ঢাকা ২৭ ভাদ্র ১৪৩১, বুধবার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৪

পুলিশ ব্যারাক দখল করে ফ্ল্যাটে পরিণত করেছেন ওসি

প্রকাশ: ১৪ আগস্ট ২০২৪, ০৪:১৭ পিএম
আপডেট: ১৪ আগস্ট ২০২৪, ০৯:৪৯ পিএম
পুলিশ ব্যারাক দখল করে ফ্ল্যাটে পরিণত করেছেন ওসি
মাধবপুর থানায় ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জাবেদ মাসুদ

হবিগঞ্জের মাধবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাবেদ মাসুদ। গত ১ জুলাই তিনি এই থানায় যোগদান করেন। মাত্র ৪৪ দিনেই তিনি থানা অবকাঠামোর ব্যাপক পরিবর্তন করেছেন। পুলিশ সদস্যদের বসবাসের ব্যারাক ভেঙে রীতিমত ফ্ল্যাটে পরিণত করেছেন! নিজে থাকার জন্য বিলাসবহুল সাজসজ্জা করাতে ব্যারাকটি ভেঙে গণপূর্ত বিভাগের তৈরি করা ভবনের নকশা পরিবর্তন করেছেন। অথচ থানার ওসির পরিবার নিয়ে থাকার জন্য আলাদা সরকারি বাসা বরাদ্দ আছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গণপূর্ত বিভাগ মাধবপুর থানায় চারতলা বিশিষ্ট একটি ভবন নির্মাণ করে। ওই ভবনের প্রথমতলায় ওসি, পরিদর্শক (তদন্ত) ও ডিউটি অফিসারের রুমের পাশাপাশি হাজতখানা ও মালখানা রয়েছে। ভবনের দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থতলায় রয়েছে পুলিশ ফোর্সের ব্যারাক। গত ১ জুলাই জাবেদ মাসুদ এ থানায় যোগদানের পর সরকার নির্ধারিত বাসভবনে না থেকে থানার বাইরে ডাকবাংলোতে বসবাস শুরু করেন।

১১ জুলাই চতুর্থতলার পশ্চিম দিকের অংশে বসবাস করা পুলিশ অফিসার ও সদস্যদের রুম থেকে বের করে দেন! নিজে পরিবার নিয়ে বসবাসের জন্য চতুর্থতলার পশ্চিম দিকের পুরো ব্যারাকটি ভেঙে বিলাসবহুল ফ্ল্যাটে পরিণত করেন। চতুর্থতলার ব্যারাকসহ দুটি বাথরুম, দুটি গোসলখানা ভেঙে নতুন করে ডেকোরেশন করান। এ কারণে ব্যারাকে থাকা অফিসার ও পুলিশ সদস্যদের বসবাস, গোসল ও প্রাত্যাহিত কর্মকাণ্ড ব্যাহত হচ্ছে।

চতুর্থতলার পশ্চিম দিকে থাকতেন থানার এসআই আবু রায়হান, এএসআই আবদুল হাকিম, এএসআই নূরুল হক, এএসআই জাকির হোসেন, সার্কেল অফিসের কনস্টেবল আনছারী, কনস্টেবল বারী ও কনস্টেবল হাবিব। এদিকে সরকারি কোনো স্থাপনা ভেঙে নতুন করে করতে হলে গণপূর্ত বিভাগের অনুমতির বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কিন্তু ওসি জাবেদ মাসুদ কর্তৃপক্ষের অনুমতি না নিয়েই ক্ষমতার অপব্যবহার করে ব্যারাকটি ভেঙে নকশা পরিবর্তন করেছেন।

হবিগঞ্জ গণপূর্তের নির্বাহী প্রকৌশলী এ কে এম সাকিবুর রহমান বলেন, ‘গণপূর্তের তৈরি করা সরকারি ভবনের কোনো পরিবর্তন করা নিয়মবহির্ভূত কাজ। তবে খুব বেশি জরুরি মনে হলে কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে পরিবর্তন করা যায়। কিন্তু মাধবপুর থানা ভবনের যে পরিবর্তনের কথা বলছেন, সে বিষয়ে আমাদের জানা নেই। কেউ পরিবর্তনের জন্য আমাদের অনুমতি নেননি।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে মাধবপুর থানার বেশ কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তা ও কনস্টেবল খবরের কাগজকে বলেন, ‘থানা ভবনের চারতলায় পুলিশ ব্যারাক আছে। ওসি স্যার হঠাৎ এসে এই ব্যারাকের পশ্চিম দিকে যারা ছিলেন তাদের বের করে দেন। পশ্চিম দিকের পুরো অংশ ভেঙে নিজে বসবাসের ব্যবস্থা করেন। ব্যারাকটি রীতিমত ফ্ল্যাটে পরিণত করা হয়েছে। সেখানে আগে যারা ছিলেন তাদের এখন বসবাস করতে গিয়ে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।’

হবিগঞ্জের মাধবপুর থানার চতুর্থতলায় পুলিশ কর্মকর্তা-সদস্যদের বসবাসের ব্যারাকে নবাগত ওসির জন্য ফ্ল্যাট তৈরি করা হচ্ছে। ইনসেটে ভেঙে ফেলা দেয়াল। 

মাধবপুর থানার ঠিক পেছনেই রয়েছে ওসির জন্য নির্ধারিত সরকারি বাসভবন। ওই বাসাতে পরিবার নিয়ে থাকার সুযোগ রয়েছে। থানাটির সাবেক ওসি রকিবুল ইসলাম খান ও মুহাম্মদ আব্দুর রাজ্জাক পরিবার নিয়ে সেখানেই থাকতেন।

কথা হয় মাধবপুর থানায় ওসি জাবেদ মাসুদের সঙ্গে। সরকারি বাসা রেখে পুলিশ ব্যারাক কেন ভেঙেছেন, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এটা কি আপনার কোনো ইস্যু। এটা কি আপনার নিউজের কোনো ইস্যু। আমাকে থাকার জন্য যে বাসা দেওয়া হয়েছে সেটি পরিত্যক্ত।’ 

আগের দুজন ওসি পরিবার নিয়ে এই ‘পরিত্যক্ত’ বাসায় কীভাবে থেকেছেন- এমন প্রশ্নে জাবেদ মাসুদ দাবি করেন, ‘তারা পরিবার নিয়ে থাকেননি। আর পরিত্যক্ত জায়গায় কে থাকবে সেটা তার ওপর নির্ভর করে।’

গণপূর্তের তৈরি ভবনের নকশা পরিবর্তন করতে হলে অনুমতি নিতে হয়। আপনি কি অনুমতি নিয়েছেন? এই প্রশ্নের কোনো সদুত্তর জাবেদ মাসুদ দিতে পারেননি। 

হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার আক্তার হোসেন খবরের কাগজকে বলেন, ‘উনিতো (ওসি) এখানে থাকতে পারেন না। উনার অন্য জায়গায় থাকার কথা। আমি এ ব্যাপারে খবর নিচ্ছি।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মাধবপুর থানার আগে তিনি সিলেটের জকিগঞ্জ থানার ওসি ছিলেন। সেখানেও নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়ান। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ঠিক আগের দিন রাতে বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের জন্য তাকে প্রত্যাহার করা হয়। এ ছাড়া তিনি থানাতেই যান নিজেকে সিলেট রেঞ্জ ডিআইজির বাল্যবন্ধু পরিচয় দিয়ে অধীনস্তদের ভয়ভীতি দেখান।

মেট্রোর সদ্য সাবেক এমডির বিরুদ্ধে অভিযোগের পাহাড়

প্রকাশ: ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০১:৩২ পিএম
মেট্রোর সদ্য সাবেক এমডির বিরুদ্ধে অভিযোগের পাহাড়
মেট্রোর সদ্য সাবেক এমডি এম এ এন ছিদ্দিক

মেট্রোরেল পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এম এ এন ছিদ্দিকের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ সোমবার (৯ সেপ্টেম্বর) বাতিল করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। 

রেলওয়ে নেটওয়ার্ক পরিচালনায় দক্ষতা নেই। অথচ মেট্রোরেলের মতো বিশেষায়িত গণপরিবহনব্যবস্থায় শীর্ষ কর্তা হয়ে ৭ বছরের বেশি সময় ডিএমটিসিএলে একক আধিপত্য বিস্তার করেছিলেন সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের এই সাবেক সচিব। 

গতকালই নতুন এমডির দায়িত্ব পেয়েছেন আবদুর রউফ। তিনি এই প্রতিষ্ঠানে কোম্পানি সচিবের পদে ছিলেন। 

এম এ এন ছিদ্দিকের বিরুদ্ধে যত অভিযোগ 

দ্য কোম্পানিজ অ্যাক্ট-১৯৯৪-এর ব্যত্যয় ঘটিয়ে মেট্রোরেল পরিচালনা প্রতিষ্ঠান ডিএমটিসিএলের সদ্য সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ এন ছিদ্দিক তার নিয়োগ প্রক্রিয়ায় ব্যাপক অনিয়ম করেছেন। 

এ অ্যাক্টের ব্যত্যয় ঘটিয়ে এখনো কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সার্ভিস রুল না করায় বেতন-ভাতা বৃদ্ধির দাবিতে ডিএমটিসিএলের অধস্তন কর্মচারীদের (দশম থেকে বিশতম গ্রেড) মধ্যে অসন্তোষ রয়েছে। 

গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর মেট্রোরেল চালু করা যায়নি অধস্তন কর্মচারীদের বিক্ষোভের কারণে। বেতন-ভাতা ও আনুষঙ্গিক সুযোগ-সুবিধার দাবিতে তারা কর্মবিরতির ঘোষণা দিলে মেট্রোরেল পরিচালনায় হিমশিম খাচ্ছে ডিএমটিসিএল। অধস্তন কর্মচারীদের দাবি পূরণের আশ্বাস দিলেও তা কবে নাগাদ সুরাহা হবে নিশ্চিত নন শীর্ষ কর্মকর্তারাই। 

অভিযোগ রয়েছে, এম এ এন ছিদ্দিক ডিএমটিসিএল পরিচালনা পর্ষদে প্রভাব খাটিয়ে একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করেছেন। পরিচালনা পর্ষদ থেকে বিনা নোটিশে সদস্যদের অব্যাহতি দেওয়ার মতো অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। 

সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ডিএমটিসিএলে শুরু থেকেই নিয়োগ প্রক্রিয়ায় নানা অনিয়মের তথ্য উত্থাপিত হয়েছে নানা সময়ে। সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগে এ নিয়ে অনেক অভিযোগ থাকলেও ডিএমটিসিএল এমডি এম এ এন ছিদ্দিক প্রভাব খাটিয়ে সেসব তথ্য ধামাচাপা দিয়েছেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের শীর্ষ কর্মকর্তারা মুখে কুলুপ এঁটেছিলেন। 

অভিযোগ রয়েছে, সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগকে পাশ কাটিয়ে এম এ এন ছিদ্দিক সরাসরি যোগাযোগ করতেন প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘বিশেষ অনুকম্পা’ পেয়ে তিনি ডিএমটিসিএলে একক আধিপত্য বিস্তার করতে সক্ষম হন বলে জানিয়েছেন একাধিক কর্মকর্তা।

১৯৮২ সালের বিশেষ বিসিএস ব্যাচের প্রশাসন ক্যাডারের এই কর্মকর্তার নিয়োগ প্রক্রিয়া প্রসঙ্গে খবরের কাগজের সঙ্গে কথা বলেছেন ডিএমটিসিলের সর্বপ্রথম কমিটির পরিচালক বুয়েট অধ্যাপক ড. শামসুল হক। তিনি বলেন, ‘মেট্রোরেল নির্মাতা প্রতিষ্ঠান জাইকা বিশেষায়িত সেবাটি পরিচালনার জন্য অন্তত ২০ বছরের রেলওয়ের কারিগরি জ্ঞানসম্পন্ন অভিজ্ঞ ব্যক্তিকে নিয়োগের সুপারিশ করেছিল। 

কিন্তু এম এ এন ছিদ্দিক সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ থেকে অবসরে যেতে না যেতেই ২০১৭ সালে প্রভাব খাটিয়ে এমডি হন। শুধু তাই নয়, গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোর ব্যবস্থাপক ও প্রকল্প পরিচালক পদে তিনি এমন সব ব্যক্তিকে নিয়োগ দিয়েছেন, যাদের কোনো কারিগরি জ্ঞানই নেই। আমরা যখন সড়ক যোগাযোগব্যবস্থায় অবকাঠামোগত খাতকে আরও বেশি টেকসই ও গুণগত মানসম্পন্ন করার কথা বলছি, তখন এসব ঘটনার সুরাহা না হলে তা উন্নয়নে বিরাট বাধা হয়ে উঠবে।’

অধ্যাপক শামসুল হক জানান, মেট্রোরেলের বোর্ড অব ডিরেক্টরস সদস্যদের খেয়ালখুশিমতো নিয়োগ দিয়েছেন এম এ এন ছিদ্দিক। কখনো প্রভাব খাটিয়ে প্রকৌশলী ও অধ্যাপকদের বাদও দিয়েছেন।

শামসুল হক আরও বলেন, এমন কিছু লোককে এখানে পরিচালনার দায়িত্বে রাখা হয়েছে, যাদের আসলে রেলভিত্তিক সেবা প্রদানের কোনো অভিজ্ঞতাই নেই। এসব অনিয়মের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া দরকার।

রাজধানীর যানজট নিরসন ও পরিবেশ উন্নয়নে অত্যাধুনিক গণপরিবহন হিসেবে ম্যাস র‍্যাপিড ট্রানজিট (এমআরটি) বা মেট্রোরেল সেবা চালুর জন্য বিগত আওয়ামী লীগ সরকার ২০১৩ সালের ৩ জুন ডিএমটিসিএল গঠন করে। এটি ২০১৮ সালে রেজিস্ট্রার অব জয়েন্ট স্টক কোম্পানিজ অ্যান্ড ফার্মে নিবন্ধিত হয়। সেই মোতাবেক কোম্পানির গঠনতন্ত্র, কর্মপরিধি ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতাসংক্রান্ত তথ্য প্রণয়ন করার নিয়ম রয়েছে, যাকে আর্টিকেল অব অ্যাসোসিয়েশন (এওএ) বলা হয়।

মেট্রোরেল পরিচালনা পর্ষদে আর্টিকেল অব অ্যাসোসিয়েশন প্রণয়নের চাপ থাকলেও ডিএমটিসিএলের শীর্ষ কর্মকর্তারা তা করেননি। 

এতে সবচেয়ে বড় যে সংকট দেখা দিয়েছে, তা ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে নিয়ে। কোম্পানির নিয়ম অনুসারে ব্যবস্থাপনা পরিচালক কত দিন এ প্রতিষ্ঠানে থাকবেন, সে সময়সীমা নিয়োগপত্রে উল্লেখ থাকার কথা। কিন্তু এম এ এন ছিদ্দিকের নিয়োগপত্রে নির্দিষ্ট সময়সীমার উল্লেখ নেই বলে জানিয়েছেন ড. শামসুল হক।

এ অনিয়ম প্রসঙ্গে ডিএমটিসিএল এমডি এম এ এন ছিদ্দিক গত ২ সেপ্টেম্বর খবরের কাগজকে বলেছিলেন, ‘আমি কোনো অনিয়ম করিনি। আমার নিয়োগ প্রক্রিয়াতেও সব ধরনের নিয়ম মানা হয়েছে। সরকার আমাকে যোগ্য মনে করেছে বলেই তো আমি আজকে এত দিন মেট্রোরেল, ডিএমটিসিএল সামলে যাচ্ছি।’

আর্টিকেল অব অ্যাসোসিয়েশন না হওয়ায় মেট্রোরেলের কর্মকর্তা, কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বৃদ্ধির বিষয়ে জটিলতা দেখা দিয়েছে। পাশাপাশি ডিএমটিসিএলে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পাওয়া অনেক কর্মকর্তা, কর্মচারীর চাকরির মেয়াদ নবায়নেও নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। 

ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) আইন-২০১২-এর অধীনে গঠিত ডিএমটিসিএল-এর ৬৪ শতাংশের বেশি শেয়ার সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের। অন্য শেয়ারহোল্ডাররা হলো প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, অর্থ মন্ত্রণালয়, বিদ্যুৎ-জ্বালানি-খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়, রেলপথ মন্ত্রণালয় ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ও ডিটিসিএ। 

এসব মন্ত্রণালয় ও প্রতিষ্ঠানের সরকারি কর্মকর্তাদের পাশাপাশি বুয়েটের একজন শিক্ষক, সুপ্রিম কোর্টের একজন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী, চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টের একজন প্রতিনিধিও ডিএমটিসিএল-এর পরিচালনা পর্ষদের সদস্য। 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে পরিচালনা পর্ষদের দুজন সদস্য খবরের কাগজকে বলেন, পরিচালনা পর্ষদে মেট্রোরেল নিয়ে কারও কোনো আপত্তি আমলেই নেননি এম এন ছিদ্দিক। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ আশীর্বাদপুষ্ট সরকারি কর্মকর্তা বলে তিনি অনেক অনিয়ম করে পার পেয়ে গেছেন। 

পরিচালনা পর্ষদের সাবেক সদস্য অধ্যাপক ড. শামসুল হক বলেন, ‘আমাকে পরিচালনা পর্ষদ থেকে বাদ দেওয়ার সময় বলা হলো, আমি তিনটি সভায় অনুপস্থিত ছিলাম। অথচ সভা যে হয়েছে, তা আমাকে ফোনে বা চিঠিতে কোনোভাবে জানানো হয়নি। আমাকে বাদ দেওয়ার আগে শোকজ নোটিশও দেওয়া হয়নি। মেট্রোরেল এমডি আমাকে বাদ দেওয়ার পর বুয়েট থেকে আরেকজন পরিবহন বিশেষজ্ঞের নাম চেয়ে আবেদন জানায় ডিএমটিসিএল। তখন বুয়েট থেকে আবার আমার নামই প্রস্তাব করা হয়। পরে আমি আর রাজি হইনি।’

মেট্রোরেলে বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান জাইকার পরামর্শ ছিল, অন্তত ১৫-২০ বছরের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন প্রকৌশল জ্ঞানসম্পন্ন কর্মীদের মাধ্যমে যেন মেট্রোরেল পরিচালনা করা হয়। কিন্তু মেট্রোরেল পরিচালনায় অনেক কর্মীকে নিয়োগ দিয়েছেন এম এ এন ছিদ্দিক, যাদের কারিগরি দক্ষতা নেই। 

এমন অনিয়ম করায় ডিএমটিসিএলে অনেক দক্ষ প্রকৌশলী কাজ ছেড়ে চলে গেছেন। এ কারণে চাহিদা থাকা সত্ত্বেও গভীর রাত পর্যন্ত এমআরটি-৬-এ মেট্রোরেল গভীর রাত পর্যন্ত পরিচালনা করা যায়নি। 

এম এ এন ছিদ্দিকের নিয়োগের বিষয়ে জানতে সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগের সদ্য সাবেক সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নূরীর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে খবরের কাগজ। তার ব্যক্তিগত ফোন নম্বরটি সচল থাকলেও তিনি ধরেননি। 

সচিবের পদ হারানোর পরে তিনি কারও ফোন ধরছেন না বলে জানিয়েছেন সড়ক-মহাসড়ক বিভাগের কর্মকর্তারা। সড়ক পরিবহন-মহাসড়ক বিভাগের বর্তমান সচিব ও মেট্রোরেল পরিচালনা পর্ষদের প্রধান মো. এহসানুল হককে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি। 

ডিএমটিসিলের নানা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন, ‘আমি মেট্রোরেলের এ বিষয়গুলো সম্পর্কে এখনো কিছু জানি না। নিয়োগে অনিয়ম হয়ে থাকলে আমি খবর নিয়ে দেখব।’

শাহজালালে সেবার মান বৃদ্ধি, ২০ মিনিটেই লাগেজ

প্রকাশ: ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১১:২২ এএম
আপডেট: ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১১:৩৬ এএম
শাহজালালে সেবার মান বৃদ্ধি, ২০ মিনিটেই লাগেজ
বেল্টে আসছে লাগেজ। ফাইল ফটো

‘আগে লাগেজ পেতে কত সময় লাগবে, তা বলা মুশকিল ছিল। কিন্তু বিমান থেকে ২০-৩০ মিনিটের মধ্যেই পেয়ে গেছি। সবচেয়ে বড় কথা, লাগেজগুলোকে ছুড়ে ফেলা হয়নি, তাই লাগেজ ভালো আছে।’ এভাবেই সৌদি আরব ফেরত মো. হোসেন জানাচ্ছিলেন ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে তার লাগেজ পাওয়ার অভিজ্ঞতার কথা। 

একই ধরনের অভিজ্ঞতার কথা জানালেন মোরশেদ। তিনি কলকাতা থেকে দেশে ফিরেছেন। খবরের কাগজকে তিনি বলেন, ‘আগে অনেক সময় লাগত, তবে এখন তা কমে এসেছে। আজ (রবিবার) তো আরও দ্রুত পেলাম। বলা চলে ২০ মিনিটেই লাগেজ পেয়ে গেছি।’

রবিবার ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সরেজমিন গিয়ে দেখা মেলে সুন্দর এ লাগেজ ব্যবস্থাপনার। এ ছাড়া প্রবাসী ও নতুন যাত্রীদের সহযোগিতার জন্য বিমানবন্দরটিতে চালু করা হয়েছে হেল্পডেস্ক, আছে ফ্রি কল করা ও ওয়াই-ফাই ব্যবহারের সুবিধাও। বিমানবন্দরের আন্তর্জাতিক বহির্গমন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, সেখানে বসানো রয়েছে ফ্রি কল করার ব্যবস্থা। 

সেখানকার ফোন ব্যবহার করে কথা বলা সৌদি আরব থেকে দেশে আসা মো. মনোয়ার হোসেন খবরের কাগজকে বলেন, ‘এটা প্রবাসীদের বেশ সুবিধা দিয়েছে। কারণ আমরা দেশে এসে স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারতাম না। ফলে বুঝতে পারতাম না তারা কোথায় আমাদের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এই সুবিধার ফলে এখন আমরা দেশে এসেই স্বজনদের জানাতে পারি আমি পৌঁছেছি। তারা কোথায় আছেন তাও জানতে পারি। ফলে ভোগান্তি হয় না।’ 

অন্যদিকে মো. মাসুদ মিয়া যাচ্ছেন সৌদি। কিন্তু তার ফোনের চার্জ প্রায় শেষের দিকে। তাই দেখা গেল তিনি এয়ারপোর্টের ফোনচার্জ বুথে তার মোবাইল ফোনটি চার্জ দিচ্ছেন। তিনি খবরের কাগজকে বলেন, ‘এ ধরনের সেবা যাত্রীদের স্বস্তি দেয়। দুশ্চিন্তামুক্ত করে। চার্জ দেওয়ার ব্যবস্থা হয়তো অনেক আগে থেকেই আছে, কিন্তু অনেকেই তা জানেন না।’ 

বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশনে ঢোকার আগেই দেখা মিলল বেশ কয়েকটি হেল্পডেস্কের। যেখানে লেখা আছে- ‘আমি কি আপনাকে সাহায্য করতে পারি?’ প্রশ্নটি। আর তার আশপাশ দিয়ে ঘোরাঘুরি করছেন কয়েকজন সাহায্যকারী। নতুন কোনো যাত্রী সেখানে এলে বা তাকে কিছু খুঁজতে দেখলে এই ব্যক্তিরা নিজে গিয়ে তাকে জিজ্ঞেস করছেন কোনো সাহায্য লাগবে কি না। 

হেল্পডেস্ক সম্পর্কে মো. ইফাদ হাসান শুভ বলেন, ‘আমি এবারই প্রথম উড়োজাহাজে ভ্রমণ করছি। তাই ঠিক কোথায় গিয়ে কী করতে হবে জানি না। এই হেল্পডেস্কে এসে জিজ্ঞেস করলাম। তারা আমাকে জানিয়ে দিল কোথায় যেতে হবে। সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটা কী। সুতরাং এটি আমার জন্য অনেক বড় সাহায্য। আমার মতো যারা নতুন তাদের জন্য এই হেল্পডেস্ক অনেক উপকারে আসবে।’

হেল্পডেস্ক ছাড়াও যাত্রীরা যেন যেকোনো তথ্য, পরামর্শ এবং অভিযোগ জানাতে পারেন সে জন্য চালু করা হয়েছে ১৩৬০০ ও ০৯৬১৪০১৩৬০০ ফোন নম্বর। এ ছাড়া www.hsia.gov.bd ওয়েবসাইটে গিয়েও অভিযোগ জানাতে পারবেন যাত্রীরা। 

এ বিষয়ে শাহজালাল বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন মো. কামরুল ইসলাম খবরের কাগজকে বলেন, ‘বিমানবন্দরের সেবার মান উন্নত করতে বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মঞ্জুর কবীর ভূঁইয়ার নেতৃত্বে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। 

এরই অংশ হিসেবে যাত্রীদের যেকোনো তথ্য ও অভিযোগ জানানোর জন্য ‘১৩৬০০’ নম্বরের কল সেন্টার, নতুন ওয়েব পোর্টাল (www.hsia.gov.bd), কাস্টমার রিলেশনশিপ মডিউল সফটওয়্যারসহ আরও নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘যাত্রীদের সহযোগিতা করতে হেল্পডেস্কসহ অনেক সুবিধা চালু হয়েছে। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস যেহেতু এই বিমানবন্দরের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের কাজ করছে তাই যাত্রীরা যেন দ্রুত সময়ে লাগেজ পান সে জন্য বিমানবন্দরের অ্যাভিয়েশন সিকিউরিটি এবং আনসারদের বদলে বিমানবাহিনীর সদস্যরা সহযোগিতা করে যাচ্ছেন।’ পাশাপাশি লাগেজ যেন অক্ষত থাকে বা আমাদের বিমানবন্দরে এসে কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সে জন্য কাজ করে যাচ্ছেন বলেও জানান তিনি। 

কামরুল ইসলাম বলেন, ‘অনেক সময় অন্য বিমানবন্দর থেকে লাগেজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে আমাদের কাছে আসে, কিন্তু এতে তো আমাদের কিছু করার নেই। তাই যাত্রীদেরও খেয়াল রাখতে হবে তার লাগেজ কোথায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে তারা আমাদের কল সেন্টারে (১৩৬০০) ফোন করে জানাতে পারেন। 

এ ছাড়া এখন বিমান অবতরণের পর ২০ থেকে ২৫ মিনিটের মধ্যেই লাগেজ আমরা যাত্রীদের কাছে বুঝিয়ে দিতে সক্ষম হচ্ছি। বাকিটাও দ্রুত সময়ে করার চেষ্টা করছি।’ এটি একটি টিম ওয়ার্ক উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘জবাবদিহি বাড়ায় এখন কাজে অনেক স্বচ্ছতা এসেছে। ফলে কাজে গতি এসেছে। আমরা আমাদের বর্তমান এ সেবা কার্যক্রমগুলো নিরবচ্ছিন্নভাবে অব্যাহত রাখতে চাই।’ 

খবরের কাগজের মাধ্যমে তিনি যাত্রীদের প্রতি অনুরোধ জানান, “আপনারা এই সেবাগুলো নিয়ে আপনাদের মতামত আমাদের জানান। আমরা সেবার মান আরও উন্নত করার চেষ্টা করব, কারণ আমাদের মূল মন্ত্রই হচ্ছে ‘সম্মানিত যাত্রীই সর্বাগ্রে’।”

স্বাস্থ্য খাতে অচলাবস্থা, ব্যাহত সেবা ও শিক্ষা কার্যক্রম

প্রকাশ: ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:০৩ এএম
আপডেট: ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:০৬ এএম
স্বাস্থ্য খাতে অচলাবস্থা, ব্যাহত সেবা ও শিক্ষা কার্যক্রম

স্বাস্থ্য প্রশাসনে অচলাবস্থা, হাসপাতাল পর্যায়ে স্বাস্থ্যকর্মীদের নিরাপত্তাহীনতা, শিক্ষক ও চিকিৎসকদের অবাঞ্ছিত ঘোষণা এবং কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় নাজুক হয়ে পড়েছে দেশের সামগ্রিক স্বাস্থ্যব্যবস্থা। এতে মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে দেশের স্বাস্থ্যসেবা এবং বাধাগ্রস্ত হচ্ছে চিকিৎসা শিক্ষা কার্যক্রম। এ অবস্থার উন্নয়নে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া না হলে স্বাস্থ্য খাত সামগ্রিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা।

তারা বলছেন, স্বাস্থ্য প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকার-সমর্থিত চিকিৎসকরা কর্মরত ছিলেন। শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর নিরাপত্তাহীনতায় তারা অনেকেই কর্মস্থলে অনুপস্থিত আছেন। একই সময়ে সরকারি হাসপাতাল এবং মেডিকেল কলেজগুলোতে শিক্ষক ও চিকিৎসকদের অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে কার্যক্রম থেকে দূরে রাখা হয়েছে। এ ছাড়া আগস্ট মাস চলে গেলেও এখনো অনুমোদন হয়নি আগামী ৫ বছরের স্বাস্থ্য খাতের কর্মপরিকল্পনা (অপারেশন প্ল্যান-ওপি)। 

মহাপরিচালককে (ডিজি) অপসারণের দাবিতে প্রায় এক মাস স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সব ধরনের কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। যার বিরুদ্ধে আন্দোলন চলছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সেই ডিজি (মহাপরিচালক) অধ্যাপক ডা. রোবেদ আমিন বর্তমানে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। ফলে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের প্রশাসনিক, আর্থিক, নিয়মতান্ত্রিক কার্যক্রম এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে সৃষ্টি হয়েছে স্থবিরতা। 

একই সঙ্গে সারা দেশের সব সরকারি মেডিকেল কলেজে কর্মরত শিক্ষকদের একটি বড় অংশ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ায় তাদের শিক্ষা কার্যক্রম থেকে বিরত রাখা হয়েছে। সব মিলিয়ে চিকিৎসা শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা খাতে এক ধরনের অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এ কারণে ভোগান্তিতে পড়ছেন সাধারণ রোগীরা।

এ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. বে-নজির আহমেদ বলেন, স্বাস্থ্য খাতে যেটা হচ্ছে সেটা কাঙ্ক্ষিত নয়। স্বাস্থ্যকর্মীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করে তাদের কাজে আনতে হবে। 

জানা গেছে, গত বুধবার খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালকসহ ৪১ জন ডাক্তারকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করায় বহির্বিভাগে অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। খুমেক হাসপাতালের চিকিৎসক ও ছাত্রদের একাংশ জোর করে উপপরিচালককে পদত্যাগ ও ৪১ জন চিকিৎসককে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করায় বহির্বিভাগের সেবা প্রায় বন্ধ। অবাঞ্ছিত ঘোষিত চিকিৎসকরা হাসপাতালে আসেননি। এই পরিস্থিতিতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন চিকিৎসা নিতে দূর-দূরান্ত থেকে আসা সাধারণ রোগীরা। 

বিগত সরকারের পতনের পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিপক্ষে অবস্থান নেওয়ায় ঢাকা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষ, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতালের অধ্যক্ষসহ ২১ জন, বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজের ১৫ জন, রাজশাহী মেডিকেল কলেজের ৪০ জন, দিনাজপুর মেডিকেল কলেজের ৩৯ জন, সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ১৯ জন, পটুয়াখালীর একজনসহ সারা দেশের সব সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অধ্যক্ষ, উপাধ্যক্ষ ও শিক্ষক-চিকিৎসক মিলিয়ে বিপুলসংখ্যক চিকিৎসককে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করায় তারা কর্মস্থলে যাচ্ছেন না। 

এ ছাড়া বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় এবং চট্টগ্রাম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, উপ-উপাচার্যসহ প্রশাসনের বেশির ভাগ কর্মকর্তাকে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়েছে। এর মধ্যে শুধু বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যসহ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। বাকি বিশ্বদ্যালয়গুলোর গুরুত্বপূর্ণ পদগুলো এখনো শূন্য রয়েছে।

গত ১৮ আগস্ট অধ্যাপক ডা. রোবেদ আমিনকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। কিন্তু তিনি ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সুবিধাভোগী অভিযোগ এনে বিএনপিপন্থি চিকিৎসকরা তার অপসারণ দাবি করে আসছেন। দাবি বাস্তবায়নে তারা ৩ সপ্তাহ ধরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে লাগাতার অবরোধ কর্মসূচি পালন করছেন। এতে কোনো কর্মকর্তা অধিদপ্তরে যেতে পারছেন না। ফলে অধিদপ্তরের সঙ্গে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের যোগাযোগ এক প্রকার বিচ্ছিন্ন। 

আন্দোলনের কারণে অধিদপ্তরের স্বাভাবিক সব কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। সাম্প্রতিক ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতিতে দেশের স্বাস্থ্য বিভাগের তৎপরতা দৃশ্যমান ছিল না। বন্যাদুর্গত এলাকায় ওষুধপত্র ও চিকিৎসক পাঠিয়ে সহযোগিতা করছে সন্ধানী, আন্তর্জাতিক উদারময় গবেষণাকেন্দ্র (আইসিডিডিআরবি)সহ বেসরকারি অনেক প্রতিষ্ঠান। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একাধিক লাইন ডিরেক্টর খবরের কাগজকে জানান, আগামী ৫ বছরের স্বাস্থ্য খাতের কর্মপরিকল্পনা (অপারেশনাল প্ল্যান) প্রণয়ন করা হলেও সেটি এখনো অনুমোদন হয়নি। এটি গত জুলাই মাসের মধ্যে অনুমোদন হওয়ার কথা ছিল। অপারেশন প্ল্যান অনুমোদনে যত বিলম্ব হবে সারা দেশের স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়ন কার্যক্রম ততই বাধাগ্রস্ত হবে। এমনকি বন্ধ হয়ে যেতে পারে হাসপাতালগুলোর অনেক জরুরি সেবা। 

সামগ্রিক বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিটের অধ্যাপক ড. সৈয়দ আবদুল হামীদ খবরের কাগজকে বলেন, স্বাস্থ্য প্রশাসনের স্থবিরতা কাটাতে একটা শক্তিশালী সার্চ কমিটি গঠন করা যেত। সেই সার্চ কমিটি যোগ্য ও উপযুক্ত ব্যক্তিদের গুরুত্বপূর্ণ পদে সুপারিশ করলে তখন এ ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হতো না। এ ছাড়া বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে যাদের অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছে তাদের অন্যত্র বদলি করে কাজে লাগানো যেতে পারে। একই সঙ্গে যারা এতদিন পদোন্নতিবঞ্চিত হয়েছে তাদের পদোন্নতি নিশ্চিত করে শূন্যস্থান পূরণ করা সম্ভব। 

নতুন সংগঠন : প্রত্যাশা অনেক

প্রকাশ: ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৫:৩০ এএম
নতুন সংগঠন : প্রত্যাশা অনেক
খবরের কাগজ গ্রাফিকস

রাষ্ট্র সংস্কার ও পুনর্গঠনের লক্ষ্যে দেশে গত রবিবার আত্মপ্রকাশ করেছে ‘জাতীয় নাগরিক কমিটি’। ৫৫ সদস্য নিয়ে গঠিত এই কমিটি প্রথম দিনেই তাদের আট দফার প্রতিশ্রুতি ঘোষণা করেছে। গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী অন্তর্বর্তী সরকারের এই সময়ে তরুণদের নিয়ে গঠিত এ দলের ব্যাপারে খবরের কাগজের সঙ্গে কথা বলেছেন বিশিষ্টজনেরা। 

তারা বলেছেন, যে ধরনের কর্মসূচি নিয়ে এ কমিটির আত্মপ্রকাশ ঘটল, তাতে মনে হলো তাদের রাষ্ট্রক্ষমতায় যাওয়ার অভিপ্রায় রয়েছে। আর সেই লক্ষ্যেই দেশের পরিবর্তিত এই সময়ে তাদের এই কমিটি গঠন। দলটির নেতৃবৃন্দের প্রতি বিশেষজ্ঞদের প্রত্যাশা- অন্তর্বর্তীকালীন এই সরকারের সব ধরনের কার্যক্রমে তারা শক্তিশালী প্রেশার গ্রুপ হিসেবেও ভূমিকা রাখবে। এই ভূমিকার প্রতি তারা সজাগ থাকলে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে ইতিবাচক পরিবর্তন আনা সম্ভব। একই সঙ্গে নবগঠিত এই দলের কমিটিতে নবীন-প্রবীণের সমন্বয় ঘটলে আরও ভালো হতো বলেও মনে করেন তারা।

আবুল কাসেম ফজলুল হক
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ও সমাজ বিশ্লেষক 

দেশের পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে নতুন সংগঠন আসতেই পারে। যে ধরনের কর্মসূচি তারা ঘোষণা করেছেন তাতে মনে হলো এই সংগঠনটির রাষ্ট্রক্ষমতায় যাওয়ার অভিপ্রায় রয়েছে। আর সেই লক্ষ্যেই তাদের এই কমিটি গঠন। তবে দেশের রাজনীতি যাতে দীর্ঘদিনের ঘুণে ধরা রাজনৈতিক সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে পারে, সেই ধারায় আসতে হবে। তারা কী পুরোনো রাজনৈতিক দলগুলোর গতানুগতিক পথ ধরেই হাঁটবেন, না নতুন ধারা তৈরি করতে পারবেন সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। নতুন এই সংগঠনের ঘোষণায় মনে হলো তারা অন্তর্বর্তী সরকারের প্রেশার গ্রুপ হিসেবেও কাজ করবে, যা ইতিবাচক। তবে মনে রাখতে হবে, আবার যেন দেশে মাইনাস টু-জাতীয় কোনো ফর্মুলার আবির্ভাব না ঘটে। এ বিষয়ে সচেতন থাকা জরুরি।

এম হাফিজ উদ্দিন খান
বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ, সমাজ সংস্কারক এবং সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা 

তরুণ প্রজন্মের সমন্বয়ে জাতীয় নাগরিক কমিটি নামে নতুন সংগঠনের সূচনাকে ইতিবাচক মনে করছি। কারণ তারা বলেছে, রাষ্ট্র সংস্কার ও পুনর্গঠনে তারা কাজ করতে চান। এই দলের নেতৃবৃন্দ বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের কার্যক্রম নিয়ে তদারকি করবেন, সজাগ থাকবেন- এমনটিই মনে করি। দলটিতে যাদের নাম দেখলাম তাদের বেশির ভাগই তরুণ। তারা এ সময়ে একটি শক্তিশালী প্রেশার গ্রুপ হিসেবেও দেশে ভূমিকা রাখবেন বলে মনে করি। নতুন করে সংগঠিত এই কমিটিকে বলতে চাই তাদের সজাগ থাকতে হবে বর্তমান সরকারের কর্মকাণ্ডের প্রতিও। আর তারা যদি সজাগ থাকেন, তাহলে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে ইতিবাচক পরিবর্তন আনা সম্ভব। 

জেড আই খান পান্না 
সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী 

নবগঠিত নাগরিক কমিটি দেখে বোঝা গেল তারা সবাই বয়সে তরুণ। নিশ্চয়ই তারা ভালো ও ইতিবাচক কিছু করার চেষ্টা করবে। তবে রাষ্ট্র সংস্কার ও পুনর্গঠনের মতো ক্যাচি স্লোগান নিয়ে তাদের যাত্রা শুরু, তা এত সহজ বিষয় নয়। এর দায়-দায়িত্ব রক্ষা করা খুব কঠিন। সেটা করতে হলে ব্রিটিশ আমলের অনেক আইন- যেমন পুলিশ আইন পরিবর্তন, ফায়ার সার্ভিসের উন্নয়ন, হেলথ সেক্টরেও পরিবর্তন আনতে হবে। দেশের মন্ত্রী-এমপিসহ ভিভিআইপি লোকরা যাতে চিকিৎসার জন্য বিদেশে না গিয়ে দেশেই চিকিৎসা নিতে বাধ্য হন, সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। এসবের পাশাপাশি বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে গণতন্ত্রের অনুকূলে এনে গণতান্ত্রিক পদ্ধতির মাধ্যমে নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর যাতে করে সেই বিষয়েও চাপ অব্যাহত রাখতে হবে। কারণ আমি মনে করি, নির্বাচিত সরকারের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করাই এই সরকারের প্রধান কাজ। 

আবু আলম মো. শহীদ খান 
সাবেক সচিব 

শত ফুল ফুটতে দাও- কাজেই যেকোনো নতুনকে স্বাগত জানাতে হবে। সারা দেশের মানুষ রাষ্ট্র সংস্কারের পক্ষে- কাজেই তাদের যে ঘোষণা সেটা ইতিবাচক। তবে পর্যবেক্ষণ করার দরকার রয়েছে। নতুন এই সংগঠনে আমরা দেখছি বয়সে সবাই তরুণ। আমি মনে করি, তাদের কমিটিতে নবীন-প্রবীণের সমন্বয় ঘটলে আরও ভালো হতো। চিন্তাধারায় আরও ডাইভারিসিটি আসতে পারত। তার পরও তরুণ উদ্যোগ যদি সরকারের প্রতি প্রেশার গ্রুপ হিসেবে ভূমিকা রাখে তাহলে ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে আশা করাই যায়। কারণ দেশের মানুষ এই সরকারের প্রতি অনেক বেশি আশা করছে। জনগণের কাঙ্ক্ষিত সেসব স্বপ্ন বাস্তবায়নে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের কাছ থেকে তারা রাজনীতিতে কী ধরনের পরিবর্তন আনতে সক্ষম হবে, সেটা আসলে সময়ই বলে দেবে।

গত ৮ সেপ্টেম্বর রবিবার বিকেলে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে এক সমাবেশ থেকে এই কমিটি আত্মপ্রকাশ করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী ও এবি পার্টির সাবেক গবেষণা ও তথ্যবিষয়ক সহকারী সম্পাদক নাসীরুদ্দীন পাটোয়ারীকে কমিটির আহ্বায়ক এবং ঢাবি আইন বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী ও ডাকসুর সাবেক সমাজকল্যাণ সম্পাদক আখতার হোসেনকে কমিটির সদস্যসচিব ঘোষণা করা হয়। আর কমিটির মুখপাত্রের ভূমিকা পালন করবেন ঢাবি চারুকলা অনুষদের ভাস্কর্য বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী ও রাষ্ট্রচিন্তার সাবেক সদস্য সামান্তা শারমীন।

ফের সচল হচ্ছে ট্রাইব্যুনাল গণহত্যার বিচারের প্রস্তুতি

প্রকাশ: ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৩:০০ এএম
গণহত্যার বিচারের প্রস্তুতি
খবরের কাগজ গ্রাফিকস

ফের সচল হচ্ছে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। চলছে ১৫ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত দেশে সংঘটিত গণহত্যার বিচারের প্রস্তুতি। যদিও বিচারকশূন্য ট্রাইব্যুনালের বিচারকাজ কয়েক মাস ধরে সম্পূর্ণভাবে বন্ধ রয়েছে। তবে গত ১৪ আগস্ট থেকে ৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত শেখ হাসিনাসহ সাবেক মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে ১১টি অভিযোগ দায়ের হওয়ায় ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার কার্যক্রমে গতি সঞ্চার হয়েছে। এখন ট্রাইব্যুনালে বিচারক নিয়োগ দেওয়া হলেই আনুষ্ঠানিক বিচারকাজ শুরু হবে। 

ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন পুনর্গঠনের মাধ্যমে গত রবিবার নতুন চিফ প্রসিকিউটরসহ কয়েকজন প্রসিকিউটর যোগদান করায় তদন্ত সংস্থার কার্যক্রম জোরদার হয়েছে। অভিযোগের সূত্র ধরে গণহত্যার যাবতীয় তথ্য-উপাত্ত ও আলামত সংগ্রহের কাজ চলছে। ইতোমধ্যে হতাহতদের তথ্য চেয়ে জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, সিভিল সার্জন, সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ, বড় বড় কবরস্থান এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের কাছে এ চিঠি পাঠানো হচ্ছে। 

অবশ্য ইতোমধ্যে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৫ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে অন্তত ৬৩১ জন প্রাণ হারিয়েছেন এবং ১৯ হাজার ২০০ জনের বেশি আহত হয়েছেন।

গণহত্যার সুষ্ঠু ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে আসামি পক্ষ প্রয়োজনে বিদেশ থেকে আইনজীবী আনলেও প্রসিকিউশন পক্ষ আপত্তি করবে না বলে জানিয়েছেন চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম।

তিনি গতকাল সোমবার সাংবাদিকদের বলেন, ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার চলাকালে শেখ হাসিনাসহ গণহত্যা মামলার আসামিরা চাইলে বিদেশি আইনজীবী রাখতে পারবেন। এ ক্ষেত্রে প্রসিকিউশন টিমের কোনো আপত্তি থাকবে না। ন্যায়বিচারের স্বার্থে প্রসিকিউশন টিমের যা যা করা দরকার, সেটা করবে। প্রসিকিউশন টিম কয়েকটি হাসপাতাল পরিদর্শন করেছে। হাসপাতাল পরিচালকদের কাছেও তথ্য চাওয়া হয়েছে। তদন্তের স্বার্থে জেলা প্রশাসক, গণমাধ্যম, হাসপাতালসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে থাকা ভিডিও-ছবির জন্য চিঠি পাঠানো হচ্ছে। স্বচ্ছতার সঙ্গে তদন্ত করার জন্যই এই উদ্যোগ। যাতে করে বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে কোনো প্রশ্ন না থাকে। ক্ষতিগ্রস্তরা এই গণহত্যার বিচারের জন্য মুখিয়ে আছেন। সাক্ষীরাও আগ্রহী। আলামত তাজা থাকতেই বিচার প্রক্রিয়া শুরুর চেষ্টা অব্যাহত আছে।’ 

একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য ২০১০ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়। এর আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয় ২০১০ সালের ২৫ মার্চ। সে সময় মামলার তদন্ত ও বিচারকাজে ব্যাপক তৎপরতা দেখা যায়। এ নিয়ে দেশ-বিদেশে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনাও তৈরি হয়। বিচারকাজ ত্বরান্বিত করতে ২০১২ সালের ২২ মার্চ ট্রাইব্যুনাল-২ নামে আরেকটি ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়। ২০১৫ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর দুটিকে একীভূত করে আবার একটি ট্রাইব্যুনাল করা হয়। এ সময়ের মধ্যে অনেক আলোচিত মামলার রায় হয় এবং সেসব রায় কার্যকর করা হয়। 

গত ১৪ বছরে ৫৫টি মামলার রায় দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। এসব মামলায় ১৪৯ জনকে দণ্ড দেওয়া হয়েছে। মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে ৬ জনের। এর মধ্যে জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ নেতা ৫ জন এবং একজন বিএনপির নেতা। ট্রাইব্যুনালের বিচারকাজে স্থবিরতা তৈরি হয় গত বছরেই। সর্বশেষ চলতি বছর ১২ ফেব্রুয়ারি শেরপুরের নকলার তিনজনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়। সেই সময় ট্রাইব্যুনালে ৩০ মামলার বিচার চলছিল। এরপর আর কোনো মামলার বিচারকাজ পরিচালনা হয়নি। ট্রাইব্যুনালের তিন বিচারকের মধ্যে একজন অবসরে যান, আরেকজনকে হাইকোর্টে ফিরিয়ে নেওয়া হয় এবং সর্বশেষ বিচারক (জেলা ও দায়রা জজ-পিআরএল ভোগরত) এ এইচ এম হাবিবুর রহমান ভূঁইয়া গত ২৭ আগস্ট অব্যাহতি নিলে বিচারকাজ সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়। 

এদিকে ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা, সাবেক কয়েকজন মন্ত্রী ও বেশ কিছুসংখ্যক সাংবাদিকের বিরুদ্ধে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গত ১৪ আগস্ট থেকে ৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ট্রাইব্যুনালে ১১টি অভিযোগ দায়ের হয়। এরপর তদন্ত সংস্থার কার্যক্রম পুনরায় জোরদার হয়। বিচারকাজ শুরু করতে এখন অপেক্ষা শুধু বিচারক নিয়োগের।