদেশ করেছেন। সুতরাং যখন তোমরা (কিসাস ইত্যাদির কারণে) হত্যা করবে তখন উত্তমরূপে হত্যা করো। আর যখন জবেহ করো তখন উত্তমরূপে জবেহ করো। আর তোমাদের প্রত্যেকের কর্তব্য হলো, ছুরি ধার দিয়ে নেওয়া এবং জাবিহাকে (জবাইকৃত জন্তু) যথাসম্ভব আরাম দেওয়া।’ (মুসলিম, হাদিস: ১৯৫৫)

একবার সাহাবায়ে কেরাম একটি পাখির দুটি বাচ্চা ধরে ফেললেন। আর পাখিটি ছটফট করতে লাগল। নবি (সা.) পাখিটির ছটফটানি দেখে বললেন, কে একে তার বাচ্চার বিষয়ে কষ্ট দিয়েছে? তার বাচ্চা তাকে ফিরিয়ে দাও। আবার তিনি দেখতে পেলেন, পিঁপড়ের টিবিকে আগুনে জ্বালানো হয়েছে, তখন তিনি বলেন, আগুনের রব ছাড়া আর কারও জন্য বৈধ নয় আগুন দ্বারা আজাব দেওয়া। (আবু দাউদ, হাদিস : ২৬৭৫)

এক ব্যক্তি শুধু একটি পিপাসার্ত কুকুরকে পানি খাওয়ার ফলে জান্নাত লাভ করেছেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) একবার একটি পিপাসার্ত কুকুরকে পানি পান করানোর একটি ঘটনা উল্লেখ করে বলেছেন, ‘এক ব্যক্তি রাস্তা দিয়ে চলছিল। তার খুব পিপাসা পেল। তার পর একটি কুয়া পেল। সে তাতে নেমে পানি পান করল। কুয়া থেকে উঠে দেখল, একটি কুকুর পিপাসায় বারবার জিভ বের করে কাদামাটি চাটছে। লোকটি মনে মনে বলল, পিপাসার কারণে আমার যে অবস্থা হয়েছিল, কুকুরটিরও সেই অবস্থা হয়েছে। তার পর সে আবার কুয়ায় নেমে নিজের পা-মুজায় পানি ভরে ওপরে নিয়ে এলো এবং কুকুরটিকে পানি পান করাল। এ কারণে আল্লাহতায়ালা তাকে প্রতিদান দিলেন এবং তাকে মাফ করে দিলেন। সাহাবিরা আরজ করলেন, হে আল্লাহর রসুল, চতুষ্পদ প্রাণীর কারণেও কি আমাদের জন্য সওয়াব রয়েছে? রাসুল (সা.) বললেন, হ্যাঁ, প্রত্যেক জীবন্ত প্রাণীর মধ্যেই সওয়াব রয়েছে।’ (বুখারি, হাদিস: ২৩৬৩)

এক মহিলা একটি বিড়ালের কারণে জাহান্নামি হয়েছে। কেননা সে তাকে বেঁধে রেখেছে এবং কোনো খাবার দেয়নি। জমিনে পোকা-মাকড় খাওয়ার জন্য একে সে ছেড়ে দেয়নি। (বুখারি, হাদিস: ৩৩১৮)

জীবের প্রতি সদয় হওয়া ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ আদেশ—যা মানবিক গুণাবলি উন্নত করে এবং আল্লাহর রহমত লাভের সুযোগ সৃষ্টি করে। আমাদের উচিত, প্রতিটি জীবের প্রতি সদয় আচরণ করা এবং এদের প্রতি যত্নশীল হওয়া। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি দয়া প্রদর্শন করে না, সে দয়া লাভ করে না।’ (বুখারি, হাদিস: ৬০১৩)

লেখক: শিক্ষার্থী, শরীফবাগ ইসলামিয়া কামিল মাদরাসা, ধামরাই

পেশাদারিত্বের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে

প্রকাশ: ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৬:৩০ পিএম
আপডেট: ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৬:৩৪ পিএম
পেশাদারিত্বের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে
পেনফিল্ড পাবলিকেশনের প্রকাশক মোহাম্মদ গোলাম রব্বানী। ছবি: সংগৃহীত

মোহাম্মদ গোলাম রব্বানী—পেনফিল্ড পাবলিকেশনের প্রকাশক। নোয়াখালীর কোম্পানিগঞ্জে জন্ম। পড়াশোনার শুরু বসুরহাট এএইচসি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে। লন্ডনের এংলিয়া রাস্কিন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মার্কেটিংয়ে অনার্স এবং গ্রিনউইচ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মার্কেটিংয়ে স্নাতকোত্তর করেছেন। তিনি কেন প্রকাশক হলেন, কোন ধরনের বই প্রকাশে তিনি আগ্রহী, ইসলামি প্রকাশনীর মান কতটা বেড়েছে, লেখক-প্রকাশকের সম্পর্ক কেমন হওয়া উচিত ইত্যাদি বিষয়ে কথা বলেছেন খবরের কাগজের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন রায়হান রাশেদ

খবরের কাগজ: আপনি প্রকাশক হলেন কেন?
মোহাম্মদ গোলাম রব্বানী: লন্ডনে পড়াশোনা করছি তখন। জীবন চলছিল আর দশটা তরুণের মতোই। আল্লাহর রহমতে সেবার দ্বীনের বুঝ পেলাম। নিজের দ্বীনকে ভালোমতো জানলাম। ভাবলাম, দেশে ফিরে দ্বীনভোলা মানুষকে দ্বীনের পথে ডাকব। আমার মনে হলো, ইসলামি বইপত্র এমন একটি শক্তিশালী মাধ্যম, যা মানুষের অন্তরে দ্বীনের আলো পৌঁছাতে এবং তাদের সঠিক জ্ঞানের দিকে আহ্বান করতে পারে। পাশাপাশি লন্ডনে অবস্থানকালে আমার ইচ্ছা ছিল, দেশে গিয়ে এমন একটি কাজ করা—যা নিজের জীবিকার ব্যবস্থার পাশাপাশি অন্যদের জন্যও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করবে। ইসলামি প্রকাশনা এই দুটো লক্ষ্যপূরণের একটি উপযুক্ত মাধ্যম বলে মনে হয়েছে। দ্বীনের খেদমতের এই মহৎ উদ্দেশ্য এবং মানুষের জন্য কর্মসংস্থান তৈরির আকাঙ্ক্ষা থেকেই প্রকাশক হয়েছি। এটি আমার কাছে শুধু পেশা নয়; বরং দ্বীনের পথে থেকে মানুষের সেবা করার গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম।

খবরের কাগজ: ইসলামি প্রকাশনার মান কতটা বেড়েছে বলে আপনি মনে করেন?
মোহাম্মদ গোলাম রব্বানী: বাংলাদেশে প্রকাশনাশিল্প, বিশেষত ইসলামি প্রকাশনী সাম্প্রতিক বছরগুলোতে উল্লেখযোগ্য উন্নতি করেছে। বর্তমানে অনেক ইসলামি প্রকাশনী ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করছে। বইয়ের ডিজাইন, ফরম্যাটিং এবং প্রিন্টিংয়ের ক্ষেত্রে আধুনিক সফটওয়্যার ব্যবহার করছে, যা বইয়ের মান উন্নত করেছে।
প্রকাশনীগুলো শুধু ধর্মীয় গ্রন্থ নয়; বরং জীবনধারা, সমসাময়িক চ্যালেঞ্জ, ইসলামি ইতিহাস ও শিশুদের জন্য ইসলামি সাহিত্য প্রকাশে মনোযোগী হয়েছে। এর ফলে পাঠকের সংখ্যা বেড়েছে।
গবেষণাভিত্তিক বই প্রকাশ করছে অনেকে। অনুবাদ, সম্পাদনা ও প্রুফ রিডিংয়ের ক্ষেত্রে দক্ষ জনবল নিয়োগ করায় বইয়ের ভাষাগত ও বিষয়গত মান উন্নত হয়েছে। ইসলামি বই এখন সহজেই বিভিন্ন ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম (যেমন- রকমারি, ওয়াফিলাইফ, জাজিরা) এবং প্রকাশনীর নিজস্ব ওয়েবসাইট থেকে পাওয়া যাচ্ছে। এতে পাঠক বই কিনতে এবং পড়তে আরও উৎসাহিত হচ্ছে। সর্বোপরি, ইসলামি প্রকাশনার মান বেড়েছে। 

খবরের কাগজ: লেখক-প্রকাশকের সম্পর্ক কেমন হওয়া উচিত?
মোহাম্মদ গোলাম রব্বানী: লেখক ও প্রকাশকের সম্পর্ক একটি বই প্রকাশের প্রক্রিয়ায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি শুধু একটি ব্যবসায়িক সম্পর্ক নয়; বরং এটি সম্মান, সহযোগিতা এবং পারস্পরিক বিশ্বাসের ওপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠা উচিত। লেখকের সৃজনশীলতা এবং প্রকাশকের পেশাদারিত্বের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া প্রয়োজন। প্রকাশকের উচিত, লেখকের স্বাধীনতা এবং দৃষ্টিভঙ্গির প্রতি সম্মান করা। লেখক ও প্রকাশকের মধ্যে স্পষ্ট যোগাযোগ থাকা জরুরি। লেখা, সম্পাদনা, প্রচ্ছদ, বাজারজাতকরণ এবং রয়্যালটির বিষয়ে খোলামেলা আলোচনা হওয়া উচিত উভয়ের মাঝে। একটি সুস্পষ্ট ও উভয়পক্ষের জন্য ন্যায়সঙ্গত চুক্তি থাকা প্রয়োজন যেখানে লেখক ও প্রকাশকের দায়িত্ব, রয়্যালটির হার এবং কপিরাইটের বিষয় উল্লেখ থাকবে। লেখক ও প্রকাশক উভয়ের মধ্যে সহযোগিতার মনোভাব থাকা দরকার। লেখকের লেখা জমা দেওয়ার সময়সীমা এবং প্রকাশকের সম্পাদনা ও প্রকাশনার সময়সীমা মেনে চলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রয়্যালটি, অগ্রিম অর্থ এবং বিক্রির হিসাব নিয়ে স্বচ্ছ থাকা উচিত। নিয়মিত এবং সঠিক পদ্ধতিতে লেখককে অর্থ প্রদান করতে হবে।

খবরের কাগজ: আপনার প্রকাশনী সম্পর্কে কিছু বলুন। কী ধরনের বই প্রকাশে আপনারা আগ্রহী? 
মোহাম্মদ গোলাম রব্বানী: আমাদের প্রকাশিত বইগুলোর প্রথম ফ্ল্যাপে আমরা ছোট্ট একটি কলাম টাইপের লেখা দিয়ে থাকি। এর মাধ্যমে যেমন একজন পাঠক আমাদের চিন্তাচেতনা ও আদর্শ সম্পর্কে জানতে পারবেন, তেমনই এর মাধ্যমে বেশ পরিষ্কারভাবেই জানতে পারবেন আমরা কী ধরনের বই প্রকাশে আগ্রহী। ধারণা পাবেন বইয়ের জগতে কোন কোন জায়গায় পেনফিল্ডের বিচরণ। তাই এখানেও সেই লেখাটি উল্লেখ করাই যথার্থ মনে করছি—‘স্রষ্টার সঙ্গে সৃষ্টির, অতীতের সঙ্গে বর্তমানের ও জীবনের সঙ্গে মৃত্যুর সংযোগ গড়ে তোলা বিশ্বাসী মানুষের হৃদয়ের দাবি। এ দাবি পূরণের শতেক পথের একটি হলো বই। সেই প্যাপিরাসের যুগ থেকে আজ ই-বুকের যুগ পর্যন্ত, হাজার বছরের পরিক্রমায় আল্লাহর কালাম, রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর বাণী, শরিয়তের বিধান, মানুষের চিন্তা, ইতিহাসের দলিল ইত্যাদির লিখিত রূপ আমাদের জীবনের প্রয়োজন। মননশীল মনের খোরাক।
প্রাচীনকাল থেকে আধুনিক সময়ের নিরন্তর পরিবর্তনশীল ইতিহাস ও সমাজের যোগসূত্র গেঁথে দিতে, দ্বীন-ধর্মের জ্ঞান, সমাজ-সংসারের গল্প, নির্জলা ইতিহাস কিংবা উপাখ্যান-উপন্যাস, তাসাউফ তত্ত্ব থেকে বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চা, হার্দিক শিল্পের কথকতা, লাইফস্টাইল অথবা মোটিভেশন— হাজারো বিষয় নিয়ে সংবেদনশীল পাঠকের সঙ্গে অক্ষর-শব্দ-বাক্যের বাঁধনে জড়িয়ে, বই নামের এক অলৌকিক জগতে ডুব দিয়ে আলোকিত হতে, বিশ্বাস ও শুদ্ধতার আয়নায় দাঁড়িয়ে—পরিশীলিত ও শিল্পিত রূপে পাণ্ডুলিপির রূপায়ণ কল্পেই ‘পেনফিল্ড পাবলিকেশন’-এর পথচলা।’

খবরের কাগজ:  ইসলামি বইয়ের জাগরণের ক্ষেত্রে কী কী পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে?
মোহাম্মদ গোলাম রব্বানী: ইসলামি বইয়ের জাগরণের ক্ষেত্রে একটি সুশৃঙ্খল ও পরিকল্পিত পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন—যা পাঠকের চাহিদা, সময়ের প্রয়োজন এবং প্রযুক্তিগত অগ্রগতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। এ ক্ষেত্রে কোরআন, হাদিস, ফিকহ, ইসলামি ইতিহাস ও সংস্কৃতি নিয়ে গবেষণা ও সঠিক তথ্য তুলে ধরতে হবে। সমকালীন চ্যালেঞ্জ (যেমন-জীবনের উদ্দেশ্য, আত্মোন্নয়ন, কর্মক্ষেত্রে নৈতিকতা) নিয়ে ইসলামি দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরতে হবে। সহজবোধ্য এবং রোমাঞ্চকর গল্প বা উপন্যাসে ইসলামি শিক্ষা তুলে ধরতে হবে। ইসলামি সাহিত্য তরুণদের জন্য উপযুক্তভাবে উপস্থাপন করতে হবে। শিশু ও কিশোরদের আকৃষ্ট করা যেতে পারে। ইসলামি লাইব্রেরি বা ইসলামিক লার্নিং অ্যাপ করা যেতে পারে। মোট কথা, ইসলামি বইয়ের জাগরণের জন্য সৃজনশীলতা, গবেষণা এবং প্রযুক্তি ব্যবহারের সমন্বয় অপরিহার্য। পরিকল্পিত উদ্যোগ ও মানসম্পন্ন কাজের মাধ্যমে ইসলামি বইয়ের প্রসার বাড়িয়ে একটি জ্ঞানসমৃদ্ধ সমাজ গড়ে তোলা সম্ভব।

হাদিস অস্বীকারকারীদের আপত্তি ও সংশয় ভাঙাবে ‘কুরআনিস্ট মতবাদ’ বই

প্রকাশ: ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১১:৩২ এএম
হাদিস অস্বীকারকারীদের আপত্তি ও সংশয় ভাঙাবে ‘কুরআনিস্ট মতবাদ’ বই
‘কুরআনিস্ট মতবাদ’ বইয়ের প্রচ্ছদ। ছবি: সংগৃহীত

সম্প্রতি কোরআনিস্ট মতবাদ নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা দেখে অনেকের মনেই প্রশ্ন জাগে, তারা কারা? তাদের বক্তব্যই-বা কী? কেউ কেউ হয়তো তাদের মতের দ্বারা প্রভাবিতও হয়ে পড়ছেন এর মধ্যে। কারও মনে জায়গা করে নিয়েছে নানা সংশয়। হাদিসশাস্ত্রের ওপর বিভিন্ন সংশয় ও আপত্তি উত্থাপন করে হাদিসকে শরিয়তের দ্বিতীয় উৎস মানতে অস্বীকার এবং কোরআনকেই শরিয়তের একমাত্র উৎস হিসেবে সাব্যস্ত করা কোরআনিস্ট মতবাদদের প্রাথমিক কাজ। এ মতবাদের অনুসারীরা নিজেদের আহলে কোরআন বা কোরআনিস্ট দাবি করে। এর পেছনে রয়েছে তাদের বেশ কিছু দাবি, সংশয় বা আপত্তি। তবে এ বিষয়গুলো অনেকের কাছে নতুন মনে হলেও ইতিহাস ও বাস্তবতা বলে, এ জাতীয় দাবি, সংশয় বা আপত্তি আগেও ছিল। এখন শুধু বেশ বা ধরনে কিছুটা পরিবর্তন ও আধুনিকতার ছোঁয়া এসেছে যুগের পরিক্রমায়। এসব আপত্তি বা সংশয়ের নিরসন আমাদের স্বর্ণযুগের তারকাতুল্য মুজতাহিদ ও মুহাদ্দিস আইম্মায়ে কেরাম যথাযথ দায়িত্বশীলতার সঙ্গে করে গেছেন। কোরআনিস্ট মতানুসারীদের উল্লেখযোগ্য কিছু আপত্তি ও সংশয় নিয়ে পর্যালোচনা করা হয়েছে কুরআনিস্ট মতবাদ: পর্যালোচনা ও সংশয় নিরসন বইয়ে। 

আহলে কোরআনরা নিজেদের সংশয়পূর্ণ চিন্তাধারার প্রচার-প্রসার করছে খুব জোরালোভাবেই। আর পর্যাপ্ত জ্ঞানের অভাবে অনেক সাধারণ মুসলিমদের মাঝেও ছড়িয়ে পড়ছে এ সংশয়ের প্রভাব। তাদের সংশয় ও আপত্তিকর চিন্তাধারা নিয়ে গঠনমূলক পর্যালোচনা ও সংশয় নিরসন সময়ের দাবি। এ বই সে দাবি পূরণে সক্ষম হয়েছে।  

বইটিতে কোরআনিস্ট মতবাদের অনুসারীরা হাদিসের ওপর বড় বড় যেসব সংশয় ও আপত্তি তুলে থাকে, তা ইনসাফের সঙ্গে উল্লেখ করে আইম্মায়ে মুহাদ্দিসিনের মানহাজের আলোকে পর্যালোচনা ও সংশয় নিরসন করা হয়েছে। যারা কোরআনিস্ট মৌলিক সংশয় ও আপত্তিগুলো জানার পাশাপাশি সংশয়গুলোর সমাধান জানতে চায়, তাদের জন্য এ বইটি খুবই উপকারী। এ বই পাঠে চিন্তাশীল পাঠকদের জন্য হাদিস অস্বীকারের ফেতনা থেকে বাঁচার মাধ্যমে নিজেদের ইমানের হেফাজত করাও সহজ হবে। 

বইয়ে কোরআনিস্টদের ১৯টি সংশয় নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। যেসব হাদিস নিয়ে সংশয় উঠেছে, সে ধরনের কিছু হাদিস নিয়ে আলাপ করা হয়েছে। যারা এসব হাদিসের ওপর আঘাত হেনেছে, তা সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করে এসব আক্রমণের যে জবাব আইম্মায়ে মুহাদ্দিসিন ও বিজ্ঞ আলেমরা দিয়েছেন, তা উল্লেখ করা হয়েছে। সেই সঙ্গে কোনটি সঠিক মত সেটিও বলে দেওয়া হয়েছে। অনুসন্ধানমূলক বিশ্লেষণধর্মী তুলনামূলক মানহাজের ওপর নির্ভর করে বইটি প্রস্তুত করেছেন লেখক। 

বইটি শায়খ ড. আবদুল আযীয মুহাম্মাদ আল-খালাফের মাওকিফুল মুহাদ্দিসিন মিন শুবুহাতি মুনকিরিস সুন্নাহ আল-মুয়াসিরিন-এর অনুবাদ। অনুবাদ করেছেন সালমান মাসরুর। বইটি প্রকাশ করেছে পেনফিল্ড পাবলিকেশন। ১৯২ পৃষ্ঠার বইটির মুদ্রিত মূল্য ২৮৬ টাকা। দেশের অভিজাত সব লাইব্রেরিসহ বিভিন্ন অনলাইন বুকশপে বইটি পাওয়া যায়। সরাসরি পেনফিল্ড পাবলিকেশন থেকে বইটি কিনতে ভিজিট করুন ফেসবুক পেজে

বই: কুরআনিস্ট মতবাদ: পর্যালোচনা ও সংশয় নিরসন
লেখক: ড. আবদুল আযীয মুহাম্মাদ আল-খালাফ
অনুবাদক: সালমান মাসরুর
প্রকাশক: পেনফিল্ড পাবলিকেশন
পৃষ্ঠা সংখ্যা: ১৯২
মুদ্রিত মূল্য: ২৮৬ টাকা
মোবাইল: ০১৪০৭-০৫৬৯৬১

লেখক: আলেম ও সাংবাদিক

বাবরি চুল ইসলামের ঐতিহ্য ও আধুনিক দৃষ্টিভঙ্গি

প্রকাশ: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৬:৩০ পিএম
আপডেট: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৬:৪৪ পিএম
বাবরি চুল ইসলামের ঐতিহ্য ও আধুনিক দৃষ্টিভঙ্গি
বাবরি চুলের ছবি। ইন্টারনেট

রাসুলুল্লাহ (সা.) বাবরি বা লম্বা চুল রাখতেন। বিভিন্ন বর্ণনায় পাওয়া যায়, তাঁর চুল কখনো কানের লতিতে থাকত, কখনো কাঁধ পর্যন্ত দীর্ঘ হতো। এর মধ্য দিয়ে তিনি তাঁর অনুসারীদের জন্য একটি সুন্দর উদাহরণ স্থাপন করেছিলেন। তবে বাবরি রাখা ইসলামে একটি ঐচ্ছিক সুন্নত। এতে কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। এটি এমন একটি বিষয়, যেখানে ব্যক্তি তার রুচি এবং স্বাচ্ছন্দ্য অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।

ইসলামের প্রতিটি বিধান ও নিয়মের পেছনে রয়েছে যুক্তি ও উদ্দেশ্য। বাবরি রাখা শুধু একটি শারীরিক চর্চা নয়; এটি ব্যক্তিত্ব, পরিচ্ছন্নতা এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের প্রতি ইসলামের গুরুত্বকে প্রতিফলিত করে। মহানবি (সা.) সবসময় পরিচ্ছন্নতা এবং সৌন্দর্যের প্রতি গুরুত্ব দিতেন। বাবরি রাখার সঙ্গে এই দৃষ্টিভঙ্গির সংযোগ রয়েছে।

পরিচ্ছন্নতা ও রক্ষণাবেক্ষণ: বাবরি রাখার ক্ষেত্রে মহানবি (সা.) পরিচ্ছন্নতার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিতেন। হাদিসে পাওয়া যায়, তিনি নিয়মিত চুল আঁচড়াতেন এবং তেলের ব্যবহার করতেন। চুল বড় রাখার পাশাপাশি এর সঠিক যত্ন নেওয়াও সুন্নতের অংশ।

প্রাকৃতিক সৌন্দর্য: রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর চেহারায় সবসময় প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের ছাপ থাকত। তার লম্বা চুল সেই সৌন্দর্যের অংশ ছিল। ইসলাম চুলের সৌন্দর্যকে স্বাভাবিক উপায়ে রক্ষণাবেক্ষণ করার পরামর্শ দেয়।

পরিচয়ের প্রতীক: মহানবি (সা.) এবং তাঁর সাহাবারা বিভিন্ন সময়ে চুলের মাধ্যমে তাদের পরিচয় প্রকাশ করতেন। চুলের ধরন ও দৈর্ঘ্য আরব সংস্কৃতির একটি অংশ ছিল। বাবরি রাখা সেই ঐতিহ্য এবং ইসলামের ব্যক্তিত্বের পরিচয় বহন করে।

ইসলামের বিভিন্ন বর্ণনা থেকে জানা যায়, বাবরি রাখা সুন্নত হিসেবে বিবেচিত। এখানে কিছু হাদিস উল্লেখ করা হলো, যা এ বিষয়টিকে আরও পরিষ্কার করবে। আনাস ইবনে মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর চুল মাঝেমধ্যে কানের লতি পর্যন্ত থাকত, কখনো কখনো কাঁধ পর্যন্ত পৌঁছাত।’ (বুখারি, হাদিস: ৫৫৬৫)

উম্মু হানি (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর মাথার চুল চারভাগে ভাগ করা অবস্থায় দেখেছি। তার মাথায় লম্বা চুল ছিল।’ (তিরমিজি)। এ হাদিসগুলো থেকে বোঝা যায়, বাবরি রাখা রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর অভ্যাস ছিল এবং এটি সুন্নতের অন্তর্ভুক্ত। তবে এই সুন্নত পালনের ক্ষেত্রে ব্যক্তি তার পরিবেশ ও প্রয়োজন অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।

বাবরি রাখার উপকারিতা: বাবরি রাখা শুধু একটি ধর্মীয় সুন্নত নয়; এর কিছু স্বাস্থ্যগত এবং সামাজিক উপকারিতাও রয়েছে—১. চুল বড় থাকলে তা মাথার ত্বককে রোদ ও ধুলাবালি থেকে সুরক্ষা দেয়। ২. লম্বা চুল ব্যক্তিত্বকে আকর্ষণীয় করে তোলে এবং আত্মবিশ্বাস বাড়ায়। ৩. বাবরি রাখা রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর স্মরণ করিয়ে দেয় এবং তাকে অনুসরণের অনুভূতি জাগ্রত করে।

লেখক: আলেম ও মাদরাসা শিক্ষক

যেসব কান্না আল্লাহর পছন্দ

প্রকাশ: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৯:০০ এএম
আপডেট: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৯:০৮ এএম
যেসব কান্না আল্লাহর পছন্দ
কান্নারত এক ব্যক্তির ছবি। ইন্টারনেট

পৃথিবীর সব জায়গার ও সব ভাষার মানুষ কাঁদে। মানুষের কান্নার ভাষা সবাই বোঝে। একজন নবজাতকও দুনিয়াতে নিজের আগমন ও অস্তিত্বের জানান এই কান্না দিয়েই প্রকাশ করে। সে তখন কান্না না করলে মা-বাবাসহ সবাই দুশ্চিন্তায় পড়ে যান। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘প্রত্যেক নবজাতককে জন্মের সময় শয়তান খোঁচা দেয়, ফলে সে শয়তানের খোঁচায় চিৎকার করে।’ (বুখারি, হাদিস: ৩৪৩১)। কান্নায় কি শুধু মনের দুঃখ-কষ্টের প্রকাশ ঘটে, না অন্য কিছুও থাকে? আসলে কান্নার আছে আরও অনেক প্রকার। এখানে পাঁচটি প্রকার উল্লেখ করা হলো—

বিপদের কান্না: বিপদে পড়লে সবাই মন খারাপ করে। কান্না করে। হাদিসে আছে, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) তার শিশুপুত্র ইবরাহিমের মৃত্যুর সময় কান্নারত অবস্থায় বলেছেন, চোখ দিয়ে অশ্রু ঝরে, হৃদয় ব্যথিত হয়। তবে আমরা তাই বলি যার ওপর আমাদের সব সন্তুষ্টি। আর তোমার বিচ্ছেদে আমরা ব্যথিত।’ (বুখারি, হাদিস: ১৪০৭)
 
বিচ্ছেদের কান্না: আপনজন ও প্রিয়জনের বিচ্ছেদে মানুষ কান্না করে। ইয়াকুব (আ.) আপন সন্তান ইউসুফ (আ.)-এর বিচ্ছেদে কান্না করেছিলেন। পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘আর তার চোখ দুটি কাঁদতে কাঁদতে সাদা হয়ে গিয়েছিল এবং তার হৃদয় চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে যাচ্ছিল।’ (সুরা ইউসুফ, আয়াত: ৮৪) 

কোরআন পড়ে বা শুনে কান্না: এমন অনেক সৌভাগ্যবান ব্যক্তি আছেন, যারা কোরআন তেলাওয়াতের সময় কান্না করেন। এ সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা কেঁদে কেঁদে কোরআন তেলাওয়াত করো, যদি কান্না না আসে তা হলে কান্নার ভান ধরো।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস: ১৩৩৭) 
ইমাম গাজ্জালি (রহ.) বলেন, সাহাবায়ে কেরামের কোরআন তেলাওয়াতের সময় আশ্চার্যজনক অবস্থা সৃষ্টি হতো, সাহাবিদের  ভেতর কেউ তেলাওয়াতের সময় কান্না করতেন, কেউবা আবার বেহুঁশ হয়ে যেতেন, আবার কেউ এই বেহুঁশের মধ্যেই চির বিদায় হয়ে যেতেন। (খুতুবাতে জুলফিকার, ৪/১৭৯)

গুনাহের কথা স্মরণ করে কান্না: যাপিত জীবনে কমবেশি সবাই গুনাহ করে থাকে, তবে গুনাহের কথা স্মরণ করে কান্না করা এক অনন্য গুণ। যে গুনাহের কথা স্মরণ করে কান্না করে, আল্লাহতায়ালা তার ওপর সন্তুষ্ট হয়ে যান। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহতায়ালার কাছে দুটি ফোঁটা অত্যন্ত প্রিয়। এক. আল্লাহতায়ালার ভয়ে যে অশ্রু ফোঁটা ঝরে। দুই. আল্লাহতায়ালার রাস্তায় যে অশ্রু ফোঁটা ঝরে।’ (তিরমিজি, হাদিস: ১৬৩৯)

আল্লাহর ভয়ে কান্না: চোখের সদ্ব্যবহারের একটি অনন্য দিক হলো, আল্লাহর ভয়ে কান্না করা। তা ছাড়া আল্লাহর ভয়ে কান্না করা মুমিনের বিশেষ গুণ এবং একনিষ্ঠতার বড় প্রমাণও। আল্লাহর ভয় ইমানের অপরিহার্য উপাদান। কেননা ইমান হলো, আশা ও ভয়ের ভেতরে। নবি-রাসুলদের বৈশিষ্ট্যের ব্যাপারে আল্লাহতায়ালা ঘোষণা করেন, ‘এরা সৎ কাজে ছিল ক্ষিপ্রগতি, তারা আমাকে ডাকতো আশা নিয়ে ও ভীত হয়ে, আর তারা ছিল আমার প্রতি বিনয়ী।’ (সুরা আম্বিয়া, আয়াত: ৯০)

জীবনের সব ক্ষেত্রে মহান আল্লাহকে ভয় করতে হবে। আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে ভয় করা যাবে না। অনেক কারণে মানুষ কান্না করে এবং অশ্রুপাত করে। এসবের মধ্যে আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় হচ্ছে তাঁর ভয়ে কান্না করা। হাশরের ময়দানে এ প্রকারের কান্না ও অশ্রু অমূল্য সম্পদ হয়ে বান্দাকে আনন্দিত করবে এবং মুখে হাসি ফোটাবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তিনটি চোখ জাহান্নামের আগুন দেখবে না। যে চোখ আল্লাহর রাস্তায় পাহারাদারি করে, যে চোখ আল্লাহর ভয়ে কাঁদে, যে চোখ আল্লাহ কর্তৃক নিষিদ্ধ জিনিস দেখে ক্ষুব্ধ হয়।’ (আল মুজামুল কাবির লিত তিবরানি, হাদিস: ১০০৩)

লেখক: মুহাদ্দিস, জামিয়া কাশেফুল উলুম মাদরাসা, মধুপুর 

 

নিজ হাতে উপার্জনের গুরুত্ব

প্রকাশ: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৬:৩০ পিএম
আপডেট: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:২৮ পিএম
নিজ হাতে উপার্জনের গুরুত্ব
প্রতীকী ছবি

প্রত্যেক মানুষের নৈতিক দায়িত্ব ও কর্তব্য হচ্ছে, জীবিকা উপার্জনের বৈধ কোনো পথ ও পন্থা খুঁজে বের করা। ইসলামে জীবিকা অর্জন করা মর্যাদাপূর্ণ ভার ও দায়িত্ব।  মনে রাখতে হবে, রিজিকের দায়িত্ব আল্লাহতায়ালা নিয়েছেন। এরপর মা-বাবাসহ আরও যাদের মাধ্যমে বান্দা রিজিকপ্রাপ্ত হয়, তারা সবাই আল্লাহতায়ালা কর্তৃক নির্বাচিত মাধ্যম ও প্রতিনিধি। একজন ইমানদার বান্দার সম্মানের জন্য আর কী চাই! আল্লাহতায়ালা নিজে যে দায়িত্ব নিয়েছেন, সে কাজের সম্মান ও মর্যাদা কি আলোচনা-পর্যালোচনার অপেক্ষা রাখে? আল্লাহতায়ালা যাকে দিয়ে খুশি, তাকে দিয়েই এই সম্মানের কাজ করিয়ে নিচ্ছেন। 

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘জগতের কোনো মানুষ কখনো নিজ হাতে উপার্জিত খাদ্যের চেয়ে উত্তম কোনো খাবার খায়নি। আর আল্লাহর নবি দাউদ (আ.) নিজ হাতে উপার্জিত খাবার খেতেন।’ (আল-মুজামুল কাবির , হাদিস: ৬৩৩)। উল্লিখিত হাদিসে দুটি বিষয় লক্ষণীয়—এক. জগতের শ্রেষ্ঠ খাবার হলো নিজ হাতের উপার্জিত খাবার। দুই. নিজ হাতের উপার্জন খাওয়া ছিল একজন বিখ্যাত নবির জীবনব্যাপী আমল। নবিদের অন্যতম দাউদ (আ.)—যিনি নিজের হাতের উপার্জন ছাড়া আহার করতেন না। এই উপমাটি একটু মনোযোগসহ বোঝা দরকার। কেননা দাউদ (আ.) ছিলেন একই সঙ্গে নবি ও বাদশা। এ সম্পর্কে কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘আর আল্লাহতায়ালা দাউদকে রাজত্ব ও হেকমত দান করলেন এবং যা তিনি ইচ্ছা করলেন তা তাকে শিক্ষা দিয়েছেন।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ২৫১)

অতঃপর তার সে রাজত্ব বিস্তৃত ছিল সিরিয়া, ইরাক, হেজাজ, জর্ডান ও ফিলিস্তিনব্যাপী! এই বিশাল সাম্রাজ্যের অধিপতি হিসেবে ধর্মীয় বিধানে সরকারি কোষাগার থেকেও প্রয়োজনীয় জীবিকা গ্রহণের আইনসম্মত অধিকার ছিল। কিন্তু তিনি সে অধিকার গ্রহণ করেননি; বরং নিজে পরিশ্রম করে জীবিকা উপার্জন করেছেন। তিনি নরম লোহা থেকে বর্ম তৈরি করে বাজারে বিক্রি করতেন। সেই অর্থে তার সংসার চলত। (কাসাসুল কোরআন, খণ্ড: ২, পৃষ্ঠা: ৭১)

পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘পূর্ণ মাপের বর্ম তৈরি করতে এবং বুননে পরিমাণ রক্ষা করতে পার; এবং তোমরা সৎকর্ম করো। তোমরা যা কিছু কর আমি তার সম্যক দ্রষ্টা।’ (সুরা সাবা, আয়াত: ১০-১১)। জীবিকা নির্বাহের জন্য উপার্জনের বৈধ পথ খুঁজে বের করা নৈতিক দায়িত্ব। 

লেখক: আলেম ও মাদরাসা শিক্ষক