বিশ্বের সব গণমাধ্যমের চোখ আজ যুক্তরাষ্ট্রে। ১৮৪৫ সাল থেকে নভেম্বরের প্রথম মঙ্গলবার দেশটির জনগণ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোট দিয়ে আসছেন। এবার নভেম্বরের প্রথম মঙ্গলবার পড়েছে ৫ নভেম্বর।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রার্থী হয়েছেন কমলা হ্যারিস, রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী হয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। নির্বাচনি দৌড় থেকে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সরে দাঁড়ানোর আকস্মিক ঘোষণার পর থেকেই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসেন ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস। তার পর থেকে বিশ্ব গণমাধ্যম বিরামহীনভাবে প্রচার করে চলছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের খবর। কে হবেন দেশটির পরবর্তী প্রেসিডেন্ট, ট্রাম্প না হ্যারিস? নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জয়লাভ করলে রচিত হবে এক ইতিহাস- প্রথমবারের মতো কোনো নারী হবেন সে দেশের প্রেসিডেন্ট। আর ডোনাল্ড ট্রাম্প জিতলে তিনি হবেন প্রথম কোনো সাবেক প্রেসিডেন্ট, যাকে ফৌজদারি অপরাধের অভিযোগে বিচার মোকাবিলা করতে হবে।
নির্বাচনের মাঠ থেকে জো বাইডেনের বিদায়ের ঘোষণায় অনেকটা হাঁফ ছেড়ে বাঁচেন দলটির নেতা-কর্মীরা। ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে ২০২৪ সালের জুনে অনুষ্ঠিত প্রথম বিতর্কে বেশ বেকায়দায় পড়েন বাইডেন, স্পষ্টতই দৃশ্যমান হয়ে ওঠে প্রেসিডেন্টের শারীরিক অক্ষমতা। ২১ জুলাই নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়ে ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসের প্রার্থিতার পক্ষে সমর্থন জানান জো বাইডেন। ৫ আগস্ট ডেমোক্র্যাটিক পার্টি তাকে প্রার্থী করার কথা আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করে। কমলা হ্যারিস মিনেসোটা অঙ্গরাজ্যের গভর্নর টিম ওয়ালজকে রানিং মেট হিসেবে নির্বাচিত করেন। ডোনাল্ড ট্রাম্প রানিং মেট করেছেন জে. ডি. ভ্যান্সকে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের বিতর্ক নির্বাচনি আচার-অনুষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। প্রথম বিতর্কে বেশ ভালোভাবেই উতরে যান কমলা হ্যারিস। তবে সময় যত গড়াতে থাকে, ডোনাল্ড ট্রাম্প ততই ঘুরে দাঁড়াতে থাকেন। বিতর্কের পর প্রথম দিকে জনমত জরিপে এগিয়ে থাকেন কমলা হ্যারিস। পরে ক্রমান্বয়ে ব্যবধান ঘুচিয়ে ফেলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এখন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকসহ বিশ্বের গণমাধ্যমগুলো জটিল এক সমীকরণের সম্মুখীন হয়েছেন- কে হবেন যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট?
নির্বাচনি জরিপের ফল অন্য যেকোনো দেশের তুলনায় যুক্তরাষ্ট্রে বেশ কার্যকর হয়ে থাকে। তবে জরিপে যারা এগিয়ে থাকেন, তারাই যে পরবর্তী সময়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়লাভ করবেন, তা নিয়ে পুরোপুরি সংশয়মুক্ত নন বিশ্লেষকরা। এখানে পপুলার ভোট ও ইলেকটোরাল ভোট নিয়ে একটি সমীকরণ রয়েছে। সেই সমীকরণ বুঝতে গেলে সাধারণ পাঠককে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনব্যবস্থা বুঝতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রের জনগণের বেশি ভোট পেয়েও যে কেউ প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত নাও হতে পরেন।
প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ইলেকটোরাল কলেজ ভোটের ফলই শেষ কথা। বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যের নাগরিকরা সরাসরি যে ভোট দেন তাকে পপুলার ভোট বলে। সে হিসাবে সাধারণ বিবেচনায় কোনো প্রার্থী একটি অঙ্গরাজ্যে সর্বাধিক ভোট পেলেই তাকে সেখানে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ভারসাম্যনীতি একটি অসাধারণ ব্যতিক্রমী কৌশল। প্রতিটি অঙ্গরাজ্যে জনসংখ্যার অনুপাতে আছে ইলেকটোরাল কলেজ ভোট। এই ইলেকটোরাল ভোটই নির্বাচনের ফল নির্ধারণ করে।
যুক্তরাষ্ট্রের ৫০টি অঙ্গরাজ্যের মধ্যে ৪৮টির জন্য নিয়ম হলো- যিনি পপুলার ভোটে জিতবেন তিনিই সে অঙ্গরাজ্যের সব কটি ইলেকটোরাল ভোট পাবেন, সেখানে পপুলার ভোটের ব্যবধান যতই কম বা বেশি থাকুক না কেন। জাতীয় পর্যায়ে পপুলার ভোট বেশি পেলেও জয়-পরাজয় হিসাব করা হয় ইলেকটোরাল ভোটের ভিত্তিতে। দেশটিতে সব অঙ্গরাজ্য মিলিয়ে ইলেকটোরাল ভোটের সংখ্যা ৫৩৮। আর হোয়াইট হাউসে অবস্থান নিশ্চিত করতে হলে কোনো প্রার্থীকে কমপক্ষে ২৭০টি ইলেকটোরাল ভোট পেতে হবে।
২০০০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জর্জ ওয়াকার বুশ পেয়েছিলেন ২৭১টি ইলেকটোরাল ভোট। প্রয়োজনীয় সংখ্যার চেয়ে একটি বেশি। তবে পপুলার ভোটে প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখ ভোট বেশি পেয়েছিলেন আল গোর। ২০১৬ সালের নির্বাচনেও হিলারি ক্লিনটন প্রতিদ্বন্দ্বী ডোনাল্ড ট্রাম্পের চেয়ে সাড়ে ২৮ লাখেরও বেশি পপুলার ভোট পেয়েছিলেন। তবে ট্রাম্প ৩০৪টি ইলেকটোরাল ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। এবারের নির্বাচনেও কমলা হ্যারিস পপুলার ভোট বেশি পাবেন এবং ট্রাম্প ইলেকটোরাল ভোট বেশি পাবেন বলে বিশেষজ্ঞদের অনেকে মনে করছেন। সে ক্ষেত্রে দ্বিতীয়বার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকছে ডোনাল্ড ট্রাম্পের।
যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন নিয়ে বিশেষজ্ঞরা এবার আগাম কোনো নিশ্চিত ধারণা গণমাধ্যমকে দিতে পারছেন না। সবাই বলছেন, যে কেউই নির্বাচনে জিততে পারেন। বিশ্বখ্যাত গণমাধ্যম লন্ডনের দ্য ইকোনমিস্ট পত্রিকায় সতর্ক করে বলা হয়, ট্রাম্প নির্বাচনে জয়লাভ করলে যুক্তরাষ্ট্র ও বিশ্বে ঝুঁকি বাড়বে। সেখানে আরও বলা হয়, ইকোনমিস্ট যদি ভোট দিতে পারত, তাহলে কমলা হ্যারিসকেই ভোট দিত। এর মধ্য দিয়ে বিশ্বের প্রভাবশালী এই গণমাধ্যমটি এটাই বোঝাতে চেয়েছে যে পছন্দ করুন আর না করুন, ট্রাম্প হয়তো নানা বিবেচনায় জয়ের দৌড়ে বেশ জোরালো অবস্থানে আছেন।
চার বছর আগে জো বাইডেনের কাছে বেশ ভালোভাবেই পরাজিত হন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তখন তিনি ছিলেন একজন পরাজিত নেতা। সময়ের পরিক্রমায় আজ তিনি ঘুরে দাঁড়ানো নেতা। জনমত জরিপে কমলা হ্যারিসের সঙ্গে ব্যবধান ঘুচিয়ে আনতে পারায় ট্রাম্প ঘুরে দাঁড়িয়েছেন বলে ব্যাপকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। নির্বাচনি প্রচার মাত্রা পাওয়ার পর থেকে এই দুই নেতার ব্যবধান কখনো তিনের বেশি ছিল না।
নিউইয়র্ক টাইমস/সিএনএনের জরিপ অনুযায়ী, একমাত্র গত ৪ আগস্টেই এই দুই নেতা সমান ছিলেন। তখন তাদের দুজনের পয়েন্ট ছিল ৪৭। জনপ্রিয়তার বিবেচনায় জাতীয়ভাবে ৫ আগস্ট থেকে এগিয়ে যান কমলা হ্যারিস। তার পর থেকে ৩ নভেম্বর পর্যন্ত কমলা এগিয়ে আছেন। তবে সেই জরিপ অনুযায়ী কখনো এই ব্যবধান তিনের বেশি বা একের কম হয়নি। অন্য অনেক জরিপে ব্যবধান আরও বেশি ছিল।
নিউইয়র্ক টাইমস/সিএনএনের জরিপে (৩ নভেম্বর) কমলা ৪৯ পয়েন্ট নিয়ে এক পয়েন্টে এগিয়ে ছিলেন। ভোটের চূড়ান্ত ফয়সালা হবে সাত ব্যাটলগ্রাউন্ডে (দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্য: পেনসিলভানিয়া, নর্থ ক্যারোলাইনা, মিশিগান, নেভাডা, উইসকনসিন, জর্জিয়া ও অ্যারিজোনা)।
এই সাত ব্যাটলগ্রাউন্ডে ধীরে ধীরে উন্নতি করেছেন ট্রাম্প। নিউইয়র্ক টাইমস/সিএনএনের জনমত জরিপে (৩ নভেম্বর) ব্যাটলগ্রাউন্ডের সাতটি অঙ্গরাজ্যের মধ্যে চারটিতে এগিয়ে গেছেন ট্রাম্প, দুটিতে কমলা এবং একটিতে উভয়েই সমান অবস্থানে আছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিক সূচক কাজ করে। কমলা হ্যারিস দেশের লোকজনকে কী দিতে পারবেন, সে বিষয়ে স্পষ্ট করে কিছু বলতে পারেননি বলে অনেকে অভিযোগ করেছেন।
আর ট্রাম্প বারবার বলেছেন, তার অসম্পূর্ণ কাজ সম্পন্ন করবেন। ট্রাম্পের প্রতিশ্রুতির মধ্যে রয়েছে ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতি। এটি চূড়ান্তভাবে বাস্তবায়ন করতে হলে যুক্তরাষ্ট্রকে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডল থেকে অনেকটাই গুটিয়ে নিতে হবে, যা দেশটির একবিংশ শতাব্দীর নীতির পরিপন্থি। প্রতিষ্ঠার পর থেকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে যুক্তরাষ্ট্র ক্রমান্বয়ে নিজের অবস্থান শক্তিশালী করেছে।
অভ্যন্তরীণ যে সূচকগুলো যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন প্রভাবিত করে, তার অনেকগুলোতে তুলনামূলক বিচারে এগিয়ে আছেন কমলা হ্যারিস। এর মধ্যে একটি সূচক ২০২২ সালের মধ্যবর্তী নির্বাচন। সেই নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটিক পার্টি ভালো ফল করে। ভালো ফলের পরও দলটি হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভসে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে পারেনি। কংগ্রেসের নিম্নকক্ষে রিপাবলিকানরা সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ায় এই ক্ষেত্রে এগিয়ে গেছেন ট্রাম্প।
দ্বিতীয় সূচকটি হলো ধারাবাহিকতা। এবারের নির্বাচনে কমলা বা ট্রাম্প- কেউই ধারাবাহিক নন। বাইডেন ছিলেন ধারাবাহিক প্রার্থী। তিনি সরে যাওয়ায় কমলা এসেছেন। আর আগের নির্বাচনে ট্রাম্প পরাজিত হওয়ায় তিনিও ধারাবাহিক প্রার্থী নন। কাজেই এই সূচকে তারা উভয়েই সমান অবস্থানে আছেন। দলীয় প্রার্থিতা অর্জনে ট্রাম্পের তুলনায় কমলা সামান্য এগিয়ে গেছেন। তৃতীয় পক্ষের প্রার্থী রবার্ট এফ জুনিয়র নিজের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে কমলার পক্ষে অবস্থান ঘোষণা করেছেন।
অপর সূচক হলো যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি। যেহেতু ডেমোক্র্যাট সরকার কোনো মন্দায় পড়েনি এবং ইউক্রেন যুদ্ধে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছে যুক্তরাষ্ট্র, তাই ধরে নেওয়া যায় ধকল সত্ত্বেও অর্থনীতিতে পিছিয়ে নেই দেশটি। এই সূচকটি কমলা হ্যারিসের পক্ষে যাবে। আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ অপর সূচকে এগিয়ে আছেন কমলা হ্যারিস। প্যারিস চুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের ফিরে আসা আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে দেশটির প্রতি সহযোদ্ধাদের আস্থা বাড়িয়েছে।
এ ছাড়া ইতিবাচক ভাবমূর্তি হয়েছে আরও যে কয়টি ইস্যুতে সেগুলো হলো- চিপস বিল, অবকাঠামো বিল, মুদ্রাস্ফীতি হ্রাস আইন এবং জলবায়ু পরিবর্তন বিল। মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিরতা ইস্যুতে কমলা বা ট্রাম্প খুব বেশি দূরত্বে নেই। এই ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের সব রাজনৈতিক দলের অবস্থান প্রায় একই। এই ইস্যুটি আন্তর্জাতিক হলেও যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ নানা বিষয় এর সঙ্গে বেশ নিবিড়ভাবে সম্পর্কিত। ট্রাম্পের সঙ্গে ইসরায়েল সরকারের ব্যক্তিগত সম্পর্ক বেশ গভীর। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দল ও সরকারের সঙ্গে হোয়াইট হাউসের সম্পর্কও কমবেশি ভূমিকা পালন করে। এক কথায় এটিকে স্থানীয়ভাবে হোয়াইট হাউস কেলেঙ্কারি বলা হয়। এই ইস্যুতে বাইডেন আমলে কোনো ঝামেলায় পড়েনি ডেমোক্র্যাটিক পার্টি। সেই বিবেচনায় এগিয়ে আছেন কমলা হ্যারিস। ব্যক্তিগত ক্যারিশমা সূচকে এগিয়ে আছেন ট্রাম্প।
কমলা তার অনুসারীদের তেমন কোনো ক্যারিশমা দেখাতে পারেননি। অবশ্য দীর্ঘ প্রাইমারি দৌড় শেষ না করে এবার সরাসরি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে চলে আসায় এটি দেখানোর সুযোগও পাননি কমলা। ট্রাম্প এই ইস্যুতে বেশ এগিয়ে আছেন। বাইডেনের আকস্মিক বিদায়ে অবশ্য কমলার রেটিং বেড়েছে। নির্বাচনি দৌড়ে আনুষ্ঠানিকভাবে নেমেই তিনি জনপ্রিয়তার পয়েন্টে ট্রাম্পকে পেছনে ফেলেন চ্যালেঞ্জার হিসেবে। শেষ পর্যন্ত অবশ্য ডেমোক্র্যাট এই প্রার্থীকে কোনোভাবেই উপেক্ষা করতে পারবেন না ট্রাম্প।
শেষ এক সপ্তাহের জরিপে ট্রাম্প এগিয়ে যাওয়ায় নির্বাচন গবেষকদের অনেকেই মনে করছেন, এই মুহূর্তে ট্রাম্পের জয়ের পাল্লা ভারী। ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক চন্দ্রশেখর পুচ্চা বলেছেন, তিনি ৯৭ শতাংশ নিশ্চিত, নির্বাচনে ট্রাম্প জয়লাভ করবেন। আধুনিক প্রায়োগিক ব্যবস্থাপনার আওতায় গাণিতিক সব সূত্র ব্যবহার করে পাওয়া ফলের ভিত্তিতে তিনি এই মন্তব্য করেছেন। নির্বাচনি প্রচারের পুরো সময় কমলা হ্যারিস এগিয়ে থাকলেও শেষ এক সপ্তাহে প্রতিদ্বন্দ্বী ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছ থেকে বড় চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছেন।
নির্বাচনের প্রায় ছয় মাস আগে গত ৩০ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্রের টাইম সাময়িকীতে এক সাক্ষাৎকারে এরিক কোর্টেলিসকে ট্রাম্প বলেছিলেন, নির্বাচিত হলে তিনি অবৈধ অভিবাসীদের জন্য বন্দিশিবির নির্মাণ করবেন। কথা না শুনলে অ্যাটর্নি জেনারেলকে বরখাস্ত করার অভিপ্রায়ের কথাও সাংবাদিককে বলেন ট্রাম্প। এমনকি তিনি এও বলেছেন, তিনবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ব্যবস্থা করার জন্য তিনি সংবিধান সংশোধনের পক্ষে। যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান একজনকে দুই মেয়াদের বেশি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার সুযোগ দেয় না।
ব্রিটেনের প্রভাবশালী দৈনিক দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্প দ্বিতীয় দফায় নির্বাচিত হলে মুক্ত চিন্তা থেকে মুক্ত গণমাধ্যম, গর্ভপাত থেকে অস্ত্রনিরাপত্তা- সব ইস্যুই হুমকির মুখে পড়বে। যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক জীবনে চরম ডানপন্থার উত্থান ঘটতে পারে বলে সতর্ক করা হয়েছে পত্রিকাটিতে। আর অভিবাসন তো আছেই। অভিবাসীদের দিয়ে প্রতিষ্ঠিত যুক্তরাষ্ট্র অভিবাসনবিরোধী হলে তা সে দেশের মানবিক মূল্যবোধকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে। এমনকি ডেমোক্র্যাট নিয়ন্ত্রিত শহরগুলোতে ট্রাম্প সেনা হস্তক্ষেপের হুমকিও দিয়ে রেখেছেন। গণহারে অবৈধ অভিবাসী বহিষ্কার ব্যাপক সামাজিক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে পারে। ট্রাম্প লিঙ্গান্তর বন্ধের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। একই সঙ্গে সমকামীদের নানা অধিকার খর্ব করা হবে বলে আগাম হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ট্রাম্প। জলবায়ু ইস্যুতে আবারও তিনি বিশ্ব উদ্যোগে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবেন।
দ্য গার্ডিয়ানের মূল্যায়নে আরও বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের গরিব জনগোষ্ঠী এই সময়ে আরও গরিব হয়ে যাওয়ার ঝুঁকিতে পড়তে পারে। আর পররাষ্ট্রনীতিতে ইউরোপসহ বিশ্বে যুক্তরাষ্ট্রের মিত্ররা আবারও নিরাপত্তাহীনতায় পড়তে পারে। অন্যদিকে কমলা হ্যারিস জয়লাভ করলে ট্রাম্প-ঘোষিত প্রতিটি ইস্যুতে বিশ্ববাসী বিপরীত চিত্র দেখতে পারেন। গত কয়েক মাসের নির্বাচনি প্রচারাভিযানে কমলা ট্রাম্পকে একজন অস্থির ব্যক্তি ও গণতন্ত্রের জন্য হুমকি বলে বর্ণনা করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফল জানতে আমাদের দেশের পাঠকদের কমপক্ষে কাল দুপুর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। তবে বরাবরের মতো এবারও উত্তেজনা ছড়িয়ে শেষ হয়েছে নির্বাচনি প্রচার। লড়াই হবে হাড্ডাহাড্ডি।