ঢাকা ১ চৈত্র ১৪৩১, শনিবার, ১৫ মার্চ ২০২৫
English

গত এক যুগে ইসলামি প্রকাশনায় একটি বিপ্লব সাধিত হয়েছে

প্রকাশ: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১০:৪২ এএম
আপডেট: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১০:৪৯ এএম
গত এক যুগে ইসলামি প্রকাশনায় একটি বিপ্লব সাধিত হয়েছে
সুলতানসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রেদোয়ান ইসলাম। ছবি: সংগৃহীত

রেদোয়ান ইসলাম সুলতানস প্রকাশনীর ব্যবস্থাপনা পরিচালক। বরিশাল সদরে জন্ম। ঢাকা উত্তরার মাদরাসাতুল হিকমা থেকে হেফজ শেষ করেছেন। কম্পিউটার সায়েন্সের ওপর বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং করেছেন গ্রিন ইউনিভার্সিটি থেকে। তার প্রকাশক হওয়ার গল্প, ইসলামি বইয়ের চাহিদা ও পাঠক বৃদ্ধি, সুলতানস কোন ধরনের বই প্রকাশে আগ্রহী, মানসম্মত বই প্রকাশে তাদের ভূমিকা কেমন ইত্যাদি বিষয়ে কথা বলেছেন খবরের কাগজের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন রায়হান রাশেদ

খবরের কাগজ: আপনি প্রকাশক হলেন কেন?
রেদোয়ান ইসলাম: জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দেওয়াকে আমি জীবনের এক মহৎ উদ্দেশ্য হিসেবে দেখেছি। বিশেষ করে ইসলামি জ্ঞান এবং নৈতিকতার পাঠ মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া আমার দায়িত্ব মনে করি। এই মহৎ উদ্দেশ্য ও দায়িত্বের জায়গা থেকে আমি প্রকাশক হয়েছি। এক্ষেত্রে আমার ছোট কাকু (চাচা) বাংলাদেশের প্রসিদ্ধ লেখক মিরাজ রহমান এবং আমার পিতার অবদানের কাছে আমি ঋণী। 

খবরের কাগজ: ইসলামি বইয়ের পাঠক দিন দিন বাড়ছে বলে কী আপনি মনে করেন?
রেদোয়ান ইসলাম: হ্যাঁ, নিঃসন্দেহে। বর্তমান সময়ে মানুষ ইসলাম সম্পর্কে জানতে ও বুঝতে আগ্রহী হচ্ছে। বিশেষত তরুণ প্রজন্ম কোরআন, হাদিস এবং ইসলামি জীবনব্যবস্থা সম্পর্কে জানতে বেশ আগ্রহী এবং এটি অন্যান্য সময়ের তুলনায় এখন বেশি। গত পাঁচ-সাত বছরে ইসলামি বইয়ের চাহিদা অনেক বেড়েছে। এক্ষেত্রে গত এক যুগে ইসলামি প্রকাশনা সেক্টরে একটি বিপ্লব হয়েছে বলে আমি মনে করি এবং সুলতানস সে বিপ্লবের অন্যতম অংশীদার, আলহামদুলিল্লাহ। আর এটি আমাদের জন্য একটি বড় প্রেরণা।

খবরের কাগজ: আপনার প্রকাশনী সম্পর্কে কিছু বলুন। কী ধরনের বই প্রকাশে আপনারা আগ্রহী? 
রেদোয়ান ইসলাম: আমাদের ‘সুলতানস’ প্রকাশনী মানসম্পন্ন বই প্রকাশে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমরা প্রতিটি বইয়ের বিষয়বস্তু, সম্পাদনা এবং মুদ্রণ প্রক্রিয়ায় সর্বোচ্চ মান বজায় রাখি। বিশ্বস্ত লেখক ও গবেষকদের সঙ্গে কাজ করে তথ্যবহুল ও প্রাঞ্জল ভাষায় উপস্থাপিত বই প্রকাশ করি। বইয়ের নকশা ও বাঁধাইয়ের ক্ষেত্রেও আমরা উৎকৃষ্ট মান নিশ্চিত করি, যাতে পাঠকরা একটি সন্তোষজনক পাঠ অভিজ্ঞতা লাভ করেন। আমাদের প্রকাশিত বইগুলো যেমন- মুসলিম সভ্যতার ১০০১ আবিষ্কার, দ্য গ্রেটেস্ট অন্ট্রাপ্রেনর মুহাম্মাদ (সা.) এবং হিলিং দ্য এম্পটিনেস, পাঠকদের মধ্যে ইতিবাচক সাড়া ফেলেছে। এই বইগুলোর মান নিয়ে পাঠকরা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন। আমরা কোরআন হাদিসের আলোকে জীবনঘনিষ্ঠ বই প্রকাশ করি। সিরাত বিষয়ে আমাদের কয়েকটি বই বেস্ট সেলার হয়েছে। প্রতিটি বইয়ের কনটেন্ট আমরা যুগোপযোগী বিষয়ের সঙ্গে মিল রেখে করি। সর্বপরি আমরা সব সময় মানসম্মত কনটেন্ট এবং আকর্ষণীয় ডিজাইনের ওপর গুরুত্ব দিই। আমাদের প্রতিটি বই গবেষণালব্ধ তথ্য এবং প্রাঞ্জল ভাষায় উপস্থাপিত হয়, যাতে তা পাঠকের জন্য সহজপাঠ্য ও উপকারী হয়। 

খবরের কাগজ: এবারের মেলাতে নতুন কি বই প্রকাশ করেছে সুলতানস?
রেদোয়ান ইসলাম: ২০২৫ অমর একুশে বইমেলায় প্রকাশিত উসওয়াতুন হাসানা প্রোডাক্টিভ মুহাম্মাদ (সা.) বইটি মহানবি মুহাম্মাদ (সা.)-এর জীবন থেকে প্রোডাক্টিভিটির শিক্ষা নিয়ে রচিত। লেখক মিরাজ রহমান এই গ্রন্থে নবিজির (সা.) কর্মপদ্ধতি, সময় ব্যবস্থাপনা এবং জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাঁর প্রোডাক্টিভ দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেছেন। বইটি পাঠকদেরকে নবিজির (সা.) জীবন থেকে শিক্ষা নিয়ে নিজেদের দৈনন্দিন জীবনে প্রোডাক্টিভ হতে সহায়তা করবে। যারা ইসলামি মূল্যবোধের আলোকে সফল ও প্রোডাক্টিভ জীবন গড়তে চান, তাদের জন্য এটি একটি মূল্যবান বই।

রাসুলুল্লাহ (সা.) যেভাবে রমজান কাটাতেন—১৪ যেসব আমল বেশি বেশি করতেন

প্রকাশ: ১৫ মার্চ ২০২৫, ১১:২২ এএম
যেসব আমল বেশি বেশি করতেন
প্রতীকী ছবি

রমজান একটি বরকতপূর্ণ ও তাৎপর্যপূর্ণ মাস। এ মাসে আল্লাহতায়ালা মুমিনের প্রতিটি আমলের প্রতিদান বহু গুণে বাড়িয়ে দেন। এ মাসে একটি নফল আদায় করলে, অন্য সময়ের ফরজ আদায়ের সওয়াব হয়। আর ফরজ আদায় করলে অন্য সময়ের সত্তরটি ফরজ আদায়ের সমান হয়। (শুআবুল ঈমান, ৩৩৩৬)। তাই অন্যান্য মাসের তুলনায় এ মাসে বেশি বেশি নেক আমল করা প্রতিটি মুমিনের কর্তব্য। এ মাসে রাসুলুল্লাহ (সা.) থেকে বিশেষ কিছু আমলের কথা হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। 

 

বেশি বেশি কোরআন তেলাওয়াত করা : রমজান মাসের একটি বিশেষ আমল কোরআন তেলাওয়াত করা। রাসুলুল্লাহ (সা.) অন্যান্য সময়ের তুলনায় এ মাসে অধিক পরিমাণ কোরআন তেলাওয়াত করতেন। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত; তিনি বলেন, ‘রমজান ছাড়া অন্য কোনো রাতে আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে পূর্ণ কোরআন তেলাওয়াত করতে কিংবা ভোর অবধি নামাজে কাটিয়ে দিতে অথবা পূর্ণ মাস রোজা পালন করে কাটিয়ে দিতে দেখিনি।’ (মুসলিম, ১৭৭৩)।

 

দান-সদকা : দান-সদকা একটি বিশেষ আমল। রমজানে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর দান-খয়রাত বহুগুণ বেড়ে যেত। ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‌ রাসুলুল্লাহ (সা.) মানুষের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দানশীল ছিলেন। আর রমজান মাসে তা আরও বেড়ে যেত। এ সময় জিবরাইল (আ.) তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতেন। রমজানের প্রতি রাতে জিবরাইল (আ.) রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গে কোরআন পাঠ করতেন। এ সময় রাসুলুল্লাহ (সা.) প্রবহমান বাতাসের চেয়েও বেশি দান করতেন।’ (মুসলিম, ২৩০৮)।

 

রাসুল যে চারটি কাজ বেশি বেশি করতেন : রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা রমজান মাসে চারটি কাজ বেশি বেশি করো। তন্মধ্যে দুটি কাজ এমন, যা করলে তোমাদের প্রতিপালক সন্তুষ্ট হন। আর অপর দুটি কাজ এমন, যা না করে উপায় নেই। যে দুটি কাজে তোমাদের প্রতিপালক খুশি হন, তা হলো, কালিমা তাইয়্যেবা পাঠ করা ও ইসতেগফার করা। আর যে দুটি কাজ না করে উপায় নেই, তা হলো, তোমারা আল্লাহর কাছে জান্নাত প্রার্থনা করো এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তি কামনা করো।’ (ইবনে খুজাইমা, ১৮৮৭)।

 

রাত জেগে ইবাদত করা: রাসুলুল্লাহ (সা.)বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে প্রতিদান প্রাপ্তির আশায় রমজানের রোজা রাখবে এবং ইবাদতে রাত জাগরণ করবে, সে ভূমিষ্ঠ শিশুর ন্যায় যাবতীয় গোনাহ থেকে নিষ্পাপ হয়ে যাবে।’ (ইবনে খুজাইমা, ২২০১)।

 

বেশি বেশি জিকির-আজকার : রমজানের প্রতিটি মুহূর্ত অনেক মূল্যবান। তাই একজন মুমিন রমজানের পুরো সময় কাজে লাগাতে পারে। বিশেষ করে জিকির-আজকারে।  আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আমার কাছে সমস্ত পৃথিবী অপেক্ষাও প্রিয়তর হচ্ছে সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ ও আল্লাহু আকবার বলা।’ (মুসলিম, ২২৯৫)। 
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে আরও বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি দৈনিক একশত বার বলবে, সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহী অর্থাৎ আল্লাহর পবিত্রতা বর্ণনা করি তাঁর প্রশংসার সঙ্গে, তার সমস্ত গুনাহ মাফ করা হবে, যদিও তার গুনাহ সমুদ্রের ফেনার ন্যায় অধিক হয়।’ (মুসলিম, ২২৯৬)।

 

লাইলাতুল কদর তালাশ করা : রমজান মাসে এমন একটি রাত রয়েছে, যা হাজার মাসের চেয়ে উত্তম। আল কোরআনের ঘোষণা, ‘কদরের রাত হাজার মাসের চেয়েও উত্তম।’ (সুরা কদর, ৪)। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ঈমান ও সওয়াব পাওয়ার আশায় ইবাদত করবে, তার আগের সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে।’ (বুখারি, ৩৫)।


 
লেখক : আলেম, গবেষক ও সাংবাদিক

১৫ মার্চ, ২০২৫ শনিবারের সাহরি ও ইফতারের সময়সূচি

প্রকাশ: ১৪ মার্চ ২০২৫, ১১:৫৫ পিএম
আপডেট: ১৫ মার্চ ২০২৫, ১১:৩৫ এএম
১৫ মার্চ, ২০২৫ শনিবারের সাহরি ও ইফতারের সময়সূচি
১৫ মার্চ, ২০২৫ শনিবরের সাহরি ও ইফতারের সময়সূচির ছবি

আজ ১৫ মার্চ, ১৪ তম রোজা। শনিবার। এ দিনের সাহরির শেষ সময় ভোর ৪টা ৫১ মিনিট ও ইফতারির সময় ৬ টা ৮ মিনিট।

১৫ মার্চ, শনিবার, ২০২৫
সাহরির শেষ সময় : ৪.৫১ মিনিট
ইফতারের সময় : ৬.০৮ মিনিট

জাবের (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে নবী (সা.) বলেছেন, ‘প্রতিটি ইফতারের সময় এবং প্রতি রাতে লোকদের জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেওয়া হয়।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১৬৪৩)

 

সূত্র : ইসলামিক ফাউন্ডেশন

 

দোয়া শুধু চাওয়া নয়, আত্মার প্রশান্তিও

প্রকাশ: ১৪ মার্চ ২০২৫, ১০:৩০ পিএম
আপডেট: ১৫ মার্চ ২০২৫, ১১:০৭ এএম
দোয়া শুধু চাওয়া নয়, আত্মার প্রশান্তিও
মোনাজাতরত হাত ও মুসলিমের ছবি। সংগৃহীত

মানুষের জীবনে সবচেয়ে গভীর ও ব্যক্তিগত যে অনুভূতিটি আছে, তা হলো দোয়া। বিপদে-আপদে, স্বপ্নপূরণের আশায়, ব্যথায়-কষ্টে কিংবা নীরব ভালোবাসায় মানুষ একান্তে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে। দোয়া মানেই চাওয়া, আর আল্লাহই একমাত্র যিনি আমাদের সব চাওয়া পূরণ করতে পারেন। কিন্তু বাস্তবতা হলো, আমরা সবাই দোয়া করি, কিন্তু সবার দোয়া কি কবুল হয়? অনেকেই হতাশ হয়ে বলেন, “আমি তো বহুদিন ধরে দোয়া করছি, কিছুই হচ্ছে না!" তখন প্রশ্ন আসে, দোয়া কি আসলেই কবুল হয়? নাকি আমাদের চাওয়ায় কোনো ভুল থেকে যাচ্ছে?


আল্লাহ কোরআনে বলেন, “তোমরা আমাকে ডাকো, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেব।" (সুরা গাফির: ৬০) আল্লাহ আমাদের আশ্বস্ত করেছেন, যে-ই তাঁকে ডাকে, তিনি তা শোনেন। কিন্তু দোয়ার উত্তর আসার একটি নির্দিষ্ট নিয়ম আছে। রাসুল (সা.) বলেছেন, আল্লাহ বান্দার দোয়া তিনভাবে কবুল করেন- কখনো তিনি বান্দাকে তার চাওয়া জিনিসই দেন, কখনো তার চেয়ে ভালো কিছু দেন, আবার কখনো এই দোয়ার প্রতিদান আখিরাতের জন্য সংরক্ষণ করেন (মুসনাদ আহমদ, ১১১৩৩)। অর্থাৎ, মানুষ যেটিকে ‘না পাওয়া’ মনে করে, সেটিও আসলে পাওয়ারই অংশ। কারণ আল্লাহ আমাদের জন্য যা ভালো, সেটিই নির্ধারণ করেন।


আমাদের অনেকের মধ্যেই একটা ভুল ধারণা কাজ করে, আমরা মনে করি, দোয়া মানেই তাৎক্ষণিক ফল পাওয়া। কিন্তু দোয়া কখনোই জাদুর কাঠির মতো নয়, বরং এটি পরীক্ষা, আস্থার এবং ধৈর্যের বিষয়। অনেক সময় আমরা ভাবি, ‘কেন আমার দোয়া কবুল হচ্ছে না?’ অথচ আমরা কি কখনো নিজেদের দিকে ফিরে তাকাই? হাদিসে এসেছে, যে ব্যক্তি হারাম উপার্জন করে, হারাম খায়, তার দোয়া কবুল হয় না (মুসলিম, ১০১৫)। আমাদের রিজিক, জীবনযাপন, আত্মার শুদ্ধতা সবকিছুই দোয়া কবুলের সঙ্গে সম্পর্কিত। আমরা যদি নিজেদের সংশোধন না করি, তা হলে আল্লাহর কাছে আমাদের আকুতি কতটুকু গ্রহণযোগ্য হবে?


দোয়া কবুলের কিছু নির্দিষ্ট সময় আছে, যখন দোয়া করা বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। রাতের শেষ তৃতীয়াংশ, যখন আল্লাহ নিজে পৃথিবীর আকাশে নেমে আসেন এবং বলেন, ‘কোনো প্রার্থনাকারী আছে কি, যে আমার কাছে চাইবে? আমি তাকে দেব।’ (বুখারি, ১১৪৫) এ সময় দোয়া কবুল হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। ঠিক তেমনি আজানের পর, ইফতারের সময়, বৃষ্টি নামার মুহূর্ত, জুমার দিনের বিশেষ সময়ে দোয়া করলে তা কবুল হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, আমরা কি এই সময়গুলো কাজে লাগাই? নাকি দোয়া শুধু তখনই করি, যখন বিপদে পড়ি?


দোয়া শুধু চাওয়ার বিষয় নয়, এটি আত্মার প্রশান্তিরও মাধ্যম। আমরা যখন আল্লাহর কাছে কোনো কিছু চাই, তখনই আমাদের মনের মধ্যে একটা নির্ভরতা তৈরি হয়। মনে হয়, ‘আমার চাওয়া শোনা হচ্ছে, আমি একা নই।’ তাই দোয়া কখনো বৃথা যায় না, বরং এটি আমাদের অন্তরের প্রশান্তি ও আশার প্রদীপ হয়ে থাকে। আল্লাহ কখনো আমাদের শূন্য হাতে ফেরান না, হয় দুনিয়ায়, নয়তো আখিরাতে তিনি তার প্রতিদান দেন। তাই হতাশ না হয়ে, ধৈর্য ধরে, নিজের আত্মশুদ্ধির দিকে মনোযোগ দিয়ে আমাদের দোয়া করতে হবে।


অনেক সময় আমরা চাওয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকি, কিন্তু কোরআনে আল্লাহ বলেছেন, ‘তোমরা যদি কৃতজ্ঞ হও, তবে আমি তোমাদের আরও বেশি দেব।’ (সুরা ইবরাহিম: ৭) আমরা কি দোয়ার পাশাপাশি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি? নাকি শুধু চাই, কিন্তু যে নেয়ামতগুলো ইতোমধ্যেই পেয়েছি, তার জন্য কৃতজ্ঞতা জানাতে ভুলে যাই? অনেক সময় আল্লাহ আমাদের দোয়া দেরিতে কবুল করেন, কারণ তিনি আমাদের ধৈর্য পরীক্ষা করেন। আমরা যদি ধৈর্য ধরে, দৃঢ় বিশ্বাস নিয়ে আল্লাহর কাছে চাই, তা হলে কোনো দোয়াই বৃথা যাবে না।


আল্লাহ আমাদের সব নেক দোয়া কবুল করুন, আমাদের অন্তরকে তাঁর প্রতি আস্থায় পরিপূর্ণ করুন এবং আমাদের দেরিতে পাওয়া কিংবা না পাওয়ার মধ্যেও যে কল্যাণ লুকিয়ে আছে, তা বোঝার ক্ষমতা দিন। আমিন!

 

লেখক : শিক্ষার্থী, জাপানিজ স্টাডিজ বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় 

 

 

‘রমজান হলো সেই মাস, যাতে কোরআন নাজিল হয়েছে’

প্রকাশ: ১৪ মার্চ ২০২৫, ০৩:৩০ পিএম
‘রমজান হলো সেই মাস, যাতে কোরআন নাজিল হয়েছে’
কোরআন তিলাোয়াতরত মুসলিমের ছবি। সংগৃহীত

মাহে রমজান হলো মর্যাদাপূর্ণ মাস। এর কারণ হলো এ মাসে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন মানবজাতির হিদায়াতের জন্য পবিত্র কোরআন নাজিল করেন। মূলত কোরআন মাজিদকে বুকে ধারণ করার কারণেই এ মাস এত বরকতময় এবং এ মাসের এত মর্যাদা, এত গুরুত্ব। কারণ কোরআন মাজিদ হলো পরশ পাথরের ন্যায়, যেই তার সংস্পর্শ পায় সেই বরকতময় হয়ে ওঠে। তা ছাড়া কোরআন মাজিদ মানুষের জন্য আল্লাহতায়ালার দেওয়া নিয়ামতসমূহের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ নিয়ামত। এর নাজিলের ঘটনা মানবতার ইতিহাসে সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘রমজান হলো সে মাস, যে মাসে কোরআন নাজিল করা হয়েছে, যা মানবজাতির জন্য হিদায়াত এবং সত্য পথযাত্রীদের জন্য সুস্পষ্ট পথনির্দেশ আর ন্যায়-অন্যায়ের মাঝে পার্থক্য বিধানকারী। কাজেই তোমাদের মধ্যে যেই এ মাসটি পাবে, সে যেন এ মাসের রোজা রাখে।’ (সুরা আল-বাকারাহ, আয়াত নং-১৮৫) 


মহাগ্রন্থ কোরআন মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের পক্ষ থেকে মানবজাতির জন্য সর্বশেষ দিকনির্দেশনা বা হিদায়াত। আর এ কোরআন মাজিদ রমজান মাসে নাজিল হয়েছে। এ মাসের শেষ ১০ দিনের কোনো এক বিজোড় রাতে লাওহে মাহফুজ থেকে পৃথিবীতে হেরা গুহায় পবিত্র কোরআন মাজিদ নাজিলের সূচনা হয়। এরপর রাসুল (সা.)-এর ২৩ বছরের নবুয়তি জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে প্রয়োজন অনুসারে অল্প অল্প করে সমগ্র কোরআন নাজিল সম্পন্ন হয়।


কোরআন মাজিদ নাজিলের সূচনার এ রাতকে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ‘লাইলাতুল কদর’ নামে অভিহিত করেছেন। তিনি ইরশাদ করেন, ‘নিশ্চয় আমি একে (কোরআন মাজিদ) নাজিল করেছি লাইলাতুল কদরে। (হে রাসুল), আপনি কি জানেন লাইলাতুল কদর কী? লাইলাতুল কদর হলো এক হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। এতে প্রত্যেক কাজের জন্যে ফেরেশতাগণ ও রুহ নাজিল হয় তাদের রবের নির্দেশক্রমে। বিরাজ করে শান্তি, যতক্ষণ না ঊষার আবির্ভাব হয়।’ (সুরা আল কদর, আয়াত নং ১-৫)


পবিত্র কোরআন মাজিদের মর্ম অনুধাবনের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করতেই মহান আল্লাহ এ মাসে জান্নাতের দরজাগুলো উন্মুক্ত করে দেন, জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেন এবং শয়তানকে শৃঙ্খলিত করে রাখেন। যাতে মানুষ জান্নাতি পরিবেশে শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে মুক্ত হয়ে পবিত্র কোরআন মাজিদের মর্ম উপলব্ধি করতে পারে। মূলত মাহে রমজানের হক হলো মানুষ কোরআন নিয়ে গবেষণা করবে এবং উপলব্ধি করে কোরআন ও সুন্নাহভিত্তিক জীবন গঠন করার চেষ্টা করবে। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ইরশাদ করেন- ‘এটি একটি বরকতময় কিতাব, যা আমি আপনার প্রতি অবতীর্ণ করেছি, যাতে মানুষ এর আয়াতসমূহ অনুধাবন করে এবং বোধশক্তি সম্পন্ন ব্যক্তিগণ উপদেশ গ্রহণ করে।’ (সুরা ছোয়াদ, আয়াত নং ২৯)।


আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন, ‘রমজান মাসের প্রতি রাতে জিবরাইল (আ.) রাসুল (সা.)-এর নিকট হাজির হতেন এবং তারা উভয়ই কোরআন মাজিদ তিলাওয়াত করে একে অপরকে শোনাতেন।’ (সহিহ বুখারি)। কোরআন তিলাওয়াত করাকে মহানবি (সা.) সর্বোত্তম নফল ইবাদত বলে অভিহিত করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘কেউ যদি আল্লাহর কিতাবের একটি হরফ পাঠ করে, তা হলে সে নেকি পায়। আর এ নেকির পরিমাণ হলো দশগুণ।’ (তিরমিজি শরিফ)। রাসুল (সা.) আরো ইরশাদ করেন- ‘আমার উম্মতের সর্বোত্তম ইবাদত (নফল) হলো কোরআন তিলাওয়াত।’ (বায়হাকি)। রমজানের সঙ্গে পবিত্র কোরআন মাজিদের বিশেষ সম্পর্ক বিদ্যমান। 


হাদিস থেকে জানা যায়, এ সম্পর্ক দুভাবে হয়। প্রথমত রমজান মাসে রাতদিন কোরআন তিলাওয়াত করা এবং দ্বিতীয়ত রাতে তারাবিহের সালাতে কোরআন তিলাওয়াত করা বা শোনা। সারা বছরই কোরআন তিলাওয়াত করতে হবে। তবে রমজান মাসে কোরআন তিলাওয়াতে অতিরিক্ত সাওয়াব ও বরকত রয়েছে। এ কারণে সাহাবায়ে কিরাম, বুজুর্গানে দ্বীন ও আধ্যাত্মিক সাধকেরা রমজান মাসে কোরআনময় হয়ে যেতেন। কোরআন মাজিদের সাথে গড়ে তুলতেন বিশেষ সম্পর্ক। রমজান মাসে সাহাবায়ে কিরাম কোরআন মাজিদ মুখস্থ করার জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করতেন। উম্মুল মুমিনীন হজরত আয়েশা (রা.) রমজান মাসে সুবহে সাদিকের পর থেকে সুর্যোদয় পর্যন্ত পবিত্র কোরআন মাজিদ তিলাওয়াত করতেন।

 

লেখক : আলেম, প্রাবন্ধিক ও কলেজ শিক্ষক

আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের মাস

প্রকাশ: ১৪ মার্চ ২০২৫, ১১:৩০ এএম
আপডেট: ১৪ মার্চ ২০২৫, ০৩:৩১ পিএম
আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের মাস
প্রতীকী ছবি

হাদিসের ভাষায় কালিমা, নামাজ, রোজা, হজ ও জাকাত হলো—ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ মৌলিক পাঁচটি ভিত্তি। আর রমজান মাস হলো, পূর্ণ এক বছরে মাত্র ত্রিশটি ফরজ রোজা আদায় করা। সিয়াম সাধনা এবং তাকওয়া তথা খোদাভীতি অর্জন করার মাস। গুনাহসমূহকে বর্জন করে আল্লাহর সন্তুষ্টি ও ক্ষমা লাভের মাস।


পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহতায়ালা বলেন— হে ইমানদারগণ! তোমাদের ওপর (রমজানের) রোজা ফরজ করা হয়েছে। যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর, যাতে করে তোমরা মুত্তাকি হতে পারো। তথা আল্লাহভীতি অর্জন করতে পারো। (সুরা বাকারা : ১৮৩)


আল্লাহর নৈকট্য লাভ করার আশা নেই এমন কে আছে? কাজেই আমাদেরকে স্মরণে রাখতে হবে,  আল্লাহর নৈকট্য লাভের অপূর্ব এক মৌসুম হলো মাহে রমজান। জাহান্নাম থেকে মুক্তি এবং আল্লাহর নৈকট্য লাভ করাই হলো মুমিন বান্দার জীবনের এক পরম পাওয়া। আর এ মাসেই রয়েছে গুনাহ থেকে মুক্তির ঘোষণা এবং তাকওয়া তথা আল্লাহভীতি লাভ করার ঘোষণা। 


আল্লাহতায়ালার নৈকট্য লাভ এবং গুনাহমুক্ত জীবন গড়ার জন্য তাকওয়া অর্জনের কোনো বিকল্প নেই। তথা আল্লাহর ভয় এবং পরকালীন শাস্তি ও জবাবদিহিতা থেকে বাঁচতে, আল্লাহর বিধান মেনে চলা, হারাম থেকে বিরত থাকা এবং হালাল বিষয়াবলিকে প্রাধান্য দেওয়াই হলো আল্লাহর ভয় বা তাকওয়া। আল্লাহর বিধান পালনে হারাম কার্যাবলি পরিহার করাই তাকওয়া। আল্লাহভীতি অর্জন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি আমল। একমাত্র আল্লাহভীতিই পারে মানুষকে যাবতীয় অন্যায়-অনাচার, পাপাচার ও দুর্নীতি থেকে বিরত রাখতে। আর রমজান হলো এই তাকওয়া অর্জন তথা আল্লাহভীতি অর্জনের মাস। উপর্যুক্ত এ আয়াত থেকে আমরা আরও একটি বিষয় জানতে পারি তা হলো—রোজা শুধু আমাদের জন্যই ফরজ বা আবশ্যক নয়। বরং পূর্ববর্তী আরও অনেক জাতির জন্যও এটি আবশ্যক ছিল। 


রোজার বিনিময় সম্পর্কে হাদিসে কুদসিতে রাসুল (সা.) বলেন—আল্লাহতায়ালা বলেন– আদম সন্তানের প্রতিটি আমলই তার (নিজের) জন্য। তবে রোজার ব্যাপারটি ভিন্ন। আর রোজা আমার জন্য এবং আমিই তার প্রতিদান দেব। (বুখারি: ১৮০৫)
এ ছাড়া রোজা ও কিয়ামুল লাইলের বিনিময়েও রয়েছে গুনাহ মাফের ঘোষণা। গুনাহ বা পাপ করেনি- এমন মানুষ খুব কমই আছে বললে ভুল হবে না। তাই আমাদের প্রত্যেকের জন্য উচিত হবে, গুনাহ থেকে মুক্তিলাভের জন্য আল্লাহ প্রদত্ত এ মাসকে মূল্যায়ন করা। আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া এবং গুনাহ থেকে মুক্ত হয়ে তাঁর নৈকট্য লাভের জন্য চেষ্টা করা। 


 ‎বিখ্যাত সাহাবি ‎হজরত আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেন—যে ব্যক্তি রমজানের রাতে ইমানসহ পুণ্যের আশায় রাত জেগে (তারাবি ও তাহাজ্জুদ আদায়ের মাধ্যমে) ইবাদত করে, তার পূর্বের গুনাহ্গুলো ক্ষমা করে দেওয়া হয়। (বুখারি : ৩৭)


এমনিভাবে সাহাবি হজরত আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি ইমানসহ পুণ্য লাভের আশায় রমজানের সিয়াম—রোজা পালন করে, তার পূর্বের গুনাহগুলো ক্ষমা করে দেওয়া হয়। (সহিহ বুখারি : ৩৮)। উপর্যুক্ত হাদিস দুটিও আমাদেরকে স্পষ্ট করে যে, মাহে রমজানে রোজা রাখা এবং রাত জেগে তারাবি ও তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করার মাধ্যমেই রয়েছে গুনাহ মাফের ঘোষণা। তাই রমজানের রোজা রাখার বিষয়ে আমাদের প্রত্যেককেই সমান গুরুত্ব দেওয়া উচিত। একইভাবে রাতের ইবাদতের প্রতিও মনোযোগী হওয়া জরুরি। কারণ, এ দুটি আমলের বিনিময়ে রয়েছে গুনাহ মাফের ঘোষণা। 


আল্লাহতায়ালা আমাদের সবাইকে রমজানের রোজা, তারাবি ও তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করার সুযোগ দান করুন। এ দুটি আমলের মাধ্যমে গুনাহমুক্ত জীবনলাভের তাওফিক দান করুন। আমিন।

 

লেখক : খতিব, ভবানীপুর মাইজপাড়া হক্কানি জামে মসজিদ, গাজীপুর