এবার প্রায় শতকোটি টাকার গমের ডেলিভারি অর্ডার (ডিও) বিক্রি করে গা ঢাকা দিয়েছেন চট্টগ্রামের বৃহত্তম ভোগ্যপণ্যের বাজার খাতুনগঞ্জের এক ব্যবসায়ী।
তার নাম সরোয়ার। তার প্রতিষ্ঠানের নাম মেসার্স আয়ান ট্রেডিং।
গত রবিবার থেকে তার সঙ্গে কেউ যোগাযোগ করতে পারছেন না। এমনকি পরিবারের সঙ্গেও যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে বলে পরিবার দাবি করেছে।
গত জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে প্রায় অর্ধশত কোটি টাকার প্রতারণার ঘটনা ঘটে খাতুনগঞ্জে। সে সময় এলাচের ডিও বিক্রি করার পর তা সরবরাহ না করে লাপাত্তা হন নুর ট্রেডিংয়ের নাজিম উদ্দিন। তার হদিস এখনো মেলেনি। কেউ কেউ বলছেন, তিনি বিদেশ পাড়ি দিয়েছেন। দেশের অস্থিতিশীল পরিস্থিতি, ডলারের দাম বৃদ্ধি, পণ্যমূল্যের হঠাৎ উত্থান-পতনসহ নানা কারণে ব্যবসায়ীরা চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। এর মধ্যে আরেকটি বড় ধরনের প্রতারণার ঘটনা চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীদের দুশ্চিন্তা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
প্রতারণার শিকার খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ী আকতার খবরের কাগজকে জানান, তিনি সাড়ে ৩ কোটি টাকা সরোয়ারের কাছে পাবেন। তিনিসহ আরও অন্তত শতাধিক ব্যবসায়ী প্রতারণার শিকার হয়েছেন। গত রবিবার থেকে গা ঢাকা দিয়েছেন ব্যবসায়ী সরোয়ার। গত সোমবার পটিয়ার গ্রামের বাড়িতে যাওয়ার কথা উল্লেখ করে আকতার জানান, তার স্ত্রী জানিয়েছেন সরোয়ারের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ নেই।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যবসায়ী খবরের কাগজকে জানান, ব্যবসায়ী সরোয়ার দেশের একটি বৃহত্তর কোম্পানির গমের অন্যতম ব্রোকার হিসেবে খাতুনগঞ্জে ব্যবসা করেন। বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামের এক বড় ব্যবসায়ী নেতার পাওনা প্রায় ৩০ কোটি টাকা পরিশোধের পর ব্যবসায়ী সরোয়ার নগদ টাকাহীন হয়ে পড়েন। এরপর তার কাছে যে পরিমাণ গম এবং নগদ টাকা ছিল পাওনাদাররা তারচেয়ে অন্তত ৪০ কোটি টাকা বেশি পাবেন। পাওনাদারদের দেওয়া ব্যাংক চেক পাস হবে না এমন আশঙ্কা থেকে গা ঢাকা দিয়েছেন তিনি। এর পর থেকে তার মোবাইলও বন্ধ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যবসায়ী খবরের কাগজকে জানান, এ ধরনের প্রতারণার আগে খাতুনগঞ্জের বড় ব্যবসায়ীদের পাওনা টাকা আগে পরিশোধ করতে বাধ্য হয় প্রতারকরা। বড়দের অর্থাৎ প্রভাবশালীদের টাকা পরিশোধ হয়ে গেলে ছোটদের টাকা নিয়ে কেউ আর মাথা ঘামান না। এমনকি চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে ব্যবসায়ীদের যেসব সংগঠন রয়েছে, তাদের নেতারাও আর মাথা ঘামান না। ব্যবসায়ী নেতারা সালিশের মাধ্যমে টাকা আদায় করে দেবেন, এমন আশায় প্রতারণার শিকার ব্যবসায়ীরা আইনের আশ্রয়ও নেন না।
২০১৯ সালের পর গত পাঁচ বছরের মধ্যে চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে আর্থিক প্রতারণার ঘটনা ঘটেনি। ২০২৪ সালে এসে দুই মাসের মধ্যে পরপর দুটি প্রতারণার ঘটনা ব্যবসায়ীদের হতবাক করেছে। চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে ব্যবসাক্ষেত্রে আস্থা এবং বিশ্বাস হারিয়ে গিয়েছিল। তা যখন ধীরে ধীরে ফিরতে শুরু করেছে, তখন পরপর দুটি বড় ধরনের প্রতারণার ঘটনা সেই আস্থায় বড় ধরনের চিড় ধরিয়েছে।
খাতুনগঞ্জ ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ছৈয়দ ছগীর আহমদ খবরের কাগজকে জানান, গমের টাকা নিয়ে ব্যবসায়ীর উধাও হওয়ার খবর তিনিও শুনেছেন। যেহেতু কোনো ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী অ্যাসোসিয়েশনের কাছে অভিযোগ দেননি, তাই বিষয়টি নিয়ে তারা ঘাঁটাঘাঁটি করেননি। তিনি জানান, খাতুনগঞ্জে স্লিপের ওপর ভিত্তি করে ব্যবসা না করার জন্য অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে বারবার ব্যবসায়ীদের সতর্ক করা হয়েছে। তবু তারা বেআইনি কাজটি করে চলেছেন। যে কারণে স্লিপের মাধ্যমে টাকা দিয়ে প্রতারণার শিকার হলেও ব্যবসায়ীরা আইনের আশ্রয় নিতে পারেন না। স্লিপের মাধ্যমে ব্যবসা না করার জন্য তিনি ব্যবসায়ীদের প্রতি আবারও আহ্বান জানান।