ঢাকা ২ চৈত্র ১৪৩১, রোববার, ১৬ মার্চ ২০২৫
English

বইয়ের সৃজনশীলতা ও বস্তুনিষ্ঠতা নিশ্চিত করা জরুরি

প্রকাশ: ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৬:৩০ পিএম
আপডেট: ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৬:৩৭ পিএম
বইয়ের সৃজনশীলতা ও বস্তুনিষ্ঠতা নিশ্চিত করা জরুরি
মাকতাবাতুল ইসলামের স্বত্বাধিকারী আহমাদ গালিবের ছবি। সংগৃহীত

আহমাদ গালিব মাকতাবাতুল ইসলামের স্বত্বাধিকারী। কওমি মাদরাসার পাঠ্যবই, অনুবাদ, ইতিহাস, পরকাল ভাবনা ইত্যাদি বিষয়ের বই প্রকাশ করে বেশ সুনাম করেছেন তিনি। ইসলামি প্রকাশনাশিল্পে উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন। তার প্রকাশক হওয়ার গল্প, মানসম্মত বই প্রকাশে ভূমিকা, পাঠকদের জন্য বইমেলায় চমক, ইসলামি বইয়ের জাগরণের ক্ষেত্রে করণীয় ও তরুণ লেখক-প্রকাশকদের সম্পর্কে কথা বলেছেন খবরের কাগজের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন রায়হান রাশেদ

খবরের কাগজ: আপনি প্রকাশক হলেন কেন? 
আহমাদ গালিব: লেখালেখি, বই পাঠ, বই কেনা ছোটবেলা থেকেই নেশার মতো ছিল। বইয়ের প্রতি ভালোবাসার জায়গা থেকেই ক্রমে প্রকাশক হয়ে উঠেছি। 

খবরের কাগজ: মানসম্মত বই প্রকাশে আপনাদের ভূমিকা কেমন?
আহমাদ গালিব: মাকতাবাতুল ইসলাম মানসম্পন্ন বই প্রকাশের ক্ষেত্রে অগ্রপথিক দাবি করার মতো একটি প্রতিষ্ঠান। শুরু থেকেই এই প্রতিষ্ঠানের স্লোগান হলো ‘সেরা মুদ্রণ ও প্রকাশনার অগ্রপথিক’। এই স্লোগানটি শুধু মুখের ভাষা আর লেখায় সীমিত না রেখে মাকতাবাতুল ইসলাম কাজেও পরিণত করে দেখিয়েছে। ইসলামি প্রকাশনায় আমরাই সর্বপ্রথম সাদা কাগজকে ভিন্ন কালার করে ব্যবহার শুরু করি, যা সাদা কাগজের চেয়ে অধিক দৃষ্টিনন্দন।

খবরের কাগজ: এবারের মেলায় আপনারা কোন ধরনের বই বেশি আনছেন? পাঠকদের জন্য কী চমক থাকছে।
আহমাদ গালিব: ইতিহাস, পরকাল ভাবনা, বিশেষ করে জুলাই গণঅভ্যুত্থানকে কেন্দ্র করে বই প্রকাশিত হতে যাচ্ছে। 

খবরের কাগজ: ইসলামি বইয়ের জাগরণের ক্ষেত্রে কী কী পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে?
আহমাদ গালিব: ইসলামি বইয়ের জাগরণের ক্ষেত্রে আমি মনে করি, বই প্রদর্শনী কিংবা বইয়ের মেলা আয়োজন বেশ ফলপ্রসূ হবে। এই মেলা যদি প্রতিটি স্কুল কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজন করা যায়, তাহলে ৫৬ হাজার বর্গ মাইলের মধ্যে ইসলামি বইয়ের ব্যাপক প্রসার ঘটবে। 

খবরের কাগজ: তরুণ লেখক-প্রকাশকদের জন্য আপনার অভিজ্ঞতালব্ধ পরামর্শ প্রত্যাশা করছি।
আহমাদ গালিব: তরুণ লেখকদের প্রতি পরামর্শ থাকবে, আপনারা বাংলা ভাষাটাকে নিজেদের ভেতরে আরও বেশি করে ধারণ করুন। বাংলা ভাষার রীতি-নীতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকুন এবং প্রতিনিয়ত চর্চা অব্যাহত রাখুন। প্রকাশকরা শুধু টাকার দিকে না তাকিয়ে সৃজনশীলতা ও বিষয়বস্তুর বস্তুনিষ্ঠতা নিশ্চিত করুন।

কসমের কাফফারা সংক্রান্ত দুটি মাসআলা

প্রকাশ: ১৬ মার্চ ২০২৫, ০৩:০০ পিএম
আপডেট: ১৬ মার্চ ২০২৫, ০৩:০১ পিএম
কসমের কাফফারা সংক্রান্ত দুটি মাসআলা
আরবিতে রমজান কারিম লেখা ক্যালিগ্রাফির ছবি। সংগৃহীত

প্রশ্ন : কসমের কাফ্ফারাসংক্রান্ত দুটি মাসআলা জানতে চাই।

ক. আর্থিকভাবে কাফফারা আদায়ের সামর্থ্য না থাকায় রোজার মাধ্যমে কসমের কাফ্ফারা আদায়ের ক্ষেত্রে উক্ত রোজাগুলো কি লাগাতারই রাখতে হবে?

খ. এক্ষেত্রে দু-একটি রোজা রাখার পর তিনটি রোজা পূর্ণ করার আগেই যদি কাফ্ফারা আদায় করার মতো সামর্থ্য হয়ে যায়, তা হলে করণীয় কী? মাসআলাদ্বয় জানিয়ে বাধিত করবেন।

 

উত্তর : ক. হ্যাঁ, রোজার মাধ্যমে কসমের কাফ্ফারা আদায় করার ক্ষেত্রে তিনটি রোজা লাগাতার (ধারাবাহিকভাবে) রাখতে হবে। পৃথক পৃথকভাবে রোজা রাখলে কাফ্ফারা আদায় হবে না। অর্থাৎ, তিনটি রোজা এক সঙ্গে ও ধারাবাহিকভাবে রাখা জরুরি।


খ. যদি আর্থিক অসামর্থ্যের কারণে রোজার মাধ্যমে কাফ্ফারা আদায় শুরু করা হয়, কিন্তু তিনটি রোজা পূর্ণ করার আগেই আর্থিক সামর্থ্য ফিরে আসে, তা হলে রোজা দ্বারা কাফ্ফারা আদায়ের সুযোগ শেষ হয়ে যাবে। এ অবস্থায় বাকি রোজা পূর্ণ করলেও তা দ্বারা কাফ্ফারা আদায় হবে না। বরং তখন রোজা বাদ দিয়ে আর্থিকভাবে (যেমন- ১০ জন মিসকিনকে খাবার খাওয়ানো বা কাপড় দেওয়া) কাফ্ফারা আদায় করতে হবে।


অতএব, যদি আর্থিক সামর্থ্য পাওয়া যায়, তবে রোজার মাধ্যমে কাফ্ফারা আদায়ের সুযোগ শেষ হয়ে যাবে এবং পরবর্তী সময়ে অর্থের মাধ্যমে কাফ্ফারা প্রদান করতে হবে। (কিতাবুল আছল ২/২৯৪, আলমুহীতুর রাযাবী ৪/৫৬৩,ফাতাওয়া খানিয়া ২/১৯,খুলাসাতুল ফাতাওয়া ২/১২৫,আদ্দুররুল মুখতার ৩/৭২৭)

 

লেখক : সহ-সম্পাদক, দৈনিক খবরের কাগজ

 

রাসুলুল্লাহ (সা.) যেভাবে রমজান কাটাতেন—১৫ যেসব কাজ থেকে বিরত থাকতে বলেছেন

প্রকাশ: ১৬ মার্চ ২০২৫, ০৯:০০ এএম
আপডেট: ১৬ মার্চ ২০২৫, ০১:০১ পিএম
যেসব কাজ থেকে বিরত থাকতে বলেছেন
আরবিতে আল্লাহর নিরানব্বই নামের ছবি । সংগৃহীত

রমজানের প্রতিটি মুহূর্ত বান্দার জন্য আল্লাহতায়ালার খাস রহমত। এ রহমত পেয়েও অসতর্কতাবশত বিভিন্ন মন্দ ও গুনাহের কাজে লিপ্ত হয় মানুষ। ‌যারা এ মাসেও তার গোনাহ মাফ করাতে সক্ষম হয় না, রাসুলুল্লাহ (সা.) তাদের অভিসম্পাত করেছেন। (শুয়াবুল ঈমান, ১৬৬৮)
শয়তানের ধারাবাহিক প্ররোচনার প্রভাবে, অলসতা ও অসর্তকতার কারণে এ মাসের অনেককে বিভিন্ন মন্দ ও গুনাহের কাজে লিপ্ত হতে দেখা যায়, যা গভীর উদ্বেগের বিষয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) এ মাসে বিভিন্ন মন্দ কাজ থেকে বিরত থাকার জোর তাগিদ দিয়েছেন। 

সাহরি না খেয়ে রোজা রাখা উচিত নয় : অনেকে শেষ রাতে সাহরি খান না। কেউ কেউ আবার সন্ধ্যা রাতে খেয়েই শুয়ে পড়েন। এটা সুন্নত পরিপন্থি। কারণ ইহুদি ও খ্রিষ্টানরা সাহরি খায় না। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আমাদের ও আহলে কিতাবিদের রোজার মধ্যে পার্থক্য হলো, সাহরি গ্রহণ। তোমরা কখনো সাহরি না খেয়ে রোজা রাখবে না।’ (মুসলিম, ২৬০৪) 
 
বিলম্বে ইফতার করার অবকাশ নেই: বিলম্বে ইফতার করা থেকে বিরত থাকতে হবে। কারণ এটাও বিধর্মীদের কালচার। সন্ধ্যার আজান শোনার সঙ্গে সঙ্গে রাসুলুল্লাহ (সা.) ইফতার করতেন। আজানের পর বিলম্বে ইফতার করা তিনি পছন্দ করতেন না। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘দ্বীন বিজয়ী হবে, যে যাবৎ মানুষ দ্রুত ইফতার করবে। কারণ ইহুদি-খ্রিষ্টানরা তা বিলম্বে করে।’ (আবু দাউদ, ২৩৫৫)

হারাম খাওয়া হারাম : রমজানের সাহরি ও ইফতারে ব্যবহৃত যাবতীয় খরচ পবিত্র ও হালাল অর্থের মাধ্যমে উপার্জিত হতে হবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘ওই গোশত (দেহ) জান্নাতে যাবে না, যা হারাম থেকে উৎপন্ন। জাহান্নামই এর উপযোগী।’ (ইবনে হিব্বান, ১৭২৩, তিরমিজি, ৬১৪)
 
মিথ্যা বলা নিষিদ্ধ : মিথ্যা বলা মহাপাপ। আল্লাহ ও রাসুলুল্লাহ (সা.) মিথ্যা বলা মোটেও পছন্দ করেন না। তিনি গোটা জীবনে কখনো মিথ্যা বলেননি। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি মিথ্যা কথা ও কাজ এবং মূর্খতা পরিত্যাগ করতে পারল না, তার রোজা রেখে শুধু পানাহার বর্জনে আল্লাহর কোনো প্রয়োজন নেই।’ (বুখারি, ৬০৫৭)

গিবত ও পরনিন্দা না করা : পরনিন্দা ও অপরের দোষচর্চা নিকৃষ্টতম অভ্যাস। রোজা রেখে অন্যের দোষ-ত্রুটি খুঁজে বেড়ানোও অনুচিত। আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেছেন, ‘তোমরা একে অন্যের দোষ-ত্রুটি অন্বেষণ করো না এবং পরস্পর গিবত করো না। তোমাদের মধ্যে কেউ কি তার মৃত ভাইয়ের গোশত ভক্ষণ করতে পছন্দ করবে? বস্তুত তোমরা তা ঘৃণাই করে থাকো। 

তাড়াহুড়ো করে কোরআন খতম না করা : শুধু খতম দেওয়া বা পড়া শেষ করার জন্য তাড়াহুড়ো করে কোরআন পড়লে কোরআনের হক আদায় হয় না। রাসুলুল্লাহ (সা.) তারতীলের সঙ্গে কোরআন তেলাওয়াত করতেন। তিনি বলেছেন, ‘যে কোরআন সুন্দর উচ্চারণে পড়ে না, সে আমার উম্মত না।’ (বুখারি, ৭৫২৭)।
 
অহেতুক কথাবার্তা না বলা : রমজানে রোজা রেখে অশালীন কথা বলা, গালি দেওয়া নিষেধ। তাই রোজা রেখে এ ধরনের কাজে লিপ্ত হওয়া উচিত নয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ যখন রোজা রাখে, তখন সে যেন অশালীন কথাবার্তা ও হৈচৈ না করে।’ (বুখারি, ১৯০৪)
 
অপচয় ও অপব্যয় না করা : রমজানে একদম ব্যয়কুণ্ঠতা অবলম্বন করা যেমন উচিত নয়, তেমনি অপব্যয় করাও উচিত নয়। রমজানে ব্যয় ও খাবারেও সংযম পালন করা জরুরি। বরং মধ্যপন্থা অবলম্বন করতে হবে। আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘(রহমানের বান্দা তো তারাই), যারা অপব্যয়ও করে না, আবার কৃপণতাও করে না। তাদের পন্থা হয় এ দুইয়ের মধ্যবর্তী।’ (সুরা ফোরকান, ৬৭)
 
রোজা রেখে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ না পড়া : কিছু মানুষ এমন রয়েছেন, রোজা রাখেন, তবে নামাজের ব্যাপারে উদাসীন। অথচ নামাজ ফরজ। নির্দিষ্ট সময়ে নামাজ পড়া জরুরি। সুতরাং রমজান মাসে নামাজ না পড়া রমজানের মহিমা ক্ষুণ্ন করে। তাই নির্দিষ্ট সময়ে নামাজ পড়া জরুরি।

 

লেখক : আলেম, গবেষক ও সাংবাদিক

১৬ মার্চ, ২০২৫ রবিবারের সাহরি ও ইফতারের সময়সূচি

প্রকাশ: ১৫ মার্চ ২০২৫, ১১:৫৫ পিএম
আপডেট: ১৬ মার্চ ২০২৫, ০১:০১ পিএম
১৬ মার্চ, ২০২৫ রবিবারের সাহরি ও ইফতারের সময়সূচি
১৬ মার্চ, ২০২৫ রবিবারের সাহরি ও ইফতারের সময়সূচির ছবি

আজ ১৬ মার্চ, ১৫ তম রোজা। রবিবার। এ দিনের সাহরির শেষ সময় ভোর ৪টা ৫০ মিনিট ও ইফতারির সময় ৬ টা ৮ মিনিট।

১৫ মার্চ, শনিবার, ২০২৫
সাহরির শেষ সময় : ৪.৫০ মিনিট
ইফতারের সময় : ৬.০৮ মিনিট

জাবের (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে নবী (সা.) বলেছেন, ‘প্রতিটি ইফতারের সময় এবং প্রতি রাতে লোকদের জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেওয়া হয়।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১৬৪৩)

 

সূত্র : ইসলামিক ফাউন্ডেশন

 

রমজান ও রোজা নিয়ে কিছু প্রচলিত ভুল

প্রকাশ: ১৫ মার্চ ২০২৫, ১০:০০ পিএম
আপডেট: ১৬ মার্চ ২০২৫, ০১:০১ পিএম
রমজান ও রোজা নিয়ে কিছু প্রচলিত ভুল
রমাদান মোবারক লেখা আরবি ছবি

রমজান মাস ইসলামের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সময়, যা মুসলিম উম্মাহর জীবনে বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। এই মাসে কিছু বিভ্রান্তি ও ভুল ধারণা প্রচলিত রয়েছে, যা মুসলিম সমাজের মধ্যে কুসংস্কার এবং ভুল আমল সৃষ্টি করে। রমজান এবং রোজা সম্পর্কিত কিছু প্রচলিত ভুল তুলে ধরা হলো—

১. মৃতের জন্য কবরের আজাব মাফের ধারণা: অনেকে বিশ্বাস করেন যে, রমজান মাস বা জুমার দিনে মৃত ব্যক্তির জন্য কবরের আজাব মাফ হয়ে যায়। এই ধারণা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। কোরআন ও হাদিসে এর কোনো প্রমাণ নেই।

২. রোজাদারের খাবারের হিসাব না থাকার ধারণা: কিছু মানুষ মনে করেন, রোজাদারের খাবারের কোনো হিসাব নেই। এটি ভুল ধারণা। রোজাদারের খাদ্য ও পানীয় সব সময়েই হালাল ও হারাম হওয়ার মৌলিক বিধান রয়েছে। 

৩. জাকাত রমজানেই দিতে হবে: অনেকের মধ্যে একটি ভুল ধারণা রয়েছে যে, জাকাত শুধু রমজান মাসে দেওয়া যায়। এটি একটি বিভ্রান্তি। জাকাতের সম্পর্ক বর্ষপূর্তির সঙ্গে, রমজানের সঙ্গে নয়। 

৪. লালা গিলে ফেললে রোজা ভেঙে যায়: অনেকে মনে করেন, লালা গিলে ফেললে রোজা ভেঙে যায়। মুখের লালা গিলে ফেললে রোজার কিছু হয় না। এ বিষয়ে ধর্মে কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই। তবে অন্য কারও মুখের লালা যদি নিজের মুখে যায়, তাহলে রোজা ভেঙে যায়।

৫. সাহরিতে মাইক থেকে দীর্ঘ সাইরেন বাজানো: অনেকে সাহরির সময় মাইক থেকে দীর্ঘ সাইরেন বাজানোর মাধ্যমে মানুষকে জাগানোর চেষ্টা করেন, যা পরিত্যাজ্য। এটি শুধু মানুষের জন্য কষ্টের কারণ হয়, বরং এটি অপ্রয়োজনীয় আমল হিসেবে পরিগণিত।

৬. ইফতার দেরিতে করা: কিছু মানুষ ইফতার করতে দেরি করেন, যাতে সন্দেহ বা সতর্কতার জন্য রোজা ভঙ্গ না হয়। তবে, রাসুলুল্লাহ (সা.) সাহরি দেরিতে খাওয়ার এবং ইফতার দ্রুত করার কথা বলেছেন।

৭. সুগন্ধি ব্যবহার করা যাবে না: অনেক মানুষের মধ্যে গেঁথে থাকা ধারণা হলো, রোজা রেখে সুগন্ধি ব্যবহার করা যাবে না। এটি একটি বিভ্রান্তি। আতর ব্যবহার করা নবীর সুন্নত এবং এটি রোজার সঙ্গে কোনো বিরোধী নয়।

৮. তারাবি নামাজ ৮ রাকতই: অনেকে মনে করেন, তারাবি নামাজের রাকাত সংখ্যা আট হতে হবে। এটি ভুল ধারণা। ২০ রাকাত তারাবি নামাজ সুন্নত হিসেবে প্রমাণিত এবং উম্মাহর অধিকাংশ ইমাম এতে একমত।

৯. লাইলাতুল কদর ২৬ রমজান রাতেই: লাইলাতুল কদর রমজানের শেষ দশকের বেজোড় রাতগুলোর মধ্যে একটি নির্দিষ্ট রাতে আসে, কিন্তু কিছু লোক মনে করেন এটি ২৭ রমজান রাতে নির্দিষ্ট। 

 

লেখক: আলেম ও সাংবাদিক

পূর্ববর্তী নবি-রাসুলদের যুগে যেমন ছিল রোজা

প্রকাশ: ১৫ মার্চ ২০২৫, ০৩:০০ পিএম
পূর্ববর্তী নবি-রাসুলদের যুগে যেমন ছিল রোজা
প্রতীকী ছবি

রোজা শুধু উম্মতে মুহাম্মাদির জন্য ফরজ নয়; বরং অতীত নবি-রাসুলদের উম্মতদের জন্যও রোজা ফরজ ছিল। যদিও এর সময়, নিয়ম-পদ্ধতি ও ধারায় অনেক ভিন্নতা ছিল।

হজরত আদম (আ.)-এর রোজা: প্রথম নবি আদম (আ.)-এর ধর্মে রোজার বিধান দেওয়া হয়েছিল বলে তাফসির গ্রন্থগুলোতে উল্লেখ পাওয়া যায়। অবশ্য সেই রোজার ধরন ও প্রকৃতি কেমন ছিল, তা জানা যায় না। এ বিষয়ে বাইবেল, কোরআন ও বিশুদ্ধ হাদিসের কিতাবেও কোনো তথ্য পাওয়া যায় না। তবে কেউ কেউ বলেছেন, আগের যুগের প্রত্যেক নবির শরিয়তেই চন্দ্রমাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখে রোজা রাখার বিধান ছিল।

হজরত নুহ (আ.)-এর রোজা: তাফসিরে ইবনে কাসিরে এসেছে, রাঈসুল মুফাসসিরিন আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস, মুআজ ইবনে জাবাল, আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ  (রা.); তাবিয়ি আতা, কাতাদা ও দহহাক (রাহ.) বর্ণনা করেন- নুহ (আ.) থেকে শেষ নবি মুহাম্মাদ (সা.) পর্যন্ত প্রত্যেক নবির যুগেই প্রতি মাসে তিনটি করে রোজা রাখার বিধান ছিল। পরে তা রমজানের রোজার বিধানের মাধ্যমে তা রহিত করা হয়। (তাফসিরে ইবনে কাসির : ১/৪৯৭); তাফসিরে কুরতুবি : ২/২৭৫)। অন্য বর্ণনায় এসেছে, নুহ (আ.) ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার দিন ছাড়া পুরো বছর রোজা রাখতেন। (ইবনে মাজাহ : ১৭১৪)

হজরত ইবরাহিম (আ.)-এর রোজা: মুসলিম জাতির পিতা ইবরাহিম (আ.)-এর যুগে ৩০টি রোজা ছিল বলে কেউ কেউ লিখেছেন। কেউ কেউ বলেছেন, ইবরাহিম (আ.)-এর ওপর প্রতি রমজানের প্রথম তারিখ সহিফা অবতীর্ণ হয়। এ জন্য তিনি রমজানের এক তারিখ রোজা রাখতেন। তাঁর অনুসারীদের জন্য ১, ২ ও ৩ রমজান রোজা রাখা ফরজ ছিল। এ ছাড়া নমরুদের অগ্নিকুণ্ড থেকে মুক্তির স্মরণে ১০ মুহাররম তাঁর উম্মতের জন্য রোজা রাখা ফরজ ছিল। আর  কোরবানির স্মরণে ১১, ১২ ও ১৩ জিলহজসহ মোট সাত দিন ইবরাহিম, ইসমাইল ও ইসহাক (আ.)-এর উম্মতের জন্য রোজা ফরজ ছিল।

হজরত দাউদ (আ.)-এর রোজা: আসমানি কিতাব জবুরপ্রাপ্ত নবি দাউদ (আ.)-এর সময়ও রোজার প্রচলন ছিল। আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় রোজা দাউদ (আ.)-এর রোজা। তিনি একদিন রোজা রাখতেন আর একদিন খেতেন।’ (সহিহ মুসলিম : ১১৫৯) অর্থাৎ, দাউদ (আ.) বছরে মোট ছয় মাস (একদিন পরপর) রোজা রাখতেন।

হজরত মুসা (আ.)-এর রোজা: আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত; রাসুল (সা.) মদিনায় হিজরত করে ইয়াহুদিদের আশুরার দিনে রোজা রাখতে দেখলেন। তিনি তাদের জিজ্ঞেস করলেন, ‘আজ তোমরা কীসের রোজা রাখছ?’ তারা বলল, ‘এটা সেই মহান দিন, যেদিন আল্লাহতায়ালা মুসা (আ.) ও তাঁর সম্প্রদায়কে বনি ইসরাইল তথা ফেরাউনের কবল থেকে রক্ষা করেছিলেন। ফলে শুকরিয়াস্বরূপ মুসা (আ.) ওই দিনে রোজা রেখেছিলেন। তাই আমরাও তাঁর অনুসরণে এদিন রোজা রাখি।’ এ কথা শুনে রাসুল (সা.) বললেন, ‘আমি তোমাদের চেয়ে মুসা (আ.)-এর অধিক নিকটজন।’ এর পর তিনি এদিন রোজা রাখলেন এবং সবাইকে রোজা রাখার নির্দেশ দিলেন।’ (বুখারি : ২০০৪)

হজরত ঈসা (আ.)-এর রোজা: প্রথমটি হলো, তাদের পিতার উপদেশে নির্দিষ্ট কয়েক দিন খাদ্যপানীয় থেকে বিরত থাকা; আর ইফতার হবে নিরামিষ দিয়ে, তাতে মাছ-মাংস ও দুগ্ধজাত জিনিস খাওয়া যাবে না। যেমন- বড় দিনের রোজা, তাওবার রোজা, যা ৫৫ দিন পর্যন্ত দীর্ঘ হয়। এমনিভাবে সপ্তাহে বুধ ও শুক্রবারের রোজা। দ্বিতীয়টি হলো, খাবার গ্রহণ থেকে বিরত থাকা, তবে শুধু মাছ খাওয়া যেত। এই রোজার মধ্যে ছোট রোজা বা জন্মদিনের রোজা, যা ৪৩ দিন দীর্ঘায়িত হয়, দূতদের রোজা, মারইয়ামের রোজা ইত্যাদি। তবে খ্রিষ্টধর্মে ফরজ বলতে কোনো রোজা ছিল না। (তাফসিরে তাবারি : ৩/৪১১)
ঈসা (আ.) দ্বীন প্রচারের শুরুতে ইনজিল পাওয়ার আগে জঙ্গলে ৪০ দিন সিয়াম-সাধনা করেছিলেন। একদিন তাঁকে তাঁর অনুসারীরা জিজ্ঞেস করেন যে, ‘আমরা অপবিত্র আত্মাকে কী করে বের করব?’ জবাবে তিনি বলেন, ‘দোয়া ও রোজা ছাড়া অন্য কোনো উপায়ে বের হতে পারে না।’ (মথি : ৭-৬৬; সিরাতুন্নবি : ৫/২৮৭-২৮৮)

 

লেখক: আলেম ও প্রাবন্ধিক