দেখতে দেখতে এক বছর পূর্ণ করল পাঠকপ্রিয় জাতীয় দৈনিক খবরের কাগজ। পত্রিকাটিতে শুরু থেকেই আমি চট্টগ্রামের ব্যুরোপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। এরই মধ্যে খবরের কাগজ চট্টগ্রামের পাঠকদের মন জয় করেছে। প্রিন্ট সংস্করণে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন, অনলাইনে তাৎক্ষণিক খবর প্রকাশ এবং মাল্টিমিডিয়ার মাধ্যমে লাইভ ও প্যাকেজ প্রকাশের মাধ্যমে জেলার মানুষের হাসি-কান্না, প্রাতিষ্ঠানিক অনিয়ম ও রাজনীতির চুলচেরা বিশ্লেষণ করেছে খবরের কাগজের চট্টগ্রাম টিম। এর মধ্যে কিছু প্রতিবেদন পাঠকদের মধ্যে সাড়া ফেলেছে। অনেক প্রতিষ্ঠান অনিয়মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হয়েছে। এসব কার্যকর পদক্ষেপকে আমরা খবরের কাগজ চট্টগ্রাম ব্যুরো অফিসের অর্জন হিসেবেই দেখছি।
তার মধ্যে উল্লেখ করতে চাই গত বছরের ১০ ডিসেম্বর প্রকাশিত ‘সেই ভুল নকশাতেই ৪৬ কোটি টাকার দরপত্র’ শিরোনামের প্রতিবেদনটি। খবরটি প্রকাশের পর শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর দরপত্র বাতিল করে। দায়িত্বে থাকা নির্বাহী প্রকৌশলীকে বদলি করা হয়। এ ছাড়া চলতি বছরের ২১ জানুয়ারি প্রকাশিত ‘কনস্টেবলের ফাঁদে নিঃস্ব অনেকে’ সংবাদের পর ওই পুলিশ সদস্যকে বরখাস্ত করা হয়। কিছু ভুক্তভোগীকে তিনি টাকাও ফেরত দেন।
গত ১৭ মে ‘দেড় হাজার একর সংরক্ষিত বন উজাড় করে কাসাভা চাষ’ শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদে বন বিভাগের টনক নড়ে। অভিযান চালিয়ে বেশকিছু অবৈধ কাঠ জব্দ করা হয়। চট্টগ্রামে নতুন করে গাছের চারা লাগানোর কর্মসূচি গ্রহণ করে।
এ ছাড়া গত ১৪ মার্চ দেশের আলোচিত সংবাদ ছিল সোমালিয়ান জলদস্যুদের হাতে বাংলাদেশের পতাকাবাহী জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ ছিনতাই ও দেশের ২৩ নাবিক জিম্মি হওয়ার ঘটনাটি। প্রতিদিনই আপডেট সংবাদ পেয়েছেন খবরের কাগজ পাঠকরা। আমাদের সংবাদে উল্লেখ করা তথ্যের সঙ্গে উদ্ধার হওয়ার পর নাবিকদের দেওয়া তথ্য মিলে যায়। সে সময় আমাদের একটি সংবাদ নিয়ে বিভিন্ন মহলে আলোচনা হয়, যার শিরোনাম ছিল, ‘জলদস্যুরা সরাসরি দফারফা করতে চায়’। পরে হয়েছিল সেটাই।
২৫ ডিসেম্বর ‘এলসি ছাড়া গাড়ি আমদানি!’ শিরোনামের সংবাদ প্রকাশের পর চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের টনক নড়ে। নজরদারির মধ্যে রাখা হয় গাড়ি বহনকারী সেই জাহাজকে। পরে আমদানিকারকরা জাহাজের বিপরীতে অতিরিক্ত মাসুল দিতে বাধ্য হন। ১৬ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত হয় ‘সেতুর টোল আদায়ে কারচুপি’। এ সংবাদ প্রকাশের পর চট্টগ্রামের শাহ আমানত সেতুতে টোল আদায়ের শৃঙ্খলা ফিরে আসে। টোল পরিশোধ ছাড়া কর্তৃপক্ষ কোনো গাড়ি পারাপার হতে দিচ্ছে না।
২০ মে ‘প্রবাসীর স্বর্ণ ছিনতাই করে এসআই হাতেনাতে ধরা’ খবরটি পত্রিকার পাশাপাশি ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মেও প্রকাশ হয়। থানায় গিয়ে বিষয়টি দফারফা করার চেষ্টা করা হয়েছিল। সেই এসআইকে ছেড়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছিল। কিন্তু সংশ্লিষ্টরা যখন জানতে পারেন ঘটনার প্রত্যেক্ষদর্শী একজন সাংবাদিক ছিলেন। তিনি ভিডিও করেছিলেন, সংবাদও প্রকাশ করবে। তখন ঘটনায় জড়িত পুলিশ কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার দেখাতে বাধ্য হয় পুলিশ। সংবাদটি খবরের কাগজের মাল্টিমিডিয়ায় প্রথম প্রকাশ হয়। যা চট্টগ্রামে বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করে।
এ ছাড়া ‘অবৈধ পথে আসছে বিদেশি সিগারেট’, ‘ভুয়া বিলে বন্দরের টাকা আত্মসাৎ তত্ত্বাবধায়কের’, ‘নিয়ম ভেঙে বন্দর চ্যানেলে জাহাজ সার্ভে’, ‘চালের চড়া দাম, মিলার-মধ্যস্বত্বভোগীদের দিকে অভিযোগের আঙুল’, ‘অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে সেমাই তৈরির ধুম’, ‘গভীর রাতের এসএমএস, অস্থিতিশীল ডিমের বাজার’, ‘মুনাফাই তাদের প্রধান লক্ষ্য’, ‘ঊর্ধ্বমুখী ডিমের বাজার/ রসিদে গোঁজামিল, চলছে হরিলুট’ শিরোনামে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশের পর পৃথক অভিযান চালায় জেলা প্রশাসন ও ভোক্তা অধিকারের কর্মকর্তারা। শাস্তি পায় কিছু অসাধু ব্যবসায়ী।
আরও আছে। গত ১১ জুলাই ‘এক পরীক্ষাতেই দেড় মাস’ শিরোনামে খবর প্রকাশের পর ইনস্টিটিউট অব নিউক্লিয়ার মেডিসিন অ্যান্ড অ্যালাইয়েড সায়েন্সেসে রোগ নির্ণয়ের গতি বাড়ে। এতে রোগীরা উপকৃত হয়। আগের চেয়ে কম সময়ে আরও বেশি পরীক্ষা করানো সম্ভব হয়। ৭ মে খবরের কাগজে ‘জাহাজভাঙা শিল্পের বর্জ্য শোধনাগারে ক্ষতিগ্রস্ত হবে ১০০ একর কৃষি জমি’ প্রতিবেদন প্রকাশের পর শিল্প মন্ত্রণালয় ওই এলাকা থেকে টিএসডিএফ প্রকল্প সরিয়ে নেয়। এতে রক্ষা পায় আদর্শ প্রাণিসম্পদ, গ্রাম, কৃষি, পাহাড়, প্রকৃতি, বন্যপ্রাণী ও পরিবেশ এবং এশিয়ার বৃহত্তম বোটানিক্যাল গার্ডেন ও ইকোপার্ক।
বিশেষ করে কিশোর গ্যাংয়ের অপতৎপরতা, নগরে হত্যাগুলোর পেছনের রহস্য, শিক্ষা বোর্ডে দুর্নীতি, বিশ্বব্যাংকের প্রকল্পে ধীরগতি, আদালতের খবর, পাহাড় কাটাসহ নানা প্রতিবেদন প্রকাশের পর ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে। একই সঙ্গে সমাজের আলোকিত মানুষদের নিয়ে আমরা ফিচার ছাপিয়েছি। এতে তাদের কর্মস্পৃহা বেড়েছে। ভালো কাজগুলো সমাজে আরও বেশি ছড়িয়ে পড়েছে। ছাত্র আন্দোলনের শুরু থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে সরাসরি সম্প্রচার, প্রতিবেদন করেছি। ঘটনাগুলো ধারাবাহিকভাবে পাঠকের কাছে তুলে ধরেছি।
এসব কাজে সম্মানিত পাঠকরা আমাদের প্রাণশক্তি জুগিয়ে যাচ্ছেন। পাঠকদের ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া আমাদের বেশি বেশি প্রতিবেদন করতে উৎসাহ জোগায়। প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক ও খবরের কাগজের সম্পাদক মোস্তফা কামালের নির্দেশনায় আমরা চট্টগ্রাম ব্যুরো অফিস একটি টিম হিসেবে কাজ করছি। তাঁর নেতৃত্বে আমরা এগিয়ে যেতে চাই বহুদূর।