
প্রত্যেক মানুষের নৈতিক দায়িত্ব ও কর্তব্য হচ্ছে, জীবিকা উপার্জনের বৈধ কোনো পথ ও পন্থা খুঁজে বের করা। ইসলামে জীবিকা অর্জন করা মর্যাদাপূর্ণ ভার ও দায়িত্ব। মনে রাখতে হবে, রিজিকের দায়িত্ব আল্লাহতায়ালা নিয়েছেন। এরপর মা-বাবাসহ আরও যাদের মাধ্যমে বান্দা রিজিকপ্রাপ্ত হয়, তারা সবাই আল্লাহতায়ালা কর্তৃক নির্বাচিত মাধ্যম ও প্রতিনিধি। একজন ইমানদার বান্দার সম্মানের জন্য আর কী চাই! আল্লাহতায়ালা নিজে যে দায়িত্ব নিয়েছেন, সে কাজের সম্মান ও মর্যাদা কি আলোচনা-পর্যালোচনার অপেক্ষা রাখে? আল্লাহতায়ালা যাকে দিয়ে খুশি, তাকে দিয়েই এই সম্মানের কাজ করিয়ে নিচ্ছেন।
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘জগতের কোনো মানুষ কখনো নিজ হাতে উপার্জিত খাদ্যের চেয়ে উত্তম কোনো খাবার খায়নি। আর আল্লাহর নবি দাউদ (আ.) নিজ হাতে উপার্জিত খাবার খেতেন।’ (আল-মুজামুল কাবির , হাদিস: ৬৩৩)। উল্লিখিত হাদিসে দুটি বিষয় লক্ষণীয়—এক. জগতের শ্রেষ্ঠ খাবার হলো নিজ হাতের উপার্জিত খাবার। দুই. নিজ হাতের উপার্জন খাওয়া ছিল একজন বিখ্যাত নবির জীবনব্যাপী আমল। নবিদের অন্যতম দাউদ (আ.)—যিনি নিজের হাতের উপার্জন ছাড়া আহার করতেন না। এই উপমাটি একটু মনোযোগসহ বোঝা দরকার। কেননা দাউদ (আ.) ছিলেন একই সঙ্গে নবি ও বাদশা। এ সম্পর্কে কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘আর আল্লাহতায়ালা দাউদকে রাজত্ব ও হেকমত দান করলেন এবং যা তিনি ইচ্ছা করলেন তা তাকে শিক্ষা দিয়েছেন।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ২৫১)
অতঃপর তার সে রাজত্ব বিস্তৃত ছিল সিরিয়া, ইরাক, হেজাজ, জর্ডান ও ফিলিস্তিনব্যাপী! এই বিশাল সাম্রাজ্যের অধিপতি হিসেবে ধর্মীয় বিধানে সরকারি কোষাগার থেকেও প্রয়োজনীয় জীবিকা গ্রহণের আইনসম্মত অধিকার ছিল। কিন্তু তিনি সে অধিকার গ্রহণ করেননি; বরং নিজে পরিশ্রম করে জীবিকা উপার্জন করেছেন। তিনি নরম লোহা থেকে বর্ম তৈরি করে বাজারে বিক্রি করতেন। সেই অর্থে তার সংসার চলত। (কাসাসুল কোরআন, খণ্ড: ২, পৃষ্ঠা: ৭১)
পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘পূর্ণ মাপের বর্ম তৈরি করতে এবং বুননে পরিমাণ রক্ষা করতে পার; এবং তোমরা সৎকর্ম করো। তোমরা যা কিছু কর আমি তার সম্যক দ্রষ্টা।’ (সুরা সাবা, আয়াত: ১০-১১)। জীবিকা নির্বাহের জন্য উপার্জনের বৈধ পথ খুঁজে বের করা নৈতিক দায়িত্ব।
লেখক: আলেম ও মাদরাসা শিক্ষক