‘আন্দোলনের কারণে আইজ নাকি আর কোনো আসামিরে কোর্টে আনব না। এই দিকে ছেলেরা (আন্দোলনকারীরা) ঢুকার (আদালত অঙ্গনে) পর কোর্টও বন্ধ হইয়া গেল। তাইলে আইজ আর আমার ছেলের জামিন হইবো ক্যামনে?’
নিজের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার কথা এভাবেই প্রকাশ করছিলেন ফাহিমা আক্তার। গতকাল রবিবার বেলা ২টার দিকে খবরের কাগজের এই প্রতিনিধির সঙ্গে ঢাকা চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালত ভবনের সামনে কথা হয় তার। তিনি জানান, কোটা সংস্কার আন্দোলনের মধ্যে সংঘর্ষের এক মামলায় তার ছেলেকে ধরে নিয়ে যায় পুলিশ। এদিন এসেছিলেন ছেলের জামিন শুনানি হওয়ার আশায়। কিন্তু বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারীদের ডাকা অসহযোগ কর্মসূচির মধ্যে আসামিদের আদালতে আনা হয়নি। আবার আন্দোলনকারীরা আদালত প্রাঙ্গণে ঢুকে পড়ার পর আদালতের কার্যক্রমও বন্ধ হয়ে গেছে। তাই এদিন আর তার ছেলের জামিন হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই বলে ফাহিমা আক্তারকে জানিয়েছেন তার আইনজীবী।
আলাপচারিতায় যুক্ত হয়ে পাশে দাঁড়িয়ে থাকা আরেক আসামির স্বজন ইকবাল হোসেন বললেন, ‘অসহযোগ আন্দোলন তো লাগাতার। তাই আগামীকাল বা পরশু যে জামিন হবে বা শুনানি হবে, সেই নিশ্চয়তাও তো নাই।’
আরেক স্বজন ইসমাইল হোসেন বললেন, সাভার থেকে আসলাম। রোজ রোজ কী আসা সম্ভব হবে! তারপর আজ (রবিবার) কারফিউ শিথিল আছে বলে আসতে পারলাম। শুনলাম কোথায় কোথায় নাকি মানুষ মারা গেছে। এই অবস্থায় যদি কারফিউ শিথিল না করে, তাহলে আসতেও পারবো না! ক্যামনে জামিন হবে, আল্লায় জানে।’
প্রসঙ্গত কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ডাকা অসহযোগ কর্মসূচির প্রথম দিনে গতকাল ঢাকায় সিএমএম আদালত ভবনে হামলার ঘটনা ঘটেছে। হামলার পর আদালতে বিচারিক কার্যক্রম বন্ধ হয়ে আবার চালু হয়। পরে দ্বিতীয় ধাপে বিচারিক কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করেন আদালত। গতকাল বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সিএমএম আদালত চত্বরে হামলার ঘটনা ঘটে। আন্দোলনকারীরা এ সময় হাজতখানার সামনে থাকা একটি প্রিজন ভ্যান, পুলিশের কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করেন। তা ছাড়া চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (সিজেএম) আদালতের পেছনের গেটের নিচতলার সিঁড়ির রেলিংও ভাঙচুর করা হয়।
এদিন বেলা সাড়ে ১১টার দিকে শতাধিক আন্দোলনকারী সিএমএম আদালত প্রাঙ্গণের গেটের সামনে স্লোগান দিচ্ছিলেন বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান। এ সময় গেট তালাবন্ধ ছিল। তখন কয়েকজন বিএনপিপন্থি হিসেবে পরিচিত আইনজীবী গেট খুলে দেন। এ সময় আন্দোলনকারীরা আদালত চত্বরে প্রবেশ করে ভাঙচুর চালান। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ টিয়ারশেল ছোড়ে ও লাঠিচার্জ করে। পরে তারা বের হয়ে চলে যান। এ সময় তারা একটি প্রিজন ভ্যান, পুলিশের কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করেন।
রাজধানীর বনানীর সেতু ভবনে হামলার ঘটনায় করা মামলায় এদিন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ও সদ্য নিষিদ্ধ ঘোষিত জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ারসহ ছয়জনকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত। এই দুজন ছাড়া অন্য আসামিরা হলেন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী সায়েদুল আলম বাবুল, দলটির প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, ঢাকা মহানগর উত্তরের সদস্যসচিব আমিনুল হক ও বাগেরহাট জেলা বিএনপির আহ্বায়ক এম এ সালাম।
তিন দিনের রিমান্ড শেষে এদিন তাদের আদালতে হাজির করা হয়। এরপর মামলার তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাদের কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট রশিদুল আলম তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।