ঢাকা ৩১ ভাদ্র ১৪৩১, রোববার, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪

৪৯২ পুলিশের মাথায় গুরুতর আঘাত

প্রকাশ: ৩১ জুলাই ২০২৪, ১১:০৪ এএম
আপডেট: ৩১ জুলাই ২০২৪, ১১:৩০ এএম
৪৯২ পুলিশের মাথায় গুরুতর আঘাত

‘প্রথমে ভেবেছিলাম আর কখনো হয়তো পরিবারের সদস্যদের মুখ দেখতে পারব না। আমার স্ত্রী নার্গিসের কাছে খবর গিয়েছিল আমি মারা গেছি। কিন্তু কোনোভাবে বেঁচে গেছি। রাখে আল্লাহ মারে কে।’ রাজারবাগে পুলিশ হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে খবরের কাগজের এই প্রতিবেদককে কথাগুলো বলেন কনস্টেবল আবুল কালাম। রাজধানীর বাড্ডায় পুলিশ ফাঁড়িতে হামলার শিকার হন তিনি।

আবুল কালাম জানান, তাকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয় ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির ভেতরে। তার সঙ্গে থাকা কনস্টেবল হানিফকেও ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে বাড্ডা পুলিশ ফাঁড়ির সামনে বেধড়ক মারধরের পর মৃত ভেবে নাশকতাকারীরা ফেলে চলে যায়। 

পুলিশ হাসপাতাল ঘুরে জানা যায়, কেবল একজন আবুল কালামই নন, তার মতো আহত হওয়া ৪৯২ জন পুলিশ সদস্যের বেশির ভাগই মাথায় গুরুতর জখম হয়েছে। এদের মধ্যে ১৩২ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। 

রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতাল ও ডিএমপিতে কর্মরত একাধিক পুলিশ সদস্য খবরের কাগজকে জানান, পুলিশের ওপর এমন হামলা তারা কখনো দেখেননি। বেশির ভাগেরই মাথায় আঘাত করা হয়েছে। এমনকি ডিউটিতে না থাকলেও পুলিশ পরিচয় জানলেই হামলার শিকার হতে হয়েছে। পুলিশ সদস্যরা জানান, আক্রমণকারীরা শিক্ষার্থী ছিলেন না। তারা বস্তির লোকজন বলে মনে হয়েছে।

পুলিশ হাসপাতালে ভর্তি সাব-ইন্সপেক্টর রেজাউল হাসান খবরের কাগজকে বলেন, ‘আমার সঙ্গে ব্যাগ ছিল। সেটা চেক করে নাশকতাকারীরা পুলিশের ইউনিফর্ম দেখতে পায়। তারপরই হামলার শিকার হই। আন্দোলনকারীরা লাঠিসোঁটা, বাঁশ, ইট, হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করতে থাকে। যারা আঘাত করেছে বা আশপাশে ছিল, তাদের কাউকে দেখতে ছাত্র মনে হয়নি।’

আহতরা বলছেন, হত্যার উদ্দেশ্যেই বেছে বেছে পুলিশের ওপর হামলা হয়েছে। গত ১৮ জুলাই মেরুল বাড্ডার কানাডিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাদে সাড়ে তিন ঘণ্টা আটকে থাকার পর ৬২ জন পুলিশ সদস্যকে উদ্ধার করে র‌্যাবের হেলিকপ্টার। কিন্তু রেহাই পাননি ভবনটির দোতলায় আটকা পড়া নায়েক বোরহানউদ্দিন। তিনি খবরের কাগজকে বলেন, ‘আমাকে ধরে রাস্তায় নিয়ে যায় আন্দোলনকারীরা। এরপর বেধড়ক মারধরের পর মৃত ভেবে ফেলে যায়।’

আহত পুলিশ সদস্য ডিএমপির বনানী থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) আনিসুর রহমান খবরের কাগজকে বলেন, ‘পুলিশের ওপর এমন হামলা আর কখনো দেখিনি।’

এদিকে মহাখালী পুলিশ বক্সের কনস্টেবল মো. হাসান আলী, মো. রাশেদ, যাত্রাবাড়ীতে আহত সাব-ইন্সপেক্টর রেজাউল হাসান, আফতাবনগরের সার্জেন্ট সৈয়দ মাসুদুর রহিম, মহাখালী পুলিশ বক্সের ইনচার্জ এসআই শাহ মিরাজ উদ্দিন, রূপনগর থানার এসআই আল-মামুন ও সাইফুল ইসলাম, পিওএম দক্ষিণ বিভাগের কনস্টেবল তানভীর, মো. মাহমুদুল ইসলাম, মাহিন ইসলাম নাসিম, ট্রাফিক গুলশান বিভাগের কনস্টেবল মো. আব্দুল লতিফের সঙ্গে কথা হয় খবরের কাগজকের প্রতিবেদকের। তারা জানান, হত্যার উদ্দেশ্যে পুলিশ সদস্যদের মাথা টার্গেট করেই নাশকতাকারীরা বেশি হামলা করেছে। তাদের অনেকের প্রশ্ন- পুলিশের ইউনিফর্ম পরা লোকটি যে একজন সাধারণ মানুষ, তিনি সমাজেরই কারও বাবা বা সন্তান; সেটি কেন ভুলে গেল হামলাকারীরা?

এই বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, পুলিশ সদস্যদের ওপর যেভাবে হামলা করা হয়েছে সেটা কোনোভাবেই কাম্য নয়। এসব নাশকতা যেই করুক না কেন, তদন্ত করে দেশের আইন অনুযায়ী অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।

উন্নয়ন কার্যক্রমে স্থবিরতা

প্রকাশ: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০৫ পিএম
উন্নয়ন কার্যক্রমে স্থবিরতা
খবরের কাগজ গ্রাফিকস

সরকার পরিবর্তনের পর সারা দেশের উন্নয়ন কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারপ্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী (একনেক) কমিটি গঠন করা হলেও এখন পর্যন্ত কোনো সভা হয়নি। ২ লাখ ৭৮ হাজার কোটি টাকার বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিবি) কাটছাঁট করা হবে বলে পরিকল্পনা উপদেষ্টা অর্থনীতিবিদ ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ জানিয়েছেন।

পরিকল্পনা সচিব সত্যজিত কর্মকারকে অব্যাহতি দেওয়ার পর নতুন কোনো সচিব নিয়োগ দেওয়া হয়নি। ফলে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা প্রকল্প প্রণয়ন ও বাতিলের ব্যাপারে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছেন। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের টেন্ডার কার্যক্রমও একেবারে থমকে গেছে।

এদিকে আওয়ামী লীগপন্থি ঠিকাদাররা এখনো ভয়ে-আতঙ্কে আত্মগোপনে রয়েছেন। জানা গেছে, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি), গণপূর্ত অধিদপ্তর, সড়ক ও জনপথ (সওজ), সিটি করপোরেশনসহ উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোতেও একধরনের আতঙ্কের পরিবেশ বিরাজ করছে। কারণ ইতোপূর্বে গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা কর্মকর্তাদের বেশির ভাগই আওয়ামী লীগ সমর্থক বলে পরিচিত। ফলে তারা আতঙ্কে আছেন। অন্যদিকে বেশির ভাগ ঠিকাদারও আওয়ামী লীগ সরকারের সমর্থক থাকায় তারা গা-ঢাকা দিয়েছেন। সামগ্রিকভাবে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, সুনির্দিষ্ট গাইডলাইনের ভিত্তিতে ৫৮টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের উন্নয়ন প্রকল্প প্রণয়ন, প্রক্রিয়াকরণ, অনুমোদন ও সংশোধন করা হয়। কিন্তু প্রকল্প কাটছাঁট করার ক্ষেত্রে এখনো তারা কোনো গাইডলাইন বা বিজ্ঞপ্তি পাননি। শুধু পরিকল্পনা উপদেষ্টার মৌলিক নির্দেশনায় কোনো রকমে কাজ করছেন। কখন একনেকের সভা হবে, তাও কেউ বলতে পারছেন না। কারণ আগের সব প্রকল্প যাচাই করে পর্যালোচনা সভা করার পর প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা করতে হবে। তারপর একনেক সভায় অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করতে হবে। এসব প্রক্রিয়ায় আরও কিছুদিন সময় লাগতে পারে।

সার্বিক ব্যাপারে জানতে পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য (সচিব) ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত সচিব সোলেমান খানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি বরং পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন। তার কথা অনুযায়ী পরিকল্পনা উপদেষ্টার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তিনি ব্যস্ত থাকায় কোনো মন্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।
 
২ জুলাইয়ের পর একনেকের কোনো সভা হয়নি
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সব রেকর্ড ছাড়িয়ে দেশের উন্নয়নে গত ৯ নভেম্বর একনেকের সভায় ৪৪টি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এরপর অনুষ্ঠিত একনেকের প্রায় সব সভায় কমপক্ষে ১০টি প্রকল্প পাস হয়েছে। সর্বশেষ গত ২ জুলাই শেখ হাসিনা সরকারের শেষ একনেক সভায় ১১টি প্রকল্প অনুমোদন হয়েছে। এরপর গত ৫ জুলাই থেকে ছাত্ররা কোটাবিরোধী আন্দোলন শুরু করেন। তারপর শুরু হয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রিত্ব থেকে পদত্যাগ করে ভারতে চলে যান। এরপর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করা হয়। এতে প্রথমে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার দায়িত্ব পান সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। পরে উপদেষ্টার সংখ্যা বাড়ানো হলে গত ১৬ আগস্ট অর্থনীতিবিদ ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদকে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়। তিনি দায়িত্ব নেওয়ার চার দিন পর ১৯ আগস্ট রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় ও পরিকল্পনা কমিশনের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করেন। 

এদিকে গত ১৪ আগস্ট জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে এক প্রজ্ঞাপনে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব সত্যজিত কর্মকারের নিয়োগ বাতিল করা হয়। ফলে সভায় সভাপতিত্ব করেন পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত সদস্য (সচিব) আবদুল বাকী। সভা শেষে পরিকল্পনা উপদেষ্টা বলেন, ‘জিডিপি বাড়ানোর চেয়ে কর্মসংস্থান বাড়ানো এখন জরুরি হয়ে উঠেছে। প্রকল্প যাচাই-বাছাই করাও খুব প্রয়োজন। কারণ এখানে অনেক বিশৃঙ্খলা রয়েছে। বিশেষ করে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে যেসব প্রকল্প নেওয়া হয়েছে, সেগুলো আবার পর্যালোচনা করা হবে, ছাঁটাই করা হবে।

এডিপি থেকে বাদ পড়তে পারে লাখ কোটি টাকা
প্রকল্প প্রণয়নের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পরিকল্পনা উপদেষ্টা সভায় প্রকল্প কাটছাঁট বা বাতিলের কথা বললেও এখন পর্যন্ত কোনো লিখিত নির্দেশনা হাতে পাওয়া যায়নি। তার পরও একনেক অধিশাখা থেকে অসংখ্য প্রকল্প ফেরত দেওয়া হয়েছে। সেগুলো ভৌত অবকাঠামো বিভাগ, শিল্প ও শক্তি বিভাগ, আর্থসামাজিক বিভাগসহ বিভিন্ন বিভাগে পর্যালোচনা করা হচ্ছে। কয়েকটি বাতিল করে ফেরত দেওয়া হয়েছে মন্ত্রণালয়ে। শেখ পরিবারের সঙ্গে যুক্ত কোনো প্রকল্প বা রাজনৈতিক বিবেচনায় গ্রহণ করা হয়েছে, এমন প্রকল্প বাদ দেওয়া হচ্ছে। আবার কম গুরুত্বপূর্ণ এবং ম্যুরাল, মূর্তি তৈরির প্রকল্প থাকলে তা বাতিল করা হচ্ছে। সব মিলিয়ে চলতি অর্থবছরে এডিপি থেকে প্রায় ১ লাখ কোটি টাকা বাদ দেওয়ার ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে। 

এদিকে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে সব মিলিয়ে ২ লাখ ৭৮ হাজার কোটি টাকা এডিপিতে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বছরের শুরু থেকেই দেশে অস্থিরতা চলতে থাকায় উন্নয়নকাজ ঝিমিয়ে পড়ে। ৫৬টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মধ্যে ১১টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ গত জুলাই মাসে মাত্র ১ শতাংশ এডিপি বাস্তবায়ন করতে পেরেছে। যেখানে আগের বছরের জুলাইয়ে ৩৫টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ সক্ষম হয়েছিল। 

পরিকল্পনা সচিবের পদটি এখনো খালি রয়েছে। পরিকল্পনা কমিশনে কয়েকজন নতুন সদস্য (সচিব) নিয়োগ পেয়েছেন। কিন্তু তারা কথা বলতে নারাজ। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক সদস্য খবরের কাগজকে বলেন, আগে যা-ই হোক না কেন, এখন থেকে পরিকল্পনা কমিশনে সব প্রকল্পেরই পর্যালোচনা সভা করতে হবে। সেখানে যাচাই-বাছাইয়ের পর কাটছাঁট হয়ে যাবে অনেক প্রকল্প। তারপর যা থাকবে সেগুলোর বিষয়ে পিইসি সভা অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে পর্যবেক্ষণ করার পর অনুমোদনের উপযোগী হলে উপদেষ্টার কাছে উপস্থাপন করা হবে। আর প্রকল্প ৫০ কোটি টাকার ওপরে হলে একনেক সভায় যাবে সরকারপ্রধানের চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য। এসব প্রক্রিয়া শেষ করে আগামী একনেক সভা হতে আরও মাসখানেক সময় লাগতে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।

বদলি-আতঙ্কে কর্মকর্তারা, নতুন করে হয় না টেন্ডার 
গণপূর্ত অধিদপ্তর, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর, সড়ক পরিবহন, সিটি করপোরেশনসহ সরকারি সব কেনাকাটা ইলেকট্রনিক গভর্নমেন্ট প্রকিউরমেন্ট (ই-জিপি)’-এর মাধ্যমে হয়। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আগস্ট মাসে সরকার পরিবর্তনের ফলে সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের প্রায় সব অফিসে বদলি-আতঙ্কে আছেন কর্মকর্তারা। ঢিলেমিভাবে চলছে কাজ। অনেকেই মুখ খুলে কিছু বলতে চাচ্ছেন না। ফলে টেন্ডার কার্যক্রমও একেবারেই কমে গেছে। 

এ ব্যাপারে জানতে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ে যোগাযোগ করা হলে এক্সচেঞ্জ অফিসে যোগাযোগ করতে বলেন। এই প্রতিষ্ঠানের ঢাকা জেলা অফিসে যোগাযোগ করা হলে নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ফিরোজ আলম তালুকদার খবরের কাগজকে বলেন, ‘উন্নয়ন কার্যক্রমের গতি কমে গেছে। যা কাজ হচ্ছে সেগুলো আগের অনুমোদন করা প্রকল্পের কাজ। টেন্ডার খুবই কম হচ্ছে, যা হচ্ছে ই-জিপির মাধ্যমে। চলতি অর্থবছরে কোনো প্রকল্প অনুমোদন হলে জিও (সরকারি আদেশ) জারি, প্রকল্প পরিচালক নিয়োগসহ সব প্রক্রিয়া শেষে তার টেন্ডার হতে তিন-চার মাস লাগতে পারে। 

এ সময় রেজা উদ্দিন নামে এক ঠিকাদার বলেন, ‘সরকার পরিবর্তনের ফলে স্যারদের মধ্যে বদলি-আতঙ্ক কাজ করছে। এ জন্য অনেকে ঠিকমতো অফিসে আসেন না। এলেও অফিসে থাকেন না। নতুন কোনো টেন্ডার হয়নি। আগের টেন্ডারের কাজই করা হচ্ছে। এটা লটারির মতো। দেখা যায়, ২০০ টেন্ডারে অংশ নিলে হয়তো পাঁচটি ভাগ্যে জোটে। অনেকেই যারা আওয়ামী লীগপন্থি ঠিকাদার তারা ভয়ে-আতঙ্কে আত্মগোপনে আছেন।’ 
জাহিদসহ অন্য ঠিকাদাররাও বলছেন, ‘কোনো কাজ নেই। অফিসে এলেও অফিসারদের ঠিকমতো পাচ্ছি না। বিলও আটকে থাকছে। সরকারি অফিসে একেবারে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে।’ 

এদিকে গণপূর্ত অধিদপ্তরের অফিসেও দেখা গেছে একই অবস্থা। এই অফিসে অনেক লোকের সমাগম দেখা দিলেও ঠিকাদারি থেকে শুরু করে অর্থ পরিশোধ সব এক্সচেঞ্জ অফিসে হয়। তাই রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে গণপূর্ত অধিদপ্তরের মহাখালী গণপূর্ত বিভাগ, সাভার গণপূর্ত বিভাগসহ বিভিন্ন বিভাগে যোগাযোগ করলে কর্মকর্তারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, কাজ একেবারে থমকে গেছে। টেন্ডার হচ্ছে না। নতুন করে একনেক সভা না হওয়া পর্যন্ত কাজে গতি আসবে না। 

এ সময় এনএন এন্টারপ্রাইজের মো. রাসেল হাওলাদার বাচ্চু এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘সরকার বদলের পর কাজে একেবারে স্থবিরতা চলছে। সর্বশেষ গত জুনে টেন্ডার হয়েছে। সে সময়ে একটা কাজ পেয়েছি। কিন্তু পেমেন্ট পাচ্ছি না। সে জন্য অফিসে আসা। কিন্তু স্যারদের সময়মতো পাওয়া যাচ্ছে না। তারা বদলি-আতঙ্কে এখান-ওখান ছোটাছুটি করছেন। এ জন্য ঠিকমতো অফিসে আসেন না। অন্য এক প্রশ্নের উত্তরে এই ঠিকাদার বলেন, ‘ই-জিপিতে টেন্ডার হলেও অফিসে আসতে হয়। পুরোনো প্রকল্পের কাজ একেবারে শেষ পর্যায়ে। নতুন করে একনেক সভা না হলে কাজ আসবে না। হাত গুটিয়েই চলতে হবে। অনেক ঠিকাদারই আসছেন না।’ 

সরকারি সব কেনাকাটা ই-জিপিতে হয়। বর্তমানে কেমন হচ্ছে, তা জানতে বাংলাদেশ পাবলিক প্রকিউরমেন্ট অথরিটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সোহেল রহমান চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তিনি অফিসে না আসায় ও ফোন বন্ধ থাকায় কোনো মন্তব্য জানা সম্ভব হয়নি। তবে অন্য এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আগের মতো কোনো টেন্ডার হয় না। কারণ হচ্ছে সরকার পরিবর্তনের পর নতুন অর্থবছরে কোনো প্রকল্প অনুমোদন হয়নি।

৭০ প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব জব্দ

প্রকাশ: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:৫০ এএম
আপডেট: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:৫২ এএম
৭০ প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব জব্দ
আমদানি, রপ্তানি ও উৎপাদনে আর্থিক অনিয়ম করায় ৭০টি প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব জব্দ করেছে ঢাকা কাস্টমস বন্ড কমিশনারেটের

আর্থিক অনিয়ম করায় ৭০টি প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে। জাল কাগজপত্র দিয়ে শুল্কমুক্ত সুবিধায় ১ হাজার ৩০০ কোটি টাকার কাঁচামাল আমদানি করে খোলাবাজারে বিক্রি করে দিয়েছে এসব প্রতিষ্ঠান।

বিগত সরকারের শেষ সময়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) ঢাকা কাস্টমস বন্ড কমিশনারেটের (দক্ষিণ) করা তদন্ত প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা যায়।

প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে জানা যায়, ৭০টি প্রতিষ্ঠানের গত পাঁচ বছরের আমদানি, রপ্তানি ও উৎপাদনের তথ্য খতিয়ে দেখে গরমিল পাওয়া গেছে। শাস্তি হিসেবে এই ৭০টি প্রতিষ্ঠানের বন্ড সুবিধা বাতিল করা হয়েছে। আমদানি-রপ্তানির লাইসেন্স স্থগিত এবং ব্যবসা চিহ্নিতকরণ নম্বর (বিন) বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এ অপকর্মের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে এনবিআর মামলা করেছে। এসব প্রতিষ্ঠানের প্রকৃত মালিকদের খোঁজ পাওয়া যায়নি। তবে সন্ধান চলছে। 

সরকার রপ্তানি উৎসাহিত করতে শতভাগ রপ্তানিমুখী প্রতিষ্ঠানকে কাঁচামাল আমদানিতে ‘বন্ড সুবিধা’ নামে শুল্কমুক্ত সুবিধায় কাঁচামাল আমদানির সুবিধা দিয়েছে। এই ৭০টি প্রতিষ্ঠান বন্ড সুবিধা নিয়ে শুল্কমুক্ত কাঁচামাল আমদানি করেছে। এর মধ্যে ২৭টি প্রতিষ্ঠানের বাস্তবে কোনো অস্তিত্বই নেই। জাল কাগজপত্র দেখিয়ে ব্যাংকের মাধ্যমে এলসি খুলে এসব অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠানের নামেও শুল্ক না দিয়ে আমদানি করা কাঁচামালের সবটা বাজারে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। বাকি ৪৩টি প্রতিষ্ঠানের রপ্তানি করা পণ্য তৈরিতে যতটা কাঁচামাল প্রয়োজন ছিল, মিথ্যা তথ্য দিয়ে তারচেয়ে কয়েক গুণ বেশি কাঁচামাল আমদানি করেছে। আমদানি করা অতিরিক্ত কাঁচামাল বাজারে বিক্রি করে দিয়েছে।

এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মো. আবদুল মজিদ খবরের কাগজকে বলেন, শুধু বন্ড অনিয়মে সরকার বছরে প্রায় ১ লাখ কোটি টাকার রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে। রপ্তানি উৎসাহিত করতে শুল্কমুক্ত কাঁচামাল আমদানির সরকারি সুবিধা দেওয়া হয়েছে। শুল্ক না দিয়ে আনলে কম দাম পড়ছে। অন্যদিকে একই জাতীয় কাঁচামাল দেশি প্রতিষ্ঠান নিয়মকানুন মেনে রাজস্ব পরিশোধ করে উৎপাদন করে ন্যূনতম লাভ রেখে বিক্রি করলেও শুল্কমুক্তভাবে আমদানি করা কাঁচামালের চেয়ে বেশি দাম পড়ছে। কম দামে পাওয়া যাওয়ায় ক্রেতা বেশি দিয়ে কিনছেন না। আর এভাবেই দেশি শিল্প অসম প্রতিযোগিতায় পড়ছে। আমদানিকারক অসৎ ব্যবসায়ীদের কারণে নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে দেশি শিল্প। এরা সংঘবদ্ধ চক্র। বছরের পর বছর অবৈধ ব্যবসা করেও ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকছে।

তৈরি পোশাক খাতের সংগঠন বিকেএমইএ সভাপতি মো. হাতেম খবরের কাগজকে বলেন, যারা শুল্কমুক্তভাবে কাঁচামাল আমদানি করে উৎপাদনে না লাগিয়ে অবৈধভাবে বাজারে বিক্রি করছেন তারা অসাধু ব্যক্তি। এদের কারণে সৎ ব্যবসায়ীরা বিপদে পড়ছেন। তবে এদের একার পক্ষে এ অপকর্ম করা সম্ভব না। এদের কাছ থেকে অনৈতিক সুবিধা নিয়ে এনবিআর ও ব্যাংকের কিছু অসাধু ব্যক্তি সহযোগিতা করছেন। সবাইকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।

বন্ড কমিশনারেটের প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে জানা যায়, সম্পূর্ণ রপ্তানিমুখী প্রতিষ্ঠান হিসেবে এই ৭০টি প্রতিষ্ঠান এনবিআরে তালিকাভুক্ত হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠান বিনা শুল্কে সুতা, কাপড়, হ্যাঙ্গার, পলিথিন, শার্টের কলার, হাতায় ব্যবহৃত শক্ত কাগজ, আর্ট কার্ড, ডুপ্লেক্স বোর্ড, মিডিয়াম পেপার, লাইনার পেপার আমদানি করেছে। বৈদ্যুতিক তারসহ বিভিন্ন বৈদ্যুতিক সরঞ্জামাদি, সকেট, পলিপ্রোপাইলিন (পিপি), বিএপিপি ও অ্যাডহেসিভ টেপ, প্লাস্টিক দানা, রাসায়নিক দ্রব্য, রডও আমদানি করেছে।

প্রসঙ্গত, বন্ড সুবিধা পাওয়ার অন্যতম শর্ত হলো, রপ্তানির জন্য পণ্য তৈরিতে যতটা কাঁচামাল প্রয়োজন, ঠিক ততটাই আমদানি করতে হবে। প্রয়োজনের চেয়ে একটুও বেশি আনা যাবে না। আমদানির সবটা কাঁচামাল কারখানায় পণ্য উৎপাদনে ব্যবহার করার আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কোনো কারণে যদি পণ্য উৎপাদনের পর কাঁচামাল অবশিষ্ট থাকে, তবে তা এনবিআরের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে বাজারে বিক্রি করে দিতে পারবে। এ ক্ষেত্রে হিসাব কষে শুল্ক-কর-ভ্যাট দিতে হবে। এসব নিয়ম না মানলে বন্ড সুবিধা বাতিল হবে। রাজস্ব আইন অনুসারে শাস্তি হবে। ৭০টি প্রতিষ্ঠান এসব শর্ত ভঙ্গ করেছে। 

প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, এ প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রকৃত মালিকরা আড়ালে থেকে এসব অপকর্ম করিয়েছেন। তারা ভাড়া করা লোক দিয়ে আমদানি করা কাঁচামাল বন্দর থেকে ছাড়িয়ে আনা ও পরিবহনে তুলে দেওয়ার কাজ করিয়েছেন। পরিবহনচালকের কাছে ঠিকানা বুঝিয়ে দিয়ে ভাড়া করা লোকরা সরে পড়েছেন। চালক নির্দিষ্ট ঠিকানামতো কাঁচামাল পৌঁছে দিয়েছেন। গুদামের দায়িত্বে থাকা অন্য ব্যক্তিরা এসব মাল বুঝে নিয়েছেন। এসব ভাড়া করা লোকের কাজের বিনিময়ে পারিশ্রমিক মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। এরা কেউই প্রকৃত মালিকদের খোঁজ জানেন না। গুদামের দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিরা শুল্কমুক্ত কাঁচামাল দোকানে বিক্রি করে দিয়েছেন। বিক্রি করে পাওয়া অর্থ মোবাইল ব্যাংকিং বা নির্দিষ্ট ব্যাংক হিসাবে জমা দিয়েছেন। এসব পণ্য এনে রাজধানীর পুরান ঢাকার ইসলামপুর, হাতেম টাওয়ার, উর্দু রোড, গাউছিয়া, নিউ মার্কেট, টঙ্গী, যাত্রাবাড়ী, গুলিস্তান, চট্টগ্রামের বকশীবাজারের বিভিন্ন দোকানে বিক্রি করে দিয়েছেন; যা এসব দোকান থেকে সাধারণ ক্রেতারা কিনে নিচ্ছেন। 

নরসিংদীর বাবুরহাট, মাধবদী, নারায়ণগঞ্জের টানবাজার এলাকায়, সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর, এনায়েতপুর, সোহাগপুর ও বেলকুচিতে বন্ডের সুতা বিক্রি করা হয়েছে। এসব এলাকার বিভিন্ন দোকানে বিনা শুল্কে আনা কাঁচামাল কোনো রাখঢাক ছাড়াই বিক্রি হচ্ছে। ৭০টি প্রতিষ্ঠানের অসাধু মালিকরা নিজস্ব প্রতিনিধি পাঠিয়ে অধিকাংশ সময়ে আগেই জেনে নিয়েছেন কোন দোকানে কোন পণ্য কতটা প্রয়োজন। অনেক সময় অগ্রিমও নিয়ে নিয়েছেন। কৌশলে সুবিধামতো সময়ে ভাড়া করা লোক দিয়ে পণ্য পৌঁছে দিয়েছেন। দেশে উৎপাদিত পণ্যের চেয়ে কম দামে পাওয়া যাওয়ায় খুচরা ও পাইকারি পর্যায়ে আগ্রহের সঙ্গেই এসব কিনেছেন।

ছাত্ররাজনীতি বন্ধের দাবি ফের চ্যালেঞ্জের মুখে ঢাবির একাডেমিক কার্যক্রম

প্রকাশ: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:০৫ এএম
আপডেট: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:১৯ এএম
ফের চ্যালেঞ্জের মুখে ঢাবির একাডেমিক কার্যক্রম
ঢাবির কার্জন হল। ছবি: সংগৃহীত

ছাত্ররাজনীতি বন্ধের ইস্যুতে আবারও চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে যাচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) একাডেমিক কার্যক্রম। আগামী ২২ সেপ্টেম্বর থেকে ক্লাস শুরুর সিদ্ধান্তের ফলে প্রায় ৮৩ দিন পর একাডেমিক কার্যক্রম চালুর সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল। কিন্তু শিক্ষার্থীরা ছাত্ররাজনীতি বন্ধ ঘোষণা না করলে ক্লাসে ফিরবেন না বলে জানিয়েছেন। তারা কার্যকর ছাত্র সংসদের দাবি করছেন। ফলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের ইতিবাচক কর্মকাণ্ডের (গণরুম বন্ধ করে মেধার ভিত্তিতে সিট বরাদ্দ) পরেও শ্রেণি কার্যক্রম চালু করা নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। 

চলতি বছরের ১ জুলাই থেকে সর্বজনীন পেনশনের প্রত্যয় স্কিম বাতিলসহ তিন দফা দাবিতে সর্বাত্মক কর্মবিরতিতে নামেন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। বন্ধ হয়ে যায় একাডেমিক কার্যক্রম। এর মাঝে শুরু হয় চাকরিতে কোটা সংস্কারের আন্দোলন। ১৭ জুলাই থেকে কোটা সংস্কার আন্দোলনের উদ্ভূত পরিস্থিতির মধ্যে অনির্দিষ্টকাল বন্ধ ঘোষণা করা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। তবে ২০ দিন পর ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতন হলে ৬ আগস্ট খোলে বিশ্ববিদ্যালয়। প্রশাসনিক কার্যক্রম চালু হলেও স্থবিরতা দেখা দেয় একাডেমিক কার্যক্রমে। সিন্ডিকেটের এক জরুরি সভায় গত বৃহস্পতিবার সিদ্ধান্ত আসে ২২ সেপ্টেম্বর থেকে একাডেমিক কার্যক্রম শুরু হবে। একে একে হলগুলোতে বৈধ শিক্ষার্থীদের সিট দেওয়ার পাশাপাশি গণরুম-গেস্টরুম বন্ধ হলেও শিক্ষার্থীদের আরেক দাবি দলীয় রাজনীতিমুক্ত ক্যাম্পাস।

গত কয়েক দিন ধরে ‘দলীয় রাজনীতিমুক্ত ক্যাম্পাস আন্দোলন’ ব্যানারে বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী দুই দফা দাবিতে উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি প্রদান, অবস্থান কর্মসূচি, বিক্ষোভ মিছিল কর্মসূচি পালন করেছেন। ধারাবাহিক কর্মসূচির অংশ হিসেবে আজ রবিবার উপাচার্যের বাসভবনসংলগ্ন স্মৃতি চিরন্তনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। আগামী ২২ সেপ্টেম্বরের মধ্যে দলীয় রাজনীতিমুক্ত ক্যাম্পাস বিষয়ে যদি কোনো ধরনের আশ্বাস প্রদান ও কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা না হয় ধারাবাহিকভাবে কঠোর কর্মসূচিতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেবেন তারা। 

এই আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগের শিক্ষার্থী নাফিউর রহমান খবরের কাগজকে বলেন, ‘ছাত্র-জনতার অংশগ্রহণে জুলাই বিপ্লবের মধ্যে দেশ নতুনভাবে স্বাধীন হয়েছে। হল-ক্যাম্পাসে দলীয় দখলদারত্ব এবং লেজুড়বৃত্তির যে রাজনীতি ছিল, তার অবসান হয়েছে। আমরা চাই না, সেসব আবার ফিরে আসুক। আমাদের যে আন্দোলন ছিল, সেই আন্দোলনের নয় দফার মধ্যে কিন্তু একটি দফা ছিল দলীয় রাজনীতির অবসান। আমরা চাই, ক্যাম্পাসে শিক্ষক-শিক্ষার্থী-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দলীয় রাজনীতি- এগুলো যেন ফিরে না আসে। আমাদের শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে বিরাজনীতিকীকরণের পক্ষে নয়, আমরা চাই সুস্থ ধারার ছাত্ররাজনীতি, যা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত করতে চায়।’

আন্দোলনকে আরও বেগবান করতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা সংঘবদ্ধ হচ্ছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শ্রেণি প্রতিনিধিদের সঙ্গে আমাদের কথা হচ্ছে। রবিবার আমাদের অবস্থান কর্মসূচি রয়েছে। এ ছাড়া ২২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আমাদের সময় রয়েছে। এই সময়ের মধ্যে নানাভাবে আমরা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে চাপ দেব যেন তারা আমাদের কথা শোনেন। দলীয় রাজনীতিমুক্ত যে ক্যাম্পাস সেটি মেনে নিলে অবশ্যই আমরা ক্লাসে ফিরব। যদি না মেনে নেন, আমরা ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে কঠোর কর্মসূচিতে যাব। গত শুক্রবার প্রক্টর স্যারের সঙ্গে কথা হয়েছে, তিনি আমাদের বলেছেন শিক্ষার্থীরা যদি নিয়মতান্ত্রিক ও ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন চালিয়ে নিয়ে যেতে পারে অবশ্যই উপাচার্য আমাদের যে দাবি সেটি মেনে নিবেন।’

সেশনজট কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে এমন প্রসঙ্গ উল্লেখ করে আন্দোলনের আরেক সংগঠক সমাজবিজ্ঞান স্নাতকোত্তরে অধ্যয়নরত ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘সেশনজট আরও বৃদ্ধি পাবে এটি ঠিক, তবে তা কিন্তু কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে, কিন্তু ফ্যাসিস্ট সিস্টেমের মাধ্যমে কেউ দলীয় রাজনীতির এজেন্ডা বাস্তবায়ন, দখলদারত্ব এবং রাজনৈতিক কার্যালয় থেকে যে হুকুম আসবে সেটি বাস্তবায়ন করবে আমরা এমন রাজনীতি চাই না। ইতোমধ্যে রক্ত দিয়ে ফ্যাসিস্ট সরকারকে তাড়িয়েছি, এখন আমরা এই সিস্টেম আর চাই না। এখন আমাদের যদি ক্ষতিও হয়, তারপরও এই ফ্যাসিস্ট দলীয় রাজনীতির যে সিস্টেম সেটি উৎখাত করব।’

ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘দেশের সব কিছুর মধ্যেই গতিশীলতা ফিরলেও এখনো একাডেমিক স্থবিরতার মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। যার ফলে সেশনজটের পাশাপাশি চাকরির বাজার থেকে আমাদের একটি দূরত্ব সৃষ্টি হচ্ছে। বলা হচ্ছে, ২২ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস শুরু হবে কিন্তু আমাদের যে আন্দোলন সেখানে কিন্তু একটা অন্যতম দাবি ছিল দলীয় রাজনীতিমুক্ত ক্যাম্পাস নিশ্চিত করা। সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত না নিয়ে ক্লাস শুরুর সিদ্ধান্ত নিলেন। আমরা তো এমন ক্যাম্পাস চাইনি।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ক্লাস-পরীক্ষায় শুরুর পক্ষে অবস্থান নিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘আমরা এখনই ক্লাস-পরীক্ষায় বসতে রাজি কিন্তু ক্যাম্পাস-হলে দলীয় রাজনীতি থাকবে, এটির পক্ষে তো আমরা না। হলগুলোতে যেহেতু ছাত্রসংগঠনগুলোর প্রতিপত্তি নেই, শিক্ষার্থীরা অনেক ভালো আছেন। আমরা চাই অবিলম্বে ক্যাম্পাসকে দলীয় রাজনীতিমুক্ত ঘোষণা করে ছাত্র সংসদ নির্বাচন দেওয়া হোক, যেন শিক্ষার্থীদের কথা বলা ও সুস্থ রাজনীতি চর্চা করার একটি জায়গা তৈরি হয়।’

চলতি বছরে স্নাতকোত্তর শেষ হওয়ার কথা ছিল সংস্কৃত বিভাগের আরিফুল ইসলামের, কিন্তু তিনি সবে স্নাতক শেষ করেছেন। তিনি খবরের কাগজকে বলেন, ‘চলতি বছরে স্নাতক শেষ হওয়ার কথা ছিল কিন্তু সেখানে কেবল স্নাতক শেষ হলো, বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষের উচিত যারা সেশনজটে পড়েছে তাদের একাডেমিক সেশনজট কাটাতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা।’

সার্বিক বিষয়ে খবরের কাগজের সঙ্গে কথা হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. মামুন আহমেদের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘ছাত্ররাজনীতি বন্ধের যে কথা বলা হচ্ছে, আমার মনে হয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সেটি বিবেচনা করে দেখবেন।’

সেশনজট প্রসঙ্গে বলেন, ‘ইতোমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করতে শুরু করেছেন, ধীরে ধীরে সব কিছুই নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে। তাছাড়া আমি তো সবে যোগদান করেছি। কাজকর্ম শুরু করলে ধীরে ধীরে সব কিছু নিয়ে কাজ করা যাবে। তখন হয়তো পুরো বিষয়টি বোঝা যাবে।’

ঝুলন্ত সেতু ডুবে থাকায় হতাশ পর্যটকরা

প্রকাশ: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:৩৯ পিএম
ঝুলন্ত সেতু ডুবে থাকায় হতাশ পর্যটকরা
রাঙামাটির ৩৩৫ ফুট দৈর্ঘ্যের ঝুলন্ত সেতুটি এখন তিন ফুট পানির নিচে ডুবে রয়েছে। ফলে সেতু ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। এতে হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন পর্যটকরা। ছবি: খবরের কাগজ

রাঙামাটির জনপ্রিয় পর্যটন আকর্ষণ ৩৩৫ ফুট দৈর্ঘ্যের ঝুলন্ত সেতু বর্তমানে তিন ফুট পানির নিচে ডুবে রয়েছে। এতে পর্যটকদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে সেতু ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। এই কারণে গত ২৩ আগস্ট থেকে বাণিজ্যিক টিকিট বিক্রি বন্ধ রয়েছে। যার ফলে সেতু এলাকায় ঘুরতে এসে হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন পর্যটকরা।

সেতু কর্তৃপক্ষের মতে, বর্তমানে দৈনিক গড়ে ৭০ হাজার টাকা রাজস্ব ক্ষতি হচ্ছে। গত ২২ দিনে মোট ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৫ লাখ টাকার বেশি। প্রতিবছর ৫ লাখের বেশি দেশি-বিদেশি পর্যটক ঝুলন্ত সেতু দেখতে আসেন এবং সেতু কর্তৃপক্ষ বছরে প্রায় আড়াই কোটি টাকা আয় করে থাকে প্রবেশ ফি, গাড়ি পার্কিং এবং ট্যুরিস্ট বোট ইজারা থেকে।

১৯৬০ সালে কাপ্তাই জলবিদ্যুৎকেন্দ্রের বাঁধ নির্মাণের পর ১৯৮৫ সালে এই ঝুলন্ত সেতুটি নির্মিত হয়। রাঙামাটির পর্যটন কমপ্লেক্স এলাকায় এসে পর্যটকরা প্রথমেই সেতুটি দেখতে যান। কিন্তু সেতু ডুবে থাকায় পর্যটকরা হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন। 

পাবনা থেকে পরিবার নিয়ে সেতু দেখতে আসা শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘এই প্রথম আসলাম। কিন্তু এসেই হতাশ হলাম। সেতু ডুবে আছে। বাচ্চারা বলেছিল, সেতুতে ছবি তুলবে। তা আর হলো না। এখন সবারই মন খারাপ।’ 

চট্টগ্রামের হাটহাজারী থেকে আসা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘রাঙামাটি ঝুলন্ত সেতু দেখতে এসেছি। কিন্তু এখানে এসে দেখলাম সেতু ডুবে আছে। খুবই খারাপ লাগছে। আগে জানলে আসতাম না।’

ঝুলন্ত সেতুর টিকিট কাউন্টারের দায়িত্বে থাকা সোহেল খান বলেন, ‘সাধারণ ছুটির দিনে দেড় থেকে দুই হাজার পর্যটক আসেন। বিশেষ ছুটির দিনে এই সংখ্যা ৭ থেকে ১২ হাজার পর্যন্ত চলে যায়। কিন্তু গত ২৩ আগস্ট থেকে সেতু ডুবে থাকায় টিকিট বিক্রি বন্ধ রেখেছি এবং পর্যটকরা টিকিট ছাড়াই ঘুরে যাচ্ছেন।’

রাঙামাটি পর্যটন হলিডে কমপ্লেক্সের ব্যবস্থাপক আলোক বিকাশ চাকমা বলেন, সেতুর পাটাতন বর্তমানে তিন ফুট পানির নিচে রয়েছে। পর্যটকদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে এবং বাণিজ্যিক টিকিট বিক্রি বন্ধ রাখা হয়েছে। পানি কমলে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হবে।

বৃষ্টি হলে কাপ্তাই হ্রদের পানি ধারণক্ষমতা কমে যাওয়ায় সেতু ডুবতে শুরু করে। হ্রদের পানি বিপৎসীমার কাছাকাছি পৌঁছলে কাপ্তাই বাঁধের ১৬টি জলকপাট খুলে পানি বের করা হয়। কিন্তু উজান থেকে পানি নামতে ধীরগতিতে চলায় হ্রদের পানির উচ্চতা কমছে খুবই ধীরে।

যৌথ অভিযানের প্রস্তুতি জেনেভা ক্যাম্পের বাসিন্দারা আতঙ্কে

প্রকাশ: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১১:৫৯ এএম
আপডেট: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬:৪৭ পিএম
জেনেভা ক্যাম্পের বাসিন্দারা আতঙ্কে
অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধারে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের জেনেভা ক্যাম্পে যৌথ বাহিনীর অভিযানের প্রস্তুতি চলছে। ছবি : ইন্দ্রজিৎ কুমার ঘোষ

পুলিশের লুট হওয়া অস্ত্রসহ অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধারে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের জেনেভা ক্যাম্পে যৌথ বাহিনীর অভিযানের প্রস্তুতি চলছে। শিগগিরই অভিযান পরিচালনা করা হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ। 

বৃহস্পতিবার (১২ সেপ্টেম্বর)  খবরের কাগজকে এসব তথ্য জানান মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলী ইফতেখার হাসান। 

তিনি বলেন, জেনেভা ক্যাম্পে অস্ত্র উদ্ধারের জন্য একটি তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। সেখানে সেনাবাহিনীর সঙ্গে যৌথ অভিযান পরিচালনার জন্য প্রস্তুতি চলছে। এ ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। অনুমতি পেলেই উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করা হবে।

জেনেভা ক্যাম্পে সম্প্রতি গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে ও দুজন নিহত হয়েছেন। এ বিষয়ে ওসি জানান, লুট হওয়া অস্ত্র দিয়ে যে গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে এমনটি বলা যাচ্ছে না। তবে ক্যাম্পে মাদক ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে অন্যরা যেসব অস্ত্র ব্যবহার করছে তা সবই অবৈধ।

গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের দিন শুধু মোহাম্মদপুর থানা থেকেই লুট হয় ৭ শতাধিক ছোট-বড় অস্ত্র। মোহাম্মদপুর ও আদাবর থানা জানায়, এ পর্যন্ত এই দুই থানা থেকে পুলিশের লুট হওয়া ২২৩টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। আদাবর থানায় লুট হওয়া আরও ৬৮ আগ্নেয়াস্ত্র এখনো উদ্ধার হয়নি।

যৌথ অভিযানে অংশ নিচ্ছে সেনাবাহিনী, পুলিশ, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি), আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী, কোস্ট গার্ড ও র‌্যাব।

হাসিনা সরকারের পতনের দিন মোহাম্মদপুরের জেনেভা ক্যাম্পের (বিহারি ক্যাম্প) বেশির ভাগ বাসিন্দা ও মাদক ব্যবসায়ী সন্ধ্যার পর মোহাম্মদপুর ও আদাবর থানায় হামলা চালিয়ে অগ্নিসংযোগ করে। এ সময় লুট করা হয় পুলিশের অস্ত্র, পুড়িয়ে দেওয়া হয় গুরুত্বপূর্ণ নথি ও গাড়ি। 

অন্যদিকে অভিযোগ রয়েছে পুলিশ ও থানা থেকে লুট করা অস্ত্র দিয়ে প্রতিদিনই গোলাগুলির ঘটনা ঘটছে জেনেভা ক্যাম্পে। আধিপত্য বিস্তার আর মাদক ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দ্বন্দ্বই এর মূল কারণ বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। ক্যাম্পের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তারা। গোলাগুলির ঘটনায় সম্প্রতি দুজন নিহত এবং শতাধিক আহত হয়েছেন।

জেনেভা ক্যাম্পের বাসিন্দারা জানান, গত মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে ক্যাম্পের পরিবেশ উত্তেজিত হয়ে উঠেছে। প্রতিদিন মাদক বিক্রির টাকা নিয়ে মুরগি পট্টিতে গোলাগুলির ঘটনা ঘটছে। এ ঘটনায় পুলিশের লুট হওয়া অস্ত্র ব্যবহার হচ্ছে। বাসিন্দারা নিরাপত্তা চান। এ বিষয়ে তারা অন্তর্বর্তী সরকারের সহযোগিতা কামনা করেন। 

স্থানীয়দের অভিযোগ, ছাত্র আন্দোলন দমনে স্থানীয় কাউন্সিলর সৈয়দ হাসানুর ইসলাম রাস্টন ক্যাম্পের মাদক ব্যবসায়ীদের হাতে তুলে দেন অস্ত্র। স্থানীয়রা দাবি করেন, ৫ তারিখে লুট হওয়া বেশির ভাগ অস্ত্র জেনেভা ক্যাম্পের লোকদের হাতে চলে এসেছে। এখন যে যার স্বার্থ সিদ্ধির জন্য সেই অস্ত্র ব্যবহার করছে। 

এই ক্যাম্পের একজন মাদক ব্যবসায়ী জানান, মাদকের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ভূঁইয়া সোহেল ও চুয়া সেলিম বাহিনীর মধ্যে দ্বন্দ্ব বহু দিনের। তবে দেশীয় অস্ত্রের বদলে এখন সেখানে চলছে প্রকাশ্যে গোলাগুলি।

গত ৬ আগস্ট গোলাগুলিতে নিহত হন ক্যাম্পের বাসিন্দা শাহেন শাহ। আর চলতি মাসের ৪ তারিখে মারা যান অটোরিকশা চালক মোহাম্মদ সনু। সনুর স্ত্রী জানান, গুলি করে তার স্বামীকে হত্যা করা হয়েছে। তিনি সরকারের কাছে এই হত্যার বিচার দাবি করেন। 

জেনেভা ক্যাম্পে গত ২৯ আগস্ট মাদক নিয়ে দুই গ্রুপের সংঘর্ষ হয়। এ সময় এখানকার বাসিন্দা মোহাম্মদ মিন্টুর গায়ে ছররা গুলি লাগে। তিনি খবরের কাগজকে বলেন, ‘এ যাত্রায় প্রাণে বেঁচে গেলেও প্রতিদিনই আতঙ্কে দিন কাটছে ক্যাম্পের বাসিন্দাদের। মাদক বিক্রির টাকার ভাগাভাগি নিয়ে প্রায় প্রতিদিন গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। আমাদের কোনো নিরাপত্তা নেই।’ এ সময় তিনি ক্যাম্পের অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের জন্য সরকারের সহযোগিতা কামনা করেন।