ঢাকা ২২ আশ্বিন ১৪৩১, সোমবার, ০৭ অক্টোবর ২০২৪

ওরিয়নের ওবায়দুল করিমের অপকর্ম: বেলহাসা কোম্পানি হাইজ্যাক

প্রকাশ: ২০ আগস্ট ২০২৪, ০৯:১৩ এএম
আপডেট: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৭:২১ পিএম
ওরিয়নের ওবায়দুল করিমের অপকর্ম: বেলহাসা কোম্পানি হাইজ্যাক
খবরের কাগজ গ্রাফিকস

সংযুক্ত আরব আমিরাতভিত্তিক (ইউএই) বেলহাসা ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন কোম্পানির ৬০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেও বহাল তবিয়তে আছেন ওরিয়ন গ্রুপের মালিক ওবায়দুল করিম। প্রতারণা ও জালিয়াতির মাধ্যমে যৌথ মালিকানার কোম্পানি হাইজ্যাক করা হয়। এ নিয়ে মামলাও করে বেলহাসা। মামলায় জালিয়াতি, প্রতারণা ও নথি গায়েবের মতো ঘটনাও ঘটেছে বলে জানা গেছে। 

এ ছাড়া হাইজ্যাক করা কোম্পানির নামে ১৬৬ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে খেলাপির তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন ওবায়দুল করিম।

জানা গেছে, ২০০৩ সালে যাত্রাবাড়ী-গুলিস্তান ফ্লাইওভার প্রকল্পের জন্য আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করে ঢাকা সিটি করপোরেশন। সে সময় আন্তর্জাতিক প্রকল্পে অংশগ্রহণের কোনো যোগ্যতা ওরিয়ন গ্রুপের না থাকায় আন্তর্জাতিক যোগ্যতাসম্পন্ন প্রতিষ্ঠান বেলহাসা ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন কোম্পানির সঙ্গে যুক্ত হয়ে দরপত্রে অংশ নেয় গ্রুপটি। আইনগত শর্ত পূরণের জন্য ওরিয়ন গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান একম অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েশন লিমিটেডের সঙ্গে যৌথ মালিকানায় কোম্পানি গঠন করা হয়। যৌথ মালিকানার কোম্পানির নাম দেওয়া হয় বেলহাসা একম অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটস লিমিটেড।

নতুন এই কোম্পানির নামে ২০০৩ সালের আগস্টে কার্যাদেশ দেওয়া হয়। কার্যাদেশের ভিত্তিতে বেলহাসা ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন কোম্পানি বিপুল পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করে। কিন্তু কিছুদিন পর গোপনে ওরিয়ন গ্রুপের মালিক তার ছেলেকে পরিচালক বানিয়ে বেলহাসার পরিচালকের সই জালিয়াতি করে বেলহাসা-একম অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটস লিমিটেড নামেই কোম্পানি পর্ষদ পুনর্গঠন দেখান। কোনো রকম টিআইএন নম্বর ছাড়াই জালিয়াতির মাধ্যমে জয়েন্ট স্টক কোম্পানিতে নিবন্ধনও হাসিল করেন। এরপর যৌথ এ কোম্পানির ব্যাংক অ্যাকাউন্টের কর্তৃত্ব নিয়ে নেন ওবায়দুল করিম। এই সময়ের মধ্যে বেলহাসা ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন কোম্পানির ৬০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেন। এর পর থেকে বিদেশি কোম্পানিটির সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করেন ওবায়দুল করিম। 

একপর্যায়ে বিষয়টি জানার পর ওবায়দুল করিম ও তার ছেলে সালমান ওবায়দুল করিমসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ এনে ঢাকার একটি আদালতে মামলা করেন বেলহাসা ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানির পাওয়ার অব অ্যাটর্নি হিসেবে প্রতিনিধিত্বকারী জুবায়ের আহমেদ ভূঁইয়া। এতে কোম্পানির নাম জালিয়াতি করার অভিযোগও আনা হয়। ২০০৫ সালে ঢাকার জয়েন্ট স্টক কোম্পানিতে জালিয়াতির মাধ্যমে সৃষ্ট ফার্মগুলোর সঙ্গে নিবন্ধিত বেলহাসা একমের মেমোরেন্ডাম এবং সংশ্লিষ্ট আর্টিকেলগুলো বাতিলের আদেশ চাওয়া হয়। মামলার শুনানি নিয়ে ২০১০ সালের ২৭ জুলাই এক আদেশে জুবায়েরকে কোর্ট ফি বাবদ ৪০ হাজার ২০০ টাকা জমা দিতে বলেন বিচারক মোহাম্মদ আস শামস জগলুল হোসেন। কয়েক বছর মামলার শুনানি হলেও পরে এ মামলার নথি খুঁজে না পাওয়ায় মামলাটির কার্যক্রম স্থগিত রয়েছে বলে জানা গেছে। 

মামলার আরজিতে বলা হয়, সরকার ২০০৩ সালের ৫ এপ্রিল যাত্রাবাড়ী-গুলিস্তান ফ্লাইওভার নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয়। সিদ্ধান্তের পর ঢাকা সিটি করপোরেশন ফ্লাইওভার নির্মাণের জন্য দরপত্র আহ্বান করে। পরে ইউএই-ভিত্তিক বেলহাসা ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন কোম্পানি এবং ওবায়দুল করিমের বাংলাদেশ-ভিত্তিক একম ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেড যৌথভাবে দর জমা দিয়ে কার্যাদেশ পায়। কার্যাদেশ পাওয়ার পর দুই কোম্পানি যৌথভাবে ফ্লাইওভার নির্মাণের চুক্তি করে। সে অনুসারে ওবায়দুল করিমের কোম্পানি বেলহাসা একম অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটস লিমিটেড নামে জয়েন্ট স্টক কোম্পানি ও ফার্মের কাছ থেকে একটি নিবন্ধন সনদের জন্য কোম্পানির আর্টিকেল অব মেমোরেন্ডাম জমা দেয়। কিন্তু জালিয়াতির মাধ্যমে কাগজপত্র তৈরি করে ওবায়দুল করিম, সালমান ওবায়দুল করিম ও মেহেদী হাসান নিজেদের বেলহাসা একমের শেয়ারহোল্ডার ও পরিচালক ঘোষণা করেন। তারা বেলহাসার ম্যানেজিং ডিরেক্টর মাজেদ আহমেদ ও একাধিক পরিচালকের সই জাল করে জয়েন্ট স্টক কোম্পানি ও ফার্মে নিবন্ধনের জন্য কাগজপত্র জমা দেন। 

ওবায়দুল করিম, সালমান করিম ও মেহেদী হাসান শুধু সই জালিয়াতিই করেননি, তারা জয়েন্ট ভেঞ্চার চুক্তির শর্তাবলি এবং জয়েন্ট স্টক কোম্পানি ও ফার্ম থেকে তাদের নিবন্ধনের আইন ও বিধিবিধান লঙ্ঘন করেছেন। আসামিরা বেলহাসার ৬০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ ও বেলহাসা একমের নাম ব্যবহার করে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।

এদিকে মোহাম্মদ ওবায়দুল করিম ও তারা ছেলে সালমান ওবায়দুল করিম হাইজ্যাক করা বেলহাসা একম অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটস লিমিটেডের নামে একটি ব্যাংক থেকে ১৬৬ কোটি ৩০ লাখ ২১ হাজার ৫০৮ টাকা ঋণ নিয়েছেন। এ কোম্পানির টিআইএন নম্বরও পাওয়া যায়নি। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের ঋণখেলাপির তালিকায় ওবায়দুল করিমের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

আরও পড়ুন:
>ওরিয়নের ওবায়দুলের অপকর্ম: মামলা ঠুকে ঋণখেলাপির তালিকা থেকে বাঁচার চেষ্টা

ট্রাফিকের দায়িত্ব পালন করা ৩ হাজার ৭০০ শিক্ষার্থী পাবেন সনদ

প্রকাশ: ০৭ অক্টোবর ২০২৪, ০৩:২৮ পিএম
ট্রাফিকের দায়িত্ব পালন করা ৩ হাজার ৭০০ শিক্ষার্থী পাবেন সনদ
ট্রাফিকের দায়িত্ব পালন করা ৩ হাজার ৭০০ শিক্ষার্থী পাবে সনদ। ছবি: খবরের কাগজ

৫ আগস্ট সরকার পতনের পর দেশের ট্রাফিকব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণে ছাত্রদের ভূমিকা দেশে-বিদেশে প্রশংসিত হয়েছে। সে সময় সড়কে দায়িত্ব পালনকারীদের স্বীকৃতি দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ভোলা, যশোর, চট্টগ্রামসহ আরও কয়েকটি জেলায় পুলিশের পক্ষ থেকে দায়িত্ব পালনকারী শিক্ষার্থীদের সনদ দেওয়া হয়েছে। সনদ দেওয়ার জন্য ৩ হাজার ৭০০ শিক্ষার্থীর একটি তালিকা তৈরি করেছেন ঢাকা মহানগর পুলিশসহ ৬৪টি জেলার পুলিশ সদস্যরা। এই তালিকায় রয়েছেন সাধারণ শিক্ষার্থীসহ বিএনসিসি, স্কাউটস, রেড ক্রিসেন্টসহ বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যরা।

অভ্যুত্থানের সময় রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পুলিশের স্থাপনায় হামলা হয়। নিরাপত্তাহীনতার কথা বিবেচনা করে সে সময় অনেক ট্রাফিক পুলিশ সড়কে দায়িত্ব পালন করা থেকে বিরত থাকে। এতে সড়কে যানজট দেখা দেয়। ভোগান্তির মধ্যে পড়েন পথচারীরা। এ সময় সড়কের ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থায় এগিয়ে আসেন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। গলায় স্ব-স্ব প্রতিষ্ঠানের আইডি কার্ড ঝুলিয়ে হাতে ছোট লাঠি নিয়ে তারা সড়কে ট্রাফিকের দায়িত্ব পালন করেছেন। 

রোদ, ঝড়-বৃষ্টি উপেক্ষা করে তাদের এই দায়িত্ব পালনের বিষয়টি দেশে ও বিদেশে ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়। দেশের নাগরিকদের কষ্টের কথা বিবেচনা করে দেশপ্রেমে উজ্জীবিত হয়ে শিক্ষার্থীদের এই দায়িত্ব পালনকে যথেষ্ট সুনজরে দেখছেন পুলিশ বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। 

এ বিষয়ে পুলিশ সদর দপ্তরের ডিআইজি (অপারেশন্স) মো. রেজাউল করীম রবিবার (৬ অক্টোবর) খবরের কাগজকে জানান, ‘যে শিক্ষার্থীরা সড়কে ট্রাফিকের দায়িত্ব পালন করেছেন তাদের সনদ দেওয়া হবে।’

এ বিষয়ে ট্রাফিকের মিরপুর বিভাগের এডিসি ইয়াসমিন ফেরদৌস বলেন, ‘মিরপুরের বিভিন্ন সড়কে ট্রাফিক পুলিশের পাশাপাশি বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী দায়িত্ব পালন করছেন। কিছুদিন আগেও তাদের খণ্ডকালীন ভলান্টিয়ার হিসেবে কাজের জন্য আবেদন করতে বলা হয়েছিল। অনেক শিক্ষার্থীর সাড়া পাওয়া গিয়েছিল। পরে সে উদ্যোগ আর এগোয়নি।’

পুলিশের একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তার সূত্রে জানা গেছে, ৫ আগস্ট সড়ক থেকে ট্রাফিক পুলিশ চলে যায়। প্রায় ছয় দিন পর তারা দায়িত্বে ফিরে আসে। ওই সময় ট্রাফিকের দায়িত্ব পালন করেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। গত ১১ আগস্ট স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা (তৎকালীন) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন রাজারবাগে এক অনুষ্ঠানে বলেন, ট্রাফিকের কাজ করা শিক্ষার্থীদের সার্টিফিকেট দেওয়া হবে। এর পর থেকে এ নিয়ে কাজ শুরু হয়। গত ১৩ আগস্ট ভোলা জেলার পুলিশ সুপার মাহিদুজ্জামানের পক্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের সনদ দেওয়া হয়। 

সূত্র জানায়, ঢাকার বাইরে জেলা পুলিশ সুপারদের তত্ত্বাবধানে সড়কে দায়িত্ব পালনকারী শিক্ষার্থীদের আলাদা একটি তালিকা তৈরি করা হয়েছে। কেউ যেন দায়িত্ব পালন না করে সনদের অধিকারী হতে না পারেন, সেদিকে খেয়াল রাখা হচ্ছে। সনদ দেওয়ার ক্ষেত্রে ভিডিও ফুটেজ, সেলফি ও গণমাধ্যমে প্রকাশিত ছবিকে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি তথ্য সংগ্রহে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সহযোগিতা নিচ্ছে পুলিশ।

ডিমের বাজারে নৈরাজ্য, ২০ দিনে লুটপাট ১৬০ কোটি

প্রকাশ: ০৭ অক্টোবর ২০২৪, ১২:৪৩ পিএম
আপডেট: ০৭ অক্টোবর ২০২৪, ১২:৪৫ পিএম
ডিমের বাজারে নৈরাজ্য, ২০ দিনে লুটপাট ১৬০ কোটি
খবরের কাগজ গ্রাফিকস

‘ডিমের ডজন ১৮০ টাকা। কম দাম হবে না। কারণ আড়তেই বেশি দাম।’ রাজধানীর তেজগাঁও স্টেশন রোডের জলিল ভ্যারাইটি স্টোরের স্বত্বাধিকারী আব্দুল কুদ্দুস খুচরা বিক্রির সময় এভাবেই ক্রেতাকে বেশ ঝাঁজের সঙ্গে ডিমের বাড়তি দামের কথা জানান। এ সময় সেখানে উপস্থিত ক্রেতারা ক্ষুব্ধ হয়ে বলেন, ওপর থেকেই দাম বাড়ছে। সরকার দাম বেঁধে দেওয়ার পরও প্রতিদিন বাড়ছে। অসাধু ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রণ করতে সরকার ব্যর্থ হয়েছে।

তেজগাঁওয়ে ‘বিক্রমপুর ডিমের আড়ত’-এর পাশেই এই দামে বিক্রি হচ্ছিল ডিম। আড়তদার জুবায়েরের অভিযোগ, বেশি দামে কেনা। তাই প্রতিটি ডিম ১৩ টাকা ১০ পয়সা দরে বিক্রি করতে হচ্ছে। সে হিসাবে এই আড়তে এক ডজন ডিমের দাম ১৫৭ টাকা ২০ পয়সা। অন্যদিকে কারওয়ান বাজারের খুচরা বিক্রেতা রাফসান জাহান বলেন, আড়ত থেকে প্রতি পিস কিনতে হয়েছে ১৩ টাকা ৬০ পয়সা দরে। 

খামারিরা বলছেন, নিয়মের তোয়াক্কা না করে ডিম উৎপাদনের সঙ্গে যুক্ত করপোরেট সিন্ডিকেট প্রতিদিন সরকার-নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে ডিম বিক্রি করছে। সরকারের নির্ধারিত দামে খুচরা পর্যায়ে ডিমের দাম হওয়ার কথা ১৪৪ টাকা ডজন। তবে আড়তেই করপোরেট সিন্ডিকেট বেশি দামে ডিম বিক্রি করায় খুচরায় ডিমের দাম পড়ছে প্রায় ১৮০ টাকা ডজন। এভাবে বেশি দামে বিক্রি করে গত ২০ দিনে ভোক্তাদের পকেট থেকে ১৬০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে একটি চক্র। তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে মামলা হওয়ার পরও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হওয়ায় ভোক্তাদের পকেট কাটা থামছে না। এখনই কঠোরভাবে দাম নিয়ন্ত্রণ না করতে পারলে বাজার আরও অস্থির হবে। ডিম ব্যবসার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট করপোরেট ব্যবসায়ী, আড়তদার, খামারি, পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

এক বছর ধরে ডিমের দাম বাড়ছে। বাধ্য হয়ে সরকার দাম বেঁধে দেয়। গত ১৫ সেপ্টেম্বর প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. মোহাম্মদ রেয়াজুল হকের সই করা চিঠিতে সংশ্লিষ্টদের ডিমের দাম ডজনে ১৪৪ টাকা বাস্তবায়নের নির্দেশনা দেওয়া হয়। চিঠিতে জানানো হয়, কৃষি বিপণন অধিদপ্তর, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর এবং পোলট্রিসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের নেতাদের সমন্বয়ে জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের মতামতের ভিত্তিতে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর ২০২৪ সালের মুরগি (সোনালি ও ব্রয়লার) ও ডিমের যৌক্তিক মূল্য নির্ধারণ করেছে। 

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে মোহাম্মদপুরের টাউন হল বাজারের ডিম বিক্রেতা কামাল হোসেন এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘ডিমের ডজন ১৭০ টাকা।’ এই বাজারের অন্য ডিম ব্যবসায়ীরাও বলেন, ‘প্রতিদিন বাড়ছে ডিমের দাম। আড়তেই বাড়ছে। সে ক্ষেত্রে আমরা কী করব।’ 

ডিমের দাম প্রসঙ্গে কারওয়ান বাজারের বিক্রেতা রাফসান জাহান ক্যাশ মেমো দেখিয়ে বলেন, শনিবার ১৩ টাকা ২০ পয়সা পিস কেনা হয়েছে। গতকাল তা ১৩ টাকা ৬০ পয়সা কিনতে হয়েছে। তাই বেশি দামেই বিক্রি করতে হচ্ছে। এক ডজনে ৬ টাকা লাভ হয়। হাতিরপুল বাজারের খুচরা বিক্রেতাদেরও একই অভিযোগ, আড়ত থেকেই কিনতে হচ্ছে বেশি দামে।

কারওয়ান বাজারের ডিম বিক্রেতা রাফসানের দোকানে ডিম কেনার সময় নাঈম উদ্দীনসহ আরও দুজন ছাত্র বলেন, ‘লেখাপড়া শেষ করে চাকরি পাওয়ার আশায় ঢাকায় অবস্থান করছি। সব জিনিসের দাম বাড়তি। কম দামের আমিষ ডিমের দামও হুহু করে বাড়ছে।’ 

খুচরা বিক্রেতাদের কথার সত্যতা যাচাই করতে গতকাল বিকেলে তেজগাঁও স্টেশন বাজার রোডে সরেজমিন গেলে দেখা যায়, অধিকাংশ আড়তের দোকানগুলোতে তালা মারা। গভীর রাত থেকে ভোরের মধ্যেই তারা বেচাকেনা শেষ করেন। 

তেজগাঁও ডিম আড়ত ব্যবসায়ী সমিতির সাবেক সভাপতি আমান উল্লাহ বলেন, ‘আড়তে প্রতি পিস ১৩ টাকা ১০ পয়সা দরে বিক্রি করা হচ্ছে। এর চেয়ে কমে বিক্রি করলে লোকসান করতে হবে। পিসে ১০ পয়সা লাভ করা হয়। দোকান ভাড়া, পরিবহন খরচও তো আছে। সরকারের বেঁধে দেওয়া দামে আমরা কিনতেই পারি না। তাহলে বিক্রি করব কীভাবে? গতকাল প্যারাগন, ডায়মন্ডসহ বিভিন্ন কোম্পানি ১১ টাকা ৫০ পয়সা থেকে ১২ টাকা পিস বিক্রি করেছে। তার পরও তাদের সেই ডিম আমরা পাই না।’

কী করলে ডিমের দাম কমবে? এমন প্রশ্নের উত্তরে এই ডিম ব্যবসায়ী দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতার আলোকে বলেন, ‘পাইকারি পর্যায়ে ১১ টাকা পিস বিক্রি করতে হবে। কার সঙ্গে কথা বলে সরকার এ দাম নির্ধারণ করেছে, তা আমরা জানি না। করপোরেটদের কথা শুনলে হবে না। ডিম উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ডায়মন্ডই তো ১২ টাকা পিস বিক্রি করছে। খামারে বেশি লাভ করা হয় না। তারা লোকসান দিয়ে ব্যবসা করছে। অনেক খামার বন্ধ হয়ে গেছে। অবশ্যই বাচ্চা ও খাদ্যের দাম কমাতে হবে।’

দেশের বিভিন্ন প্রান্তে খামারিদের উৎপাদিত ডিম ৮০ শতাংশ চাহিদা মেটায়। তার পরও করপোরেটরা বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে। এ ব্যাপারে প্রান্তিক খামারিদের সংগঠন বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সুমন হাওলাদার এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘বাজারকে অস্থির করার জন্যই প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর ডিম ও মুরগির দাম নির্ধারণ করেছে। দাম নির্ধারণের সময় তারা আমাদের কোনো প্রতিনিধি রাখেনি। করপোরেটদের কথামতো এই দাম বেঁধে দিয়েছে। ফলে বাজারে কোনো প্রভাব নেই। বরং বেশি দামেই বিক্রি হচ্ছে। আমাদের খামারে ডিমের উৎপাদন খরচই ১০ টাকা ২৯ পয়সা। তাহলে কীভাবে ১০ টাকা ৫৮ পয়সা পিস বিক্রি করা যায়। কিন্তু করপোরেটদের উৎপাদন খরচ ৮ টাকা ৪০ পয়সা। তারা ১১ টাকা ৫০ পয়সা থেকে ১২ টাকা পিস বিক্রি করছে। তারা ইচ্ছামতো দাম বাড়িয়ে বা কমিয়ে খামারিদের নিঃস্ব করে দিচ্ছে। আবার আমাদের কাছে বেশি দামে খাদ্য ও মুরগির বাচ্চা বিক্রি করছে। অবশ্যই সরকারকে এই খাদ্য ও বাচ্চার দাম কমাতে হবে। না হলে বাজার আরও অস্থির হয়ে যাবে।’ 

অন্য এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, করপোরেট ব্যবসায়ীরা দেশের সব জায়গায় মোবাইলে মেসেজ দিয়ে দাম বেঁধে দেন। দাম কমলে ব্যবসায়ীরা ডিম হিমাগারে রাখছেন। দাম বাড়লে বিক্রি করছেন। সরকার নির্দেশ দিলে ১০ টাকা ৫৮ পয়সা দরে ডিম বিক্রি করতে তারা বাধ্য হবেন। কিন্তু করপোরেটরা উৎপাদক পর্যায়ে ১১ টাকা দরে বিক্রি করার কথা বললেও বাস্তবে ১১ টাকা ৫০ পয়সা থেকে ১২ টাকা ৫০ পয়সা দরে প্রতি পিস বিক্রি করছে। প্রতিদিন তারা ৪ কোটি ডিম বিক্রি করছে। এভাবে বেশি দামে বিক্রি করার মাধ্যমে তারা ২০ দিনে ১৬০ কোটি টাকা ভোক্তাদের পকেট থেকে হাতিয়ে নিয়েছে।’

এই সিন্ডিকেট গত বছরও এই সময়ে হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। প্রতিযোগিতা কমিশন তাদের বিরুদ্ধে গত বছরও মামলা করেছে। কিন্তু দৃষ্টান্তমূলক কোনো শাস্তি হয়নি। 

ডিমের বাড়তি দাম আদায় করার ব্যাপারে ব্রিডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-এর সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুর রহমান খবরের কাগজকে বলেন, ‘আমরা বাজারে চাহিদার মাত্র ২০ শতাংশ ডিম সরবরাহ করি। এটা দিয়ে বাজার নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব না।’

এর আগে বেশি দাম রাখায় আপনাদের বিরুদ্ধে মামলা হলেও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হয়নি, তাই সুযোগে ভোক্তাদের পকেট কাটছেন কি না- এমন অভিযোগের উত্তরে তিনি বলেন, ‘এই অভিযোগ সঠিক নয়। আসলে এই সময়ে ডিমের চাহিদা বেড়ে গেছে। কিন্তু এবার গরমে অনেক এলাকার খামার নষ্ট হয়ে গেছে। ফলে উৎপাদন কমে গেছে। আবার দেশি ভুট্টা, সয়াবিনসহ সবকিছুর দাম বেড়েছে। ডলারের দাম তো কমে না। তাই এ মুহূর্তে খাবারের দাম কমানো সম্ভব না।’

বিশ্ব শিশু দিবস ডিজিটাল ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত শিশুরা

প্রকাশ: ০৭ অক্টোবর ২০২৪, ১০:৪৪ এএম
আপডেট: ০৭ অক্টোবর ২০২৪, ১০:৪৬ এএম
ডিজিটাল ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত শিশুরা
খবরের কাগজ গ্রাফিকস

জাতিসংঘের সংজ্ঞা অনুযায়ী ১৮ বছরের কম বয়সী সব মানুষই শিশু এবং বাংলাদেশও মেনে চলে এ সংজ্ঞা। সে অনুযায়ী দেশের প্রায় ৬০ শতাংশ শিশুর নিজস্ব মোবাইল ফোন রয়েছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো প্রকাশিত বাংলাদেশ স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিসটিক্স (এসভিআরএস) ২০২৩ জরিপে এ তথ্য উঠে এসেছে।

জরিপের তথ্য অনুযায়ী, দেশে ৫ বছর থেকে ১৫ বছর বয়সী মোট জনগোষ্ঠীর ৫৯.৯ শতাংশের নিজস্ব ব্যবহারের জন্য মোবাইল ফোন রয়েছে। আর এদের মধ্যে ৪৫ দশমিক ৭ শতাংশ ইন্টারনেট ব্যবহার করে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, এদের অধিকাংশই জানে না নিরাপদ ও কার্যকরীভাবে মোবাইল ও ইন্টারনেট ব্যবহার সম্পর্কে। ফলে প্রতিদিনই শিশুদের মাঝে বাড়ছে ডিজিটাল ডিমেনশিয়া। এমন অবস্থায় ‘প্রতিটি শিশুর অধিকার, রক্ষা করা আমাদের অঙ্গীকার’ এই প্রতিপাদ্য নিয়ে দেশে আজ পালিত হচ্ছে বিশ্ব শিশু দিবস। 

ডিজিটাল ডিমেনশিয়া কী?
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রে এক গবেষণায় দেখা গেছে, সে দেশের ৯৫ শতাংশ শিশুই ডিজিটাল ডিমেনশিয়ায় ভুগছে। যেখানে বিশেষজ্ঞরা ডিজিটাল ডিমেনশিয়াকে সংজ্ঞায়িত করেছেন এভাবে- স্ক্রিনে অতিরিক্ত টাইম দেওয়ার ফলে অনেক সমস্যা দেখা দেয় যেমন- আচরণে পরিবর্তন, দুর্বল স্মৃতিশক্তি, ফোকাস করতে অক্ষমতা, আগ্রাসী আচরণ, বিরক্তিভাব, দুর্বল সামাজিক দক্ষতা, ক্লান্তি এবং কম ঘুম ও আত্মবিশ্বাসের অভাব। এগুলোকেই ডিজিটাল ডিমেনশিয়া বলা হচ্ছে। এ গবেষণা বলছে, বর্তমানে শিশুদের একটি ডিভাইস ব্যবহার করার গড় সময় দিনে ৭.৫ ঘণ্টা। কিছু কিছু কিশোরের ক্ষেত্রে এটি দিনে ৮-১২ ঘণ্টাও হয়ে যায়। আর ফোনের অত্যধিক ব্যবহার এবং তার ওপর নির্ভরশীল এসব বাচ্চারাই ডিজিটাল ডিমেনশিয়ার শিকার হচ্ছে। সেই কারণে স্মৃতিশক্তি নষ্ট হচ্ছে তাদের।

বাংলাদেশে বাড়ছে ডিজিটাল ডিমেনশিয়া
ডিজিটাল ডিমেনশিয়ার এসব লক্ষণ এখন বাংলাদেশের শিশুদের মধ্যে প্রবলভাবে দেখা যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনার আগেও এ ধরনের সমস্যা নিয়ে তেমন শিশু আসত না মনোরোগ বিশেষজ্ঞ বা সংশ্লিষ্টদের কাছে। তবে এখন অভিভাবকরা যেমন ভুলে যাওয়া, বেশিক্ষণ মনোযোগ ধরে রাখতে না পারা ও দুর্বল সামাজিক দক্ষতার অভিযোগ নিয়ে শিশুদের নিয়ে আসছেন। 

এর কারণ হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সালমা আক্তার বলেন, মূলত তিনটি কারণে শিশুদের মধ্যে মোবাইলের ব্যবহার বেড়েছে। তার মধ্যে প্রথমটি হলো করোনাকালে অনলাইন স্কুলিং হওয়ায়, তখন অভিভাবকরা শিশুদের হাতে মোবাইল ফোন দিয়েছেন। সেই সময় শিশুরা মোবাইল নিজে ব্যবহারের সুযোগ পেয়েছে যা পরে আর পরিবর্তন করা হয়নি। অন্যটি হলো, অভিভাবকরা প্রচণ্ড ব্যস্ত থাকে এখনকার দিনে। কারণ তাদের চাকরি, বাসার কাজে সাহায্যকারী না থাকা, যৌথ পরিবারে না থাকা। ফলে তারা সময় দিতে পারছেন না সন্তানকে, তখন তারা শিশুদের ব্যস্ত রাখার জন্য তাদের হাতে মোবাইল তুলে দিচ্ছেন। এ ছাড়া যেহেতু অনেক বাচ্চাই এখন মোবাইল ব্যবহার করে, তাই সচেতন বাবা-মা যারা শিশুর হাতে মোবাইল দিচ্ছেন না তারাও এখন তার বাচ্চাদের কাছে চাপের মুখে পড়ছে যে তাদের বন্ধুরা মোবাইল ব্যবহার করছে কিন্তু সে কেন মোবাইল ব্যবহার করতে পারছে না। ফলে ওই অভিভাবকরাও বাচ্চাকে মোবাইল ব্যবহার করতে দিচ্ছেন। 

জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক হেলাল উদ্দিন আহমেদ খবরের কাগজকে বলেন, ‘অতিরিক্ত মোবাইল ব্যবহারের ফলে মানসিক অসুস্থতা, যেমন উদ্বেগ এবং বিষণ্নতা আমাদের শিশুদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ছে। তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে স্মার্টফোন বা ডিজিটাল আসক্তি সবার মধ্যেই কমবেশি দেখা যায়। কখনো কাজ, তো কখনো সোশ্যাল মিডিয়া স্ক্রলিং, কখনো বা সিনেমা দেখা, কখনো আবার গেম খেলায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা আসক্ত থাকে। যার ফলে শারীরিক এবং মানসিক উভয় স্বাস্থ্যের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে। ফলে মস্তিষ্কের কাজ করার ক্ষমতা কমে যেতে থাকে। বিশেষ করে ডিজিটাল ডিভাইসের অত্যধিক ব্যবহারের ফলে অল্প বয়সীদের আক্রান্ত করছে ডিজিটাল ডিমেনশিয়ার মতো সমস্যা।

একাগ্রতা এবং ভুলে যাওয়ার সমস্যা বাড়ছে
অধ্যাপক হেলাল উদ্দিন আহমেদ খবরের কাগজকে বলেন, ‘করোনা পরবর্তী সময়ে আমাদের কাছে অভিভাবকরা শিশুদের মধ্যে বেশিক্ষণ কোনো বিষয়ে মনোযোগ ধরে রাখতে না পারা বা একাগ্রতা রাখতে না পারা এবং পড়ার কিছুক্ষণ পর বা কিছুদিন পরই তা ভুলে যাওয়ার অভিযোগ নিয়ে আসছেন।’ 

বিশেষজ্ঞরা জানান, স্ক্রিন টাইম দিনে তিন ঘণ্টার বেশি হলে তা আসক্তি হয়ে যায়। বিশেষ করে অনেকের স্ক্রিন টাইম ১২-১৫ ঘণ্টা, যা বেশ বিপজ্জনক। পাশাপাশি রাতে বেশি সময় স্মার্টফোন ব্যবহার করলে তা ঘুমের ওপরেও ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে। স্ক্রিনের নীল আলো মস্তিষ্ককে জাগ্রত রাখে এবং ঘুমের জন্য প্রয়োজনীয় মেলাটোনিন হরমোনের মাত্রা কমায়।

বাঁচার উপায়
এসব সমস্যা থেকে বাঁচার উপায় হিসেবে অধ্যাপক হেলাল উদ্দিন আহমেদ খবরের কাগজকে বলেন, ‘ঘুমানোর ১ ঘণ্টা আগে ডিজিটাল ডিটক্সের নিয়ম মেনে চলা উচিত। অর্থাৎ এ সময় কোনো ধরনের ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করা যাবে না। স্ক্রিন টাইম নির্ধারণের পাশাপাশি বিরতিও নিতে হবে। একজনকে ভার্চুয়াল জগৎ থেকে বেরিয়ে বন্ধু এবং পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানো উচিত। আর সেই সঙ্গে নিয়মিত ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমানো উচিত এবং স্ক্রিন টাইম ৩ ঘণ্টারও কম রাখা উচিত। তিনি আরও বলেন, উন্নত দেশগুলোতে শিশুরা মোবাইল ব্যবহার করে কিন্তু সেটি হয় ইতিবাচক ব্যবহার। আমাদের দেশের শিশুরাও যদি ইতিবাচক ব্যবহার করতে পারে তবে শিশুদের মোবাইল ব্যবহারে কোনো সমস্যা নেই। তবে মোবাইলের নিরাপদ, যৌক্তিক ও কার্যকর ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। অর্থাৎ সে যে মোবাইল ব্যবহার করছে সেটি কতটা কার্যকরী হচ্ছে তার জন্য তা দেখতে হবে এবং কার্যকরী ব্যবহার তাকে শেখাতে হবে। পাশাপাশি শিশুটি মোবাইল ও ইন্টারনেট ব্যবহার করে নিজে বা অন্যকে ঝুঁকিতে ফেলছে কি না তাও তাকে শেখাতে হবে। পরিমিত ব্যবহার তাকে শেখাতে হবে যেন সে একটি নির্দিষ্ট সময় মোবাইল ব্যবহার করে। এবং সবচেয়ে বড় বিষয় অভিভাবকদেরকেও মোবাইলের ব্যবহারে পরিমিত হতে হবে।’ 

অনেকটা একই মত দিয়ে অধ্যাপক সালমা আক্তার খবরের কাগজকে বলেন, ‘স্কুলে মোবাইল ব্যবহারে যে রেস্ট্রিকশনটা আছে সেটা রাখা, এবং বাচ্চাদের জন্য হেলদি প্লে-টাইম বের করতে হবে। এ ছাড়া স্কুলেও যদি তাদের বিতর্ক, খেলা, ছবি আঁকা বা সাংস্কৃতিক কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত করা যায় তাহলেও তাদের যোগাযোগের ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। পাশাপাশি অভিভাবকদেরও বাচ্চাদেরকে বেশি সময় দিতে হবে, তাদের বাইরে খোলা জায়গায় খেলতে নিয়ে যেতে হবে।’ 

সীতাকুণ্ডের মামুনের ১০ বছরেই বিপুল সম্পদ

প্রকাশ: ০৭ অক্টোবর ২০২৪, ০৯:৫৭ এএম
আপডেট: ০৭ অক্টোবর ২০২৪, ০৯:৫৭ এএম
সীতাকুণ্ডের মামুনের ১০ বছরেই বিপুল সম্পদ
এস এম আল মামুন

১০ বছর আগেও চট্টগ্রাম-৪ আসনের আওয়ামী লীগদলীয় সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) এস এম আল মামুনকে সীতাকুণ্ড জনপদে চিনত হাতে গোনা কিছু লোক। তার বাবা মরহুম আবুল কাশেম মাস্টার ছিলেন ওই আসনের সাবেক এমপি ও সংসদের সাবেক ডেপুটি স্পিকার। উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতিও ছিলেন তিনি।

আল মামুন ছাত্রজীবনে ছাত্রলীগের তেমন কোনো বড় নেতা না হয়েও তার বাবার কল্যাণে উত্তর জেলা যুবলীগের সভাপতির দায়িত্ব পান। এরপর থেকেই দলে মামুনের বন্দনা বাড়তে থাকে। শুরু থেকেই মামুন জনপ্রিয়তার বদলে দখলদার ও ক্যাডার বাহিনীর গডফাদার হিসেবে রাজনীতিতে আবির্ভূত হন। ২০১৪ সালে একতরফা কারচুপির নির্বাচনে তিনি সর্বপ্রথম উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হন। এরপর মামুনকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। যেদিকে চোখ গেছে শুধু দখল আর দখলের সাম্রাজ্য গড়েছেন তিনি। হিন্দুদের শ্মশান, সরকারি জমি, বন, অসহায় মানুষের জমি কোনোটিই দখলে নিতে বাদ রাখেননি। ২০১৯ সালেও তিনি আওয়ামী লীগের হাফ ডজন নেতাকে পেছনে ফেলে উপজেলা চেয়ারম্যানের আসন দখল করেন। মাত্র ১০ বছরের ফ্রন্টলাইন রাজনীতিতে তিনি হয়েছেন টাকার কুমির। গড়েছেন সম্পদের পাহাড়। 

গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর থেকে গা ঢাকা দিয়েছেন মামুন। তার বিরুদ্ধে চট্টগ্রামের বিভিন্ন থানায় ও আদালতে হয়েছে ছাত্র-জনতার আন্দোলনকেন্দ্রিক হত্যা মামলা। 

কীভাবে মামুন টাকার কুমির হয়েছেন তা অনুসন্ধান শুরু করে খবরের কাগজ। তাতে উঠে এসেছে ভয়ংকর চিত্র। জানা গেছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মামুন এমপি হলেও সময় পেয়েছেন মাত্র সাত মাস। এ কারণে অনেকেই বলেছেন, সুযোগের অভাবে এমপি হিসেবে মামুন তেমন সম্পদ গোছাতে পারেননি। মূলত, এক দশক উপজেলা চেয়ারম্যান থাকাকালেই সব সম্পদ গড়েছেন তিনি। 

অনুসন্ধানে আল মামুনের তিনটি নির্বাচনি হলফনামা আমাদের হাতে এসেছে। সেগুলো বিশ্লেষণে দেখা গেছে, বিগত সরকারের শেষ ১০ বছরে তার সম্পদ বেড়েছে কয়েক গুণ। ৫০০ কোটি টাকা খরচ করে কক্সবাজারে বিলাসবহুল পাঁচ তারকা হোটেল গড়েছেন তিনি। এ ছাড়া আছে একাধিক শিপইয়ার্ড, হোটেল, মোটেল, মদের বার, ট্রাক টার্মিনাল, ফিশিং ট্রলার, অভিজাত খুলশীতে বাড়িসহ নামে-বেনামে অসংখ্য ব্যবসা-বাণিজ্য। তিনি এসব গড়েছেন অবৈধ উপায়ে।
 
নির্বাচনি হলফনামায় মামুনের সম্পদ

আল মামুন ২০১৪ উপজেলা নির্বাচনে কাপ-পিরিচ মার্কা নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। বিতর্কিত ও অংশগ্রহণবিহীন ওই নির্বাচনে উপজেলা চেয়ারম্যান হিসেবে প্রথমবারের মতো জনপ্রতিনিধি হন তিনি। সেবার তিনি হলফনামায় উল্লেখ করেন, তার নামে কোনো বাণিজ্যিক বা আবাসিক ভবন নেই। একই তথ্য তিনি ২০১৯ সালের ১৫ মার্চের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের সময়ও ঘোষণা দিয়েছেন। কিন্তু ২০২৪ সালের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হফলনামা তিনি উল্লেখ করেছেন, তার নামে ৩ কোটি ২৯ লাখ টাকার ভবন আছে। অর্থাৎ চার বছরে তিনি এই সম্পদ অর্জন করেছেন। এ ছাড়া ২০১৯ সালে তিনি বাড়ি ও অ্যাপার্টমেন্টের মূল্য দেখিয়েছেন ৭০ লাখ টাকা। তবে ২০২৪ সালের নির্বাচনে সেটি কমিয়ে দেখান ৬২ লাখ ৪৩ হাজার টাকা। 

আবার ২০১৪ সালে নিজ নামে অকৃষি জমি ও অর্জনকালীন মূল্য দেখিয়েছেন ৫১ লাখ ৫৪ হাজার ৫৫০ টাকা, ২০১৯ সালে দেখিয়েছেন ১৯ লাখ ৮৬ হাজার টাকা। ২০২৪ সালে দেখিয়েছেন ৮৯ লাখ ৮৬ হাজার ৩০০ টাকা। 

১৪ সালে তার স্ত্রীর নামে কোনো অকৃষি জমি না থাকলেও ২০১৯ সালে এসে তার নামে হয়েছে ১ কোটি ১০ লাখ টাকার সম্পদ, যা ২০২৪ সালেও একই দেখানো হয়েছে। এতে বোঝা যায়, ২০১৪ সাল থেকে ২০১৯ সালে মামুনের সম্পদের পরিমাণ ক্রমান্বয়ে বেড়েছে। আগের দুবার তিনি কৃষিজমি না দেখালেও ২০২৪ সালের নির্বাচনি হলফনামায় দেখিয়েছেন ২ কোটি ৪৬ লাখ ৮৩ হাজার টাকা। 

২০১৪ সালে মামুনের বন্ড শেয়ার, ঋণপত্র ও কোম্পানির শেয়ার দেখিয়েছেন ৩৮ লাখ ৮৫ হাজার টাকা, যা তিনি ২০১৯ সালেও একই রেখেছেন। ২০১৪ সালে মোট স্থাবর ও অস্থাবর মিলে মোট সম্পদ ছিল ১ কোটি ৮৩ লাখ ৪৯ হাজার ৫৫০ টাকার। আর ওই বছর ব্যক্তিগত ও ব্যাংক লোন মিলে ঋণ দেখিয়েছেন ৯ কোটি টাকা। ২০১৯ সালে আয় দেখান ৯৩ লাখ ৫০ হাজার ৪০৬ হাজার। তিনি ও তার স্ত্রীর নামে অস্থাবর সম্পতি দেখান ৫ কোটি ৭৮ লাখ ২২ হাজার টাকার। তবে ২০২৪ সালে তার সম্পদের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে কয়েক গুণ। এতে তার নামে আয় আছে ১ কোটি ৮০ লাখ ২৩ হাজার। আর অস্থাবর সম্পত্তি আছে ৬ কোটি ২৬ লাখ ১৪ হাজার ২১২ টাকা। আর স্ত্রীর নামে অস্থাবর সম্পত্তি আছে ৭ কোটি ৭২ লাখ ৮ হাজার টাকার। অথচ ২০১৯ সালে তার স্ত্রীর অস্থাবর সম্পদ ছিল ১ কোটি ৭৮ লাখ টাকার। ৫ বছরে সেটি বেড়ে হয়েছে ৭ গুণ। 

এ ছাড়া ২০২৪ সালের হলফনামায় মামুনের স্থাবর সম্পদ দেখানো হয়েছে ২৯ কোটি ৮২ লাখ ২২ হাজার ৩৬৫ টাকার। অথচ ২০১৯ সালে তার স্থাবর সম্পদ ছিল ৮৯ লাখ ৮৬ হাজার ৩০০ টাকার। অর্থাৎ কেবল পাঁচ বছরে তার স্থাবর সম্পদ বেড়েছে ২৮ গুণের বেশি। আশ্চর্যজনকভাবে ২০১৪, ২০১৯ ও ২০২৪ সালে তিনি যথাক্রমে ৯ কোটি, ৯ কোটি ৯২ লাখ ও ১০ কোটি ৪ লাখ ৯৪ হাজার টাকা ঋণ দেখিয়েছেন ব্যক্তি ও ব্যাংক লোন হিসেবে। 

এস এম আল মামুন নির্বাচনি হলফনামাও ছলচাতুরী করেছেন বলে অভিযোগ আছে। তার স্ত্রীর নামে দেখানো বেশির ভাগ সম্পত্তিই তার বলে গুঞ্জন উঠেছে। সচেতন রাজনৈতিক মহলের মতে, আওয়ামী লীগের এই প্রভাবশালী নেতার সম্পদের অনুসন্ধান করা জরুরি। দেশে ও বিদেশেও তার অনেক সম্পত্তি রয়েছে। 

কক্সবাজারে বিলাসবহুল হোটেল

২০১৯ সালে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর কক্সবাজারের সুগন্ধা বিচে মোটা অঙ্কে জমি কেনেন মামুন। এ জন্য তিনি মিরসরাইয়ের সাবেক এমপি রুহেলের সহযোগিতা নেন। এরপর সেখানে তিনি অত্যাধুনিক ও বিলাসবহুল পাঁচ তারকা হোটেল ‘গ্রিন ন্যাচার রিসোর্ট অ্যান্ড সুইটস’ তৈরির কাজ শুরু করেন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে তিনি সেই রিসোর্টের উদ্বোধন করেন। ওই সময় সীতাকুণ্ড থেকে দলীয় কয়েক শ নেতা-কর্মী নিয়ে সেখানে ভোজের আয়োজন করেন। সেই সময় তিনি তার ফেসবুকে লেখেন, ‘কক্সবাজারে আমার হোটেল উদ্বোধন করা হলো।’ 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মামুন যেই মানের রিসোর্ট গড়েছেন সেটি নির্মাণ করতে বর্তমানে ৫০০ কোটি টাকার মতো খরচ হতে পারে। এত বিলাসী হোটেল তৈরির জন্য তার এই টাকার উৎস কী, সেই প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। চট্টগ্রাম মহানগরের ফিনলে স্কয়ারে মামুনের নামে আছে দুটি দোকান। এ ছাড়া দুটি শিপইয়ার্ড এবং ট্রান্সপোর্ট ব্যবসা আছে মামুনের। 

বন ও পাহাড় দখলে মামুন 
২০২২ সালে মামুন সীতাকুণ্ডের বাঁশবাড়িয়ায় নড়ালিয়া মৌজায় উপকূলীয় বন বিভাগের ৫ একর জমি সাইনবোর্ড টাঙিয়ে ও খুঁটি গেড়ে দখল করেন। ওই সময় একটি গণমাধ্যম এ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করলে তিনি ২ সাংবাদিককে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলা দিয়ে চরম হয়রানি করেন। সে সময় বন বিভাগ তাকে দখল ছেড়ে দিতে নোটিশ করলেও তিনি বিষয়টিকে পাত্তাই দেননি। উল্টো বন কর্মকর্তাদের ধমকানোর অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। 

এর আগে ২০০৮ সালে আওয়ামী সরকার ক্ষমতায় আসার পর মামুনের নেতৃত্বে তার সহযোগীরা সোনাইছড়ি উপকূলে হাজার হাজার গাছ কেটে দুটি শিপইয়ার্ড গড়ে তোলেন। এ ঘটনায় তখন কোনো থানায় মামলা হয়নি। পরে বন বিভাগ আদালতে মামুনসহ ১৩ জনের নামে মামলা করে। ওই মামলায় মামুন ২ নম্বর আসামি। এ ছাড়া উপজেলার জঙ্গল ছলিমপুরে মামুন ও তার ছোট ভাই এস এম আল নোমানের দখলে রয়েছে ১০ একর পাহাড়। সেখানে তার বিরুদ্ধে আছে ভূমিহীনদের কাছে সরকারি জমি প্লট আকারে বিক্রি ও একই প্লট একাধিকবার বিক্রির অভিযোগ। 

অন্যের জমি দখল করে ট্রাক টার্মিনাল

অভিযোগ আছে ফৌজদারহাটের আউটার লিংক রোড়ে কাট্টলী মৌজায় বিশাল আকৃতির জমি দখল করে সাগর থেকে বালু তুলে ভরাট করেন আল মামুন। তবে তিনি প্রভাবশালী হওয়াতে এখনো তার বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলছেন না। সেখানে তিনি এসএম ট্রাক টার্মিনাল নামে একটি ট্রাক ইয়ার্ড গড়ে তোলেন। এ ছাড়া ফৌজদারহাটে বাইপাসের মুখে মোবারক হোসেন নামে ঢাকার এক বাসিন্দার জায়গা দখল করে ট্রাক টার্মিনাল করেন মামুন। প্রায় ১৫ বছর সেই জমি দখলে রাখেন তিনি।

পরিবেশ ধ্বংসযজ্ঞে মামুন 

পরিবেশ হুমকির মুখে ফেলে বিনা অনুমতিতে অবৈধভাবে সাগর থেকে বালু উত্তোলন করেন মামুন। এ জন্য ২০২২ সালের ২৪ মার্চ তাকে ২০ লাখ টাকা জরিমানা করে চট্টগ্রাম পরিবেশ অধিদপ্তর। ওই সময়ে পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের পরিচালক মো. মুফিদুল আলম এ জরিমানা করেন। সে বছর পরিবেশ অধিদপ্তর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে মামুনের বিরুদ্ধে ৪০ লাখ ঘনফুট বালু উত্তোলন করার প্রমাণ পায়। 

কাজ না করেই কোটি টাকা উত্তোলন 

জুলাইয়ের মাঝামাঝিতে কোনো প্রকার কাজ না করেই উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার দপ্তর থেকে এক কোটি টাকা তুলে নেন আল মামুন। তার পিএস সাইদুর রহমান মারুফ প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কাছ থেকে ওই টাকা তুলে নিয়ে যান। জানা গেছে, প্রত্যেক আসনের এমপিদের জন্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা থোক বরাদ্দ দিয়েছিল ২ কোটি টাকা। এই টাকা থেকে নিজ দায়িত্বে এলাকার রাস্তাঘাট, ব্রিজ নির্মাণ বা উন্নয়ন করতেন পারেন সংসদ সদস্যরা। কিন্তু মামুন কোনো উন্নয়ন না করেই টাকা তুলে নেন। টাকা তুলে নেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা জামিরুল ইসলাম খবরের কাগজকে বলেন, ‘উন্নয়ন কাজের কিছু ছবি তিনি আমাদের দিয়েছেন।’ তিনি প্রতিনিধি পাঠিয়ে টাকাটা তুলে নিয়ে যান। তবে সেসব ছবি প্রতিবেদককে পাঠাতে বললেও তিনি ব্যর্থ হয়েছেন। 

সন্ত্রাসীদের পৃষ্ঠপোষক ছিলেন মামুন 

এস এম আল মামুন একসময় যুবলীগের উত্তর জেলার সভাপতি থাকলেও ২০১৯ সালে তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হতে চেয়ে হয়ে যান সাধারণ সম্পাদক। এরপর থেকে দলে মামুন বন্দনা ও প্রভাব আরও বাড়তে থাকে। আওয়ামী লীগের পাশাপাশি যুবলীগকে নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখতেন তিনি। ২০২৪ সালের একতরফা নির্বাচনে উত্তরাধিকার সূত্রেই তিনি নৌকার মনোনয়ন পান। মামুন তার রাজনীতির সুবিধার্থে গড়ে তোলেন বিশাল ক্যাডার বাহিনী। তিন হত্যা মামলার আসামি সাইদুল ইসলাম, নিহত দাউদ সম্রাট, শাহাজাহান, বদিউল আলম জসিম, রবিউলসহ শীর্ষ সন্ত্রাসীদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিতেন তিনি। তার ছিল একক আধিপত্য। তার ছত্রচ্ছায়ায় সন্ত্রাসীরা সীতাকুণ্ডে মানুষকে জিম্মি করে রাখতেন বলে অভিযোগ রয়েছে। যে কারণে মামুন আত্মগোপনে চলে যাওয়ার পরও তার অপকর্ম নিয়ে এলাকায় কেউ মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছেন না।

এ বিষয়ে কথা বলার জন্য সাবেক এমপি এস এম আল মামুনের মোবাইলে একাধিক ফোন করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

যুক্তরাষ্ট্র-কানাডায় আছে শামীম ওসমানের বাড়ি, দুবাইয়ে ব্যবসা

প্রকাশ: ০৭ অক্টোবর ২০২৪, ০৯:৪৫ এএম
আপডেট: ০৭ অক্টোবর ২০২৪, ০৯:৪৬ এএম
যুক্তরাষ্ট্র-কানাডায় আছে শামীম ওসমানের বাড়ি, দুবাইয়ে ব্যবসা
শামীম ওসমান

নানা কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে বরাবরই আলোচনা-সমালোচনায় থাকতেন আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি শামীম ওসমান। অপরাধীদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দেওয়াসহ নানা কারণে নারায়ণগঞ্জের প্রভাবশালী এই নেতাকে অনেকেই ‘‌‌গডফাদার’ হিসেবে জানতেন। চারবার তিনি নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে এমপি নির্বাচিত হন। আগেই পারিবারিকভাবে প্রভাব-প্রতিপত্তি থাকলেও এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি হয়ে উঠেন নারায়ণগঞ্জের সর্বেসর্বা। বল্গাহীন দুর্নীতি, সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন খাতে বেপরোয়া চাঁদাবাজিসহ কায়েম করেন ত্রাসের রাজত্ব। 

আওয়ামী লীগ সরকারের প্রচ্ছন্ন মদদে অবৈধপন্থায় দেশ-বিদেশে তিনি গড়ে তোলেন অঢেল সম্পদ। তবে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে তার সন্ধান দিতে পারছে না কেউ। যদিও বিভিন্ন সময়ে ভারতসহ একাধিক দেশে তাকে দেখা গেছে বলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও কিছু গণমাধ্যমে খবর এসেছে। অনেকেই বলছেন পরিস্থিতি আঁচ করতে পেরে সরকার পতনের আগেই বিদেশে পালিয়ে যান ধুরন্ধর শামীম ওসমান।

আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী এমপিদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন শামীম ওসমান। সভা-সমাবেশ ও মিডিয়ার সামনে বারবার ‘খেলা হবে’ স্লোগান দিয়ে এসেছেন আলোচনায়। তিনি নিজেকে নারায়ণগঞ্জের সব চেয়ে বড় মস্তান বলে প্রকাশ্যে ঘোষণাও দিয়েছিলেন। পারিবারিক সূত্র ধরে ছাত্রজীবন থেকেই রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়া শামীম ওসমান ১৯৯৬ সালে ৭ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এর আগে তার ব্যক্তিগত তেমন কোনো সম্পদ ছিল না। এরপর ২০০১ সালে চারদলীয় জোট সরকার ক্ষমতায় এলে তিনি ভারতে পালিয়ে যান। পরে সেখান থেকে কানাডায় গিয়ে আত্মগোপনে ছিলেন বহু বছর। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে পরের বছর তিনি নারায়ণগঞ্জে ফেরেন। 

২০১১ সালে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি সেলিনা হায়াৎ আইভীর কাছে পরাজিত হন। এরপর ২০১৪ সালের নারায়ণগঞ্জ-৪ আসন থেকে এমপি হন তিনি। পরে একাদশ ও দ্বাদশ সংসদেও তিনি এমপি ছিলেন। সাবেক এই প্রভাবশালী এমপি দুই যুগ আগে যেভাবে পালিয়ে ছিলেন এবারও বেছে নিয়েছেন একই পথ। যদিও এর মধ্যে ভারতের একটি মাজারে তার ছবি প্রকাশ পায়। এরপর গত সপ্তাহে তাকে দুবাইয়ের একটি মার্কেটে দেখা যাওয়ার ছবি ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।

একসময় শামীম ওসমানের সঙ্গে রাজনীতি করা এমন কয়েক জনের সঙ্গে আলাপে জানা যায়, ভারত-দুবাই-কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রে শামীম ওসমানের বেশ যাতায়াত ছিল। এসব দেশে তিনি বাড়ি কিনেছেন। তার মেয়ে কানাডার নাগরিক। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশোনা করেন। দুবাইয়ে অনেক বাংলাদেশি ব্যবসায়ীর সঙ্গে ছিল শামীম ওসমানের নিয়মিত যোগাযোগ। সেখানে তার ব্যবসাও আছে। এ ছাড়া এসব দেশে তার অনেক বন্ধু ও সহযোগী রয়েছেন। যারা তাকে সম্পদ গড়তে সহযোগিতা করেছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শামীম ওসমানের এক বন্ধুর ভাষ্য, শামীম জানতেন যেকোনো সময় পরিস্থিতি বদলে যেতে পারে। তাই তিনি দেশ ও বিদেশ দুই জায়গাতেই সম্পদ গড়েছেন। তবে কোথায় কী পরিমাণ সম্পদ গড়েছেন তা তো আর সবাই জানে না। তিনি উল্লেখ করেন, ‘বন্ধু’ শামীম ওসমান তার নেতা-কর্মীদের ডেকে প্রায়ই বলতেন ক্ষমতার পটপরিবর্তন হলে সহজেই যেন তিনি দেশ ছাড়তে পারেন সেই প্রস্তুতি রাখতে। তবে এবার তার আত্মগোপন অতটা সহজ ছিল না। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে ৩০ জুলাই পর্যন্ত শামীম ওসমান নারায়ণগঞ্জে ছিলেন। ওই দিন সব শেষ তিনি চাষাড়ায় গাড়ি নিয়ে ছাত্র-জনতার বিরুদ্ধে মহড়া দেন। এরপর ৩ আগস্ট ঢাকায় আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে একটি সভা শেষে তিনি গুলশানের বাড়িতে যান। পরে সেখান থেকেই তিনি আত্মগোপন করেন। এর আগে ২৬ জুলাই নারায়ণগঞ্জের চাষাড়া থেকে মণ্ডলপাড়া পর্যন্ত অস্ত্রধারী-ছাত্রলীগ-যুবলীগসহ গাড়িবহর নিয়ে মহড়া দিয়েছিলেন শামীম ওসমান। এ সময় শামীম ওসমানসহ তার ছেলে অয়ন ওসমান ও তাদের সহযোগীরা দিয়ে ছাত্র-জনতার ওপর গুলি ছোড়ে।

তার ঘনিষ্ঠরা জানান, শামীম ওসমান ঘন ঘন বাসস্থানের ঠিকানা পরিবর্তন করেন। এমনকি দেশও পরিবর্তন করেন। ফলে তিনি কোথায় আছেন তা বোঝা মুশকিল। তবে তিনি দেশে তার যে সম্পদ রেখে গেছেন তা রক্ষণাবেক্ষণে লোক নিয়োজিত আছে। 

রেখে গেছেন বিপুল সম্পদ

২০০৯ সালে দেশে ফেরার পর ২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেন শামীম ওসমান। সেসময় তিনি হলফনামায় জানিয়ে ছিলেন বাড়ি-এপার্টমেন্ট-দোকানভাড়া, ব্যবসা ও ব্যাংকে আমানতের সুদ থেকে বার্ষিক আয় পেতেন ২৭ লাখ টাকা। তার নামে ১০ শতাংশ কৃষিজমি, ১৬ শতাংশ জমির ওপর দোতলা বাড়ি ও উত্তরায় ৯ কাঠা জমি রয়েছে। অথচ ১০ বছর পর দ্বাদশ নির্বাচনের সময় শামীম ওসমান হলফনামায় উল্লেখ করেন, তিনি বছরে ৭৯ লাখ টাকা আয় করেন। তার নামে ১২৩ শতাংশ কৃষিজমি, ১০ শতাংশ অকৃষিজমি, পূর্বাচলে রাজউকের নিউ টাউনে ১০ কাঠার প্লটসহ- ২টি টয়োটা ল্যান্ডক্রুজার গাড়ি রয়েছে। অর্থাৎ ১০ বছরে তার আয় বাড়ে কয়েকগুণ।

শামীম ওসমান তার উপার্জনের মাধ্যম হিসেবে দেখিয়েছেন পণ্য, জ্বালানি তেল আমদানি, পরিবহন ও সরবরাহকারী একাধিক প্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠানে আবার তার স্ত্রী-ছেলে-মেয়েরও মালিকানা রয়েছে। তবে এর বাইরে থাকা তার সম্পদের তথ্য তিনি লুকিয়েছিলেন নানা কৌশলে।

খোঁজ মিলেছে শামীম ওসমানের মালিকানাধীন অন্তত ১৩টি পণ্যবাহী জাহাজ রয়েছে। এসব জাহাজ নিতাইগঞ্জের আটা-ময়দা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পদক ও মীম সারাত গ্রুপের মালিক মোহাম্মদ সোহাগের মাধ্যমে তিনি বিভিন্ন কোম্পানির কাছে ভাড়া দিতেন। এমনকি জাহাজ ব্যবসার পাশাপাশি করতেন বহুতল বিল্ডিং নির্মাণের ব্যবসাও। এ ছাড়া তার ছেলে অয়ন ওসমানকে দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করাতেন শহর-বন্দর-সিদ্ধিরগঞ্জ ও ফতুল্লার ইন্টারনেট সংযোগের কারবার। যা থেকে বিপুল অর্থ লুপাট করেছেন তিনি। এ ছাড়া চাষাড়া রূপায়ণ টাওয়ারে তার ছেলের নামে রয়েছে ফ্ল্যাটও।

ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রোডে চলাচল করা সিটি বন্ধন ও উৎসব পরিবহনসহ বিভিন্ন বাস থেকে নিতেন মাসিক টাকা। ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রোডে চলাচল করা (বিলুপ্ত) নসিব পরিবহনের মালিকরা সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলন করে জানিয়েছেন, ‘রাইফেলস ক্লাবে ডেকে নসিব পরিবহনের পুরো ব্যবসাই দখল করে নেন শামীম ওসমান। এলজিইডি- গর্ণপূর্তসহ উন্নয়নমূলক কাজ করে এমন সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো ছিল তার নিয়ন্ত্রণে। শামীম ওসমানের সুপারিশে ইজারা বা ঠিকাধারি পেয়ে যেত তার লোকজন। শামীম ওসমান আদমজী ইপিজেডের ঝুট সেক্টরও নিয়ন্ত্রণ করতেন সিদ্ধিরগঞ্জ থানা যুবলীগের সভাপতি মতিউর রহমান মতিকে দিয়ে। বিনিময়ে এসব খাত থেকে পেতেন মোটা অঙ্কের অর্থ।

শামীম ওসমান নারায়ণগঞ্জ ক্লাব চালাতেন শ্যালক তানভীর আহাম্মেদ টিটুকে দিয়ে। তাকে বিসিবির পরিচালক পদ পাইয়ে দিতে নানা মহলে তদ্বির চালিয়ে ছিলেন তিনি। এরপর বসান নারায়ণগঞ্জ ক্লাবের সভাপতির চেয়ারে। এ ক্লাবে প্রতি রাতে আড্ডা বসতো শিল্পপতিদের। এ ছাড়া চাষাড়া রাইফেলস ক্লাব ছিল শামীম ওসমান ও তার অনুসারীদের আখড়া। এই রাইফেলস ক্লাবকে ব্যবহার করা হতো শামীম ওসমানের রাজনৈতিক কার্যালয়ের মতো। প্রায় রাতে তিনি এখানে বিচার সালিশ, বৈঠক, সভা করতেন। এখানে বসে বিভিন্ন ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে প্রতিপক্ষকে দমনে হুমকি-নির্যাতন-নিপীড়ন চালানো হতো। এমনকি নানা অপকর্মের নির্দেশও দেওয়া হতো এখান থেকেই।

শামীম ওসমানের অপকর্ম নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে প্রতিবাদ করে আসা মানবাধিকার কমিশনের নারায়ণগঞ্জ জেলার সভাপতি অ্যাডভোকেট মাহাবুবুর রহমান মাসুম বলেন, শামীম ওসমানরা কখনোই নারায়গণগঞ্জে স্থায়ী বসবাসকারী ছিলেন না। ঢাকা বসবাস করে নারায়গণগঞ্জের ব্যবসা-বাণিজ্য-সরকারি প্রতিষ্ঠানের ঠিকাদারি-ইজারা-পরিবহন সেক্টর-নৌপথে জাহাজ ব্যবসা, তেলের কারবার, ইন্টারনেট ব্যবসাসহ নানা খাত নিয়ে ছিলেন তার নিয়ন্ত্রণে। এসব খাত থেকে বিপুল অর্থ কামিয়েছেন শামীম ওসমান। প্রতিটি সেক্টরে থাকত তার নির্ধারিত লোক। আর তাদের কাছ থেকে মাসিক অর্থ পেতেন তিনি। তবে বেকায়দায় পড়লেই লোক জড়ো করতেন রাইফেলস ক্লাবে বা ডাকতেন সভা-সমাবেশ। দিনে এমপি থাকলেও রাতে শামীম ওসমান হয়ে যেতেন গডফাদার।

মাসুম বলেন, শামীম ওসমান এমন কোনো খাত নেই যেখানে চাঁদাবাজি করেননি। নারায়ণগঞ্জ চেম্বারের সাবেক সভাপতি খালেদ হায়দার খান কাজল ছিলেন এই সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রক। পরিবহন, সুতা ব্যবসা, ফুটপাতের চাঁদাবাজি, গার্মেন্টস সেক্টরে চাঁদাবাজি সবই করাতেন। আর জমি দখল করাতেন তার সেনাপতি শাহ নিজামকে দিয়ে। তার কথা না শুনলে রাইফেলস ক্লাবে নিয়ে করা হতো নির্যাতন।

নারায়ণগঞ্জের মানুষ শামীম ওসমানদের আর চায় না উল্লেখ করে সুশাসনের জন্য নাগরিক সুজনের নারায়ণগঞ্জ জেলার সভাপতি ধীমান সাহা জুয়েল বলেন, সদর ও বন্দর উপজেলার প্রায় সব সরকারি অফিসগুলো নিয়ন্ত্রণ করতেন শামীম ওসমান। তার বলয়ে থাকা ছাত্রলীগ-যুবলীগ-আওয়ামী লীগের বড় একটি অংশ চাঁদাবাজি-জমিদখল-পরিবহন সেক্টর-ঝুট সেক্টর নিয়ন্ত্রণসহ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড সবই করত। সেখান থেকে ভাগ পেতেন তিনি।

শামীম ওসমান তার ছেলে ও ভাতিজাকে দিয়ে অপকর্ম করাতেন উল্লেখ করে ধামীন সাহা বলেন, তার (শামীম ওসমান) ছেলে অয়ন ওসমান ইন্টারনেট সংযোগের নামে শহরবাসীর কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা লুটে নিয়েছেন। তার ভাতিজা আজমেরী ফতুল্লার বিসিক শিল্প নগরীসহ শহরের ঝুট সেক্টর থেকে প্রতি মাসে তিন কোটি টাকা পেতেন। সে সময় তাদের বিরুদ্ধে কথা বললেই করা হতো হামলা-মামলা। নারায়ণগঞ্জের মানুষ এদের আর চায় না। এরা জুলুমকারী ও লুটেরা। 

সিটি নির্বাচনের সমর্থন দেওয়াকে কেন্দ্র করে শামীম ওসমানের রোষানলে পড়ে মারাত্মক মাশুল দিতে হয়েছে নিহত ত্বকীর বাবা সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রফিউর রাব্বিকে। তিনি বলেন, ওসমান পরিবারের সদস্যরা হত্যা, চাঁদাবাজি, ভূমি দস্যুতাসহ এমন কোনো অপরাধ নেই যা করেননি। তাদের সরাসরি আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়েছে ফ্যাসিস্ট সরকারের প্রধান শেখ হাসিনা। বিভিন সেক্টর থেকে শামীম ওসমান যে টাকা কামিয়েছেন তা বিদেশে পাচার করেছেন। নামে-বেনামে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে গড়েছেন সম্পদের পাহাড়।