হবিগঞ্জের মাধবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাবেদ মাসুদ। গত ১ জুলাই তিনি এই থানায় যোগদান করেন। মাত্র ৪৪ দিনেই তিনি থানা অবকাঠামোর ব্যাপক পরিবর্তন করেছেন। পুলিশ সদস্যদের বসবাসের ব্যারাক ভেঙে রীতিমত ফ্ল্যাটে পরিণত করেছেন! নিজে থাকার জন্য বিলাসবহুল সাজসজ্জা করাতে ব্যারাকটি ভেঙে গণপূর্ত বিভাগের তৈরি করা ভবনের নকশা পরিবর্তন করেছেন। অথচ থানার ওসির পরিবার নিয়ে থাকার জন্য আলাদা সরকারি বাসা বরাদ্দ আছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গণপূর্ত বিভাগ মাধবপুর থানায় চারতলা বিশিষ্ট একটি ভবন নির্মাণ করে। ওই ভবনের প্রথমতলায় ওসি, পরিদর্শক (তদন্ত) ও ডিউটি অফিসারের রুমের পাশাপাশি হাজতখানা ও মালখানা রয়েছে। ভবনের দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থতলায় রয়েছে পুলিশ ফোর্সের ব্যারাক। গত ১ জুলাই জাবেদ মাসুদ এ থানায় যোগদানের পর সরকার নির্ধারিত বাসভবনে না থেকে থানার বাইরে ডাকবাংলোতে বসবাস শুরু করেন।
১১ জুলাই চতুর্থতলার পশ্চিম দিকের অংশে বসবাস করা পুলিশ অফিসার ও সদস্যদের রুম থেকে বের করে দেন! নিজে পরিবার নিয়ে বসবাসের জন্য চতুর্থতলার পশ্চিম দিকের পুরো ব্যারাকটি ভেঙে বিলাসবহুল ফ্ল্যাটে পরিণত করেন। চতুর্থতলার ব্যারাকসহ দুটি বাথরুম, দুটি গোসলখানা ভেঙে নতুন করে ডেকোরেশন করান। এ কারণে ব্যারাকে থাকা অফিসার ও পুলিশ সদস্যদের বসবাস, গোসল ও প্রাত্যাহিত কর্মকাণ্ড ব্যাহত হচ্ছে।
চতুর্থতলার পশ্চিম দিকে থাকতেন থানার এসআই আবু রায়হান, এএসআই আবদুল হাকিম, এএসআই নূরুল হক, এএসআই জাকির হোসেন, সার্কেল অফিসের কনস্টেবল আনছারী, কনস্টেবল বারী ও কনস্টেবল হাবিব। এদিকে সরকারি কোনো স্থাপনা ভেঙে নতুন করে করতে হলে গণপূর্ত বিভাগের অনুমতির বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কিন্তু ওসি জাবেদ মাসুদ কর্তৃপক্ষের অনুমতি না নিয়েই ক্ষমতার অপব্যবহার করে ব্যারাকটি ভেঙে নকশা পরিবর্তন করেছেন।
হবিগঞ্জ গণপূর্তের নির্বাহী প্রকৌশলী এ কে এম সাকিবুর রহমান বলেন, ‘গণপূর্তের তৈরি করা সরকারি ভবনের কোনো পরিবর্তন করা নিয়মবহির্ভূত কাজ। তবে খুব বেশি জরুরি মনে হলে কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে পরিবর্তন করা যায়। কিন্তু মাধবপুর থানা ভবনের যে পরিবর্তনের কথা বলছেন, সে বিষয়ে আমাদের জানা নেই। কেউ পরিবর্তনের জন্য আমাদের অনুমতি নেননি।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে মাধবপুর থানার বেশ কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তা ও কনস্টেবল খবরের কাগজকে বলেন, ‘থানা ভবনের চারতলায় পুলিশ ব্যারাক আছে। ওসি স্যার হঠাৎ এসে এই ব্যারাকের পশ্চিম দিকে যারা ছিলেন তাদের বের করে দেন। পশ্চিম দিকের পুরো অংশ ভেঙে নিজে বসবাসের ব্যবস্থা করেন। ব্যারাকটি রীতিমত ফ্ল্যাটে পরিণত করা হয়েছে। সেখানে আগে যারা ছিলেন তাদের এখন বসবাস করতে গিয়ে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।’
মাধবপুর থানার ঠিক পেছনেই রয়েছে ওসির জন্য নির্ধারিত সরকারি বাসভবন। ওই বাসাতে পরিবার নিয়ে থাকার সুযোগ রয়েছে। থানাটির সাবেক ওসি রকিবুল ইসলাম খান ও মুহাম্মদ আব্দুর রাজ্জাক পরিবার নিয়ে সেখানেই থাকতেন।
কথা হয় মাধবপুর থানায় ওসি জাবেদ মাসুদের সঙ্গে। সরকারি বাসা রেখে পুলিশ ব্যারাক কেন ভেঙেছেন, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এটা কি আপনার কোনো ইস্যু। এটা কি আপনার নিউজের কোনো ইস্যু। আমাকে থাকার জন্য যে বাসা দেওয়া হয়েছে সেটি পরিত্যক্ত।’
আগের দুজন ওসি পরিবার নিয়ে এই ‘পরিত্যক্ত’ বাসায় কীভাবে থেকেছেন- এমন প্রশ্নে জাবেদ মাসুদ দাবি করেন, ‘তারা পরিবার নিয়ে থাকেননি। আর পরিত্যক্ত জায়গায় কে থাকবে সেটা তার ওপর নির্ভর করে।’
গণপূর্তের তৈরি ভবনের নকশা পরিবর্তন করতে হলে অনুমতি নিতে হয়। আপনি কি অনুমতি নিয়েছেন? এই প্রশ্নের কোনো সদুত্তর জাবেদ মাসুদ দিতে পারেননি।
হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার আক্তার হোসেন খবরের কাগজকে বলেন, ‘উনিতো (ওসি) এখানে থাকতে পারেন না। উনার অন্য জায়গায় থাকার কথা। আমি এ ব্যাপারে খবর নিচ্ছি।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মাধবপুর থানার আগে তিনি সিলেটের জকিগঞ্জ থানার ওসি ছিলেন। সেখানেও নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়ান। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ঠিক আগের দিন রাতে বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের জন্য তাকে প্রত্যাহার করা হয়। এ ছাড়া তিনি থানাতেই যান নিজেকে সিলেট রেঞ্জ ডিআইজির বাল্যবন্ধু পরিচয় দিয়ে অধীনস্তদের ভয়ভীতি দেখান।