ঢাকা ২৫ ভাদ্র ১৪৩১, সোমবার, ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪

‘আসামি আনে নাই, আদালতও বন্ধ, ছেলের জামিন হইবো ক্যামনে?’

প্রকাশ: ০৫ আগস্ট ২০২৪, ০৭:৪৭ পিএম
‘আসামি আনে নাই, আদালতও বন্ধ, ছেলের জামিন হইবো ক্যামনে?’

‘আন্দোলনের কারণে আইজ নাকি আর কোনো আসামিরে কোর্টে আনব না। এই দিকে ছেলেরা (আন্দোলনকারীরা) ঢুকার (আদালত অঙ্গনে) পর কোর্টও বন্ধ হইয়া গেল। তাইলে আইজ আর আমার ছেলের জামিন হইবো ক্যামনে?’

নিজের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার কথা এভাবেই প্রকাশ করছিলেন ফাহিমা আক্তার। গতকাল রবিবার বেলা ২টার দিকে খবরের কাগজের এই  প্রতিনিধির সঙ্গে ঢাকা চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালত ভবনের সামনে কথা হয় তার। তিনি জানান, কোটা সংস্কার আন্দোলনের মধ্যে সংঘর্ষের এক মামলায় তার ছেলেকে ধরে নিয়ে যায় পুলিশ। এদিন এসেছিলেন ছেলের জামিন শুনানি হওয়ার আশায়। কিন্তু বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারীদের ডাকা অসহযোগ কর্মসূচির মধ্যে আসামিদের আদালতে আনা হয়নি। আবার আন্দোলনকারীরা আদালত প্রাঙ্গণে ঢুকে পড়ার পর আদালতের কার্যক্রমও বন্ধ হয়ে গেছে। তাই এদিন আর তার ছেলের জামিন হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই বলে ফাহিমা আক্তারকে জানিয়েছেন তার আইনজীবী।

আলাপচারিতায় যুক্ত হয়ে পাশে দাঁড়িয়ে থাকা আরেক আসামির স্বজন ইকবাল হোসেন বললেন, ‘অসহযোগ আন্দোলন তো লাগাতার। তাই আগামীকাল বা পরশু যে জামিন হবে বা শুনানি হবে, সেই নিশ্চয়তাও তো নাই।’

আরেক স্বজন ইসমাইল হোসেন বললেন, সাভার থেকে আসলাম। রোজ রোজ কী আসা সম্ভব হবে! তারপর আজ (রবিবার) কারফিউ শিথিল আছে বলে আসতে পারলাম। শুনলাম কোথায় কোথায় নাকি মানুষ মারা গেছে। এই অবস্থায় যদি কারফিউ শিথিল না করে, তাহলে আসতেও পারবো না! ক্যামনে জামিন হবে, আল্লায় জানে।’

প্রসঙ্গত কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ডাকা অসহযোগ কর্মসূচির প্রথম দিনে গতকাল ঢাকায় সিএমএম আদালত ভবনে হামলার ঘটনা ঘটেছে। হামলার পর আদালতে বিচারিক কার্যক্রম বন্ধ হয়ে আবার চালু হয়। পরে দ্বিতীয় ধাপে বিচারিক কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করেন আদালত। গতকাল বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সিএমএম আদালত চত্বরে হামলার ঘটনা ঘটে। আন্দোলনকারীরা এ সময় হাজতখানার সামনে থাকা একটি প্রিজন ভ্যান, পুলিশের কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করেন। তা ছাড়া চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (সিজেএম) আদালতের পেছনের গেটের নিচতলার সিঁড়ির রেলিংও ভাঙচুর করা হয়।

এদিন বেলা সাড়ে ১১টার দিকে শতাধিক আন্দোলনকারী সিএমএম আদালত প্রাঙ্গণের গেটের সামনে স্লোগান দিচ্ছিলেন বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান। এ সময় গেট তালাবন্ধ ছিল। তখন কয়েকজন বিএনপিপন্থি হিসেবে পরিচিত আইনজীবী গেট খুলে দেন। এ সময় আন্দোলনকারীরা আদালত চত্বরে প্রবেশ করে ভাঙচুর চালান। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ টিয়ারশেল  ছোড়ে ও লাঠিচার্জ করে। পরে তারা বের হয়ে চলে যান। এ সময় তারা একটি প্রিজন ভ্যান, পুলিশের কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করেন।

রাজধানীর বনানীর সেতু ভবনে হামলার ঘটনায় করা মামলায় এদিন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ও সদ্য নিষিদ্ধ ঘোষিত জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ারসহ ছয়জনকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত। এই দুজন ছাড়া অন্য আসামিরা হলেন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী সায়েদুল আলম বাবুল, দলটির প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, ঢাকা মহানগর উত্তরের সদস্যসচিব আমিনুল হক ও বাগেরহাট জেলা বিএনপির আহ্বায়ক এম এ সালাম।

তিন দিনের রিমান্ড শেষে এদিন তাদের আদালতে হাজির করা হয়। এরপর মামলার তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাদের কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট রশিদুল আলম তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

যাত্রীবিমা করেনি মেট্রোরেল

প্রকাশ: ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:২৭ এএম
আপডেট: ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:৫৩ এএম
যাত্রীবিমা করেনি মেট্রোরেল
কারিগরি ও নিরাপত্তা সনদ ছাড়াই চলছে মেট্রোরেল। খবরের কাগজ গ্রাফিকস

গণপরিবহন হিসেবে মেট্রোরেলের চাহিদা যখন ক্রমশ বাড়ছে, তখন মেট্রোরেলের নিরাপত্তা ও কারিগরি ইস্যুতে নতুন তথ্য দিল ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ-(ডিটিসিএ)। দেড় বছরের বেশি সময় ধরে ঢাকার উত্তরা-মিরপুরবাসীকে যাত্রীসেবা দিয়ে আসা মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ যাত্রীদের নিরাপত্তা ইস্যুতে বিমা করেনি। শুধু তাই নয়, কারিগরি ও নিরাপত্তা সনদ ছাড়াই চলছে মেট্রোরেল।

তৃতীয় পক্ষ হিসেবে একটি স্বাধীন প্রতিষ্ঠান থেকে নিরাপত্তা সনদ নেওয়ার বিধান থাকলেও ঢাকা ম্যাস ট্রান্সপোর্ট লিমিটেড কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) তা করেনি। এই প্রতিষ্ঠানটি মেট্রোরেল পরিচালনা করছে। এই ইস্যুতে ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ-ডিটিসিএ একাধিকবার চিঠি দিলেও ডিএমটিসিএল কোনো উত্তর দেয়নি।

ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট লিমিটেড কোম্পানি লিমিটেড ও ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের মধ্যে একাধিক সভার কার্যবিবরণী ও দুই কর্তৃপক্ষের মধ্যে চালাচালি হওয়া বেশ কয়েকটি চিঠি থেকে জানা গেছে এসব তথ্য।

২০২২ সালের ২৯ ডিসেম্বর থেকে উত্তরা-উত্তর স্টেশন থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত যাত্রীসেবা শুরু করে মেট্রোরেল। এর এক বছর পর, ২০২৩ সালের ৫ নভেম্বর আগারগাঁও থেকে মতিঝিল অংশেও যাতায়াত শুরু করে মেট্রোরেল। ডিএমটিসিএল জানিয়েছে, ২১ দশমিক ২৬ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এমআরটি-লাইন-৬-এ প্রতিদিন গড়ে ২ লাখ ৭৫ হাজার মানুষ মেট্রোরেলে যাতায়াত করেন। 

ডিএমটিসিএল মেট্রোরেল পরিচালনা কর্তৃপক্ষ হলেও মেট্রোরেল আইন-২০১৫ এবং মেট্রোরেল বিধিমালা-২০১৬ অনুসারে ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ মেট্রোরেলের কর্তৃপক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করার বিধান রয়েছে। কর্তৃপক্ষ হিসেবে ডিটিসিএর অন্যতম দায়িত্ব হলো মেট্রোরেলের সুষ্ঠু ও নিরাপদ পরিচালনা, রক্ষণাবেক্ষণ তদারকি এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা পর্যবেক্ষণ করা।

মেট্রোরেল লাইন-৬ একটি অত্যাধুনিক কম্পিউটারাইজড কন্ট্রোল ব্যবস্থা সংবলিত রেলওয়ে নেটওয়ার্ক। এর বিভিন্ন সাব-সিস্টেম বা কম্পোনেন্ট যেমন ভায়াডাক্ট, ইলেকট্রিক্যাল সিস্টেম, রোলিং স্টক, সিগন্যালিং সিস্টেম, টেলিকমিউনিকেশন সিস্টেম, অটোমেটিক ফেয়ার কালেকশন সিস্টেম, টিকিট ভেন্ডিং মেশিন, টিকিট অপারেটিং মেশিন, প্যাসেঞ্জার গেট, প্ল্যাটফর্ম স্কিন ডোর, ফায়ার সেফটি সিস্টেম, লিফট ও এসক্যালেটর, ইত্যাদির সমন্বয়ে কাজ করে। এসব দিক বিবেচনায় ডিএমটিসিএলকে একটি ‘সিস্টেম সেফটি সার্টিফিকেট’ নেওয়ার বিধান আইনেই বলা ছিল।

ডিটিসিএর একটি চিঠি থেকে জানা যায়, ২০২২ সালের ২১ আগস্ট বাণিজ্যিক অপারেশন চালুর আগে ডিএসটিসিএলকে চিঠি দিয়ে যাত্রীদের বিমা করার কথা বলা হয়। এ বিষয়ে ২০২৩ সাল থেকে একাধিক চিঠি পাঠানো হলেও মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ এই বিষয়ে এখনো ব্যবস্থা নেয়নি। 

মেট্রোরেল বিধিমালা-২০১৬ এর বিধি-২৭ অনুসারে ডিএমটিসিএল-কে প্রতি তিন মাস অন্তর নিরাপত্তাবিষয়ক প্রতিবেদন মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষের  কাছে জমা দেওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কিন্তু মেট্রোরেল কোম্পানি তা আজ অবধি করেনি। 

মেট্রোরেল পরিচালনা ইস্যুতে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান এনকেডিএম নিরাপত্তা সনদ ইস্যু করতে ডিএমটিসিএলের কর্মকর্তাদের বারবার তাগাদা দেয়। মেট্রোরেলের এই পরামর্শক প্রতিষ্ঠানটি চূড়ান্ত করার আগে কার্যপরিধিতে সুকৌশলে ফাঁক রাখা হয়। ফলে পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের নির্দেশনা মেনে চলার বাধ্যবাধকতা থাকলেও চূড়ান্ত সনদে তার উল্লেখ রাখা হয়নি। 

ডিএমটিসিএলকে নিরাপত্তা সনদ প্রদানে একটি স্বাধীন প্রতিষ্ঠানকে নিয়োগ দেওয়ার কথা থাকলেও তা আর করা হয়নি।

একটি কার্যনির্বাহী বৈঠকের পরিপত্রে জানা যায়, বাণিজ্যিকভাবে পরিচালনা শুরুর আগে ২০২২ সালের ৬ মার্চ ডিএমটিসিএল একটি নিরাপত্তা সনদ ইস্যু করতে ডিটিসিএ বরাবর আবেদন করেছিল। কিন্তু ডিটিসিএ জানায়, মেট্রোরেল আইন-২০১৫ এবং মেট্রোরেল বিধিমালা-২০১৬ অনুযায়ী তারা এ ধরনের সনদ প্রদান করতে পারে না। এ ধরনের কারিগরি সক্ষমতাও নেই ডিটিসিএর। 

পরে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের একটি কমিটির সুপারিশে এমআরটি লাইন-৬-এ উত্তরা-উত্তর স্টেশন থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত অংশের বিভিন্ন সাব-সিস্টেম পরিচালনা, রক্ষণাবেক্ষণ এবং নিরাপত্তা বিষয়ে অনুমোদন দিয়েছিল ডিটিসিএ। কিন্তু তখন ডিএমটিসিলকে কোনো ‘সিস্টেম সেফটি সার্টিফিকেট’ দেয়নি বলে জানান ডিটিসিএ কর্মকর্তারা।

মেট্রোরেল বিধিমালা-২০১৬-এর ২৪ বিধি অনুযায়ী, ডিএমটিসিএলকে মেট্রোরেল নির্মাণ পরিকল্পনা অনুমোদনের জন্য ডিটিসিএতে আবেদন করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কিন্তু উত্তরা-উত্তর স্টেশন থেকে মতিঝিল পর্যন্ত এমআরটি লাইন-৬-এর নির্মাণ পরিকল্পনা ডিএমটিসিএল ডিটিসিএ থেকে অনুমোদন করিয়ে নেয়নি। উপরন্তু এ-সংক্রান্ত চিঠিরও কোনো জবাব দেয়নি। মেট্রোরেল আইন অনুযায়ী, এমআরটি লাইন নির্মাণের সার্বিক পরিকল্পনা ও নকশা ডিটিসিএতে জমা দেওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কিন্তু ডিটিসিএ জানিয়েছে, এমআরটি লাইন নির্মাণের আবেদনে পরিকল্পনার কপি পাওয়া যায়নি।

নথিপত্র বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এমআরটি লাইন-৬-এর উত্তরা সেন্টার, উত্তরা সাউথ, মিরপুর-১১, মিরপুর-১০, কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া, বিজয় সরণি, ফার্মগেট, শাহবাগ, ঢাকা ইউনিভার্সিটি এবং বাংলাদেশ সচিবালয় স্টেশনগুলোর লে-আউট ড্রয়িং জমা দেয়নি ডিএমটিসিএল। 

ডিএমটিসিএলের এসব অনিয়ম খতিয়ে দেখতে ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) শিগগির একটি কমিটি গঠন করবে বলে জানান ‘ডিটিসিএর নির্বাহী পরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) নীলিমা আখতার। তিনি বলেন, মেট্রোরেলের যে বিষয়গুলো এখন সামনে এসেছে, আমরা সবকিছু ধাপে ধাপে খতিয়ে দেখব।’  

ডিএমটিসিএল কর্তৃপক্ষ যা বলছে
মেট্রোরেলের এসব অনিয়ম প্রসঙ্গে জানতে খবরের কাগজের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয় ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এম এ এন ছিদ্দিকের সঙ্গে। হোয়াটসঅ্যাপ বার্তায় তাকে মেট্রোরেলসংক্রান্ত প্রশ্নগুলো পাঠানো হয়। ৯ দিন পর খবরের কাগজের প্রশ্নের উত্তর পাঠায় ডিএমটিসিএলের সিগন্যালিং অ্যান্ড টেলিকম শাখা। 

বিমা ছাড়া মেট্রোরেল পরিচালনার বিষয়ে প্রশ্নের উত্তরে ডিএমটিসিএল বলছে, তৃতীয় পক্ষের যাত্রী বিমা করার বিষয়টি পরীক্ষা-নিরীক্ষাধীন রয়েছে। তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে ‘সিস্টেম সেফটি সার্টিফিকেট’ গ্রহণের বিষয়ে কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, এ ধরনের কোনো বাধ্যবাধকতা মেট্রোরেল আইন-২০১৫ এর অন্তর্ভুক্ত নয়। ২০২২ সালের ১৯ ডিসেম্বর ও ২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে ডিটিসিএ থেকে ‘সিস্টেম সেফটি সার্টিফিকেট’ নিয়েছে বলে জানিয়েছে ডিএমটিসিএল। ডিটিসিএ জানিয়েছে, তারা এমন কিছু দেয়নি।

২০২২ সালের ডিসেম্বরে অনুমোদিত শর্তসাপেক্ষে ‘ইমপ্লিমেন্টেশন স্ট্যান্ডার্ড’ এখনো বলবৎ আছে বলে দাবি ডিএমটিসিএল কর্তৃপক্ষের। তবে ‘ইমপ্লিমেন্টেশন স্ট্যান্ডার্ড’ সহজবোধ্য বাংলা ভাষায় প্রণয়নের লক্ষ্যে বাংলা একাডেমি থেকে অনুবাদ করা হয়েছে। সেটি এখন ডিটিসিএতে পাঠানো হয়েছে। ডিটিসিএ বলছে, ‘ইমপ্লিমেন্টেশন স্ট্যান্ডার্ড’ ৬ মাস পরপর নবায়ন করতে হয়, সেটি ডিএমটিসিএল করেনি।

ফেঁসে যাচ্ছেন রাষ্ট্রদূত তালহা নজরুল শহীদুল

প্রকাশ: ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:০৩ এএম
আপডেট: ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:০৫ এএম
ফেঁসে যাচ্ছেন রাষ্ট্রদূত তালহা নজরুল শহীদুল
খন্দকার মোহাম্মদ তালহা, নজরুল ইসলাম, এ কে এম শহীদুল করিম

দুর্নীতির অভিযোগে ফেঁসে যাচ্ছেন ফ্রান্সে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত খন্দকার মোহাম্মদ তালহা, কাতারে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত নজরুল ইসলাম ও ডেনমার্কে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত এ কে এম শহীদুল করিমসহ ১০টি দেশে বাংলাদেশ দূতাবাসের ৩৮ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী। তাদের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার, রাষ্ট্রের অর্থ আত্মসাৎ, আর্থিক ক্ষতিসাধনসহ বিভিন্ন দুর্নীতি করার অভিযোগ দীর্ঘদিন ধরেই রয়েছে। এ বিষয়ে অনেক দিন ধরেই তার তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা হলেও সম্প্রতি প্রকাশ্যে অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রদূত ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির বিষয়ে কয়েক বছর আগে আসা অভিযোগের ভিত্তিতে বেশ কিছু তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করেছেন দুদকের গোয়েন্দা ইউনিটের সদস্যরা। সেই সব তথ্য-উপাত্তে অনিয়ম-দুর্নীতির সত্যতাও মিলেছে। অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে ইতোমধ্যে অভিযোগসংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রদূত ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কর্মস্থলে যোগদানের তথ্য, দায়িত্বপ্রাপ্ত শাখা ও পূর্বের কর্মস্থল ও পদবি, স্থায়ী ও বর্তমান ঠিকানাসহ চাকরিসংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য চেয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং মিশন অডিট অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে চিঠি দিয়েছে দুদক। তথ্য সরবরাহ করতে আগামীকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়েছে।

গত মঙ্গলবার দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১-এর উপপরিচালক সৈয়দ নজরুল ইসলাম পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এই চিঠি পাঠিয়েছেন। চিঠিতে বলা হয়েছে, মালয়েশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, সৌদি আরব, চীন, দুবাই, ইতালি, সুইজারল্যান্ড, কানাডা, ফিলিপিন্সে বাংলাদেশি দূতাবাস/হাইকমিশনে কর্মরত রাষ্ট্রদূত, হেড অব চ্যান্সেলর/প্রধান কনস্যুলার, মন্ত্রণালয়ের সচিব ও অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ, সরকারের আর্থিক ক্ষতিসাধনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। অভিযোগটি সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বর্তমান কর্মস্থল, পদবি, স্থায়ী ঠিকানা এবং বর্তমান ঠিকানা সংগ্রহ করা প্রয়োজন।

চিঠিতে রাষ্ট্রদূতসহ ৩৮ কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিষয়ে ১০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে তথ্য-উপাত্ত সরবরাহ করতে বলা হয়েছে। চিঠিতে অভিযোগসংশ্লিষ্টদের নামের পাশে অভিযোগকালীন পদবি উল্লেখ করা হয়েছে। তালিকায় অভিযোগসংশ্লিষ্টরা হলেন ফ্রান্সে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত খন্দকার মোহাম্মদ তালহা (অভিযোগকালীন যুক্তরাজ্যের ডেপুটি রাষ্ট্রদূত), কাতারে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত নজরুল ইসলাম (সুইজারল্যান্ড দূতাবাসের দায়িত্বে ছিলেন) ও ডেনমার্কে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত এ কে এম শহীদুল করিম (সৌদি আরবের জেদ্দায় কনস্যুলার জেনারেল ছিলেন), পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মো. হালিমুজ্জামান (প্রথম সচিব), আব্দুল কাদের (গাড়িচালক), ডা. জাকির হোসেন খন্দকার (কাউন্সেলর), জসিম উদ্দিন (উপসচিব), কাজী মুনতাসির মোর্শেদ (সহকারী সচিব), আব্দুল লতিফ ফকির (পিও), আতিকুর রহমান (এমএলএসএস), ইব্রাহিম খলিল (স্টেনোটাইপিস্ট), আসগার হোসেন (সচিব), লুৎফর রহমান (প্রশাসনিক কর্মকর্তা), কামাল হোসেন (পিও)। 

অভিযোগের তালিকায় আছেন আকরামুল কাদের (রাষ্ট্রদূত, ওয়াশিংটন), কামরুল আহসান (রাষ্ট্রদূত, অটোয়া, কানাডা), ইয়াকুব আলী (সাবেক রাষ্ট্রদূত), মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন (রাষ্ট্রদূত, ওয়াশিংটন), সামসুল আলম (কনস্যুলার, ওয়াশিংটন ডিসি), ড. এ কে এম আব্দুল মোমেন (কনস্যুলার, নিউইয়র্ক), শামীম আহসান (কনস্যুলার জেনারেল, নিউইয়র্ক), সুলতানা লায়লা হোসাইন (কনস্যুলার জেনারেল, লস এঞ্জেলস), আব্দুল হান্নান (রাষ্ট্রদূত, যুক্তরাজ্য), সরিফা খান (কনস্যুলার জেনারেল, বাণিজ্যিক), ফয়সাল আহম্মেদ (সহকারী রাষ্ট্রদূত, বাকিংহাম), শহীদুল ইসলাম (রাষ্ট্রদূত, সৌদি আরব), এ কে এম মোকাম্মেল হোসেন (কনস্যুলার লেবার উইং), সরোয়ার হোসেন (কনস্যুলার, লেবার উইং, রিয়াদ, সৌদি আরব), এম ফজলুল করিম (রাষ্ট্রদূত, চীন), এম দেলেয়ার হুসাইন (কনস্যুলার), তারেক আহম্মেদ (কনস্যুলার), রোজিনা আহমেদ (কনস্যুলার জেনারেল, ইতালি), নাফিসা মনসুর (ভাইস কনস্যুলার, ইতালি), শাহাদাত হোসেন (রাষ্ট্রদূত, ইতালি), শহীদুল ইসলাম (রাষ্ট্রদূত, ফ্রান্স), হযরত আলী খান (কনস্যুলার এবং হেড অব চ্যান্সেরি, ফ্রান্স), শামিম আহসান (রাষ্ট্রদূত, সুইজারল্যান্ড) এবং আলিমুজ্জামান (কনস্যুলার, সুইজারল্যান্ড)।

গতকাল রবিবার দুদকের উচ্চ পদস্থ এক কর্মকর্তা খবরের কাগজকে বলেন, ‘দুর্নীতির অভিযোগ ২০১২ সালে কয়েকজন রাষ্ট্রদূতের বিরুদ্ধে মামলা করেছিল দুদক। এরপর অনেক রাষ্ট্রদূতের বিরুদ্ধে একই ধরনের অভিযোগ আসে। 

অভিযোগের ভিত্তিতে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে দুদকের গোয়েন্দা ইউনিট। ২০২০ সাল পর্যন্ত জমা হওয়া এসব অভিযোগ ও গোয়েন্দা প্রতিবেদন যাচাই-বাছাই করে বিভিন্ন দেশে থাকা রাষ্ট্রদূতসহ দূতাবাসের শতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে অনুসন্ধানের সুপারিশসহ একটি তালিকা কমিশনে জমা দেয় যাচাই-বাছাই কমিটি (যাবাক)। প্রায় চার বছর পর এই তালিকার মধ্য থেকে ৩৮ জনের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরুর নির্দেশ দিয়েছে কমিশন। বাকিদের বিষয়ে শিগগিরই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হতে পারে।

নির্বাচন কমিশনের কার্যক্রমে স্থবিরতা

প্রকাশ: ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৯:৫৫ এএম
আপডেট: ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:০৭ এএম
নির্বাচন কমিশনের কার্যক্রমে স্থবিরতা
নির্বাচন কমিশন সচিবালয়

প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ (সিইসি) সব কমিশনার একযোগে পদত্যাগ করার পর কর্মচাঞ্চল্য হারিয়ে স্থবির হয়ে পড়েছে আগারগাঁওয়ের নির্বাচন কমিশন সচিবালয় (ইসি)।

রবিবার (৮ সেপ্টেম্বর) সচিবালয়ে গিয়ে দেখা যায়, শুধুমাত্র জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) শাখা ছাড়া বেশির ভাগ শাখার কার্যক্রমই বন্ধ। নির্বাচন সংক্রান্ত সব ধরনের কাজই বন্ধ রয়েছে। নিয়মিত কার্যক্রম চালাতে নিজ নিজ দপ্তরের কাজে যোগ দিলেও অনেকেই রয়েছেন বদলি আতঙ্কে।

ইসি ভবনের তৃতীয় তলায় বসতেন সাবেক সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল। তার অবর্তমানে গতকাল অফিস করেছেন তার একান্ত সচিব রিয়াজ উদ্দিন। তবে সেই ফ্লোরে ইসি সচিব শফিউল আজিমের দপ্তর ছাড়া সবার দপ্তরেই দেখা গেছে নীরব পরিবেশ। এ ছাড়া চতুর্থ তলায় সাবেক ইসি অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহসান হাবিব খানের একান্ত সচিব আসমা দিলারা জান্নাত, বেগম রাশেদা সুলতানার একান্ত সচিব হাবিবা আখতার এবং মো. আনিছুর রহমানের একান্ত সচিব শাহ মো. কামরুল হুদাকে দেখা গেছে অফিস কক্ষে। 

শাহ কামরুল হুদাকে সাবেক ইসি আনিছুর রহমানের ইচ্ছায় তার একান্ত সচিব করা হয়েছে। এখন তার মতো অনেক বিভাগের কর্মকর্তাদের মধ্যেই বিরাজ করছে বদলি আতঙ্ক। এ ছাড়া শূন্য পদে যোগ দিচ্ছেন অনেকে। গতকাল ইসির আইন শাখায় যুগ্ম সচিব পদে যোগ দিয়েছেন সিনিয়র জেলা জজ ফারুক আহমেদ।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান, ‘কমিশনে নিয়োগপ্রাপ্ত আমরা সব কর্মকর্তা-কর্মচারীই অফিস করছি। যেহেতু নির্বাচন সংক্রান্ত কোনো কাজ আপাতত নেই তাই এ সময়ে কাজেরও চাপ নেই। তবে গত বৃহস্পতিবার কমিশন পদত্যাগ করার আগে যেসব কাজের চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়ে গেছেন সেই কাজগুলোই আমরা করতে পারছি। এ ছাড়া আগে নিবন্ধনের জন্য আবেদনকারী কয়েকটি রাজনৈতিক দল আমাদের কাছে এসে তথ্য চাইছেন, তাদেরকে পরবর্তী কমিশন গঠনের পর যোগাযোগের পরামর্শ দিচ্ছি। 

গত ২ সেপ্টেম্বর রাজনৈতিক দল হিসেবে ইসির নিবন্ধন পায় মাহমুদুর রহমান মান্নার নেতৃত্বাধীন নাগরিক ঐক্য এবং ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নূরের দল গণ অধিকার পরিষদ। আর আগে গত ২১ আগস্ট ইসির নিবন্ধন পায় জামায়াতে ইসলামীর সাবেক নেতাদের প্রতিষ্ঠিত আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি)। নতুন এই তিনটি দল নিয়ে বর্তমানে ৪৬টি দল ইসির নিবন্ধনভুক্ত হয়েছে। ইসি থেকে পুরো কমিশন পদত্যাগ করে বিদায় নেওয়ার পর গতকালও লেবার পার্টিসহ কয়েকটি দলের নেতাকে দেখা গেছে ইসি সচিবালয়ে। 

অন্যদিকে ইসি সচিবালয়ের মূল ভবন এবং নির্বাচনি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট ভবনের যেসব ফ্লোরে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) শাখার কাজ চলে সেসব দপ্তরে গিয়ে দেখা গেছে, এনআইডি সংক্রান্ত (নতুন ভোটার ও সংশোধন আবেদন) সব ধরনের কার্যক্রমই চলমান রয়েছে। কর্মকর্তাদের ব্যস্ততাও রয়েছে মোটামুটি। তবে এনআইডি বিভাগ ছাড়া বেশির ভাগ শাখার কার্যক্রমেই এক ধরনের স্থবিরতা বিরাজ করছে।

কমিশনবিহীন এ পর্যায়ে কীভাবে চলবে ইসি সচিবালয়ের কার্যক্রম- এমন প্রশ্নে ইসি সচিব মো. শফিউল আজিম খবরের কাগজকে বলেন, ‘সচিবালয়ের রুটিন যেসব কাজ আছে সেগুলোই আমরা করছি। এ পর্যায়ে পুরো কমিশন যেহেতু শূন্য সেহেতু নির্বাচন সংক্রান্ত সব ধরনের কার্যক্রমই আপাতত বন্ধ রয়েছে। তবে আদালত থেকে বিশেষ কোনো নির্দেশনা এলে নিয়ম অনুযায়ী আমরা সেটা বাস্তবায়ন করতে পারব। সিইসিকে অবহিত করা ছাড়া (পদায়ন ও বদলি) যেসব কার্যক্রম করা সম্ভব নয়, সেসব ব্যাপারে বা কোন কোন বিষয়ে আমরা ভূমিকা রাখতে পারব সে ব্যাপারে সুস্পষ্টভাবে নির্দেশনা জানতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে চিঠি দিয়ে জানতে চেয়েছি।’

সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের কমিশন একযোগে পদত্যাগ করে গত ৫ সেপ্টেম্বর। ওই কমিশনের বাকি সদস্যরা ছিলেন- অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আহসান হাবিব খান, রাশেদা সুলতানা মো. আলমগীর ও মো. আনিছুর রহমান। দেশে প্রথমবারের মতো সিইসি ও ইসি নিয়োগে আইন প্রণয়নের পর সার্চ কমিটির মাধ্যমে ২০২২ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি কাজী হাবিবুল আউয়াল নেতৃত্বাধীন কমিশন নিয়োগ পায়। সংবিধান অনুযায়ী পাঁচ বছরের জন্য তাদের দায়িত্ব নির্ধারিত থাকলেও দেশে গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী পরিস্থিতিতে মাত্র আড়াই বছরেই বিদায় নিতে হয় ওই কমিশনকে।

মিল্টনকে ক্রসফায়ারে দিতে চেয়েছিলেন ডিবি হারুন!

প্রকাশ: ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৮:৪৬ এএম
আপডেট: ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৮:৪৬ এএম
মিল্টনকে ক্রসফায়ারে দিতে চেয়েছিলেন ডিবি হারুন!
সাবেক ডিবিপ্রধান হারুন অর রশীদ-ডিবি হেফাজতে চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এজ কেয়ার আশ্রমের প্রতিষ্ঠাতা মিল্টন সমাদ্দার

সাভারের চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এজ কেয়ার আশ্রমের প্রতিষ্ঠাতা আলোচিত মিল্টন সমাদ্দারকে ক্রসফায়ারে মেরে গুম করে দেওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন সাবেক ডিবিপ্রধান হারুন অর রশীদ। ২ মাস ১৭ দিন জেল খেটে বের হওয়ার পর সম্প্রতি খবরের কাগজকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে এ কথা জানান মিল্টন।

তিনি বলেন, ‘প্রথম দিন যখন আমাকে তার (ডিবি হারুন) কাছে নেওয়া হলো তিনি আমার কোনো কথাই শুনতে না চেয়ে উল্টো আমাকে ক্রসফায়ারে মেরে ফেলার জন্য অন্য ডিবি অফিসারদের নির্দেশ দেন।’

মিল্টন আরও জানান, শুধু প্রথম দিনই না, দ্বিতীয় দিনও দেখা হওয়ার পর একই কথা বলেন ডিবি হারুন। এরপর মিল্টন সমাদ্দারকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য ৫০ লাখ টাকা ঘুষও দাবি করেন তিনি। এই ৫০ লাখ টাকা কোথা থেকে আসবে তা-ও হারুন বলে দিয়েছিলেন। মিল্টন বলেন, ‘আমার চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এজ কেয়ারের অ্যাকাউন্টে যে ১ কোটি ৮৫ লাখ ছিল, সেখান থেকে হারুন ৫০ লাখ টাকা দাবি করে বসেন।’

মিল্টন জানান, টাকা দিতে রাজি না হলে ভয়ভীতি দেখাতে শুরু করেন হারুন। কিন্তু তিনি অনাথ এতিমদের টাকা হারুনকে দিতে রাজি হননি। ফলে তার স্ত্রী ও সন্তানদের হয়রানি করা শুরু করেন হারুনের লোকজন। তখন বাধ্য হয়ে নিজের গাড়ি বিক্রি করে সাড়ে ৭ লাখ টাকা ঘুষ দেন মিল্টন। এই টাকা দেওয়া হয় যেন তার স্ত্রী-সন্তানকে হয়রানি না করা হয় এই শর্তে। ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর হারুন পালিয়ে না গেলে তাকে আরও ৫ লাখ টাকা দিতে হতো বলে জানান মিল্টন। 

কিডনি পাচার, লাশ গুম, আশ্রমে থাকা রোগীদের নির্যাতন, জাল সনদ তৈরিসহ আরও নানা অভিযোগ আনা হয়েছিল মিল্টনের নামে। সেগুলো কি মিথ্যা? এমন প্রশ্নের উত্তের তিনি খবরের কাগজকে বলেন, ‘কালবেলা তো আমার বিরুদ্ধে তিন-চার মাস অনুসন্ধান করেছে। আমি তাদের প্রশ্ন করতে চাই- তারা কেন সেগুলোর প্রমাণ দেখাচ্ছে না। তারা এটা প্রমাণ করুক। আমি আসলে প্রতিহিংসা ও মিথ্যা ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছি।’ তিনি অভিযোগ করে আরও জানান, মূলত সাভারের কমলাপুরে তার যে আশ্রম রয়েছে তার পাশেই রিসোর্ট বানাতে চেয়েছিলেন ঢাকার বাসিন্দা শামসুদ্দিন চৌধুরী। এই শামসুদ্দিন চৌধুরী মূলত ঢাকা-১৪ আসনের আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য মাইনুল হোসেন খান নিখিলের আত্মীয়। নিখিল ডিবি হারুনকে ফোন করে মিল্টনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলেন। এরপর শুরু হয় হয়রানি। 

যারা হয়রানি করেছেন, সমাজের কাছে হেয় করেছেন, তাদের বিরুদ্ধে কোনো আইনি ব্যবস্থা নেবেন কি না- এমন প্রশ্নের উত্তরে মিল্টন বলেন, ‘বিচার তো আল্লাহই করেছেন, কোথায় সেই হারুন, আর কোথায় সেই নিখিল? প্রাণের ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। আমি তো ঠিকই আমার জায়গাতেই আছি। তাদের পাপের শাস্তি তারা পাবেন।’ 

সমাজের অসহায়, অবহেলিত মানুষের জন্যই আজীবন কাজ করে যেতে চান মিল্টন। নিজ হাতে তৈরি আশ্রমের দায়িত্বভার ফিরে পেতে চান। আর সরকার যদি আশ্রম ফেরত না দেয়, তাহলে যেন আশ্রমের শিশু-বৃদ্ধ মানুষগুলোকে মিল্টনের কাছে ফেরত দেয়। এমনটাই নতুন সরকারের কাছে দাবি তার। আবারও ভিক্ষা করে রাস্তায় পড়ে থাকা অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে চান তিনি। 

গত ১ মে রাতে রাজধানীর মিরপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে মিল্টন সমাদ্দারকে গ্রেপ্তার করেছিল ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। তার বিরুদ্ধে জাল মৃত্যুসনদ তৈরি, টর্চার সেলে মানুষজনকে নির্যাতন ও মানব পাচারের অভিযোগে তিনটি মামলা করা হয় তখন। তিনটি মামলাতেই তিনি স্থায়ী জামিন পেয়েছেন।

অর্থঋণ আদালত: ৯০ শতাংশ মামলাই নিষ্পত্তি হয় একতরফা

প্রকাশ: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৯:১২ এএম
আপডেট: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০১:৫৪ পিএম
অর্থঋণ আদালত: ৯০ শতাংশ মামলাই নিষ্পত্তি হয় একতরফা

ঢাকার অর্থঋণ আদালতে গত জুলাই মাসে দোতরফা ও একতরফা মিলে মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে ৭০০টি। এর মধ্যে মাত্র ৬৮টি মামলা দোতরফা নিষ্পত্তি হয়েছে, আর বাকি ৬৩২টি মামলাই নিষ্পত্তি হয়েছে একতরফা। শতাংশের হিসাবে দেখলে মামলাগুলোর মধ্যে দোতরফা নিষ্পত্তির হার ১০ শতাংশেরও কম, কিন্তু একতরফা নিষ্পত্তির হার ৯০ শতাংশেরও বেশি। এর বাইরে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তিসহ (এডিআর) অন্যান্য পদ্ধতিতেও কিছু মামলার নিষ্পত্তি হয়েছে ওই মাসে।

আইন মন্ত্রণালয়ের সলিসিটর কার্যালয়ে আসা ‘ঢাকা জেলা জজশিপের জুলাই ২০২৪ ইং মাসের দেওয়ানি মোকদ্দমার কার্যবিবরণী’তে এ তথ্য পাওয়া গেছে। এর আগে গত এপ্রিলের কার্যবিবরণীও দৈনিক খবরের কাগজের হাতে আসে। পরের মাস মে মাসে ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ মো. হেলাল উদ্দিন এই বিবরণীতে স্বাক্ষর করার পর তা সলিসিটর কার্যালয়ে আসে।

ওই বিবরণী অনুসারে ঢাকার অর্থঋণ আদালতে গত এপ্রিল মাসে দোতরফা ও একতরফা মিলে মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে ৫২৩টি। এর মধ্যে মাত্র ৪৬টি মামলা দোতরফা নিষ্পত্তি হয়েছে, কিন্তু একতরফা নিষ্পত্তি হয়েছে ৪৭৭টি। শতাংশের হিসাবে দেখলে এর মধ্যে দোতরফা মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে ৮ দশমিক ৮০ শতাংশ, যখন একতরফা মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে ৯১ দশমিক ২০ শতাংশ।

এর বাইরে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তিসহ (এডিআর) অন্যান্য পদ্ধতিতেও ১৬২টি মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে। সেটি হিসাবে আনলে ঢাকার চারটি অর্থঋণ আদালতে নিষ্পন্ন মোট ৬৮৫টি মামলার মধ্যে দোতরফা ও একতরফা মামলা নিষ্পত্তির হার দাঁড়ায় যথাক্রমে ৭ ও ৭০ শতাংশ। আইন মন্ত্রণালয়ের সলিসিটর কার্যালয়ে আসা ‘ঢাকা জেলা জজশিপের এপ্রিল ২০২৪ মাসের দেওয়ানি মোকদ্দমার কার্যবিবরণী’তে এই তথ্য পাওয়া গেছে।

সলিসিটর দপ্তরে আসা এর আগের মাস অর্থাৎ গত মার্চে মামলা নিষ্পত্তির চিত্রও প্রায় একই। ওই মাসে দোতরফা ও একতরফা মামলার সঙ্গে এডিআরসহ অন্যান্য পদ্ধতিতে নিষ্পন্ন মামলার মোট সংখ্যা ৮০২টি। যেখানে দোতরফা মামলা নিষ্পত্তির হার ৮ শতাংশেরও কম, কিন্তু একতরফা মামলা নিষ্পত্তির হার প্রায় ৭২ শতাংশ।

দোতরফা মামলা নিষ্পত্তির হার এত নগণ্য বা একতরফা মামলা নিষ্পত্তির হার এত বেশি হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে বিষয়টি জানতে চাইলে সাবেক বিচারক শাহজাহান সাজু দৈনিক খবরের কাগজকে বলেন, ‘নানা কারণেই মামলা একতরফা নিষ্পত্তি হতে পারে। তবে যাদের বিরুদ্ধে এসব মামলা হয়, তাদের অনেকেই হয়তো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নিয়ে ব্যবসায় করতে গিয়ে সফল হননি, দেউলিয়া হয়ে গেছেন। পরে ব্যবসায় গুটিয়ে অফিসে তালা ঝুলছে। 

কিন্তু মামলা হওয়ার পর হয়তো ওই ঠিকানাতেই আদালতের সমন বা সব কাগজপত্র যায়। আমার বিশ্বাস এসব কারণে তারা আদালতের সমন বা কাগজপত্র পান না। ফলে মামলাও একতরফা নিষ্পত্তির দিকে এগোয়। কিন্তু একতরফা নিষ্পত্তির পর যখন দেখে যে তার বিরুদ্ধে ক্রোক/ডিক্রি বা এমন রায় হয়ে গেছে, তখন টনক নড়ে, আদালতে এসে দোতরফা নিষ্পত্তির জন্য আবেদন করে।’

কিন্তু কেউ তো মামলা দীর্ঘসূত্রিতায় ফেলার জন্যেও আদালতের সমন রিসিভ না করে এড়িয়ে চলতে পারেন, কারণ পরে দোতরফা নিষ্পত্তির জন্য আদালতে আবেদন করা যাবে- বিষয়টি মনে করিয়ে দিলে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শাহজাহান সাজু বলেন, ‘সে ক্ষেত্রে বাদীর উচিত হবে আদালতের আদেশ বিবাদীকে তথ্যপ্রযুক্তির সহযোগিতা নিয়ে পাঠানো। 

যেমন- মেসেজ, বিশেষ করে হোয়াটসঅ্যাপ, মেসেঞ্জার ইত্যাদি। তাহলে একতরফা রায়ের বিরুদ্ধে বিবাদী আবেদন করলে তিনি তা আদালতকে অবহিত করতে পারবেন যে সময়ে সময়ে বিবাদীতে এসব বিষয় তথ্যপ্রযুক্তির সহযোগিতায় তথ্য পাঠানো হয়েছিল, তিনি তা দেখেছেন, কিন্তু এখন আদালতকে অসত্য তথ্য দিয়ে মামলাটিকে দীর্ঘসূত্রিতায় ফেলতে চান। তাতে আদালতের সিদ্ধান্ত নিতে সহজ হয়।’

ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সাবেক সভাপতি ব্যারিস্টার সামির সাত্তার খবরের কাগজকে বলেন, ‘ধরুন, আপনি একজনকে একটা চেক দিয়েছেন, কিন্তু চেক ডিজঅনার হয়েছে। এখন এই টাকা তো আপনাকে পরিশোধ করতে হবে। এই অবস্থায় চেক ডিজঅনার মামলা হলে আত্মপক্ষ সমর্থনের মতো তেমন কিছু এলে, আপনার হাতে তো নেই। 

এমন প্রেক্ষাপটে অনেকে আদালতের ডাকে সাড়া না দিয়ে চুপ করে থাকেন। তখন মামলাটি একতরফা নিষ্পত্তির দিকে যায়। পরবর্তী সময়ে সেকশন-১৯-এর অধীনে আবেদন করে। তখন আবার দোতরফা নিষ্পত্তির দিকে মামলা এগোয়। এতে করে মূলত দেনা পরিশোধে সময়ক্ষেপণ করা যায়।’

আরেক প্রশ্নের উত্তরে আইন পরামর্শ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান (লিগ্যাল কনসালট্যান্সি ফার্ম) ‘সাত্তার অ্যান্ড কোং’-এর প্রধান সামির সাত্তার বলেন, ‘এমন কেউ তো থাকতেই পারেন, যিনি সত্যিই কোনো কারণে আদালতের আহ্বানে সাড়া দিতে পারেননি বা আদালতের নির্দেশ তার কাছে পৌঁছায়নি। 

তাই তার জন্য তো একতরফা রায়ের বিরুদ্ধে আবেদন করার সুযোগ থাকতে হবে। না হলে তো তার জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত হয় না। আর আইন তো সবার জন্যই সমান, সবাই আইনের আশ্রয় নিতে পারেন। তাই অন্য কেউ ভুক্তভোগী না হয়েও এই সুযোগ নিয়ে মামলা দীর্ঘসূত্রিতায় ফেললেও আপাতত কিছু করার নেই।’

বহুল আলোচিত-সমালোচিত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালি পরিচালনার জন্য ২০২১ সালে কমিটি গঠন করে দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। ওই কমিটির অন্যতম সদস্য ছিলেন ব্যাংকিং ও কোম্পানি আইন বিশেষজ্ঞ ব্যারিস্টার খান মোহাম্মদ শামীম আজিজ। তিনি খবরের কাগজকে বলেন, ‘অর্থঋণ আদালতে মামলা নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে প্রধান যেসব বিষয় অধস্তন আদালতকে মোকাবিলা করতে হয়, সেগুলো নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে প্রায় সব বিষয়েই সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ নির্দেশনা দিয়ে রেখেছেন। 

দেশের সর্বোচ্চ আদালত থেকে বিষয়গুলো ওয়েল সেটেল্ড। মামলার পক্ষগুলোও আসলে জানে, এই মামলার ভবিষ্যৎ কী হতে পারে। তাই কেউ কেউ একটা অপকৌশলের আশ্রয় নিতে পারে যে মামলায় আদালতের আহ্বানে সাড়া না দেওয়া। তাতে করে বিচারিক প্রক্রিয়া শেষে মামলাটি একতরফাভাবে হলেও আদালতকে নিষ্পত্তি করতে হবে। কিন্তু একতরফাভাবে নিষ্পত্তি হলে এর বিরুদ্ধে আবার আদালতে আবেদন করা যাবে। এতে করে মামলাটি দীর্ঘসূত্রিতায় ফেলা যায়, অর্থাৎ দেনা পরিশোধে আরও সময়ক্ষেপণ করা যায়। এক কথায় বলতে গেলে, মামলা দীর্ঘসূত্রিতায় ফেলার অপকৌশল হিসেবে কেউ এটা করতে পারেন।’