আপনি কি আমার মতোই যেখানে-সেখানে লিখেন আর হাজারখানেক বানান ভুল করেন?
মানুষজন আপনাকে বানান ভুলের জন্য অপমান করতে করতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছে?
আপনার বানান ভুলে সবাই এখন বিরক্ত অথবা অভ্যস্ত হয়ে বানান ভুলের কথা উচ্চারণ করে না?
আপনি কি এজন্য খুবই আপসেট?
কেন আপনার বানান ভুল হয়- তা নিয়ে কি টেনশনযুক্ত?
মানুষের তিরস্কার শুনতে শুনতে এখন কি লেখাজোখা বন্ধ হওয়ার উপক্রম?
নো টেনশন! আসুন জেনে নিই বানান ভুলের উপকারিতা!
আপনি যদি কিছু লেখেন এবং তা যদি কেউ পড়ে মন্তব্য করে বানান ভুল, তাহলে ধরে নেবেন লোকটি আপনার লেখাটি খুব মনোযোগ সহকারে পড়েছে। মনোযোগ সহকারে না পড়লে তিনি বানান ভুল ধরতে পারতেন না। তাই বানান ভুলের মাধ্যমে আপনি জেনে যাচ্ছেন আপনার লেখাটি কে মনোযোগ দিয়ে পড়ছে, কে পড়ছে না।
আপনি যদি ভুল বানান লেখেন, তাহলে যে ব্যক্তি আপনার লেখাটি পড়ছেন তিনি বারবার চেষ্টা করবেন আপনি ভুল শব্দটি কী লিখেছেন তা বের করতে। এতে করে পাঠকের চিন্তাশক্তি বিকশিত হবে। আপনি বানান ভুল করে পাঠকের উপকার করছেন। মনে করবেন আপনি একজন উপকারী ব্যক্তি।
একটা চিরাচরিত সত্য কথা আছে- ‘মানুষ মাত্রই ভুল করে।’ তাই অন্যরা যখন বলবে আপনার লেখার মধ্যে ভুল, তখন আপনি মনে করবেন আপনি একজন মানুষ। শুধু হাত-পা থাকলেই মানুষ হওয়া যায় না। আপনি যেহেতু ভুল করেছেন, সেহেতু আপনি সত্যিকারের মানুষ।
আপনি সবসময় ভুলভাল লেখেন, এটা যদি পাঠকদের একবার কষ্ট করে বোঝাতে পারেন, তাহলে আপনার অনেক পরিশ্রম কমে যাবে। যেমন- কখনো কোনো কিছু লিখতে গিয়ে বানান করতে পারছেন না অথবা বুঝতে পারছেন না বানানটা সঠিক হচ্ছে কি না। নো টেনশন, আপনার মনে যা আসবে তাই লিখে দেন। পাঠক বুঝে নেবে আপনার সঠিক শব্দটি কী হবে। কারণ পাঠক জানে, আপনি প্রায় সময়ই ভুলভাল লিখে থাকেন।
বানান ভুল হয় এটা নিয়ে কখনো মন খারাপ করবেন না। মনে করবেন এটা একটা গুণ! কয়জনের এমন গুণ থাকতে পারে। এটা সবাই পারে না। আপনি সবার থেকে আলাদা। এটা আপনার ঐতিহ্য।
স্ট্যাটাসে বানান ভুল করলে আপনি অনেক পাঠকের দৃষ্টি এক লেখাতেই সৃষ্টি করতে পারেন। কোনো মতে যদি একজন পাঠক মন্তব্য করেন বানান ভুল, তাহলে দেখবেন জাতির সব পাঠক কীভাবে আপনার লেখার বানান ভুল ধরার জন্য ওঠেপড়ে লেগেছেন। আর একেকজন একেক মন্তব্য করছেন। এতে করে বানান ভুলের কারণে আপনার লেখায় বেশি কমেন্টস পাওয়ার সম্ভাবনা আছে।
বানানে ভুল অক্ষর ব্যবহার করতে করতে আপনি একসময় বাংলার অভিধানে নতুন শব্দের সৃষ্টি করে ফেলতে পারেন। যেমন- বাংলার অভিধানে বে-সম্ভব বলে কোনো শব্দ নেই কিন্তু আমরা এটা অসম্ভব হিসেবে ব্যবহার করি। যেই লেখক এই শব্দটা প্রথম আবিষ্কার করেন, তিনিও নিশ্চয় আপনার-আমার মতো বানান ভুল করতেন। তাই নিজেকে ছোট করে দেখবেন না।
মাঝে মধ্যেই দেখবেন রাস্তায় পাঁচ-দশ টাকার বই বিক্রি হচ্ছে। এই বইয়ে সব প্রশ্নের সমাধান লেখা থাকে। এসব বইয়ে আপনার নামও ওঠে যেতে পারে। প্রশ্নটা থাকতে পারে এমন- বলুন তো কোন লেখক তার পুরো জীবনে সব লেখায়াই ভুল বানান লিখে এসেছেন? উত্তরে থাকতে পারে আপনার নাম। আপনিই হতে পারেন সেই সৌভাগ্যবান ব্যক্তি শুধু বানান ভুলের কারণে।
বাংলাদেশের টিভি অনুষ্ঠান টক শোতে আপনাকে প্রধান অতিথি হিসেবে আমন্ত্রণ জানানোর সম্ভাবনা আছে। কারণ টক শোতে কী নিয়ে টক করবে তা তারা নিজেরাও জানে না। আপনাকে ডাকা হতে পারে বানান ভুল পাঠকের ওপর কেমন প্রভাবের সৃষ্টি করে তা নিয়ে টক করার জন্য।
আপনি বানান ভুল করে যদি কোনোভাবে একবার জাতির মধ্যে আলোড়ন সৃষ্টি করতে পারেন, তাহলে দেখবেন মিডিয়া আপনার পিছে ঘুরঘুর করছে।
কলি