ঢাকা ১ চৈত্র ১৪৩১, শনিবার, ১৫ মার্চ ২০২৫
English

নিজ হাতে উপার্জনের গুরুত্ব

প্রকাশ: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৬:৩০ পিএম
আপডেট: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:২৮ পিএম
নিজ হাতে উপার্জনের গুরুত্ব
প্রতীকী ছবি

প্রত্যেক মানুষের নৈতিক দায়িত্ব ও কর্তব্য হচ্ছে, জীবিকা উপার্জনের বৈধ কোনো পথ ও পন্থা খুঁজে বের করা। ইসলামে জীবিকা অর্জন করা মর্যাদাপূর্ণ ভার ও দায়িত্ব।  মনে রাখতে হবে, রিজিকের দায়িত্ব আল্লাহতায়ালা নিয়েছেন। এরপর মা-বাবাসহ আরও যাদের মাধ্যমে বান্দা রিজিকপ্রাপ্ত হয়, তারা সবাই আল্লাহতায়ালা কর্তৃক নির্বাচিত মাধ্যম ও প্রতিনিধি। একজন ইমানদার বান্দার সম্মানের জন্য আর কী চাই! আল্লাহতায়ালা নিজে যে দায়িত্ব নিয়েছেন, সে কাজের সম্মান ও মর্যাদা কি আলোচনা-পর্যালোচনার অপেক্ষা রাখে? আল্লাহতায়ালা যাকে দিয়ে খুশি, তাকে দিয়েই এই সম্মানের কাজ করিয়ে নিচ্ছেন। 

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘জগতের কোনো মানুষ কখনো নিজ হাতে উপার্জিত খাদ্যের চেয়ে উত্তম কোনো খাবার খায়নি। আর আল্লাহর নবি দাউদ (আ.) নিজ হাতে উপার্জিত খাবার খেতেন।’ (আল-মুজামুল কাবির , হাদিস: ৬৩৩)। উল্লিখিত হাদিসে দুটি বিষয় লক্ষণীয়—এক. জগতের শ্রেষ্ঠ খাবার হলো নিজ হাতের উপার্জিত খাবার। দুই. নিজ হাতের উপার্জন খাওয়া ছিল একজন বিখ্যাত নবির জীবনব্যাপী আমল। নবিদের অন্যতম দাউদ (আ.)—যিনি নিজের হাতের উপার্জন ছাড়া আহার করতেন না। এই উপমাটি একটু মনোযোগসহ বোঝা দরকার। কেননা দাউদ (আ.) ছিলেন একই সঙ্গে নবি ও বাদশা। এ সম্পর্কে কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘আর আল্লাহতায়ালা দাউদকে রাজত্ব ও হেকমত দান করলেন এবং যা তিনি ইচ্ছা করলেন তা তাকে শিক্ষা দিয়েছেন।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ২৫১)

অতঃপর তার সে রাজত্ব বিস্তৃত ছিল সিরিয়া, ইরাক, হেজাজ, জর্ডান ও ফিলিস্তিনব্যাপী! এই বিশাল সাম্রাজ্যের অধিপতি হিসেবে ধর্মীয় বিধানে সরকারি কোষাগার থেকেও প্রয়োজনীয় জীবিকা গ্রহণের আইনসম্মত অধিকার ছিল। কিন্তু তিনি সে অধিকার গ্রহণ করেননি; বরং নিজে পরিশ্রম করে জীবিকা উপার্জন করেছেন। তিনি নরম লোহা থেকে বর্ম তৈরি করে বাজারে বিক্রি করতেন। সেই অর্থে তার সংসার চলত। (কাসাসুল কোরআন, খণ্ড: ২, পৃষ্ঠা: ৭১)

পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘পূর্ণ মাপের বর্ম তৈরি করতে এবং বুননে পরিমাণ রক্ষা করতে পার; এবং তোমরা সৎকর্ম করো। তোমরা যা কিছু কর আমি তার সম্যক দ্রষ্টা।’ (সুরা সাবা, আয়াত: ১০-১১)। জীবিকা নির্বাহের জন্য উপার্জনের বৈধ পথ খুঁজে বের করা নৈতিক দায়িত্ব। 

লেখক: আলেম ও মাদরাসা শিক্ষক

১৫ মার্চ, ২০২৫ শনিবরের সাহরি ও ইফতারের সময়সূচি

প্রকাশ: ১৪ মার্চ ২০২৫, ১১:৫৫ পিএম
আপডেট: ১৫ মার্চ ২০২৫, ১১:০৭ এএম
১৫ মার্চ, ২০২৫ শনিবরের সাহরি ও ইফতারের সময়সূচি
১৫ মার্চ, ২০২৫ শনিবরের সাহরি ও ইফতারের সময়সূচির ছবি

আজ ১৫ মার্চ, ১৪ তম রোজা। শনিবার। এ দিনের সাহরির শেষ সময় ভোর ৪টা ৫১ মিনিট ও ইফতারির সময় ৬ টা ৮ মিনিট।

১৫ মার্চ, শনিবার, ২০২৫
সাহরির শেষ সময় : ৪.৫১ মিনিট
ইফতারের সময় : ৬.০৮ মিনিট

জাবের (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে নবী (সা.) বলেছেন, ‘প্রতিটি ইফতারের সময় এবং প্রতি রাতে লোকদের জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেওয়া হয়।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১৬৪৩)

 

সূত্র : ইসলামিক ফাউন্ডেশন

 

দোয়া শুধু চাওয়া নয়, আত্মার প্রশান্তিও

প্রকাশ: ১৪ মার্চ ২০২৫, ১০:৩০ পিএম
আপডেট: ১৫ মার্চ ২০২৫, ১১:০৭ এএম
দোয়া শুধু চাওয়া নয়, আত্মার প্রশান্তিও
মোনাজাতরত হাত ও মুসলিমের ছবি। সংগৃহীত

মানুষের জীবনে সবচেয়ে গভীর ও ব্যক্তিগত যে অনুভূতিটি আছে, তা হলো দোয়া। বিপদে-আপদে, স্বপ্নপূরণের আশায়, ব্যথায়-কষ্টে কিংবা নীরব ভালোবাসায় মানুষ একান্তে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে। দোয়া মানেই চাওয়া, আর আল্লাহই একমাত্র যিনি আমাদের সব চাওয়া পূরণ করতে পারেন। কিন্তু বাস্তবতা হলো, আমরা সবাই দোয়া করি, কিন্তু সবার দোয়া কি কবুল হয়? অনেকেই হতাশ হয়ে বলেন, “আমি তো বহুদিন ধরে দোয়া করছি, কিছুই হচ্ছে না!" তখন প্রশ্ন আসে, দোয়া কি আসলেই কবুল হয়? নাকি আমাদের চাওয়ায় কোনো ভুল থেকে যাচ্ছে?


আল্লাহ কোরআনে বলেন, “তোমরা আমাকে ডাকো, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেব।" (সুরা গাফির: ৬০) আল্লাহ আমাদের আশ্বস্ত করেছেন, যে-ই তাঁকে ডাকে, তিনি তা শোনেন। কিন্তু দোয়ার উত্তর আসার একটি নির্দিষ্ট নিয়ম আছে। রাসুল (সা.) বলেছেন, আল্লাহ বান্দার দোয়া তিনভাবে কবুল করেন- কখনো তিনি বান্দাকে তার চাওয়া জিনিসই দেন, কখনো তার চেয়ে ভালো কিছু দেন, আবার কখনো এই দোয়ার প্রতিদান আখিরাতের জন্য সংরক্ষণ করেন (মুসনাদ আহমদ, ১১১৩৩)। অর্থাৎ, মানুষ যেটিকে ‘না পাওয়া’ মনে করে, সেটিও আসলে পাওয়ারই অংশ। কারণ আল্লাহ আমাদের জন্য যা ভালো, সেটিই নির্ধারণ করেন।


আমাদের অনেকের মধ্যেই একটা ভুল ধারণা কাজ করে, আমরা মনে করি, দোয়া মানেই তাৎক্ষণিক ফল পাওয়া। কিন্তু দোয়া কখনোই জাদুর কাঠির মতো নয়, বরং এটি পরীক্ষা, আস্থার এবং ধৈর্যের বিষয়। অনেক সময় আমরা ভাবি, ‘কেন আমার দোয়া কবুল হচ্ছে না?’ অথচ আমরা কি কখনো নিজেদের দিকে ফিরে তাকাই? হাদিসে এসেছে, যে ব্যক্তি হারাম উপার্জন করে, হারাম খায়, তার দোয়া কবুল হয় না (মুসলিম, ১০১৫)। আমাদের রিজিক, জীবনযাপন, আত্মার শুদ্ধতা সবকিছুই দোয়া কবুলের সঙ্গে সম্পর্কিত। আমরা যদি নিজেদের সংশোধন না করি, তা হলে আল্লাহর কাছে আমাদের আকুতি কতটুকু গ্রহণযোগ্য হবে?


দোয়া কবুলের কিছু নির্দিষ্ট সময় আছে, যখন দোয়া করা বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। রাতের শেষ তৃতীয়াংশ, যখন আল্লাহ নিজে পৃথিবীর আকাশে নেমে আসেন এবং বলেন, ‘কোনো প্রার্থনাকারী আছে কি, যে আমার কাছে চাইবে? আমি তাকে দেব।’ (বুখারি, ১১৪৫) এ সময় দোয়া কবুল হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। ঠিক তেমনি আজানের পর, ইফতারের সময়, বৃষ্টি নামার মুহূর্ত, জুমার দিনের বিশেষ সময়ে দোয়া করলে তা কবুল হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, আমরা কি এই সময়গুলো কাজে লাগাই? নাকি দোয়া শুধু তখনই করি, যখন বিপদে পড়ি?


দোয়া শুধু চাওয়ার বিষয় নয়, এটি আত্মার প্রশান্তিরও মাধ্যম। আমরা যখন আল্লাহর কাছে কোনো কিছু চাই, তখনই আমাদের মনের মধ্যে একটা নির্ভরতা তৈরি হয়। মনে হয়, ‘আমার চাওয়া শোনা হচ্ছে, আমি একা নই।’ তাই দোয়া কখনো বৃথা যায় না, বরং এটি আমাদের অন্তরের প্রশান্তি ও আশার প্রদীপ হয়ে থাকে। আল্লাহ কখনো আমাদের শূন্য হাতে ফেরান না, হয় দুনিয়ায়, নয়তো আখিরাতে তিনি তার প্রতিদান দেন। তাই হতাশ না হয়ে, ধৈর্য ধরে, নিজের আত্মশুদ্ধির দিকে মনোযোগ দিয়ে আমাদের দোয়া করতে হবে।


অনেক সময় আমরা চাওয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকি, কিন্তু কোরআনে আল্লাহ বলেছেন, ‘তোমরা যদি কৃতজ্ঞ হও, তবে আমি তোমাদের আরও বেশি দেব।’ (সুরা ইবরাহিম: ৭) আমরা কি দোয়ার পাশাপাশি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি? নাকি শুধু চাই, কিন্তু যে নেয়ামতগুলো ইতোমধ্যেই পেয়েছি, তার জন্য কৃতজ্ঞতা জানাতে ভুলে যাই? অনেক সময় আল্লাহ আমাদের দোয়া দেরিতে কবুল করেন, কারণ তিনি আমাদের ধৈর্য পরীক্ষা করেন। আমরা যদি ধৈর্য ধরে, দৃঢ় বিশ্বাস নিয়ে আল্লাহর কাছে চাই, তা হলে কোনো দোয়াই বৃথা যাবে না।


আল্লাহ আমাদের সব নেক দোয়া কবুল করুন, আমাদের অন্তরকে তাঁর প্রতি আস্থায় পরিপূর্ণ করুন এবং আমাদের দেরিতে পাওয়া কিংবা না পাওয়ার মধ্যেও যে কল্যাণ লুকিয়ে আছে, তা বোঝার ক্ষমতা দিন। আমিন!

 

লেখক : শিক্ষার্থী, জাপানিজ স্টাডিজ বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় 

 

 

‘রমজান হলো সেই মাস, যাতে কোরআন নাজিল হয়েছে’

প্রকাশ: ১৪ মার্চ ২০২৫, ০৩:৩০ পিএম
‘রমজান হলো সেই মাস, যাতে কোরআন নাজিল হয়েছে’
কোরআন তিলাোয়াতরত মুসলিমের ছবি। সংগৃহীত

মাহে রমজান হলো মর্যাদাপূর্ণ মাস। এর কারণ হলো এ মাসে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন মানবজাতির হিদায়াতের জন্য পবিত্র কোরআন নাজিল করেন। মূলত কোরআন মাজিদকে বুকে ধারণ করার কারণেই এ মাস এত বরকতময় এবং এ মাসের এত মর্যাদা, এত গুরুত্ব। কারণ কোরআন মাজিদ হলো পরশ পাথরের ন্যায়, যেই তার সংস্পর্শ পায় সেই বরকতময় হয়ে ওঠে। তা ছাড়া কোরআন মাজিদ মানুষের জন্য আল্লাহতায়ালার দেওয়া নিয়ামতসমূহের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ নিয়ামত। এর নাজিলের ঘটনা মানবতার ইতিহাসে সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘রমজান হলো সে মাস, যে মাসে কোরআন নাজিল করা হয়েছে, যা মানবজাতির জন্য হিদায়াত এবং সত্য পথযাত্রীদের জন্য সুস্পষ্ট পথনির্দেশ আর ন্যায়-অন্যায়ের মাঝে পার্থক্য বিধানকারী। কাজেই তোমাদের মধ্যে যেই এ মাসটি পাবে, সে যেন এ মাসের রোজা রাখে।’ (সুরা আল-বাকারাহ, আয়াত নং-১৮৫) 


মহাগ্রন্থ কোরআন মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের পক্ষ থেকে মানবজাতির জন্য সর্বশেষ দিকনির্দেশনা বা হিদায়াত। আর এ কোরআন মাজিদ রমজান মাসে নাজিল হয়েছে। এ মাসের শেষ ১০ দিনের কোনো এক বিজোড় রাতে লাওহে মাহফুজ থেকে পৃথিবীতে হেরা গুহায় পবিত্র কোরআন মাজিদ নাজিলের সূচনা হয়। এরপর রাসুল (সা.)-এর ২৩ বছরের নবুয়তি জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে প্রয়োজন অনুসারে অল্প অল্প করে সমগ্র কোরআন নাজিল সম্পন্ন হয়।


কোরআন মাজিদ নাজিলের সূচনার এ রাতকে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ‘লাইলাতুল কদর’ নামে অভিহিত করেছেন। তিনি ইরশাদ করেন, ‘নিশ্চয় আমি একে (কোরআন মাজিদ) নাজিল করেছি লাইলাতুল কদরে। (হে রাসুল), আপনি কি জানেন লাইলাতুল কদর কী? লাইলাতুল কদর হলো এক হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। এতে প্রত্যেক কাজের জন্যে ফেরেশতাগণ ও রুহ নাজিল হয় তাদের রবের নির্দেশক্রমে। বিরাজ করে শান্তি, যতক্ষণ না ঊষার আবির্ভাব হয়।’ (সুরা আল কদর, আয়াত নং ১-৫)


পবিত্র কোরআন মাজিদের মর্ম অনুধাবনের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করতেই মহান আল্লাহ এ মাসে জান্নাতের দরজাগুলো উন্মুক্ত করে দেন, জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেন এবং শয়তানকে শৃঙ্খলিত করে রাখেন। যাতে মানুষ জান্নাতি পরিবেশে শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে মুক্ত হয়ে পবিত্র কোরআন মাজিদের মর্ম উপলব্ধি করতে পারে। মূলত মাহে রমজানের হক হলো মানুষ কোরআন নিয়ে গবেষণা করবে এবং উপলব্ধি করে কোরআন ও সুন্নাহভিত্তিক জীবন গঠন করার চেষ্টা করবে। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ইরশাদ করেন- ‘এটি একটি বরকতময় কিতাব, যা আমি আপনার প্রতি অবতীর্ণ করেছি, যাতে মানুষ এর আয়াতসমূহ অনুধাবন করে এবং বোধশক্তি সম্পন্ন ব্যক্তিগণ উপদেশ গ্রহণ করে।’ (সুরা ছোয়াদ, আয়াত নং ২৯)।


আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন, ‘রমজান মাসের প্রতি রাতে জিবরাইল (আ.) রাসুল (সা.)-এর নিকট হাজির হতেন এবং তারা উভয়ই কোরআন মাজিদ তিলাওয়াত করে একে অপরকে শোনাতেন।’ (সহিহ বুখারি)। কোরআন তিলাওয়াত করাকে মহানবি (সা.) সর্বোত্তম নফল ইবাদত বলে অভিহিত করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘কেউ যদি আল্লাহর কিতাবের একটি হরফ পাঠ করে, তা হলে সে নেকি পায়। আর এ নেকির পরিমাণ হলো দশগুণ।’ (তিরমিজি শরিফ)। রাসুল (সা.) আরো ইরশাদ করেন- ‘আমার উম্মতের সর্বোত্তম ইবাদত (নফল) হলো কোরআন তিলাওয়াত।’ (বায়হাকি)। রমজানের সঙ্গে পবিত্র কোরআন মাজিদের বিশেষ সম্পর্ক বিদ্যমান। 


হাদিস থেকে জানা যায়, এ সম্পর্ক দুভাবে হয়। প্রথমত রমজান মাসে রাতদিন কোরআন তিলাওয়াত করা এবং দ্বিতীয়ত রাতে তারাবিহের সালাতে কোরআন তিলাওয়াত করা বা শোনা। সারা বছরই কোরআন তিলাওয়াত করতে হবে। তবে রমজান মাসে কোরআন তিলাওয়াতে অতিরিক্ত সাওয়াব ও বরকত রয়েছে। এ কারণে সাহাবায়ে কিরাম, বুজুর্গানে দ্বীন ও আধ্যাত্মিক সাধকেরা রমজান মাসে কোরআনময় হয়ে যেতেন। কোরআন মাজিদের সাথে গড়ে তুলতেন বিশেষ সম্পর্ক। রমজান মাসে সাহাবায়ে কিরাম কোরআন মাজিদ মুখস্থ করার জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করতেন। উম্মুল মুমিনীন হজরত আয়েশা (রা.) রমজান মাসে সুবহে সাদিকের পর থেকে সুর্যোদয় পর্যন্ত পবিত্র কোরআন মাজিদ তিলাওয়াত করতেন।

 

লেখক : আলেম, প্রাবন্ধিক ও কলেজ শিক্ষক

আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের মাস

প্রকাশ: ১৪ মার্চ ২০২৫, ১১:৩০ এএম
আপডেট: ১৪ মার্চ ২০২৫, ০৩:৩১ পিএম
আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের মাস
প্রতীকী ছবি

হাদিসের ভাষায় কালিমা, নামাজ, রোজা, হজ ও জাকাত হলো—ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ মৌলিক পাঁচটি ভিত্তি। আর রমজান মাস হলো, পূর্ণ এক বছরে মাত্র ত্রিশটি ফরজ রোজা আদায় করা। সিয়াম সাধনা এবং তাকওয়া তথা খোদাভীতি অর্জন করার মাস। গুনাহসমূহকে বর্জন করে আল্লাহর সন্তুষ্টি ও ক্ষমা লাভের মাস।


পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহতায়ালা বলেন— হে ইমানদারগণ! তোমাদের ওপর (রমজানের) রোজা ফরজ করা হয়েছে। যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর, যাতে করে তোমরা মুত্তাকি হতে পারো। তথা আল্লাহভীতি অর্জন করতে পারো। (সুরা বাকারা : ১৮৩)


আল্লাহর নৈকট্য লাভ করার আশা নেই এমন কে আছে? কাজেই আমাদেরকে স্মরণে রাখতে হবে,  আল্লাহর নৈকট্য লাভের অপূর্ব এক মৌসুম হলো মাহে রমজান। জাহান্নাম থেকে মুক্তি এবং আল্লাহর নৈকট্য লাভ করাই হলো মুমিন বান্দার জীবনের এক পরম পাওয়া। আর এ মাসেই রয়েছে গুনাহ থেকে মুক্তির ঘোষণা এবং তাকওয়া তথা আল্লাহভীতি লাভ করার ঘোষণা। 


আল্লাহতায়ালার নৈকট্য লাভ এবং গুনাহমুক্ত জীবন গড়ার জন্য তাকওয়া অর্জনের কোনো বিকল্প নেই। তথা আল্লাহর ভয় এবং পরকালীন শাস্তি ও জবাবদিহিতা থেকে বাঁচতে, আল্লাহর বিধান মেনে চলা, হারাম থেকে বিরত থাকা এবং হালাল বিষয়াবলিকে প্রাধান্য দেওয়াই হলো আল্লাহর ভয় বা তাকওয়া। আল্লাহর বিধান পালনে হারাম কার্যাবলি পরিহার করাই তাকওয়া। আল্লাহভীতি অর্জন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি আমল। একমাত্র আল্লাহভীতিই পারে মানুষকে যাবতীয় অন্যায়-অনাচার, পাপাচার ও দুর্নীতি থেকে বিরত রাখতে। আর রমজান হলো এই তাকওয়া অর্জন তথা আল্লাহভীতি অর্জনের মাস। উপর্যুক্ত এ আয়াত থেকে আমরা আরও একটি বিষয় জানতে পারি তা হলো—রোজা শুধু আমাদের জন্যই ফরজ বা আবশ্যক নয়। বরং পূর্ববর্তী আরও অনেক জাতির জন্যও এটি আবশ্যক ছিল। 


রোজার বিনিময় সম্পর্কে হাদিসে কুদসিতে রাসুল (সা.) বলেন—আল্লাহতায়ালা বলেন– আদম সন্তানের প্রতিটি আমলই তার (নিজের) জন্য। তবে রোজার ব্যাপারটি ভিন্ন। আর রোজা আমার জন্য এবং আমিই তার প্রতিদান দেব। (বুখারি: ১৮০৫)
এ ছাড়া রোজা ও কিয়ামুল লাইলের বিনিময়েও রয়েছে গুনাহ মাফের ঘোষণা। গুনাহ বা পাপ করেনি- এমন মানুষ খুব কমই আছে বললে ভুল হবে না। তাই আমাদের প্রত্যেকের জন্য উচিত হবে, গুনাহ থেকে মুক্তিলাভের জন্য আল্লাহ প্রদত্ত এ মাসকে মূল্যায়ন করা। আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া এবং গুনাহ থেকে মুক্ত হয়ে তাঁর নৈকট্য লাভের জন্য চেষ্টা করা। 


 ‎বিখ্যাত সাহাবি ‎হজরত আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেন—যে ব্যক্তি রমজানের রাতে ইমানসহ পুণ্যের আশায় রাত জেগে (তারাবি ও তাহাজ্জুদ আদায়ের মাধ্যমে) ইবাদত করে, তার পূর্বের গুনাহ্গুলো ক্ষমা করে দেওয়া হয়। (বুখারি : ৩৭)


এমনিভাবে সাহাবি হজরত আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি ইমানসহ পুণ্য লাভের আশায় রমজানের সিয়াম—রোজা পালন করে, তার পূর্বের গুনাহগুলো ক্ষমা করে দেওয়া হয়। (সহিহ বুখারি : ৩৮)। উপর্যুক্ত হাদিস দুটিও আমাদেরকে স্পষ্ট করে যে, মাহে রমজানে রোজা রাখা এবং রাত জেগে তারাবি ও তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করার মাধ্যমেই রয়েছে গুনাহ মাফের ঘোষণা। তাই রমজানের রোজা রাখার বিষয়ে আমাদের প্রত্যেককেই সমান গুরুত্ব দেওয়া উচিত। একইভাবে রাতের ইবাদতের প্রতিও মনোযোগী হওয়া জরুরি। কারণ, এ দুটি আমলের বিনিময়ে রয়েছে গুনাহ মাফের ঘোষণা। 


আল্লাহতায়ালা আমাদের সবাইকে রমজানের রোজা, তারাবি ও তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করার সুযোগ দান করুন। এ দুটি আমলের মাধ্যমে গুনাহমুক্ত জীবনলাভের তাওফিক দান করুন। আমিন।

 

লেখক : খতিব, ভবানীপুর মাইজপাড়া হক্কানি জামে মসজিদ, গাজীপুর 

রাসুলুল্লাহ (সা.) যেভাবে রমজান কাটাতেন—১৩ স্ত্রীদের সঙ্গে যেমন আচরণ করতেন

প্রকাশ: ১৪ মার্চ ২০২৫, ০৯:০০ এএম
আপডেট: ১৪ মার্চ ২০২৫, ০৩:৩১ পিএম
স্ত্রীদের সঙ্গে যেমন আচরণ করতেন
আরবিতে মুহাম্মাদ লেখা ক্যালিগ্রাফি । সংগৃহীত

রাসুলুল্লাহ (সা.) স্ত্রীগণের সঙ্গে খুবই বন্ধুসুলভ আচরণ করতেন। অভ্যাস-আচরণের এ বৈশিষ্ট্য আজীবন তিনি বজায় রেখেছেন। রমজান মাসেও বজায় থাকত তাঁর এ আচরণ-শুভ্রতা। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) রমজানের শেষ দশ দিনে ইতেকাফ পালন করতেন। আমি তার জন্য একটি তাঁবু টানালাম, তিনি ফজরের নামাজ আদায় করে তাতে প্রবেশ করলেন। হাফসা তাঁবু টানানোর জন্য অনুমতি চাইলে তিনি তাকে অনুমতি দিলেন এবং হাফসা আরেকটি তাঁবু টানালেন। জয়নব বিনতে জাহাশ দেখতে পেয়ে তার নিজের জন্য আরেকটি তাঁবু টানালেন। সকালে রাসুলুল্লাহ (সা.) অনেকগুলো তাঁবু দেখে বললেন, এগুলো কি? তাকে বিস্তারিত জানানো হলে তিনি বললেন, তোমরা (সাহাবিদের উদ্দেশ্যে) কি একে পুণ্যের মনে করো? সে মাসে তিনি ইতেকাফ পরিত্যাগ করলেন, অতঃপর (কাজাস্বরূপ) শাওয়ালের দশ দিন ইতেকাফ করলেন।’ (বুখারি, হাদিস নং- ২০৪১)। 


আয়েশা (রা.) থেকে আরও বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) ইতেকাফকালীন আমার কাছে মাথা এগিয়ে দিতেন, আমি তার কেশবিন্যাস করে দিতাম। মানবিক প্রয়োজন ছাড়া তিনি গৃহে প্রবেশ করতেন না। 
অন্য এক রেওয়ায়েতে আছে, ‘ইতেকাফকালীন তিনি তার মাথা আমার কাছে এগিয়ে দিতেন। আমি হায়েজা অবস্থাতেও তা ধৌত করে দিতাম। স্বামী-স্ত্রীর মাঝে সম্পর্ক ও প্রীতির এর চেয়ে উত্তম নিদর্শন রয়েছে বলে আমি অবগত নই।’ (মুসলিম, হাদিস নং- ২৯৭)।  


রাসুলুল্লাহ (সা.) রমজান মাসে নানাভাবে তার স্ত্রীগণকে শিক্ষাদান করতেন। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল! আপনার কী মত, আমি যদি লাইলাতুল কদর সম্পর্কে জ্ঞাত হই, তা হলে আমি কী দোয়া পাঠ করব? রাসুলুল্লাহ (সা.) তাকে বললেন, এ দোয়া পাঠ করবে— বাংলা উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউউন তুহিব্বুল আফওয়া ফাফু আন্নি। বাংলা অর্থ : হে আল্লাহ! আপনি ক্ষমাশীল সম্মানিত, আপনি ক্ষমা পছন্দ করেন। সুতরাং আমাকে ক্ষমা করুন।’ (তিরমিজি : হাদিস নং- ৩৫১৩)


রোজা অবস্থাতেও রাসুল (সা.) তাঁর স্ত্রীগণকে চুম্বন করতেন, সহবাস ছাড়া ঘনিষ্ঠভাবে মেলামেশা করতেন। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রমজান মাসেও রাসুলুল্লাহ (সা.) চুম্বন করতেন।’ (বুখারি, হাদিস নং- ১৮২৭)। অপর রেওয়ায়েতে আছে, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) রমজানে রোজা রেখে স্ত্রীকে চুম্বন করতেন।’


রাসুলুল্লাহ (সা.) তার পরিবারকে রমজানের শেষ দশ দিনে রাতে জাগিয়ে দিতেন। (বুখারি, হাদিস নং- ২০২৪, মুসলিম, হাদিস নং- ১১৭৪)। রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁর স্ত্রীগণকে তাঁর সঙ্গে ইতেকাফ পালনের অনুমতি প্রদান করতেন। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) শেষ দশ দিনে ইতেকাফের কথা উল্লেখ করলেন। আয়েশা (রা.) অনুমতি চাইলে তাকে অনুমতি দিলেন। হাফসাও (রা.) আয়েশার (রা.) জন্য অনুমতির কথা বলে অনুমতি নিলেন।’ (বুখারি, হাদিস নং- ২০৪১)। রাসুলুল্লাহ (সা.) রমজানে সম্মিলিতভাবে তাঁর স্ত্রীগণের সঙ্গে ইবাদত পালন করতেন। রমজানের কিছু কিছু রাতে তাঁর সঙ্গে স্ত্রীগণ জামাতে নামাজ আদায় করতেন। (আবু দাউদ, হাদিস নং- ১৩৭৫; ইবনে মাজাহ, হাদিস নং- ১৩২৭)।  
 

লেখক : আলেম, গবেষক ও সাংবাদিক