ঢাকা ১ আশ্বিন ১৪৩১, সোমবার, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪

ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ, পরিচ্ছন্নতা ও সংস্কারে শিক্ষার্থীরা

প্রকাশ: ১০ আগস্ট ২০২৪, ১১:০৮ এএম
ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ, পরিচ্ছন্নতা ও সংস্কারে শিক্ষার্থীরা
ছবি: খবরের কাগজ

শুক্রবার (৯ আগস্ট)) বিকেল ৪টা, রাজধানীর পান্থপথ মোড়ে বেশ যানজট। দূর থেকে শোনা গেল অ্যাম্বুলেন্সের শব্দ। হঠাৎ একজন তরুণ বলে উঠলেন ‘এই অ্যাম্বুলেন্স অ্যাম্বুলেন্স, একটু চেক করে দেখ ইমার্জেন্সি কি না।’ 

তার কথায় সঙ্গে সঙ্গে অ্যাম্বুলেন্সের কাছে অন্য ছাত্র চলে গেল, জবাব এল ইমার্জেন্সি। মুহূর্তেই বিশেষ ব্যবস্থা নিয়ে অন্য রুটের যানবাহন বন্ধ করে যেতে দেওয়া হলো সেটিকে। এটাই হচ্ছে আমাদের তরুণ শিক্ষার্থীদের ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা। যেখানে অন্য সময়ে গণমাধ্যমে খবর আসে ভিআইপির যাতায়াতে আটকে থাকা যানবাহনের চাপে অ্যাম্বুলেন্সে প্রাণ যায় রোগীদের। 

দেশে গণ-অভুত্থান পরবর্তী সরকার পতনের পরদিন থেকে রাজধানীসহ দেশের বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোর ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব পালন করছেন শিক্ষার্থীরা। তবে কিছু সময় পর থেকে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগ দেন কিছু সচেতন মানুষও।

শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে এখন ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে গ্রামপুলিশ ও আনসারসহ বেশ কিছু স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। পাশাপাশি রাস্তার পরিচ্ছন্নতা এবং রাস্তার পাশের দেয়ালগুলোতে লেখা সরকারবিরোধী নানা স্লোগান মুছে আঁকা হচ্ছে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নানা প্রতীকী চিত্র। তাদের এমন কাজকে প্রশংসায় ভাসাচ্ছেন পথচারীরা। 

রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোতে দেখা যায়, রাস্তায় যানবাহন নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি ফুটপাতে হাঁটা, নির্দিষ্ট স্থান থেকে গাড়িতে ওঠানামা ও নির্দিষ্ট লেন ব্যবহার করাতে জনসাধারণকে সচেতন ও নিয়ন্ত্রণের কাজ করছেন শিক্ষার্থীরা। রাজধানীর পান্থপথে অনেকের সঙ্গে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের কাজ করছেন ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল কলেজের শিক্ষার্থী মো. জাহিদ হোসেন।

তিনি খবরের কাগজকে বলেন, ‘এখানে আমরা কয়েকটি লেন করে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করছি। এর মধ্যে ইউটার্ন ও অ্যাম্বুলেন্সের জন্য একটি লেন 

যেমন আছে, আবার বামে যাওয়ার জন্য বামের আলাদা লেন আছে। এভাবে আমরা যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করছি।’

সিদ্ধেশ্বরী গার্লস কলেজে অনার্স থার্ড ইয়ারে পড়া সেতু বলেন, ‘আমি এখানে এসেছি ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করতে। যাতে আমার দেশের মানুষের কোনো অসুবিধায় বা ভোগান্তিতে পড়তে না হয়। এ পরিস্থিতিতে যেন যানবাহন স্বাভাবিকভাবে চলতে পারে, এটা খুব প্রয়োজন। তাই আমি এসেছি।’ অন্যদিকে চল্লিশোর্ধ্ব শামিমা আক্তারও করছেন ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের কাজ। তিনি বলেন, ‘আমি এই শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তখন থেকে আছি, যখন শিক্ষার্থীদের ওপর গুলি চালানো শুরু হয়। কারণ আমার মনে হয়েছে আমাদের সন্তানদের বুকে গুলি লাগার আগে আমাদের লাগুক। এখানে এসেছি ওদের সহযোগিতা করতে। ওরা যেভাবে কাজ করছে তার সঙ্গে আমিও একাত্ম হয়েছি।’ 

এদিকে কেবল ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ নয়, রাস্তা পরিষ্কারসহ আশপাশ ও ফুটপাতও পরিষ্কার করছেন শিক্ষার্থীরা। তারা বলছেন, ‘সবকিছুকে সুন্দর রাখার দায়িত্ব আমাদেরই। রাজধানীর বাংলামোটর মোড়ে রাস্তা পরিষ্কারের কাজ করতে দেখা যায় নুরুন্নাহার গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজে পড়ুয়া সাদিকুন রায়হান রাইসাসহ বেশ কয়েকজনকে। রাইসা বলেন, ‘আমরা কয়েকজন এখানে রাস্তা ও এর আশপাশ পরিষ্কার করছি। দেশপ্রেমের জায়গা থেকেই এসেছি। আমি কখনো ভাবিনি এভাবে দেশের সেবা করতে পারব। এখানে আমার অনেক বড় আপু ও ভাইয়ারাও কাজ করছেন। তাদের সঙ্গে কাজ করছি, এটা খুব ভালো লাগছে।’

অন্যদিকে আন্দোলন চলাকালে রাস্তার পাশের বিভিন্ন স্থাপনার দেয়ালে সরকারবিরোধী যেসব স্লোগান লেখা হয়েছিল তাও মুছতেও কাজ করছেন শিক্ষার্থীরা। ধানমন্ডির ২৭ নম্বর সড়ক ও এর আশপাশের যেসব স্থাপনায় দেয়ালে স্লোগান লেখা হয়েছিল সেখানে পুনরায় সাদা রং করে আঁকা হচ্ছে আন্দোলনে শহিদ হওয়া ফায়াজসহ বিভিন্ন জনের ছবি। রং-তুলিতে ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নানা সময়ের চিত্র। 

শিক্ষার্থীদের এমন উদ্যোগকে স্বাগত জানাচ্ছেন সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে পথচারীরা। গতকাল বিকেলে পান্থপথের একজন পথচারী রেজা করিম বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা যেভাবে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করছেন তা নিঃসন্দেহে প্রশংসার যোগ্য। তারা খুব সুশৃঙ্খলভাবে এটি নিয়ন্ত্রণ করছেন।’ রিকশাচালক মো. আলী বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা যেভাবে কাজ করছেন, আমি তাদের সঙ্গে আছি। আমি গোলাগুলির সময়ও তাদের সঙ্গে ছিলাম। তারা এখন যে কাজটা করছেন, এটা খুবই ভালো হচ্ছে।’ 

পালাক্রমে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে যারা কাজ করছেন তাদের জন্য পানি-খাবার নিয়ে আসছেন সাধারণ জনতা। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিপর্যায় থেকে ছাতা ও ক্যাপও দেওয়া হচ্ছে তাদের। 

তারল্য সহায়তা পাবে ৩ ব্যাংক

প্রকাশ: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৯:৫২ এএম
আপডেট: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:০৫ এএম
তারল্য সহায়তা পাবে ৩ ব্যাংক
তারল্য সংকটে থাকা ব্যাংকগুলোকে সহায়তা করবে বাংলাদেশ ব্যাংক। ছবি: খবরের কাগজ গ্রাফিকস

দুর্বল ব্যাংকগুলোকে ঘুরে দাঁড়াতে সহযোগিতা করতে বাংলাদেশ ব্যাংক নিজ দায়িত্বে তারল্য সুবিধা দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। আপাতত তিন ব্যাংকের আবেদন পর্যালোচনা করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর মধ্যে রয়েছে বেসরকারি খাতের ইসলামী ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক ও সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক। কোন ব্যাংক থেকে তারল্য সহায়তা নিয়ে দুর্বল ব্যাংকগুলোকে দেওয়া হবে তারও একটি প্রাথমিক তালিকা করা হয়েছে। এই তালিকায় প্রথমেই রয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংক। এ ছাড়াও আর্থিক অবস্থা ভালো এমন কয়েকটি বেসরকারি ব্যাংকও এ তালিকায় রয়েছে। আগামী দুই-তিন দিনের মধ্যেই এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসতে পারে।

রবিবার (১৫ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংকের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে তারল্য সহায়তা চাওয়া ওই তিন ব্যাংকের প্রতিনিধিরা বৈঠক করেছেন। বৈঠক সূত্র জানায়, উল্লিখিত তিনটি ব্যাংক সুনির্দিষ্ট দাবি নিয়ে আবেদন করার পরিপ্রেক্ষিতে ব্যাংকগুলোর প্রতিনিধিদের ডাকা হয়েছিল। তাদের চাহিদা হাজার হাজার কোটি টাকা। কিন্তু প্রাথমিকভাবে পৃথক বৈঠকে তাদের বলা হয়েছে যে, প্রতিটি ব্যাংক যেন নিজস্ব ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নিজেদের আর্থিক অবস্থা পর্যালোচনা করে বাস্তবতাকেন্দ্রিক তারল্য চাহিদার পরিমাণ নির্ধারণ করে নিয়ে আসে। তার আলোকে বাংলাদেশ ব্যাংক সিদ্ধান্ত দেবে কী পরিমাণ সহায়তা দেওয়া হবে।

ওই তিন ব্যাংকের একটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাম প্রকাশ না করার শর্তে এই প্রতিবেদককে বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলে দিয়েছেন, বারবার তারল্য সুবিধা দেওয়া হবে না। তাই ঠিক কতটুকু অর্থ সহায়তা পেলে প্রতিটি দুর্বল ব্যাংক ঘুরে দাঁড়াতে পারবে তার আলোকে চাহিদাপত্র দিতে বলা হয়েছে।

বৈঠকের অপর একটি সূত্র জানায়, সম্প্রতি বেসরকারি একটি ব্যাংককে ১ হাজার কোটি টাকার বিশেষ তারল্য সুবিধা দেওয়া হয়েছিল। ব্যাংকটি ওই টাকা নিয়ে অনুমোদনহীন খাতে ব্যয় করে ফেলেছে। ওই টাকার কোনো হিসাব দিতে পারছে না ব্যাংকটি। এদিকে ব্যাংকটির তারল্য সংকট রয়েই গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক এমন অভিজ্ঞতার পুনরাবৃত্তি করতে চায় না বলে বার্তা দিয়েছে দুর্বল ব্যাংকগুলোকে। এখন যেহেতু বাংলাদেশ ব্যাংক নিজে দায় নিয়ে ব্যাংক খাতের উন্নয়নের উদ্দেশ্যে দুর্বল ব্যাংককে তারল্য সুবিধা দেবে, তাই অর্থের সঠিক ব্যবহারে ফোকাস করবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর তৎকালীন গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার আত্মগোপনে চলে যান। এরপর প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার অর্থনীতিবিদ আহসান এইচ মনসুরকে গভর্নর হিসেবে নিয়োগ দেয়। নতুন গভর্নর ব্যাংক খাতের সংস্কারে মনোযোগ দেন। ইতোমধ্যে অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে দুর্বল হয়ে পড়া ব্যাংকগুলোর পরিচালনা পর্ষদ বাতিল করে নতুন পর্ষদ নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিভিন্ন আর্থিক প্রতিবেদনের সূত্র ধরে গভর্নর সাংবাদিকদের জানান মোট ১০টির মতো ব্যাংক আর্থিকভাবে দুর্বল অবস্থায় রয়েছে। এর মধ্যে উপরোল্লিখিত তিনটি ব্যাংকের সঙ্গে তারল্য সহায়তা নিয়ে আলোচনা চলমান রয়েছে। অপর সাতটি ব্যাংকের মধ্যে রয়েছে পদ্মা ব্যাংক, আইসিবি ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক, ফাস্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক ও কমার্স ব্যাংক।

এর মধ্যে অন্য সব ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ থাকলেও পদ্মা ব্যাংকের তা নেই। এই ব্যাংকটিতে কোনো নগদ টাকা নেই। আমানতকারীরা চেক নিয়ে দফায় দফায় ব্যাংকটির বিভিন্ন শাখায় ধরনা দিয়েও নিজেদের টাকা তুলতে পারছেন না।

পদত্যাগী শেখ হাসিনা সরকারের শেষভাগে এসে দুর্বল ব্যাংকগুলোকে সবল ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করার উদ্যোগ নিলে এক্সিম ব্যাংকের তৎকালীন চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার পদ্মা ব্যাংককে অ্যাকুইজিশন করার ঘোষণা দেন। এরপর বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে নিয়মানুযায়ী সম্পদ ও দায়দেনা হিসাব করতে নিরীক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সরকার পতনের পর এ ব্যাপারে কোনো আপডেট পাওয়া যায়নি। ফলে পদ্মা ব্যাংক নিয়ে অনিশ্চয়তা আপাতত কাটছে না। অন্য দুর্বল ব্যাংকগুলোর চাহিদার ভিত্তিতে পর্যায়ক্রমে কেন্দ্রীয় ব্যাংক তারল্য সহায়তা দেবে বলে ঘোষণা রয়েছে।

উন্নয়ন কার্যক্রমে স্থবিরতা

প্রকাশ: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০৫ পিএম
উন্নয়ন কার্যক্রমে স্থবিরতা
খবরের কাগজ গ্রাফিকস

সরকার পরিবর্তনের পর সারা দেশের উন্নয়ন কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারপ্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী (একনেক) কমিটি গঠন করা হলেও এখন পর্যন্ত কোনো সভা হয়নি। ২ লাখ ৭৮ হাজার কোটি টাকার বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিবি) কাটছাঁট করা হবে বলে পরিকল্পনা উপদেষ্টা অর্থনীতিবিদ ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ জানিয়েছেন।

পরিকল্পনা সচিব সত্যজিত কর্মকারকে অব্যাহতি দেওয়ার পর নতুন কোনো সচিব নিয়োগ দেওয়া হয়নি। ফলে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা প্রকল্প প্রণয়ন ও বাতিলের ব্যাপারে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছেন। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের টেন্ডার কার্যক্রমও একেবারে থমকে গেছে।

এদিকে আওয়ামী লীগপন্থি ঠিকাদাররা এখনো ভয়ে-আতঙ্কে আত্মগোপনে রয়েছেন। জানা গেছে, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি), গণপূর্ত অধিদপ্তর, সড়ক ও জনপথ (সওজ), সিটি করপোরেশনসহ উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোতেও একধরনের আতঙ্কের পরিবেশ বিরাজ করছে। কারণ ইতোপূর্বে গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা কর্মকর্তাদের বেশির ভাগই আওয়ামী লীগ সমর্থক বলে পরিচিত। ফলে তারা আতঙ্কে আছেন। অন্যদিকে বেশির ভাগ ঠিকাদারও আওয়ামী লীগ সরকারের সমর্থক থাকায় তারা গা-ঢাকা দিয়েছেন। সামগ্রিকভাবে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, সুনির্দিষ্ট গাইডলাইনের ভিত্তিতে ৫৮টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের উন্নয়ন প্রকল্প প্রণয়ন, প্রক্রিয়াকরণ, অনুমোদন ও সংশোধন করা হয়। কিন্তু প্রকল্প কাটছাঁট করার ক্ষেত্রে এখনো তারা কোনো গাইডলাইন বা বিজ্ঞপ্তি পাননি। শুধু পরিকল্পনা উপদেষ্টার মৌলিক নির্দেশনায় কোনো রকমে কাজ করছেন। কখন একনেকের সভা হবে, তাও কেউ বলতে পারছেন না। কারণ আগের সব প্রকল্প যাচাই করে পর্যালোচনা সভা করার পর প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা করতে হবে। তারপর একনেক সভায় অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করতে হবে। এসব প্রক্রিয়ায় আরও কিছুদিন সময় লাগতে পারে।

সার্বিক ব্যাপারে জানতে পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য (সচিব) ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত সচিব সোলেমান খানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি বরং পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন। তার কথা অনুযায়ী পরিকল্পনা উপদেষ্টার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তিনি ব্যস্ত থাকায় কোনো মন্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।
 
২ জুলাইয়ের পর একনেকের কোনো সভা হয়নি
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সব রেকর্ড ছাড়িয়ে দেশের উন্নয়নে গত ৯ নভেম্বর একনেকের সভায় ৪৪টি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এরপর অনুষ্ঠিত একনেকের প্রায় সব সভায় কমপক্ষে ১০টি প্রকল্প পাস হয়েছে। সর্বশেষ গত ২ জুলাই শেখ হাসিনা সরকারের শেষ একনেক সভায় ১১টি প্রকল্প অনুমোদন হয়েছে। এরপর গত ৫ জুলাই থেকে ছাত্ররা কোটাবিরোধী আন্দোলন শুরু করেন। তারপর শুরু হয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রিত্ব থেকে পদত্যাগ করে ভারতে চলে যান। এরপর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করা হয়। এতে প্রথমে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার দায়িত্ব পান সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। পরে উপদেষ্টার সংখ্যা বাড়ানো হলে গত ১৬ আগস্ট অর্থনীতিবিদ ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদকে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়। তিনি দায়িত্ব নেওয়ার চার দিন পর ১৯ আগস্ট রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় ও পরিকল্পনা কমিশনের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করেন। 

এদিকে গত ১৪ আগস্ট জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে এক প্রজ্ঞাপনে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব সত্যজিত কর্মকারের নিয়োগ বাতিল করা হয়। ফলে সভায় সভাপতিত্ব করেন পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত সদস্য (সচিব) আবদুল বাকী। সভা শেষে পরিকল্পনা উপদেষ্টা বলেন, ‘জিডিপি বাড়ানোর চেয়ে কর্মসংস্থান বাড়ানো এখন জরুরি হয়ে উঠেছে। প্রকল্প যাচাই-বাছাই করাও খুব প্রয়োজন। কারণ এখানে অনেক বিশৃঙ্খলা রয়েছে। বিশেষ করে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে যেসব প্রকল্প নেওয়া হয়েছে, সেগুলো আবার পর্যালোচনা করা হবে, ছাঁটাই করা হবে।

এডিপি থেকে বাদ পড়তে পারে লাখ কোটি টাকা
প্রকল্প প্রণয়নের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পরিকল্পনা উপদেষ্টা সভায় প্রকল্প কাটছাঁট বা বাতিলের কথা বললেও এখন পর্যন্ত কোনো লিখিত নির্দেশনা হাতে পাওয়া যায়নি। তার পরও একনেক অধিশাখা থেকে অসংখ্য প্রকল্প ফেরত দেওয়া হয়েছে। সেগুলো ভৌত অবকাঠামো বিভাগ, শিল্প ও শক্তি বিভাগ, আর্থসামাজিক বিভাগসহ বিভিন্ন বিভাগে পর্যালোচনা করা হচ্ছে। কয়েকটি বাতিল করে ফেরত দেওয়া হয়েছে মন্ত্রণালয়ে। শেখ পরিবারের সঙ্গে যুক্ত কোনো প্রকল্প বা রাজনৈতিক বিবেচনায় গ্রহণ করা হয়েছে, এমন প্রকল্প বাদ দেওয়া হচ্ছে। আবার কম গুরুত্বপূর্ণ এবং ম্যুরাল, মূর্তি তৈরির প্রকল্প থাকলে তা বাতিল করা হচ্ছে। সব মিলিয়ে চলতি অর্থবছরে এডিপি থেকে প্রায় ১ লাখ কোটি টাকা বাদ দেওয়ার ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে। 

এদিকে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে সব মিলিয়ে ২ লাখ ৭৮ হাজার কোটি টাকা এডিপিতে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বছরের শুরু থেকেই দেশে অস্থিরতা চলতে থাকায় উন্নয়নকাজ ঝিমিয়ে পড়ে। ৫৬টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মধ্যে ১১টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ গত জুলাই মাসে মাত্র ১ শতাংশ এডিপি বাস্তবায়ন করতে পেরেছে। যেখানে আগের বছরের জুলাইয়ে ৩৫টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ সক্ষম হয়েছিল। 

পরিকল্পনা সচিবের পদটি এখনো খালি রয়েছে। পরিকল্পনা কমিশনে কয়েকজন নতুন সদস্য (সচিব) নিয়োগ পেয়েছেন। কিন্তু তারা কথা বলতে নারাজ। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক সদস্য খবরের কাগজকে বলেন, আগে যা-ই হোক না কেন, এখন থেকে পরিকল্পনা কমিশনে সব প্রকল্পেরই পর্যালোচনা সভা করতে হবে। সেখানে যাচাই-বাছাইয়ের পর কাটছাঁট হয়ে যাবে অনেক প্রকল্প। তারপর যা থাকবে সেগুলোর বিষয়ে পিইসি সভা অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে পর্যবেক্ষণ করার পর অনুমোদনের উপযোগী হলে উপদেষ্টার কাছে উপস্থাপন করা হবে। আর প্রকল্প ৫০ কোটি টাকার ওপরে হলে একনেক সভায় যাবে সরকারপ্রধানের চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য। এসব প্রক্রিয়া শেষ করে আগামী একনেক সভা হতে আরও মাসখানেক সময় লাগতে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।

বদলি-আতঙ্কে কর্মকর্তারা, নতুন করে হয় না টেন্ডার 
গণপূর্ত অধিদপ্তর, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর, সড়ক পরিবহন, সিটি করপোরেশনসহ সরকারি সব কেনাকাটা ইলেকট্রনিক গভর্নমেন্ট প্রকিউরমেন্ট (ই-জিপি)’-এর মাধ্যমে হয়। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আগস্ট মাসে সরকার পরিবর্তনের ফলে সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের প্রায় সব অফিসে বদলি-আতঙ্কে আছেন কর্মকর্তারা। ঢিলেমিভাবে চলছে কাজ। অনেকেই মুখ খুলে কিছু বলতে চাচ্ছেন না। ফলে টেন্ডার কার্যক্রমও একেবারেই কমে গেছে। 

এ ব্যাপারে জানতে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ে যোগাযোগ করা হলে এক্সচেঞ্জ অফিসে যোগাযোগ করতে বলেন। এই প্রতিষ্ঠানের ঢাকা জেলা অফিসে যোগাযোগ করা হলে নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ফিরোজ আলম তালুকদার খবরের কাগজকে বলেন, ‘উন্নয়ন কার্যক্রমের গতি কমে গেছে। যা কাজ হচ্ছে সেগুলো আগের অনুমোদন করা প্রকল্পের কাজ। টেন্ডার খুবই কম হচ্ছে, যা হচ্ছে ই-জিপির মাধ্যমে। চলতি অর্থবছরে কোনো প্রকল্প অনুমোদন হলে জিও (সরকারি আদেশ) জারি, প্রকল্প পরিচালক নিয়োগসহ সব প্রক্রিয়া শেষে তার টেন্ডার হতে তিন-চার মাস লাগতে পারে। 

এ সময় রেজা উদ্দিন নামে এক ঠিকাদার বলেন, ‘সরকার পরিবর্তনের ফলে স্যারদের মধ্যে বদলি-আতঙ্ক কাজ করছে। এ জন্য অনেকে ঠিকমতো অফিসে আসেন না। এলেও অফিসে থাকেন না। নতুন কোনো টেন্ডার হয়নি। আগের টেন্ডারের কাজই করা হচ্ছে। এটা লটারির মতো। দেখা যায়, ২০০ টেন্ডারে অংশ নিলে হয়তো পাঁচটি ভাগ্যে জোটে। অনেকেই যারা আওয়ামী লীগপন্থি ঠিকাদার তারা ভয়ে-আতঙ্কে আত্মগোপনে আছেন।’ 
জাহিদসহ অন্য ঠিকাদাররাও বলছেন, ‘কোনো কাজ নেই। অফিসে এলেও অফিসারদের ঠিকমতো পাচ্ছি না। বিলও আটকে থাকছে। সরকারি অফিসে একেবারে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে।’ 

এদিকে গণপূর্ত অধিদপ্তরের অফিসেও দেখা গেছে একই অবস্থা। এই অফিসে অনেক লোকের সমাগম দেখা দিলেও ঠিকাদারি থেকে শুরু করে অর্থ পরিশোধ সব এক্সচেঞ্জ অফিসে হয়। তাই রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে গণপূর্ত অধিদপ্তরের মহাখালী গণপূর্ত বিভাগ, সাভার গণপূর্ত বিভাগসহ বিভিন্ন বিভাগে যোগাযোগ করলে কর্মকর্তারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, কাজ একেবারে থমকে গেছে। টেন্ডার হচ্ছে না। নতুন করে একনেক সভা না হওয়া পর্যন্ত কাজে গতি আসবে না। 

এ সময় এনএন এন্টারপ্রাইজের মো. রাসেল হাওলাদার বাচ্চু এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘সরকার বদলের পর কাজে একেবারে স্থবিরতা চলছে। সর্বশেষ গত জুনে টেন্ডার হয়েছে। সে সময়ে একটা কাজ পেয়েছি। কিন্তু পেমেন্ট পাচ্ছি না। সে জন্য অফিসে আসা। কিন্তু স্যারদের সময়মতো পাওয়া যাচ্ছে না। তারা বদলি-আতঙ্কে এখান-ওখান ছোটাছুটি করছেন। এ জন্য ঠিকমতো অফিসে আসেন না। অন্য এক প্রশ্নের উত্তরে এই ঠিকাদার বলেন, ‘ই-জিপিতে টেন্ডার হলেও অফিসে আসতে হয়। পুরোনো প্রকল্পের কাজ একেবারে শেষ পর্যায়ে। নতুন করে একনেক সভা না হলে কাজ আসবে না। হাত গুটিয়েই চলতে হবে। অনেক ঠিকাদারই আসছেন না।’ 

সরকারি সব কেনাকাটা ই-জিপিতে হয়। বর্তমানে কেমন হচ্ছে, তা জানতে বাংলাদেশ পাবলিক প্রকিউরমেন্ট অথরিটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সোহেল রহমান চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তিনি অফিসে না আসায় ও ফোন বন্ধ থাকায় কোনো মন্তব্য জানা সম্ভব হয়নি। তবে অন্য এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আগের মতো কোনো টেন্ডার হয় না। কারণ হচ্ছে সরকার পরিবর্তনের পর নতুন অর্থবছরে কোনো প্রকল্প অনুমোদন হয়নি।

৭০ প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব জব্দ

প্রকাশ: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:৫০ এএম
আপডেট: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:৫২ এএম
৭০ প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব জব্দ
আমদানি, রপ্তানি ও উৎপাদনে আর্থিক অনিয়ম করায় ৭০টি প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব জব্দ করেছে ঢাকা কাস্টমস বন্ড কমিশনারেটের

আর্থিক অনিয়ম করায় ৭০টি প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে। জাল কাগজপত্র দিয়ে শুল্কমুক্ত সুবিধায় ১ হাজার ৩০০ কোটি টাকার কাঁচামাল আমদানি করে খোলাবাজারে বিক্রি করে দিয়েছে এসব প্রতিষ্ঠান।

বিগত সরকারের শেষ সময়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) ঢাকা কাস্টমস বন্ড কমিশনারেটের (দক্ষিণ) করা তদন্ত প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা যায়।

প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে জানা যায়, ৭০টি প্রতিষ্ঠানের গত পাঁচ বছরের আমদানি, রপ্তানি ও উৎপাদনের তথ্য খতিয়ে দেখে গরমিল পাওয়া গেছে। শাস্তি হিসেবে এই ৭০টি প্রতিষ্ঠানের বন্ড সুবিধা বাতিল করা হয়েছে। আমদানি-রপ্তানির লাইসেন্স স্থগিত এবং ব্যবসা চিহ্নিতকরণ নম্বর (বিন) বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এ অপকর্মের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে এনবিআর মামলা করেছে। এসব প্রতিষ্ঠানের প্রকৃত মালিকদের খোঁজ পাওয়া যায়নি। তবে সন্ধান চলছে। 

সরকার রপ্তানি উৎসাহিত করতে শতভাগ রপ্তানিমুখী প্রতিষ্ঠানকে কাঁচামাল আমদানিতে ‘বন্ড সুবিধা’ নামে শুল্কমুক্ত সুবিধায় কাঁচামাল আমদানির সুবিধা দিয়েছে। এই ৭০টি প্রতিষ্ঠান বন্ড সুবিধা নিয়ে শুল্কমুক্ত কাঁচামাল আমদানি করেছে। এর মধ্যে ২৭টি প্রতিষ্ঠানের বাস্তবে কোনো অস্তিত্বই নেই। জাল কাগজপত্র দেখিয়ে ব্যাংকের মাধ্যমে এলসি খুলে এসব অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠানের নামেও শুল্ক না দিয়ে আমদানি করা কাঁচামালের সবটা বাজারে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। বাকি ৪৩টি প্রতিষ্ঠানের রপ্তানি করা পণ্য তৈরিতে যতটা কাঁচামাল প্রয়োজন ছিল, মিথ্যা তথ্য দিয়ে তারচেয়ে কয়েক গুণ বেশি কাঁচামাল আমদানি করেছে। আমদানি করা অতিরিক্ত কাঁচামাল বাজারে বিক্রি করে দিয়েছে।

এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মো. আবদুল মজিদ খবরের কাগজকে বলেন, শুধু বন্ড অনিয়মে সরকার বছরে প্রায় ১ লাখ কোটি টাকার রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে। রপ্তানি উৎসাহিত করতে শুল্কমুক্ত কাঁচামাল আমদানির সরকারি সুবিধা দেওয়া হয়েছে। শুল্ক না দিয়ে আনলে কম দাম পড়ছে। অন্যদিকে একই জাতীয় কাঁচামাল দেশি প্রতিষ্ঠান নিয়মকানুন মেনে রাজস্ব পরিশোধ করে উৎপাদন করে ন্যূনতম লাভ রেখে বিক্রি করলেও শুল্কমুক্তভাবে আমদানি করা কাঁচামালের চেয়ে বেশি দাম পড়ছে। কম দামে পাওয়া যাওয়ায় ক্রেতা বেশি দিয়ে কিনছেন না। আর এভাবেই দেশি শিল্প অসম প্রতিযোগিতায় পড়ছে। আমদানিকারক অসৎ ব্যবসায়ীদের কারণে নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে দেশি শিল্প। এরা সংঘবদ্ধ চক্র। বছরের পর বছর অবৈধ ব্যবসা করেও ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকছে।

তৈরি পোশাক খাতের সংগঠন বিকেএমইএ সভাপতি মো. হাতেম খবরের কাগজকে বলেন, যারা শুল্কমুক্তভাবে কাঁচামাল আমদানি করে উৎপাদনে না লাগিয়ে অবৈধভাবে বাজারে বিক্রি করছেন তারা অসাধু ব্যক্তি। এদের কারণে সৎ ব্যবসায়ীরা বিপদে পড়ছেন। তবে এদের একার পক্ষে এ অপকর্ম করা সম্ভব না। এদের কাছ থেকে অনৈতিক সুবিধা নিয়ে এনবিআর ও ব্যাংকের কিছু অসাধু ব্যক্তি সহযোগিতা করছেন। সবাইকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।

বন্ড কমিশনারেটের প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে জানা যায়, সম্পূর্ণ রপ্তানিমুখী প্রতিষ্ঠান হিসেবে এই ৭০টি প্রতিষ্ঠান এনবিআরে তালিকাভুক্ত হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠান বিনা শুল্কে সুতা, কাপড়, হ্যাঙ্গার, পলিথিন, শার্টের কলার, হাতায় ব্যবহৃত শক্ত কাগজ, আর্ট কার্ড, ডুপ্লেক্স বোর্ড, মিডিয়াম পেপার, লাইনার পেপার আমদানি করেছে। বৈদ্যুতিক তারসহ বিভিন্ন বৈদ্যুতিক সরঞ্জামাদি, সকেট, পলিপ্রোপাইলিন (পিপি), বিএপিপি ও অ্যাডহেসিভ টেপ, প্লাস্টিক দানা, রাসায়নিক দ্রব্য, রডও আমদানি করেছে।

প্রসঙ্গত, বন্ড সুবিধা পাওয়ার অন্যতম শর্ত হলো, রপ্তানির জন্য পণ্য তৈরিতে যতটা কাঁচামাল প্রয়োজন, ঠিক ততটাই আমদানি করতে হবে। প্রয়োজনের চেয়ে একটুও বেশি আনা যাবে না। আমদানির সবটা কাঁচামাল কারখানায় পণ্য উৎপাদনে ব্যবহার করার আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কোনো কারণে যদি পণ্য উৎপাদনের পর কাঁচামাল অবশিষ্ট থাকে, তবে তা এনবিআরের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে বাজারে বিক্রি করে দিতে পারবে। এ ক্ষেত্রে হিসাব কষে শুল্ক-কর-ভ্যাট দিতে হবে। এসব নিয়ম না মানলে বন্ড সুবিধা বাতিল হবে। রাজস্ব আইন অনুসারে শাস্তি হবে। ৭০টি প্রতিষ্ঠান এসব শর্ত ভঙ্গ করেছে। 

প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, এ প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রকৃত মালিকরা আড়ালে থেকে এসব অপকর্ম করিয়েছেন। তারা ভাড়া করা লোক দিয়ে আমদানি করা কাঁচামাল বন্দর থেকে ছাড়িয়ে আনা ও পরিবহনে তুলে দেওয়ার কাজ করিয়েছেন। পরিবহনচালকের কাছে ঠিকানা বুঝিয়ে দিয়ে ভাড়া করা লোকরা সরে পড়েছেন। চালক নির্দিষ্ট ঠিকানামতো কাঁচামাল পৌঁছে দিয়েছেন। গুদামের দায়িত্বে থাকা অন্য ব্যক্তিরা এসব মাল বুঝে নিয়েছেন। এসব ভাড়া করা লোকের কাজের বিনিময়ে পারিশ্রমিক মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। এরা কেউই প্রকৃত মালিকদের খোঁজ জানেন না। গুদামের দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিরা শুল্কমুক্ত কাঁচামাল দোকানে বিক্রি করে দিয়েছেন। বিক্রি করে পাওয়া অর্থ মোবাইল ব্যাংকিং বা নির্দিষ্ট ব্যাংক হিসাবে জমা দিয়েছেন। এসব পণ্য এনে রাজধানীর পুরান ঢাকার ইসলামপুর, হাতেম টাওয়ার, উর্দু রোড, গাউছিয়া, নিউ মার্কেট, টঙ্গী, যাত্রাবাড়ী, গুলিস্তান, চট্টগ্রামের বকশীবাজারের বিভিন্ন দোকানে বিক্রি করে দিয়েছেন; যা এসব দোকান থেকে সাধারণ ক্রেতারা কিনে নিচ্ছেন। 

নরসিংদীর বাবুরহাট, মাধবদী, নারায়ণগঞ্জের টানবাজার এলাকায়, সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর, এনায়েতপুর, সোহাগপুর ও বেলকুচিতে বন্ডের সুতা বিক্রি করা হয়েছে। এসব এলাকার বিভিন্ন দোকানে বিনা শুল্কে আনা কাঁচামাল কোনো রাখঢাক ছাড়াই বিক্রি হচ্ছে। ৭০টি প্রতিষ্ঠানের অসাধু মালিকরা নিজস্ব প্রতিনিধি পাঠিয়ে অধিকাংশ সময়ে আগেই জেনে নিয়েছেন কোন দোকানে কোন পণ্য কতটা প্রয়োজন। অনেক সময় অগ্রিমও নিয়ে নিয়েছেন। কৌশলে সুবিধামতো সময়ে ভাড়া করা লোক দিয়ে পণ্য পৌঁছে দিয়েছেন। দেশে উৎপাদিত পণ্যের চেয়ে কম দামে পাওয়া যাওয়ায় খুচরা ও পাইকারি পর্যায়ে আগ্রহের সঙ্গেই এসব কিনেছেন।

ছাত্ররাজনীতি বন্ধের দাবি ফের চ্যালেঞ্জের মুখে ঢাবির একাডেমিক কার্যক্রম

প্রকাশ: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:০৫ এএম
আপডেট: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:১৯ এএম
ফের চ্যালেঞ্জের মুখে ঢাবির একাডেমিক কার্যক্রম
ঢাবির কার্জন হল। ছবি: সংগৃহীত

ছাত্ররাজনীতি বন্ধের ইস্যুতে আবারও চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে যাচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) একাডেমিক কার্যক্রম। আগামী ২২ সেপ্টেম্বর থেকে ক্লাস শুরুর সিদ্ধান্তের ফলে প্রায় ৮৩ দিন পর একাডেমিক কার্যক্রম চালুর সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল। কিন্তু শিক্ষার্থীরা ছাত্ররাজনীতি বন্ধ ঘোষণা না করলে ক্লাসে ফিরবেন না বলে জানিয়েছেন। তারা কার্যকর ছাত্র সংসদের দাবি করছেন। ফলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের ইতিবাচক কর্মকাণ্ডের (গণরুম বন্ধ করে মেধার ভিত্তিতে সিট বরাদ্দ) পরেও শ্রেণি কার্যক্রম চালু করা নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। 

চলতি বছরের ১ জুলাই থেকে সর্বজনীন পেনশনের প্রত্যয় স্কিম বাতিলসহ তিন দফা দাবিতে সর্বাত্মক কর্মবিরতিতে নামেন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। বন্ধ হয়ে যায় একাডেমিক কার্যক্রম। এর মাঝে শুরু হয় চাকরিতে কোটা সংস্কারের আন্দোলন। ১৭ জুলাই থেকে কোটা সংস্কার আন্দোলনের উদ্ভূত পরিস্থিতির মধ্যে অনির্দিষ্টকাল বন্ধ ঘোষণা করা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। তবে ২০ দিন পর ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতন হলে ৬ আগস্ট খোলে বিশ্ববিদ্যালয়। প্রশাসনিক কার্যক্রম চালু হলেও স্থবিরতা দেখা দেয় একাডেমিক কার্যক্রমে। সিন্ডিকেটের এক জরুরি সভায় গত বৃহস্পতিবার সিদ্ধান্ত আসে ২২ সেপ্টেম্বর থেকে একাডেমিক কার্যক্রম শুরু হবে। একে একে হলগুলোতে বৈধ শিক্ষার্থীদের সিট দেওয়ার পাশাপাশি গণরুম-গেস্টরুম বন্ধ হলেও শিক্ষার্থীদের আরেক দাবি দলীয় রাজনীতিমুক্ত ক্যাম্পাস।

গত কয়েক দিন ধরে ‘দলীয় রাজনীতিমুক্ত ক্যাম্পাস আন্দোলন’ ব্যানারে বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী দুই দফা দাবিতে উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি প্রদান, অবস্থান কর্মসূচি, বিক্ষোভ মিছিল কর্মসূচি পালন করেছেন। ধারাবাহিক কর্মসূচির অংশ হিসেবে আজ রবিবার উপাচার্যের বাসভবনসংলগ্ন স্মৃতি চিরন্তনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। আগামী ২২ সেপ্টেম্বরের মধ্যে দলীয় রাজনীতিমুক্ত ক্যাম্পাস বিষয়ে যদি কোনো ধরনের আশ্বাস প্রদান ও কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা না হয় ধারাবাহিকভাবে কঠোর কর্মসূচিতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেবেন তারা। 

এই আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগের শিক্ষার্থী নাফিউর রহমান খবরের কাগজকে বলেন, ‘ছাত্র-জনতার অংশগ্রহণে জুলাই বিপ্লবের মধ্যে দেশ নতুনভাবে স্বাধীন হয়েছে। হল-ক্যাম্পাসে দলীয় দখলদারত্ব এবং লেজুড়বৃত্তির যে রাজনীতি ছিল, তার অবসান হয়েছে। আমরা চাই না, সেসব আবার ফিরে আসুক। আমাদের যে আন্দোলন ছিল, সেই আন্দোলনের নয় দফার মধ্যে কিন্তু একটি দফা ছিল দলীয় রাজনীতির অবসান। আমরা চাই, ক্যাম্পাসে শিক্ষক-শিক্ষার্থী-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দলীয় রাজনীতি- এগুলো যেন ফিরে না আসে। আমাদের শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে বিরাজনীতিকীকরণের পক্ষে নয়, আমরা চাই সুস্থ ধারার ছাত্ররাজনীতি, যা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত করতে চায়।’

আন্দোলনকে আরও বেগবান করতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা সংঘবদ্ধ হচ্ছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শ্রেণি প্রতিনিধিদের সঙ্গে আমাদের কথা হচ্ছে। রবিবার আমাদের অবস্থান কর্মসূচি রয়েছে। এ ছাড়া ২২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আমাদের সময় রয়েছে। এই সময়ের মধ্যে নানাভাবে আমরা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে চাপ দেব যেন তারা আমাদের কথা শোনেন। দলীয় রাজনীতিমুক্ত যে ক্যাম্পাস সেটি মেনে নিলে অবশ্যই আমরা ক্লাসে ফিরব। যদি না মেনে নেন, আমরা ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে কঠোর কর্মসূচিতে যাব। গত শুক্রবার প্রক্টর স্যারের সঙ্গে কথা হয়েছে, তিনি আমাদের বলেছেন শিক্ষার্থীরা যদি নিয়মতান্ত্রিক ও ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন চালিয়ে নিয়ে যেতে পারে অবশ্যই উপাচার্য আমাদের যে দাবি সেটি মেনে নিবেন।’

সেশনজট কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে এমন প্রসঙ্গ উল্লেখ করে আন্দোলনের আরেক সংগঠক সমাজবিজ্ঞান স্নাতকোত্তরে অধ্যয়নরত ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘সেশনজট আরও বৃদ্ধি পাবে এটি ঠিক, তবে তা কিন্তু কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে, কিন্তু ফ্যাসিস্ট সিস্টেমের মাধ্যমে কেউ দলীয় রাজনীতির এজেন্ডা বাস্তবায়ন, দখলদারত্ব এবং রাজনৈতিক কার্যালয় থেকে যে হুকুম আসবে সেটি বাস্তবায়ন করবে আমরা এমন রাজনীতি চাই না। ইতোমধ্যে রক্ত দিয়ে ফ্যাসিস্ট সরকারকে তাড়িয়েছি, এখন আমরা এই সিস্টেম আর চাই না। এখন আমাদের যদি ক্ষতিও হয়, তারপরও এই ফ্যাসিস্ট দলীয় রাজনীতির যে সিস্টেম সেটি উৎখাত করব।’

ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘দেশের সব কিছুর মধ্যেই গতিশীলতা ফিরলেও এখনো একাডেমিক স্থবিরতার মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। যার ফলে সেশনজটের পাশাপাশি চাকরির বাজার থেকে আমাদের একটি দূরত্ব সৃষ্টি হচ্ছে। বলা হচ্ছে, ২২ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস শুরু হবে কিন্তু আমাদের যে আন্দোলন সেখানে কিন্তু একটা অন্যতম দাবি ছিল দলীয় রাজনীতিমুক্ত ক্যাম্পাস নিশ্চিত করা। সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত না নিয়ে ক্লাস শুরুর সিদ্ধান্ত নিলেন। আমরা তো এমন ক্যাম্পাস চাইনি।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ক্লাস-পরীক্ষায় শুরুর পক্ষে অবস্থান নিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘আমরা এখনই ক্লাস-পরীক্ষায় বসতে রাজি কিন্তু ক্যাম্পাস-হলে দলীয় রাজনীতি থাকবে, এটির পক্ষে তো আমরা না। হলগুলোতে যেহেতু ছাত্রসংগঠনগুলোর প্রতিপত্তি নেই, শিক্ষার্থীরা অনেক ভালো আছেন। আমরা চাই অবিলম্বে ক্যাম্পাসকে দলীয় রাজনীতিমুক্ত ঘোষণা করে ছাত্র সংসদ নির্বাচন দেওয়া হোক, যেন শিক্ষার্থীদের কথা বলা ও সুস্থ রাজনীতি চর্চা করার একটি জায়গা তৈরি হয়।’

চলতি বছরে স্নাতকোত্তর শেষ হওয়ার কথা ছিল সংস্কৃত বিভাগের আরিফুল ইসলামের, কিন্তু তিনি সবে স্নাতক শেষ করেছেন। তিনি খবরের কাগজকে বলেন, ‘চলতি বছরে স্নাতক শেষ হওয়ার কথা ছিল কিন্তু সেখানে কেবল স্নাতক শেষ হলো, বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষের উচিত যারা সেশনজটে পড়েছে তাদের একাডেমিক সেশনজট কাটাতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা।’

সার্বিক বিষয়ে খবরের কাগজের সঙ্গে কথা হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. মামুন আহমেদের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘ছাত্ররাজনীতি বন্ধের যে কথা বলা হচ্ছে, আমার মনে হয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সেটি বিবেচনা করে দেখবেন।’

সেশনজট প্রসঙ্গে বলেন, ‘ইতোমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করতে শুরু করেছেন, ধীরে ধীরে সব কিছুই নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে। তাছাড়া আমি তো সবে যোগদান করেছি। কাজকর্ম শুরু করলে ধীরে ধীরে সব কিছু নিয়ে কাজ করা যাবে। তখন হয়তো পুরো বিষয়টি বোঝা যাবে।’

ঝুলন্ত সেতু ডুবে থাকায় হতাশ পর্যটকরা

প্রকাশ: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:৩৯ পিএম
ঝুলন্ত সেতু ডুবে থাকায় হতাশ পর্যটকরা
রাঙামাটির ৩৩৫ ফুট দৈর্ঘ্যের ঝুলন্ত সেতুটি এখন তিন ফুট পানির নিচে ডুবে রয়েছে। ফলে সেতু ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। এতে হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন পর্যটকরা। ছবি: খবরের কাগজ

রাঙামাটির জনপ্রিয় পর্যটন আকর্ষণ ৩৩৫ ফুট দৈর্ঘ্যের ঝুলন্ত সেতু বর্তমানে তিন ফুট পানির নিচে ডুবে রয়েছে। এতে পর্যটকদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে সেতু ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। এই কারণে গত ২৩ আগস্ট থেকে বাণিজ্যিক টিকিট বিক্রি বন্ধ রয়েছে। যার ফলে সেতু এলাকায় ঘুরতে এসে হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন পর্যটকরা।

সেতু কর্তৃপক্ষের মতে, বর্তমানে দৈনিক গড়ে ৭০ হাজার টাকা রাজস্ব ক্ষতি হচ্ছে। গত ২২ দিনে মোট ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৫ লাখ টাকার বেশি। প্রতিবছর ৫ লাখের বেশি দেশি-বিদেশি পর্যটক ঝুলন্ত সেতু দেখতে আসেন এবং সেতু কর্তৃপক্ষ বছরে প্রায় আড়াই কোটি টাকা আয় করে থাকে প্রবেশ ফি, গাড়ি পার্কিং এবং ট্যুরিস্ট বোট ইজারা থেকে।

১৯৬০ সালে কাপ্তাই জলবিদ্যুৎকেন্দ্রের বাঁধ নির্মাণের পর ১৯৮৫ সালে এই ঝুলন্ত সেতুটি নির্মিত হয়। রাঙামাটির পর্যটন কমপ্লেক্স এলাকায় এসে পর্যটকরা প্রথমেই সেতুটি দেখতে যান। কিন্তু সেতু ডুবে থাকায় পর্যটকরা হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন। 

পাবনা থেকে পরিবার নিয়ে সেতু দেখতে আসা শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘এই প্রথম আসলাম। কিন্তু এসেই হতাশ হলাম। সেতু ডুবে আছে। বাচ্চারা বলেছিল, সেতুতে ছবি তুলবে। তা আর হলো না। এখন সবারই মন খারাপ।’ 

চট্টগ্রামের হাটহাজারী থেকে আসা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘রাঙামাটি ঝুলন্ত সেতু দেখতে এসেছি। কিন্তু এখানে এসে দেখলাম সেতু ডুবে আছে। খুবই খারাপ লাগছে। আগে জানলে আসতাম না।’

ঝুলন্ত সেতুর টিকিট কাউন্টারের দায়িত্বে থাকা সোহেল খান বলেন, ‘সাধারণ ছুটির দিনে দেড় থেকে দুই হাজার পর্যটক আসেন। বিশেষ ছুটির দিনে এই সংখ্যা ৭ থেকে ১২ হাজার পর্যন্ত চলে যায়। কিন্তু গত ২৩ আগস্ট থেকে সেতু ডুবে থাকায় টিকিট বিক্রি বন্ধ রেখেছি এবং পর্যটকরা টিকিট ছাড়াই ঘুরে যাচ্ছেন।’

রাঙামাটি পর্যটন হলিডে কমপ্লেক্সের ব্যবস্থাপক আলোক বিকাশ চাকমা বলেন, সেতুর পাটাতন বর্তমানে তিন ফুট পানির নিচে রয়েছে। পর্যটকদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে এবং বাণিজ্যিক টিকিট বিক্রি বন্ধ রাখা হয়েছে। পানি কমলে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হবে।

বৃষ্টি হলে কাপ্তাই হ্রদের পানি ধারণক্ষমতা কমে যাওয়ায় সেতু ডুবতে শুরু করে। হ্রদের পানি বিপৎসীমার কাছাকাছি পৌঁছলে কাপ্তাই বাঁধের ১৬টি জলকপাট খুলে পানি বের করা হয়। কিন্তু উজান থেকে পানি নামতে ধীরগতিতে চলায় হ্রদের পানির উচ্চতা কমছে খুবই ধীরে।