ঢাকা ৩১ ভাদ্র ১৪৩১, রোববার, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪

কোটা আন্দোলন মোকাবিলা ব্যর্থতার পেছনে ছাত্রলীগের নেতৃত্বের দুর্বলতা

প্রকাশ: ০২ আগস্ট ২০২৪, ০৩:১৫ পিএম
আপডেট: ০২ আগস্ট ২০২৪, ০৩:১৬ পিএম
ব্যর্থতার পেছনে ছাত্রলীগের নেতৃত্বের দুর্বলতা

দুর্বল নেতৃত্বের কারণে ছাত্রলীগ কোটা সংস্কার আন্দোলন মোকাবিলায় ব্যর্থ হয়েছে বলে মনে করছেন সংগঠনটির বর্তমান ও সাবেক নেতারা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শুরু হওয়া আন্দোলন দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়ার পেছনে সংগঠনের শীর্ষ নেতাদের নীরব ভূমিকা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে বর্তমান এবং সাবেক নেতাদের মধ্যে। সংগঠনের শীর্ষ নেতারা নিজেদের ‘সেফ’ রাখতে তুখোড় (সাংগঠনিকভাবে এগিয়ে) নেতাদের বাদ দিয়ে করেন ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি। যে কারণে শুরু থেকেই কোটা সংস্কার আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে টিকতে পারেননি ছাত্রলীগের নেতারা। নেতৃত্বের ব্যর্থতার দায়ে ছাত্রলীগের দ্রুত সম্মেলন চেয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন সংগঠনের সাবেক ও পদবঞ্চিত নেতারা। আওয়ামী লীগের সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটি ভেঙে দেওয়া হতে পারে বলে গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে।

ছাত্রলীগের বর্তমান ও সাবেক এবং পদবঞ্চিত ৮ নেতার সঙ্গে কথা হয় খবরের কাগজের। ছাত্রলীগের বর্তমান সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালি আসিফ ইনান শুরু থেকেই উল্টো পথে হেঁটেছেন। সাদ্দাম ও ইনান নিজেদের সেফ রাখতে তাদের কাজে বাধা হয়ে উঠতে পারে এমন তুখোড় নেতাদের কাউকেই পদে রাখেননি। ছাত্রলীগের যেসব নেতা আন্দোলন মোকাবিলা করতে পারেন অথবা যাদের নিজেদের কর্মী-সমর্থক রয়েছেন, এমন অনেক নেতাই এখন পদহীন। কমিটি ঘোষণার পরে পদবঞ্চিত নেতাদের সাদ্দাম-ইনান আশ্বস্ত করে বলেছেন, নেত্রীর সঙ্গে কথা বলে কেন্দ্রীয় কমিটিতে ৫০টি পদ বাড়ানো হবে। এসব পদে তাদের পদায়ন করা হবে। অথচ দেড় বছর হয়ে গেলেও কথা রাখেননি তারা।

এদিকে পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে যাদের গুরুত্বপূর্ণ পদ দেওয়া হয়েছে, তাদের কেউই আন্দোলন মোকাবিলায় অংশ নেননি। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ, ঢাবি ও হল শাখার প্রায় ৪ হাজারের বেশি নেতা-কর্মী রয়েছেন। তবে আন্দোলনে সব মিলিয়ে ৫০০ জনকেও একসঙ্গে দেখা যায়নি বরং নেতারা গণহারে ছাত্রলীগ থেকে পদত্যাগ করেছেন। কোটা সংস্কার আন্দোলন ব্যর্থ হওয়ার পেছনে সাদ্দাম ও ইনানকে দায়ী করছেন পদবঞ্চিতরা। সাবেক তুখোড় ছাত্রলীগের নেতারাও এমনটি মনে করছেন।

জানা গেছে, ১৪ জুলাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সংবাদ সম্মেলন শেষে রাত ১০টার পর শিক্ষার্থীরা ঢাবির হলে হলে বিক্ষোভ শুরু করেন। মুহূর্তের মধ্যে কয়েক হাজার শিক্ষার্থী জড়ো হয়ে মিছিল শুরু করেন। সে সময় ক্যাম্পাস ছেড়ে সাদ্দাম-ইনানের সঙ্গে ঢাবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মাজহারুল কবির শয়ন ও সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত হোটেল ইন্টার কন্টিনেন্টালে অবস্থান নেন। এই চার নেতা তখন ফোন করে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতাদের কাছে সাহায্য চান। মহানগরের উত্তর-দক্ষিণ ছাত্রলীগ যেন নেতা-কর্মী নিয়ে এসে বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢোকে। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের শীর্ষ এক নেতা মহানগর উত্তরের সভাপতি রিয়াজ মাহমুদকে ফোন করে পরবর্তী দুই দিন বিশ্ববিদ্যালয়ে সাপোর্ট দেওয়ার অনুরোধ করেন। মহানগরের নেতা-কর্মীরা এলে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের নেতারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে আওয়ামী লীগের পক্ষে মিছিল করে ছাত্রলীগের অবস্থান জানান দেন। যদিও ক্যাম্পাসে আগে থেকেই ছাত্রলীগের সাবেক নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

২০১৮ সালের কোটা আন্দোলনের সময় ছাত্রলীগের নেতৃত্ব দিয়েছেন সংগঠনটির সাবেক এক সভাপতি। তিনি গতকাল খবরের কাগজকে বলেন, ‘আন্দোলন মোকাবিলার ক্ষেত্রে সাদ্দাম-ইনানের কোনো পরিকল্পনা ছিল না। ছাত্রলীগের কোনো নেতা-কর্মী মধুর ক্যানটিনে অবস্থান নেবেন, ভিসি চত্বর, মেডিকেল গেট, টিএসসিতে কারা অবস্থান করবেন- সেসব বিষয়ে কোনো নির্দেশনা ছিল না বলে জানতে পেরেছি।’

বক্তৃতায় সীমাবদ্ধ সভাপতি সাদ্দাম: কোটা সংস্কার আন্দোলন মোকাবিলায় ব্যর্থ হওয়ায় ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দামকে ঘিরে রাজনৈতিক অঙ্গনে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। ২০১৮ সালের জুলাইয়ের শেষ দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হন সাদ্দাম হোসেন। তখন ভালো বক্তব্য দিয়ে নজর কাড়েন আওয়ামী লীগের নেতাদের। বর্তমানে তিনি ছাত্রলীগের সভাপতি। তার ঘনিষ্ঠ একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সাদ্দাম সামাজিক কর্মসূচি ও বক্তৃতার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকতে পছন্দ করেন। আওয়ামী লীগের কোনো আন্দোলন-সংগ্রাম দূরের কথা, সামনের সারি থেকে নিজেকে পাশ কাটিয়ে রাখার চেষ্টা করেন। ২০১৮-তে কোটা আন্দোলন, নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলন, নির্বাচনকেন্দ্রিক সব আন্দোলন হয়েছে- কোনো একটি আন্দোলন মোকাবিলায় সাদ্দামকে কেউ কখনো দেখেননি। এবারের কোটা সংস্কার আন্দোলনে সাদ্দাম ও তার অনুসারীদের রাজপথে দেখা যায়নি। তিনি যখন ঢাবি শাখার সাধারণ সম্পাদক ছিলেন, তখনো তার অনুসারীরা কোনো আন্দোলনে অংশ নেননি। এ ছাড়া কোটা সংস্কার আন্দোলনের সমন্বয়ক সারজিস এবং সাদ্দামের বাড়ি একই জেলা (পঞ্চগড়) হওয়ায় সেই সম্পর্ক আরও বেশ জোরালো। কথা উঠেছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত পঞ্চগড়ের শিক্ষার্থীদের সংগঠনে সম্পাদক পদে সারজিসকে বসিয়েছেন সাদ্দাম। ২০১৯ সালের ডাকসু নির্বাচনে অমর একুশে হল ছাত্রলীগের প্যানেল থেকে সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন এই সারজিস। দুজনের একাধিক ছবি ও ৫৮ সেকেন্ডের একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। সাদ্দাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর ‘ছাত্র ইউনিয়ন’ করতেন বলেও বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে। ২০১১-১২ সেশনে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন সাদ্দাম।

ঢাবির শয়ন ও সৈকতকে নিয়ে ধোঁয়াশা: কোটা সংস্কার আন্দোলন মোকাবিলায় নীরব ভূমিকায় দেখা গেছে ঢাবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মাজহারুল কবির শয়ন ও সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকতকে। যদিও ২০১৮ সালের কোটা আন্দোলনে শয়ন ও সৈকত সরাসরি অংশ নিয়েছিলেন। সে সময় কোটার পক্ষ নিয়ে ফেসবুকে ছাত্রলীগের নামে অশ্লীল ভাষায় স্ট্যাটাস দিয়েছেন শয়ন। আর পুলিশের সামনে বুক পেতে দাঁড়ানো সৈকতের একাধিক ছবি এবং ভিডিও নেট দুনিয়ায় আসে, যা এবারের আন্দোলনে বেশ ভাইরাল হয়।

সংগঠনের নেতা-কর্মীদের অভিযোগ, আন্দোলনকারীদের প্রতি এই তিন নেতার ‘সহানুভূতি’র কারণে ছাত্র আন্দোলন এতটা বেগবান হয়ে ওঠে। শুরুতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের অবাধ অংশগ্রহণ থাকলেও একপর্যায়ে তৃতীয় একটি পক্ষ মাঠে নামে আন্দোলনকারী সাধারণ শিক্ষার্থীদের হয়ে, যা রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করতে ব্যর্থ হয় ছাত্রলীগের অভিভাবক সংগঠন আওয়ামী লীগও।

শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সুসম্পর্কে ব্যর্থ ছাত্রলীগ: আওয়ামী লীগের টানা ১৬ বছরে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সুসম্পর্ক স্থাপন করতে ব্যর্থ হয়েছেন। এ অভিযোগ খোদ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের। ঢাবির হলগুলোতে ছাত্ররাজনীতি বলতে একচেটিয়া রাজত্ব করেছিল ছাত্রলীগ। প্রথম বর্ষ থেকে শিক্ষার্থী ওঠানো, কক্ষ বণ্টন সব কিছুই ছিল ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের হাতে। হলে থাকার বিনিময়ে ধারণ করতে হতো ছাত্রলীগের মতাদর্শ এবং অংশ নিতে হতো নিয়মিত গেস্টরুমের প্রোগ্রামে। যারা প্রোগ্রামে নিয়মিত কিংবা অনিয়মিত সেই হিসাব নেওয়া হতো। যারা নিয়মিত অংশ নিত তাদের প্রমোশন দিয়ে এক কক্ষ থেকে অন্য কক্ষে শিফট করা হতো। যারা অনিয়মিত তাদের আবার এক কক্ষ থেকে অন্য কক্ষে পাঠানো হতো, যেখানে কষ্টে গাদাগাদি করে থাকতে হয় শিক্ষার্থীদের। এ ছাড়া ছাত্রলীগ নেতারা প্রথম বর্ষের ছাত্রদের হলে চলার আদব-কায়দা শিখিয়ে দিতেন। হরহামেশাই গেস্টরুমে নির্যাতন এবং গালাগাল ছিল নিত্যঘটনা। তুলনামূলকভাবে মারধর কমলেও মানসিক নির্যাতন অব্যাহত আছে। এ নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বহু দিনের চাপা ক্ষোভ রয়েছে। তাই বেছে বেছে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের কক্ষ ভাঙচুর করা হয়েছে বলে জানান সাধারণ শিক্ষার্থীরা। 

গত ২৩ জুলাই দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক যৌথ সভায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ছাত্রলীগের নেতাদের একহাত নেন। সভায় কোটা সংস্কার আন্দোলন প্রতিরোধে ছাত্রলীগের কার্যক্রম নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন ওবায়দুল কাদের। তিনি প্রশ্ন তোলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোটা সংস্কার আন্দোলন কেন রাজধানীসহ পুরো দেশে ছড়িয়ে পড়ল? এ জন্য রাতের আঁধারে হল ছেড়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কেন চলে এসেছে ছাত্রলীগ? এ নিয়ে ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালি আসিফ ইনানের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করেন ওবায়দুল কাদের। ছাত্রলীগ নেতাদের বিভিন্ন হলরুমে হামলার প্রসঙ্গ তুলে ধরে তাদের সংগঠনটির শীর্ষ নেতাদের উদ্দেশে ওবায়দুল কাদের বলেন, ছাত্রলীগ কেন বেলুনের মতো চুপসে গেল? আর নেতারা যদি হল ছেড়ে না আসত, তাহলে হয়তো এই অবস্থা হতো না। এত বছরেও কেন ছাত্রলীগ নেতারা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক তৈরি করতে পারেনি। নেতাদের সঙ্গে কর্মীদের সমন্বয়ের অভাব রয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। 

এ সভা শেষে সাদ্দাম ও ইনান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে কথা বলতে চেয়ে একাধিকবার ব্যর্থ হয়েছেন বলে জানা গেছে। ওবায়দুল কাদের তাদের সঙ্গে কথা বলবেন না বলে জানিয়ে দেন। 

সভা শেষে আওয়ামী লীগের উচ্চ পর্যায়ের এক নেতা মন্তব্য করেন, যেসব নেতা দায়িত্বশীল পদে থেকে আন্দোলন অংশ নেন না বা আন্দোলন মোকাবিলায় ব্যর্থ হন, তাদের উচিত ব্যর্থতার দায় নিয়ে সম্মেলন করে দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়া। আওয়ামী লীগে এমন রেওয়াজ রয়েছে। 

ভিপি নূর ফর্মুলায় ডাকসুর শীর্ষ পদের বাসনা: ২০১৮ সালে বাংলাদেশে কোটা সংস্কার আন্দোলনের পর পরই নজরে আসেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে ভিপি নুরুল হক নূর। দীর্ঘ ২৮ বছর পর সেই অচলায়তন ভেঙে ২০১৯ সালে ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। গুঞ্জন উঠেছে, এই শীর্ষ তিন নেতার ডাকসুর শীর্ষ পদ বাগিয়ে নেওয়ার স্বপ্ন। তাই অনেকটাই নিশ্চুপ ভূমিকায় ছিলেন তারা। নিশ্চুপ থাকলেও কোটা আন্দোলনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের বাধা দেওয়ার অভিযোগ ওঠে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে, দেওয়া হয় হলের মূল ফটকে তালা। যদিও এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতারা।

ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেনের সঙ্গে ফোনে কথা হয় খবরের কাগজের প্রতিবেদকের। অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ভাই পরে ফোন করব।’ এই বলে ফোন কেটে দেন। এসব বিষয়ে জানতে চাইলে সাধারণ সম্পাদক ইনানও একই কথা বলেন। পরে তারা ফোন রিসিভ বা ব্যাক করেননি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সৈকত খবরের কাগজকে বলেন, ‘ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা নেত্রীর (শেখ হাসিনা) নির্দেশ মেনেছেন। আমি হল ছাড়তে চাইনি। তবে নেত্রীর নির্দেশ না মেনে উপায় নেই (ছিল না)। কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক (সাদ্দাম-ইনান) হল ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছেন। ফলে আমাদের কী করার আছে?’

শিক্ষার্থীদের আন্দোলন যৌক্তিক উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘২০১৮ সালে যখন কোটা আন্দোলন শুরু (ভিপি নূরের সময়) হয়, তখন দলের কোনো নির্দেশনা ছিল না। তাই আমি সাধারণ শিক্ষার্থীদের হয়ে কোটা সংস্কারের পক্ষে পুলিশের সামনে বুক পেতে দাঁড়িয়েছি। এবারও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিয়েছেন।’

৭০ প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব জব্দ

প্রকাশ: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:৫০ এএম
আপডেট: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:৫২ এএম
৭০ প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব জব্দ
আমদানি, রপ্তানি ও উৎপাদনে আর্থিক অনিয়ম করায় ৭০টি প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব জব্দ করেছে ঢাকা কাস্টমস বন্ড কমিশনারেটের

আর্থিক অনিয়ম করায় ৭০টি প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে। জাল কাগজপত্র দিয়ে শুল্কমুক্ত সুবিধায় ১ হাজার ৩০০ কোটি টাকার কাঁচামাল আমদানি করে খোলাবাজারে বিক্রি করে দিয়েছে এসব প্রতিষ্ঠান।

বিগত সরকারের শেষ সময়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) ঢাকা কাস্টমস বন্ড কমিশনারেটের (দক্ষিণ) করা তদন্ত প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা যায়।

প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে জানা যায়, ৭০টি প্রতিষ্ঠানের গত পাঁচ বছরের আমদানি, রপ্তানি ও উৎপাদনের তথ্য খতিয়ে দেখে গরমিল পাওয়া গেছে। শাস্তি হিসেবে এই ৭০টি প্রতিষ্ঠানের বন্ড সুবিধা বাতিল করা হয়েছে। আমদানি-রপ্তানির লাইসেন্স স্থগিত এবং ব্যবসা চিহ্নিতকরণ নম্বর (বিন) বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এ অপকর্মের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে এনবিআর মামলা করেছে। এসব প্রতিষ্ঠানের প্রকৃত মালিকদের খোঁজ পাওয়া যায়নি। তবে সন্ধান চলছে। 

সরকার রপ্তানি উৎসাহিত করতে শতভাগ রপ্তানিমুখী প্রতিষ্ঠানকে কাঁচামাল আমদানিতে ‘বন্ড সুবিধা’ নামে শুল্কমুক্ত সুবিধায় কাঁচামাল আমদানির সুবিধা দিয়েছে। এই ৭০টি প্রতিষ্ঠান বন্ড সুবিধা নিয়ে শুল্কমুক্ত কাঁচামাল আমদানি করেছে। এর মধ্যে ২৭টি প্রতিষ্ঠানের বাস্তবে কোনো অস্তিত্বই নেই। জাল কাগজপত্র দেখিয়ে ব্যাংকের মাধ্যমে এলসি খুলে এসব অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠানের নামেও শুল্ক না দিয়ে আমদানি করা কাঁচামালের সবটা বাজারে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। বাকি ৪৩টি প্রতিষ্ঠানের রপ্তানি করা পণ্য তৈরিতে যতটা কাঁচামাল প্রয়োজন ছিল, মিথ্যা তথ্য দিয়ে তারচেয়ে কয়েক গুণ বেশি কাঁচামাল আমদানি করেছে। আমদানি করা অতিরিক্ত কাঁচামাল বাজারে বিক্রি করে দিয়েছে।

এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মো. আবদুল মজিদ খবরের কাগজকে বলেন, শুধু বন্ড অনিয়মে সরকার বছরে প্রায় ১ লাখ কোটি টাকার রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে। রপ্তানি উৎসাহিত করতে শুল্কমুক্ত কাঁচামাল আমদানির সরকারি সুবিধা দেওয়া হয়েছে। শুল্ক না দিয়ে আনলে কম দাম পড়ছে। অন্যদিকে একই জাতীয় কাঁচামাল দেশি প্রতিষ্ঠান নিয়মকানুন মেনে রাজস্ব পরিশোধ করে উৎপাদন করে ন্যূনতম লাভ রেখে বিক্রি করলেও শুল্কমুক্তভাবে আমদানি করা কাঁচামালের চেয়ে বেশি দাম পড়ছে। কম দামে পাওয়া যাওয়ায় ক্রেতা বেশি দিয়ে কিনছেন না। আর এভাবেই দেশি শিল্প অসম প্রতিযোগিতায় পড়ছে। আমদানিকারক অসৎ ব্যবসায়ীদের কারণে নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে দেশি শিল্প। এরা সংঘবদ্ধ চক্র। বছরের পর বছর অবৈধ ব্যবসা করেও ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকছে।

তৈরি পোশাক খাতের সংগঠন বিকেএমইএ সভাপতি মো. হাতেম খবরের কাগজকে বলেন, যারা শুল্কমুক্তভাবে কাঁচামাল আমদানি করে উৎপাদনে না লাগিয়ে অবৈধভাবে বাজারে বিক্রি করছেন তারা অসাধু ব্যক্তি। এদের কারণে সৎ ব্যবসায়ীরা বিপদে পড়ছেন। তবে এদের একার পক্ষে এ অপকর্ম করা সম্ভব না। এদের কাছ থেকে অনৈতিক সুবিধা নিয়ে এনবিআর ও ব্যাংকের কিছু অসাধু ব্যক্তি সহযোগিতা করছেন। সবাইকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।

বন্ড কমিশনারেটের প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে জানা যায়, সম্পূর্ণ রপ্তানিমুখী প্রতিষ্ঠান হিসেবে এই ৭০টি প্রতিষ্ঠান এনবিআরে তালিকাভুক্ত হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠান বিনা শুল্কে সুতা, কাপড়, হ্যাঙ্গার, পলিথিন, শার্টের কলার, হাতায় ব্যবহৃত শক্ত কাগজ, আর্ট কার্ড, ডুপ্লেক্স বোর্ড, মিডিয়াম পেপার, লাইনার পেপার আমদানি করেছে। বৈদ্যুতিক তারসহ বিভিন্ন বৈদ্যুতিক সরঞ্জামাদি, সকেট, পলিপ্রোপাইলিন (পিপি), বিএপিপি ও অ্যাডহেসিভ টেপ, প্লাস্টিক দানা, রাসায়নিক দ্রব্য, রডও আমদানি করেছে।

প্রসঙ্গত, বন্ড সুবিধা পাওয়ার অন্যতম শর্ত হলো, রপ্তানির জন্য পণ্য তৈরিতে যতটা কাঁচামাল প্রয়োজন, ঠিক ততটাই আমদানি করতে হবে। প্রয়োজনের চেয়ে একটুও বেশি আনা যাবে না। আমদানির সবটা কাঁচামাল কারখানায় পণ্য উৎপাদনে ব্যবহার করার আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কোনো কারণে যদি পণ্য উৎপাদনের পর কাঁচামাল অবশিষ্ট থাকে, তবে তা এনবিআরের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে বাজারে বিক্রি করে দিতে পারবে। এ ক্ষেত্রে হিসাব কষে শুল্ক-কর-ভ্যাট দিতে হবে। এসব নিয়ম না মানলে বন্ড সুবিধা বাতিল হবে। রাজস্ব আইন অনুসারে শাস্তি হবে। ৭০টি প্রতিষ্ঠান এসব শর্ত ভঙ্গ করেছে। 

প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, এ প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রকৃত মালিকরা আড়ালে থেকে এসব অপকর্ম করিয়েছেন। তারা ভাড়া করা লোক দিয়ে আমদানি করা কাঁচামাল বন্দর থেকে ছাড়িয়ে আনা ও পরিবহনে তুলে দেওয়ার কাজ করিয়েছেন। পরিবহনচালকের কাছে ঠিকানা বুঝিয়ে দিয়ে ভাড়া করা লোকরা সরে পড়েছেন। চালক নির্দিষ্ট ঠিকানামতো কাঁচামাল পৌঁছে দিয়েছেন। গুদামের দায়িত্বে থাকা অন্য ব্যক্তিরা এসব মাল বুঝে নিয়েছেন। এসব ভাড়া করা লোকের কাজের বিনিময়ে পারিশ্রমিক মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। এরা কেউই প্রকৃত মালিকদের খোঁজ জানেন না। গুদামের দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিরা শুল্কমুক্ত কাঁচামাল দোকানে বিক্রি করে দিয়েছেন। বিক্রি করে পাওয়া অর্থ মোবাইল ব্যাংকিং বা নির্দিষ্ট ব্যাংক হিসাবে জমা দিয়েছেন। এসব পণ্য এনে রাজধানীর পুরান ঢাকার ইসলামপুর, হাতেম টাওয়ার, উর্দু রোড, গাউছিয়া, নিউ মার্কেট, টঙ্গী, যাত্রাবাড়ী, গুলিস্তান, চট্টগ্রামের বকশীবাজারের বিভিন্ন দোকানে বিক্রি করে দিয়েছেন; যা এসব দোকান থেকে সাধারণ ক্রেতারা কিনে নিচ্ছেন। 

নরসিংদীর বাবুরহাট, মাধবদী, নারায়ণগঞ্জের টানবাজার এলাকায়, সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর, এনায়েতপুর, সোহাগপুর ও বেলকুচিতে বন্ডের সুতা বিক্রি করা হয়েছে। এসব এলাকার বিভিন্ন দোকানে বিনা শুল্কে আনা কাঁচামাল কোনো রাখঢাক ছাড়াই বিক্রি হচ্ছে। ৭০টি প্রতিষ্ঠানের অসাধু মালিকরা নিজস্ব প্রতিনিধি পাঠিয়ে অধিকাংশ সময়ে আগেই জেনে নিয়েছেন কোন দোকানে কোন পণ্য কতটা প্রয়োজন। অনেক সময় অগ্রিমও নিয়ে নিয়েছেন। কৌশলে সুবিধামতো সময়ে ভাড়া করা লোক দিয়ে পণ্য পৌঁছে দিয়েছেন। দেশে উৎপাদিত পণ্যের চেয়ে কম দামে পাওয়া যাওয়ায় খুচরা ও পাইকারি পর্যায়ে আগ্রহের সঙ্গেই এসব কিনেছেন।

ছাত্ররাজনীতি বন্ধের দাবি ফের চ্যালেঞ্জের মুখে ঢাবির একাডেমিক কার্যক্রম

প্রকাশ: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:০৫ এএম
আপডেট: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:১৯ এএম
ফের চ্যালেঞ্জের মুখে ঢাবির একাডেমিক কার্যক্রম
ঢাবির কার্জন হল। ছবি: সংগৃহীত

ছাত্ররাজনীতি বন্ধের ইস্যুতে আবারও চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে যাচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) একাডেমিক কার্যক্রম। আগামী ২২ সেপ্টেম্বর থেকে ক্লাস শুরুর সিদ্ধান্তের ফলে প্রায় ৮৩ দিন পর একাডেমিক কার্যক্রম চালুর সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল। কিন্তু শিক্ষার্থীরা ছাত্ররাজনীতি বন্ধ ঘোষণা না করলে ক্লাসে ফিরবেন না বলে জানিয়েছেন। তারা কার্যকর ছাত্র সংসদের দাবি করছেন। ফলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের ইতিবাচক কর্মকাণ্ডের (গণরুম বন্ধ করে মেধার ভিত্তিতে সিট বরাদ্দ) পরেও শ্রেণি কার্যক্রম চালু করা নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। 

চলতি বছরের ১ জুলাই থেকে সর্বজনীন পেনশনের প্রত্যয় স্কিম বাতিলসহ তিন দফা দাবিতে সর্বাত্মক কর্মবিরতিতে নামেন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। বন্ধ হয়ে যায় একাডেমিক কার্যক্রম। এর মাঝে শুরু হয় চাকরিতে কোটা সংস্কারের আন্দোলন। ১৭ জুলাই থেকে কোটা সংস্কার আন্দোলনের উদ্ভূত পরিস্থিতির মধ্যে অনির্দিষ্টকাল বন্ধ ঘোষণা করা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। তবে ২০ দিন পর ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতন হলে ৬ আগস্ট খোলে বিশ্ববিদ্যালয়। প্রশাসনিক কার্যক্রম চালু হলেও স্থবিরতা দেখা দেয় একাডেমিক কার্যক্রমে। সিন্ডিকেটের এক জরুরি সভায় গত বৃহস্পতিবার সিদ্ধান্ত আসে ২২ সেপ্টেম্বর থেকে একাডেমিক কার্যক্রম শুরু হবে। একে একে হলগুলোতে বৈধ শিক্ষার্থীদের সিট দেওয়ার পাশাপাশি গণরুম-গেস্টরুম বন্ধ হলেও শিক্ষার্থীদের আরেক দাবি দলীয় রাজনীতিমুক্ত ক্যাম্পাস।

গত কয়েক দিন ধরে ‘দলীয় রাজনীতিমুক্ত ক্যাম্পাস আন্দোলন’ ব্যানারে বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী দুই দফা দাবিতে উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি প্রদান, অবস্থান কর্মসূচি, বিক্ষোভ মিছিল কর্মসূচি পালন করেছেন। ধারাবাহিক কর্মসূচির অংশ হিসেবে আজ রবিবার উপাচার্যের বাসভবনসংলগ্ন স্মৃতি চিরন্তনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। আগামী ২২ সেপ্টেম্বরের মধ্যে দলীয় রাজনীতিমুক্ত ক্যাম্পাস বিষয়ে যদি কোনো ধরনের আশ্বাস প্রদান ও কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা না হয় ধারাবাহিকভাবে কঠোর কর্মসূচিতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেবেন তারা। 

এই আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগের শিক্ষার্থী নাফিউর রহমান খবরের কাগজকে বলেন, ‘ছাত্র-জনতার অংশগ্রহণে জুলাই বিপ্লবের মধ্যে দেশ নতুনভাবে স্বাধীন হয়েছে। হল-ক্যাম্পাসে দলীয় দখলদারত্ব এবং লেজুড়বৃত্তির যে রাজনীতি ছিল, তার অবসান হয়েছে। আমরা চাই না, সেসব আবার ফিরে আসুক। আমাদের যে আন্দোলন ছিল, সেই আন্দোলনের নয় দফার মধ্যে কিন্তু একটি দফা ছিল দলীয় রাজনীতির অবসান। আমরা চাই, ক্যাম্পাসে শিক্ষক-শিক্ষার্থী-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দলীয় রাজনীতি- এগুলো যেন ফিরে না আসে। আমাদের শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে বিরাজনীতিকীকরণের পক্ষে নয়, আমরা চাই সুস্থ ধারার ছাত্ররাজনীতি, যা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত করতে চায়।’

আন্দোলনকে আরও বেগবান করতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা সংঘবদ্ধ হচ্ছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শ্রেণি প্রতিনিধিদের সঙ্গে আমাদের কথা হচ্ছে। রবিবার আমাদের অবস্থান কর্মসূচি রয়েছে। এ ছাড়া ২২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আমাদের সময় রয়েছে। এই সময়ের মধ্যে নানাভাবে আমরা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে চাপ দেব যেন তারা আমাদের কথা শোনেন। দলীয় রাজনীতিমুক্ত যে ক্যাম্পাস সেটি মেনে নিলে অবশ্যই আমরা ক্লাসে ফিরব। যদি না মেনে নেন, আমরা ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে কঠোর কর্মসূচিতে যাব। গত শুক্রবার প্রক্টর স্যারের সঙ্গে কথা হয়েছে, তিনি আমাদের বলেছেন শিক্ষার্থীরা যদি নিয়মতান্ত্রিক ও ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন চালিয়ে নিয়ে যেতে পারে অবশ্যই উপাচার্য আমাদের যে দাবি সেটি মেনে নিবেন।’

সেশনজট কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে এমন প্রসঙ্গ উল্লেখ করে আন্দোলনের আরেক সংগঠক সমাজবিজ্ঞান স্নাতকোত্তরে অধ্যয়নরত ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘সেশনজট আরও বৃদ্ধি পাবে এটি ঠিক, তবে তা কিন্তু কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে, কিন্তু ফ্যাসিস্ট সিস্টেমের মাধ্যমে কেউ দলীয় রাজনীতির এজেন্ডা বাস্তবায়ন, দখলদারত্ব এবং রাজনৈতিক কার্যালয় থেকে যে হুকুম আসবে সেটি বাস্তবায়ন করবে আমরা এমন রাজনীতি চাই না। ইতোমধ্যে রক্ত দিয়ে ফ্যাসিস্ট সরকারকে তাড়িয়েছি, এখন আমরা এই সিস্টেম আর চাই না। এখন আমাদের যদি ক্ষতিও হয়, তারপরও এই ফ্যাসিস্ট দলীয় রাজনীতির যে সিস্টেম সেটি উৎখাত করব।’

ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘দেশের সব কিছুর মধ্যেই গতিশীলতা ফিরলেও এখনো একাডেমিক স্থবিরতার মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। যার ফলে সেশনজটের পাশাপাশি চাকরির বাজার থেকে আমাদের একটি দূরত্ব সৃষ্টি হচ্ছে। বলা হচ্ছে, ২২ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস শুরু হবে কিন্তু আমাদের যে আন্দোলন সেখানে কিন্তু একটা অন্যতম দাবি ছিল দলীয় রাজনীতিমুক্ত ক্যাম্পাস নিশ্চিত করা। সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত না নিয়ে ক্লাস শুরুর সিদ্ধান্ত নিলেন। আমরা তো এমন ক্যাম্পাস চাইনি।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ক্লাস-পরীক্ষায় শুরুর পক্ষে অবস্থান নিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘আমরা এখনই ক্লাস-পরীক্ষায় বসতে রাজি কিন্তু ক্যাম্পাস-হলে দলীয় রাজনীতি থাকবে, এটির পক্ষে তো আমরা না। হলগুলোতে যেহেতু ছাত্রসংগঠনগুলোর প্রতিপত্তি নেই, শিক্ষার্থীরা অনেক ভালো আছেন। আমরা চাই অবিলম্বে ক্যাম্পাসকে দলীয় রাজনীতিমুক্ত ঘোষণা করে ছাত্র সংসদ নির্বাচন দেওয়া হোক, যেন শিক্ষার্থীদের কথা বলা ও সুস্থ রাজনীতি চর্চা করার একটি জায়গা তৈরি হয়।’

চলতি বছরে স্নাতকোত্তর শেষ হওয়ার কথা ছিল সংস্কৃত বিভাগের আরিফুল ইসলামের, কিন্তু তিনি সবে স্নাতক শেষ করেছেন। তিনি খবরের কাগজকে বলেন, ‘চলতি বছরে স্নাতক শেষ হওয়ার কথা ছিল কিন্তু সেখানে কেবল স্নাতক শেষ হলো, বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষের উচিত যারা সেশনজটে পড়েছে তাদের একাডেমিক সেশনজট কাটাতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা।’

সার্বিক বিষয়ে খবরের কাগজের সঙ্গে কথা হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. মামুন আহমেদের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘ছাত্ররাজনীতি বন্ধের যে কথা বলা হচ্ছে, আমার মনে হয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সেটি বিবেচনা করে দেখবেন।’

সেশনজট প্রসঙ্গে বলেন, ‘ইতোমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করতে শুরু করেছেন, ধীরে ধীরে সব কিছুই নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে। তাছাড়া আমি তো সবে যোগদান করেছি। কাজকর্ম শুরু করলে ধীরে ধীরে সব কিছু নিয়ে কাজ করা যাবে। তখন হয়তো পুরো বিষয়টি বোঝা যাবে।’

ঝুলন্ত সেতু ডুবে থাকায় হতাশ পর্যটকরা

প্রকাশ: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:৩৯ পিএম
ঝুলন্ত সেতু ডুবে থাকায় হতাশ পর্যটকরা
রাঙামাটির ৩৩৫ ফুট দৈর্ঘ্যের ঝুলন্ত সেতুটি এখন তিন ফুট পানির নিচে ডুবে রয়েছে। ফলে সেতু ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। এতে হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন পর্যটকরা। ছবি: খবরের কাগজ

রাঙামাটির জনপ্রিয় পর্যটন আকর্ষণ ৩৩৫ ফুট দৈর্ঘ্যের ঝুলন্ত সেতু বর্তমানে তিন ফুট পানির নিচে ডুবে রয়েছে। এতে পর্যটকদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে সেতু ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। এই কারণে গত ২৩ আগস্ট থেকে বাণিজ্যিক টিকিট বিক্রি বন্ধ রয়েছে। যার ফলে সেতু এলাকায় ঘুরতে এসে হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন পর্যটকরা।

সেতু কর্তৃপক্ষের মতে, বর্তমানে দৈনিক গড়ে ৭০ হাজার টাকা রাজস্ব ক্ষতি হচ্ছে। গত ২২ দিনে মোট ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৫ লাখ টাকার বেশি। প্রতিবছর ৫ লাখের বেশি দেশি-বিদেশি পর্যটক ঝুলন্ত সেতু দেখতে আসেন এবং সেতু কর্তৃপক্ষ বছরে প্রায় আড়াই কোটি টাকা আয় করে থাকে প্রবেশ ফি, গাড়ি পার্কিং এবং ট্যুরিস্ট বোট ইজারা থেকে।

১৯৬০ সালে কাপ্তাই জলবিদ্যুৎকেন্দ্রের বাঁধ নির্মাণের পর ১৯৮৫ সালে এই ঝুলন্ত সেতুটি নির্মিত হয়। রাঙামাটির পর্যটন কমপ্লেক্স এলাকায় এসে পর্যটকরা প্রথমেই সেতুটি দেখতে যান। কিন্তু সেতু ডুবে থাকায় পর্যটকরা হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন। 

পাবনা থেকে পরিবার নিয়ে সেতু দেখতে আসা শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘এই প্রথম আসলাম। কিন্তু এসেই হতাশ হলাম। সেতু ডুবে আছে। বাচ্চারা বলেছিল, সেতুতে ছবি তুলবে। তা আর হলো না। এখন সবারই মন খারাপ।’ 

চট্টগ্রামের হাটহাজারী থেকে আসা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘রাঙামাটি ঝুলন্ত সেতু দেখতে এসেছি। কিন্তু এখানে এসে দেখলাম সেতু ডুবে আছে। খুবই খারাপ লাগছে। আগে জানলে আসতাম না।’

ঝুলন্ত সেতুর টিকিট কাউন্টারের দায়িত্বে থাকা সোহেল খান বলেন, ‘সাধারণ ছুটির দিনে দেড় থেকে দুই হাজার পর্যটক আসেন। বিশেষ ছুটির দিনে এই সংখ্যা ৭ থেকে ১২ হাজার পর্যন্ত চলে যায়। কিন্তু গত ২৩ আগস্ট থেকে সেতু ডুবে থাকায় টিকিট বিক্রি বন্ধ রেখেছি এবং পর্যটকরা টিকিট ছাড়াই ঘুরে যাচ্ছেন।’

রাঙামাটি পর্যটন হলিডে কমপ্লেক্সের ব্যবস্থাপক আলোক বিকাশ চাকমা বলেন, সেতুর পাটাতন বর্তমানে তিন ফুট পানির নিচে রয়েছে। পর্যটকদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে এবং বাণিজ্যিক টিকিট বিক্রি বন্ধ রাখা হয়েছে। পানি কমলে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হবে।

বৃষ্টি হলে কাপ্তাই হ্রদের পানি ধারণক্ষমতা কমে যাওয়ায় সেতু ডুবতে শুরু করে। হ্রদের পানি বিপৎসীমার কাছাকাছি পৌঁছলে কাপ্তাই বাঁধের ১৬টি জলকপাট খুলে পানি বের করা হয়। কিন্তু উজান থেকে পানি নামতে ধীরগতিতে চলায় হ্রদের পানির উচ্চতা কমছে খুবই ধীরে।

যৌথ অভিযানের প্রস্তুতি জেনেভা ক্যাম্পের বাসিন্দারা আতঙ্কে

প্রকাশ: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১১:৫৯ এএম
আপডেট: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬:৪৭ পিএম
জেনেভা ক্যাম্পের বাসিন্দারা আতঙ্কে
অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধারে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের জেনেভা ক্যাম্পে যৌথ বাহিনীর অভিযানের প্রস্তুতি চলছে। ছবি : ইন্দ্রজিৎ কুমার ঘোষ

পুলিশের লুট হওয়া অস্ত্রসহ অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধারে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের জেনেভা ক্যাম্পে যৌথ বাহিনীর অভিযানের প্রস্তুতি চলছে। শিগগিরই অভিযান পরিচালনা করা হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ। 

বৃহস্পতিবার (১২ সেপ্টেম্বর)  খবরের কাগজকে এসব তথ্য জানান মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলী ইফতেখার হাসান। 

তিনি বলেন, জেনেভা ক্যাম্পে অস্ত্র উদ্ধারের জন্য একটি তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। সেখানে সেনাবাহিনীর সঙ্গে যৌথ অভিযান পরিচালনার জন্য প্রস্তুতি চলছে। এ ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। অনুমতি পেলেই উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করা হবে।

জেনেভা ক্যাম্পে সম্প্রতি গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে ও দুজন নিহত হয়েছেন। এ বিষয়ে ওসি জানান, লুট হওয়া অস্ত্র দিয়ে যে গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে এমনটি বলা যাচ্ছে না। তবে ক্যাম্পে মাদক ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে অন্যরা যেসব অস্ত্র ব্যবহার করছে তা সবই অবৈধ।

গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের দিন শুধু মোহাম্মদপুর থানা থেকেই লুট হয় ৭ শতাধিক ছোট-বড় অস্ত্র। মোহাম্মদপুর ও আদাবর থানা জানায়, এ পর্যন্ত এই দুই থানা থেকে পুলিশের লুট হওয়া ২২৩টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। আদাবর থানায় লুট হওয়া আরও ৬৮ আগ্নেয়াস্ত্র এখনো উদ্ধার হয়নি।

যৌথ অভিযানে অংশ নিচ্ছে সেনাবাহিনী, পুলিশ, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি), আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী, কোস্ট গার্ড ও র‌্যাব।

হাসিনা সরকারের পতনের দিন মোহাম্মদপুরের জেনেভা ক্যাম্পের (বিহারি ক্যাম্প) বেশির ভাগ বাসিন্দা ও মাদক ব্যবসায়ী সন্ধ্যার পর মোহাম্মদপুর ও আদাবর থানায় হামলা চালিয়ে অগ্নিসংযোগ করে। এ সময় লুট করা হয় পুলিশের অস্ত্র, পুড়িয়ে দেওয়া হয় গুরুত্বপূর্ণ নথি ও গাড়ি। 

অন্যদিকে অভিযোগ রয়েছে পুলিশ ও থানা থেকে লুট করা অস্ত্র দিয়ে প্রতিদিনই গোলাগুলির ঘটনা ঘটছে জেনেভা ক্যাম্পে। আধিপত্য বিস্তার আর মাদক ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দ্বন্দ্বই এর মূল কারণ বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। ক্যাম্পের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তারা। গোলাগুলির ঘটনায় সম্প্রতি দুজন নিহত এবং শতাধিক আহত হয়েছেন।

জেনেভা ক্যাম্পের বাসিন্দারা জানান, গত মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে ক্যাম্পের পরিবেশ উত্তেজিত হয়ে উঠেছে। প্রতিদিন মাদক বিক্রির টাকা নিয়ে মুরগি পট্টিতে গোলাগুলির ঘটনা ঘটছে। এ ঘটনায় পুলিশের লুট হওয়া অস্ত্র ব্যবহার হচ্ছে। বাসিন্দারা নিরাপত্তা চান। এ বিষয়ে তারা অন্তর্বর্তী সরকারের সহযোগিতা কামনা করেন। 

স্থানীয়দের অভিযোগ, ছাত্র আন্দোলন দমনে স্থানীয় কাউন্সিলর সৈয়দ হাসানুর ইসলাম রাস্টন ক্যাম্পের মাদক ব্যবসায়ীদের হাতে তুলে দেন অস্ত্র। স্থানীয়রা দাবি করেন, ৫ তারিখে লুট হওয়া বেশির ভাগ অস্ত্র জেনেভা ক্যাম্পের লোকদের হাতে চলে এসেছে। এখন যে যার স্বার্থ সিদ্ধির জন্য সেই অস্ত্র ব্যবহার করছে। 

এই ক্যাম্পের একজন মাদক ব্যবসায়ী জানান, মাদকের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ভূঁইয়া সোহেল ও চুয়া সেলিম বাহিনীর মধ্যে দ্বন্দ্ব বহু দিনের। তবে দেশীয় অস্ত্রের বদলে এখন সেখানে চলছে প্রকাশ্যে গোলাগুলি।

গত ৬ আগস্ট গোলাগুলিতে নিহত হন ক্যাম্পের বাসিন্দা শাহেন শাহ। আর চলতি মাসের ৪ তারিখে মারা যান অটোরিকশা চালক মোহাম্মদ সনু। সনুর স্ত্রী জানান, গুলি করে তার স্বামীকে হত্যা করা হয়েছে। তিনি সরকারের কাছে এই হত্যার বিচার দাবি করেন। 

জেনেভা ক্যাম্পে গত ২৯ আগস্ট মাদক নিয়ে দুই গ্রুপের সংঘর্ষ হয়। এ সময় এখানকার বাসিন্দা মোহাম্মদ মিন্টুর গায়ে ছররা গুলি লাগে। তিনি খবরের কাগজকে বলেন, ‘এ যাত্রায় প্রাণে বেঁচে গেলেও প্রতিদিনই আতঙ্কে দিন কাটছে ক্যাম্পের বাসিন্দাদের। মাদক বিক্রির টাকার ভাগাভাগি নিয়ে প্রায় প্রতিদিন গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। আমাদের কোনো নিরাপত্তা নেই।’ এ সময় তিনি ক্যাম্পের অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের জন্য সরকারের সহযোগিতা কামনা করেন। 

দাম কম ঝাঁজ বেশি, পাকিস্তানি পেঁয়াজেই ক্রেতার আগ্রহ

প্রকাশ: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৮:৫৫ এএম
আপডেট: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৯:৪২ এএম
দাম কম ঝাঁজ বেশি, পাকিস্তানি পেঁয়াজেই ক্রেতার আগ্রহ
চট্টগ্রাম বন্দরে কনটেইনারের ভেতর আমদানি করা পেঁয়াজ। ছবি: খবরের কাগজ

চট্টগ্রামের মানুষ দেশি ও ভারতীয় পেঁয়াজের ওপর বেশি নির্ভরশীল। তবে এসব পেঁয়াজের দাম বেশি। দুই মাস ধরে খাতুনগঞ্জে পাকিস্তান ও মিসরীয় পেঁয়াজের সরবরাহ বেড়েছে। এর মধ্যে তুলনামূলক দাম কম ও ঝাঁজ বেশি থাকায় পাকিস্তানি পেঁয়াজের প্রতি আগ্রহ বেড়েছে সাধারণ ক্রেতাদের।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, খাতুনগঞ্জে দুই মাস আগে পাইকারিতে মিসরীয় পেঁয়াজ কেজিপ্রতি ৯০ থেকে ৯৫ টাকা ও পাকিস্তানি পেঁয়াজ কেজিপ্রতি ১০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। বর্তমানে পাইকারিতে দাম কমে পাকিস্তানি পেঁয়াজ ৮৩ টাকা ও মিসরের পেঁয়াজ ৭৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে বর্তমানে দেশি পেঁয়াজ আকারভেদে ৯৮ থেকে ১০২ টাকায়, ভারতীয় পেঁয়াজ ১০০ থেকে ১০৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দাম বেশি থাকায় এসব পেঁয়াজে আগ্রহ নেই সাধারণ ক্রেতাদের।

নগরের নাসিরাবাদ এলাকার বাসিন্দা মো. দিদারুল আলম খবরের কাগজকে বলেন, ‘বর্তমানে মুদির দোকান থেকে প্রতি কেজি মিসরীয় পেঁয়াজ ৯০ থেকে ৯২ টাকায় এবং পাকিস্তানি পেঁয়াজ ৯০ টাকায় কেনা যাচ্ছে। অন্যদিকে দেশি ও ভারতীয় পেঁয়াজ কিনতে গেলে কেজিপ্রতি ১১০ থেকে ১১৫ টাকা গুনতে হয়। এর চেয়ে পাকিস্তানি পেঁয়াজের ঝাঁজ ভালো, দামও কেজিপ্রতি ২০ টাকা কম। এটাই বেশি কিনছি।’

নগরের ষোলশহর এলাকার আল আমিন স্টোরের মালিক মো. নুরুল আমিন খবরের কাগজকে বলেন, ‘দেশি ও ভারতীয় পেঁয়াজের দাম একই থাকায় কয়েক মাস আগেও মানুষ ভারতীয় পেঁয়াজ বেশি কিনেছিলেন। বর্তমানে পাকিস্তানি পেঁয়াজের দাম কমে আসায় মানুষ এখন এদিকেই ঝুঁকেছেন। তাই আমিও এখন পাকিস্তানি পেঁয়াজ বেশি রাখছি।’

খাতুনগঞ্জের হামিদুল্লাহ মিয়া মার্কেট ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. ইদ্রিস খবরের কাগজকে বলেন, ‘পাকিস্তান, চীন, মিসর, থাইল্যান্ড থেকে পেঁয়াজ আমদানির জন্য এলসি খুলে থাকেন আমদানিকারকরা। তবে এ বছর সবচেয়ে বেশি পেঁয়াজ এসেছে পাকিস্তান থেকে। ভারতীয় পেঁয়াজ দেখতে সুন্দর ও ঝাঁজ থাকায় এ পেঁয়াজের প্রতি মানুষের আগ্রহ ছিল। কিন্তু দাম কমে আসায় ও ঝাঁজ বেশি থাকায় পাকিস্তানি পেঁয়াজ ওই জায়গা দখল করে নিয়েছে।’ 

পাকিস্তানি পেঁয়াজে পাথর পাওয়ার বিষয়টি ‘গুজব’ 
খাতুনগঞ্জে বেশির ভাগ সময় দেশি ও ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হয়ে থাকে। গত দুই মাস ধরে বৃহত্তর বাজারটিতে আসতে শুরু করে চীন, পাকিস্তান, তুরস্ক ও মিসরের পেঁয়াজ। সম্প্রতি পাকিস্তান থেকে আসা পেঁয়াজের বস্তায় দুই থেকে তিন কেজি ওজনের পাথর পাওয়া যাচ্ছে- এমন গুজব চট্টগ্রামে ছড়িয়ে পড়েছে। তবে খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, পাকিস্তানি পেঁয়াজের বস্তায় কোনো পাথর পাওয়া যায়নি। এটা গুজব। তবে মিসর ও তুরস্ক থেকে আসা পেঁয়াজের বস্তায় মাঝেমধ্যে পাথরের টুকরো পাওয়া যায়।

খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা আরও জানিয়েছেন, ২০২০ সাল থেকে চীন, পাকিস্তান, তুরস্ক ও মিসর থেকে আমদানি করা পেঁয়াজের বস্তায় পাথর পাওয়া যাচ্ছে। সেটা আবার সব কনটেইনার বা পেঁয়াজের বস্তায় নয়। বড়জোর একটা কনটেইনারে দুই থেকে তিনটি বস্তায় এ ধরনের ঘটনা ঘটে থাকে। এটা ইচ্ছাকৃত সেটাও বলা যাবে না। বিদেশের পাহাড়ি এলাকায় পেঁয়াজগুলো বস্তায় ভরা হয়। অনেক সময় ওই দেশি শ্রমিকদের গাফিলতি বা অসচেতনতার কারণে এমনটা হয়ে থাকে। কিন্তু এতে করে ব্যবসায়ীদের তেমন কোনো সমস্যা হচ্ছে না। একটি মহল বিষয়টিকে বাড়িয়ে বলে গুজব ছড়াচ্ছে।

খাতুনগঞ্জের হামিদুল্লাহ মিয়া মার্কেট ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. ইদ্রিস খবরের কাগজকে বলেন, ‘বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করা পেঁয়াজ শুধু খাতুনগঞ্জে নয়, দেশের অন্যান্য পাইকারি বাজারেও বিক্রি হচ্ছে। অন্য কোথাও থেকে অভিযোগ এল না। সম্প্রতি চট্টগ্রামের কাজীর দেউড়ি বাজারে একটি পেঁয়াজের বস্তায় কিছু পাথর পাওয়া যায়। এটাকে কেন্দ্র করে বড় ধরনের গুজব সর্বত্র ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। এটা মোটেও কাম্য নয়।’

চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্রের উপপরিচালক মোহাম্মদ শাহ আলম খবরের কাগজকে বলেন, ‘পেঁয়াজের বস্তায় পাথর পাওয়ার বিষয়টি আমরাও শুনেছি। আমরা নিজেরাও অবাক। কারণ পণ্যভর্তি একটি কনটেইনার যখন বিদেশ থেকে আমাদের বন্দরে আসে, আমরা কনটেইনার খুলে ওই পণ্যের গুণগতমান, পরিমাণ সবকিছু যাচাই করে দেখি। আমরা যখন পরীক্ষা করেছি, তখন আমাদের হাতে কোনো পাথর পড়েনি। এ রকম কিছু পেলে আমরাই সেটা আটকে দিতাম। তবে আমরা এখন থেকে পণ্য পরীক্ষার ক্ষেত্রে আরও বেশি কঠোর হব।’