এবারের নির্বাচনে সবচেয়ে আলোচিত দুই ইস্যু হচ্ছে অর্থনীতি ও অভিবাসন। কয়েক বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রের মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি, আবাসনসংকট ও মুদ্রাস্ফীতির কারণে বেকায়দায় আছে বাইডেন প্রশাসন। এর সুযোগ নিয়ে ট্রাম্প তার নির্বাচনি ক্যাম্পেইনে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিকে ঢেলে সাজানোর এবং সুদিন ফিরিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। অন্যদিকে অর্থনীতি নিয়ে কমলাও জনগণকে শোনাচ্ছেন আশার বাণী। অর্থনীতির সংস্কারে তিনি ঘোষণা করেছেন ‘সুযোগ অর্থনীতি’ নামের এক রূপরেখা। দেখে নেওয়া যাক অর্থনীতি সম্পর্কিত ইস্যুগুলোতে কে কেমন দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করছেন।
কমলা হ্যারিসের অর্থনীতিসম্পর্কিত নীতি
মুদ্রাস্ফীতি: যদিও সাম্প্রতিক কয়েক মাস ধরে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির চিত্র তুলনামূলকভাবে উজ্জ্বল হয়েছে। তবুও কমলা দেশবাসীকে বলছেন, নিত্যপণ্যের দাম যেটুকু কমেছে তা যথেষ্ট নয়। এবং এর কারণে গত কয়েক বছরের উল্লেখযোগ্য পরিমাণ মুদ্রাস্ফীতি। হ্যারিস আমেরিকার জনগণকে এই বলে আশ্বস্ত করছেন যে, তিনি তার ঘোষিত রূপরেখা ‘সুযোগ অর্থনীতির’ মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিকে গড়ে তুলবেন। তার অর্থনৈতিক সংস্কার আবর্তিত হবে মধ্যবিত্ত, নিত্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধির বিরুদ্ধে লড়াই, প্রথমবার আবাসন ক্রেতাদের প্রণোদনা এবং অভিভাবকদের জন্য ট্যাক্স ক্রেডিটের সময়সীমা বৃদ্ধিকে কেন্দ্র করে।
কর: কমলা যুক্তরাষ্ট্রের লাখ লাখ মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত পরিবারের কর কমানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এ ছাড়া তিনি ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তাদের নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত কর মওকুফের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এ ছাড়া তিনি টিপসের ওপর থেকে কর বাদ দেওয়া সংক্রান্ত ট্রাম্পের একটি প্রস্তাবকে সমর্থন করেন।
বাণিজ্য: এই ব্যাপারে কমলা বাইডেন প্রশাসনের নীতি ধরে রাখবেন বলে মনে হচ্ছে। শুল্ক এবং রপ্তানিকে নিয়ন্ত্রণ করে চীনের সঙ্গে অভ্যন্তরীণ প্রতিযোগিতা বৃদ্ধির যে পলিসি বাইডেন প্রশাসন নিয়েছে, কমলা সেটিই অনুসরণ করবেন বলে ধারণা করছেন বিশ্লেষকরা। তিনি অবকাঠামো এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে বাইডেন প্রশাসনের উচ্চাভিলাষী বিনিয়োগ ধরে রাখবেন বলে জানিয়েছেন।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের অর্থনীতিসম্পর্কিত নীতি
মুদ্রাস্ফীতি: ট্রাম্প তেল এবং গ্যাস উত্তোলন এবং এর নিয়ন্ত্রণ বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেওয়ার মাধ্যমে জ্বালানির মূল্য কমানোর মাধ্যমে মুদ্রাস্ফীতিকে নিয়ন্ত্রণ করার রূপরেখা সামনে এনেছেন। তবে অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ট্রাম্পের আমদানি পণ্যে অতিরিক্ত শুল্কারোপ এবং গণনির্বাসন নীতি বাস্তবায়িত হলে জীবনযাত্রার ব্যয় আরও বাড়বে। আর অভিবাসীদের গণনির্বাসনে পাঠালে সস্তা শ্রমিক কমে যাবে। শ্রমের মূল্য বাড়লে পণ্যের দাম বাড়বে। এ ছাড়া উচ্চ সুদ আরোপের জন্যও ট্রাম্প সমালোচিত ছিলেন।
কর: ট্রাম্প পুনর্নির্বাচিত হলে যেসব কোম্পানি যুক্তরাষ্ট্রের ভেতরে পণ্য তৈরি করে তাদের করপোরেট কর ১৫ থেকে ২১ শতাংশ পর্যন্ত কমানোর ঘোষণা দিয়েছেন। কমলা এই নীতির সমালোচনা করে ট্রাম্পকে ‘ধনীদের প্রেসিডেন্ট’ বলে তিরস্কার করেছিলেন। ২০১৭ সালেই এমন একটি আইনে স্বাক্ষর করেছিলেন তিনি। এ ছাড়া তিনি সামাজিক নিরাপত্তা সুবিধা ও টিপস থেকে কর অব্যাহতির ঘোষণা দিয়েছেন।
বাণিজ্য এবং শুল্ক: দেশটির ঝিমিয়ে পড়া অটোমোবাইলশিল্পকে পুনরুজ্জীবিত করা এবং শিশু লালনপালনের অতিরিক্ত ব্যয় কমিয়ে আনাসহ বিভিন্নভাবে ট্রাম্প অগনিত অর্থনৈতিক সমস্যার সংস্কারক হিসেবে আবির্ভূত হওয়ার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। তিনি নিজেকে ‘ট্যারিফ ম্যান’ বলে অভিহিত করেছেন। এ ছাড়া সব আমদানি করা পণ্যের ওপর ১০ থেকে ২০ শতাংশ শুল্ক বৃদ্ধির ঘোষণা দিয়েছেন। চীন থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর এই হার বাড়বে ৬০ শতাংশ বা তারও বেশি। যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের ওপর শুল্কারোপ করে, এমন দেশগুলো থেকে পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে শুল্ক বৃদ্ধি করতে কংগ্রেসের দ্বারস্থ হবেন বলেও জানিয়েছেন তিনি। সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান