ঢাকা ২২ আশ্বিন ১৪৩১, সোমবার, ০৭ অক্টোবর ২০২৪

পূর্ণদৈর্ঘ্য বাংলা ছায়াছবি ইলিশ-পাঙাশের প্রেম

প্রকাশ: ২১ আগস্ট ২০২৪, ০৫:২৯ পিএম
পূর্ণদৈর্ঘ্য বাংলা ছায়াছবি ইলিশ-পাঙাশের প্রেম

নদীর মাছেরা যদি সিনেমা বানাত তাহলে গল্প কিন্তু এমনই হতো। লিখেছেন রুহুল আমিন ভুইয়া

বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম দিন ক্যাম্পাসে নায়ক পাঙাশ আর নায়িকা ইলিশের সামনা-সামনি ধাক্কা। ইলিশের হাত থেকে পড়ে গেল বই।

ইলিশ: এই যে মিস্টার, দেখে চলতে পারেন না?

পাঙাশ: (ইলিশের বই তুলে দিতে দিতে) সরি ম্যাডাম, নদীর পানি এত ময়লা যে খালি চোখে কিছুই দেখতে পাই না। আচ্ছা আপনার নাম জানতে পারি?

ইলিশ: হাউ ডেয়ার ইউ? ধাক্কা দিয়ে আবার নাম জানতে চান? যত্ত সব কম পানির মাছ এসে পড়েছে বেশি পানিতে... 
মুখ ঝামটি দিয়ে চলে গেল নায়িকা ইলিশ আর অপমানিত মুখে দাঁড়িয়ে রইল নায়ক পাঙাশ। কয়েক দিন পর বিপদে পড়ল নায়িকা ইলিশ। বান্ধবীদের সঙ্গে আড্ডা দেওয়ার সময় আটকা পড়ল এক জেলের জালে।

ইলিশ: ছেড়ে দে, ছেড়ে দে শয়তান। তোর ঘরে কি আর ইলিশ মাছ নেই?

জেলে: চুপ...একটা কথা বলবি না।

ইলিশ: শয়তান, তুই আমার দেহ পাবি; কিন্তু মন পাবি না।

জেলে: তোর দেহটাই দরকার সুন্দরী, কেজিতে হাজার টাকা...হু হু হা হা।

ইলিশ: (সর্বশক্তি দিয়ে চিৎকার) বাঁচাও, বাঁচাও, কে আছো বাঁচাও...গুন্ডারা আমাকে তুলে নিয়ে গেল।
অনেক দূরে নায়ক পাঙাশ তখন ‘স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি চাই’ শীর্ষক এক সেমিনারে অংশগ্রহণ করছিল। ইলিশের চিৎকারে মাইক্রো সেকেন্ডের ব্যবধানে সে হাজির হলো ঘটনাস্থলে। দাঁত দিয়ে কেটে দিল জাল, মুক্ত করল নায়িকা ইলিশকে।

ইলিশ: কী বলে যে আপনাকে ধন্যবাদ জানাব! আপনি না থাকলে যে আজ কী হতো। (আগের ধাক্কা খাওয়ার ঘটনায় একটু ইতস্তত বোধ করে) ইয়ে...আসলে মাছ চিনতে আমার ভুল হয়ে গিয়েছিল। আমাকে ক্ষমা করুন প্লিজ। আমি ইলিশ, আপনি?

পাঙাশ: আমি পাঙাশ।

ইলিশ: দেশি, না আফ্রিকান... 
এভাবেই পরিচয়...পরিণয়...অতঃপর গান...‘ইলিশ লো...তোর রুপালি রুপালি আঁশ...বাজারেতে কিনতে গেলে খাওয়া লাগে বাঁশ...ইলিশ লো...’ 
নেচে-গেয়ে চলতে থাকল ইলিশ আর পাঙাশের প্রেম। এদিকে সময়ের পরিক্রমায় বের হলো পাঙাশের রেজাল্ট।

পাঙাশ: (দৌড়ে ঘরে ঢুকে চিৎকার দিয়ে) মা মা, আমি ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট হয়েছি।

মা পাঙাশ: আজ যদি তোর বাবা বেঁচে থাকত...(চোখে পানি)।

পাঙাশ: বাবার কী হয়েছিল মা?

মা পাঙাশ: তুই যখন পোনা ছিলি, তখন মানুষেরা তোর বাবাকে ধরে নিয়ে খেয়ে ফেলেছে।

পাঙাশ: (চোখ মুছতে মুছতে) মাছ হয়ে ভালো রেজাল্ট করে লাভ নেই মা, শেষমেশ মানুষের পেটে যেতে হয়...
এদিকে ইলিশ তার বাবার সঙ্গে পাঙাশের পরিচয় করিয়ে দিতে নিয়ে এল ঘরে। কিন্তু মেয়ের প্রেমিকের প্রজাতি দেখে মনঃক্ষুণ্ন হলেন বাবা।

ইলিশের বাবা: সামান্য দেশি পাঙাশ হয়ে কোন সাহসে তুমি আমার মেয়ের দিকে পাখনা বাড়িয়েছ?

পাঙাশ: ভালোবাসা কখনো মাছের প্রজাতি দেখে না। ইলিশকে আমি আমার জীবনের চেয়েও বেশি ভালোবাসি।

ইলিশের বাবা: তুমি জানো, আমার মেয়ের লেজের দাম দিয়ে তোমার মতো কয়েক ডজন পাঙাশকে বাজার থেকে কিনে নেওয়া যাবে।

পাঙাশ: ইলিশ সাহেব, টাকা দিয়ে মাছ কেনা যায়, কিন্তু মাছের ভালোবাসা কেনা যায় না। আমরা গরিব মাছ হতে পারি, কিন্তু ছোট মাছ নই।

ইলিশের বাবা: আমার মেয়েকে বিয়ে করতে হলে তোমাকে ইলিশের মতো চলাফেরা করতে হবে। শরীরে ইলিশের ঘ্রাণ থাকতে হবে। নইলে এ বাড়ির দরজা তোমার জন্য বন্ধ।

শুনে নায়ক পাঙাশের তৎক্ষণাৎ প্রস্থান। বাবা ইলিশ ঘরে বন্দি করলেন তার মেয়েকে।

ইলিশের বাবা: আজ থেকে তোমার বাড়ির বাইরে যাওয়া বন্ধ। আমার বন্ধুর ছেলে রুইয়ের সঙ্গে শিগগিরই তোমার বিয়ের ব্যবস্থা করা হবে।

ইলিশ: না বাবা, না! পাঙাশকে আমি ভালোবাসি। পাঙাশকে ছাড়া আমি বাঁচব না। ওই ফরমালিন দেওয়া পচা রুইকে আমি মেনে নিতে পারব না।

ইলিশের বাবা: (লেজ দিয়ে মেয়ের গালে চটাশ করে চড় মেরে) আমার মুখের ওপর আর একটা কথা না। তোমার এত অধপতন হবে জানলে জাটকা থাকতেই গলা টিপে মেরে ফেলতাম।

ওদিকে নায়ক পাঙাশ এত সহজে হাল ছাড়ল না। অনেক পরিশ্রম করে বেশ কিছু টাকা জোগাড় করে ফেলল। এরপর সেই টাকা দিয়ে বাজার থেকে ইলিশের গন্ধওয়ালা দামি ব্র্যান্ডের বডি স্প্রে কিনে আনল। শরীরে স্প্রে করা মাত্র পাঙাশের শরীর থেকে ভুরভুর করে ইলিশের গন্ধ বের হলো। শুধু তা-ই না, আশপাশ থেকে বিভিন্ন প্রজাতির মেয়ে মাছ পাগলের মতো তার দিকে ছুটে আসা শুরু করল! 

পাঙাশের এই বুদ্ধি কাজে দিল। ইলিশের বাবা পাঙাশের সঙ্গে ইলিশের বিয়েতে রাজি হয়ে গেলেন। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ হলো গুন্ডা রুই মাছ। সে তার দলবল নিয়ে অপহরণ করে নিয়ে এল নায়িকা ইলিশ আর তার বাবাকে। দড়ি দিয়ে বেঁধে দিল দুজনের শরীর। গুন্ডাদের আস্তানায়।

রুই: সোজা বড়শিতে মাছ না উঠলে তাতে কেঁচো দিতে হয়, ইলিশ সাহেব। আজ থেকে ইলিশ আমার, ইলিশের সব সম্পত্তিও আমার...মু হু হু হু হা হা হা।

ইলিশের বাবা: তোর জিব আমি টেনে ছিঁড়ে ফেলব বদমাশ। ইলিশ দেখেছিস, ইলিশের কাঁটা দেখিসনি।

রুই: মু হু হু হু হা হা হা...সে সুযোগ তুই পাবি না। তোকে খুন করে তোর লাশ দিয়ে সরষে ইলিশ রান্না করা হবে। মু হু হু হু হা হা হা। তোর মেয়ে ইলিশ এখন আমার সামনে নাচবে...এই কে আছিস, ইলিশের বাঁধন খুলে দে...

খুলে দেওয়া হলো ইলিশের বাঁধন। ইলিশ আবার আধুনিক মেয়ে, মুক্ত হয়েই সে তার ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিল Gundara amake tule niyese, monta onek kharap। লোকেশনে লিখে দিল ‘Rui er astana’। তারপর গান গেয়ে গেয়ে নাচা শুরু করল।

এদিকে স্ট্যাটাস দেখা মাত্র পাঙাশ ছুটে এল রুইয়ের আস্তানায়। দেয়াল ভেঙে ঝাঁপ দিয়ে পড়ল গুন্ডা রুইয়ের ওপর।

পাঙাশ: শয়তান, আজ আমি তোকে মেরেই ফেলব।

গুন্ডারা গুলি করা শুরু করল ঢিশা...ঢিশা...ঢিশা... (৭০ রাউন্ড গুলি, নিহত শূন্য)। নায়ক পাঙাশও গুলি করা শুরু করল ঢিশা... ঢিশা (২ রাউন্ড গুলি, নিহত ৭০)। সব গুন্ডাকে মারার পর বাকি রইল শুধু রুই। অন্য গুন্ডাদের হাতের নিশানা খারাপ হলেও রুইয়ের হাতের নিশানা ভালো। নায়কের দিকে তাক করে গুলি করল সে। ঢিশুয়া...কিন্তু, ইলিশের বাবা দৌড়ে এসে বুক পেতে দিলেন পাঙাশের সামনে। গুলি এসে লাগল তার পেটিতে। এমন সময় পুলিশ মাছের আগমন। ‘আইন নিজের পাখনাতে তুলে নেবেন না’ বলে গ্রেপ্তার করা হলো গুন্ডা রুইকে। 

বাবা ইলিশ (রক্তমাখা পেটিতে ধরে): বাবা পাঙাশ, আমার মেয়েকে তুমি দেখে রেখ, বাবা। ওকে তোমার পাখনাতে দিয়ে গেলাম। আ আ আহ্।
ইলিশ: না বাবা, তুমি এভাবে চলে যেতে পারো না, আ আ না আ আ।

অতঃপর পাঙাশ আর ইলিশ সুখে-শান্তিতে বসবাস করতে লাগল। কিছুদিন পর পাঙাশ+ইলিশ থেকে ‘পালিশ’ নামক নতুন মৎস্য প্রজাতি পেল বাংলাদেশ।

কলি

মাতাল বাজিকর এবং তিন ভাই

প্রকাশ: ০২ অক্টোবর ২০২৪, ১০:১০ এএম
মাতাল বাজিকর এবং তিন ভাই
ছবি এআই

এক দিন বারে এক লোক ঢুকে বারটেন্ডারকে বলল, আজকে এই বারের সবাইকে আমার তরফ থেকে এক পেগ।

বারটেন্ডার বলল, তা ঠিক আছে। কিন্তু এই মন্দার সময় তোমার কাছে এত ডলার আছে তো?

লোকটি একতারা ডলার বের করে দেখাল। বারটেন্ডার অবাক হয়ে গেল, তুমি এত ডলার কোথায় পেলে?

লোকটি উত্তর দিল, বাজি ধরা আমার পেশা।

বারটেন্ডার বলল, কিন্তু বাজি মানেই তো ৫০:৫০ চান্স। তাহলে?

লোকটি বলল, ঠিক আছে, চলো ৫০ ডলার বাজি ধরি, আমি আমার ডান চোখে কামড় দেব।

বারটেন্ডার রাজি হলো। বাজিকর তখন তার নকল ডান চোখ খুলে কামড়ে দিল।

বারটেন্ডার বাজিতে হেরে ৫০ ডলার দিয়ে দিল।

বাজিকর বলল, হেরে তোমার মন খুব খারাপ হয়েছে বুঝতে পারছি। চলো তোমাকে আরেকটা সুযোগ দিই টাকা ফেরত নেওয়ার। এসো বাজি ধরি, আমি আমার বাম চোখে কামড় দেব।

বারটেন্ডার খুশি হয়ে উঠল, তোমার ডান চোখ নকল। আবার বারে তুমি দেখেই ঢুকেছ। তোমার বাম চোখটা তাহলে নকল না। আমি বাজিতে রাজি।

বাজিকর তখন তার নকল দাঁত খুলে বাম চোখে কামড় দিল।

ধুত- বারটেন্ডার বিরক্ত হয়ে বলল।

দেখলে, এভাবেই আমি আমার বাজিগুলো জিতি। এবারের ৫০ ডলার আমি তোমার কাছ থেকে নিলাম না। তার বদলে এক বোতল হুইস্কি দাও।

এক বোতল হুইস্কি নিয়ে বাজিকর চলে গেল জুয়ার রুমে। সারা রাত ধরে সে জুয়া খেলল আর হুইস্কির বোতলটা প্রায় খালি করে ফেলল। ভোরের দিকে সে বারটেন্ডারের কাছে এগিয়ে এল। সে নেশার কারণে ঠিকমতো পা ফেলতে পারছিল না।

কোনোমতে বারের ওপর ভর রেখে বাজিকর জড়ানো কণ্ঠে বলল, আমি তোমার সঙ্গে শেষ বাজি ধরতে এসেছি। আমি তোমার এই টেবিলের ওপর দাঁড়িয়ে তোমার পেছনের একটা খালি হুইস্কির বোতলে হিসু করে দেখাব। বাজি হাজার ডলার।

বারটেন্ডার বাজিকরকে সারা রাতই হুইস্কি খেতে দেখেছে। সে নিশ্চিত সে কোনোভাবেই এই বাজিতে জিততে পারবে না। তাই সে খুশি মনে রাজি হয়ে গেল।

বাজিকর টেবিলের ওপর ওঠে পেছনের একটা হুইস্কির খালি বোতলে প্রস্রাব ফেলার অনেক চেষ্টা করল, কিন্তু সে এমনভাবে কাঁপছিল যে সে বোতল বাদে সব জায়গা নোংরা করে ফেলল।

শেষে লজ্জিত কণ্ঠে বলল, বারটেন্ডার, আমি পারলাম না।

বারটেন্ডার খুশিতে লাফ দিয়ে বলল, ইয়েস, আমি হাজার ডলার জিতেছি।

বাজিকর খুশিমনে তাকে হাজার ডলার দিয়ে দিল। বারটেন্ডার অবাক হয়ে বলল, কী ব্যাপার! তুমি এত সহজে হার স্বীকার করে নিলে?

বাজিকর বলল, জুয়ার রুমের লোকগুলোর সঙ্গে আমার বাজি রয়েছে যে, আমি তোমার পুরো বারে হিসু করব, কিন্তু তুমি হাসবে আর আমাকে মারবে না। ওদের সঙ্গে আমি হাজার ডলার জিতেছি।

n এক আইরিশ ডাবলিনের এক বারে এসে তিন পেগ মদ নিয়ে এক কোণায় বসল। তারপর একে একে তিনটি পেগ একাই খেয়ে নিল। আরেক দফা বারটেন্ডারের কাছে আসতেই বারটেন্ডার বলল, এই মদ ছোট পেগে খেয়ে মজা কম। যদি তিনটার বদলে একটা বড় পেগ নিতে তাহলে আরও মজা পেতে।

লোকটি হেসে বলল, আসলে আমরা তিন ভাই কাজের প্রয়োজনে তিন দেশে অবস্থান করছি। আমরা আলাদা হওয়ার আগে ঠিক করেছিলাম, যেখানেই থাকি, প্রত্যেকেই আমরা এক পেগ করে প্রত্যেকের তরফ থেকে খাব এবং পুরোনো দিনের কথা স্মরণ করব।

বারটেন্ডার স্বীকার করল, এটা খুবই ভালো জিনিস। এতে পরিবারের সদস্যদের প্রতি সম্পর্ক ভালো থাকবে।

এভাবে আইরিশ লোকটা প্রতিদিন বারে আসত আর তিন পেগ করে মদ খেত। বারের নিয়মিত সবাই তার কাহিনি শুনেছিল বলে সবাই এটাকে স্বাভাবিকভাবেই দেখত।

এক দিন বারে ঢুকে লোকটি বলল, আমাকে দুই পেগ দাও। কথাটা বলামাত্র বারে পিনপতন নিস্তব্ধতা নেমে এল। বারটেন্ডার মলিন মুখে পেগ ঢেলে দিতে দিতে বলল, তোমার ভাইয়ের মৃত্যুতে আমিও গভীরভাবে শোকাহত। আমরা তার বিদেহী আত্মার মুক্তি কামনা করি।

কী হয়েছে বুঝতে লোকটি একটু সময় নিল। তারপর হাসি ফুটে উঠল তার চেহারায়, আরে না, তোমরা যেটা মনে করছ, তেমন নয়। আমার ভাইয়েরা ঠিকই আছে। আজ থেকে আমি মদ খাওয়া ছেড়ে দিয়েছি।

 

মেহেদী আল মাহমুদ

কাঁচা বাজার বিড়ম্বনা

প্রকাশ: ০১ অক্টোবর ২০২৪, ০২:১৩ পিএম
আপডেট: ০১ অক্টোবর ২০২৪, ০২:১৪ পিএম
কাঁচা বাজার বিড়ম্বনা
আঁকা মাসুম

ছুটির দিন। কোথায় ঘুম ভাঙার পর বিছানায় একটু অজগর সাপের মতো গড়াগড়ি খাব তা না, আম্মা সাতসকালে বাজারে পাঠিয়ে দিল। সাধারণত বাজারের কাজ আমার ছোট ভাই করে। বাসার কোনো কাজে ওর কোনো আগ্রহ নেই। শুধু বাজার করার জন্যই ওর যত আগ্রহ। কী যে এর কারণ কে জানে। ওর সামনে পরীক্ষা, তাই আমাকেই এই দায়িত্ব নিতে হলো।

বাজারের জন্য প্রস্তুতি নিয়ে রওনা হওয়ার আগে ছোট ভাই বলে উঠল, পচা মাছ-টাছ আনিও না। তোমার তো ওই দিকেই বেশি খেয়াল।

আমি কিছু বললাম না। ছুটির দিনে মেজাজ খারাপ করতে কে চায়?

রিকশা ঠিক করতে গিয়ে রিকশাওয়ালার কথা শুনে মনে হলো, আমাকে তার মামার মতো লাগছে মনে হয়। ২০ টাকার ভাড়া চাইছে ৪০ টাকা।

বললাম, শুধু যাব। আসব না তো।

সে আমার কথার কোনো পাত্তা না দিয়ে লুঙ্গির কোঁচড় থেকে বিড়ি বের করে ধরিয়ে ফেলল।

অবশেষে ৪০ টাকাতেই রাজি হয়ে গেলাম। ছুটির দিনে মেজাজ খারাপ করতে কে চায়?

বাজারের গলিতে ঢোকার আগেই একটা চায়ের দোকান আছে। এসব দোকানে

কাতালানদের স্বাধীনতার খবর থেকে শুরু করে বাংলাদেশ টিমের কোনো ব্যাটসম্যানের কীভাবে খেলা দরকার ছিল এসব খবর জানা যায়। অনেকদিন এসব দোকানে বসি না। আজ সুযোগ পাওয়া গেছে তাই ঢুকে পড়লাম।

ঢুকে দেখি আজ বাজারের দ্রব্যমূল্য নিয়ে কথা হচ্ছে।

একজন বলল, পেঁয়াজের ভরি নাকি ৭০ টাকা চলতেছে!

আরে ওই দিন এক বিয়েতে খাসির রেজালার দিকে কেউ তাকাচ্ছেই না।

কেন?

সালাদের মধ্যে পেঁয়াজ ছিল। গোল গোল করে কাটা। সবাই ওই প্লেট নিয়ে টানাটানি।

আমার মেয়ে চুলে আগে পেঁয়াজের রস দিত। ভাবতেই গায়ের লোমগুলো দাঁড়িয়ে যাচ্ছে।

বলেন কী। আপনার মেয়ের তো তাহলে ছেলের অভাব হবে না। ছেলেপক্ষ যখন শুনবে মেয়ের চুলে পেঁয়াজের রস পাওয়া যেতে পারে।

সবাই হেসে উঠল।

আরেকজন বলল, এখন পান্তাভাত ফার্মের মুরগি দিয়ে খেলেই ভালো।

মুরগি দিয়ে কেন?- আমি আমার বড় নাকটা গলিয়ে দিলাম।

কাঁচা মরিচের কেজি কত?- আমাকে সেই লোক উল্টো প্রশ্ন করল।

কত?- আমি একটু অবাক হলাম।

জানেন না আপনি?

না তো।

কোন দেশ?- লোকটি ভুরু নাচিয়ে আমাকে জিজ্ঞেস করল।

মানে?- বুঝলাম যে আমাকেই মুরগি বানানো হচ্ছে।

কোন দেশ থেকে আসছেন?

আমার থতমত অবস্থা দেখে আরেকজন লোক এগিয়ে এল।

ভাই এখন কাঁচা মরিচের কেজি ১২০ টাকা। ফার্মের মুরগির কেজিও ২৬০ টাকা। আগে মানুষ পান্তাভাত দিয়ে কাঁচা মরিচ খেত। এখন ফার্মের মুরগি দিয়ে খাবে।

আরেক প্রস্থ হাসাহাসি হলো।

আর সবজি? কোনটা কিনবেন বলেন। যেসব শাকসবজি আমরা আগে গ্রামে গরু-ছাগলদের খাওয়াতাম সেগুলোও তো খেতে পারছি না।

আরে এসবের মধ্যে যে বিষ খাব সেই উপায়ই তো নেই।

কেন কী হইছে?- এক বয়স্ক ভদ্রলোক জিজ্ঞেস করছে।

বাসায় ইঁদুর বেড়ে যাওয়ায় ওই দিন ইঁদুর মারার বিষ কিনতে গেছিলাম। ওইটারও দেখি দাম বাড়ছে!

সবাই হো হো করে হেসে ফেলল।

না না ভাই হাসিয়েন না। এটা আসলেই সিরিয়াস ইস্যু। বিষ খেয়ে মরতে চাইলেও পারবেন নাকি?

এখন সস্তা আছে একটা জিনিসই। সেটা হচ্ছে মানুষের জীবন। রাস্তাঘাটে, বাসের ধাক্কায়, পানির তোড়ে খালি মানুষই ভেসে যাচ্ছে।

সস্তা আছে একটা জিনিসই সেটা হচ্ছে ম্যাচের বাক্স। টাকাতে পাওয়া যাচ্ছে এখনো।

আমি চায়ের দামটা মিটিয়ে বাজারের সামনে এসে দাঁড়ালাম। এক লোককে আসতে দেখে জিজ্ঞাসা করলাম, ভাই কী অবস্থা?

ফাটতেছে!- এক শব্দে জবাব দিলেন ভদ্রলোক।

আমার সঙ্গে সঙ্গে সেই জোকসটা মনে পড়ে গেল।

বাজারের পাশে এক দর্জির রমরমা ব্যবসা। বাজারে দ্রব্যমূল্যের দাম শুনে লোকজনের প্যান্ট ফেটে গেলেই সে রিপু করে দিচ্ছে। ১৬০০ টাকা ইলিশের কেজি শুনে এক লোকের প্যান্ট ফেটে গেছে। দর্জির কাছে রিপু করাতে গেল সে।

রিপু কত?- রিপু শেষে প্যান্ট পরে দর্জিকে জিজ্ঞাসা করল লোকটি।

৫০ টাকা।

লোকটি একটা ১০০ টাকার নোট দর্জিকে দিয়ে বলল আপনার রিপুর দাম শুনে আবার ফেটে গেছে!

বাজারের দিকে গেলামই না। খালি এক ডজন ম্যাচ কিনে বাসার দিকে চললাম। ম্যাচেরও আবার কখন দাম বেড়ে যাবে কে বলতে পারে।

 

মেহেদী আল মাহমুদ

মানবজীবনের প্রশ্ন

প্রকাশ: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৪:১৯ পিএম
আপডেট: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৪:২৫ পিএম
মানবজীবনের প্রশ্ন

আমাদের জীবন প্রশ্নমুখর। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রশ্নের ধরন পাল্টায়। এক জীবনে কী কী প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয় তার কিছু নমুনা তুলে ধরছেন ফখরুল ইসলাম

স্কুল জীবনের প্রশ্ন

কোন ক্লাসে পড়ো?
রোল নম্বর কত?
রোল এত পেছনে কেন? 
পাশের বাসার ওমুক পারে, তুমি পার না কেন?
মা-বাবার কথা ঠিকমতো শোনো না কেন?
ওর খেলনা নিয়েছ কেন?

কলেজ জীবনের প্রশ্ন

ম্যাট্রিকের রেজাল্ট কী?
রেজাল্ট খারাপ হলো কেন?
কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার ইচ্ছা?
কোন সাবজেক্টে পড়বা?
ভবিষ্যতে কী করবা?

বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের প্রশ্ন

কোন সাবজেক্টে পড়?
অনার্স শেষ করে কী করবা?
সাবজেক্টের বাজার কেমন?
চাকরি-বাকরি আছে তো?
কোন লাইনে যাবা বলে ঠিক করেছ?

বেকার জীবনের প্রশ্ন

চাকরি-বাকরি খুঁজতেছ নাকি?
কেমন চাকরি পছন্দ?
সরকারি চাকরিতে অ্যাপ্লাই করতেছ না কেন?
বসে বসে আর কত দিন?
মা-বাবার কথা ভাব?

চাকরি জীবনের প্রশ্ন

স্যালারি কেমন?
বেতন-টেতন পাও তো?
চলে তো?
বিয়েশাদি করবা কবে?
বয়স যে শেষ হয়ে যাচ্ছে, খেয়াল আছে?

বিবাহিত জীবনের প্রশ্ন

সংসার ঠিকমতো চলতেছে তো?
ঝামেলা হয়?
বাচ্চা-কাচ্চা নিচ্ছ কবে?
টাকা-পয়সা জমাচ্ছ, নাকি ফালতু খরচ করো?

পিতা-মাতার জীবনের প্রশ্ন

বাচ্চা কয়টা?
বাচ্চার রোল কত?
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
রেজাল্ট খারাপ কেন?
বাচ্চার গ্রোথ কম কেন?

 কলি

অনেক আগের কথা

প্রকাশ: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৪:১৮ পিএম
অনেক আগের কথা

কন্যার বিবাহ সম্পন্ন। শ্বশুরবাড়ি চলে গেছে। মিসেস মন খারাপ করে চুপচাপ বসে রয়েছেন।

হাজবেন্ড নস্টালজিক হয়ে বললেন, তোমার মনে আছে, আমাদের রানী যখন ছোট ছিল, তখন তুমি আমাকে একটা কথা বলেছিলে?
মিসেস বললেন, তাই নাকি! মনে করতে পারছি না।
হাজবেন্ড মিসেসের মাথায় ভালোবাসার হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন, ভীষণ ভোলা মন তোমার!
মিসেস বললেন, এরাম আদিখ্যেতা ভালো লাগে না। কী বলতে চাইছ, পরিষ্কার করে বলো।
হাজবেন্ড, একদিন তোমার আমার প্রচণ্ড ঝগড়া হলো। তখন তুমি বললে...
মিসেস বিরক্ত হয়ে বললেন, কী বলেছিলাম সেদিন?
হাজবেন্ড বললেন, তুমি বলেছিলে, কেবলমাত্র মেয়ের কথা ভেবে এখানে পড়ে রয়েছি। নাহলে তোমার মুখে ঝামা ঘসে কবেই চলে যেতাম।‌
হাজবেন্ড পকেটে হাত ঢুকিয়ে এক টুকরো ঝামা বের করে স্ত্রীর হাতে দিয়ে বললেন, এই নাও ঝামা।

 কলি 

বাজির এক্সপার্ট মফিজ

প্রকাশ: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৪:১৩ পিএম
আপডেট: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৪:১৫ পিএম
বাজির এক্সপার্ট মফিজ
আঁকা: মাসুম

সিঙ্গাপুরের নামকরা এক ব্যাংকের ব্রাঞ্চ অফিসে কর্মরত আছেন কয়েকজন কর্মকর্তা। তাদের মধ্যে একজন বাংলাদেশি আছেন, যার নাম মফিজ। মফিজ সাহেব খুবই বুদ্ধিমান। তার একটা বদভ্যাস আছে। তিনি শুধু কলিগদের সঙ্গে বাজি ধরেন। অবশ্যই মোটা অঙ্কের অর্থ। সবচেয়ে বড় কথা, তিনি কখনো বাজিতে হারেন না এক দিনের কথা। কলিগদের সঙ্গে বাজি ধরার আগ্রহ প্রকাশ করলেন।

কলিগরা: বাজির বিষয় বলেন।
মফিজ: আপনারা কেউ কি দেখেছেন যে ঘোড়ার লেজের সঙ্গে মাকড়সা জাল বুনে আছে?
কলিগরা: নাহ! এ হতেই পারে না।
মফিজ: হতে পারে। আমি দেখেছি। তাহলে বাজি হয়ে যাক।
কলিগরা: কত?
মফিজ: ১০ হাজার ডলার। আমি যদি হেরে যাই, আমি একা ১০ হাজার দেব, আর আপনারা হেরে গেলে সবাই মিলে দেবেন।
সবাই খুশি মনে রাজি হয়ে গেলেন। এবার প্রমাণ করার পালা।
মফিজ সাহেব সবাইকে শহর থেকে একটু দূরে একটা চার রাস্তার মোড়ে নিয়ে আসলেন। সেখানে একটা ঘোড়ার মূর্তি দেখা গেল এবং সেটার লেজের সঙ্গে মাকড়সা জাল বুনেছে।
মফিজ: এই যে ঘোড়া আর এই যে মাকড়সার জাল, সঙ্গে মাকড়সা।
কলিগরা: ধুর! এটা তো মূর্তি।
মফিজ: মূর্তি হোক আর যাই হোক, ঘোড়া কি না?
কলিগরা: হ্যাঁ ঘোড়া।
মফিজ: তাহলে আমিই জয়ী। আমার পাওনা বুঝিয়ে দিন।
সবাই ১০ হাজার ডলার দিতে বাধ্য হলেন।
এক বছর ধরে মফিজ সাহেব এমনটাই করে আসছেন। সবাই তার ওপর ক্ষিপ্ত। তারা সিদ্ধান্ত নিলেন, চেয়ারম্যানের কাছে তার বিরুদ্ধে বাজি ধরার অভিযোগ করবেন এবং এখান থেকে হেড অফিসে বদলি করবেন।
যেই কথা সেই কাজ। সাত দিনের মধ্যে তার বদলির আদেশ, ১০ দিনের মাথায় হেড অফিসে জয়েন করা হয়ে গেল।
হেড অফিসে এসে মফিজ সাহেব ভালোভাবে কাজ শুরু করলেন। ব্যাংকের যেকোনো কাজে তিনি সিদ্ধহস্ত। আর বাজি ধরার কোনো প্রশ্নই ওঠে না। এভাবে টানা দুই মাস কেটে গেল। চেয়ারম্যান চিন্তা করলেন, মফিজ তো খুব ভালো ছেলে, তাহলে ওর বিরুদ্ধে অভিযোগ এল কেন? 
এই ভেবে ব্রাঞ্চ অফিসে ফোন করলেন।
চেয়ারম্যান: মফিজের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ মিথ্যা। সে দুই মাস ধরে কোনো বাজি ধরেনি আর সব কাজ সুষ্ঠুভাবে করে চলেছে।
কলিগ: স্যার ও বাজি ধরায় এক্সপার্ট।
চেয়ারম্যান: নাহ। আমার তা মনে হয় না।
কলিগ: স্যার আপনি ওকে জোর করে বাজি ধরাবেন, দেখবেন হেরে যাবেন।
চেয়ারম্যান: আচ্ছা আমি দেখছি।
চেয়ারম্যান মফিজকে তার চেম্বারে ডেকে পাঠালেন।
চেয়ারম্যান: আপনি নাকি অনেক বড় বাজিকর?
মফিজ: কই না তো স্যার! কে বলেছে?
চেয়ারম্যান: আমার সঙ্গে আপনাকে বাজি ধরতে হবে।
মফিজ: আমি বাজি ধরতে পারি না স্যার।
চেয়ারম্যান: বাজি ধরতেই হবে।
মফিজ: এত করে যখন বলছেন, তাহলে আমি রাজি। তবে আমি হেরে যাব।
চেয়ারম্যান: বাজির বিষয় বলেন।
মফিজ: জি স্যার, কিছু মনে করবেন না...আমি এই রুমের মধ্যে দৌড়ে ২০ চক্কর দেব। এর মধ্যে যদি আপনি ২০ বার কান ধরে উঠবস করতে পারেন, তাহলে আমি আপনাকে ১ হাজার ডলার দেব। আর না পারলে আপনি আমাকে ১০০ ডলার দেবেন, রাজি?
বিজয় নিশ্চিত জেনে চেয়ারম্যান সাহেব বাজিতে রাজি হয়ে গেলেন। মফিজ দৌড় শুরু করতেই চেয়ারম্যান সাহেব কান ধরে উঠবস শুরু করলেন। ১০ চক্করের আগেই তিনি ১০ বার উঠবোস সম্পন্ন করে ফেললেন।
চেয়ারম্যান: আপনি তো হেরে গেলেন। আপনার তো কোনো বুদ্ধিই নেই।
মফিজ: কোনো দিনই তো জিততে পারিনি স্যার।
চেয়ারম্যান: ঠিক আছে। আমার ১ হাজার ডলার দিয়ে আপনি আপনার কাজে যান।
এবার চেয়ারম্যান আবার ব্রাঞ্চে ফোন দিলেন।
চেয়ারম্যান: মফিজ তো আসলেই ভালো ছেলে। ও হেরে গেছে। আপনারা ওর নামে মিথ্যা অভিযোগ করেছেন। এই অপরাধে আমি আপনাদের সবাইকে হেড অফিসে বদলি করছি আর মফিজকে তার আগের জায়গায় ফিরিয়ে দিচ্ছি। আপনারা প্রস্তুত হন।
কলিগ: স্যার তার আগে একটা কথা আছে।
চেয়ারম্যান: বলুন।
কলিগ: ও কী কোনো কারণে আপনাকে কান ধরে উঠবোস করিয়েছে।
চেয়ারম্যান: হ্যাঁ, করিয়েছে।
কলিগ: স্যার, ও এখান থেকে যাওয়ার সময় আমাদের সঙ্গে লিখিত বাজি ধরে গেছে যে, ‘আমি চেয়ারম্যানকে কান ধরে উঠবস করাব আর আপনাদের সবাইকে হেড অফিসে বদলি করাব।’ স্যার আবার তো আমরা ১০ হাজার ডলার হেরে গেলাম।

কলি