ঢাকা ২৪ ভাদ্র ১৪৩১, রোববার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪

সড়ক যেন ‘ধান মাড়াইয়ের উঠান’

প্রকাশ: ২০ মে ২০২৪, ০৯:৩৭ এএম
আপডেট: ২০ মে ২০২৪, ০৯:৪৭ এএম
সড়ক যেন ‘ধান মাড়াইয়ের উঠান’
ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া-শিবগঞ্জ সড়কের ওপর ধানের খড় শুকানো হচ্ছে। খবরের কাগজ

ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার বিভিন্ন সড়ক দখল করে চাষিরা বোরো ধান মাড়াই ও খড় শুকানোর কাজ করছেন। এতে যানবাহনের চালক ও পথচারীরা ভোগান্তিতে পড়ছেন। প্রায়ই ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা। ওই সড়কে চলাচলকারীরা বলছেন, রাস্তার ওপর ধান শুকানোর কারণে গাড়ি ধীরে চালাতে হয়।

এতে তাদের ট্রিপের সংখ্যা কমায় আগের তুলনায় আয় কমেছে। পাশাপাশি রয়েছে ছোট-বড় দুর্ঘটনার অভিজ্ঞতা। তারা এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন। অধিকারকর্মীর ভাষ্য অনুযায়ী, বাড়িতে উঠান ছোট থাকার মতো ঠুনকো কারণকে সামনে এনে অনেকে রাস্তার ওপর ধান শুকাচ্ছেন। এগুলো বন্ধ করা প্রয়োজন। 

সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সড়কের পাশেই শ্যালোচালিত ইঞ্জিন দিয়ে ধান মাড়াই করা হচ্ছে। মাড়াই শেষে সড়কের ওপরেই সেগুলো শুকানো হচ্ছে। অনেকে ধান বাড়ি নিয়ে গেলেও খড় শুকানোর জন্য সড়কের ওপরই ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রেখেছেন। শুকানো শেষ হলে সড়কের পাশেই সেগুলো স্তূপ করে রাখা হয়েছে।

ফুলবাড়িয়া-শিবগঞ্জ সড়কে অটোরিকশা চালান আকরাম হোসেন। তিনি খবরের কাগজকে বলেন, ‘সড়কে ধান মাড়াইয়ের আগে প্রতিদিন গড়ে ১৩০০ টাকার ভাড়া উঠত। ৮০০ টাকা অটোরিকশার মালিককে দেওয়ার পরও ৫০০ টাকা থাকত। কিন্তু বর্তমানে সড়ক দখল করে ধান মাড়াইয়ের কারণে গাড়ি ধীর গতিতে চালাতে হয়। এতে ট্রিপের পরিমাণ কমে আসছে। এ জন্য প্রতিদিন ৭ থেকে ৮শ টাকার বেশি ভাড়া ওঠে না। ফলে মালিককে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা দেওয়ার পর নিজের সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।’

সিএনজিচালিত অটোরকিশার চালক সেলিম মিয়া বলেন, ‘কিছুদিন আগে যাত্রী নিয়ে শিবগঞ্জ বাজারের দিকে যাচ্ছিলাম। পথে ধান-খড়ে চাকা পিছলে সিএনজি উল্টে যায়। এতে তিন যাত্রী আহত হন। সড়কে ধান মাড়াই করার কারণে সবসময় ধীর গতিতে গাড়ি চালাতে হচ্ছে। নির্দিষ্ট সময়েও গন্তব্যে পৌঁছাতে না পারায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি।’

ফুলবাড়িয়া পৌর এলাকার বাসিন্দা খোকন মিয়া বলেন, ‘উপজেলার প্রায় প্রত্যেকটি সড়ক দখল করে ধান মাড়াই ও খড় শুকানো হচ্ছে। দেখে মনে হবে বাড়ির উঠান। বৃষ্টি হলে ওই খড় সড়কে কর্দমাক্ত অবস্থা ধারণ করে। পরে সেগুলো আর সরানো হয় না। ধীরে ধীরে এগুলো পচে সড়ক পিচ্ছিল হয়ে থাকে। এতে যেকোনো সময় ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা।’

উপজেলার পুটিজানা ইউনিয়নের পানজানা গ্রামের কৃষক চান মিয়া বলেন, আমি ৯ একর জমিতে ধান আবাদ করেছি। অনেক ধানসহ খড় বাড়ির উঠানে শুকানো সম্ভব হয় না। এ জন্য সড়কে এসেছি।

এভাবে সড়কে ধান মাড়াই করলে যানবাহনের যাত্রী, চালকসহ পথচারীদের সমস্যা হচ্ছে জানালে তিনি বলেন, ‘জানি সড়ক দিয়ে চলাচলকারী সবারই কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। খুব দ্রুতই ধান-খড় সড়ক থেকে সরিয়ে বাড়িতে নেওয়া হবে।’

একই গ্রামের গৃহিণী আছমা খাতুন বলেন, আশপাশে ধান-খড় শুকানোর মতো কোনো মাঠ নেই। কয়েক বছর আগে বাড়ির উঠান বড় থাকলেও ভাগাভাগির কারণে উঠান ছোট হয়ে গেছে। তাই জমি থেকে ধান কেটে আনার পর মাড়াই ও শুকানোর যাবতীয় কাজ সড়কেই করা হচ্ছে।

নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের (নিসচা) ময়মনসিংহের সভাপতি আব্দুল কাদের চৌধুরী মুন্না বলেন, সবারই যে উঠান নেই, বিষয়টি এমন নয়। অনেকের উঠান থাকা সত্ত্বেও ভালোভাবে সহজে রৌদ্রে মাড়াই করতে সড়কে নিয়ে আসেন। সড়কে চলাচলকারীদের ঝুঁকি এড়াতে ধান মাড়াই কিংবা খড় শুকানো একেবারেই উচিত নয়।

এ বিষয়ে ফুলবাড়িয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কাবেরী জালাল বলেন, সড়ক দখল করে এ ধরনের কর্মকাণ্ড বেআইনি। জনস্বার্থে সড়কে ধান মাড়াই বন্ধ করা হবে।

ওবায়দুল কাদেরের ভিআইপি পিআরও

প্রকাশ: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৩:৪০ এএম
ওবায়দুল কাদেরের ভিআইপি পিআরও
ওবায়দুল কাদেরের পাশে দাঁড়ানো শেখ ওয়ালিদ ফয়েজ

আলাদিনের চেরাগ হাতে না পেলেও মাত্র ১০ বছরে জিরো থেকে হিরো হয়েছেন শেখ ওয়ালিদ ফয়েজ। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সাবেক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের আস্থাভাজন জনসংযোগ কর্মকর্তা ছিলেন তিনি। রাজনৈতিক তদবিরের পাশাপাশি সড়ক ও সেতু বিভাগে সিন্ডিকেট তৈরি করে পারসেন্টেজ নিতেন ওয়ালিদ। রাজনৈতিক তদবিরের পাশাপাশি বদলি, পদোন্নতি ও টেন্ডার নিয়ন্ত্রণেও ছিলেন যুক্ত। এসব করে হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি কোটি টাকা।

নিজের আখের গোছাতে ব্যস্ত ছিলেন ওয়ালিদ, তার মূল দায়িত্ব তথ্যসেবা দেওয়ার কথা হলেও তিনি এই ক্ষেত্রে সময়ও দিতে পারতেন না। দায়িত্ব পালনকারী সাংবাদিকরা ফোন করে ওয়ালিদকে কখনোই পেতেন না- এই অভিযোগ দীর্ঘদিনের। এ জন্য সংশ্লিষ্টরা ওয়ালিদকে ‘ভিআইপি পিআরও’ বলেও সম্বোধন করতেন। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তথ্য ক্যাডারের ৩১ ব্যাচের কর্মকর্তা ছিলেন শেখ ওয়ালিদ ফয়েজ। শেখ পরিবারের এক নেতার বিশেষ তদবিরে সুযোগ পান সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সেতু বিভাগের জনসংযোগ কর্মকর্তা (পিআরও) হিসেবে চাকরি করার। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এই মন্ত্রণালয়ের সাবেক মন্ত্রী ছিলেন।

দীর্ঘদিন ধরে একই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকায় ওবায়দুল কাদেরের বিশ্বস্ত হয়ে ওঠেন শেখ ওয়ালিদ। পিআরও হলেও মূলত ছিলেন ওবায়দুল কাদেরের আশীর্বাদপুষ্ট ও আস্থাভাজন। মন্ত্রণালয়ে তৈরি করেন ‘পারসেন্টেজ সিন্ডিকেট’। শুধু তা-ই নয়, সরকারের কর্মচারী হয়েও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক (শীর্ষ পদ) ওবায়দুল কাদেরের পদের প্রভাবও বিস্তার করতে শুরু করেন রাজনৈতিক অঙ্গনে। নিজের ঘনিষ্ঠ লোকদের জন্য ওবায়দুল কাদেরকে দিয়ে করাতেন তদবির। এই তদবিরের মাধ্যমে মন্ত্রণালয়ের কাজই নয়, রাজনৈতিক পদবি, দলীয় নমিনেশন (চেয়ারম্যান), বদলি বাণিজ্যও করাতেন শেখ ওয়ালিদ। হাতিয়ে নিতেন কোটি কোটি টাকা। 

সংশ্লিষ্টদের দেওয়া তথ্যমতে, ২০১৩ সালে সেতু বিভাগের পিআরও হিসেবে যোগ দেন শেখ ওয়ালিদ। সড়ক বিভাগের সিনিয়র জনসংযোগ কর্মকর্তা আবু নাসের উপসচিব হিসেবে পদোন্নতি পেয়ে অন্যত্র চলে যান। ফলে সড়ক ও সেতু দুই বিভাগেরই তথ্য কর্মকর্তার দায়িত্ব পান ওয়ালিদ। আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের এপিএস মহিদুল হক আপেল, রাজনৈতিক সচিব আব্দুল মতিন, পিও জাহাঙ্গীর আলম ও শুখেন চাকমাকে নিয়ে ওয়ালিদ মন্ত্রণালয়ে গড়ে তোলেন পাঁচ সদস্যের সিন্ডিকেট। সড়ক বিভাগের সাবেক পিআরও নাসিরকে আর মন্ত্রীর কছে ভিড়তে দেয়নি এই সিন্ডিকেট। শুধু তা-ই নয়, মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরকে ‘সব ঠিক চলছে’ বলে মন্ত্রণালয়েও আসতে নিরুৎসাহিত করত। এই সিন্ডিকেট জোট হয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সাব-কন্ট্রাক্টরি, বিভিন্ন তদবির করত এবং এসব কাজের পারসেন্টেজ সবাই মিলে ভাগ করে নিতেন। এর মধ্য থেকে একটি পারসেন্টেজ মন্ত্রীর পকেটে যেতো। 

এদের দাপটের সময়ে দেশের মেগা প্রকল্পগুলো থেকে মেগা দুর্নীতি হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকারের পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, বঙ্গবন্ধু টানেল ও চার লেন সড়কের কাজের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে তারা হাতে রেখে কামিয়েছেন কোটি কোটি টাকা। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নের উপকরণ মাটি, বালু, ইট-পাথর, রড সরবরাহের ঠিকাদারদের কাছ থেকেও নিতেন পারসেন্টেজ। পাশাপাশি সড়ক ও সেতু বিভাগ, অধিদপ্তরগুলোতে টাকার বিনিময়ে কর্মকর্তাদের পদায়ন করতেন এই সিন্ডিকেট সদস্যরা। একই সঙ্গে কাজের বিল নিয়ে নয়ছয়, বিল পাস করিয়ে দেওয়া, পদোন্নতি, নিয়োগ বাণিজ্যসহ হেন কোনো কাজ নেই যা তারা করেননি। কেউ এই অর্থ পরিশোধ করতে বিলম্ব করলে কাজ অন্য ঠিকাদারদের হাতে চলে যেত।

আওয়ামী লীগের আমলে সড়ক ও সেতু বিভাগে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। আর এই সুযোগে নামে-বেনামে নানা খাত সৃষ্টি করে কয়েক শ কোটি টাকা কামিয়েছেন ওয়ালিদ ও তার সিন্ডিকেট। দুই মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালনকালে কোথাও যথাযথভাবে সময় দিতে পারেননি ওবায়দুল কাদের। এই সুযোগটাই কাজে লাগান ওই সিন্ডিকেট সদস্যরা। ওয়ালিদ শুরু থেকেই মন্ত্রণালয়ের তদবির করতেন তা নয়, আওয়ামী লীগ ও দলের সহযোগী সংগঠনের পদ-পদবির তদবিরও করাতেন তিনি। ওবায়দুল কাদেরের আস্থাভাজন হওয়ায় অর্থের পেছনে নয়, অবৈধ অর্থই ছুটেছে শেখ ওয়ালিদ ফয়েজের পেছনে।

এই টাকা দিয়ে শেখ ওয়ালিদ ফয়েজ সাধারণ জীবনযাপনের বদলে রাজকীয় জীবনযাপন শুরু করেন। অবৈধ অর্থ দিয়ে শুরু করেছিলেন হাউজিং ব্যবসা। রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বছিলায় জমি কিনে মাটি ভরাটের পর প্লট ও ফ্ল্যাট কিনেছেন সরকারের এই কর্মচারী। ভবন নির্মাণ করে ফ্ল্যাট বিক্রি করেও অঢেল অর্থ-সম্পদের মালিক হয়েছেন তিনি। এ ছাড়া রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে তার বাড়ি, একাধিক ফ্ল্যাট থাকার খবর পাওয়া গেছে। কেরানীগঞ্জ ও গাজীপুরে কিনেছেন জমি। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের কয়েকটি স্থানে ওবায়দুল কাদেরের তদবিরে হাঁকিয়েছেন দোকান। এসব সম্পদ নিজের নামে না করলেও ভাইবোন ও ঘনিষ্ঠদের নামে করেছেন শেখ ওয়ালিদ। 

বাগেরহাট জেলা প্রতিনিধির পাঠানো তথ্যে জানা গেছে, জেলার চিতলমারী উপজেলার বড়গুনী গ্রামের শেখ ফয়জুল্লাহর ছেলে শেখ ওয়ালিদ ফয়েজ। ওবায়দুল কাদেরের আস্থাভাজন এই পিআরও নিজ উপজেলায়ও প্রভাব খাটাতেন। ওবায়দুল কাদেরের আশীর্বাদে তিনি নিজের উপজেলা-ইউনিয়নের চেয়ারম্যানদের জন্য নানা সুপারিশ করতেন। পাশাপাশি বোনকেও চেয়ারম্যান বানিয়েছেন তিনি। তার মেজো বোন মিলিয়া আমিনুল গোপালগঞ্জ জেলার ২ নম্বর বর্নি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান। এলাকায় আত্মীয়স্বজন সবার জন্য তদবির করাতেন ওবায়দুল কাদেরের মাধ্যমে।

আধিপত্য কাজে লাগিয়ে এলাকায় নিজের এবং ভাইবোনের নামে করেছেন অঢেল সম্পত্তি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শেখ ওয়ালিদ অবৈধ অর্থে নানান কিছু গড়ে তোলেন। পৈতৃক সম্পত্তি থেকে পাঁচ বিঘা পেলেও নিজের তদবির বাণিজ্যের অর্থের মাধ্যমে এখন তিনি ৯ বিঘা সম্পত্তির মালিক হয়েছেন। এখানেই শেষ নয়, অবৈধ অর্থে আরও গড়েছেন দুটি মৎস্যঘের ও একটি কলার বাগান।

ওয়ালিদের বাবার সেমিপাকা বাড়ি ছিল। তবে ওবায়দুল কাদেরের বদৌলতে করেছেন বাগানবাড়ি। পুরো এক বিঘা জায়গার ওপর ইটের উঁচু প্রাচীরঘেরা তার বাড়িটি। ইতোমধ্যে দোতলা একটা বাড়ি তৈরি হয়েছে। পাশে একতলা নির্মাণাধীন বাড়ি করতেও দেখা যায়। এ ছাড়া শেখ ওয়ালিদের শ্বশুরের দোতলা নির্মাণাধীন আলিশান বাড়ি রয়েছে। সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের প্রভাবে ২০২৩ সালে বেদখলে থাকা ২ একর ২৯ শতক জমি প্রভাব খাটিয়ে দখলে নিয়েছেন। বিদেশে টাকা পাচারের অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এসব অভিযোগের বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) তার বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগও জমা পড়েছে বলে জানা গেছে।

গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেশত্যাগের পরই আত্মগোপনে যান ওবায়দুল কাদের। এরপর কিছু দিন গা-ঢাকা দিয়ে চলেন সেই ভিআইপি পিআরও ওয়ালিদ। এখন তিনি তথ্য অধিদপ্তরে কর্মরত। 

যদিও নিজের বিরুদ্ধে সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন শেখ ওয়ালিদ ফয়েজ। খবরের কাগজকে তিনি বলেন, ‘আমার কোথায় বাড়ি-গাড়ি রয়েছে তা আপনারা খুঁজে দেখতে পারেন। আমি জনসংযোগ কর্মকর্তা হিসেবে আপনাদের (সাংবাদিক) সম্পর্ক ভালো। আমি আমার দায়িত্ব পালন করেছি। এখন টেন্ডার বা তদবির বাণিজ্য আমার কাজ নয়। রাজনৈতিক তদবির তো আমার কাজও না। বাগেরহাট নিজের এলাকার সম্পদের বিষয়ে তিনি বলেন, বাবা-দাদার আমল থেকে আমরা কিছু সম্পত্তি পেয়েছি। সেগুলো দিয়ে কিছু কৃষিকাজ ও মাছের ঘের তৈরি হয়েছে। এর বাইরে এত কিছু নেই।’

ভারতীয় ঋণে রেল প্রকল্প ঝুলে গেছে ১৪ হাজার কোটি টাকার কাজ

প্রকাশ: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১১:২৩ এএম
আপডেট: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১১:২৪ এএম
ঝুলে গেছে ১৪ হাজার কোটি টাকার কাজ
খবরের কাগজ গ্রাফিকস

বাংলাদেশ রেলওয়ের সেবা বিস্তৃতিতে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে শুরু হওয়া ছয়টি প্রকল্পের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এসব প্রকল্পের মধ্যে কোনো কোনোটির মেয়াদ ফুরালেও এখনো চলছে সম্ভাব্যতা যাচাই। গত ১০ বছরে দুইটি প্রকল্পের কাজই শুরু করা যায়নি, কাজ শুরু হলেও বন্ধ আছে তিনটি প্রকল্প। সব মিলিয়ে প্রায় ১৪ হাজার ৭৮৮ কোটি টাকার কাজ ঝুলে গেছে বলে জানা গেছে।

রেলওয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ভারতীয় ঋণ বা লাইন অব ক্রেডিটের (এলওসি) আওতায় রেলের মোট প্রকল্প রয়েছে ছয়টি। এর মধ্যে কাজ শেষ হয়েছে খুলনা-মোংলা রেলপথের। সেটিও কয়েকবার সময় বাড়িয়ে শেষ করা হয়েছে। অন্য প্রকল্পগুলো হলো বগুড়া-সিরাজগঞ্জ ডুয়েল গেজ রেলপথ প্রকল্প, কুলাউড়া-শাহবাজপুর রেললাইন পুনঃস্থাপন প্রকল্প, ঢাকা-টঙ্গী তৃতীয় ও চতুর্থ ডাবল লাইন নির্মাণ প্রকল্প, খুলনা-দর্শনা ডাবল লাইন প্রকল্প, পার্বতীপুর-কাউনিয়া ডুয়েল গেজ লাইন প্রকল্প।

এলওসি ঋণের শর্তে বলা হয়েছে, প্রকল্পগুলোর ৭৫ শতাংশ অর্থায়ন আসবে ভারত থেকে, বাকি ২৫ শতাংশ দেবে বাংলাদেশ। আর ভারতীয় ঋণের সব প্রকল্পের অর্থ দেবে ভারতের এক্সিম ব্যাংক। চুক্তি অনুসারে ৭৫ শতাংশ পণ্য-সেবা ভারত থেকে আমদানি করতে হবে, বাকি ২৫ শতাংশ পণ্য-সেবা ভারতের বাইরে থেকে কেনা যাবে।

গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর রেলের এসব প্রকল্পের কাজে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রকল্পসংশ্লিষ্টরা। কারণ ভারতের ঋণে চলমান প্রকল্পের ঠিকাদাররা নিরাপত্তার কারণে ৫ আগস্টের পর ভারতে চলে গেছেন। তারা কবে এসে প্রকল্পের কাজে যুক্ত হবেন, তা নিশ্চিত নয় বাংলাদেশ রেলওয়ে। 

জানা গেছে, অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান রেলওয়ের বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পগুলোর ব্যাপারে খোঁজখবর নিচ্ছেন। তবে রেলওয়ের এলওসি প্রকল্পের ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা শুরু হয়নি। 

এদিকে এলওসি প্রকল্পের দীর্ঘসূত্রতা নিয়ে রেলের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এসব প্রকল্পের বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য জানতে চেয়ে প্রকল্প কর্মকর্তারা একাধিক চিঠি দিলেও ভারতীয় কর্তৃপক্ষ জবাব দেয় না সময়মতো। তা ছাড়া অর্থছাড়েও কালক্ষেপণ করে ভারতের কর্তৃপক্ষ। সবচেয়ে বড় অভিযোগ হলো, এলওসি প্রকল্পের প্রতিটি ধাপে অনুমোদনের শর্ত দিয়েছে ভারত। ভারতীয় ঠিকাদার ও পরামর্শক নিয়োগের বাধ্যবাধকতাও দিয়েছে দেশটি। 

বগুড়া-সিরাজগঞ্জ প্রকল্প, সাড়া দিচ্ছে না ভারতের এক্সিম ব্যাংক
২০১৮ সালের ১ আগস্ট শুরু হয় ভারতের এলওসির আওতায় বগুড়া-সিরাজগঞ্জ ডুয়েল গেজ রেলপথ প্রকল্পের কাজ। ২০২৩ সালের জুনে এই প্রকল্পের মেয়াদ ফুরানোর কথা থাকলেও এক বছর বাড়িয়ে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছিল। পরে সময় আরও বাড়িয়ে ২০২৬ সাল পর্যন্ত করা হয়েছে। চুক্তিতে বলা হয়েছিল, ৫ হাজার ৫৭৯ কোটি টাকা ব্যয়ের এই প্রকল্পের ৩ হাজার ১৪৬ কোটি টাকা ঋণ হিসেবে দেবে ভারত। 

প্রকল্প কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এই প্রকল্পের ঋণের অর্থছাড় নিয়ে ভারতের এক্সিম ব্যাংককে চিঠি দিলেও তারা এখন পর্যন্ত কোনো চিঠির উত্তর দেয়নি। এখন পর্যন্ত পাঁচটি চিঠি দেওয়া হয়েছে। শর্ত মোতাবেক এলওসির আওতাভুক্ত হওয়ায় প্রাথমিক ঠিকাদার নির্বাচন করবে এক্সিম ব্যাংক। ওই ব্যাংক ঠিকাদারদের সংক্ষিপ্ত তালিকা দিলে দরপত্র আহ্বান করবে বাংলাদেশ রেলওয়ে। রেলওয়ে গত বছরের অক্টোবরে ঠিকাদারদের সংক্ষিপ্ত তালিকার জন্য ভারতকে চিঠি দিয়েছে। কিন্তু এখনো কোনো জবাব আসেনি। ফলে প্রকল্পটি কবে শেষ হবে, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। 

বগুড়া-সিরাজগঞ্জ ডুয়েল গেজ রেলপথ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক মো. মনিরুল ইসলাম ফিরোজী জানিয়েছেন, ভূমি অধিগ্রহণ মাঝামাঝি পর্যায়ে রয়েছে। সব ধরনের কাগজপত্র ভারতের এক্সিম ব্যাংককে পাঠানো আছে। ঋণ ছাড় হলে ঠিকাদার নিয়োগ প্রক্রিয়া চূড়ান্ত হবে। 

চার দফায় মেয়াদ বাড়িয়েও শেষ হয়নি কুলাউড়া-শাহবাজপুর প্রকল্প
রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলে কুলাউড়া-শাহবাজপুর রেলপথে বিদ্যমান মিটার গেজ লাইন সংস্কারের লক্ষ্যে ১১৭ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প হাতে নেয় রেলওয়ে। প্রকল্প অনুমোদনের কয়েক বছর পর ২০১৭ সালের নভেম্বরে ভারতীয় একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সিঙ্গেল লাইনের ডুয়েল গেজ রেলপথ নির্মাণে চুক্তি করে বাংলাদেশ সরকার। প্রকল্পের আওতায় ৪৪ দশমিক ৭৭ কিলোমিটার মেইন লাইন; ৭ দশমিক ৭৭ কিলোমিটার লুপ লাইনসহ মোট ৫১ দশমিক ৯৪ কিলোমিটার রেললাইন স্থাপনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়। প্রকল্প ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ৬৭৮ কোটি টাকা। চুক্তি অনুযায়ী ভারতের ৫৫৬ কোটি টাকা ঋণ দেওয়ার কথা রয়েছে। এই প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০১২ সালের ডিসেম্বরে। কিন্তু যথাসময়ে প্রকল্প শেষ হয়নি; মেয়াদ বাড়ানো হয় চার দফায়। জানা গেছে, কুলাউড়া-শাহবাজপুর রেললাইন পুনঃস্থাপন প্রকল্প কাজের চতুর্থ দফা বর্ধিত মেয়াদ ২০২৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর শেষ হয়ে যায়। কিন্তু চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত এই প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন হয়েছে ৪৫ শতাংশ। এরই মাঝে পঞ্চম দফা মেয়াদ বৃদ্ধির প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। 

প্রকল্প পরিচালক মো. সুলতান আলী বলেন, ‘এই প্রকল্পে এখন বাংলাদেশের শ্রমিকরা কাজ করছেন। ভারতের কর্মকর্তারা কেউ নেই। তাদের এখন মন্ত্রণালয় থেকে আসার অনুমতি দেয়নি। মেয়াদ শেষ হলেও প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়নি। এটি নিয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’ 

ঢাকা-টঙ্গী তৃতীয় ও চতুর্থ ডাবল লাইন 
রাজধানী ঢাকায় রেলওয়ের সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য ঢাকা-টঙ্গী সেকশনে তৃতীয় ও চতুর্থ ডুয়েল গেজ লাইন এবং টঙ্গী-জয়দেবপুর ডুয়েল গেজ ডাবল লাইন নির্মাণ প্রকল্প নিয়েছিল আওয়ামী লীগ সরকার। ২০১২ সালে প্রকল্পটি অনুমোদন পায়। ভারত যুক্ত হওয়ার পর এই প্রকল্পে ২ হাজার ৮২১ কোটি টাকা ঋণ দিতে রাজি হয়। বাংলাদেশ সরকার এ প্রকল্পে ৫২১ কোটি টাকা বিনিয়োগের কথা জানিয়েছিল। চুক্তিতে বলা হয়েছিল, এই প্রকল্পে নির্মাণ ও পরামর্শক ব্যয় ভারত দেবে। বাংলাদেশ দেবে ট্যাক্স, ভ্যাট ও জনবল খাতের ব্যয়।

সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ১০ বছরেরও বেশি সময় ধরে চলা প্রকল্পের অগ্রগতি হয়েছে মাত্র ৩৬ শতাংশ। প্রকল্প পরিচালক নাজনীন আরা কেয়া জানান, এ প্রকল্পের দরপত্র প্রক্রিয়া শেষ করতেই লেগেছে ছয় বছর। আবার সম্ভাব্যতা সমীক্ষা ছাড়াই প্রকল্পটি অনুমোদন দেওয়ায় বাস্তবায়ন নকশার পরিবর্তন করতে হয়েছে। তিনি বলেন, ‘ভারতের এক্সিম ব্যাংক এখন অর্থায়ন করবে কি না তা অনিশ্চিত হয়ে গেছে। ৩০ কোটি টাকা পর্যন্ত লোন ছাড় দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তারা সেটা আর দেবে কি না জানি না।’

খুলনা-দর্শনা ডাবল লাইন প্রকল্পে ঠিকাদারই নিয়োগ হয়নি
বাংলাদেশ রেলওয়ের খুলনা থেকে দর্শনা জংশন সেকশনে সিঙ্গেল লাইনকে ডাবল লাইনে রূপান্তর করার জন্য ২০১৮ সালে একনেকে প্রকল্প অনুমোদন দেয় সরকার। 

এই প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০২৩ সালে। যথাসময়ে শেষ হয়নি বলে প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে ২০২৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত। ৩ হাজার ৫০৬ কোটি ৭৫ লাখ ৪৮ হাজার টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি শুরু করেছিল বাংলাদেশ রেলওয়ে। এর মধ্যে প্রকল্প ব্যয়ের ২ হাজার ৬৮৯ কোটি ৯৩ লাখ টাকা দেওয়ার কথা ভারতীয় এক্সিম ব্যাংকের। অনুসন্ধানে জানা যায়, ছয় বছর ধরে এই প্রকল্পের অগ্রগতি হয়েছে মাত্র ৩ দশমিক ৬০ শতাংশ। এলওসির এই প্রকল্পে এখনো অর্থ ছাড় করেনি ভারতের এক্সিম ব্যাংক। এ ছাড়া এখনো ঠিকাদার নিয়োগ করা যায়নি। 

প্রকল্প পরিচালক মনিরুল ইসলাম ফিরোজী বলেন, ‘রেলওয়ে ঠিকাদার নিয়োগে টেন্ডার আহ্বান করতে প্রস্তুত। এতে এই প্রকল্পের ব্যয় কিছুটা বাড়বে। কত টাকা ব্যয় বাড়বে তা ভারতকে জানাব, তারপর এই প্রকল্পের কী হবে বলতে পারব।’ 

পার্বতীপুর-কাউনিয়া ডুয়েল গেজে রূপান্তর
২০১৮ সালের জানুয়ারিতে দিনাজপুরের পার্বতীপুর থেকে রংপুরের কাউনিয়া পর্যন্ত ৫৭ কিলোমিটার মিটার গেজ রেলপথকে ডুয়েল গেজে রূপান্তরের অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। পরে সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে পুরোনো লাইনের পাশ দিয়েই নতুন ডুয়েল গেজ লাইন নির্মাণ করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়। এতে প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছিল ১ হাজার ৬৮৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে ভারত থেকে ১ হাজার ৩৭৬ কোটি টাকা ঋণসহায়তা পাওয়ার কথা ছিল। এই প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০২৩ সালে। 

অনুসন্ধানে জানা যায়, এই প্রকল্পের কাজ শুরু হয়নি এখনো। এখনো চলছে সম্ভাব্যতা যাচাই। এই প্রকল্পেও ঋণদানকারী প্রতিষ্ঠান ভারতের এক্সিম ব্যাংক পরামর্শক নিয়োগের বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় সম্মতি দিতে সময়ক্ষেপণ করে। এর ফলে প্রস্তাবিত মেয়াদের শেষের দিকে পরামর্শক নিয়োগ দেওয়া হয়। 

প্রকল্প পরিচালক মো. আহসান জাবির বলেন, ‘এখনো যেহেতু সম্ভাব্যতা যাচাই চলছে, তাই নতুন মেয়াদ ঠিক করা হয়নি। এটি শেষ হলে নতুন মেয়াদ ঠিক করা হবে।’ 

কী বলছে কর্তৃপক্ষ 
গত ৩০ আগস্ট ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল এক নিয়মিত ব্রিফিংয়ে জানান, বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির কারণে কিছু প্রকল্পের কাজ থমকে আছে। পরিস্থিতি স্থিতিশীল হলে তারা অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে পরামর্শক্রমে এলওসি প্রকল্পের কাজ শুরু করবে। 

এ বিষয়ে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক সরদার সাহাদাত আলী খবরের কাগজকে বলেন, ‘এসব প্রকল্পের বিষয়ে রেলপথ সচিব আবদুল বাকীকে জানানো হয়েছে। এ ক্ষেত্রে সচিব জানিয়েছেন তারা বসে আলোচনা করে দেখবেন কী কী প্রকল্প এমন অবস্থায় রয়েছে। প্রকল্পগুলোর বর্তমান কী অবস্থা তা জেনে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর উচ্চপর্যায়ে যোগাযোগ করা হবে। এরপর হয়তো কোনো সিদ্ধান্ত আসবে।’ 

যোগাযোগ প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. শামসুল আলম বলেন, ‘ভারত এলওসির আওতায় লোন দিয়ে বলেছে, তাদের দেশ থেকে ৭৫ শতাংশ পণ্য নিতে হবে। একটা স্বাধীন সার্বভৌম দেশে তারা তো এভাবে নির্দেশনা জারি করতে পারে না। এলওসি প্রকল্পগুলো অ্যানালাইসিস করলে দেখা যাবে, কীভাবে এসব প্রকল্পের অতিমূল্যায়ন করা হয়েছে। এলওসি বা জিটুজি প্রকল্প যা-ই বলি না কেন, শর্তে বলা থাকে সফট লোনের কথা। পরে আমরা দেখতে পাই, সিন্ডিকেটেড কনট্রাক্টররা কীভাবে ঋণের টাকা বাড়িয়ে নিয়েছেন। কনট্রাক্ট তো ওপেন টেন্ডারে হয় না, তাই লিমিটেড টেন্ডারে কাজ বাগিয়ে নেওয়া কনট্রাক্টররা নানাভাবে প্রজেক্ট ঝুলিয়ে দেন। যখন আমরা এলওসি প্রজেক্ট ওপেনের কথা বলি, ওরা তাড়াহুড়ো করে এমনভাবে প্রজেক্ট হস্তান্তর করে যার গুণগত মান একদমই থাকে না, প্রজেক্ট টেকসইও হয় না। পরে প্রকল্পের যে খরচ তা আদতে টানতে হয় বাংলাদেশের জনগণকে।’

এলওসি প্রকল্পের বিষয়ে অধ্যাপক শামসুল আলমের পরামর্শ হলো, এলওসি প্রকল্পের মধ্যে যেগুলো প্রায় সম্পন্ন হয়ে এসেছে সেগুলো দ্রুততম সময়ে শেষ করা। তবে তার আগে ঠিকাদারের কাছে গুণগত মান বুঝে নিতে হবে রেলওয়েকে। আর যে প্রকল্পগুলো অর্ধসমাপ্ত অবস্থায় পড়ে আছে, সেগুলো সম্পন্ন করতে এলওসির ওপর ভরসা না করে অন্য কোনো ঋণে সম্পন্ন করার পরামর্শ দেন তিনি। এতে করে রেলওয়ে কিছু খরচ বাঁচাতে পারবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

বিপাকে ‘লীগপন্থি’ ছোট দলগুলো

প্রকাশ: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৪:০০ এএম
বিপাকে ‘লীগপন্থি’ ছোট দলগুলো
খবরের কাগজ গ্রাফিকস

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সরকারের টোপে পা দিয়ে এখন বিপাকে পড়েছে ১৬টি ছোট রাজনৈতিক দল। সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় সেই সময় কোনো কোনো রাজনৈতিক দল তাদের ‘আওয়ামীপন্থি’ হিসেবে চিহ্নিত করে ‘জাতীয় বেইমান’ তকমাও দিয়েছিল। নির্বাচনের ঠিক সাত মাসের মাথায় ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার পতনের পর এমপি-মন্ত্রীদের পাশাপাশি এসব ছোট দলের নেতারাও পড়েছেন বেকায়দায়। বিএনপি, জামায়াত, জাতীয় পার্টিসহ ইসলামি দলগুলোর সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস একাধিকবার বৈঠক করলেও এখনো আমন্ত্রণ পায়নি এই ১৬টি দল। সরকারের এক মাস পার হলেও বৈঠক বা কোনো ধরনের সাক্ষাতের সুযোগ পাননি ওই দলগুলোর নেতারা। এসব নেতার অনেকেই জনসমক্ষে আসছেন না, নেই দলীয় কর্মসূচিও।

গত সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি ও ১৪-দলীয় জোটের বাইরে দেশের রাজনীতিতে ‘‌ছোট দল’ বলে পরিচিত ১৬টি দলের ৮২৭ জন প্রার্থী ভোটে অংশ নিয়েছিলেন। বিএনপির ভোট বর্জনের সুযোগে এমপি হওয়ার আশায় তখন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে এসব দলের নেতাদের কেউ কেউ সাক্ষাৎ করেন। শুধু কল্যাণ পার্টি ছাড়া আর কোনো দল একটি আসনেও জয়লাভ করেনি। অধিকাংশ প্রার্থী জামানত হারিয়েছেন। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর আপাতভাবে তারাও পড়েছেন মহাসংকটে। 

বেশ কয়েকটি দলের নেতা খবরের কাগজকে জানিয়েছেন, আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর তাদের খোঁজখবর রাখছেন না কেউ। অন্তর্বর্তী সরকার, আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির নেতৃত্বাধীন সমমনা জোট; উভয়ের কাছে ক্রমেই তারা গুরুত্বহীন হয়ে পড়েছেন। অন্যদিকে নতুন প্রজন্ম তাদের ‘সুবিধাবাদী’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে কি না, এমন ভাবনা থেকে আরও চিন্তিত অনেকেই। ফলে দলগুলোর ভবিষ্যৎ অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে সংকটে পড়েছে বলে মনে করেন কেউ কেউ।

গত নির্বাচনের ঠিক আগ মুহূর্তে বিএনপির সঙ্গে ১৬ বছরের সম্পর্ক ছিন্ন করে ‘যুক্তফ্রন্ট’ জোট গঠন করে ভোটে অংশ নেন কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহিম (বীর প্রতীক)। কক্সবাজার-১ আসন থেকে এমপিও হয়েছিলেন। এখন তিনি বাসা থেকে তেমন একটা বের হন না। খবরের কাগজকে তিনি বলেন, ‘আমাদের এখন পর্যন্ত আমন্ত্রণ জানানো হয়নি, কোনো যোগাযোগও হয়নি। আমরাও যোগাযোগের চেষ্টা করিনি। কারণ বিষয়টি তাদের এখতিয়ারে। ওনাদের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। সরকারের কাছে সব দলের নাম ও ঠিকানা রয়েছে, তাদের অতীত ও বর্তমান কর্মকাণ্ড সম্পর্কেও অবগত আছেন।’

নির্বাচনের আগে কিংস পার্টি হিসেবে আলোচনায় আসে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (বিএনএম) ও তৃণমূল বিএনপি। ২০২৩ সালে এ দল দুটি নির্বাচন কমিশন থেকে নিবন্ধন পায়। বিএনএমে যোগদান করেন বিএনপির সাবেক এমপি শাহ আবু জাফর, প্রফেসর আব্দুর রহমান এবং তৃণমূল বিএনপিতে শমসের মবিন চৌধুরী, অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার। সেই সময়ে অভিযোগ ওঠে, এই দুই দলে বিএনপির নেতাদের ভিড়িয়ে দল ভাঙার চেষ্টা করেছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু ৫ আগস্টের পটপরিবর্তনের পর সবকিছু ওলটপালট হয়ে গেছে। একদিকে তারা বিএনপিসহ সমমনাদের বিরাগভাজন হয়েছেন, অন্যদিকে বর্তমান পরিস্থিতিতে অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে দেখা করারও কোনো স্পেস পাচ্ছেন না। সব মিলিয়ে রাজনীতির মাঠে অনেকটাই কোণঠাসা হয়ে পড়ছেন। তবে বিএনএম ও তৃণমূল বিএনপির নেতাদের দাবি, অন্তর্বর্তী সরকার যখনই সাক্ষাতের জন্য ডাকবেন, তখন অবশ্যই তারা যাবেন। এ ছাড়া প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করতে নিজেদের উদ্যোগে লিখিত আবেদন করবেন বলেও জানান।

বিএনএম চেয়ারম্যান শাহ আবু জাফর খবরের কাগজকে বলেন, ‘সংলাপের জন্য তাদের এখনো আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। সবার সঙ্গে কথা বলে লিখিত আবেদন করা হবে।’ 

তিনি বলেন, ‘গত নির্বাচনে দলের যারা অংশ নেওয়ার মতো ছিল তাদের ওপর চাপ ছিল। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে দলের কোনো নেতা-কর্মী বাইরে বের হলে কোনো সমস্যায় পড়েছেন, তা জানা নেই। অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে জোট করে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।’

তৃণমূল বিএনপির মহাসচিব তৈমূর আলম খন্দকার খবরে কাগজকে বলেন, তার দলকে সংলাপে কেন ডাকা হয়নি তা তিনি জানেন না। প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করার জন্য লিখিত আবেদন করবেন বলেও জানান।

নির্বাচনের আগে গত বছরের ২৯ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেই নির্বাচনের দৃশ্যপটে আসেন ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান আবুল হাসনাত আমিনী, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের আমির আতাউল্লাহ হাফেজ্জী, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের চেয়ারম্যান সৈয়দ বাহাদুর শাহ মোজাদ্দেদী, বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির (বিএসপি) সভাপতি সৈয়দ সাইফুদ্দীন আহমদ মাইজভান্ডারী, বাংলাদেশ ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ার‌ম্যান মিসবাহুর রহমান চৌধুরী, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের চেয়ারম্যান এম এ মতিন প্রমুখ। তখন বিএনপির রাজনৈতিক অবস্থানের উল্টো দিকে গিয়ে নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় দলগুলোকে ‘আওয়ামীপন্থি ইসলামি দল’ বলে অভিহিত করা হয়। যদিও দলগুলোর দাবি, তাদের নির্বাচনে অংশ নিতে হুমকি ও চাপ দেওয়া হয়েছিল। 

ইসলামী ঐক্যজোটের (মিনার) সাবেক চেয়ারম্যান আবুল হাসনাত আমিনী খবরের কাগজকে বলেন, ‘বর্তমান সরকারের কারও সঙ্গে যোগাযোগ হয়নি। অন্তর্বর্তী সরকার ভালো কাজ করছে, তবে কোনো কাজে ভুল হলে অবশ্যই ধরিয়ে দেব। গত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগ দেশকে একটা জিঞ্জিরে আবদ্ধ করে ফেলেছিল। রাষ্ট্র সংস্কার ও ছাত্র-জনতার বিজয়কে সুসংগঠিত করতে দলমত নির্বিশেষে সবার ঐক্যবদ্ধ হওয়ার বিকল্প নেই। এক ব্যক্তি বা এক দলকেন্দ্রিক সবকিছু যদি হয়, তাহলে ছাত্র-জনতার বিপ্লবের উদ্দেশ্য ব্যাহত হবে।’

তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকার তাকে ২০১১ সালের ১০ এপ্রিল থেকে ১২ দিন গুম করে রেখেছিল। নেতা-কর্মীদের অভিযোগের ভিত্তিতে ইতোমধ্যে দলের মহাসচিব মোহাম্মদ ফয়জুল্লাহ ও ভাইস চেয়ারম্যান আলতাফ হোসেনকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বর্তমানে আলেম-ওলামা সমাজ থেকে একজন মুরব্বিকে সামনে রেখে এগোনোর চেষ্টা করছি।’ 

ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের (চেয়ার) চেয়ারম্যান সৈয়দ বাহাদুর শাহ মুজাদ্দেদী খবরের কাগজকে বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের কেউ তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেননি। তারাও যোগাযোগের চেষ্টা করেননি। বর্তমানে দল গুছিয়ে সাংগঠনিক শক্তি বাড়ানোর চেষ্টা করছি।’ তিনি জানান, আওয়ামী লীগের সঙ্গে তাদের কোনো যোগাযোগ নেই।

বিএসপি চেয়ারম্যান সৈয়দ সাইফুদ্দীন আহমেদ মাইজভান্ডারী খবরে কাগজকে বলেন, নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল হিসেবে সরকারপ্রধান সংলাপের আমন্ত্রণ জানালে তারা যাবেন। রাষ্ট্র সংস্কার করতে গেলে কোনো দলকে বাদ দিয়ে এগোনো যাবে না। সব দলকে সঙ্গে নিয়েই রাজনীতি ও রাষ্ট্রের সংস্কার করতে হবে।

জাতীয় পার্টির (কাঁঠাল) চেয়ারম্যান আ ন ম সিরাজুল ইসলাম খবরের কাগজকে বলেন, ‘ছাত্র-জনতার এক দফা আন্দোলনে আমাদের সমর্থন ছিল। তবে অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ হয়নি। সরকার সংলাপের জন্য ডাকলে অংশ নেব। সরকারকে সব ধরনের সহযোগিতা করতে আমরা প্রস্তুত।’

বাংলাদেশ কংগ্রেসের (ডাব) চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট কাজী রেজাউল হোসেন বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা এখনো সব দলের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেননি, তাদের চিঠির অপেক্ষায় রয়েছি। প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য লিখিত আবেদন করব।’ তার দাবি, দেশে গণতান্ত্রিক ধারা ফিরিয়ে আনতে রাষ্ট্র, সরকার ও নির্বাচন কমিশনের সংস্কারের বিকল্প নেই। 

নির্বাচনে অংশ নেওয়া অন্য দলগুলো হলো জাকের পার্টি, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি-এনপিপি (আম), গণফ্রন্ট (মাছ), বাংলাদেশ মুসলিম লীগ (হাতের পাঞ্জা), বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট (ছড়ি), বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট- বিএনএফ (টেলিভিশন)।

সরকারিভাবে ধান-চাল-গম সংগ্রহে লক্ষ্য পূরণ হয়নি

প্রকাশ: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০২:২৫ এএম
সরকারিভাবে ধান-চাল-গম সংগ্রহে লক্ষ্য পূরণ হয়নি
বেশ কয়েকটি কারণে এবার খাদ্য অধিদপ্তরের রোবো ধান-চাল সংগ্রহ কর্মসূচি সফল হয়নি। গম সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রাও পূরণ হয়নি।

বন্যা আর খোলা বাজারে ধানের দর সরকারি ক্রয় মূল্যের চেয়ে বেশি হওয়ার পাশাপাশি আরও কয়েকটি কারণে এবার খাদ্য অধিদপ্তরের রোবো ধান-চাল সংগ্রহ কর্মসূচি সফল হয়নি। গম সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রাও পূরণ হয়নি। 

খাদ্য অধিদপ্তরের একটি সূত্রে জানা গেছে, এবার সরকারিভাবে সেদ্ধ চাল কেনার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ১২ লাখ ৪০ হাজার ১২২ টন। আতপ চাল ১ লাখ ৩৮ হাজার ৩৫৬ টন। চাষিদের কাছ থেকে সরাসরি ধান কেনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৫ লাখ টন। কিন্তু গত ৩১ আগস্ট পর্যন্ত চুক্তিবদ্ধ মিলারদের কাছ সেদ্ধ চাল পাওয়া গেছে ১১ লাখ ২৯ হাজার ৩৭৪ টন। আতপ চাল মিলেছে ১ লাখ ২৪ হাজার ৭০৬ টন। ধান সংগ্রহ হয়েছে ২ লাখ ৯৬ হাজার ৯৩১ টন। গম সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫০ হাজার টন। কিন্তু পাওয়া গেছে ৩৭ টন। ধান, চাল ও গম সংগ্রহ কম হয়েছে ৩ লাখ ৭৭ হাজার ১১২ টন। 

খাদ্য অধিদপ্তর জানায়, ৩৪ টাকা কেজি দরে গম, ৩২ টাকা কেজি দরে ধান, ৪৫ টাকা কেজি দরে সেদ্ধ চাল ও ৪৪ টাকা কেজি দরে আতপ চাল সংগ্রহ শুরু হয় ৫ মে থেকে। অভিযান শেষ হয় ৩১ আগস্ট। 

খাদ্য অধিদপ্তরের এম আই এস অ্যান্ড এম বিভাগের পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ধান সংগ্রহ হয়েছে ৫৯ দশমিক ৩৯ শতাংশ, সেদ্ধ চাল ৯১ দশমিক ৭ শতাংশ, আতপ চাল ৯০ দশমিক ১৩ শতাংশ আর সবচেয়ে কম সংগ্রহ হয়েছে গম ০ দশমিক ৭ শতাংশ।

মজুত সন্তোষজনক জানিয়ে খাদ্য অধিদপ্তর জানায়, সেদ্ধ চাল মজুত রয়েছে ১৩ লাখ ৫৩ হাজার ৩৭৭ টন আর আতপের মজুত আছে ১ লাখ ২৯ হাজার ৮৩৯ টন। গম রয়েছে ১ লাখ ১৯ হাজার ৭৭ টন। 

খাদ্য অধিদপ্তরের হিসাবে বলা হয়েছে, ১৯ আগস্ট থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত ১২ দিনে ১ কেজি গমও সংগ্রহ হয়নি। তবে এ সময়ের মধ্যে ধান সংগ্রহ হয়েছে ৫ দশমিক ৭৭ শতাংশ, সেদ্ধ চাল ৯ দশমিক ৪০ আর আতপ চাল সংগ্রহ হয়েছে ১৪ দশমিক ৭১ শতাংশ। 

বাংলাদেশ অটো মেজর অ্যান্ড হাসকিং মিলস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট কে এম লায়েক আলী বলেন, ‘সংগ্রহ অভিযানে সরকার মোট ধান-চালকে গুরুত্ব দিলেও হাওর এলাকার পাশাপাশি উত্তরাঞ্চলের রংপুর ও পাবনাসহ কয়েকটি জেলায় শুধু মোটা ধান চাষ হয় যে কারণে ইচ্ছা থাকলেও অনেকের পক্ষে গুদামে ধান দেওয়া সম্ভব হয় না। কারণ চিকন ধানের দর সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে অনেক বেশি।’ 

তিনি জানান, বোরো মৌসুমে প্রথম দফায় তার প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে বরাদ্দ দেওয়া হয় ৩৫ টন। দ্বিতীয় দফায় তাকে চাল দিতে বলা হয় ১৫ টন। প্রথম দিকে মোটা ধানের দর কিছুটা কম থাকায় প্রতি কেজি চালে লাভ হয়েছে ৫০ পয়সা আর দ্বিতীয় দফায় বরাদ্দ দেওয়া চাল সরবরাহ করতে গিয়ে প্রতি কেজিতে তাকে লোকসান গুনতে হয়েছে ১ টাকা ৫০ পয়সা থেকে ২ টাকা পর্যন্ত। কারণ তখন বাজারে ধানের দর বেড়ে যায়। 

বগুড়ার অন্যতম খাদ্য উদ্বৃত্ত এলাকা নন্দীগ্রাম। রনবাঘাসহ আরও কয়েকটি বড় ধানের বাজার আছে এ উপজেলায়। কিন্তু সেসব হাটে মোট ধানের সরবরাহ হয় না তেমন। কিন্তু তারপরও এ এলাকার চালকল মালিকদের মোটা ধান দিতে হয়েছে সরকারি গুদামে। নিষেধ না থাকায় অনেক চালকল মালিকই চুক্তি মানতে গিয়ে বেশি দামে চিকন ধান কিনে সরকারি গুদামে চাল দেন লোকসান গুনে। 

নন্দীগ্রামে বড় চালকলগুলোর একটি মায়া মুনির অটো রাইস মিল। প্রতিষ্ঠানটির মালিক মো. মিজানুর রহমান মিজান। তিনি এবার ৬০০ টন চাল দেওয়ার জন্য খাদ্য অধিদপ্তরের সঙ্গে চুক্তি করেন। মোটা চাল দিতে গিয়ে তাকে মোটা ধান সংগ্রহ করতে হয়েছে রংপুর থেকে। সরকারি গুদামে ২০০ টন চাল দিয়েছেন। তার কোনো লাভ হয়নি। চুক্তি অনুযায়ী বাকি ৪০০ টন চাল দিতে গিয়ে তাকে প্রতি কেজিতে লোকসান গুনতে হয়েছে কমপক্ষে ২ টাকা করে। 

নন্দীগ্রাম উপজেলা খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. ফারুক আলমগীর জানান, নানা প্রতিকূলতা সত্ত্বেও অনেক গুদামেই ধান ও চাল সংগ্রহ হয়েছে শত ভাগ। যেমন তার গুদামের সাধারণ ধারণ ক্ষমতা ২ হাজার ৫০০ টন। বোরো ধান চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রার পুরোটাই হয়েছে। 

বগুড়া, নওগাঁ, জয়পুরহাট ও দিনাজপুরসহ উত্তরাঞ্চলের খাদ্য উদ্বৃত্ত জেলাগুলোতে এখন জাত ও মানভেদে ৪০ কেজি ধান কিনতে হচ্ছে ১ হাজার ৪০০ টাকা থেকে ১ হাজার ৬৫০ টাকায়। কোথাও কোথাও সামান্য কম বা বেশি। তবে বেশির ভাগ এলাকাতেই প্রান্তিক চাষিদের ঘরে কোনো ধান নেই। 

মাতারবাড়ী তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রে বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধের শঙ্কা

প্রকাশ: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০১ পিএম
আপডেট: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০২ পিএম
মাতারবাড়ী তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রে বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধের শঙ্কা
কয়লাসংকটে কক্সবাজারের মাতারবাড়ী তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রে উৎপাদন বন্ধরে পথে। ছবি: খবরের কাগজ

আওয়ামী লীগ সরকার আমলে ঋণনির্ভর যে কয়টি মেগা প্রকল্প নেওয়া হয়, তার মধ্যে অন্যতম ছিল কক্সবাজারের মাতারবাড়ী কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র। তবে অনিয়মের অভিযোগে কয়লা আমদানিতে গত জুলাই মাসে ৬ মাসের নিষেধাজ্ঞা দেন হাইকোর্ট। ফলে অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে কয়লা আমদানি। এদিকে বর্তমানে মজুত থাকা কয়লা দিয়ে ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎকেন্দ্রটির মাত্র এক মাস উৎপাদন চালু রাখা যাবে বলে জানায় কর্তৃপক্ষ।

অন্যদিকে প্রকল্পের ভেতর থেকে কোটি কোটি টাকা দামের মূল্যবান বিভিন্ন সরঞ্জাম সরিয়ে নিচ্ছেন প্রতিষ্ঠানটির শীর্ষ কর্মকর্তারা। তার মধ্যে গত ৩১ আগস্ট ১৫ কোটি টাকার তামার কেবলসহ ৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ ঘটনায় প্রকল্পের নিরাপত্তায় নিয়োজিত কর্মকর্তারা প্রকল্প পরিচালকসহ শীর্ষ কর্মকর্তাদের আসামি করে মামলা করেছেন। 

প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, কয়েক দফায় ব্যয় বাড়িয়ে ৫৬ হাজার কোটি টাকায় নির্মাণ করা হয় মাতারবাড়ী কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র। প্রকল্পের দুটি কেন্দ্র ২০২৩ সালের জুলাই ও ডিসেম্বরে দুই দফায় চালু হয়। ২০২৩ সালে যাত্রা শুরু হওয়া এই কয়লাবিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে গত ৩১ আগস্ট পর্যন্ত জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ হয়েছে ৩৬৪ কোটি ৮১ লাখ ৭৫ হাজার ৪৪৬  ইউনিট বিদ্যুৎ। কেন্দ্রগুলো কমিশনিং করার জন্য জাপানের সুমিতমো করপোরেশনের মাধ্যমে আনা হয় ২২ লাখ ৫ হাজার টন কয়লা।

চুক্তি অনুযায়ী সুমিতমো করপোরেশন কয়লার সর্বশেষ সরবরাহ দেয় আগস্টের মাঝামাঝি। তাদের সরবরাহ করা কয়লা থেকে আর অবশিষ্ট রয়েছে ২ লাখ ৮০ হাজার মেট্রিক টন। যা দিয়ে আর এক মাসের মতো উৎপাদন চালু রাখা যাবে। নিয়ম অনুযায়ী সুমিতমোর সরবরাহ করা কয়লা শেষ হওয়ার আগেই তিন বছরের কয়লা সরবরাহের জন্য কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করে। কিন্তু প্রকল্প পরিচালক আবুল কালাম আজাদ মেঘনা গ্রুপের ইউনিক সিমেন্ট কনসোর্টিয়ামকে বেআইনি সুবিধা দিতে ১০ মাস দেরি করেন। 

এতে অনিয়মের অভিযোগ তুলে কনসোর্টিয়াম অব বসুন্ধরা, ইকুইন্টিয়া ও অথ্রোর আবেদনের প্রেক্ষিতে গত জুলাইয়ে হাইকোর্ট কয়লা আমদানিতে ৬ মাসের নিষেধাজ্ঞা দেন। ফলে অনিশ্চয়তার মুখে পড়ে দীর্ঘ মেয়াদে কয়লা আমদানি।

কয়লাবিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রধান প্রকৌশলী সাইফুর রহমান বলেন, ‘আইনগত বিষয়গুলো আমাদের ঢাকা হেড অফিস থেকে দেখা হচ্ছে। তাই সে বিষয়ে আমরা কিছু জানি না। তবে কয়লা না পেলে বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ করে দিতে হবে।’

তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মনোয়ার হোসেন মজুমদার বলেন, সরবরাহ করা কয়লা থেকে আর অবশিষ্ট রয়েছে ২ লাখ ৮০ হাজার টন; যা দিয়ে উৎপাদন চালু রাখা যাবে আর মাত্র এক মাসের মতো। কয়লা আমদানি করা না গেলে এটি হয়তো এখানেই বন্ধ করে দিতে হবে।

বিষয়টি নিয়ে প্রকল্প পরিচালক আবুল কালাম আজাদ ও প্রধান প্রকৌশলী মনিরুজ্জামানের সঙ্গে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তারা সাড়া দেননি। 

এদিকে প্রকল্প এলাকা থেকে কোটি কোটি টাকা দামের বিভিন্ন সরঞ্জাম সরিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে প্রতিষ্ঠানটির কয়েকজন শীর্ষ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। তার মধ্যে গত ৩১ আগস্ট পাচারকালে ১৫ কোটি টাকার তামার কেবলসহ ৫ জনকে আটক করেন প্রকল্পের নিরাপত্তা কর্মকর্তারা। এ ঘটনায় নিরাপত্তা কর্মকর্তারা প্রকল্প পরিচালকসহ শীর্ষ কর্মকর্তাদের আসামি করে মামলা করেছেন। 

এ বিষয়ে নিরাপত্তা কর্মকর্তা আলফাজ উদ্দিন ও মীর্জানুল ইসলাম বলেন, শুধু ৩১ আগস্ট নয়, এর আগেও পসকোর নাম ব্যবহার করে দুই কনটেইনার মালামাল বের করেছিলেন প্রধান প্রকৌশলী মনিরুজ্জামান। এ ছাড়া গত ৫ আগস্টের পর থেকে স্থানীয় দুর্বৃত্তরা রাতে প্রকল্পে ঢুকে লুটপাটের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।