প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ (সিইসি) সব কমিশনার একযোগে পদত্যাগ করার পর কর্মচাঞ্চল্য হারিয়ে স্থবির হয়ে পড়েছে আগারগাঁওয়ের নির্বাচন কমিশন সচিবালয় (ইসি)।
রবিবার (৮ সেপ্টেম্বর) সচিবালয়ে গিয়ে দেখা যায়, শুধুমাত্র জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) শাখা ছাড়া বেশির ভাগ শাখার কার্যক্রমই বন্ধ। নির্বাচন সংক্রান্ত সব ধরনের কাজই বন্ধ রয়েছে। নিয়মিত কার্যক্রম চালাতে নিজ নিজ দপ্তরের কাজে যোগ দিলেও অনেকেই রয়েছেন বদলি আতঙ্কে।
ইসি ভবনের তৃতীয় তলায় বসতেন সাবেক সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল। তার অবর্তমানে গতকাল অফিস করেছেন তার একান্ত সচিব রিয়াজ উদ্দিন। তবে সেই ফ্লোরে ইসি সচিব শফিউল আজিমের দপ্তর ছাড়া সবার দপ্তরেই দেখা গেছে নীরব পরিবেশ। এ ছাড়া চতুর্থ তলায় সাবেক ইসি অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহসান হাবিব খানের একান্ত সচিব আসমা দিলারা জান্নাত, বেগম রাশেদা সুলতানার একান্ত সচিব হাবিবা আখতার এবং মো. আনিছুর রহমানের একান্ত সচিব শাহ মো. কামরুল হুদাকে দেখা গেছে অফিস কক্ষে।
শাহ কামরুল হুদাকে সাবেক ইসি আনিছুর রহমানের ইচ্ছায় তার একান্ত সচিব করা হয়েছে। এখন তার মতো অনেক বিভাগের কর্মকর্তাদের মধ্যেই বিরাজ করছে বদলি আতঙ্ক। এ ছাড়া শূন্য পদে যোগ দিচ্ছেন অনেকে। গতকাল ইসির আইন শাখায় যুগ্ম সচিব পদে যোগ দিয়েছেন সিনিয়র জেলা জজ ফারুক আহমেদ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান, ‘কমিশনে নিয়োগপ্রাপ্ত আমরা সব কর্মকর্তা-কর্মচারীই অফিস করছি। যেহেতু নির্বাচন সংক্রান্ত কোনো কাজ আপাতত নেই তাই এ সময়ে কাজেরও চাপ নেই। তবে গত বৃহস্পতিবার কমিশন পদত্যাগ করার আগে যেসব কাজের চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়ে গেছেন সেই কাজগুলোই আমরা করতে পারছি। এ ছাড়া আগে নিবন্ধনের জন্য আবেদনকারী কয়েকটি রাজনৈতিক দল আমাদের কাছে এসে তথ্য চাইছেন, তাদেরকে পরবর্তী কমিশন গঠনের পর যোগাযোগের পরামর্শ দিচ্ছি।
গত ২ সেপ্টেম্বর রাজনৈতিক দল হিসেবে ইসির নিবন্ধন পায় মাহমুদুর রহমান মান্নার নেতৃত্বাধীন নাগরিক ঐক্য এবং ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নূরের দল গণ অধিকার পরিষদ। আর আগে গত ২১ আগস্ট ইসির নিবন্ধন পায় জামায়াতে ইসলামীর সাবেক নেতাদের প্রতিষ্ঠিত আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি)। নতুন এই তিনটি দল নিয়ে বর্তমানে ৪৬টি দল ইসির নিবন্ধনভুক্ত হয়েছে। ইসি থেকে পুরো কমিশন পদত্যাগ করে বিদায় নেওয়ার পর গতকালও লেবার পার্টিসহ কয়েকটি দলের নেতাকে দেখা গেছে ইসি সচিবালয়ে।
অন্যদিকে ইসি সচিবালয়ের মূল ভবন এবং নির্বাচনি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট ভবনের যেসব ফ্লোরে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) শাখার কাজ চলে সেসব দপ্তরে গিয়ে দেখা গেছে, এনআইডি সংক্রান্ত (নতুন ভোটার ও সংশোধন আবেদন) সব ধরনের কার্যক্রমই চলমান রয়েছে। কর্মকর্তাদের ব্যস্ততাও রয়েছে মোটামুটি। তবে এনআইডি বিভাগ ছাড়া বেশির ভাগ শাখার কার্যক্রমেই এক ধরনের স্থবিরতা বিরাজ করছে।
কমিশনবিহীন এ পর্যায়ে কীভাবে চলবে ইসি সচিবালয়ের কার্যক্রম- এমন প্রশ্নে ইসি সচিব মো. শফিউল আজিম খবরের কাগজকে বলেন, ‘সচিবালয়ের রুটিন যেসব কাজ আছে সেগুলোই আমরা করছি। এ পর্যায়ে পুরো কমিশন যেহেতু শূন্য সেহেতু নির্বাচন সংক্রান্ত সব ধরনের কার্যক্রমই আপাতত বন্ধ রয়েছে। তবে আদালত থেকে বিশেষ কোনো নির্দেশনা এলে নিয়ম অনুযায়ী আমরা সেটা বাস্তবায়ন করতে পারব। সিইসিকে অবহিত করা ছাড়া (পদায়ন ও বদলি) যেসব কার্যক্রম করা সম্ভব নয়, সেসব ব্যাপারে বা কোন কোন বিষয়ে আমরা ভূমিকা রাখতে পারব সে ব্যাপারে সুস্পষ্টভাবে নির্দেশনা জানতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে চিঠি দিয়ে জানতে চেয়েছি।’
সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের কমিশন একযোগে পদত্যাগ করে গত ৫ সেপ্টেম্বর। ওই কমিশনের বাকি সদস্যরা ছিলেন- অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আহসান হাবিব খান, রাশেদা সুলতানা মো. আলমগীর ও মো. আনিছুর রহমান। দেশে প্রথমবারের মতো সিইসি ও ইসি নিয়োগে আইন প্রণয়নের পর সার্চ কমিটির মাধ্যমে ২০২২ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি কাজী হাবিবুল আউয়াল নেতৃত্বাধীন কমিশন নিয়োগ পায়। সংবিধান অনুযায়ী পাঁচ বছরের জন্য তাদের দায়িত্ব নির্ধারিত থাকলেও দেশে গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী পরিস্থিতিতে মাত্র আড়াই বছরেই বিদায় নিতে হয় ওই কমিশনকে।